শ্যামারঙা,পর্ব:৪৩+৪৪

#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৪৩

— আর আমি তোমার মতো দিদিভাইকে পেয়েছি।
যে পিসিমনি আমাকে অপছন্দ করতেন তোমার জন্য এখন তিনি আমায় মেয়ের মতো ভালোবাসেন।
এখন তো পুরো পরিবারে আমার আমার কারোর কমতি নেই।
এখন তোমরা সবাই আমার।

সকালে পিসিমনির ডাকে ঘুম ভাংলো।
ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে আমি আবারও অবাক।
এলাহি কান্ড দেখে আমার মাথা ঘোরানো শুরু হয়ে গেল।
তখনই দিদিভাই এসে বললো…

— এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস চল খেতে বসবি।

— এত রান্না কেন হচ্ছে।
আর এত খাবার কে খাবে?

— তোকে চিন্তা করতে হবে না,
এগুলো সব তোকে খেতে হবে না পাগলী,
সেবার পার্টিটা বাকি রেখে চলে গিয়েছিলি এবার সেটা করা হবে।

— ও

—-হুম

সারাদিন খুব ভালো কাটলেও বিকেলের দিকে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
মন খারাপের রোগটা আমায় বড্ড ভোগায়।
যখন-তখন, যেখানে-সেখানে, কারনে-অকারনে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
কিন্তু এই মন খারাপটা খুব সহজে ঠিক হয় না।

সন্ধ্যায় যখন সবাই অতিথিদের আসার অপেক্ষায় রয়েছে। তখন আমি মন খারাপ করে রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।
তখনই নীলাদ্রির ডাক কানে এলো…

— মেঘা,মেঘা কই তুই….

—-…..

—- এই মেঘা,
সারা দিচ্ছিস না কেন?

—…..

—- এই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
রেডি হইস নি কেন এখনো।

— এমনই,
ভালো লাগছে না।

—কেন,মন খারাপ?

আমি ওনার দিকে তাকালাম আর বললাম….

—- আপনারা সবাই কি আমাকে স্বার্থপর মনে করেন।
আমি কি আপনাদের এতোটাই পর?

— এটা কেমন কথা মেঘা….

— আজ যে দিদিভাইয়েরও জন্মদিন সেটা আমাকে বলেননি কেন?

— আমি ভেবেছিলাম তুই জানিস..

— তাহলে রাতে শুধু কেন আমার জন্মদিন পালন করা হলো কেন।
দিদিভাইয়েরটা কেন হয়নি?

— এটা তো।আমি জানি না।

— আমি যতই আপনাদের আপনভাবি না কেন আপনারা আমাকে সেই পর ভাবেন।

—- যে আমি জানি না সেটা তোকে কিভাবে বলবো…
আর তুই এমন ব্যবহার করছিস কেন?

— স্যরি….

বলেই আমি রুমে চলে এলাম।
রেডি হয়ে নিচে চলে এলাম।
অনুষ্ঠানে সবাই চলে এসেছে।
এখানে একসাথে নতুন অফিসের জন্য,আমাদের দুই কাপলদের বিয়ে ও আমাদের দুই বৌয়ের জন্মদিন সব কিছু একসাথে সেলিব্রেট করা হয়েছে।

পিসিমনির বাড়িতে একসপ্তাহ থেকে আমরা খুলনা ফিরে এলাম।

আগামি সপ্তাহে নবুর বিয়ে।
বাড়ির ছোট মেয়ের বিয়ে বলে কথা।
সব আত্মীয় এখন থেকেই আসা শুরু করে দিয়েছে।

আমি ও অন্য সবার মত বিয়ের কাজে ব্যস্ত।
কিন্তু আমার ব্যস্ততাটা সবার চেয়ে বেশি।
নিজেকে কাজের মধ্যে ইচ্ছে করে আটকে রেখেছি।
সবাই আমার ব্যস্ততা দেখে ভাবে ননদ আর বেস্টুর বিয়ে বলে আমি ব্যস্ত।
আমার মনে যে কি চলছে সেটা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।

নবুর বিয়েতে কাকে কি দেওয়া হবে বড়মার সাথে লিস্ট করছি তখনই নীলাদ্রি আমাকে ডাক দিলো..

