#সত্যি_তোকে_অনেক_ভালোবাসি💖💖
#Part : 4
#ইসরাত_জাহান_প্রভা
আমাকে ক্ষমা করে দাও শুভ।।(প্রবল ভাবে কান্নায় ভেঙ্গ পড়ে)শুভ! ও শুভ! আমায় বুকে জড়িয়ে নেবে না?আমার ঠোঁটে মিষ্টি পরশ এঁকে দেবে না??আমাকে তোমার বুকের বাঁ পাশে জায়গা দেবে না??আমার অসুস্থতায় আমার খেয়াল নেবে না??এই দেখো আজ ২ দিন ধরে আমি অসুস্থ।।অথচ তুমি আমার একবার ও খোঁজ নাও নি।।আমি কিন্তু ভীষন রাগ করেছি।।শুভ আমার রাগ ভাঙ্গাবে না??(কান্না যেনো থামছেই না)
{নিশান,অনু,শিলা নিজেদের শান্ত রাখতে পারছে না।।চোখ বেয়ে বেয়ে তাদেরও জল গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে সাদা টাইলসের স্বচ্ছ মেঝেতে।।}
মিরা: শুভ!বাবু আমাকে সোনাপাখি বলে ডাকবে না?আমার হাতে হাত রেখে বলবে না যে তুমি আমাকে ভালোবাসো?বলো আমাকে শুভ।।বলবে না তুমি আমাকে ভালোবাসো??ছয় তারের গিটারটা হাতে নিয়ে আমার জন্য গান রচনা করবে না??বলো শুভ আমার জন্য গান গাইবে না??(ফোঁপাতে ফোঁপাতে)শু..শুভ..আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।।আ..আ..আমাকে ছেড়ে চলে যেও না।।আমি তাহলে মরেই যাবো।।
শুভ তুমি কী শুনতে পারছো?(কান্না মিশ্রিত রাগে চিৎকার দিয়ে)কথা বলো শুভ।। please কথা বলো……।
মিরা প্রচন্ড ভাবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে।।শিলা মিরার কান্না সহ্য না করতে পেরে মিরার পাশে এসে বললো,মিরা এভাবে কাঁদিস না।।তোর শরীর এখনো ভালো হয় নি।।(মৃদু কান্নায়)
মিরা শিলাকে জড়িয়ে ধরে বললো,ও কেনো বোঝে না আমার কষ্ট হচ্ছে?আমার বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে!!বল শিলা ও কেনো কথা বলছে না?বল?(কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)
অনু আর সহ্য করতে পারছে না।।দৌড়ে এসে নিশানের বুকে মাথা গুজে দেয়।।নিশান চোখের পানি মুছে অনুকে দুহাত দিয়ে নিজের বুকে আগলে নেয়।।
মিরা শিলাকে ছেড়ে শুভর হাত ধরে বলে,শুভ এই দেখো আমি তোমার মিরা।।যাকে তুমি খুব ভালোবাসো।।শু..শু..শুভ চোখ খোলো!!(ফোঁপাতে ফোঁপাতে)
কেবিনের দরজা খুলে নাস এসে প্রবেশ করে।।নাস চিৎকার করে বলে ওঠে,এভাবে চিৎকার করছেন কেনো?বের হয়ে যান সবাই!!
শিলা মিরাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু মিরা শুভর হাত ছেড়ে যেতে চাইলো না।।একসময় অনু আর শিলা জোড় করে মিরাকে টেনে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।।মিরার কান্নায় জড়ানো চিৎকার সারা রুমে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে।।
(শুভ!এরা আমাকে তোমার কাছে থেকে নিয়ে যাচ্ছে।।আমাকে বুকে নাও শুভ।।আমাকে আগলে রাখো।।আমাকে হারিয়ে যেতে দিও না।।শুভ,শুভ)চিৎকার করছে তো করছেই।।
অনু আর শিলাকে ধাক্কা দিয়ে মিরা শুভর হাত শক্ত করে ধরে রাখলো।শিলা,অনু আর ২ টা নাস মিলে মিরার দুই বাহু ধরে মিরাকে টেনে শুভর কাছে থেকে সরাতে লাগলো।।মিরা তার সব শক্তি দিয়ে শুভর হাত ধরে রাখলো আর কান্নায় ভেঙ্গে বলতে লাগলো,শুভ !!এই দেখো এরা আমায় সরিয়ে নিচ্ছে।।তোমার বুকে জায়গা করে দাও আমি থাকতে চাই।।আগলে নাও আমায় এদের খুব ভয় করছে আমার।।শুভ!!
অবশেষে মিরার শরীর দূবল হয়ে পড়লো।।অনু আর শিলা মিরাকে সরাতে সক্ষম হলো।।নাসরা ডাক্তার সহ প্রবেশ করলো।।মিরা আবার অঙ্গান হয়ে যাওয়ার আগে বলে উঠলো,আমাকে ছেড়ে দিও না শুভ।।আমি তোমাকে অনেক ভালো..বাসি….
