শ্যামাকন্যাতে আসক্ত পর্ব -০৯

#শ্যামাকন্যাতে_আসক্ত

#লেখিকাঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা

–কেমন আছো? আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র ভাইয়ের বউ।আমার এই পাগল ভাইটার হৃদমাঝারে অবস্থিত হৃদয়হরিনী।

পৃথার থুতনিতে হাত রেখে আদুরে সুরে বলে যাচ্ছে অনিলা।আর পৃথা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। তার চোখে-মুখে লাজকুতা বিরাজমান।

পৃথা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।ও আড়চোখে একবার অর্নকে দেখে নিল। ওর ওই লজ্জা রাঙা মুখশ্রী কেনো এত স্নিগ্ধ লাগে।কেনো এত মুগ্ধতায় ঝলমল করে উঠে চারিপাশ।পৃথার গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।এমনিতেই এতদিনের মাঝে অর্ন আর ওর পরিবারের এত ভালোবাসা আর যত্ন দেখে পৃথা রীতিমতো অবাক।আর তাছাড়া বাড়ির সার্ভেন্টদের সাথেও কি সুন্দর ব্যবহার। টাকা পয়সা বা পাওয়ার নিয়ে তাদের কোন অহংকার নেই।অর্নর ব্যবহারে দিন দিন মুগ্ধ না হয়ে যেন পারছে না পৃথা।আজ অর্নর ব্যবহারে ও যতটা না রাগ দেখিয়েছে তার থেকেও বেশি ওর মনে ভালোলাগা কাজ করেছে।এতদিন অর্নর ওকে ইগনোর করার পর এভাবে ওর কাছে আসা।পৃথা জানে অর্ন এর জন্য দায়ী নয়।সে ইচ্ছাকৃত কিছুই করেনি তবুও একটু ভান করেছে যাতে অর্ন ওর মন বুঝতে না পারে।

অর্ন অপলকে পৃথাকে দেখে চলেছে।অনিলার বর অর্নর কাধে হাত রেখে ফিসফিসিয়ে বললো,

— এসে মাত দেখো সালে সাব নাজার লাগ জায়েগী।

ওর হিসহিসিয়ে বলা কথায় ধ্যান ভাঙে অর্নর।নিজেকে সামলে নিয়ে আমতা আমতা করে বলতে চেষ্টা করে।

–আব্ আসলে আমি তো।

— হুম শালাবাবু সব বুঝি এই সময় আমরাও পেরিয়ে এসেছি।তবে যাই বলো বউকে যতই দেখি মন কি আর ভরে। দেখছো তোমার বোনের পিছনে এখনো দিওয়ানা আমি। আজও প্রথম দিনের মতই ভালোবাসি।

— আরে জিজু কি যে বল না তেমন কিছুই না।

জিজুর কথায় অর্নও বেশ লজ্জায় পড়ে যায়।অর্নর মা পৃথা আর অর্ন নিচে আসার পরপরই সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে যায়।

পৃথা এবার মুখ খুলে অনিলাকে বলে,

— আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপু আপনারা কেমন আছেন?

— আমরা ভালো আছি।

এসো তোমায় পরিচয় করিয়ে দিই। এ হলো আমার বর আশফি রায়হান।আর এই পাকা বুড়িটার সাথে তো আগেই পরিচিত হয়েছো নিশ্চয়।

পৃথা মিষ্টি করে হেসে বললো,

— আনিশা খুবই মিষ্টি একটা মেয়ে আপু।

— হুহ।শুধুই মিষ্টি না বড্ড দুষ্টু আর ভিষন পাজি ও।

–মা তুমি আমায় এভাবে বলতে পারলে বলো।আমি কি এমন দুষ্টুমি করেছি বলো তো শুধু বাবাই তোমাকে কিসি দিচ্ছিলো সেটা দেখে ফেলেছি এই তো।

