ষোড়শীর প্রেমের মায়ায় পর্ব -০৫

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_পাচঁ

–” এই মেয়েকে নিয়ে পারলাম না! তুই ছোট হলি কবেরে মেয়ে, তুই তো বুড়ি!”

–“আহ! গিন্নি এবার তো একটু ছাড়ো দুজনকে, এত বেশি কথা বলছো কেন! যেতে দাও বেলা বাড়ছে, কমতো বেলা হয়নি, এখন ছাড়ো এমন ভাবে ধরেছো যেন দুজন চিরদিনের জন‍্য চলে যাচ্ছে!”

–” আহ! অলক্ষুনে কথা বার্তা বলছেন কেন?”
স্নিগ্ধা আর শ্রাবণের দিকে ফিরে বলে উঠলো-

–” এবার তাহলে দুজন এক হলি, সাবধানে থাকিস তোরা! বলেই বৃদ্ধা চোখের পানি মুছে স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরলেন।

সবাইকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে বসতে গেলেই স্নিগ্ধা তার ছোট মামাকে বলল–

–” মামা আমি কোথায় বসবো?”

–” কেন? শ্রাবণের সঙ্গে!”

–” শ্রাবণের সঙ্গে মানি আমি বসবোনা! আর ওর সঙ্গে তো কখনোই না!”

–” বসতেই হবে, যা বস গিয়ে, বললেন ছোটমামি।

সামনের দুসীটে মামা-মামী, পিছনে আর আছে মাত্র দুটো সীট অগ‍ত‍্যা বাধ‍্য হয়েই স্নিগ্ধাকে বসতে হলো শ্রাবণের সঙ্গে। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে তাকালো, শ্রাবণ ঘাড় ঘুরিয়ে বাইরে চেয়ে আছে। কিন্তু তার মনে হলো শ্রাবণ এতক্ষণ তারদিকে চেয়ে ছিল। শ্রাবণ তার কেপটা দিয়ে মুখ ঢেকে বলল-

–” কোন মানুষের মুখের দিকে কেউ চেয়ে থাকলে, সেই মানুষের যে অস্বস্তি লাগে তা আপনার জানা উচিৎ!”

–” ও, আপনি মানুষ? আমি তো বনমানুষ ভেবেছিলাম!”

–” কি? আমি বনমানুষ?”

–” বনমানুষের মত লম্বা,সারাদিন কালো পোশাক পরে শোক পালন করছেন, কত বছর ধরে কার জন‍্য এই শোক পালন করছেন তা জানিনা। তবে একটা কথা শিকার করতে হয় বনমানুষের মত হাতপায়ের লোম গুলো ও আছে আপনার!”

–” আমার বনমানুষের মত লোম আছে? আমি কালো পোশাক পরে শোক পালন করি? বনমানুষটাই কিন্তু তোর স্বামী! এখন ভাবতো বনমানুষের স্ত্রী হলে তাকে কি বলে?”

——————–

সামনে থেকে দুজনের কথা শুনছিল মামা আর মামি দুজনে এবার হেসে উঠলেন। তারা ও স্নিগ্ধাকে বলতে বললেন।

–” কি হলো বল!”

———–

–” আমি বলছি শ্রাবণ, বনমানুষ যেহেতু পুরুষ লিঙ্গের তার বউ স্ত্রী লিঙ্গের, তাহলে বউ হলো -বনমানুষ থুক্কু বনমানুষী! কথাটা বলেই হাসতে লাগল ছোটমামা।

স্নিগ্ধা সবার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে, গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ‍্য দেখতে লাগল। চট্টগ্রাম থেকে কখনো তার বাইরে যাওয়া হয়নি। আজই প্রথম তাকে তার জন্মস্থান ছেড়ে বাইরে যেতে হবে। এই তো কয়েক কিলোমিটার পেরোলে ফেনী পেরোতে হবে। স্নিগ্ধা জানালা খুলে বাইরে চেয়ে আছে, খুব ভালো লাগছে তার। সাইসাই করে বাতাস বইছে, খোলা চুল গুলোকে উড়িয়ে নিচ্ছে বাতাস।

