শ্যামাকন্যাতে আসক্ত পর্ব -০৭

#শ্যামাকন্যাতে_আসক্ত

#লেখনীতেঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা

আজ পৃথার মনটা বড্ড বেশি উদাস।কিছুই ভালোলাগছে না তার।এতদিন অর্ন পৃথার যত্ন করেছে ঠিকই কিন্তু ওর সাথে তেমন একটা প্রয়োজন ব্যতীত কথাও বলেনি।ওর জেদকেই প্রাধান্য দিয়েছে। ওর সাথে নেদিনের মত ঝগড়া করে না। ফাজলামো করে না।কেনো যেন এইসব দুষ্টুমি খুনসুটি ভিষন মিস করছে পৃথা।এই পাঁচ দিন অর্ন পৃথা এক রুমেই ছিল। তবে পৃথা বেডে আর অর্ন সোফায়। মুলত অর্ন এখনো বেশ রেগে আছে সেদিন পৃথার বলা কথাটায়।তার উপর ওর বাবা তো ওকে সেদিন বললো যেদিন রাতে ও বাড়ি ফিরে এসেছিল হসপিটাল থেকে নিজেকে পৃথার দোষী মনে করে আঘাত করার জন্য।

সেদিন রাতে অর্ন খুব ফাস্ট ড্রাইভিং করে বাড়ি ফিরে এসেছিল।পৃথার আঘাতের জন্য ও নিজেকে দায়ী করতো।তাই সেদিন শুধুমাত্র নিজেকে আঘাত করে মনকে শান্ত করতেই ও বাড়ি ফিরে।যখনই ভাঙা কাচের দিকে চোখ যায়।রাগ হয় ওরভিষন রাগ।এই ভাঙা কাচের টুকরোর মত হয়তো কোনদিন ওদের সম্পর্ক জোড়া লাগবে না। তার জন্য অবশ্য ও নিজেই দায়ী। মেয়েটার সাথে বড্ড অন্যায় করেছে ও।বড্ড কাঁদিয়েছে মেয়েটাকে।যে মেয়েটার একফোটা চোখের জল ওর বুকে অদৃশ্য রক্তক্ষরন করে সে মেয়েটার চোখ থেকে অজস্র জল ঝড়িয়েছে ও।ওরই সেই আঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া প্রয়োজন নাহলে ও সেই কষ্টকে অনুভব করতে পারবে না।তাই তো এত ভালোবাসাকে বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখেও সে পৃথার থেকে এতটা দুরে সরে ছিল।শুধুমাত্র ওর কষ্টগুলোকে অনুভব করার জন্য।গভীরভাবে অনুভব করতে চেয়েছিল পৃথা কতটা যন্ত্রণা ভোগ করছে।ভালোবাসার মানুষটার থেকে দুরে থাকায় কতটা পোড়ায় কতটা দগ্ধ করে সেটা ওর অজানা নয়।কিন্তু ওর বুকের মধ্যে জ্বলতে থাকা এই আগুনে কবে নিভবে?কবে ওর প্রিয়সীকে ও কাছে পাবে।একটু ভালোবাসার দাবি করবে। নিজের বুকে জরিয়ে হৃদয়ে দগ্ধ হওয়া জ্বলতে থাকা মনটাকে শীতলতা দান করবে। ও যখনই কাচের মধ্যে হাত দেবে তখনই ওর বাবা ওর হাত ধরে ফেলে।আর ব্যতীব্যস্ত হয়ে রাগী স্বরে বলে ওঠে,

–অর্ন এসব কি ধরনের পাগলামি।তুই কি পাগল হয়ে গেলি?কেনো নিজেকে আঘাত করছিস? এই সময় তো তোর পৃথার কাছে থাকা প্রয়োজন? তা না করে তুই এখানে নিজেকে আঘাত করতে ছুটে এসেছিস কেনো?