ওর কথায় ওদের চারজনের চোখ বড়বড় হয়ে মুখ কিঞ্চিৎ হয়ে গেল।আনিশা নিচের ঠোঁট ফুলিয়ে ফুলিয়ে ইনোসেন্ট একটা লুক দিল।সবাই হতবাক! পৃথা তো ভাবতেই পারছে না।এটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে এত পাকা কি করে হতে পারে।ওদের এমন অবস্থা কি রিয়েকশন দিবে যেন ভুলো গেছে।আনিশা আবারো মুখ খুলে বললো,

— আচ্ছা মামু তুমিই বলো তো আমি কি কাউকে বলেছি যে তুমি মামিমু কে আদর করছিলে।বলিনিতো বলো।

অর্নর মাথায় যেন বাজ পড়লো। বলে কি এই মেয়ে মান ইজ্জত সব জলে ফেলে দিল।একটা ধাক্কায় সব পানি পানি করে দিল।পৃথা আনিশা এমন কথায় ছোট নয় বেশ বড়সড় শক খেলো ওর পুরো মুখ হা হয়ে গেল।এতবড় হা তো ও ফুচকা খাওয়ার সময় ও করেনা।

অর্ন অবস্থা বেগতিক দেখে আনিশার মুখ চেপে বললো,

— প্রিন্সেস অনেক বলেছো আর না।আর কিছু বললে আমাকে এক্ষুনি পেত্নী কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।

— পেত্নী! কোথায় পেত্নী মামু? বলোনা আমায়।আমি পেত্নী দেখবো? চলো না নিয়ে চলো না!

অর্ন কথাটা বলার সাথে সাথে পৃথা অগ্নিচোখে দেখলো অর্নকে। যেন এক্ষুনি চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দিবে।অর্ন পৃথাকে একপলক দেখে নিয়ে শুকনো ঢোক গিললো।একজন পুরুষ বাইরে যতই দাপট দেখাক বউয়ের কাছে গেলেই ভেজা বেড়াল।পৃথার এমন চাহনিতে অর্ন পড়লো মহাবিপাকে।এদিকে বউকে ওর ভালোবাসা বোঝাতে পারছে না।আর এদিকে ভাগনী সিচুয়েশনে বুঝছে না।আরে ওটা তো বেচারা অর্ন মুখ ফসকে বলে দিয়েছে।তার জন্য এমন রিয়েকশন দেয়ার কি আছে? আপনমনেই ভাবছে অর্ন।আর এখন এই পুচকিকে কিভাবে বোঝাবে ও।এ মেয়ে তো মানছেই না।অর্নর কথা আর পৃথার রিয়েকশন দেখে ওরা দুজন মিটিমিটি হাসছে।পৃথা সিচুয়েশন মেনেজ করতে আমতা আমতা করে বললো,

–আব্ আপু আপনারা একটু ফ্রেশ হয়ে লান্চটা করে নিন।তারপরে সবাই একসাথে আড্ডা দেওয়া যাবে। আমি মাকে সাহায্য করছি।

বলেই পৃথা রাস্তা কাটলো। যত দ্রুত সম্ভব কিচেনের দিকে গেল।এখানে আর এক মুহূর্ত ও থাকলে ও লজ্জায় আর অস্বস্তিতে দম ফাপড়ে মরে যেত।যেমন মামা তার তেমন ভাগ্নী। দুজনই শুধু লজ্জায় ফেলছে ওকে।

অর্ন ওদের ঘর পর্যন্ত এগিয়ে দিল। ওরা সবাই ফ্রেশ হয়ে ঘন্টাখানেকের মধ্যে নিচে নেমে এল।অর্ন বাবাকে কল করে জানিয়ে দিয়েছে তার রাজকন্যা তাকে সারপ্রাইজ দিতে কাউকে না জানিয়ে চলে এসেছে।ওদের এমন কার্যকলাপে ভিষন ক্রুদ্ধ অর্নর বাবা।কিন্তু ফোনে কিছু না বলেই বাড়ি ফিরে আসার জন্য রওনা হলেন তিনি।ওরা হলরুমে বসে বাবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।এর মধ্যে বাড়ি ফিরে এলেন অর্নব খান।