হঠাৎ করে শুভর মাথায় কিছু কথা এসে আটকা পড়ে।।তার মস্তিষ্ক বার বার তাকে শোনাচ্ছে,শুভ আমি তোমাকে ভালোবাসি,আমাকে ছেড়ে যেও না,তোমার বুকে আমাকে আগলে রাখো প্লিজ।।
হঠাৎ ধুপ করে কেঁপে উঠলো শুভ।
নিশান,অনু,ডাক্তারের চোখ শুভর দিকে।।Oxyzen musk এর চারপাশে সাদা ধোঁয়াটে হয়ে গেলো শুভর মুখের নিঃস্বাসে।।শুভ বলে উঠলো,,মি..মিরা আমিও তোমাকে ভালোবাসি।।
ছটফটাতে লাগলো শুভ।।ডাক্তার দ্রুত শুভকে চেকআপ করে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।।নিশান,অনু,শিলা বাহিরে অপেক্ষা করছে।।প্রায় ২০ মিনিট পর ডাক্তার বের হলো।।
নিশান: স্যার আমার ভাই?(কান্না বিজড়িত চোখে)
ডাক্তার: মিঃ শুভর ঙ্গান ফিরেছে।।কিন্তু মাথার আঘাত প্রচন্ড হওয়ায় রক্তকণিকা চলাচলে একটু সমস্যা হয়।।এখন কিছু ঔষধ আর ঘুমের ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে।।আশা করা যায় খুব দ্রুত উনি সুস্থ হয়ে যাবেন।।
অনু,নিশান আর শিলা যেনো নিজ দেহে প্রাণ ফিরে পেলো।।
অনু: ধন্যবাদ আল্লাহ।।(দু হাত দিয়ে মোনাজাত করে)
ডাক্তার: মিরা কোথায়??
শিলা: পাশের কেবিনে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।।
ডাক্তার: ওনার আতনাদেই হয়তো মহান আল্লাহ খুশি হয়ে শুভর ঙ্গান ফিরিয়ে দিয়েছেন।।
অনু: সেটা বুঝলাম।।কিন্তু মিরার আতনাদের বিষয়টা বুঝলাম না?
ডাক্তার: বিঙ্গানের ঙ্গানই সীমাবদ্ধ নয়।।কিছু প্রাকৃতিক উপায় আর সৃষ্টিকতার দয়া অনেক কিছু ঘুরিয়ে দেয়।।আমার যতটুকু মনে হচ্ছে মিরার আতনাদ সব শুভ কান দিয়ে শুনছিলো।।কিন্তু ওনার ব্রেইন সেই কথা গুলোর প্রতি সঠিক উওর দিতে পারছিলো না।।কিন্তু কিছু কথা শুভর মস্তিষ্কে গভীর ভাবে গেথে যাওয়ায় তা বারে বারে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।ফলে তার ব্রেইন তার মুখে কয়েকটা কথা পৌঁছে দেয়।।একই সাথে সে কথা বলে এবং শ্বাস ছাড়ে।।রক্তকণিকা গুলো কিছু কারনে বাঁধা পেয়ে শুভর শরীরের সব অঙ্গকে উদ্দীপনার এক স্রোতে ভাসিয়ে দেয়।।ফলে সে হয়তো ছটফটাতে থাকে।।পুরো বিষয়টা শুধু একটা ইমাজিনেশন।।
নিশান: হুম।।খুব গভীরের বিষয়।।
ডাক্তার: আচ্ছা আমি এখন চলি।।কোনো সমস্যা হলে আমি তো আছিই।।চলি তাহলে…
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর শিলা,অনু আর নিশান লম্বা এক শ্বাস ফেলে।।
….
