শেষ বিকেলে এলে তুমি পর্ব -০৭+৮

#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#সিজন_২
#Tahmina_Akther

(৭)

এরইমাঝে কলিং বেল বেজে উঠলো, আদিল রুশাকে ইশারা দিয়ে বসতে বলে এগিয়ে গেলো দরজা খুলে দিতে।

দরজার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল রায়হান সাহেব আর রুশা।আদিল দরজা খুলে দেয়ার পর দরজার ওপাশে থাকা ব্যক্তিকে দেখে রুশা একপ্রকার চিৎকার দিয়ে উঠে দৌঁড়ে গিয়ে সেই ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরলো।

আদিল আর রায়হান সাহেব রুশার কান্ড দেখে হেসে দিলেন।

-কিছুক্ষণ আগেও তোমার কথা ভেবে মন আমার অনেক খারাপ হয়েছিল ফাহিমা খালা। তুমি আসবে একটিবারও বললে না কেন আমায়?

-আসলে হয়েছে কি আম্মা, আপনারা ওই যে কি জানি দেন সুরপ্রেরাজ? আপনারে ওইটা দিয়া খুশি করতে চাইছিলাম। এহন দেহি আপনে অনেক খুশি হইছেন।

-খালা এটাকে বলে সারপ্রাইজ,সুরপ্রেরাজ না বুঝলে?এখন তাড়াতাড়ি এসো তোমার জন্য আমি মনের ভুলে চা বানিয়েছিলাম এখন দেখি তুমি সত্যিই এসে পড়েছো।

-একটা কইতে পারলে হয়।

বলে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে রায়হান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিলেন। ফাহিমা খালা আদিলকে উদ্দেশ্য করে যখন কিছু বলতে যাবে,তখন আদিল বললো,

-আমি কে এখন তো তুমি চিনবে না। রুশা তোমার সব।

-আব্বা, এইডি আপনে কি কন? আমি সবার কথা মনে করি। তাই তো চইলা আইছি আপনেগো ছাড়া আমার দিল কোনোখানে বয় না।

-তুমি বসো খালা আমি তোমার চা গরম করে নিয়ে আসি।

রুশা ফাহিমা খালাকে সোফায় বসিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। এদিকে, বাকি সবাই বসে বিভিন্ন রকমের গল্প করতে লাগলো। এরইমধ্যে আদিল রওনকের কথাটি ফাহিমা খালাকে বলতে ভুল করলো না।

রুশা চা গরম করে এনে খালার পাশে এসে বসলো।

নানান রকম খোশগল্প করে ফাহিমা খালা আর রুশা মিলে রাতের খাবার রান্না করতে উঠে গেলো। রয়ে গেলো রায়হান সাহেব আর আদিল। আদিল তার আব্বাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-আব্বা, নার্স তো এখনও এলো না। রওনককে কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না?আমি, রুশা সকালে হসপিটালে চলে গেলে বাড়িতে শুধু আপনি আর ফাহিমা খালা থাকবেন। আপনারাও তো পারবেন না।

-আচ্ছা আমি কল দিয়ে জিজ্ঞেস করি আসবে কি না। তাছাড়া,নার্সের বাবার সাথে আমার অনেক আগে থেকে পরিচয় আছে৷ তুই টেনশন করিস না, আর ছেলেটার ছোট ভাইকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস কর কখন আসবে?

-আব্বা, বারবার কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলে উনারাও খারাপ ভাববে। আপনি বসেন আমি গিয়ে দেখি আসি উনার জ্ঞান ফিরে এসেছে কি না?

আদিল চলে যেতেই রায়হান সাহেব উনার রুমে চলে গেলেন।

এদিকে,

রওনকের জ্ঞান ফিরে এসেছে প্রায় মিনিট দশেক আগে। পেটের ব্যাথা যেন আগের তীব্র গতিতে বাড়ছে।

এত যন্ত্রণার মাঝেও রওনক অন্য ব্যাথায় বারংবার জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে। শত চেষ্টা করার পরও সে ওয়ালেটটি রাখতে পারেনি। তবে, এত চেষ্টা করে কি লাভ হলো তার?