অর্ন ছলছল চোখ বাবার দিকে তাকালো। প্রচন্ড কান্নার ফলে ওর চোখ রক্তজবার ন্যায় লাল বর্ন ধারন করেছে।বাবার হাত হালকা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বললো,

–কেননা ওর প্রতিটা আঘাতের জন্য আমি দায়ী বাবা।আঘাতে আঘাতে ওকে জর্জরিত করেছি আমি।ওকে নিঃস্ব করে দিয়েছি।ওর থেকে ওর ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছি বাবা।

বলেই ঢুকরে ওঠলো ও।আকড়ে ধরলো বাবাকে।ছেলেরা নাকি নিষ্ঠুর হয় পাষান হয় হৃদয়হীন হয়।কিন্তু সেই নিষ্ঠুর পাষান হৃদয়হীন মানুষটারও দিনশেষে ভিষন কষ্টের অনুভব হয়।আর যখন তা নিজের ভালোবাসার জন্য হডে থাকে তখন তা অবর্ননীয়।কেননা এই ব্যথা শুধু তারাই বোঝে যারা এক তরফা ভালোবাসে।এক তরফা ভালোবাসার কষ্টটা শুধু সেই বোঝে যে এক তরফা ভালোবাসায় আসক্ত।যার থেকে সে কোনদিন বেরোতে পারে না।আর প্রিয় মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার সৌভাগ্যও হয় না।এই যন্ত্রণা যে কতটা পোড়ায় বুকের ভিতরে মন যেখানে সেখানে তা কেবল তারাই অনুভব করতে পারে।যেমনটা অর্ন অনুভব করছে। নিজের ভালোবাসার মানুষটির সমস্ত দুঃখ কষ্টের জন্য সে নিজেকে দায়ী করছে।কিন্তু এটা করা ছাড়া কি তার আর কোন উপায় ছিল। ছিল না কারন একটা ঠকবাজ জালিয়াতের হাতে নিজের ভালোবাসাকে সে তুলে দিতে পারতো না।ও তো চেয়েছিল ওদের মাঝখান থেকে সরে যেতো কিন্তু তনয়ের সত্যিটা জানার পর তা অসম্ভব ছিল।আর পৃথা ও জ্জোচ্চর জালিয়াত চালবাজটাকে এতটাই বিশ্বাস করতো যে ও কখনো মেনে নিত না।কোন প্রমানের তোয়াক্কা করতো না।সবটাই অর্নর সাজানো মনে করতো।এমনিতেও ও অর্নকে সহ্য করতে পারে না।ও ভাবে যে অন্যান্য পলিটিশিয়ানদের মত অর্নও তেমনই।কিন্তু অর্ন কখনো ওর এই ভুলটা ভাঙানোর প্রয়োজন বোধ করেনি।ওর চোখে যখন নিজের জন্য শুধুই ঘৃনা দেখতো ওর বুকটা তখ৷ প্রনয়ের দহনে ছাড়খাড় হয়ে যেত।মনের মাঝে উথাল পাথাল ঝড় তুলতো।দম আটকে আসকো তবুও কখনো প্রকাশ করেনি কখনো না কারো কাছেই নয়। কিন্তু আজ ও আর পারলো না সব যন্ত্রণা গুলোকে নিজের মধ্যে চেপে রাখতে তাই বের করে দিতে চাইছে সবটা।ওর ব্যথাগুলো কান্না হয়ে ঘড়ে যেতে চাইছে।

ওর বাবা বুঝলো ছেলের মনের জমানো দুঃখটাকে সে বের করে দিতে চাইছে। কুরুক না একটু হালকা হবে।লোকে বলে ছেলেরা কঠিন পাথরের ন্যায় শক্ত।এই শক্ত পাথরেও আঘাত করলে তা একটু একটু করে ক্ষতবিক্ষত হয়ে একসময় ভেঙে গুড়িয়ে যায়।

বাবার বুকে মাথা রেখে বাচ্চাদের মত কিছুক্ষন কান্না করলো ও।এখন একটু হালকা লাগছে।বাবার বুক থেকে মাথা তুলে নাক টেনে নিজেকে সামলে নিলে।এতটা দুর্বল হলে চলবে না।পৃথার ভালোবাসা না পেলে ওর ঘৃনাকে নিয়েই বেঁচে থাকবে ও।তা যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক হবে সে ধারনা ওর আছে তবুও প্রিয়তমার ঘৃনাও কজন পায়।ভারোবাসা না পেলেও ঘৃনার যোগ্য তো সে অবশ্যই।

