শ্যামাকন্যাতে আসক্ত পর্ব -০৪

#শ্যামাকন্যাতে_আসক্ত

#লেখনীতেঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা

চারদিকে আযানের ধ্বনি কানে বাজতেই ঘুম ভাঙলো পৃথার।বিছানা থেকে নেমে ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিল সে। এখনও ভোরের আলো ফোটেনি চারদিকে।কুয়াশা চারপাশ ঘিরে রেখেছে।শীতকালে সকালে ভোরের এই স্নিগ্ধ কুয়াশার পরিবেশে সতেজতা নিয়ে আসে।শিশিরের বিন্দু বিন্দু জমানো পানি টুপটুপ করে গাছের পাতা থেকে ঘাসের উপর পড়ছে। সারারাত ঘুম হয় নাই পৃথার আজ তিনদিন হলো এ বাড়িতে আসার।রোজকারের ব্যাপার এটা ঘুমাতে চাইলেও ঘুমোতে পারে না সে।যাকে নিয়ে ভাবতে চায় না সে তার মাথার মধ্যে ঝেকে বসতে চাইছে দবে পৃথা দুর্বল নয় সে এসবে পাত্তা দিবে না।ভোরের আবছা আলো আলোকিত করছে চারিপাশ। চারদিকে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা তার মাঝে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে প্রান যেনো জুড়িয়ে গেল পৃথার।মনের মাঝে প্রশান্তি অনুভব করছে সে।

পৃথার শান্ত সাজানো গোছানো জীবনটা হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া এসো এলোমেলো করে দিল।আর এই দমকা হাওয়ার নাম অর্ন খান।মানুষটা বড় অদ্ভুত। এত সবকিছু করে বিয়ে করলো আমায় অথচ আজ তিনদিন হলো সে আমার কাছে তো দুরের কথা আমার সামনে পর্যন্ত আসছে না।তবে এতে পৃথার মাথা ব্যাথা নেই কেননা সে বাচুক মরুক আই ডোন্ট কেয়ার।পৃথার জীবনটাকে তছনছ করার আগে একবারও ভাবলো না।শুধু নিজের জেদ বজায় রাখতে তার সাজানো গোছানো রঙিন জীবনটাকে এলোমেলো অগোছালো রঙহীন করে দিল।

বেলকনির ডিভানে বসে এই কনকনে শীতের সকালে এইসকল ভাবনায় ব্যস্ত পৃথা। গায়ে শুধু একটা থ্রিপিছ পড়নে তার। শীতের পোশাকের ছিটেফোটাও নেই।অনুভবও হয় না। আসলে অনুভুতিগুলো নিষ্প্রান হয়ে গেছে।তাই শীত গ্রীষ্ম কোনটাই এখন অনুভুতি শক্তিকে জাগ্রত করতর পারছে না।আনমনে বাইরের পরিবেশ আর জীবনের ছক কষতে ব্যস্ত পৃথা তখনই পেছন থেকে কেউ পৃথার গায়ে শাল জরিয়ে দিল।তবে সে পৃথাকে স্পর্শ করেনি।পৃথার গায়ে শাল জরিয়ে সে উঠে দাড়ায়।বেলকনির দরজায় পা রাখতেই অতি শীতল কন্ঠে বলে উঠলো পৃথা,

–কেনো করলেন আমার সাথে এমনটা?কি দোষ ছিল আমার? এমন কি অপরাধ করেছি আমি যার শাস্তি হিসেবে জীবন এভাবে এলোমেলো করে দিলেন? সব স্বপ্ন আশা আকাঙ্খাকে ভেঙে চুরমার করে দিলেন।এভাবে শাস্তি না দিয়ে একবারে মেরে ফেললেও পারতেন এভাবে ধুকে ধুকে মরতে হতো না।