তার গম্ভীরভাব দেখে ভ্রু কুচকালো অর্ন। নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে যা ও টের পাচ্ছে বাবার মুখ দেখেই।

উনি সদর দরজায় পা রাখতেই দৌড়ে কোলে চড়লো আনিশা।নানুভাইকে জরিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল।আর এতদিনের জমানো কথা শেয়ার করলো।নাতনির সঙ্গে বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে।মেয়ে জামাইর সাথে খুশিমনেই কিছুক্ষণ আলাপ জারিতা করে ফ্রেশ হতে গেলেন তিনি।পৃথা ও তার শ্বশুর মশাইয়ের এমন চিন্তাগ্রস্থ মনোভাব দেখে কিছু একটা খটকা লাগলো।মানুষটা সবসময় হাসিখুশি থাকে আর সবাইকে হাসিখুশি রাখারও চেষ্টা করে।

লান্চ শেষে সবাই রুমে গেল রেস্ট করতে। অর্ন ল্যাপটপে কিছু একটা করছিল।সবটা সার্ভেন্ট বুঝিয়ে শ্বাশুড়ি মাকে শ্বশুর মশাইয়ের কাছে পাঠিয়ে নিজ রুমে গেল পৃথা।রুমে কাউকে না দেখে ভ্রুকুটি করলো সে।চিন্তাগ্রস্ত হলো যে অর্ন কোথায় দেখতে কেনো পাচ্ছে না সে।ওকে খুজতে গিয়েই হঠাৎ এক সুঠাম দেহের অধিকারী এক ব্যক্তির সাথে ধাক্কা খেল সে।

–উফফ গেলো গো গেল মাথাটা ফেটে গেল গো।এই যে মিস্টার উগান্ডাবাসী চোখের কি মাথা খেয়েছেন? চোখে দেখতে পান না?

— নাতো এত সুন্দরী বউ থাকতে আর কি কিছু দেখতে ইচ্ছে কর বলো। শুধুই তো তাকে দেখতে ইচ্ছে করে।

বলেই পৃথার কোমর জরিয়ে কাছে টেনে নিল।পৃথার দুহাত অর্নর বুকে ঠেকেছে।পৃথা রাগী একটা লুক দিল।

— দেখুন!

— দেখছি তো।তোমাকেই দেখছি তোমাকে ছাড়া আর কাকে দেখবো বলো।

— একদম ফালতু কথা বলবেন না বলে দিলাম।হনুমান একটা। এই আপনি তখন আমায় কি বলেছিলেন?

— কি বলেছিলাম?

ভাবুক হয়ে প্রশ্ন করলো পৃথাকে।যেন সে কিছুই জানে না।

— আপনি আপনি তখন আমায় পেত্নী বলেছিলেন কেনো?

বলেই অর্নর বুকের শার্ট খামচে ধরলো।পারলে অর্নকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুচিকুচি করে কাটতো।কিন্তু দুর্ভাগ্য তা সম্ভব নয়।

— ওহ ওটা তোমাকে বলেছিলাম বুঝি? তাহলে মানছো তুমি পেত্নী।

— দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না। আমি যদি পেত্নীর মতই দেখতে হই তবে বিয়ে কেনো করেছেন আমায়।

চোখে মুখে একঝাক অভিমান নিয়ে কথাগুলো বললো পৃথা।গলাটাও বেশ ভারি হয়ে আসছে।অর্ন শীতল চাহনি দিল এবার। ওর ওমন শীতল চাহনিতে গভীর আকুতি দেখতে পেল পৃথা।যে আকুতি ভালোবাসার। ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পাওয়ার।ও তৎক্ষনাৎ চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো।হঠাৎই চোখে জল এলো ওর।এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখের হল লুকোবার চেষ্টা করছে।যা অর্নর চোখে ধরা দিয়েছে ঠিকই।কিন্তু অবাধ্য চোখের জল গড়িয়েই পড়লো মুখে কোন কথা নেই। নিরবে দুফোটা অশ্রু গড়ালো।গালে পড়তেই তা শুষে নিল অর্ন।পৃথার কপালে গাঢ় চুম্বন করলো। ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে আগ্রাসী কন্ঠে বলে উঠলো,

