#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#সিজন_২
#Tahmina_Akther
(৬)
-রাত ১১টা বাজতে চললো এখন আদিল ফিরে এলো না কেন, রুশা?
-কি জানি, বাবা? ওর কলিগরা তো বললো, ও নাকি আরও দু’ঘন্টা আগে চেম্বার থেকে বেরিয়েছে।আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে, আদিল কোথায় আছে কে জানে?
বেশ চিন্তিত সুরে কথাগুলো বললো রুশা।
রায়হান সাহেব আর রুশা ড্রইংরুমে বসে আদিলের জন্য অপেক্ষা করছে। অন্যান্য দিন আদিল নয়টা বা দশটার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসে কিন্তু আজ এগারোটা বেজে গেলো এখনও আসছে না ।
রুশা মোবাইল হাতে নিয়ে আয়াতের নাম্বারে কল ডায়াল করলো। দু-তিনবার রিং হতেই ওপাশ থেকো কল রিসিভ হলো,
-আসসালামু আলাইকুম, আয়াত ভাই।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো, রুশা?
-আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আয়াত ভাই আজ আদিলের সাথে আপনার কথা হয়েছে?
– না তো। কি হয়েছে?
-আসলে,আদিল এখনো বাড়িতে আসেনি।বাবা ভীষণ চিন্তা করছেন। ওর মোবাইলেও কল যাচ্ছে না। আপনি একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন না কোথায় আছে সে?
-মোবাইলে কল যাচ্ছে না, কেন?আচ্ছা, আমি ট্রাই করে দেখছি। তোমরা চিন্তা করো না।
রুশা মোবাইল হাতে নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন আয়াত কল করবে, আর বলবে আদিল কোথায় আছে?
রুশার মোবাইল কল এলো, রুশা তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করলো,
-হ্যালো,
রায়হান সাহেব রুশার দিকে তাকিয়ে আছেন। রুশা কল কেটে খুব দ্রুত ওর রমের দিকে দৌঁড়ে গেলো। রায়হান সাহেব ভয় পেয়ে গেলেন কিছু হলো কি না এই আশংকায়।
কিছুসময় পর রুশা এসে রায়হান সাহেবকে বললো,
-বাবা,এপোলো হসপিটালে যেতে হবে। আপনি জনিকে কল করে বলুন একটু কষ্ট করে চলে আসতে।
রায়হান সাহেব রুশাকে বোরকা পরিহিত অবস্থায় দেখে যতটা না অবাক হয়েছেন এরচেয়ে বেশি এখন ভয় পাচ্ছেন হসপিটালের নাম শুনে।
-কি হয়েছে? আদিল কোথায়?
-আদিল আছে,আপনি চলুন।
জনি আসতেই রুশা আর রায়হান সাহেব কাঁপা শরীরে গাড়িতে উঠে বসলো উদ্দেশ্য এপোলো হসপিটাল।
রুশা আর রায়হান সাহেব যখন হসপিটালে পৌঁছেছে তখন রাত সাড়ে বারোটা। এর ফাঁকে রুশা আয়াতকে কল করে বলেছে যেন এপোলো হসপিটালে চলে আসে।
রুশা রায়হান সাহেবের হাত ধরে হসপিটালে ভিতরে প্রবেশ করলো। রিসিপশনে বসে থাকা মেয়েটাকে কিছু প্রশ্ন করতে মেয়েটি কাঙ্ক্ষিত কেবিন নাম্বার বললো।
রুশা মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে রায়হান সাহেবকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। রায়হান সাহেব ঘামছে, রুশা চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু রায়হান সাহেবকে বুঝতে দিচ্ছে না।
কাঙ্ক্ষিত কেবিনের সামনে আসতেই রুশার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। কারণ, আদিল দাঁড়িয়ে ডক্টরের সাথে কথা বলছে। রায়হান সাহেব একপ্রকার দৌঁড়ে ছেলে সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।
আদিল তার আব্বাকে এতরাতে এই হসপিটালে দেখে অনেক অবাক হলো। এরইমধ্যে দেখতে পেলো রুশা এসে রায়হান সাহেবের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
রুশা ছলছল নয়নে আদিলের দিকে তাকিয়ে আছে। যেকোনো মূহুর্তে চোখের জল গড়িয়ে পড়বে।
‘প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলার অনুভূতি বুঝি এমনি হয়, দেহ থেকে যেন রুহ বের হয়ে যায়।
পৃথিবীর সকল জিনিস তখন তুচ্ছময় হয়ে যায়। মনে হয় সে শুধু আমারই থাক অন্য কিছুর আমার দরকার নেই। সে থাকলে পৃথিবীর সকল সুখ আমার হাতের মুঠোয় এনে রাখবে’
-আপনি, এই হসপিটালে এসেছেন কেন?
