শেষ বিকেলে এলে তুমি পর্ব -১৩+১৪

#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#সিজন_২
#Tahmina_Akther

(১৩)

-আমি সেদিন চট্টগ্রামে আসি রওনকের সাথে দেখা করার জন্য। রুশা আর আদিলের মাঝে যত দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সব কিছুর পেছনে দায়ী ছিলেন রওনক মির্জা৷এতকাল আমরা সবাই এটাই ভেবে এসেছি।কিন্তু, এখানে আসার পর আমার এতদিনের পুরো ভাবনা মিছে হয়ে গেলো।

-আপনি এসব কি বলছেন ডক্টর নাজ? আমি কেন রুশাকে চিঠি দিতে যাবো? তাছাড়া, আপনার কাছে কি প্রমাণ আছে যে ওই চিঠি আমি রুশাকে দিয়েছি?

নাজকে কথা বলার মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললো রাফসান।

কথার মাঝপথে বাঁধা পেয়ে নাজের চেহারায় বিরক্তির ছাঁপ স্পষ্ট হলো।

-প্রমাণ আমি কেন দিতে যাবো?সত্যি করে বলুন তো সেদিন রওনক রুশাকে কোনো চিঠি দিয়েছিল?নাকি গিফট বক্সে রুশার জন্য নীল শাড়ি,চুড়ি রওনক দিয়েছিল?নাকি সুদূর চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা কুঞ্জবাড়িতে প্রতিনিয়ত রওনক রুশার কাছে প্রেমপত্র আদানপ্রদান করেছে? রাফসান আপনি নিজেকে বড্ড চালাক ভাবেন, প্রকৃত অর্থে আপনি বড্ড বোকা।

আদিল,রুশা এবং রওনকের দৃষ্টি এবার রাফসানের উপর।রাফসানকে এবার কিছুটা অপ্রস্তুত দেখাচ্ছে।

নাজ টেবিলের রাখা ব্যাগ থেকে একটি কাগজ বের করে সবার সামনে ধরে বললো,

-এই হাতের লেখা হচ্ছে রওনকের। কিন্তু, যেই চিঠি রুশার কাছে গিয়েছে সেই চিঠির হাতের লেখার সাথে একরত্তি মিল নেই।

নাজ কাগজটি এগিয়ে দিলো আদিলের কাছে। আদিল তার মোবাইলের গ্যালারিতে গিয়ে সেই চিঠির ছবির সাথে এই কাগজের হাতের লেখার সাথে মিলিয়ে দেখলো আসলেই হাতের লেখার সাথে মিল নেই। রুশা আদিলের হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে দেখলো, সত্যিই মিল নেই।

-এবার এই ডায়েরির পাতায় লেখাগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখুন আদিল স্যার। হুবহু মিলে যায় হাতের লেখা।

নাজের হাত থেকে ডায়েরিটা নিয়ে মিলিয়ে দেখলো সত্যিই এই ডায়েরির হাতের লেখার সাথে মিল আছে।

আদিল পুরো হতভম্ব হয়ে গেলো। মানে এতদিন তারা একটা নির্দোষ মানুষকে দোষী ভেবে এসেছে। প্রতিনিয়ত গালমন্দ করে এসেছে। এইসব ভাবতে গিয়ে লজ্জায় আদিলের মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে।

-তো রাফসান এই ডায়েরিটা নিশ্চয়ই তোমার?

-ডক্টর, নাজ। এতক্ষণ আপনাকে আমি যথেষ্ট সম্মান দিয়ে কথা বলছি তাই বলে ভেবে নিবেন আপনি আমার উপর যা তা চাপিয়ে দিবেন।তাছাড়া, কারো পারসোনাল ডায়েরি অনুমতি ছাড়া পড়তে নেই আপনি জানেন না? নাকি নুন্যতম ভদ্রতা নেই আপনার মাঝে!