— কারন তুমি আমার।শুধুই আমার শ্যামাকন্যা।আমি আমার এই শ্যামাকন্যাতেই আসক্ত।তার এই উজ্জ্বল শ্যামারঙা মায়াবী চোখজোড়ায় ওই ছোট্ট টোল পড়া গালোর মিষ্টি হাসি আর তোমার এই মায়াভরা মুখশ্রী আমার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে বারবার।ওই মায়াবী চোখে আমার মরন দেখি রোজ।যা আমাকে বেসামাল করতে যথেষ্ট।যা কোন অতি সুন্দরী নারীর পক্ষে অসম্ভব। আমার কাছে এই তুমি।তোমার এই শ্যামবর্ন আর একটা বাচ্চামো স্বভাবের এই পিচ্চিকেই ভালোবেসেছি আমি।আজও বাসি আর আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বাসবো।আমার শুধু ইহজনমে নয় পরকালেও শুধু তোমাকেই চাই।শুধুই আমার এই শ্যামাকন্যাকেই চাই।#শ্যামাকন্যাতে_আসক্ত হতে চাই।

অর্নর এমন ভালোবাসা মিশ্রিত আবেগ পূর্ণ বক্তব্যে পৃথা শিহরিত।কি সুন্দর করে নিজের মনের কথাগুলো ব্যক্ত করলো অর্ন।ওর ভালোবাসাময় কথায় অন্তরে অন্যরকম সুখানুভূতি হচ্ছে ওর।শরীর মন জুড়ে শিহরন বয়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছি ও।মৃদু কাঁপছে ওর শরীর সাথে ঠোঁট জোড়াও খুব করে কাঁপছে। ওই কম্পনরত ঠোঁট জোড়া যেন খুব করে কাছে ডাকছে অর্নকে।হুট করেই ওর প
ঠোঁটজোড়া নিজের আয়তে নিয়ে নিল অর্ন।ওর এমন কান্ডে বিষ্মিত পৃথা।চোখজোড়া অস্বাভাবিক বড় হয়ে গেছে। ও আবেশে চোখজোড়া খিচে বন্ধ করে নিল।প্রায় একমিনিট পর পৃথাকে ছেড়ে দিল অর্ন।দুষ্টুমি মাখা স্বরে বললো,

— তোমার ওই মিষ্টি লিপসের টেস্ট রোজ নিতে চাই।রোজ কিছু না খেলেও ওটা আমার লাগবেই।

বলেই অর্ন চোখ মেরে পকেটে দুহাত গুজে হেলে দুলে শিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেল।পৃথা ঠায় দাড়িয়ে।ওর ভাবনার বাইরে ছিল অর্নর কর্মকান্ড।বজ্জাত খাটাশ খবিস একটা।হুহ।আমাকে আমাকে কিস করলো খাটাশটাকে মজা বুঝাবো আমি তখ৷ চের পাবে কত ধানে কত চাল? হাহ।কথা গুলো মনেমনে চিন্তা করেই মুখ বাকিয়ে চলে গেল বারান্দায়।