—- মেঘা,
একটু রুমে এসো

— আপনি জান আমি আসছি।
কাজটুকু করে।

— এখন আসতে পারলে ভালো হতো।
তবে কাজ করেই এসো।

বলেই তিনি চলে গেলেন।
ওনার কথা শুনে বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন…

— নীল ডাকছে যা।

— তাহলে এই কাজটা।

— এখনো কিছু দিন বাকি আছে।
সময় করস বানিয়ে নিলে হবে।
এখন যা।।

— আচ্ছা….

রুমে এসে দেখি নীলাদ্রি সোফায় বসে মাথায় হাত রেখে বসে আছেন।

—- ডেকেছেন কেন?

— এসেছিস…
আমি ভেবেছিলাম হয়তো আসবি না।

— এমন অহেতুক ভাবনার কারণ?

— গত একমাস মানে জন্মদিনের পর থেকে তুই অনেক চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিস।

— কাজ থাকলে বলুন।

— আগামীকাল আমায় ঢাকায় যেতে হবে।

ওনার কথায় আমি তার দিকে তাকালাম।।

— কাল ঢাকায় যেতে হবে কেন।

— একটু কাজ আছে।

—ও

— আর কত রাগ করে থাকবি।
আমার আর ভালো লাগছে না।
তুই বুঝিস না আমার এতে কষ্ট হয়।
শুধু ফাউল একটা কাহিনি নিয়ে অভিমান করে আছিস।
এসব না আমার অসহ্য লাগছে।

— আচ্ছা আর রাগ করবো না…

— কি…..

—- তবে আমার একটা শর্ত আছে।

— এটা আবার কেমন কথা মেঘা।

— মানবেন কি না বলুন।

— না মেনে উপায় আছে কি?
তোর রাগ কমলেই আমার শান্তি।

— বলবো

— বলুন

— বাইরে থেকে আসার পর আমি একটি ফ্যামেলি ট্রুর চাই।
যেখানে আমাদের পরিবারের সবাই থাকবে।

— ব্যস…

— হুম….

— তুই এত পাগলি কেন?

— আপনার না জানলেও চলবে..
তবে আসবেন করে কাল ঢাকায় গেলে?

—- তুই মানা করলে যাবোই না।

— মানে,যাবেন না কেন?

— যেতে হবে না তাই..

— মানে…

—- ঢাকায় যাবার কথা মিথ্যা।

— ওও…

চলবে…

#শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ ৪৪

পুরো একসপ্তাহ নানা ব্যস্ততা ও কাজের মধ্যে কাটলো। কাল নবুর বিয়ে।
পুরো বাড়িতে একটি অন্যরকম আমেজ বয়ে যাচ্ছে।
আয়োজনের সকল প্রস্তুতি চলছে।

রাতে কাজ শেষ করে রুমে যেতে যেতে প্রায় একটা বাজলো। রুমের লাইট অফ দেখে বেশ অবাক হলাম।
এই টাইমে তো লাইট অফ থাকার কথা নয়।
রুমের লাইট জালিয়ে আমি অবাক..