হুট করেই রেগে গেল অর্ন। তেড়ে এসে হাত টান দিয়ে দাড় করালো পৃথার। চোখদুটো রক্তজবার ন্যায় লাল বর্ন ধারন করেছে যেন ওই চোখের আগুনে নিমিষেই কাউকে ভষ্ম করা যাবে।দুই বাহু খুব শক্ত করেই চেপে ধরে রাগী স্বরে চেচিয়ে বলে উঠলো,

— একবার বলেছো আর কখনো যেন এই শব্দ উচ্চারণ করতে না শুনি। তোমার এই একটা ভুলের মাসুল সবাইকে দিতে হবে।সবাইকে।

শেষের শব্দগুলো দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো।তবে তার এই রুপ আগে কখনো দেখেনি পৃথা।এ যেন তার কাছে নতুন। তার রাগ কখনো সে পৃথাকে দেখায়নি।এমনকি সেদিন রাতেও না যেদিন পৃথা সারাদিন কিছু খায়নি।পরে সে লোক দিয়ে খাবার আনিয়েছিল আর অতি ঠান্ডা আর শান্ত স্বরে তাকে থ্রেট করেছিল যদি সে না খায় তবে তার পরিবারকে তার থেকে চিরদিনের জন্য দুর করে দিবে।তারপর থেকে খানিকটা হলেও দমে যায় পৃথা।সে পরিবারকে হারাতে পারবে না।তারাই এখন একমাত্র আপনজন নিজের জীবনটা তো ধ্বংস হয়েছে তাদের না হয় এর মধ্যে নাই বা জড়ালাম।অর্নকে রাগলে এতটাও ভয়ংকর লাগবে ভাবনার বাহিরে ছিল পৃথার।পৃথাকে ছেড়ে রুমের ভিতরে গিয়ে টেবিল ল্যাম্প সহ ঘরের আরো কিছু কাচের শো পিছগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দিল।যেন পৃথার উপরের রাগটা এই নিরিহ বস্তুুর উপর ঝাড়ছে।আহারে বেচারারা কি করুন পরিনতিই না হলো তাদের।এম ভেঙে গুড়ো গুড়ো করে ছাড়লো।অর্নর আসার পর পৃথা সেখানে ঠাই দাড়িয়ে ছিল।তার কিছুক্ষন পর ঘরের দিকে এগিয়ে আসতেই দেখতে পেল ঘরের মধ্যে ছোট খাটো একটা সুনামি বয়ে গেছে।অর্ন রাগে ফোস ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ছে।দু’হাতে মাথার চুল ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে।কি করে পারলো পৃথা এমনটা বলতে বুক কাটলো না তার।অর্নর বুকের মাঝে ঘুর্নিঝড় চলছে।সবটা ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে। সে তার প্রিয়াকে হারাতে পারবে না ।কিছুতেই না।তার সামান্য ক্ষতির কথা ভাবেলও তার িুক কেপে উঠছে বারবার।মনের মাঝে ভয়েরা ঝেকে বসছে।দমবন্ধকর পরিস্থিতি হচ্ছে। কেন বোঝে না পৃথা।ভাঙচুরের শব্দে সবাই ঘাবরে গেল।বুঝতে বাকি নেই যে এসব অর্নর কাজ।অর্নর মা মিসেস খান আসতে চাইলেও তার বাবা তাকে আটকে দেন বলেন,

— ওদেরটা ওদের বুঝে নিতে দাও।আর তুমি তো জানোই তোমার ছেলে রেগে গেলে কি করে।আর তুমি তো জানোই ও কখনো পৃথাকে আঘাত করবে না।দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলেও না।নিশ্চিত থাকো রাগ পানি হয়ে গেলে ওর রুমে কাউকে পাঠিয়ে দিও পরিষ্কার করতে।

— কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে পৃথা আবার কিছু করে না বসে।নিজেকে আঘাত না করে।এমনিতে ওর সাথে যা হলো সেটা ও কেন কোনো মেয়ের পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ও নিজেকে আঘাত করলে অর্ন তো সবকিছু শেষ করে দেবে।তখন ওকে থামানো কঠিন হয়ে দাড়াবে।আমার তো শুধু একটাই প্রার্থনা অর্নর আর পৃথার সম্পর্ক টা যেন আর পাঁচটা সাধারণ সম্পর্কের মত সবটা স্বাভাবিক হয়।আমার ছেলেটা খুব কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু ও সেটা নিজের মধ্যে চেপে রেখে একটু একটু করে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে।