—————————————–

মাঝখানে প্রায় দুমাস কেটে গেছে অর্ন আর পৃথার মাঝে এখন সবটাই স্বাভাবিক হচ্ছে। ওদের ঝগড়া,খুনসুটি,অর্নর পৃথাকে বিরক্ত করা।হুটহাট করে কিস করা। ওর কাছে চলে আসা সবটাই এখন ভালো লাগে পৃথার।ও বুঝতে পারছে যে ও ভালোবেসে ফেলেছে অর্নকে।মানুষটা সত্যি অসাধারন। এত টাকা পয়সা পাওয়ার থাকার পরও কখনো সেগুলো দ্বারা খারাপ কিছুই করে না।যা পৃথার মন আকৃষ্ট করেছে।তাই তো এত অল্প সময়ে ওকে ভালোবেসেছে।এখন শুধু ওর ভালোবাসি বলার পালা।ও খুব ভালোভাবে বুঝে গেছে এই মানুষটিকে ছাড়া ওর একমুহূর্তও চলবে না।একমুহূর্ত ও না।তাই ও স্বীকার করবে ওর ভালোবাসা। হ্যা ও স্বীকার করবেই।

আনমনে বারান্দায় বসে ভেবে চলেছে এতদিনে ওদের খুনসুটির কথা। সেদিন অর্ন পৃথাকে ওভাবে কিস করাতে ও পরদিন এই ঠান্ডা কনকনে শীতের রাতে ওর গায়ে ঠান্ডা পানি ডেলে দেয়।অর্ন হরবরিয়ে উঠে বসে।পৃথাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে যায়। তারপর চোখ মুখ কুচকে বিরক্তি ভাব এনে বললো

–এটা তুমি কি করলে পৃথা? আমার এত শান্তির ঘুম তোমার সহ্য হলো না বুঝি? দাড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি মজা।

বলেই পৃথা আর অর্ন ছোটাছুটি শুরু করলো।একপর্যায়ে পৃথা হাপিয়ে গেলে অর্ন ওকে ধরে ফেলে

–এবার কোথায় যাবেন মিস ওয়াইফি! এত রাতে আমার ঘুম ভাঙানোর শাস্তিটা ঠিক কিভাবে দিব বলোতো?

— হাহ! কিসের শাস্তি আর কেনো দিবেন শাস্তি! আমি কি করেছি হ্যা যে আমায় আপনি শাস্তি দিবেন? আপনি সকালে যা করেছেন আমিও তাই করেছি?

— কি এমন করলাম আমি যার জন্য আমার ঘুম নষ্ট করেছো তুমি?

— কি করেছেন মনে নেই!দেখছেন এমন অপকর্ম করার পর কেই বা মনে রাখে।

একথা শুনে খানিকটা থতমত খেয়ে গেল অর্ন।ঘাবড়ানো ফেস নিয়ে বললো,

— মা্ মানে কি বলতে চাও তুমি? কিসের অপকর্ম?

সরুচোখে কপাল কুচকে প্রশ্ন করলো অর্ন।
পৃথা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অর্নর দিকে তারপর গড়গড়িয়ে বলতে থাকলো,

–এই যে আপনি সকাল বেলা আমার নিষ্পাপ ঠোঁটের ভার্জিনিটি নষ্ট করলেন!তাই আমি আপনার ঘুম নষ্ট করেছি ব্যাস শোধবোধ।

— ওহহো! তো এই কাহিনি।আমি তোমার ঠোঁটের ভার্জিনিটি নষ্ট করেছি।তাহলে এখন তা আমি রোজ করবো। আর এখন তোমার শাস্তি হলো………

বলেই বাঁকা হাসলো অর্ন।পৃথা ওর হাসির মানে বুঝতে পেরে ছটফটিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই আরো আকড়ে ধরলো অর্ন।ওর চুল মুঠো করে ধরেছে একহাতে আর অন্যহাতে ওর গাল ধরে ইচ্ছে মতো শুষে নিচ্ছে।প্রায় পাঁচ মিনিট পর ছাড়লো ও পৃথাকে।পৃথাকে ছাড়া পেতেই জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিচ্ছে। বেশ খানিকক্ষণ এভাবে থাকার পর পর কয়েকটা কিল বসিয়ে দিল অর্নর বুকে।অর্ন পৃথার দুহাত কব্জি ধরে রাখলো।ওর দুহাত ধরেই বুকে টান মারতেই ও ঠিক বুকের মাঝে এসে পড়লো ওর মাথা।কান পেতে শুনতে লাগলো ওর বুকের ঢিপঢিপ শব্দ।কেমন সমান তালে বেজে চলেছে।খুব দ্রুত বেগে ছুটছে।কিছুক্ষণ জোখ বন্ধ করে শুনলো ও এই হৃদমাঝারের শব্দ। এই শব্দ যেনো চিৎকার করে বলছে,