ছেলেকে খানিকটা শান্ত হতে দেখে এবার মিস্টার অর্নব খান ওকে নিচ থেকে তুলে উপরে খাচে বসিয়ে দিলেন। নিজে ও বসে গেলেন পাশে। কাধে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বললেন,

–তুই এতটা ভেঙে পড়িস না বাবা।দেখবি সবটা ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু তার প্রয়োজন সময়।তোর ওকে সময় দেয়া প্রয়োজন তবে সেটা ওর থেকে দুরে সরে নয়।ওর কাছাকাছি ওর আশেপাশে থেকে ওকে তোর ভালোবাসাটাকে রিয়েলাইজ করার চেষ্টা কর।দেখবি ও ঠিকই তোর ভালোবাসা বুঝবে।

— ওর ভালোবাসা শব্দটার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে বাবা।ওই ঠকবাজটার জন্য ও কোনদিন আমাকে ভালোবাসবে না।ও শুধুই আমাকে ঘৃনা করে বাবা। শুধুই ঘৃনা করে। কোনদিন ভালোবাসবে না আমায়।

বলতে বলতে ওর গলা ধরে আসছিলো।চোখ দুটো জলে টইটম্বুর হয়ে উঠলো।নিরবে চোখের জলও ফেললো।দম আটকে আসছে ওর ।খুব কষ্টে ও মুখ থেকে বের করলো।

— জানো বাবা ও যখন আমার দিকে ঘৃনার দৃষ্টিতে দেখে কতটা দগ্ধ হই আমি।কতটা পোড়ায় ওর ওই দৃষ্টি আমায়।ও কি কখনো বুঝবে।ওর ওই দৃষ্টির প্রখরতা খুব বেশি উতপ্ত বাবা। খুব বেশি উতপ্ত।আমি সইতে পারি না বাবা।সইতে পারি না।খুব কষ্ট হয় বাবা।খুব কষ্ট।ও কবে বুঝবে বাবা? কবে আমায় আপন করে নিবে? কবে মেনে নিবে এই পবিত্র বন্ধনের শেকলকে? কবে আমার ভালোবাসার মুল্য দেবে?

ওর বাবার ছেলের এমন দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা দেখে বেশ কষ্ট হচ্ছে। কাদতে ইচ্ছে করছে। তার হাসিখুশি সবাইকে মাতিয়ে রাখার ছেলেটা এই দুই বছরে প্রনয়ে আসক্ত হয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে কি করবে তার ছেলের এই অদৃশ্য যন্ত্রনা লাঘবের জন্য জোর করে তো আর ভালোবাসা হয় না।মেয়েটাকেও জোর করতে পারবে না।পরিস্থিতি ভিষন জটিল তাকে সাবধানে হেন্ডেল করতে হবে।ছেলেকে বোঝাতে হবে।

–বাবা তুই চেষ্টা করে তো দেখ।জানিস এই বিয়ে না।ক পবিত্র বন্ধনটার অনেক জোর। এই পবিত্র বন্ধনে কেউ আবদ্ধ হলে তার মনে ভালোবাসার সঞ্চার হতে বাধ্য। আর তোর ভালোবাসায় কোন অভিনয় নেই,কোন স্বার্থ নেই।নিঃস্বার্থ এই প্রনয়ে আসক্ত হতে বাধ্য ‘ও’। তুই ওকে সময় দে।আজ তিনদিন হলো তোদের সম্পর্কের শুরু। আর তুই সেদিন বাড়ি ছেড়েছিস ঠিকমতো বাড়িতে থাকিস না। ওর খেয়াল ও রাখিস না।ওকে তোর ভালোবাসায় আসক্ত কর।ওর মনে বিশ্বাসের জন্ম দে।সবাই ঠকবাজ না,সবাই স্বার্থপর না,সবাই ভালোবাসাকে স্বার্থ দিয়ে বিবেচনা করে না।পন্যের মত কেনাবেচা করে না।তোর ভালোবাসা কতটা পিউর, কতটা নিঃস্বার্থ সেটা ওকে রিয়েলাইজ করা।তোর অনুভূতির প্রকাশ ঘটা।দেখবি তুই নিরাশ হবি না।