ঘড়ির কাঁটাটা ১২ তে বাজতে চললো।।শুভর পাশে বসে ঝিমুচ্ছে নিশান।।একটা,একটা করে আঙ্গুল নড়তে থাকলো শুভর।।ধীরে ধীরে চোখ খুলেলো শুভ।।মাথার ব্যাথাটা এখনো অনেক বেশি।।আস্তে আস্তে শুভ পাশ ফেরার চেষ্টা করলো।।নিশান একটু শব্দ পেয়ে চোখ খুললো।।আনন্দে তার চোখে জল এসে গেলো।।
নিশান: ভাই তুই ঠিক আছিস?জানিস কতোটা টেনশনে ছিলাম আমরা??(শুভর হাত ধরে)
শুভ: ভা..ভাই..আমাকে মাফ করে দিস।।তোদের অনেক কষ্ট দিয়েছি।।(আস্তে আস্তে কথা বলে)
নিশান: কথা বলিস না ভাই।।আল্লাহ তোকে সুস্থ করেছে এটাই অনেক।।তুই চুপ করে শুয়ে থাক আমি ডাক্তারকে ডেকে আনছি।।
শুভ: ভাই আমার মিরা?(খুব দ্রুত)
নিশান: তোর মিরা ঠিক আছে ভাই।।তোকে নিয়ে একটু বেশি চিন্তা করে তো তাই একটু ঘুমিয়ে আছে।।
শুভ: জানিস ওর ডাক আমার কানে এতটা আতনাদ সৃষ্টি করেছে যে আমি বোধহয় আমার মিরার জন্যই চোখ খুলেছি।।(চোখের কোণে পানি জমে)
নিশান শুভর পাশে এসে বসে শুভর হাত ধরে বললো,আমি জানি ভাই।।তোর মিরা তোকে কখনো এই অবস্থাতে দেখতে পারে নি।।যতবার তোর কাছে আসতে চেয়েছে তোর অবস্থা দেখে ও নিজে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।।তোর মিরা ঘুম থেকে উঠে যখন শুনবে যে তার শুভ চোখ মেলে তাকিয়েছে না জানি কীভাবে ছুটে তোর কাছে চলে আসবে!!(আশ্চয মাধুরতায়)
শুভ: একবার ডেকে দে না আমার মিরাকে।।(নিশানের হাত আঁকড়ে ধরে)
নিশান: একটু অপেক্ষা কর ভাই।।কাল সকালে দেখবি এখন!!
শুভ: হুম।।(কিছুটা ব্যথ সুরে)
….
ডাক্তার শুভকে দেখছে।।বাহিরে অনু আর নিশান দাঁড়িয়ে আছে।।দুজনে আজ একটু হালকা হয়ে আছে।।ডাক্তার বের হয়ে বললো,মিঃ শুভকে ঔষধ দেওয়া হয়েছে।।ঔষধ গুলো সিস্টারের কাছে থেকে বুঝে নেবেন।।কনডিশন আগের থেকে অনেক ভালো।
নিশান: ওকে স্যার।
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর নিশান ঔষধ সব বুঝে নিলো।
…
ঘড়ির কাঁটা ২ টার ঘরে ছুঁই ছুঁই করছে।।নিশানের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে অনু।।এই কয়েকদিন অনেক চাপের ওপরে গেছে তারা।।নিশান অনুর মাথার চুলগুলো আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে।।মিষ্টি আলোতে এক নিষ্পাপ বাচ্চার মতো লাগছে অনুকে।।নিশান তার ঠোঁটের কোণে একটা মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে অনুর কপালে মিষ্টি একটা পরশ একে দিয়ে বেডের এক সাইডে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।।পাশের বেড থেকে হাসিমুখে শুভ নিশান আর অনুর মিষ্টি ভালোবাসাতে অনেক স্বস্তি পেলো।।আর ভাবতে লাগলো তার নিজের কল্পনার দেশে থেকে তার ডাক এসেছে।।সবুজের বুকে নীল রঙ্গের শাড়ীতে মিরাকে দেখতে লাগলো শুভ।।
মিরা: শুভ!কাছে এসো।।কী দেখছো দাঁড়িয়ে?
শুভ: এতো সুন্দর কেনো তুমি?
মিরা: তাই নাকি??
শুভ: হ্যাঁ।।অনেক।।এভাবে তোমাকে প্রতিদিন দেখলে আমি তো শেষ হয়ে যাবো!!
মিরা: থাক আর শেষ হতে হবে না।।তোমার বুকে জায়গা করে দিও আমি তোমার হৃদপিন্ড হয়ে যাবো।।(হাসি মুখে)
শুভ: তুমি তো আমার হৃদপিন্ডই।।আমার বেঁচে থাকার মূল Oxygen…
মিরা: তাহলে আমি এখনে কেনো?আমাকে বুকে নিয়ে নাও।।তোমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে আমায় জড়িয়ে নাও।। বেশি দেরী করলে কিন্তু বাঁচতে দেবো না।(মায়াবী স্বরে)
শুভ: এসো তাহলে।।আমি তো আর পারছি না শ্বাস নিতে।।
মিরা দৌড়ে গিয়ে শুভর বুকে মাথা গুজে দিলো।।শুভ পরম আবেশে মিরাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।।
মিরা: এখন শ্বাস নিতে পারছো?
শুভ: হ্যাঁ।।আমার Oxygen যে ফিরে পেয়েছি।।
মিরা: যাহ! মিথ্যুক।।(লজ্জায় মাথা গুজে)
শুভ: I Love You MIRA..
মিরা: I Love You too SHUVO…
শুভ এসব কল্পনায় ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো।।
….
ভোর সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলো মিরার….
চলবে,,,,