— চিন্তা করোনা পৃথা মা যখন সবটা জানবে বুঝবে তখন সবটা ঠিক হয়ে যাবে।মেয়েটা বড্ড ভালো গো কিন্তু পরিস্থিতি আজ ওকে এতটা কঠোর করে দিয়েছে।নাহলে আমার ছেলের মনে আজ অবধি কেউ জায়গানকরে নিতে পারলো না সেখানে ও পৃথার জন্য পাগলপ্রায় কেনো বলতে পারো।মেয়েটার মধ্যে আলাদা কিছু আছে যার দরুন তোমার ছেলে আজ প্রনয়ে আসক্ত তার ভাষ্যমতে তার #শ্যামাকন্যাকে_আসক্ত সে।

— আল্লাহ করেন সবটা যেন খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়।

🍀🍀

অপরদিকে ঘরের এমত অবস্থা আর অর্নর রেগে যাওয়া যেন বেশ আনন্দ দিচ্ছে পৃথাকে।মনের ভিতর অজানা সুখ অনুভুত হচ্ছে। ক্রন সে তার দোষীকে শাস্তি দিচ্ছে। একেক জনের অন্যায়ের ধরন যেমন একেক রকম তেমনই শাস্তিও একেক রকম হয়।অর্নকে এভাবে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে রাগিয়ে দিয়ে বেশ ভালো লাগে পৃথার।দুজনের জীবনটাও একইরকম শান্তি নেই কারো মনে।তারা একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও এক হতে পারছে না।এতটা কাছে থেকেও তাদের মাঝে কতটা দুরত্ব।তারপর সে ধীরপায়ে সে ভাঙা কাচের উপর দিয়ে হাটে পা থেকে গলগল করে রকবত ঝড়ে পড়ে।অর্নর পিছন দিকে থাকায় সো পৃথাকে দেখতে পায় না।কাচের টুকরো পায়ে গেথে গেলেও মুখ দিয়ে উফফ শব্দটাও বের হয় না পৃথার।রাগের কারনে হুশ ছিল না অর্নর।বেশ খানিকক্ষণ কাচের উপর পা থাকায় বেশ অনেকটা কেটে রক্ত বেরিয়ে যায়।কাচের উপর পা রাখতে হালকা ঝনঝনে শব্দ শুনে যখন অর্ন পিছনে ফিরে তখনই পৃথার পা দিয়ে ঝড়ন্ত রক্ত দেখে তার বুকে মোচর দিয়ে উঠে।তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হয় তার হৃদয়ে।

তৎক্ষনাৎ দৌড়ে গিয়ে পৃথাকে কোলে তুলে নেয় বিনাবাক্যে।পৃথা হতবম্ভ এমন কিছুর কল্পনা তার ছিল না।সে তো চেয়েছিল নিজেকে আঘাত করার মাধ্যমে অর্নর বুক থেকে রক্ত ঝড়াতে।ওর হৃদয়ে যেমন রক্তক্ষরন হয়েছে তেমনটা যেন অর্নর হৃদয়েও হয়।শুধু শারীরিক আঘাতের মাধ্যমে ক্ষমবিক্ষত করা যায় এ ধারনা পোষনকারীরা বোকা। বড্ড বোকা।শরীরিক আঘাতের চেয়ে অধিক বেশি যন্ত্রণা দেয় মানসিক যন্ত্রণা।