হুট করে রুমের লাইট জ্বলে উঠতেই চোখ-মুখ কুঁচকে ফেললো রওনক অনেক সময় ধরে অন্ধকারে ছিল কি না?

আদিল এসেছে, এসে দেখলো রওনকের জ্ঞান ফিরে এসেছে হয়তো আরও আগে। হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে,

-এখন কেমন বোধ করছেন,মি.রওনক?

-এই তো আছি। আমার জন্য আপনার বেশ অসুবিধা হচ্ছে তাই না?

-কি যে বলেন?কিছু তো খাননি আপনি। কি খাবেন বলুন?

আদিলের কাছ থেকে খাবারের কথা শুনে রওনক টের পেলো আসলেই তার খুদা লেগেছে।

-লইট্যা শুটকি ভুনা আর আতপ চালের ভাত হবে।

-কেন হবে না? আপনি বসুন আমি রুশাকে বলে আসছি।

আদিল চলে গেলো আর রওনক ভাবতে লাগলো,

-খুব কি ক্ষতি হতো আপনি আমার হলে? মানুষের কাছে তো ভিক্ষা খুঁজলেও দান পাওয়া যায় কিন্তু আপনাকে ভিক্ষা হিসেবে চাওয়ারও মুখ আমার নেই।

এসব ভাবতে ভাবতে আদিল আবারও চলে এলো। আদিল এসে রওনককে বললো,

-আপনি ব্যবসায়িক মানুষ। কিন্তু, আপনি কিভাবে ওই ভুল কাজটি করলেন?আইফোন দিয়ে দিলেন অথচ ওয়ালেট দিবেন না। কি ছিল ওই ওয়ালেটে যার জন্য ছিনতাইকারীদের সাথে এত হাতা পাই হলো।

রওনক আদিলের প্রশ্ন শুনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,

-আমার খুব পছন্দের মানুষের একটি ছবি ছিল সেই ওয়ালেটে।

-ছবি ছিল! এক কপি ছবি চলে গেলে আরেক কপি রাখতেন ওয়ালেটে।

-আমার কাছে সেই মানুষটির একটাই ছবি ছিল। হয়তো ভাবছেন ছবির জন্য কেন এমন করলাম? আসলে, সেই মানুষটি আমার অনেক কাছে থেকেও বহু দূরে। তার একটিমাত্র ছবি ছিল আমার কাছে কোটি টাকার সম্পদের মতো। কিন্তু, তার শেষ স্মৃতিটুকু আমি রাখতো পারলাম না। ছিনিয়ে নিয়ে গেলো সেই ছিনতাইকারী দলের লোকেরা।

খানিকটা বিষন্ন স্বরে বললো রওনক। আদিল বেশ অবাক হয়ে শুনলো রওনকের কথা।সবশেষে, আদিল শুধু একটা কথা বললো,

-ভালোবাসা বড্ড খারাপ জিনিস।ছোঁয়াচে রোগ হৃদয়ে একবার ছুঁয়ে গেলো পুরো শরীরে এই রোগ বাসা বাঁধে।

রওনককে রাতের খাবার দেয়ার পর রওনক পেটপুরে খেলো। খাবার শেষ করে আদিলকে বললো,

-আমি অসুস্থ থাকারও পর আজ যতটুকু খেলাম হয়তো সুস্থ থাকলে আরও বেশি খেতাম। রান্নার হাত অনেক ভালো আপনার ওয়াইফের। জীবন ভর মজার খাবার খেয়ে আপনার দিন কাটবে।

আদিল হেসে ফেললো রওনকের প্রশংসা শুনে আসলেই রুশার রান্নার হাত অনেক ভালো। গ্রামে বড় হয়েছে দেখে নয়তো শহুরে মেয়েরা আজকাল ভালো রান্না জানবে কোত্থেকে?

———————

রুশা আর ফাহিমা খালা সকালের নাশতা তৈরি করছিলো এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। রুশা ফাহিমা খালাকে বললো,

-খালা তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দাও হয়তো মি. রওনকের ছোট ভাই এসেছে।

-আচ্ছা, আমি যাইতাছি।

ফাহিমা খালা দ্রুত পায়ে হেঁটে সদর দরজা খুলে দিতে একটি ছেলেকে দেখলো,

-আফনে কি রাফসান?