কয়েক ঘন্টা পর প্রায় দুটোর দিকে প্রাইভেট কার টিকে কুমিল্লার একটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে দাড় করিয়েছে মামা।
সবাই মিলে রেস্তোরাঁয় ঢুকেই খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু করেছে। কিন্তু স্নিগ্ধা ইচ্ছে করেই খেলো না, মামি জোর করে কত বললেন খেতে খাবার মুখে দিয়ে দিতে চাইলে সে খেলো না। পরে ওর জন‍্য আলাদা করে খাবার পার্সেল করে নিয়ে নিলেন তিনি।

শ্রাবণ গাড়িতে উঠার আগে অনেকগুলো আইসক্রিম নিয়ে নিল। গাড়িতে বসেই সে একটা আইসক্রিম খেয়ে ফেললো। তারপরে আরও দুটো ইচ্ছে করে স্নিগ্ধাকে দেখিয়ে খেয়ে ফেললো। তারপর বলল –

–” চাচ্চু কুমিল্লার নূরজাহান রেস্টুরেন্টের খাবার গুলো অনেক জোস ছিল। রসমালাই টা না খুব জোস ছিল!”
বলেই ইচ্ছে করে খাচ্ছে, আর পাশে স্নিগ্ধা বসে আছে সে বাইরে চেয়ে আছে।”

শ্রাবণের সব খাওয়ার পর স্নিগ্ধা আইসক্রিম বক্স থেকে আইসক্রিম নিল একটা আইসক্রিম নেওয়ার পর। একটা
রসমালাইয়ের একটা বক্স খুলে টপ করে এক পিস মুখে পুড়ে দিল। শ্রাবণ ভেবেছিল কিছুক্ষণ স্নিগ্ধাকে সে জ্বালাবে তারপর তাকে ও আইসক্রিম দিবে। কিন্তু তার আগেই স্নিগ্ধাই সব পন্ড করে দিল।
স্নিগ্ধা শ্রাবণ যখন ওয়াশরুমে ছিল তখন এগুলো কিনে গাড়িতে রেখেছিল। আইসক্রিম গুলোকে আইসবক্সে রেখেছিল।

সারাটাদিন দুজনের মধ‍্যে স্নাইযুদ্ধের শেষে শ্রাবণ একটা কাজ করে বসল। গভীর ঘুমে মগ্ন শ্রাবণ স্নিগ্ধার কাধে
মাথা এলিয়ে দিল। জেগে থাকলে সে এমন করতো কিনা কে জানে। ঘুমন্ত বলেই হয়তো সে ও এমন কাজ করেছে। স্নিগ্ধা সামনে তাকিয়ে দেখল মামি ও ঘুমোচ্ছে, মামা গাড়ি চালাচ্ছে আর একটু পর পর মামির মাথাটা সোজা করে দিচ্ছে। শ্রাবণের তপ্ত নিশ্বাস তার ঘাড়ে পরছে। আশেপাশে চেয়ে দেখছে সূর্যের আলো ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ হয়েগেছে। সন্ধ‍্যে বেলা বলে স্নিগ্ধার লজ্জাটা খানিক কমলো। শ্রাবণের মাথাটা সরিয়ে দিতে গিয়ে ও কেন যেন সরালো না। না থাক ঘুমাক, ঘুমন্ত বলেই তার মাফ হয়েগেল। জেগে থাকলে রক্ষা হতো না।

রাত প্রায় নয়টায় ঢাকায় এসে পৌছে গিয়েছে তারা।
স্নিগ্ধা শ্রাবণকে নিজের কাধ থেকে সরিয়ে পাশের সীটে ঠেলে বসিয়ে দিয়েই গাড়ি থেকে নেমে বলে উঠলো –

–” মামা,আমি মামির সঙ্গে উপরে যাচ্ছি! তুমি তোমার ভাতিজাকে নিয়ে আসো।” বলেই সে মামির সঙ্গে উপরে চলেগেল।