পৃথার এমতাবস্থায় পাগলের মত আচরন শুরু করে অর্ন।পৃথাকে খাটে বসিয়ে চিৎকার করে ডাকে সবাইকে।অর্নর চিৎকারে সবাই বেশ ভয় পেয়ে যায়।বাবা মা দ্রুত দৌড়ে উপরে চলে আসে।পৃথার পায়ের অবস্থা ভালো নেই।প্রচুর রক্ত ঝড়ে গেছে।ঘরটা ফ্রোরটা রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে।আর অর্নর পাগলের মত ফাস্ট এইড বক্স খুজছে।যেকোনো পরিস্থিতিতে আগে প্রাথমিক চিকিৎসা অবলম্বন করতে হয় আর সেটাই উত্তম পন্থা রোগীকে বিপদের হাত থেকে রক্ষার।ঝুঁকি কম থাকে।ঘরভর্তি কাচের ছড়াছড়ি। অর্নর পাও কেটে গেছে কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই।সবাই ঘরেে কাছে আসতেই দেখতে পায় যে পৃথার অবস্থা ভালো না।অর্নর মা পৃথাকে দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠে। পৃথার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার ফলে সে অর্নর মায়ের কোলে ঢলে পড়ে।

— অর্ন পৃথা সেন্সলেস হয়ে গেছে।

ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠে মিসেস খান।

ছুটে এসে পৃথাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অর্ন।পড়নে তার ব্ল্যাক টিশার্ট উইথ ব্ল্যাক টাউজার।গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। হলুদ ফর্সা উজ্জ্বল গায়ের রঙে কালো রঙটা বেশ মানানসই। বড়বড় চুল গুলো বেম অনেকটাই কপালের উপর ঝুকে পড়েছে। এতক্ষণের অস্থিরতায় ঘেমে গেছে গায়ের জড়ানো টিশার্টটি চুলগুলো ঘেমে লেপ্টে আছে কপালে।

পৃথাকে কোলে নিয়েই দৌড়ে হসপিটাল চলে আসে অর্ন।সকাল ৮ টার কাছাকাছি। এত সকালে ডাক্তার নেই।অর্ন এসেই হসপিটাল মাথায় তুলেছে। এতবড় একজন হাই ক্লাসের ব্যক্তিবর্গর এভাবে ছুটে আসা মানে চারটে খানি কথা না।তাকে দেখে রীতিমতো ভয়ে সবাই কাপছে। তার উপর এতটা চিন্তিত ঘাবরানো আর রাগান্বিত হতে তাকে কখনোই দেখেনি।তার গম্ভীরতা আর রাগী স্বভারের জন্য কেউ সেভাবে পরিচিত না৷ থাকলেও মার নামের সাথে ভয়পা জুড়ে আছে।রিসিপসনিষ্ট যখন জানালো যে হসপিটালে কোন ডাক্তার নেই তকণ অর্ন রেগে কলার চেপে ধরেছিল আরও অরেক কান্ড করেছে সে যা ধারনার বাইরে।গাড়ি পাঠিয়ে হসপিটালের বেস্ট ডক্টরকে তুলে এনেছিল ঘুম থেকে। তারপর ট্রিটমেন্ট শুরু করায় পৃথার।

পৃথা আগের থেকে সুস্থ আছে।কিছুক্ষণ আগেই জ্ঞান ফিরেছে অর্ন শুধু তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেছিল।জ্ঞান ফিরার পর বাইরে থেকে দেখে চলে যায়। নিজের চোখে ভালোবাসার মানুষটির এভাবে কষ্ট পাওয়া সহ্য হবে না তার।ভালোবাসা জোর করে আদায় করলেও সে ভালোবাসে পৃথাকে।সবটা তার জন্য সে জানে অর্নর উপর রাগ আর জেদের বশেই পৃথা এমনটা করেছে তাই নিজেকে শাস্তি দিতে হবে তার।থাকবেনা সে পৃথার চোখের সামনে এটা তার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন শাস্তি। সে যে তার #শ্যামাকন্যাতে_আসক্ত তার চোখের আড়ালে থাকা মানে নিজের বুকে নিজে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে রক্তক্ষরণ করা।