বাবার আস্থা আর ভরসায় মুখে স্মিত হাসলো অর্ন।হ্যা সে চেষ্টা করবে, চেষ্টা না করে সে হারবে না।যাই হোক পৃথাকে ও হারাতে পারবে না। না চাইতো গভীরভাব৷ ওই মেয়েটার সাথে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকো জরিয়ে গেছে ও। ওকে ছাড়া নিশ্বাস নেওয়াটাও বড্ড কষ্টকর।তাই যে করেই হোক ও চেষ্টা করবে আর সফল হবে এটা ওর দৃঢ় বিশ্বাস।

ও হাসিমুখে ওর বাবাকে জরিয়ে ধরলো।ওর বাবা এবার আগ্রাসী কন্ঠে বললো,

— জানিস অর্ন তোর মাকে বোঝাতেও আমার অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। তোর মা যা রাগী ছিলো কি বলবো।বাবাহ খুব জ্বালিয়েছে আমায়।এখনো জ্বালায়। আসলে বাইরে সবার কাছে আমি বাঘ হলেও তোর মায়ের কাছে আমি ভেজা বেড়াল।😑
শোন এটা আজ শুধু তোর সামনে স্বীকার করলাম।তোর মা জানতে পারলে ভাও বেড়ে যাবে বুঝেছিস।
আর শুনে রাখ এইটা শুধু আমার নয় বিয়ে নামক বলির পর পুরো পুরুষ জাতির পরিনতি। মুলত এই ভালোবাসা খুনসুটি, দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া গুলোই বাধনটাকে আরো শক্ত করে আকড়ে রাখে।বউকে ভালোবাসার ভালোবাসা বোঝানোর জন্য এইটা একটা উত্তম পন্থা। বউয়ের কথায় সায় দাও নাহলে খবর রাখাপ করে ছাড়বে।

অর্নর মন ভালো করার জন্য আর প্রানবন্ত ভাবটা টেনে আনার জন্য এসব বলছে।তবে এটা শতভাগ সত্য। বাইরে যতই পুরুষমানুষ বাঘ হোক বউয়ের কাছে ভেজা বেড়াল😐।নিজের বাবা আর মায়ের মধ্যে এমন খুনসুটি পূর্ন কথা শুনে অর্ন খিলখিল করে হেসে ওঠলো।ওর এই হাসিটা কতদিন পর দেখছে অর্নব খান।ছেলের হাসিতে তিনিও তাল মিলিয়ে হাসলেন।অর্ন এবার হাসতে হাসতেই বলে উঠলো,

–আচ্ছা বাবা আমিতো জানতাম তোমাদের প্রেম করে বিয়ে তবে তুমি যে মাকে এতটা ভয় পাও তাতো জানতাম নালাইক সিরিয়াসলি বাবা। তোমার মত এত বড় একজন পলিটিশিয়ান বউয়ের হাতে কুপোকাত।ভাবা যায় বলো।

বলেই আরেকদফা হাসিতে ফেটে পড়লো ও।আসলে আজ মন থেকো মনে হয় বড় কোন পাথর নেমে গেছে।তাই এমন প্রান খুলে হাসছে ও।বাবার কথায় অনেকটা ভরসা পেয়েছে ও।ওর বাবা এবার চোখমুখ কুচকে বললো,

— হাসো বাছাধন হাসো,আমিও হাসবো।আমারও সময় আসবে। যখন তোমার অবস্থা আমার থেকেও করুন হবে।পৃথা মা যা রাগী ও তোকে ঘোল খাইয়ে ছাড়বে।