-আসলে রুশা, তোমরা আগে এখানে বসো এরপর সব বলছি। আব্বা আপনি বসেন এখানে। আপনি এতরাতে বাড়ি থেকে বের হতে গেলেন, কেন?
রায়হান সাহেবকে সামনে রাখা সারিবাঁধা চেয়ারে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো আদিল।
-আমি নিয়ে এসেছি বাবাকে। এতরাতে আমি একা বের হব কিভাবে? আপনি আমার উত্তর আগে দিন এই হসপিটালে আপনি এসেছেন কেন?
-তুমি আর কক্সবাজার গিয়েছিলাম, সেখানে রাফসানের সাথে দেখা হয়েছিল, মনে আছে তোমার?
-হ্যা মনে আছে। দু’বছর হতে চললো।কি হয়েছে?
-রাফসানের বড়ো ভাই রওনক মির্জার সাথে আজ আমার দেখা হয়েছিল। বিভিন্ন কথার আঙ্গিকে আমি উনাকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেই। উনি রাজি হলে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওনা হই কিন্তু পথিমধ্যে ছিনতাইকারী দল আমাদের আঁটকে ফেলে। আমি আমার সাথে থাকা যাবতীয় সবকিছু দিয়ে দেই কিন্তু রওনক উনার মোবাইল দিলেও ওয়ালেট দিতে অপারগ হয়।ছিনতাইকারী দল এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়লো।হাতাহাতি পর্যায়ে চলে যায় ব্যাপারটা।আমি ব্যাপারটা সামলানোর আগে ওই দলের একটি লোক রওনকের উদরে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়৷
এমতাবস্থায় আমি দিশেহারা বোধ করেছিলাম তখনি ট্রাফিক পুলিশ এসে রওনককে হসপিটালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
আগের থেকে এখন বেশ ভালো আছে মি.রওনক। কিন্তু, মি. রওনকের মোবাইল না থাকার কারণে উনার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।
সবকিছু শুনে রায়হান সাহেব আর রুশা বেশ দুঃখ প্রকাশ করলো।
রায়হান সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে বললো,
-আমি আয়াতকে কল করে বলি হসপিটালে না আসার জন্য,তোরা কথা বল।
রায়হান সাহেব চলে যেতে আদিল রুশার পাশে এসে বসলো। রুশা আদিলের মুখের দিকে তাকাতে, আদিল দেখলো তার মাধুর্যের চোখ লাল হয়ে আছে।
-কি হয়েছে,পাখিটা?
-আপনি জানেন আপনার কল পেয়ে আমার কি অবস্থা হয়েছিলো?সময় পেরিয়ে যাবার পরও আপনি আসছেন না অথচ সেই আপনি কল করে বললেন হসপিটালে আছেন তাহলে কেমন লাগবে আমার কাছে,বলুন?
-আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি ভালো আছি। তুমি আব্বার সাথে বাড়িতে ফিরে যাও। আমি মি.রওনকের কাছে থাকব। দেখা যাক আগামীকাল সকালে ডক্টর কি বলে?এবং মি. রওনকের জ্ঞান ফিরে এলে উনার পরিবারের সাথেও তো যোগাযোগ করতে হবে।
-কিন্তু, আপনি?