#চলবে……

( মন ভালো না একদমই। তাই কি লিখছি জানি না)#শ্যামাকন্যাতে_আসক্ত

#লেখনীতেঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা

চারদিকে আযানের ধ্বনি কানে বাজতেই ঘুম ভাঙলো পৃথার।বিছানা থেকে নেমে ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিল সে। এখনও ভোরের আলো ফোটেনি চারদিকে।কুয়াশা চারপাশ ঘিরে রেখেছে।শীতকালে সকালে ভোরের এই স্নিগ্ধ কুয়াশার পরিবেশে সতেজতা নিয়ে আসে।শিশিরের বিন্দু বিন্দু জমানো পানি টুপটুপ করে গাছের পাতা থেকে ঘাসের উপর পড়ছে। সারারাত ঘুম হয় নাই পৃথার আজ তিনদিন হলো এ বাড়িতে আসার।রোজকারের ব্যাপার এটা ঘুমাতে চাইলেও ঘুমোতে পারে না সে।যাকে নিয়ে ভাবতে চায় না সে তার মাথার মধ্যে ঝেকে বসতে চাইছে দবে পৃথা দুর্বল নয় সে এসবে পাত্তা দিবে না।ভোরের আবছা আলো আলোকিত করছে চারিপাশ। চারদিকে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা তার মাঝে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে প্রান যেনো জুড়িয়ে গেল পৃথার।মনের মাঝে প্রশান্তি অনুভব করছে সে।

পৃথার শান্ত সাজানো গোছানো জীবনটা হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া এসো এলোমেলো করে দিল।আর এই দমকা হাওয়ার নাম অর্ন খান।মানুষটা বড় অদ্ভুত। এত সবকিছু করে বিয়ে করলো আমায় অথচ আজ তিনদিন হলো সে আমার কাছে তো দুরের কথা আমার সামনে পর্যন্ত আসছে না।তবে এতে পৃথার মাথা ব্যাথা নেই কেননা সে বাচুক মরুক আই ডোন্ট কেয়ার।পৃথার জীবনটাকে তছনছ করার আগে একবারও ভাবলো না।শুধু নিজের জেদ বজায় রাখতে তার সাজানো গোছানো রঙিন জীবনটাকে এলোমেলো অগোছালো রঙহীন করে দিল।

বেলকনির ডিভানে বসে এই কনকনে শীতের সকালে এইসকল ভাবনায় ব্যস্ত পৃথা। গায়ে শুধু একটা থ্রিপিছ পড়নে তার। শীতের পোশাকের ছিটেফোটাও নেই।অনুভবও হয় না। আসলে অনুভুতিগুলো নিষ্প্রান হয়ে গেছে।তাই শীত গ্রীষ্ম কোনটাই এখন অনুভুতি শক্তিকে জাগ্রত করতর পারছে না।আনমনে বাইরের পরিবেশ আর জীবনের ছক কষতে ব্যস্ত পৃথা তখনই পেছন থেকে কেউ পৃথার গায়ে শাল জরিয়ে দিল।তবে সে পৃথাকে স্পর্শ করেনি।পৃথার গায়ে শাল জরিয়ে সে উঠে দাড়ায়।বেলকনির দরজায় পা রাখতেই অতি শীতল কন্ঠে বলে উঠলো পৃথা,

–কেনো করলেন আমার সাথে এমনটা?কি দোষ ছিল আমার? এমন কি অপরাধ করেছি আমি যার শাস্তি হিসেবে জীবন এভাবে এলোমেলো করে দিলেন? সব স্বপ্ন আশা আকাঙ্খাকে ভেঙে চুরমার করে দিলেন।এভাবে শাস্তি না দিয়ে একবারে মেরে ফেললেও পারতেন এভাবে ধুকে ধুকে মরতে হতো না।

হুট করেই রেগে গেল অর্ন। তেড়ে এসে হাত টান দিয়ে দাড় করালো পৃথার। চোখদুটো রক্তজবার ন্যায় লাল বর্ন ধারন করেছে যেন ওই চোখের আগুনে নিমিষেই কাউকে ভষ্ম করা যাবে।দুই বাহু খুব শক্ত করেই চেপে ধরে রাগী স্বরে চেচিয়ে বলে উঠলো,

