শেষ বিকেলের আলো পর্ব -০৫

#শেষ_বিকেলের_আলো(ভ্যাম্পায়ার)
#পর্ব_৪
#লেখক_দিগন্ত
বৈশাখী নিজের চোখের সামনে যেন নিজের মৃত্যুকে দেখতে পায়। জোম্বিরা দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ছে। মাথার উপর ভ্যাম্পায়ার! এই বুঝি ঘটে যায় অদ্ভুত কোন কিছু। নিজের জন্য নয় কোলে থাকা বাচ্চা মেয়েটির জন্য চিন্তা হচ্ছিল বৈশাখীর।

বৈশাখী কিছু বুঝে ওঠার আগেই কুন্ডলী পাকিয়ে কেউ একজন আসে তার সামনে। বৈশাখী অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
-“শুভ!”

বৈশাখীর ডাক কানে যায় শুভর। শুভ বৈশাখীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
-“তুমি আমায় চিনতে পারো নি বৈশাখী, তুমি আমায় চিনতে পারো নি।”

বৈশাখী শুভর কথার কোন মানে খুঁজে পায়না। শুভ আর অপেক্ষা না করে বৈশাখীকে কোলে তুলে নেয়। তারপর এক পলকের মধ্যেই তাকে নিয়ে আসে একটি সুরক্ষিত স্থানে। বৈশাখী কিছুই বুঝতে পারে না কি হচ্ছে এসব। বৈশাখীর কোল থেকে বাচ্চা মেয়েটিকে নিয়ে শুভ বলে,
-“এখন সবকিছু ভালো হবে বৈশাখী। সবকিছু এখন তোমার উপর নির্ভর করছে। তুমি যেভাবে ভাববে সবকিছু ঠিক সেভাবেই হবে।”

কথাটা বলে বাচ্চাটিকে নিয়ে মুহুর্তের মাঝে গায়েব হয়ে যায় শুভ। বৈশাখী তাদের খুঁজে কিন্তু পায়না। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে একটু সামনে এগিয়ে আসে। এ কোন যায়গায় চলে এসেছে বৈশাখী জানে না। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। জনমানব শুণ্য এই স্থানে এসে বৈশাখীর ভয় করছে বইকি। তবে সে নিজের ভয়কে পাত্তা দেয়নি।

বৈশাখী নিজের চোখের সামনে বড় বড় অট্টালিকা দেখতে পাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে এটি কোন প্রসিদ্ধ শহর তবে বাংলাদেশের কোন শহর নয়। শহরটা অনেক আধুনিক। বৈশাখী একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পায় বিদেশি ভাষায় কিছু লেখা। পাশে ইংরেজিতে লেখা, “Welcome To Shanghai”

বৈশাখী চমকায় অনেক বেশিই চমকায়। সে হঠাৎ করে চীনের সাংহাই শহরে কিভাবে চলে এলো কিছু বুঝতে পারছে না। এখানে তো সে কিছুই চেনে না। কি করবে এবার? শুভ কেন তাকে এভাবে রেখে গেল এখানে?
__________
আলিসা,আলিয়া আর শাবানা খাতুন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছেন। নারায়নগঞ্জের গণ্ডি পেরিয়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে জোম্বিরা। কোন স্থানই আর নিরাপদ নয়। এমতাবস্থায় তাদের সারাক্ষণ বাড়ির মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। কারণ বাইরে গেলে অপেক্ষা করছে সমূহ বিপদ।

আলিসা বরাবরই সাহসী, বলতে গেলে একটু বেশিই সাহসী। তবে একদম বিপরীত চরিত্রের অধিকারী আলিয়া। সে ভয়ে গুটিসুটি মে*রে আছে। ভার্সিটি পড়ুয়া হলেও ছোট মেয়েদের মতো আচরণ করছে। শাবানা খাতুনও অনেক ভয়ে আছেন। এতকিছুর মাঝে আলিসার চোখ খুঁজছে রেইনকে। কোথায় আছে রেইন?