স্নিগ্ধা তার মামিকে বলে একটা আলাদা রুমের ব‍্যবস্থা করলো। তিনি ও কিছু বলেননি, দুজনই ছোট এত অপরিনত বয়সে বিয়ে হয়েছে, সামাজিক কাজ হয়েছে এটাই যথেষ্ট দুজন কিছুটা বড় হোক। নিজেদেরকে বুঝতে শিখুক তারপর নাহয় অন‍্যকিছু।

রুমের ভিতর ডুকেই স্নিগ্ধার মন ভরেগেল। বেডের পাশে
বেলকনি, বেলকনির বাইরের জগৎটা আরও সুন্দর, বেলকনির একপাশে লিলি ফুল,গোলাপি লিলি! মিষ্টি ঘ্রাণ তার নাকে বারি খাচ্ছে। এলাকাটা খুব কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা। কোন শব্দ নেই নেই গাড়ির অজাচিত হর্ণ! ঢাকার এই ডি,ও,এইচ,এস এলাকার পরিবেশ আর চট্টগ্রামের কাতালগঞ্জের অনেক তফাৎ দুটোই আবাসিক এলাকা হলেও। স্নিগ্ধার মনে হলো এই এলাকা সুন্দর হলেও এই এলাকার লোকগুলোর মধ‍্যে প্রাণ নেই! হয়তো পরিবেশের ক্ষেত্রে এবং নিরাপত্তার জন‍্য এই এলাকাটা বেশ ভালো।

স্নিগ্ধা বেলকনির বাইরের জগৎ দেখতে দেখতে হঠাৎ চমকে উঠলো। কফির কাপ হাতে শ্রাবণ রুমে ডুকে বলল –

–” কিরে বাইরের হাওয়াই খেয়ে যাবি? সেই যে রুমে ডুকলি আর বের হলি না! নে ধর এককাপ সুভাষিত চা!”
স্নিগ্ধা কিছুক্ষন শ্রাবণের দিকে চেয়ে আছে। এত দরদ মাখা লোক তো শ্রাবণ নয়!

–” কিরে চেয়ে আছিস কেন? নে ধর! শুন আমি মানুষ হিসেবে অতটাও খারাপ না বুঝলি!”
শ্রাবণের হাত থেকে কাপটা নিয়ে নিল তারপর চুমক দিয়ে বলল-

–” কে বানিয়েছে?”

–” কেন আমি!”

–” ওয়াক থু, জঘন্য! ভাই তুই দয়া করে চা আর বানাবি না!” শ্রাবণ চা টা মুখে দিয়ে দেখল না খারাপ তো সে বানায়নি। ভালোই তো হয়েছে চা টা! বুঝতে পারল স্নিগ্ধা ইচ্ছে করে কথাটা বলেছে, যেন সে রেগে যায়।
শ্রাবণ কিছু বলল না, সে স্নিগ্ধার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলেগেল।

স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে চেয়ে হাতের চা টা খেতে লাগল। ভেবেছিল শ্রাবণ রেগে যাবে কিন্তু শ্রাবণ রাগ না দেখিয়ে চলেখেল। মাথা থেকে সব ঝেড়ে সে উঠে চলেগেল রুমে।
__________________________________

অন‍্যদিকে শ্রাবণ ভাবছে এই পাগল স্বভাবের চঞ্চল আর ঝগড়ুটে মেয়েটি কিভাবে তার স্ত্রী হয়েগেল। এর থেকে দূর কিভাবে হবে? একে নিয়ে সংসার করবে কিভাবে?
নেহাৎ দাদুর কারনে সব মেনেনিয়ছে। দাদুর কথাতো বাদ এখন দাদি ও তার হাত ধরে নাতনির হাত তুলে দিল তার হাতে। কিভাবে এত বড় দায়িত্ব সে নিবে?
দাদির বলা সব কথা তার মাথায় বারবার এসে বারি দিয়ে যাচ্ছে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here