ষোড়শীর প্রেমের মায়ায় পর্ব -০৪

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_চার

–“এই হতচ্ছাড়া বুড়ো কাকে বলছিস?”
পিছনে ফিরে দাদুকে দেখে চমকে গিয়েছে রঙ্গন, দাদুতো এই সময় নিজের ঘর থেকে সহজে বের হয় না বলেই জানে। কিন্তু এত তারাতারি তো বের হওয়ার কথা নয়।

–” কিরে কথা বলছিস না কেন?”

–” দাদু আমি বলছি, আমি আর ও ছাদে যাবো”

–” আমি তোমাকে বলিনি,এই তুই বল বুড়ো কি করেছে? কোন বুড়োর কথা বলছিলি?”

–” আরে দাদু আমাদের বাড়ির পাশে রহমান দাদুর কথা বলছে!”
শ্রাবণ বলে উঠলো কথাটা। তার মাঝেই স্নিগ্ধা এসে ব‍্যাঘাত ঘটিয়ে দিয়েছে।

–” এত সেজে কি কেউ ছাদে যায়? তাও আবার বাড়ির ছাদে?”

–” যেতেই পারে!”

–” তুই কি নতুন বউ? কথাটা বলেই জ্বীভ দাত দিয়ে কেটে ফেলল স্নিগ্ধা, সামনে যে নানাভাই দাড়িয়ে আছে ভুলেই গেছে একেবারে।

তা দেখে বৃদ্ধ সেকান্দার বলে উঠলেন –

–” একটু আগে তুমি কি বললে ওকে?”

–” বলেছি ও কি নতুন বউ নাকি, যেখানেই যাবে সেখানেই সেজেগুজে যেতে হবে। ব্রেন্ডেড পারফিউম, শার্ট, লেদার সু কেউ ছাদে যাওয়ার জন‍্য ব‍্যবহার করে?”
শ্রাবণ দাতে দাত চেপে চেয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে আর মনে মনে ভাবছে একবার কাছে পাই তোমাকে। মাথায় তুলে একটা আছাড় দিয়ে দিব তোমাকে।

–” কিরে শ্রাবণ বল?ও তো ঠিকই বলেছে! এত পরিপাটি হয়ে তোর কেন বের হতে হবে। ”

–” দাদু এটাতে তুমি নেগেটিভ ভাবছো কেন? আমি নতুন বর! কত লোক আমাকে দেখতে আসবে, স্নিগ্ধাকে দেখতে আসবে। বিয়ে হয়েছে দুজনের স্নিগ্ধা নতুন বউ বলে ও কে সুন্দর দেখাবে আর আমাকে খারাপ দেখাবে তা তো হবে না। তাই আমি নিজে ও পরিপাটি হয়ে সুদর্শন রুপে নিজেকে তৈরি করেছি।”

বৃদ্ধ সেকান্দার বুঝতে পারলেন নাতি- নাতনি তার খুব চালাক হয়েছে, দুজনের একজনের সাথেও কথায় পারা যায় না। দুজনের মধ‍্যেই একটা লড়াই লড়াই ভাব।
এই দুটোকে নিয়ে মহামুশকিল! তিনি দুজনের দিকে একবার চেয়ে বড় ছেলে শাহাজাহানের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। দাদু বেরিয়ে যেতেই শ্রাবণ এগিয়ে এলো স্নিগ্ধার সামনে,

–” তুই আমার আর দাদুর মাঝখানে কথা বলতে এলি কেন রে?”

–” তুই দাদুকে মিথ‍্যা বললি কেন? দাদুকে মিথ‍্যে কথাটা বলতেই হবে তোর?”

–” আমার দাদু আমি যখন ইচ্ছা তখন তাকে সত‍্যি হলে সত‍্যি, মিথ‍্যে হলে মিথ‍্যে বলবো! তাতে তোর কি রে?”

–” আমার নানাভাই, আমি আমার নানাভাইকে কেউ মিথ‍্যে কথা বলে ভুলিয়ে রাখবে তা আমি হতে দিব না!”

–” তাই নাকি কি করবি তুই?”

