শেষ বিকেলের আলো পর্ব -০৬

#শেষ_বিকেলের_আলো(ভ্যাম্পায়ার)
#পর্ব_৬
#লেখক_দিগন্ত
~~বৈশাখী রেইন রহস্য(২)
বৈশাখী সুজির সামনে বসে আসে। সুজি বৈশাখীকে নিজের হাতে তৈরি করা স্পেশাল ফলের রস খাইয়ে দিচ্ছে। বৈশাখীর খুব পছন্দ সুজির হাতের এই ফলের রস। সে বলে,
-“তোমার এই ফলের রস যেন অমৃত। এত সুন্দর লাগে যে কি বলব।”

সুজি হালকা হাসে। তারপর বলে,
-“তুই যে কেন রাজপুত্র রেইনের সাথে তর্ক করতে গেলি। এখন তোকে শাস্তি পেতে হবে। আমার খুব খারাপ লাগছে।”

-“মন খারাপ করো না আপু। একটা দিনেরই তো ব্যাপার। যাইহোক এই নাও তোমার চিঠি।”

সুজি মৃদু হেসে চিঠিটা হাতে নেয়। ফরেস্টের সাথে তার এভাবেই চিঠি বিনিময় চলে, আর যেখানে তাদের সাহায্য করে বৈশাখী। বৈশাখী সুজি আর ফরেস্টের প্রেমের সম্পর্কে অনেক সাহায্য করে।

সুজি হাসি মুখে চিঠিটা পড়ছিল। তখন হেলেনা চলে আসে। হেলেনাকে দেখে ভয়ে চিঠিটা লুকিয়ে ফেলে সুজি। হেলেনা সোজা বৈশাখীর সামনে এসে বলে,
-“একদম ঠিক হয়েছে তোর সাথে। আরো যা রাজপুত্রর সাথে লাগতে।”

বৈশাখীর মুখ দেখে মনে হচ্ছিল সে কিছু পরোয়াই করে না। বৈশাখী বলে,
-“শোনো আপু আমি তোমার মতো ভীতুর ডিম নই।”

হেলেনা কটমট করে তাকাতেই বৈশাখী মুখে ভেংচি কে/টে চলে যায়। যাওয়ার সময় হৃদির সাথে ধাক্কা খায়। হৃদি বৈশাখীকে জোরে একটা থা/প্পড় মারে। বৈশাখী কিছু মনে করে না। মায়ের হাতে মা/র খেতে খেতে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

হৃদি তার বাকি দুই মেয়ের সাথে রাগ না করলেও বৈশাখীর গায়ে হাত পর্যন্ত তোলে। বৈশাখী হৃদিকে বলে,
-“আমায় মারলে কেন মা?”

-“চুপ একদম চুপ। আমাকে একদম মা বলে ডাকবিনা। তুই আমার মেয়ে না। পর কখনো আপন হয়না।”

-“মানে?”

সুজি সেখানে চলে আসে আর বলে,
-“কিছু না বৈশাখী৷ তুই যা। দেরি হলে রাজপুত্র রেগে গিয়ে আরো বেশি শাস্তি দেবে।”

বৈশাখী সুজির কথা শুনে চলে যায়। সুজি হৃদির কাছে এসে বলে,
-“তুমি একই ভুল কেন বারবার করো মা? বৈশাখীর কাছে লুকানো সত্যটা প্রকাশ হয়ে যাবো তো।”

-“বেশ হবে। ওর জানা উচিৎ যে ও কোন ভ্যাম্পায়ার না একটা মানুষের মেয়ে। তোর বাবা একদিন জঙ্গলে একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ শোনে। গিয়ে দেখে একটা সদ্যজাত বাচ্চা পড়ে আছে। তার তো দয়ার শরীর তাই সাতপাঁচ না ভেবে নিয়ে চলে আসে। এখানে ভ্যাম্পায়ারদের সাথে মানুষ হয় এক সাধারণ মেয়ে। আমি শুরু থেকেই এর বিরুদ্ধে। এই কথাটা গোটা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে ছড়িয়ে পড়লে কি হবে ভেবে দেখেছিস?”

তাদের কথাই মাঝেই হেলেনা সেখানে চলে আসে। হেলেনা জিজ্ঞাসা করে,
-“কোন কথা ছড়িয়ে পড়লো বিপদ হবে?”