-আমি ভালো আছি। চিন্তা করার দরকার নেই। বরং তুমি হসপিটালে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। কাল হসপিটালেও ডিউটি আছে তোমার।
রুশা সবকিছু ভেবে দেখলো, ঠিকই বলছে আদিল। তাই রায়হান সাহেব ফিরে এলে আদিলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেলো।
কিন্তু, বাড়িতে ফিরে আসার পরও রুশার অস্থিরতা বেড়ে গিয়েছে। ঘুম আসছে না এপাশ-ওপাশ ফিরে যখন দেখলো ঘুম আসছে না তখন উঠে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে ওযু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে লাগলো।
————————–
সারাদিন হসপিটালের ডিউটি শেষ করে বাড়িতে ফিরে এলো রুশা। ড্রইংরুমে প্রবেশ করতে অচেনা কয়েকটি মুখ দেখতে পেলো। রুশা ধীর পায়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে দেখতে পেলো আদিল ফিরে এসেছে।
রুশা হাসিমুখে আদিলের সামনে যেয়ে দাঁড়াতে আদিল ইশারায় করলো,কথা না বলতে।
রুশা আর কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলো।
আসলে, পুলিশ এসেছে সেই ঘটনার তদন্ত করার জন্য। আদিলের সাথে এই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। রুশাকে দেখতে পেয়ে পুলিশ বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করলো। রুশাও হাসিমুখে উওর দিলো।
পুলিশ চলে যেতে রুশা আদিলকে জিজ্ঞেস করলো,
-আপনি না বললেন আজ আসবেন না?
-বলেছিলাম, কিন্তু ডক্টরের সাথে আলাপ করে দেখলাম। উনারা বলছেন মি. রওনককে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবো কারণ উনার পেটের ক্ষত ততটা বেশি নয়। তাই ডিসচার্জ নিয়ে চলে এলাম।
-মি.রওনক কি আমাদের বাড়িতে থাকবে?
-হুম, একসপ্তাহের মত থাকবে। রাফসানের সাথে যোগাযোগ হয়েছে আমার, ও আজকের ট্রেনে ঢাকায় আসবে।
-কিন্তু, উনার সেবা-শ্রূষা কে করবে?
-আমি করবো।তাছাড়া, তোমার এইসব নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই কারণ সন্ধ্যার পর একজন নার্স আসবে।
রুশা মাথা নাড়িয়ে হাসিমুখে রুমের দিকে চলে গেলো কারণ হসপিটাল থেকে এসেছে শাওয়ার নেয়ার প্রয়োজন।
রুশা চলে যাওয়ার পর আদিল উঠে রওনককে যে ঘরে রাখা হয়েছে সে ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
রুশার ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চলে এলো কিচেনরুমে কারণ এখন বাড়ির সবার চা পান করবে সাথে বিস্কিট।
কিচেনে প্রবেশ করে আগে চুলায় চায়ের জন্য পরিমাপ অনুযায়ী পানি বসিয়ে দিলো। পানি ফুটে আসতে চার কাপ পানি অনুযায়ী ছ’চামচ চা-পাতা দিয়ে দিলো। এবার চুলার আঁচ মাঝারী রেখে দুমিনিটের মতো চায়ের লিকার ঘন করে নামিয়ে ফেললো। এরপর,প্রত্যকটি কাপে দেড় চামচ করে গুঁড়ো দুধ এবং একচামচ করে চিনি দিয়ে চায়ের লিকার ঢেলে নেড়ে ট্রেতে রাখলো। এরপর,একটা বাটিতে সুগার ফ্রি বিস্কিট সাজিয়ে ড্রইংরুমের টি-টেবিলের ওপর রাখতে দেখা গেলো রায়হান সাহেব সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছেন। উনার পিছনে আদিলকে দেখা যাচ্ছে।
রায়হান সাহেব সোফায় বসতে রুশা চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো। আদিল নিজেরটা নিয়ে নিলো।রুশা এবার নিজেও সোফায় বসে চা পান করছে।
রায়হান সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আদিলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-ছেলেটা কি করছে, এখন?
-ঘুমাচ্ছে।
-ওর পরিবারের কাউকে জানিয়েছিস?
-জি আব্বা। আচ্ছা,এক কাপ চা কার জন্য বানিয়েছো রুশা?
-আমি ভেবেছিলাম ফাহিমা খালা বাড়িতে আছে কিন্তু পরে মনে পড়লো উনি বাড়িতে নেই।
মন খারাপের সুরে বললো রুশা।
এরইমাঝে কলিং বেল বেজে উঠলো, আদিল রুশাকে ইশারা দিয়ে বসতে বলে এগিয়ে গেলো দরজা খুলে দিতে।
#চলবে
(কে এলো দরজার ওপারে? এবং কি অপেক্ষা করছে রুশা আর আদিলের জন্য?জানতে হলে চোখ রাখুন, জানি না টিভির পর্দায়।আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? )