-জি, এটা কি ডা.রায়হান সাহেবের বাড়ি?

-হ, আপনি আহেন ভিতরে। আমি আদিল বাবারে ডাইকা আনতাছি।

-না থাক আন্টি আপনি কষ্ট করে আমাকে আমার ভাইয়ের কাছে নিয়ে যান।

রাফসানের কন্ঠে ছিল ভাইকে একপলক দেখার জন্য এক সমুদ্র আকুলতা।

ফাহিমা খালা রুশাকে একফাঁকে রাফসানের আসার খবর দিয়ে রওনকের কাছে নিয়ে গেল।

রাফসান রওনকের ঘরে ঢুকার পর দেখলো তার ভাই ঘুমিয়ে আছে। মুখটা বেশ শুকিয়ে আছে, গালে থাকা দাড়ি গুলো বেশ বড় হয়েছে।

ধীর পায়ে হেঁটে রওনকের পায়ের কাছে বসলো রাফসান। দুচোখের নোনাপানি গাল গড়িয়ে পড়তে লাগলো রাফসানের। কারণ, তার এই ভাইটা ছাড়া আর কেউ নেই। পাঁচ বছর আগে রোড এক্সিডেন্টে তাদের বাবা-মা মারা যায়। তখন থেকেই রাফসান তার ভাইয়ের কাছে মানুষ হচ্ছে। তার ভাইটা এখনো বিয়ে অব্দি করেনি শুধুমাত্র রাফসানের ক্যারিয়ারের আশায়।রওনকের একটি আশা, তার ভাইটা ভালো পজিশনে দাঁড়ালে সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে তার আগে নয়।

তার ভাইটা হাসিমুখে তো বেরিয়ে ছিল ঢাকার উদ্দেশ্য। কে জানতো এই ঢাকা শহরে এসে তার ভাইটা এভাবে মারাত্মক বিপদে পড়বে।

ভাগ্যিস, ডা.আদিল ছিল নয়তো তার ভাইটার কি হতো কে জানে?

এই ভাবনা মনের মাঝে উঁকি দিলে রাফসানের বুক ধরফর করে উঠে।

-রাফসান কখন এলে?

রাফসান ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো দরজার সামনে আদিল এসে দাঁড়িয়ে আছে। রাফসান তৎক্ষনাৎ ঘাড় ফিরিয়ে তার চোখের কোণায় জমে থাকা পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো। এরপর,আদিলের সামনে গিয়ে বললো,

-এই তো এলাম দশমিনিট আগে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার ভাইটাকে দেখে রাখার জন্য।

-ধন্যবাদ, দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমি তোমার সামনে বিপদে পড়লে তুমিও আমার হেল্প করতে, তাই না?এখন, রওনক ঘুমাচ্ছে তারচেয়ে বরং তুমি আমার সাথে এসো। হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হও সকালের খাবার খাবে আমাদের সাথে।

-না,আমি ভাইয়ার সাথে খাবো।আমি এইখানে থাকি ভাইয়া ঘুম থেকে জেগে আমাকে দেখলে অনেক খুশি হবে।

-আচরণ, তাহলে আসছি আমি সন্ধ্যায় তোমাদের সাথে দেখা হবে। কিছুর প্রয়োজন হলে ফাহিমা খালাকে ডাক দিলে উনি এসে দিয়ে যাবে।

আদিল চলে যেতে রাফসান আবারও আগের জায়গায় গিয়ে বসে রইলো অপেক্ষা তার ভাইয়ের ঘুম ভাঙার।
#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#সিজন_২
#Tahmina_Akhter

(৮)

-আত্তি,আমা পেত বেতা। তুমি ওথুত দিবা। (আন্টি আমার পেট ব্যাথা ঔষধ দিবা)

রুশা তখন রাউন্ডে বাচ্চা রুগীদের দেখছিলো এমন সময় পাশের বেডে থাকা এক বাচ্চা তাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলে।

রুশা হাসিমুখে এগিয়ে গেলো বাচ্চাটির দিকে, এরপর,জিজ্ঞেস করলো,

-হ্যা, অবশ্যই দিব। তার আগে বলো তো তোমার আম্মু কোথায়? তুমি একা বসে আছো কেন?