–পৃথা পৃথা পৃথা।শুধুই ওর নামের মালা ঝপছে যেন।ধ্যান মগ্ন হয়ে আছে ওর এই নামের তালে তালে দুলে চলেছে সব।আকাশ বাতাস চন্দ্র সুর্য তারা।সবাই যেন সাক্ষী দিচ্ছে ওর ভালোবাসার৷

অর্ন পৃথাকে কোলে তুলে বেডে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়।তারপর নিজে ওর পাশে শুয়ে পড়ে ওকে বুকের মাঝে আগলে নেয়। পৃথাও চুপটি করে ওর বুকে ঘুমিয়ে থাকে।

এভাবেই ভালোবাসাময় কাটতে থাকে সময়। ভাবতেই মুচকি হাসে পৃথা। মনে পড়ে যায় অর্ন আর আনিশার যৌথ কর্মকান্ডের স্বীকার হয়ে ওর কি অবস্থাটাই না হয়েছিল।ওর ঘরে একটা মিচকে ইদুর রেখে দিয়েছিল।রাতে তা দেখে একদম।লাফালাফি শুরু হয়ে যায় পৃথার।একপর্যায়ে লাফিয়ে অর্নর কোলে উঠে পড়ে।অথচ সেদিন প্রথম বার নয় যখন ও অর্নর কোলে চড়েছে।তারপর সেদিন গোসলের পর বাইরে বেরোতেই সুতোয় পা বেধে ওর বুকের উপর গিয়ে পড়া।ওদেরকে সারাদিন রুমে লক করে রাখা।এই সবটাই ওই পুচকিটার কর্মকান্ড যা সাথে ছিল ওর বাবাবও।দুই বাবা মেয়ে মিলে ওদেরকে এক করার মিশনে নেমে ছিল।সাথে অনিলাও কম সঙ্গ দেয়নি ওদের।অর্ন তো এমনিতেই একধাপ এগিয়ে আর তার পরিবার তার থেকেও দুধাপ বেশি এগিয়ে।

————————————————–

আজ সকাল থেকেই পৃথা একটু চিন্তা ভাবনায় মগ্ন। কি করে করবে তাই ভাবছে সে।কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।ওর এমন অস্থরতা দেখে অনিলা ওকে প্রশ্ন করে। ও সবটা খুলে বলে।ও অর্নর জন্য কিভাবে কি করবে? কিন্তু কোথায় এরেন্জ করবে সেটাই ভেবে পায় না।অনিলা ওকে অর্নর প্রিয় জায়গার সন্ধান দেয়।সেখানে নিরাপদ ও থাকবে ওরা।তবে অর্ন যেন কিছুই জানতে না পেরে সে বিষয়ে বারন করে দেয়।তাই ওরাও কিছুই জানায় না অর্নকে।সারা সকাল ভেবে প্ল্যান করে সন্ধ্যায় অর্নকে সারপ্রাইজ দেবে বলে।দেখতে দেখতে সময় চলে যায়।প্ল্যান অনুযায়ী সব সাজিয়ে নেয় পৃথা।তাও আবার নিজের হাতে কাউকে সাহায্য করতে দেয়নি।সবটা নিজের হাতে সাজাবে বলে।নিজেও তৈরি হয়ে নেয় ওর মনমত করে যেভাবে ও সেই ডায়েরিটাতে পরেছিল।

#চলবে………

(এত লেট করার জন্য দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here