–” তোর নাক ফাটিয়ে দিব!” শ্রাবণের মা রান্নাঘরে যাচ্ছিলেন চিৎকার চেচেমেচি শুনে সামনে এগিয়ে এসে দেখলেন সদ‍্য বিবাহিত নববধূ তার আচল কোমড়ে গুজে তারই বরের সঙ্গে ঝগড়া করছে। এমনিতেই বিয়েটা নিয়ে তার মন ভালো ছিল না। এখন যেন আগুনে ঘি ঢালার মত হয়ে উঠেছে অনেকটা। তিনি চিৎকার করে ছোট যা পুষ্পিতাকে ডেকে উঠলেন –

–” পুষ্প, এই পুষ্প! দেখ, দেখ এই মেয়েটা আমার ছেলেটাকে কি বলছে এসব! জায়ের গলা শুনে দৌড়ে চলে এলেন পুষ্প,

–” কি ভাবি?”

–” দেখ, দেখ, এই মেয়েটার অবস্থা, তুই বলেছিলি না এই মেয়ে আমার ছেলের জন‍্য যোগ‍্য, আমার ছেলেটাকে আগলে রাখবে। দেখ কেমন আগলে রাখবে, বিয়ের পর থেকেই ঝগড়া, বিয়ের কয়েক বছর বাদে তো আমার ছেলেটাকে একদম জ্বালিয়ে মারবে এই মেয়ে।

–” এই স্নিগ্ধা কি করছিস কি?” আয়, আমার কাছে আয়। বলেই টেনে নিয়ে গেলেন তার সঙ্গে কাছে বসিয়ে দিয়ে স্নিগ্ধার দিকে রাগী চোখে চেয়ে বললেন –

–” এই মেয়ে,এই তুই বড় হবি না? সবসময় তোর একই রকম থাকতে হবে? কেন বারাবার শ্রাবণের সঙ্গে লাগতে যাস তুই?”

–” মামি ও নানাভাইকে মিথ‍্যে কথা বলছিল,”

–” তো? মিথ‍্যে কথা বলছিল তুই বলে চলে আসবি।
তুই ওর সঙ্গে ঝগড়া করতে যাস কেন? হুম,
ও কি এখন ছোট? তোর সঙ্গে মারামারি করতে এলে তুই ওর আঙ্গুল কামড়ে দিবে। ঘাড়ে দুম করে দুটো কিল বসিয়ে দিবি। আর ও চেয়ে থাকবে?” ও কি এখন ছোট?

-“যেদিন তোর গায়ে ওর একটা গা পরবে না তখন বুঝবি!
বেশি না দুজনের ভাব জমে যখন খির হয়ে যাবে। তখন বুঝবি এই শ্রাবণের একটা কথা আর একটা হালকা করে টোকা ও তখন কেমন বিষাক্ত লাগবে!এখন কিছুই বুঝবি নারে মেয়ে, সবেতো মাত্র ষোড়শে পা দিয়েছিস, কুড়িতে পা দেয়, একটু বড় হও সম্পর্কের আসল মানিটা ও বুঝবি।”
বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন পুষ্পিতা। স্নিগ্ধা চেয়ে আছে মামির দিকে, মামি খুব কঠিন কঠিন কথা বলেন। হয়তো তার থেকে বড় বলেই এত কঠিন কথা বলতে পারেন।
__________________________________
সকাল বেলায় একটা হুলস্থুল অবস্থা যাচ্ছে খান বাড়ির উপর দিয়ে। বাড়ির ছোটছেলে ও তার বউ বাড়িতে তেমন একটা আসে না, বছরের কোন উৎসব মুখর দিনে তাদের দেখা পাওয়া যায়। শ্রাবণের ও একই দশা সে ও খুব একটা বাড়িতে আসে না। ছুটির দিন হলে বাড়িতে আসে। তাদের নিয়ে এতটা চিন্তা না করলেও এখন বাড়ির সবচেয়ে আদরের, ও চোখের মণি স্নিগ্ধাকে যেন কেউই ছাড়তে চাইছে না। বৃদ্ধ সেকান্দার সাহেব নাতনির সামনে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছেন ঠিকই কিন্তু ভিতর টা যেন তার জ্বলে যাচ্ছে। স্ত্রী রহিমাবানুর ও একই দশা তিনি ও নাতনিকে ধরে রেখে কেদেঁ যাচ্ছেন।রহিমা বানু স্নিগ্ধার হাত ধরে শ্রাবণের হাতের মুঠোয় দিয়ে বললেন –

–” দাদু আজ তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই,
আমার এই নাতনিটা মা মরা, বাবা নেই, তিনকূলে ওর কেউ নেই। যারা আছে সবার মুখে মিছরি বুকে বিষ! কেউ ওর আপন না, কেউ ওর ভালো চায় না। আমার এই নাতনিকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে আমার কাছে রেখে মানুষ করেছি। অল্প বয়স মেয়েটার বুঝে কম।কথায় চঞ্চল হলেও তুমি তো জানো দাদু ভাই মেয়েটা মন থেকে অনেক সরল। ও যদি কোন ভুল করে আমাকে বলো। তারপর ও কিছু ওকে বলো না। তুমি যেমন আমার নাতি ও তো আমার নাতনি আমি কারোর জন‍্যই ভুল কিছু চাইবো না। তুমি শুধু মেয়েটার পাশে ছায়া হয়ে থেকো!