— একবার বলেছো আর কখনো যেন এই শব্দ উচ্চারণ করতে না শুনি। তোমার এই একটা ভুলের মাসুল সবাইকে দিতে হবে।সবাইকে।

শেষের শব্দগুলো দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো।তবে তার এই রুপ আগে কখনো দেখেনি পৃথা।এ যেন তার কাছে নতুন। তার রাগ কখনো সে পৃথাকে দেখায়নি।এমনকি সেদিন রাতেও না যেদিন পৃথা সারাদিন কিছু খায়নি।পরে সে লোক দিয়ে খাবার আনিয়েছিল আর অতি ঠান্ডা আর শান্ত স্বরে তাকে থ্রেট করেছিল যদি সে না খায় তবে তার পরিবারকে তার থেকে চিরদিনের জন্য দুর করে দিবে।তারপর থেকে খানিকটা হলেও দমে যায় পৃথা।সে পরিবারকে হারাতে পারবে না।তারাই এখন একমাত্র আপনজন নিজের জীবনটা তো ধ্বংস হয়েছে তাদের না হয় এর মধ্যে নাই বা জড়ালাম।অর্নকে রাগলে এতটাও ভয়ংকর লাগবে ভাবনার বাহিরে ছিল পৃথার।পৃথাকে ছেড়ে রুমের ভিতরে গিয়ে টেবিল ল্যাম্প সহ ঘরের আরো কিছু কাচের শো পিছগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দিল।যেন পৃথার উপরের রাগটা এই নিরিহ বস্তুুর উপর ঝাড়ছে।আহারে বেচারারা কি করুন পরিনতিই না হলো তাদের।এম ভেঙে গুড়ো গুড়ো করে ছাড়লো।অর্নর আসার পর পৃথা সেখানে ঠাই দাড়িয়ে ছিল।তার কিছুক্ষন পর ঘরের দিকে এগিয়ে আসতেই দেখতে পেল ঘরের মধ্যে ছোট খাটো একটা সুনামি বয়ে গেছে।অর্ন রাগে ফোস ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ছে।দু’হাতে মাথার চুল ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে।কি করে পারলো পৃথা এমনটা বলতে বুক কাটলো না তার।অর্নর বুকের মাঝে ঘুর্নিঝড় চলছে।সবটা ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে। সে তার প্রিয়াকে হারাতে পারবে না ।কিছুতেই না।তার সামান্য ক্ষতির কথা ভাবেলও তার িুক কেপে উঠছে বারবার।মনের মাঝে ভয়েরা ঝেকে বসছে।দমবন্ধকর পরিস্থিতি হচ্ছে। কেন বোঝে না পৃথা।ভাঙচুরের শব্দে সবাই ঘাবরে গেল।বুঝতে বাকি নেই যে এসব অর্নর কাজ।অর্নর মা মিসেস খান আসতে চাইলেও তার বাবা তাকে আটকে দেন বলেন,

— ওদেরটা ওদের বুঝে নিতে দাও।আর তুমি তো জানোই তোমার ছেলে রেগে গেলে কি করে।আর তুমি তো জানোই ও কখনো পৃথাকে আঘাত করবে না।দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলেও না।নিশ্চিত থাকো রাগ পানি হয়ে গেলে ওর রুমে কাউকে পাঠিয়ে দিও পরিষ্কার করতে।

— কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে পৃথা আবার কিছু করে না বসে।নিজেকে আঘাত না করে।এমনিতে ওর সাথে যা হলো সেটা ও কেন কোনো মেয়ের পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ও নিজেকে আঘাত করলে অর্ন তো সবকিছু শেষ করে দেবে।তখন ওকে থামানো কঠিন হয়ে দাড়াবে।আমার তো শুধু একটাই প্রার্থনা অর্নর আর পৃথার সম্পর্ক টা যেন আর পাঁচটা সাধারণ সম্পর্কের মত সবটা স্বাভাবিক হয়।আমার ছেলেটা খুব কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু ও সেটা নিজের মধ্যে চেপে রেখে একটু একটু করে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে।