— কি যে বলো না বাবা।ওই পুচকু একটা মেয়ে আমাকে ঘোল খাওয়াবে। ইম্পসিবল বাবা।তুমি তো জানো এই অর্ন খান কারো ক্ছে হার মানে না।দেখবে এবার ওকে কেমন ঠাটবাটে রাখবো।তোমার মত নয়।

–বাছা আমার ওই পুচকু মেয়েটাই তোমার এই দশা করেছে।ওই পুচকগুলোর কাছে এক অসীম ক্ষমতা আছে জানিস তো।তাদের বাচ্চামো কিভাবে যেনো বেধে ফেলে।একবার বাধা পড়লে আর বের হওয়া যায় না।

প্রেম ভালোবাসা অনুভুতি খুনসুটি এসব নিয়ে আলোচনা কেতে করতে ওদের সে রাত পার হলো।পরের দিন ভোর হতেই অর্ন ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পড়লো পৃথার কাছে যাওয়ার জন্য। পৃথার ঘুমিয়ে তলিয়ে ছিল।ওকে দুচেখ ভরে খুবই কাছ থেকে দেখে চোখের এতদিনের তৃষ্ণা মিটিয়েছে।এ তৃষ্ণা যেন শত জনমেও মিটবে না।এ পিসাসা আজন্ম কাল আমরন থেকে যাবে।এ মায়াবী মুখটার দিকে সারাদিন সারাক্ষণ প্রতিটা মুহুর্ত তাকিয়ে থাকলেও চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করবে না অর্নর।এতটা ভালোবাসে সে তার প্রিয়তমাকে।

———————————————

আজ সকাল থেকেই বাড়িতে বেশ হইচই পড়েছে।এরই মধ্যে আরো তিনটে দিন অতিবাহিত হয়েছে।সবাইকে বেশ হাসিখুশি লাগছে।এমনকি অর্নকেও। তার মধ্যে একটা প্রনোচ্ছল ভাব।যেনো তার প্রানপাখি তার কাছে আসতে চলেছে এতদিন সে যেন দুরে কোথায় ছিল।শাশুড়ী মা কিচেনে ব্যস্ত শ্বশুর মশাই সবাইকে দিয়ে এটা ওটা আনাতে ব্যস্ত। আর অর্ন দুটো রুম তৈরি করাচ্ছে। একটা রুমে অনেকগুলো বাচ্চাদের খেলনা, আসবাবপত্র, টেডিবিয়ার সহ আরো অনেক কিছু।

পৃথা কিছু জিজ্ঞেস করতে যেয়েও করলো না।এমনিতেই অর্ন এখন ওর সাথে তেমন কথা বলে না।ওর কি প্রয়োজন শেধে গিয়ে কথা বলার ওর কি নিজের কোন মুল্য নেই নাকি। হুহ।এসব ভেবেই সে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকে।কিন্তু সে তো একটা প্রশ্নের উত্তর খুজতে ব্যস্ত যে সে তো অর্নকে ঘৃনা করে।তাহলে কেনো ইদানীং ওকে মিস করে।সেদিনের আচরন গুলো মিস করে।কেনো ও খুব করে চায় অর্ন ওর সাথে হাসুক মজা করুক ওকে রাগীয়ে দিক।ওর সাথে ঝগড়া করুক।এসব কিছু ও ভিষন মিস করছে কিন্তু নিজের ইগো আর এরোগেন্ট স্বভাব বজায় রাখতেই ও নিজ থেকে কিছুই বলে না।তবে অর্নকে লুকিয়ে দেখে যা অর্নর চোখে পড়েছে বেশ কয়েকবার।দুএকবার তো চোখাচোখি ও হতো।অর্নর মায়ের সাথে আগের মত এখন আর ওতটা শক্ত ব্যবহার না করলেও মন খুলে কথা বলতে পারার মত ফ্রি হই নাই। অবশ্য ওদের এতটুকু সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাও আবার অর্নর মায়ের চেষ্টায়।অর্ন পৃথার পরিবারকে প্রতি মুহুর্তে আগলে রাখে তবে ওর পরিবারের আজানায়।তবে সে সবটা পৃথার মা বুঝতে পারে।কিন্তু কিছুই বলে না।আর অর্নও ধারনা করতে পারে নাই যে উনি সবটা বুঝতে পেরেছে।