-রাফসান, আমি জানি কারো পারসোনাল জিনিস পারমিশন ছাড়া ধরতে নেই। কিন্তু, রাফসান তুমি ঠিক কতটা ডিসিপ্লিন? মানে, নিজের ভাইয়ের নাম ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত অন্যের স্ত্রীকে প্রেমপত্র দিয়ে এসেছো,প্রতিনিয়ত পার্সেল করে শাড়ি পাঠিয়েছো।এখন তুমি বলো তুমি যেই কাজগুলো করেছো এগুলো ঠিক কতটা ভদ্রতার পর্যায়ে পরে ?

-আমি রুশাকে ভালোবাসি, এটাই সবচেয়ে বড়ো কথা।আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম নিজেকে মিথ্যে স্বান্তনা দিতে দিতে।

রাফসান বেশ চিল্লিয়ে কথাগুলো বলে উঠলো। উপস্থিত সকলেই যেন এবার অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে। বিশেষ করে রওনক, আদিল আর রুশা।

রাফসান রুশার পায়ের কাছে এসে বসে পড়লো। রুশা সরে এসে আদিলের শরীরের সাথে ঘেঁষে বসে রইলো।

-রুশা, আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনাকে ভাইয়া কোনোপ্রকার চিঠি দেয়নি।দশটা চিঠিতে লিখিত প্রতিটি শব্দ আমার লেখা।আমি দিশেহারা বোধ করেছিলাম। তাই উপায় না পেয়ে ভাইয়ার নাম ব্যবহার করেছি। আপনার জন্য যেই শাড়িগুলো পাঠিয়েছি, সেইসব শাড়িগুলো আমি মনের কল্পনা দিয়ে দেখেছি, আপনাকে দারুন মানাবে সেই শাড়িগুলোতে।

-রাফসান, কিন্তু কক্সবাজারে তুমি আমাদের বলেছিলে তুমি রুশাকে ভাবি বানাতে চাও? তাই আমিও অতটা গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু, তুমি যে এরকম একটি জঘন্য কাজ করবে আমি ভাবতেও পারিনি!
আদিল রেগেমেগে কথাগুলো বলে চেঁচিয়ে উঠলো।

-আদিল,আপনার রাগ হচ্ছে কারণ সে মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছে।আর আমার রাফসানের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে, কেন জানেন?

রওনকের প্রশ্নে সকলেই রওনকের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফসান তার ভাইয়ের কথার ভাবার্থ বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে ফেললো।

-সেদিন ঢাকায় এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় যেই ছিনতাইকারীদের কবলে আমরা পরেছিলাম। তা সম্পূর্ন পরিকল্পিত ছিল এবং এইসব কিছুর মাস্টারমাইন্ড ছিল আমার ছোট ভাই রাফসান।
আ’ম আই রাইট, রাফসান?

আদিল আর রুশা যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা মানে কি হচ্ছে?

-সেবার আমি ঢাকা যাওয়ার আগে রাফসানকে কথার ছলে বলেছিলাম আমি ডক্টর আদিলের সাথে দেখা করে আসবো।তো আমিও আপনার সাথে দেখা করতে গেলাম। কিন্তু, কে জানতো আমার ভাই তার প্লান মোতাবেক অন্যকিছু ভেবে রেখেছিল।সেদিন, ছিনতাই ছিল নামমাত্র ঘটনা। মুল কারণ ছিল ডক্টর আদিলকে হত্যা করা কিন্তু ভাগ্যের উত্থানে সেদিন আমি তাদের হামলার শিকার হই। আদিলের দিকে তেড়ে আসা ছুড়ির আঘাত আমার শরীরে আঘাত লাগে।আমার ভাইয়ের প্লান ফ্লপ।মি.আদিল ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেছেন।
আমার ভাবতে ঘৃনা হচ্ছে আমার ভাই কাউকে পাবার নেশায় হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। কাউকে পাবার নেশায় আমার নাম ব্যবহার করেছে। রাফসান,কি এমন অপরাধে আজ তুই আমাকে এমন পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়েছিস?