— চিন্তা করোনা পৃথা মা যখন সবটা জানবে বুঝবে তখন সবটা ঠিক হয়ে যাবে।মেয়েটা বড্ড ভালো গো কিন্তু পরিস্থিতি আজ ওকে এতটা কঠোর করে দিয়েছে।নাহলে আমার ছেলের মনে আজ অবধি কেউ জায়গানকরে নিতে পারলো না সেখানে ও পৃথার জন্য পাগলপ্রায় কেনো বলতে পারো।মেয়েটার মধ্যে আলাদা কিছু আছে যার দরুন তোমার ছেলে আজ প্রনয়ে আসক্ত তার ভাষ্যমতে তার #শ্যামাকন্যাকে_আসক্ত সে।

— আল্লাহ করেন সবটা যেন খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়।

🍀🍀

অপরদিকে ঘরের এমত অবস্থা আর অর্নর রেগে যাওয়া যেন বেশ আনন্দ দিচ্ছে পৃথাকে।মনের ভিতর অজানা সুখ অনুভুত হচ্ছে। ক্রন সে তার দোষীকে শাস্তি দিচ্ছে। একেক জনের অন্যায়ের ধরন যেমন একেক রকম তেমনই শাস্তিও একেক রকম হয়।অর্নকে এভাবে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে রাগিয়ে দিয়ে বেশ ভালো লাগে পৃথার।দুজনের জীবনটাও একইরকম শান্তি নেই কারো মনে।তারা একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও এক হতে পারছে না।এতটা কাছে থেকেও তাদের মাঝে কতটা দুরত্ব।তারপর সে ধীরপায়ে সে ভাঙা কাচের উপর দিয়ে হাটে পা থেকে গলগল করে রকবত ঝড়ে পড়ে।অর্নর পিছন দিকে থাকায় সো পৃথাকে দেখতে পায় না।কাচের টুকরো পায়ে গেথে গেলেও মুখ দিয়ে উফফ শব্দটাও বের হয় না পৃথার।রাগের কারনে হুশ ছিল না অর্নর।বেশ খানিকক্ষণ কাচের উপর পা থাকায় বেশ অনেকটা কেটে রক্ত বেরিয়ে যায়।কাচের উপর পা রাখতে হালকা ঝনঝনে শব্দ শুনে যখন অর্ন পিছনে ফিরে তখনই পৃথার পা দিয়ে ঝড়ন্ত রক্ত দেখে তার বুকে মোচর দিয়ে উঠে।তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হয় তার হৃদয়ে।

তৎক্ষনাৎ দৌড়ে গিয়ে পৃথাকে কোলে তুলে নেয় বিনাবাক্যে।পৃথা হতবম্ভ এমন কিছুর কল্পনা তার ছিল না।সে তো চেয়েছিল নিজেকে আঘাত করার মাধ্যমে অর্নর বুক থেকে রক্ত ঝড়াতে।ওর হৃদয়ে যেমন রক্তক্ষরন হয়েছে তেমনটা যেন অর্নর হৃদয়েও হয়।শুধু শারীরিক আঘাতের মাধ্যমে ক্ষমবিক্ষত করা যায় এ ধারনা পোষনকারীরা বোকা। বড্ড বোকা।শরীরিক আঘাতের চেয়ে অধিক বেশি যন্ত্রণা দেয় মানসিক যন্ত্রণা।