হেলেনাকে আসতে দেখে হৃদি কিছু না বলে চলে যায়৷ সুজি বলে,
-“বৈশাখী যে দাসি হয়েছে এই ব্যাপারটা।”

হেলেনা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
-“বেশি বাড়াবাড়ি করে মেয়েটা। এখন তো আমারও খারাপ লাগছে ওর জন্য। রাজপুত্র রেইন যা ভয়ংকর।”

__________
রেইনের উপর রাগ ক্ষোভ দুটোই বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশাখীর। শয়তান লোকটা কিনা তাকে দিয়ে নিজের সব জামাকাপড় ধুয়ে নিচ্ছে। বৈশাখী বিড়বিড় করে বলে,
-“আমাকে কি ধোপানি পেয়েছে? এই শীতের সময় সরোবরের ঠাণ্ডা পানিতে আমায় কাপড় ধুতে হচ্ছে। ধুরু ভালো লাগে ন।”

পাশে বসে আরামসে ফলের রস খাচ্ছিল রেইন। বৈশাখীর কথা শুনে বলে,
-“দাসিদের কাজ এগুলোই। এখন তুমি তাড়াতাড়ি কাপড় ধুয়ে নাও। এরপর আমার ঘরবাড়িও পরিস্কার করতে হবে।”

বৈশাখীর ইচ্ছে করছিল রেইনকে এখনই সরোবরের পানিতে ডুবিয়ে মা/রতে। অনেক কষ্টে নিজেকে থামিয়ে রেখেছে সে।

কাপড় কাচার সময় হঠাৎ পানি থেকে কোন একটা টান অনুভব করে বৈশাখী। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অদৃশ্য শক্তি তাকে সরোবরে টেনে নেয়। রেইন ব্যাপারটা দেখে ঘাবড়ে যায় এবং সাথে সাথে পানিতে ডুব দেয়।

বৈশাখী কিছু বুঝতে পারছিল না। পানিতে তার নিঃশ্বাস ক্ষীণ হয়ে আসছিল। হঠাৎ করেই সে পানির ভেতর একটি প্রাসাদে ঢুকে যায়। রেইনও তার পিছু পিছু প্রাসাদটিতে প্রবেশ করে।

প্রাসাদে ঢুকে চমকে যায় রেইন। আকুপাকু হয়ে বলে,
-“মা,,,”

প্রাসাদের মধ্যে এসে বৈশাখীর সাথে সাক্ষাৎ হয় রিনেইর। বৈশাখী তাকে ঠিক চিনতে পারে না বৈশাখী। বৈশাখীর পেছনে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রেইন। তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল।

রিনেই এগিয়ে আসে তারপর বলে,
-“তোমাদের স্বাগতম আমার মহলে। এটা আমার মৎস রাজকন্যা রিনেইর প্রাসাদ।”

রেইন তার মায়ের কাছে আসে। রিনেই তাকে হাসি মুখে বুকে টেনে নেয়। রেইন বলতে থাকে,
-“কতদিন পর তোমায় দেখলাম। সেই কোন ছোটবেলায় আমায় রেখে তুমি চলে এসেছিলে। একবারও কি আমার কথা মনে পড়েনি?”

-“আমায় যে আসতেই হতো রেইন। তোমার বাবা একজন ভ্যাম্পায়ার আর আমি একজন মৎস রাজকন্যা। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক হওয়াটাই উচিৎ হয়নি। কিন্তু আমরা ভালোবেসে ফেলি একে অপরকে। এই ভালোবাসা মঙ্গলজনক হয়নি। তোমার জন্মের পরই গোটা ভ্যাম্পায়ার রাজ্য আর মৎস রাজ্যে নেমে আসে চরম বিপদ। যার থেকে পরিত্রাণ পায়নি অনেকে। হাজার হাজার মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছিল তখন সবাই। এইকারণে আমার বাবার পরামর্শে মাত্র ৬ বছর বয়সেই তোমাকে ছেড়ে আসতে হয়।”

বৈশাখী দাঁড়িয়ে মা ছেলের কথোপকথন শুনছিল। রিনেই হঠাৎ বৈশাখীকে কাছে ডাকে তারপর বলে,
-“তোমাদের এখানে নিয়ে আসার একটা কারণ আছে আমার। সেই কারণটা কি জানতে চাও?”

বৈশাখী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। তখন রিনেই বলতে থাকে,
-“ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে অনেক বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। শয়তানের ছায়া পড়ে গেছে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে। যার ফলে সামনে অনেক বড় বিপদ আসতে চলেছে। ভ্যাম্পায়াররা হয়তো একসময় ভয়ানক হয়ে উঠবে। গোটা সৃষ্টিজগতের ত্রাসে পরিণত হবে। আমাদের মৎস রাজকন্যাদের কিছু অদ্ভুত শক্তি থাকে। যা দ্বারা আমরা ভবিষ্যতের অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পারি। আমি কাল স্বপ্নে দেখেছি ভ্যাম্পায়ার আর ফলের রস নয় তার বদলে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর রক্ত পান করছে। রক্তচোষা হয়ে যাচ্ছে তারা।”

রিনেই এর কথা শুনে বৈশাখী এবং রেইন দুজনেই অবাক হয়ে যায়। রেইন বলে,
-“এসব তুমি কি বলছ মা?”