রওনকের একটি কথারও উত্তর আজ নেই রাফসানের কাছে। সে শুধু জানে রুশাকে পেতে সে যা কিছু করেছে সব ঠিক ছিল।

-রাফসান, তোমাকে আমি আমার ছোট ভাইয়ের মতো ভেবেছি আর তুমি কি না? ছিহ্ আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে। আদিল, আমি আর একমূহুর্তের জন্য এইখানে থাকতে চাই না। প্লিজ,আপনি আমায় ঢাকায় নিয়ে চলুন।

রুশা সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে আদিলের উদ্দেশ্য কথাগুলো বললো।আদিল উঠে গিয়ে রুশার হাত ধরে বললো,

-রুশা প্লিজ তুমি হাইপার হইও না।আমরা আজই চলে যাবো।

রাফসান দ্রুতপায়ে এগিয়ে রুশার সামনে এসে হাতজোড় করে বলছে,

-রুশা, প্লিজ তুমি যেও না। তুমি আমার কাছে চলে এসো৷ আমি তোমাকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুখে রাখবো।তুমি এই ডক্টরের কাছে সুখে থাকবে না।আমি তোমাকে ভালোবাসি রুশা।

মূহুর্তে থাপ্পড়ের ঠাস ঠাস শব্দে পুরো ড্রইংরুমে প্রতিধ্বনি হলো।গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাফসান আর রুশা অগ্নিমূর্তি হয়ে রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে ক্রোধ নিয়ে।

-তুই আদিলের পায়ের নখের যোগ্য না। তুই শুধু মানুষের সুখের সংসার নষ্ট করতে পারিস। কারো সুখের কারণ হতে পারিস না। আর একবারের জন্যও তোর ওই নোংরা মুখে আমার বা আদিলের নাম উচ্চারণ করবি না। যে লোক তার ভাইয়ের নাম ব্যবহার করে তার স্বার্থ হাসিল করার জন্য। যে লোক একটা মানুষকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে সে আর যাই হোক ভালো মানুষ হতে পারে না।তোকে শুধুমাত্র তোর ভাইয়ের জন্য পুলিশের কাছে দিচ্ছি না নয়তো আমি নিজ হাতে তোকে পুলিশের কাছে তুলে দিতাম।

রাফসান অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে রুশার দিকে।

সে রাতে আদিল আর রুশা ঢাকার পথে রওনা হয়। রওনক আদিল আর রুশার কাছে ক্ষমা চায় রাফসানের কৃতকর্মের জন্য।

রুশা চলে যাবার সময় নাজ রুশার কানে কিছু বলতেই রুশা আশ্বাস দেয় সে ব্যাপারটা সামলে নিবে।

আদিল আর রুশা চলে যাবার পর থেকে দরজা খিল এঁটে বসে আছে রাফসান।

রওনক একটিবারের জন্যও রাফসানকে ডাক দেয়নি। এতবছর ধরে তার প্রত্যেকটি খারাপ কাজকে সে অদেখা ভাবে দেখে এসেছে কিন্তু সে আজ যে কাজগুলো করেছে সেই কাজের কোনো মাফ নেই রওনকের কাছে।

এতকিছুর মাঝেও রওনকের বুকের বা পাশে আজ কেমন শীতল অনুভব হচ্ছে। আজ কতগুলো দিন পর তার ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছে সে। নাজকে সে কোনোদিন খুঁজে পাবে সে কখনোও কল্পনাও ভাবতে পারেনি।
#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#সিজন_২
#Tahmina_Akther

(১৪)

সেদিনের পর আরও পনেরো দিন অতিবাহিত হয়েছে। রুশা চট্টগ্রাম থেকে আসার পর কিছুটা অসুস্থ হয়ে যায় কিন্তু আদিলের সেবায় সুস্থ হয়।

রুশা এখন কুঞ্জ বাড়িতে চলে এসেছে কি দরকার মনের মাঝে এত অভিমান রেখে,যেখানে আদিলের কোনো দোষ নেই। রুশা যদি চিঠি বা শাড়িগুলো আদিলের কাছ থেকে না লুকিয়ে, সত্য ঘটনা বলতো তবে ঘটনা এতদূর পর্যন্ত এগুতো যেতো না। হয়তো তাদের দুজনের জীবনে সেই বিষাদময় দিনগুলো আসতো না।