——————————————————-

অর্ন ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দরজা ওপেন করতেই ওর চোখ ছানাবড়া।এমন একটা ঘটনা ঘটবে ও ভাবতেই পারে নাই।ও সম্পুর্ন নির্বাক।মুখ দেখে কোন আওয়াজ বেরোচ্ছে না।আসলে যখনই আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হুট করেই আমাদের সাথে ঘটে তখন মস্তিষ্ক শুন্যের কোঠায় পৌছে। অর্নের পরিস্থিতি আর লুকটা ঠিক সেরকমই।এমুহূর্তে সে হাসবে না ক্দবে বুঝতে পারছে না।পৃথার ও সেই একই অবস্থা। ওর চোখ যেনো কোটর থেকে বেরিয়েই পড়বে।কারো মুখে কোন কথা নেই দুজনেই হা হয়ে দাড়িয়ে ।পরিস্থিতি বোধগম্য হতে কিয়ৎপ্রহর সময় লাগলো।অবস্থা বুঝতে পেরেই পৃথা হঠাৎ নিজের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠলো।সর্বোচ্চ কম্পাংকের চিৎকারে প্রস্তুত সে।ঠিক সেসময়ই মুখ চেপে ধরলো অর্ন ওর। এ সময় এই পরিস্থিতিতে যদি কেউ চলে আসে তো কি হবে? না নাহ ও ভাবতেই পারছে না।কতটা লজ্জায় পড়বে ওরা।আর এই বোকা পুচকে মেয়েটা কিনা এত জোরে চিৎকার করার জন্য হাক ছেড়েছে। আস্ত গর্দভ একটা।

চিৎকার করতে না পেরে মুখ দিয়ে উম উম শব্দ করছে পৃথা।দুহাত বুকের মাঝে রেখে সামান্য দুরত্ব গুজে দিল ও।সাথে ছটফট করতে লাগলো।এই অবস্থায় আছে ও তারউপর এই অসভ্য লোকটা আবার ওর এত কাছে এসে মুখ চেপে ধরেছে।এমনিতেই এর কাছে আসাতে অস্থিরতা অস্বস্তি বেড়ে যায় ওর।দম বন্ধ হয়ে আসে।আর এ অবস্থাতে তো ওর মরন হবে যেন।ওকে এমন ছটফট করতে দেখে অর্ন ওর আরেকটু কাছে মুখটা এনে খানিক বিরক্তি নিয়ে বললো,

— এমন ছটফট করছো কেনো হুম।আর এত জোরে চিৎকার ই বা করতে যাচ্ছিলে কেনো? জানো বাড়ি ভর্তি লোকজন কেউ এসে আমাদের এভাবে দেখলে কি ভাববে ভেবেছো একবার।গাধার মত যাচ্ছিলোতো সবাই চিৎকার করে সবটা দেখাতে।বাই এনি চান্স তুমি সবাইকে এইটা দেখাতে চাও নাতো যে আমি তোমাকে কতটন আদর করি আর কখন কখন করি?

অর্নর এসব লাজলজ্জা হীন কথাবার্তায় ধপ করে মাথায় আগিন জ্বলে উঠলো পৃথার।লোকটা এত বেহায়া কি করে হতে পারে ও ভাবতেই পারে না।আর কিসব অসভ্যমার্কা কথাবার্তা ভাবা যায়।লুটু ছেলে একটা সারাদিন এইসবই ঘোরে মাথায়।

আবারো ছটফট করতেই অর্ন ওকে বললো,

–ছাড়তে পারি তবে একদম চেচাবে না আমার মান সম্মান সব প্লাস্টিক করে ছেড়ে দিবে নয়ত তুমি।যে মেয়ে বাবা বিশ্বাস করা যায় না।

ওর ওমন কথায় আরো রেগে গেল পৃথা।চোখ বড়বড় করে রাঙাতেই ছেড়ে দিল ওকে অর্ন।

#চলবে…….

ল্লাহ হাফেজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here