-আম্মু এততু বাইরে গেতে (আম্মু একটু বাইরে গেছে)

রুশা হেসে ফেললো বাচ্চা মেয়েটির কথা শুনে। তোতলামো করে কথা বলা বাচ্চাদের কথাগুলো শুনতে বেশ লাগে রুশার। কিন্তু, এই বাচ্চাদের তোতলামো বড় হওয়ার পর ঠিক না হলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। মানুষের কাছে হয়ে যায় হাসির পাত্র।

রুশা চারবছরের মেয়েটাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করছিল এমন সময় পিছন থেকে একজন বলে উঠলো,

-এই নুশফা, উনার কোলে উঠেছো কেন?নামো কোল থেকে।
ম্যাম, আপনি কেন ওকে কোলে নিতে গেলেন?দিন ওকে আমার কাছে।

বলে নারীটা আমার কোল থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে গেলো।বাচ্চাটি ভীষণ মন খারাপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি ওর মন ভালো করার জন্য বললাম,

-নুশফা, আমার এখন ডিউটি চলছে।আমাকে এখন যেতে হবে। কাল আবার আসবো।

ছোট নুশফা বুঝলো কি না কে জানে? কিন্তু, ও মাথা নাড়িয়ে ওর মায়ের কাঁধে মুখ গুঁজে রইলো। আমি হেঁসে যখন নুশফার আম্মুকে কিছু বলতে যাবো তখন খেয়াল করে দেখলাম, উনাকে আমার ভীষণ পরিচিত মনে হচ্ছে।একটু খেয়াল করতে মনে পড়ে গেলো আসলে নুশফার আম্মু হচ্ছে আমার প্রাক্তন স্বামী রাফির দ্বিতীয় স্ত্রী।

তবে, কি এই মেয়ে বাচ্চাটা উনার? কৌতুহল দমাতে না পেরে নুশফার আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,

-কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতে পারি?

-কি যে বলেন ম্যাম? যা ইচ্ছে জিজ্ঞেস করুন।

-আপনার বাচ্চা ক’জন?

-আলহামদুলিল্লাহ,আমার দু’জন মেয়ে।আমি আল্লাহর কাছে অনেক খুশি কন্যা সন্তানের মা হয়ে।কিন্তু, আমার শ্বাশুড়ি মেনে নিতে পারছেন না কেন আমার মেয়ে হয়? কিন্তু, আমার স্বামীর জন্য আমার শ্বাশুড়ি আমাকে কিছু বলতে পারেন না৷ আমার স্বামী বড্ড ভালো মানুষ জানেন।

রুশা একদিকে যেমন অবাক হলো তেমনি খুশিও হলো রাফির পরিবর্তনের কথা শুনে।

-ডা.রুশা আপনাকে ডা.শিউলি ম্যাম ডাকছেন।

রুশা তাকিয়ে দেখলো ওকে মিসবাহ ডাকছে। রুশা কিছুটা ভ্রু কুঁচকালো কারণ আজ দু’বছর হতে চললো,মিসবাহর সাথে ওর কোনোদিন কথা হয়নি সেই ঘটনার পর থেকে। একপ্রকার মিসবাহকে এড়িয়ে চলে রুশা।

ফিরে আসার আগে নুশফার আম্মুকে রুশা বললো,

-আপনি আপনার শ্বাশুড়িকে সময় পেলে জিজ্ঞেস করবেন, রুশা নামে কাউকে জানে কি না?

এই কথাটুকু বলে রুশা দ্রুত প্রস্থান নিলো। আর নুশফার আম্মু অবাক চাহনিতে রুশার যাওয়ার পথে চেয়ে রইলো।

রুশা সহ আরও অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে ডা.শিউলি ম্যামের চেম্বারে। নাজ একবার রুশাকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করেছিল, কেন এখানে সবাই একসাথে জড়ো হলো?রুশা ঘাড় নাড়িয়ে জানালো সে জানে না।

দরজা খুলে চেম্বারে প্রবেশ করলো ডা.আদিল এবং ডা.শিউলি ম্যাম।

সবাই উনাকে সালাম দিলে উনি সালামের উত্তর দিয়ে সবাইকে বসার জন্য ইশারা করলো। সবাই যার যার আসন গ্রহণ করলো।