রুশা এখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।তাই আদিল বারবার রুশাকে বলছে মেটারনিটি লিভে যেতে কিন্তু রুশা মানছে না। ওর একটাই কথা ও আরও একমাস পর ছুটিতে যাবে। আদিল রুশার জিদের কাছে হার মানে।

আদিল রুশাকে সকালের নাশতা খাইয়ে দিচ্ছে এবং নিজেও খাচ্ছে আর পাশে চেয়ারে বসে নাশতা খাচ্ছেন রায়হান সাহেব। ফাহিমা খালা এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছেন। সবাই এতবার বলার পরও উনি একসাথে বসে নাশতা খেতে রাজি হননি।

এমন সময় আদিলের মোবাইলে কল আসে। আদিল একহাতে দিয়ে তার প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল আসছে। আদিল কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো,

-তুমি কি ডা.আদিল রহমান?

-জি, আপনি কে বলছেন?

-আমি তোমার কলিগ তাবাসসুম নাজের বাবা এডভোকেট, নাজমুল হোসেন বলছি। তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে। আমাদের বাড়িতে চলে এসো এবং সাথে করে নাজের বেস্ট ফ্রেন্ড রুশাকে নিয়ে এসো।

-জি স্যার, নিয়ে আসবো।

আদিল কল কেটে দেয়ার পর দেখলো ওর আব্বা আর রুশা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মোবাইল টেবিলের উপর রেখে আদিল একটুকরো ফল রুশার মুখের সামনে ধরে বললো,

-আমাদের একটু পর নাজের বাড়িতে যেতে হবে। ওর বাবা কল করেছে।

রুশা বিনাবাক্য ব্যয়ে খাবার শেষ করে রুমে চলে গেলো। রায়হান সাহেবের সাথে বিভিন্ন রকমের আলাপ করে আদিলও চলে উঠে চলে গেলো ওর রুমের দিকে।

রুমে দরজা খুলে প্রবেশ করতেই আদিল দেখলো, রুশা ভেঁজা চুলগুলো পিঠের ওপর ছড়িয়ে ফ্যানের বাতাসে শুকানোর চেষ্টা করছে।

আদিল এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার খুলে হেয়ার ডায়ার নিয়ে রুশার চোখের সামনে তুলে ধরলো। রুশা ডায়ারটি দেখে বললো,

-এটা দিয়ে আমি কি করবো?

-এটা দিয়ে মানুষ কি করে ভেজাচুল শুকায়!রুশা এতক্ষণ ধরে তুমি ভেঁজা চুল নিয়ে ঘুরছো?

-আমি কখনোই ডায়ার দিয়ে চুল শুকাই না।এখন জলদি করে আমাকে রেডি হতে সাহায্যে করুন।

আদিল রুশার কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেলো। এরপর,নীল রঙের একটি আবায়া বের করে রুশার দিকে এগিয়ে দিলো। রুশা আবায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, আদিল যখন দেখলো রুশা ওর হাত থেকে না নিয়ে তাকিয়ে আছে তখন আদিল রুশাকে প্রশ্ন করে,

-পছন্দ হয়নি?

-হয়েছে তো। কিন্তু,?

-কিন্তু, কি?

-দেখছেন না পেট উঁচু হয়ে আছে এখন এই রঙটা পরলে পেট উঁচু দেখা যাবে বেশি আপনি বরং কালোটা নিয়ে আসুন।

আদিল রুশা কথা শুনে মুচকি হেঁসে কাবার্ড থেকে কালো আবায়া এনে রুশার কাছে দিলো।

রুশা ধীরে ধীরে তৈরি হয়ে নিলো। রুশা তখন ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে কাজল দিচ্ছিলো আর আদিল পাঞ্জাবি পড়ছে। হুট করে আদিলের নজর পড়লো আয়নায় থাকা রুশার প্রতিবিম্ভে। কালো আবায়া,কালো হিজাব,হাতে কালো রঙের লেডিস ওয়াচ,চোখে কাজল, উচু উদর যেন আজ রুশাকে স্বর্গের পরিদের মতো দেখাচ্ছে। তার কালো পরি, হ্যা রুশাকে আজ সত্যি কালো পরি লাগছে আদিলের কাছে।

