শেষ_বিকেলের_মায়া (১০)

#শেষ_বিকেলের_মায়া (১০)

বড়ো দোকানটায় এসে কেমন একটা অস্বস্তি অনুভব হলো ফারিহার। রিহান তাকে শপিং এ নিয়ে এসেছে। মূলত তার মা বলেছেন ফারিহাকে শপিং এ নিয়ে যেতে। ওদের সম্পর্ক যেন আরো মজবুত হয় সেই জন্যে দুজনকে এক সাথে অধিক সময় কাটাতে বলা হয়েছে। রিহান তাকে শপিং এ নিয়ে তো এসেছে তবে নিজে ফোনের মধ্যে মুখ গুঁজে আছে। এদিকে ফারিহা না পারছে বলতে আর না পারছে সইতে। সে বড়ো মন খারাপ করে ফেলল। সে সুন্দরী। তাই অনেক ছেলেদের প্রপোজাল আসে। সেসব আমলেই নেয় না কখনো। অথচ রিহান নামের ধনী সুদর্শন পুরুষটি তাকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেয় না। বিষয়টা কল্পণা করে কেমন যেন খারাপ লাগা কাজ করছে। সে কি খুব বেশি ভেবে ফেলেছে? তার দৌলত না থাকলেও বাহ্যিক সৌন্দর্য রয়েছে। এসব ই তো পুরুষ মানুষকে আর্কষণ করে। অথচ রিহানের বেলায় যেন উল্টো। নিজের সৌন্দর্য নিয়ে ভাবনাতে পড়ে গেল ফারিহা। কতটা উচিত এ চিন্তা সে জানে না। শুধু জানে একটা সরু যন্ত্রণা গলার কাছে এসে আটকে গেছে।

“ফারিহা।”

কাঁধের কাছে এসে স্পর্শটা লাগল। ফারিহা বিব্রত বোধ করে বলল,”জি?”

“এত বার ডাকার পর ও কথা বলছিলে না কেন?”

“আমি আসলে শুনতে পাই নি।”

“সিরিয়াসলি? আমি চিৎকার করে ডেকেছি তোমায়। তারপর ও শুনো নি?”

এ প্রশ্নের জবাব নেই ওর কাছে। মাথাটা ইষৎ নত করে রইল। আশেপাশের কিছু মানুষ তাকিয়ে আছে। সেটা লক্ষ্য করে রিহান বলল,
“মাথা তুলে তাকাও। মনে রাখবে এখন থেকে তুমি রিহান জোয়ার্দার মাহাদী’র গার্লফ্রেন্ড।”

বাক্যটা শেষ হলেও ফারিহা যেন থমকে রইল। গার্লফ্রেন্ড শব্দটা সহসা মেনে নিতে পারল না। রিহান ই পুনরায় বলল,”মিস ফারিহা আফরোজ। খুব তাড়াতাড়ি হয়ত আপনাকে আমার সাথে বিয়ের পিড়িতে বসতে হবে।”

রিহানের কণ্ঠে কিছু একটা ছিল। ফারিহা যেন সেটা খুব করে বুঝতে পারল। কেমন একটা ব্যথা মেশানো বাক্য।

রিহানের জীবনের সব থেকে খারাপ সময় বোধহয় এখনি। যখন তার প্রিয় মানুষটি দেশে এসেও তার সাথে দেখা করে নি। কিছু সময় পূর্বে এসব জানতে পেরেছে সে। কিয়া দেশে এসেছে এবং ফিরেও গিয়েছে। মাত্র একদিনের জন্য ছিল। অথচ এসব রিহান জানত না। অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে রিহান বলল,”ভালোবাসা রঙ বদলায়।”

ফারিহা কথাটা শুনতে পেল। তবে কিছু বলল না। রিহান পুনরায় বলল,”এখন যদি গাড়িটা অ্যাক সি ডেন্ট হয়ে যায়। তবে কেমন হয় বলো তো?”

এসব কথায় বিচলিত হলো না মেয়েটি। তবে নড়েচড়ে বসল। রিহান ফের শুধাল,”ম র বে আমার সাথে?”

স্থির নয়নে তাকিয়ে থেকে ফারিহা বলল,”না।”

রিহান হাসল। খিটমিটে হাসি। ফারিহা কথা বলল না। রিহান ই বলল,”হলো না। একদম ই হলো না। পারফেক্ট গার্লফ্রেন্ড হতে হবে তোমায়। ম র লে একসাথে ম র ব আর বাঁচলেও একসাথে।”

ওর কথায় ফারিহার সমস্ত শরীর মন কেমন আবেশিত হয়ে গেল। তারপর হুট করেই একটা বোটকা গন্ধ পেল। অনেক সময় ধরে তরল জাতীয় কিছু একটা পান করছিল রিহান। সেটা মনে পড়তেই আতঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল ফারিহা।
“স্যার আপনি ড্রিঙ্কস করেছেন?”