আদিল এসে রুশার পাশে বসে পড়লো আর চোখের ইশারায় কি যেন বলতেই রুশা লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।

-সবাই নিশ্চয়ই জানেন আমার মেয়ে ডা.জিনিয়া রংপুর মেডিকেলের চিকিৎসক।

-জি ম্যাম।

-আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আমার মেয়ের বিয়ে গতকাল রাতে সম্পন্ন হয়েছে পারিবারিকভাবে। কিন্তু, আমার মেয়ের বিয়ের মূল অনুষ্ঠান আগামী শুক্রবারে অনুষ্ঠিত হবে।আমার মেয়ের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান দিনে আপনারা সকলে উপস্থিত থাকবেন এই আশা করছি।

সবাই বেশ খুশি হলো জিনিয়ার বিয়ের কথা শুনে।আসলে সকলেই জানে জিনিয়া আদিলকে পছন্দ করতো কিন্তু আদিল সে তো তার মাধুর্যতে বিভোর ছিল,আছে,থাকবে।

ডা.শিউলি সকলের হাতে বিয়ের কার্ড দিয়ে আদিলের সামনে একটি কার্ড বাড়িয়ে দিলেন। আদিল হাসিমুখে কার্ডটি নিয়ে বললো,

-জিনিয়া একটিবার আমাকে কল করেও বললো না। অথচ, যে কোনো কিছু ও সবার আগে আমার কাছে শেয়ার করে।

-জিনিয়াকে একবার কল দিয়ে জিজ্ঞেস করো ও কেমন আছে? কেন তোমায় ওর জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ কথাটা জানালো না?

এই কথাটি বলে ডা.শিউলি চেম্বার ছেড়ে বের হয়ে গেলেন উনার পিছু পিছু বাকি সবাই চলে গেলো। বাকি রইলো আদিল, রুশা আর নাজ।

-রুশা, আমি চলি। ভালো থাকিস আগামীকাল হলুদের অনুষ্ঠানে দেখা হচ্ছে তবে।

নাজ হাসিমুখে কথাগুলো বলে বের হয়ে গেলো। রুশা আদিলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, আসলেই কি শিউলি ম্যামের মেয়ে জিনিয়া আদিলকে পছন্দ করতো? কিন্তু, এই কথা তো আদিল কখনোই আমাকে বলেনি।

-কি হয়েছে, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

-আপনি তো কখনো বলেননি জিনিয়া আপনাকে পছন্দ করে?

-জিনিয়া আমাকে পছন্দ করে কিন্তু আমি তো করতাম না। যদি আমি পছন্দ করতাম তাহলে তোমাকে বলতাম, যে আমার অতীতে কেউ ছিল তাকে আমি?

রুশা ডানহাত দিয়ে আদিলের মুখ চেপে ধরলো।আদিলের মুখে হাসির বলিরেখা উদয় হলো। সে জানে তার মাধুর্য এখন ভীষণ রেগে আছে তার উপর কিন্তু প্রকাশ করবে না।

-ইদানীং, বেশি কথা বলেন আপনি। আমি বিস্তারিত জানতে চেয়েছি কি হয়েছিলো?বাড়িতে চলুন মি.রওনক আর রাফসান যে আজ রাতে চলে যাবে খেয়াল আছে আপনার? আদিলের মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো রুশা।

-আসলেই আমার খেয়াল ছিল না,জলদি চলো।

—————————-

তখন প্রায় সন্ধ্যেবেলা।লাল কালো আলোর খেলায় চারপাশ কেমন আবছা আলোয় পরিপূর্ণ। রুশা তখন মাগরিবের নামাজ শেষ করে জায়নামাজ গুছিয়ে রাখতে যাচ্ছিল এমনসময় হুট করে ওর রুমের দরজা খুলে প্রবেশ করে রাফসান৷

হুট করে রাফসান চলে আসাতে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে রুশা৷ তারপর, হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে,

-কি ব্যাপার, রাফসান? কিছু বলবে?