আলিসা উঠে দাঁড়ায়। এভাবে বসে থেকে কোন লাভ নেই। তাই গোটা বাড়িতে রেইনকে খোঁজার দায়িত্বটা নিয়ে নেয়। আলিসা রুমের বাইরে যেতে উদ্যত হলে শাবানা খাতুন বলেন,
-“কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

-“ভয় পেয়োনা বাড়িতেই থাকব, বাইরে যাবো না। ভাইয়া কেমন আছে দেখতে যাচ্ছি।”

শাবানা খাতুনের কপালের ভাজ দীর্ঘ হয়। তিনি চমকিত হয়ে বলেন,
-“তার খোঁজ করে লাভ নেই তুই নিজের চিন্তা কর।”

শাবানার কথা শুনে আলিসা, আলিয়া দুজনেই বেশ অবাক হয়। আলিয়া জিজ্ঞাসা করে,
-“আম্মু তুমি এটা কিভাবে বলতে পারলে? ভাইয়ার ব্যাপারে এমন কথা তোমার মুখে মানায় না।”

-“আমি যা বলছি ঠিক বলছি। অন্তত আরাভের কোন বিপদ হবে না। তার চিন্তা তোদের না করলেও চলবে।”

আলিসার সন্দেহ হয় শাবানার কথায়। বরাবরই বিচক্ষণ সে। তাই প্রশ্ন করে,
-“তুমি কিভাবে এত নিশ্চিত হচ্ছ আম্মু।”

আলিসার থেকেও বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দিলেন শাবানা খাতুন। ভ্রুজোড়া প্রসারিত করে বললেন,
-“আমি তোদের মা। আমি তোদের জন্ম দিয়েছি তোরা আমায় জন্ম দিসনি। তাই আমার থেকে বেশি বোঝার কথাও তোদের নয়।”