তোমার দাদুর সঙ্গে যখন আমার বিয়ে হয় তখন আমার বয়স ছিল মাত্র তেরো বছর! খুব ছোট ছিলাম আমি, কিছুই বুঝতাম না। তখন অনেক সময় তোমার দাদুর সঙ্গে রাগারাগি করতাম, বুঝে না বুঝে মানুষটার গায়ে ও হাত তুলতাম। কিন্তু মানুষটা নিরবে সব সয়ে যেত। এই কঠিন হৃদয়ের মানুষটাই তখন আমার কাছে একজন নরম মানুষ ছিলেন। আমার পাগলামো গুলোকে তিনি পাগলামো হিসেবেই ধরতেন। কখনোই সেগুলোকে পাত্তা দিতেন না। কতগুলো বছর পার হয়েগেল সন্তানরা বড় হলো, নাতি-নাতনিরা সবাই বড় হলো। মানুষটা আগের মতই রয়েগেল। ঠিক সেই তেরো বছরের বালিকাকে তিনি যেভাবে আগলে রেখে হাতের মুঠোয় ধরে ছিলেন। এখনো ধরে রেখেছেন, এই সংসার টাকেও তিনি আগলে রেখেছেন। আমি জানি তোমরা দুজন ও ঠিক তেমনই,
একটু ধৈর্য্য ধরো, দেখবে তুমি ও ঐ রাগি বুড়োর মত কেশর বিহীন সিংহের মত গর্জন দিতে পারবে। আর এই যে তোমার সঙ্গে যে বাঘিনী আছে না সেও তোমার ভয়ে তোমার পিছনেই লুকাবে। বলেই হেসে উঠলেন –
রহিমাবানু, চোখের কোণা বেয়ের পরা জলটাকে সবার অগোচরে মুছে হেসে স্নিগ্ধার দিকে ফিরে তাকালেন আর কাছে এনে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন –

–” তুই শুনে রাখ, আমার নাতিটাকে কম জ্বালিয়ে একটু সংসারে মন দিস। পুরো জগৎ সংসার মাথায় তুলে নাচতে থাকিস সব সময়,এত নাচানাচি করবি না। বিয়ে হয়েছে, বয়স বাড়বে, একটু সংসারি হও বুঝলি!”

–“তুমি আমাকে সব সময় সময় এসব কথা বলো, আমি কি শুধু দুষ্টুমিই করি, ভালো কিছু করি না!”

-” না ভালো কিছু করিস না তাই এই কথাটা বললাম।
শুন দুজনে একসঙ্গে থাকবি, যত বিপদ আসুক হাত ছাড়বি না। ও তোর স্বামী ও ভুল করলে শুধরে দিবে!”
স্নিগ্ধা শ্রবণের দিকে একবার তাকালো শ্রাবণ মন দিয়েই সব শুনছিল হঠাৎ দুজনের চোখ পরতে স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে ভ্রু নাচিয়ে উঠলো।

–” নানু আচ্ছা বর যদি ভুল শুধরাতে না চায় মানে। একই ভুল বারবার করে তাহলে বরকে পিটাতে পারবো না?”

–” ওরে বুড়ি আমার, বর তো বরই হয়, তার গায়ে হাত দিতে হয়? সে নাহয় রাগের মাথায় তুই ভুলে একটা দিলি। সবসময় মারবি নাকি? স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে মান অভিমান হতেই পারে। তাই বলে একজন আরেক জনের গায়ে হাত তুলবে এটা ঠিক নয়!”

–” তুমি তো দাদুকে মারতে, সেটা একটু আগে বললে।”

–” তখন ছোট ছিলাম, বুঝতে পারিনি!”

–” তাহলে আমি ও মারবো! আমি কি বড়?’

–” এই মেয়েকে নিয়ে পারলাম না! তুই ছোট হলি কবেরে মেয়ে, তুই তো বুড়ি!”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here