-“আমি ঠিকই বলছি।”

রিনেই এগিয়ে আসে বৈশাখীর কাছে। তার কাধে হাত রেখে বলে,
-“তোমাকে আমি এখানে কেন নিয়ে এসেছি জানো? কারণ তুমিই এই সমস্যার সমাধান করতে পারো, আবার তুমিই বপন করতে পারো এই সমস্যার বীজ। এখন কোন পথ বেছে নেবে সেটা তোমার সিদ্ধান্ত। ”

বৈশাখী কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
-“যদি এরকম পরিস্থিতি আসে তাহলে আমি অবশ্যই ন্যায়ের পথই বেছে নেব।”

রিনেই এর চোখে দেখা বোঝা যাচ্ছিল তিনি বৈশাখীকে কিছু একটা বলতে চান। কিন্তু রেইন সেখানে উপস্থিত থাকায় বলতে পারছিল না। তাই তিনি বৈশাখীর হাত ধরে বলেন,
-“আমার ছেলেটাকে একটু দেখে রেখো। ওর উপর সামনে অনেক বিপদ আসতে পারে। একমাত্র তুমিই পারো ওকে বিপদ থেকে আগলে রাখতে।”

বৈশাখী তাকে আশ্বাস দেয় যে রেইনকে রক্ষা করবে। রেইন ভ্রু কুচকে তাকায়। আর বলে,
-“এই মেয়েটা করবে আমায় রক্ষা! কি ক্ষমতা আছে ওর। ও তো ভ্যাম্পায়ার হয়ে সামান্য উড়তে পর্যন্ত পারেনা।”

বৈশাখীর আবার রাগ ওঠে। রিনেই রেইনকে ধমক দিয়ে বলে,
-“কারো সম্পর্কে কোন কিছু না জেনে কিছু বলা উচিৎ নয় রেইন। এমনটাও হতে পারে যে বৈশাখী এতটা শক্তিশালী যা কেউ কল্পনাই করতে পারবে না। এখন তোমরা চলে যাও।”

রিনেই এর আদেশে কিছু মৎস সৈনিক আসে। তারা রেইন আর বৈশাখীকে বলে,
-“চলো আমরা তোমাদের নিয়ে যাচ্ছি।”

রেইন তার মাকে বিদায় জানায়। রিনেই রেইনকে বলে,
-“যাও বাছা। তবে আমাদের আবার দেখা হবে। খুব শীঘ্রই দেখা হবে।”

মৎস সেনারা রেইন ও বৈশাখীকে নিয়ে সরোবরের উপরে পৌঁছে দেয়। উপরে উঠে দুজনেই অবাক হয়ে যায়। কারণ মাত্র কিছুক্ষণ তারা মৎস রাজ্যে ছিল আর এর মাঝেই দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে। একজন মৎস সেনা বলে,
-“পৃথিবীর সময় আর আমাদের মৎস রাজ্যের সময়ের অনেক পার্থক্য। পৃথিবীর সময় আমাদের থেকে দ্রুত। আমাদের ওখানে ১০ মিনিট মানে এখানে ১০ ঘন্টা।”

কথাটা বলে তারা চলে যায়। বৈশাখী হাফ ছেড়ে বাঁচে। রেইনকে বলে,
-“দিন পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে। তাই এখন আমার মুক্তি হয়ে গেছ আপনার দাসত্ব থেকে মহামান্য রাজপুত্র। আমি এখন যাই।”

-“কোথায় যাচ্ছ তুমি? মা না তোমায় বলল আমাকে রক্ষা করতে। তুমি এভাবে কি করে যাচ্ছ। ”

বৈশাখী বলে,
-“আমি দূর থেকে আপনাকে রক্ষা করব।”

তখন ফরেস্ট সেখানে চলে আসে। রেইনকে দেখে বলে,
-“কোথায় ছিলে এতক্ষণ? সারাদিন তোমায় খুঁজলাম। চলো এখন ঐদিকে মিলনমেলা শুরু হয়েছে। দেশ বিদেশের অনেকে এসেছে।”

রেইন ফরেস্টের সাথে যায়। বৈশাখী হঠাৎ পেছনে ফিরে কাউকে দেখে চমকে যায়।

কিছুক্ষণ পর,
রেইন মিলনমেলার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ করে বৈশাখী সেখানে চলে আসে আর রেইনকে ধা/ক্কা দেয়। রেইন সরে যেতেই সেই যায়গায় বড় একটি বরফের গোলা পড়ে। রেইন আজ অনেক বড় একটি বিপদ থেকে বেঁচে গেল শুধুমাত্র বৈশাখীর জন্য!
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here