রুশা তৈরি হয়ে আদিলের দিকে তাকালো দেখলো আদিল ওর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রুশা ধীরগতিতে এগিয়ে গেলো আদিলের কাছে এরপর জিজ্ঞেস করলো,

-আদিল?

-হ্যা

-কি দেখছেন ওমন করে?

-দেখছি রাস্তা ভুল করে আমার ঘরে চলে আসা এক কালো পরিকে।

-তা এই কালো পরিটা কে?

-আমার মাধুর্য,

-কালো পরিও হয় না-কি?

-হয়তো বাস্তবে কালো পরি নেই, কিন্তু তুমি আমার কালো পরি,মাধুর্য।

-হয়েছে, এবার চলুন। দেরি হয়ে যাচ্ছে, আজ হয়তো রওনক এসেছেন নাজদের বাড়িতে।

রুশা যখন কথা বলতে ব্যস্ত ঠিক তখন আদিল তার মাধুর্যকে দেখতে ব্যস্ত। আদিল একপা এগিয়ে রুশার খুব কাছে দাঁড়ালো।রুশার কথা বন্ধ হয়ে গেলো আদিলকে এত কাছে আসতে দেখে।

-কি হয়েছে, আদিল?

-হুশশ কথা বলো না, রুশা।

রুশার ঠোঁটে আলতো করে আঙুল রেখে বললো আদিল।আদিল এগিয়ে রুশার ডানগালে চুমু দিতেই রুশা চোখ বন্ধ করে ফেললো।

আদিল সরে এসে রুশার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো রুশা চোখ বন্ধ করে ফেলছে। আদিল মুচকি হেঁসে রুশার বন্ধ দুচোখের পাতায় চুমু দিয়ে নিকাব নামিয়ে দিলো রুশার মুখশ্রীর উপর।

রুশা ততক্ষণে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। আদিল রুশার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেলো। রায়হান সাহেব তখন ড্রইংরুমে বসে নিউজপেপার পড়ছিলেন। আদিল আর রুশাকে দেখে হাসিমুখে বিদায় জানালেন।

রুশাকে খুব সাবধানে কারের সিটে বসিয়ে আদিল ড্রাইভিং সিটে বসিয়ে কার স্টার্ট দিলো। সারাপথ তারা কেউই কথা বললো না।

কার যখন নাজেদের বাড়ির সামনে থামলো ঠিক তখনি রুশা বের হবে ঠিক এমন সময় কি মনে হতেই রুশা এগিয়ে আদিলের গালে চুমু দিয়ে কার থেকে বের হয়ে গেলো। আর আদিল রুশার থেকে এমন আকস্মিক চুমু পেয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো। বাম গালে হাত বুলিয়ে নিজ মনে হেসে ফেললো আদিল।

ধীরপায়ে কার থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো আদিল। ড্রইংরুমে ঢুকতেই দেখলো রওনক সোফায় বসে আছে পাশেই নাজ মাথা নিচু করে বসে আছে।

নাজের পাশে বসে আছে রুশা, আদিলের উপস্থিতি টের পেয়ে সকলেই আদিলের দিকে ঘুরে তাকালো। আদিল সবাইলো সালাম দিয়ে রওনকের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,

-তাহলে জামাই চলে এলো শ্বশুরবাড়িতে, তা এডভোকেট শ্বশুর আছে কোথায়?

-বাবা,রুমে বসে আছে। আল্লাহ জানে আজ বাবা সবকিছু জানলে কি করবে ?