আলিসা আর কথা বাড়ায় না। সে বরাবরই স্বাধীনচেতা মনোভাবী। আজও মায়ের কথা অগ্রাহ্য করে যেতে লাগল সামনে। শাবানা খাতুন বিড়বিড় করে বললেন,
-“যে নিজেই বিপদের স্রষ্টা তার আবার কি চিন্তা হবে বিপর নিয়ে।”
~~~~~
আলিসা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে আরাভের রুমের দিকে যায়। গিয়ে দেখে রেইন নিশ্চিত হয়ে ঘুমাচ্ছে। রেইনকে এভাবে ঘুমাতে দেখে রাগ ক্ষোভ দুই অনুভুতিরই সাক্ষী হয় আলিসার মন। মিনমিনিয়ে বলে,
-“মানুষদের শান্তির ঘুম কেড়ে নিয়ে শয়তানরা এখন ঘুমাচ্ছে।”

আলিসার কথাটা কানে আসে রেইনের। রেইন নির্লিপ্ত হেসে উঠে দাঁড়ায়। আলিসার একেবারে কাছে এসে বলে,
-“এখনো অনেক মজা বাকি আছে। শয়তানের খেলা কেবল শুরু এত জলদি শেষ হবে না। কিন্তু….”

আলিসা জানতে চায়, কিন্তু কি?

-“জয় তোমাদেরই হবে।”

এটুকু কথা বলে রেইন উড়ে চলে যায় বাদুড়ের রূপ নিয়ে। আলিসা তো কোনকিছুই বুঝতে পারছিল না। সবকিছু তার কাছে কেমন রহস্য রহস্য লাগছে। যেই রহস্যের জাল হয়তো লুকানো আছে অনেক গভীরে।

রেইন উড়ে যায়। উড়ে চলে আসে অনেক দূরে, চীনে। সাংহাই শহর স্তব্ধ ছিল এতক্ষণ কিন্তু রেইনের আগমনে সব ঠিক হয়ে যায়। কালো ছায়া যেন কে*টে যায় শহরের উপর থেকে। রেইন হাসে, এ যেন বিজয়ের হাসি।

রেইনের কাধে উড়ে এসে বসে আরেকটা বাদুড়। বাদুড়টি মহাখুশি হয়ে বলে,
-“আমরা জিতে গেছি মহামান্য রাজা। এখন পুরো সাংহাই শহর ওদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত। আমরা ওদের হটাতে সক্ষম হয়েছি।”

রেইন বাহবা দিয়ে বলে,
-“এইভাবে গোটা বিশ্ব থেকে ওদের হটাতে হবে। তবেই আমরা জয়ী হতে পারব।”

বাদুড়টি উড়ে চলে যায়। রেইন এবার তাকায় নিচের দিকে। বৈশাখীকে দেখা যাচ্ছে। সে এখন সাংহাইয়ের রাস্তায় একা হেটে বেড়াচ্ছে। সবকিছুই অচেনা লাগছে তার। রেইন বৈশাখীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এখানেই থাকো তুমি জানেমন। গোটা বিশ্বে এখন শুধু এই সাংহাই শহরই তোমার জন্য নিরাপদ।”

রেইনের চোখ যায় সূর্যর দিকে। শেষ বিকেলের আলো হয়তো কিছুক্ষণ পর প্রকট হবে। এই সময়টাই তো তাকে দূর্বল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

রেইন নিচে নামে একটি গগণচুম্বী অট্টালিকার ছাদে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের শরীর অধিকার করে নেয় আরাভ। আরাভ নিজের শরীরে ফিরে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।

-“রেইন, তুমি এত বড় বোকামি কি ভাবে করলে? এখন দেখ আমি কি করি।”

আরাভ এক লাফে ছাদ থেকে নেমে আসে। নিচে নেমে বলে,
-“আমি নিজের উদ্দ্যেশ্যে সফল হবোই রেইন। তুমি আমাকে আটকাতে পারবে না। এই পৃথিবীতে শয়তান ভ্যাম্পায়ারদেরই রাজত্ব হবে। তোমরা ভালো ভ্যাম্পায়াররা হাজার চেষ্টা করেও কিছু করতে পারবে না।”

কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে বৈশাখীর দেখা পায় আরাভ। আরাভ দ্রুভ ছুটে যায় তার কাছে আর বলে,
-“বৈশাখী আমি আরাভ। রেইন এখানে এসেছে তোমার ক্ষতি করতে। এই সাংহাই শহর ওদের আস্তানা। তুমি দ্রুত এখান থেকে বেরিয়ে যাও। এই শহর থেকে বেরিয়ে গেলেই তুমি নিরাপদ। বাম দিকে যাও। আর একটু গেলেই এই শহরের শেষ সীমানা পেরিয়ে যাবে। ”

আরাভের কথা শুনে বৈশাখী প্রভাবিত হয়। বাম দিক দিয়ে যেতে থাকে। আরাভ বলতে থাকে,
-“বোকা মেয়ে, একবার শুধু এই শহর থেকে বের হও। তাতেই তোমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে৷”

আরাভ অট্টহাসি হাসে।

বৈশাখী শহরের প্রায় শেষ সীমানায় এসে গেছে। তখনই একজন চাইনিজ মহিলা তার হাত টেনে ধরে। বৈশাখী তার দিকে তাকালে তিনি বলেন,
-“আমার উপর ভরসা করে এদিকে এসো।”

-“আপনি বাংলা জানেন?”

-“শুধু বাংলা না এই পৃথিবীর সব ভাষার উপর আমার আয়ত্ত আছে। তোমায় অনেক রহস্য জানাতে হবে আমার৷ এইসব রহস্য তোমাকে জানানোই এখন আমার একমাত্র দায়িত্ব।”

-“কি রহস্য জানাবেন আপনি?”

-“বৈশাখী-রেইন রহস্য!”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here