— এগুলো আপনি কি করেছেন।
লাইট অফ করে।

— তোর ডেইলি রুটিন বানাচ্ছি আর সেই বোর্ডে লাইট সেট করছি।আর সেটা এখন টেস্ট করছি।

— মাথা ঠিক আছে আপনার।

— সে তো কবেই খারাপ হয়ে গেছে।

— সরুন তো।
এগুলো বাদ দিন আমি একটু ঘুমাবো।একটু পর তো আবার উঠতে হবে।

— হুম, তুই তো এখন খুব ব্যস্ত।
তোর নাগাল পাওয়াই তো এখন মুশকিল।

— আমি মনে হয় অন্য কারো জন্য এই সব করছি?
আমার একমাত্র ননদের জন্য করছি।

— হুম..
সবাই তো তোর আপন আমি বাদে।

— মানে…

— কিছু না।

— কথাটা কিন্তু ঠিক বলেননি।
আপনার জন্যই কিন্তু সবাই আমার..

— তাহলে এত রাগ করিস কেন?

— এটা তো আমার অধিকার।

একটু পর নবুর অধিবাস/দধিমঙ্গল।
তাই নবুকে তৈরি করে সকল নিয়ম মেনে কাক ডাকার আগে কাক-স্নান করানো হল।
তারপর হল অধিবাস….

আর মাত্র কিছু সময় বাকি বিয়ে শুরু হবার।
সারাবাড়িতে নানা রকমের আলোর ঝলকানিতে রঙিন হয়ে উঠেছে।
সবাই বিয়ের পূর্বমুহূর্তের সাজসজ্জায় ব্যস্ত।
নিজেদের পরিপাটি করে উপস্থাপন করায় সবার খুব ব্যস্ততা থাকলেও সেদিকে আমার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

বড়মা অনেক বার বলেছেন কাজ শেষ হলে সুন্দর করে তৈরি হয়ে নিতে কিন্তু আমার রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না।

চুপচাপ সোফায় বসে আছি।
আর সারাবাড়িতে লোকজনের গিজগিজ করা দেখছি।

শেষমেষ অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিজ রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
রুমের সামনে গিয়ে দেখি রুমের দরজা দেওয়া।
তাই।হাল্কা ধাক্কা দিলাম দরজা খোলা নাকি লক করা সেটা বোঝার জন্য।

ধাক্কা দেবার সাথে সাথে রুমের ভেতর থেকে সে আমার হাত টান দিল আর মুহূর্তে রুমের ভেতর চলে গেলাম।

আমার ভয়ার্ত মুখ দেখে নীলাদ্রি হেসে যাচ্ছে আর আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
কি অপূর্ব লাগছে তাকে দেখতে।
আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বললো…..

—- এভাবে তাকিয়ে না থাকিস না।
যা গিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।

— আমি আপনার সাথে মিলিয়ে কাপল-ড্রেস পরবো না।
এভাবে দেখলে সবাই আমাদের দেখে হাসবে।

— না পরলে পরিস না।
আজ যে কত মেয়ে আমার এই লুক দেখে ফিদা হবে তা তো ভাবনার বাইরে।
পরে কিন্তু আমার দোষ দিতে পারবি না।

আমি রাগান্বিত চোখেতার দিকে তাকালাম আর সে উচ্চহাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।।।

একটু আগে নবু আর অর্পনদার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
সবাই বেজায় খুশি।
রাতে বাসরজাগা হলো।
সারা রাত হাসি মস্তিতে রাত কেটে গেল।
সকাল হতেই বাসি বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল।
তারপর বেলা বাড়িতেই কনে বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেল।

সময় মতো নিদিষ্ট নিয়ম -রীতি সকল কিছু মেনে কনে জামাইকে বিদায় দেওয়া হলো।
বিদায়ের সাথে সাথে সারাবাড়িতে আনন্দের মতো কষ্টের ছায়া নেমে এসেছে।

আস্তে আস্তে নীলাদ্রির ও বিদেশ যাবার দিন চলে এসেছে। তার যাবার মাত্র আর একসপ্তাহ বাকি আছে।
তার যাবার কথা মনে পরলে মনের ভেতর অনেক কষ্ট হয়।
তার সামনে নিজেকে যতই সামলে রাখার চেষ্টা করছি কিন্তু তার চোখ কি ফাকি দেওয়া অতই সহজ।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here