পৃথার এমতাবস্থায় পাগলের মত আচরন শুরু করে অর্ন।পৃথাকে খাটে বসিয়ে চিৎকার করে ডাকে সবাইকে।অর্নর চিৎকারে সবাই বেশ ভয় পেয়ে যায়।বাবা মা দ্রুত দৌড়ে উপরে চলে আসে।পৃথার পায়ের অবস্থা ভালো নেই।প্রচুর রক্ত ঝড়ে গেছে।ঘরটা ফ্রোরটা রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে।আর অর্নর পাগলের মত ফাস্ট এইড বক্স খুজছে।যেকোনো পরিস্থিতিতে আগে প্রাথমিক চিকিৎসা অবলম্বন করতে হয় আর সেটাই উত্তম পন্থা রোগীকে বিপদের হাত থেকে রক্ষার।ঝুঁকি কম থাকে।ঘরভর্তি কাচের ছড়াছড়ি। অর্নর পাও কেটে গেছে কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই।সবাই ঘরেে কাছে আসতেই দেখতে পায় যে পৃথার অবস্থা ভালো না।অর্নর মা পৃথাকে দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠে। পৃথার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার ফলে সে অর্নর মায়ের কোলে ঢলে পড়ে।

— অর্ন পৃথা সেন্সলেস হয়ে গেছে।

ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠে মিসেস খান।

ছুটে এসে পৃথাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অর্ন।পড়নে তার ব্ল্যাক টিশার্ট উইথ ব্ল্যাক টাউজার।গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। হলুদ ফর্সা উজ্জ্বল গায়ের রঙে কালো রঙটা বেশ মানানসই। বড়বড় চুল গুলো বেম অনেকটাই কপালের উপর ঝুকে পড়েছে। এতক্ষণের অস্থিরতায় ঘেমে গেছে গায়ের জড়ানো টিশার্টটি চুলগুলো ঘেমে লেপ্টে আছে কপালে।

পৃথাকে কোলে নিয়েই দৌড়ে হসপিটাল চলে আসে অর্ন।সকাল ৮ টার কাছাকাছি। এত সকালে ডাক্তার নেই।অর্ন এসেই হসপিটাল মাথায় তুলেছে। এতবড় একজন হাই ক্লাসের ব্যক্তিবর্গর এভাবে ছুটে আসা মানে চারটে খানি কথা না।তাকে দেখে রীতিমতো ভয়ে সবাই কাপছে। তার উপর এতটা চিন্তিত ঘাবরানো আর রাগান্বিত হতে তাকে কখনোই দেখেনি।তার গম্ভীরতা আর রাগী স্বভারের জন্য কেউ সেভাবে পরিচিত না৷ থাকলেও মার নামের সাথে ভয়পা জুড়ে আছে।রিসিপসনিষ্ট যখন জানালো যে হসপিটালে কোন ডাক্তার নেই তকণ অর্ন রেগে কলার চেপে ধরেছিল আরও অরেক কান্ড করেছে সে যা ধারনার বাইরে।গাড়ি পাঠিয়ে হসপিটালের বেস্ট ডক্টরকে তুলে এনেছিল ঘুম থেকে। তারপর ট্রিটমেন্ট শুরু করায় পৃথার।

পৃথা আগের থেকে সুস্থ আছে।কিছুক্ষণ আগেই জ্ঞান ফিরেছে অর্ন শুধু তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেছিল।জ্ঞান ফিরার পর বাইরে থেকে দেখে চলে যায়। নিজের চোখে ভালোবাসার মানুষটির এভাবে কষ্ট পাওয়া সহ্য হবে না তার।ভালোবাসা জোর করে আদায় করলেও সে ভালোবাসে পৃথাকে।সবটা তার জন্য সে জানে অর্নর উপর রাগ আর জেদের বশেই পৃথা এমনটা করেছে তাই নিজেকে শাস্তি দিতে হবে তার।থাকবেনা সে পৃথার চোখের সামনে এটা তার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন শাস্তি। সে যে তার #শ্যামাকন্যাতে_আসক্ত তার চোখের আড়ালে থাকা মানে নিজের বুকে নিজে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে রক্তক্ষরণ করা।

#চলবে……

( মন ভালো না একদমই। তাই কি লিখছি জানি না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here