“করেছি। তোমার সমস্যা? মিস ফারিহা আফরোজ, আপনি ভুলে যাবেন না হিউজ এমাউন্টের বিনিময়ে ঘোরাফেরা করছেন আমার সাথে। আমার কথাতে উঠতে বসতে হবে আপনাকে। আমাকে কিছু বলার অধিকার তোমার নেই।”

ফারিহা বুঝল তাল হারিয়েছে রিহান। তাই উল্টো পাল্টা বলে যাচ্ছে। সে এবার বিচলিত হলো।
“গাড়ি থামান।”

“নো।”

“প্লিজ স্যার।”

“নো।”

“রিহান স্যার।”

এক হাতের সাহায্যে মেয়েটির মুখ চেপে ধরল রিহান। তারপর কিছুটা কাছে এগিয়ে এসে বলল,”ডোন্ট ট্রাই টু বি মাই গার্লফ্রেন্ড। এভরি ওয়ান আর চিটার।”

ভীত হয়ে রইল ফারিহা। রিহান গাড়ি থামিয়েছে। খানিক বাদে কেমন শান্ত সুরে বল‍ল,”গেট আউট।”

“নো স্যার। আপনি আগে বাসায় চলেন। এই অবস্থায় কি করবেন…”

“তোমার কথা মতো সমস্তটা হবে?”

ফারিহা কেমন করে যেন সাহস পেল। তারপর বলল,”হ্যাঁ হবে। আপনি যদি আমার কথা না শুনেন তবে এসব কথা আপনার মা বাবার কাছে চলে যাবে। আশা করি তেমনটা চান না।”

“ভয় দেখাচ্ছ?”

“তেমনি।”

“ওকে,ওকে। লেটস প্লে আ গেইম।”

একদম মুখের কাছে চলে এলো রিহান। ফারিহার কপালের কাছে থাকা মসৃণ এলো চুল গুলো আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে বলল,”লেটস টেইক আ লং কিস?”

রিহান দেখল ফারিহার চোখে ভয় নেই। মেয়েটা যেন সরল মনে তাকিয়ে আছে। এর সাথে এই গেইম খেলে মজা নেই। সে কিছুতেই মেয়েটিকে ভয় দেখাতে পারছে না। কি যেন মনে করে মাথা নিচু করে রইল। ফারিহা বলল,”রিহান স্যার। বাসায় চলুন।”

“কথা বলো না।”

“উঠুন প্লিজ।”

“ফারিহা প্লিজ। আমি অত টাও মাতাল নই।”

একটা শ্বাস নিল রিহান। তারপর ধীরে স্বস্তে গাড়ি চালাতে লাগল। নিজের উপর আসলেই কি নিয়ন্ত্রণ আছে ওর? নিজেকে কেমন পাগল অনুভব হচ্ছে। কি করছে বলছে বুঝতেই পারছে না। যেন কাঁচা ঘুম ভাঙিয়েছে কেউ। আর ভেতর থেকে উল্টো পাল্টা সংকেত এসে যাচ্ছে।

বাসায় এসেও চিন্তাহীন হতে পারল না ফারিহা। রিহান ঠিক ঠাক পৌছাল কী না এই নিয়েই ভাবছে তখন থেকে। এর ই মধ্যে আদীব এসে উপস্থিত হলো। ফাহিমা কে দেখতে নিয়ে শুধাল,”কোথায় ছিলে?”

“অফিসে।”

সরল মনে জবাব দিলেও আদীব যেন হাসল। ফারিহা অবশ্য সেটা দেখল না।
“এদিকটায় আসবে একটু?”

আদীবের সাথে উঠে এল ফারিহা। মেয়েটির শুকনো চোখ মুখ দেখে আদীব বলল,”শপিং মলেও কি আজকাল জব করছো না কি?”

প্রথমেও না বুঝলেও কিছুটা আন্দাজ করে জবাব দিল ফারিহা। তাই অত্যন্ত বুদ্ধি নিয়ে জবাব দিল।
“আসলে আদীব ভাইয়া, রিহান স্যার তার ফ্যামিলির জন্য সারপ্রাইজ গিফ্টের ব্যবস্থা করেছেন। বেশ কিছু মেয়েদের জামাকাপড় কেনার জন্য আমাকে সাথে নিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি কখন দেখলেন?”

শেষ প্রশ্নে জবাব এল না। পাশের ব্যাগ গুলোর দিকে নজর দিয়ে আছে আদীব। সেটা দেখে মেয়েটি বলল,”এসব ওনি ই দিয়েছেন। থ্যাংক ইউ হিসেবে।”

“ও, ঠিক আছে। খালাকে কবে পাঠাচ্ছ?”

“এখনো বলতে পারছি না। রিহান স্যার বলেছেন দ্রুতই হবে।”

“ফ্রেশ হও নি না?”

“না।”

“চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”

“এখন তো প্রায় সন্ধ্যা।”

“হুম। এখনি তো চায়ের মজা টা পাওয়া যাবে। চলো চলো।”

আদীবের সাথে বেরিয়ে এল ফারিহা। তবে বেশি দূর আসতে পারল না। তার আগেই তার ফোনে একটা কল এল। সে দেখল নাম্বারটা রিহানের মা রুনা জোয়ার্দারের!

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

| প্রচন্ড খারাপ লাগছে। যতটুকু লিখেছিলাম তত টুকুই দিলাম। এইচ এস সি পরীক্ষা যেন একটা মানসিক চাপ। সবাই দোয়ায় রাখবেন। |

পর্ব (১১)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=314811987746369&id=100076527090739&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here