নাজ চিন্তিত সুরে বললো, রুশা নাজের কাঁধে হাত রেখে অভয় দিচ্ছে।

এমন সময় সিঁড়ি দিয়ে কারো নেমে আসার শব্দ শুনা গেলো। সবাই তাকিয়ে দেখলো, শুভ্র পাঞ্জাবি পড়নে,মাথায় আধাপাকা চুল,গালভর্তি দাড়ি একজন মাঝবয়সী লোক নেমে আসছে হাসিমুখে।

সবাই দাঁড়িয়ে সালাম জানালো, ভদ্রলোক সালামের উওর দিয়ে বসার জন্য ইশারা করলো। সবাই যার যার জায়গায় বসে পড়লো। নাজ ভয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো, রুশা দেখতে পেয়ে নাজের মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিলো।

-সবাই কেমন আছো?

-জী,আলহামদুলিল্লাহ। সবাই একত্রে বলে উঠলো।

-তা, এখানে রওনক মির্জা কে? যে আজ আমার সাথে দেখা করার কথা ছিল?

-জি আমি রওনক মির্জা।

রওনক নড়েচড়ে বসে বললো। আদিল পাশ থেকে বললো,

-আসলে, আঙ্কেল?

-তোমার সাথে পরে কথা বলছি, তার আগে আমি রওনকের সাথে কথা বলতে চাই।

উনার রাগীসুরে কথা শুনে সবাই ঢোক গিলে বসে রইলো।

-নাজ?

-জি বাবা।

-এই ছেলের সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক?

নাজ রওনকের মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো।

-আঙ্কেল, আপনি অনুমতি দিলে আমি এই সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে চাই।

রওনক ঘাড় নিচু রেখে বললো।

-হুম,বলো।

-সেবার আমি ঢাকায় এসেছিলাম আমার কাজিনের বিয়েতে। বাবা-মা বিহিন আমরা দুভাই থাকি চট্টগ্রামে কিন্তু আমাদের পুরো পরিবার ঢাকায়। তো আমার সেই চাচাতো ভাইয়ের বিয়েতে আসার পর আমার একটি মেয়েকে দেখে ভীষণ রকমের ভালো লাগে। বলতে পারেন লাভ এট ফার্স্ট সাইট। কারণ, তার দুষ্টুমি, তার মজার সুরে বলা কথাগুলো আমার মন কাড়ে।আমার সাতাশ বছরে প্রথমবার মনে হয় বাবা-মা’কে ছাড়াও কাউকে খুব আপন হয়। যার হাত ধরে অনায়াসে পার করে দেয়া যায় অগণিত বসন্ত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে যখন আমরা কনেদের বাড়ি থেকে ফিরে আসবো ঠিক তখনি আমার টনক নড়ে আমি তো একটিবারের জন্যও সেই মেয়েটির নাম,ঠিকানা জানতে চাইনি। তাহলে,তাকে আমি খুঁজে পাবো কি করে? আমি তখন মন মনে দিশেহারা বোধ করেছিলাম।

খোঁজ নিয়েও মেয়েটির কোনো তথ্য জানতে পারিনি,যখন আমি মেয়েটির কথা ভেবে দিনরাত পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম ঠিক তখন আমার চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের সব ফটো এলো। ছবি দেখার এক পর্যায়ে আমি আমার কাঙ্ক্ষিত মানুষটির একটি ছবি আমি খুঁজে পাই।

আজ দুটি বছর ধরে তার ছবি আমি অনেক যত্নে রেখেছিলাম কিন্তু কোনো এক কালরাত্রিতে তার ছবি আমার কাছ থেকে কেউ ছিনিয়ে নেয়। চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারেনি রাখতে।তাকে শত চেষ্টার পরও খুঁজে না পাওয়া, তার অস্তিত্বের একটি মাত্র ছবি যখন আমি হারিয়ে ফেললাম ঠিক তখন আমার অবস্থা ভিটেমাটি হীন বাসিন্দার মতো।

-কে এই মেয়ে রওনক?

নাজমুল হোসেনের প্রশ্নে নাজ আরেক দিকে তাকিয়ে রইলো আর রওনক মনে মনে সাহস যুগিয়ে নাম বলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here