#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৪৫
আস্তে আস্তে নীলাদ্রির ও বিদেশ যাবার দিন চলে এসেছে। তার যাবার মাত্র আর একসপ্তাহ বাকি আছে।
তার যাবার কথা মনে পরলে মনের ভেতর অনেক কষ্ট হয়।
তার সামনে নিজেকে যতই সামলে রাখার চেষ্টা করছি কিন্তু তার চোখ কি ফাকি দেওয়া অতই সহজ।
আগামীকাল রাতে তার ঢাকায় যাবার ডেট।
রাতে খাবার খেয়ে সবাই যে যার রুমে চলে গেছে।
আমি আমার বাকি কাজ গুলো সেরে রুমে গিয়ে দেখি নীলাদ্রি সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে।
— কি হয়েছে।
আপনি এভাবে বসে আছেন কেন?
— ভালো লাগছে না রে….
—- কেন শরীর খারাপ লাগছে?
— না রে…
— তাহলে…
— সবাই কে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।
— কেন?
— তোরা সবাই এখানে থাকবি আর আমি একা দূরে থাকবো।
নবুটা ও তো এখন নেই..
— চিন্তা নেই আমি তাও আছি এখানে।
আপনি নিশ্চিতে যাতে পারেন।
— হ্যা,
জানি তো..
— এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ট্রেনিং ঠিক মতো করবেন।
আর সময় করে একটা ফোন করবেন।
এতেই চলবে..
— তোর খারাপ লাগবে মা?
আমি।তার কথায় মুখে হাসির রেশ এনে বললাম..
— তা তো লাগবে।
তবে ছয় মাস তো দেখতে দেখতে কেটে যাবে।
আর এর মধ্যে তো আমার পরিক্ষাও শেষ হয়ে যাবে।
— হুম…
সকাল হতেই আমরা সবাই যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
সেখান থেকে বিমানে করে নীলাদ্রি আর দাদাভাই ঢাকায় যাবে আর তারপর দেশের বাইরে….
একটু পর নীলাদ্রি চলে যাবে তাই সবাই তার সাথে কথা বলছে।
তাকে পরামর্শ দিচ্ছেন।
আমিও সবার সাথে বসে আছি।
হঠাৎ করে নীলাদ্রি সবার সামনেই বলে উঠলো…
— মেঘা একটু রুমে এসো..
— আসছি…
রুমে গিয়ে দেখি নীলাদ্রি কি যেন করছে…
— আপনার কি বুদ্ধি – শুদ্ধি কিছু নেই।
সবার সামনে এভাবে কেউ ডাকে?
— সব আছে।
এবার একটু চুপটি করে দাড়া তো।
— আচ্ছা…
হঠাৎ করেই গলায় কিছুর স্পর্শ পেলাম।
আয়নায় তাকাতেই দেখি একটি চেইন…
— এটা কেন?
— আগামীকাল আমাদের বিয়ের ছয় মাস পূর্ন হবে তাই এটা তোর উপহার…..
নীলাদ্রি দেশে নেই আজ পাচ মাস ঊনত্রিশ দিন।
এতো দিনে আমি তাকে অনেক মিস করেছি।
শুধু আমি না আমরা সবাই তাকে খুব মিস করেছি এবং করছি।
সে যাবার পর প্রতিদিনই তার সাথে কথা হয়েছে আমাদের।
সে যাবার পর নিজেকে নানা ভাবে ব্যস্ত রেখেছি।
ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হয়েছে স
দুই মাস হতে চললো।
পরিক্ষার পর সময় কাটানোর জন্য বাড়ির পাশে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ানো শুরু করেছি।
কারণ ছোট ছোট বাচ্চাদের মধ্যে থাকলে সময় খুব দ্রুত কেটে যায়।।
আগামীকাল নীলাদ্রির আসার কথা কিন্তু সে বড়মাকে ফোন করে বলে দিয়েছে।
তার আসতে নাকি কিছু দিন সময় লাগবে।
কি আর করার এতদিন যখন মন কে বোঝাতে পেরেছি তাহলে আরো কিছু দিন বোঝাতে সমস্যা হবে না…..
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে আসতে আসতে প্রায় বারোটা বাজলো।
রুমে এসে ফোন হাতে নিতেই আমি অবাক।
আমার পরিচিত সবাই আমাকে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে বিবাহ বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়েছে …..
সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির সব কাজ গুছিয়ে বড়মাকে বলে বেড়িয়ে পড়লাম।
উদ্দেশ্য স্কুলে যাওয়া আর তারপর সবার জন্য টুকিটাকি শপিং করা।
যদিও অন্যান্য দিনের থেকে আজ নীলাদ্রি কে বেশি মিস করছি।…..
বাইরের সকল কাজ সেরে বিকেলে মন ভালো করার জন্য মায়ের বাড়িতে চলে এলাম।
এসে ফ্রেশ হয়ে, খাবার খেয়ে ভাত ঘুম দিলাম।
গভীর ঘুমের মাঝেই হঠাৎ পরিচিত মানুষের গায়ের গন্ধ পেলাম।
সেই গন্ধটা আমার খুব চেনা,খুব আপন।
কিন্তু চোখ মেলে সামনে কিছুই দেখতে পেলাম না।
রাতে ঠিক করলাম মায়ের বাড়িতেই থাকবো…
ও বাড়িতে আজ আর যাবো না।
মন খারাপ থাকায় রাতে খাবার না খেয়েই শুয়ে পড়লাম।
বাড়িতে কেউ না থাকায় বাড়িটা বেশ নিস্তব্ধ।
কারণ আমি বাদে সবাই একটা অনুষ্ঠানে গেছে।
চলবে…..