-আসলে,আপনাকে ধন্যবাদ দিতে এসেছিলাম।
আমার ভাইকে সেদিন বিপদ থেকে রক্ষা করে আপনাদের বাড়িতে আশ্রয় দেয়ার জন্য। বিগত সাতদিন ধরে আপনাদের বাড়িতে আমাদের দু’ভাইকে অনেক যত্নআত্তি করার জন্য ধন্যবাদ।

-কি সব বলো রাফসান? মানুষ মানুষের জন্য এই কথাটি নিশ্চয়ই জানো৷ তবে ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে বা আদিলকে ছোট করবে না।

-আচ্ছা, বলবো না। একটু পর আমরা বের হয়ে যাবো। আসলে ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে সংকোচবোধ করছে তাই বললো এই কাগজটা আপনার কাছে পৌঁছে দিতে।

বলে রাফসান একটি কাগজ এগিয়ে দিলো রুশার দিকে।

রুশা কাগজটা হাতে নেয়ার আগে ওর মোবাইল বেজে উঠলো, রুশা কাগজটা হাতে না নিয়ে আগে কল রিসিভ করলো,

-হ্যালো?

-রুশা, বাড়ির বাইরে এসো তো।

-কিন্তু, কেন?

-আহা এসো তো।

রুশা কল কেটে রাফসানের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে বললো,

-তুমি বসো আমি একটু নিচ থেকে আসছি।

-আচ্ছা, যান। আমিও চলে যাচ্ছি ভাইয়া একা বসে আছে।

রাফসান রুম ছেড়ে বের হয়ে যেতেই রুশা ঘর ছেড়ে বের হয়ে চললো বাড়ির বাইরের দিকে।

রুশা বাড়ির সদর দরজা পের হতেই দেখতে পেলো আদিল অদূরে দাঁড়িয়ে আছে।

তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে চললো।সোডিয়াম লাইটের আলোয়ে আদিলের একপাশ দেখা যাচ্ছে।

রুশা খেয়াল করে দেখলো আদিল আগের থেকে কিছুটা স্বাস্থ্যবান হয়েছে,গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি,সাদা রঙের পাঞ্জাবিতে আজ কিছুটা বেশি হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে।

রুশা নিজেকে নিজে বললো,

-মাশাআল্লাহ বল রুশা। নয়তো তোর স্বামীর তোরই বদনজর লেগে যাবে।

রুশার উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে ঘুরে তাকালো আদিল। রুশাকে দেখতে পেয়ে আদিল মুখে হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে গিয়ে রুশার ডানহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,

-রুশা, তোমাকে কি ভাবে বলি কথাটা?আমি আজ ভীষণ খুশি।

-কি হয়েছে যে আজ আপনি এত খুশি?

রুশার কোমড় জরিয়ে কাছে টেনে নিলো আদিল। রুশা লজ্জা পেয়ে বলতে লাগলো,

-আর কেউ চলে আসবে। কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে বলেন?

-কেউ আসবে না? এখন তুমি মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনো মাধুর্য।

রুশার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো আদিল।রুশা নিশ্চুপ হয়ে আদিলের চোখের দিকে তাকালো,

-তুমি আর আমি অতি শীঘ্রই সিনিয়র পদে নিযুক্ত হবো। তুমি হবে মা আর আমি হবো বাবা। উফফ, রুশা আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাবো। এত খুশির খবর কি এত আস্তে আস্তে বলা যায়!

রুশার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না আদিলের কথা। লোকটা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি!

-গতকাল, যে তুমি চুপিচুপি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে গিয়েছিলে সেই টেস্টের রিপোর্ট আজ এসেছে।আমাকে কল করে বলেছে ডা.রুমা।

সত্যিই গতকাল ডা.রুমার কাছে গিয়েছিলো রুশা। কারণ,দু’বার ওর পিরিয়ড মিস হয়ে গেছে। কিন্তু, ডা.রুমা যে ওকে না জানিয়ে আগে আদিলকে এই সংবাদ দিবে কে জানতো?

-আদিল,সত্যি কি এবার কোল ভরে কেউ আসবে! যার মুখের দিকে তাকালে পুরোনো সব ক্ষত মুছে যাবে আমার।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here