সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব -০৫

#সত্যি_তোকে_অনেক_ভালোবাসি💖💖
#Part : 5
#ইসরাত_জাহান_প্রভা

শুভ: তুমি তো আমার হৃদপিন্ডই।।আমার বেঁচে থাকার মূল Oxygen…

মিরা: তাহলে আমি এখনে কেনো?আমাকে বুকে নিয়ে নাও।।বেশি দেরী করলে কিন্তু বাঁচতে দেবো না।(মায়াবী স্বরে)

শুভ: এসো তাহলে।।আমি তো আর পারছি না শ্বাস নিতে।।

মিরা দৌড়ে গিয়ে শুভর বুকে মাথা গুজে দিলো।।
শুভ পরম আবেশে মিরাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।।

মিরা: এখন শ্বাস নিতে পারছো?

শুভ: হ্যাঁ।।আমার Oxygen যে ফিরে পেয়েছি।।
মিরা: যাহ! মিথ্যুক।।(লজ্জায় মাথা গুজে)

শুভ: I Love You MIRA..

মিরা: I Love You too SHUVO…

শুভ এসব কল্পনায় ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো।।
….
ভোর সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলো মিরার…আজও নিজেকে একটা আবদ্ধ শান্ত ঘরে আবিষ্কার করলো মিরা।।আজ তার দেহে স্যালাইন প্রবেশ করছে না।।হুড়মুড় করে উঠে পড়লো মিরা।।পাশ ফিরে শিলাকে ডাকতে লাগলো।।

মিরা: শিলা?এই শিলা?

শিলা ঘুম জড়ানো চোখে উঠে বসে বললো,মিরা তুই ঠিক আছিস তো?

মিরা: আমি একদম ঠিক আছি।।আমার শুভ??(ছটফট করতে করতে)

শিলা: একটু শান্ত হয়ে বস।।আমি সব কিছু বলছি।।

মিরা: নাহ।।আমি শুভকে দেখবো।।চল।।

শিলা: আবার গিয়ে পাগলামো করবি না তো?

মিরা: যতক্ষন ও উঠবে না,চোখ খুলবে না আমি পাগলামো থামাবো না।।তুই কী যাবি?

শিলা হাসতে হাসতে বললো,আরে পাগলি তোর শুভ কালকেই চোখ খুলেছে।।

মিরা: কীহ!!(ছলছল চোখে তাকিয়ে)

শিলা: আবার কাঁদিস না প্লিজ।।

বলতে না বলতেই মিরা কান্না করতে করতে শিলাকে জড়িয়ে ধরলো।।

শিলা: জড়িয়ে ধরলি ক্যান?

মিরা: এত বড় একটা খবর দেওয়ার জন্য(কান্না সুরে)

শিলা: চোখ টা মুছে শুভকে গিয়ে জড়িয়ে ধর গিয়ে।।

মিরা চোখ মুছে দৌড়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে শুভর কেবিনে প্রবেশ করলো।।শান্ত হয়ে শুভ শুয়ে আছে।।পাশের বেডে নিশানের বুকে ঘুমিয়ে আছে অনু।।নিশান অনুকে পরম আগলে রেখে ঘুমাচ্ছে।।মিরা গিয়ে শুভর পাশে বসে শুভর হাত ধরে কান্না করতে লাগলো।।শুভ আস্তে করে চোখ মেলে মিরার দিকে তাকালো।।

শুভ: মিরা!!কেমন আছো?(মৃদু স্বরে)

মিরা: কোনো কথা বলবি না তুই।।তুই এত খারাপ কেনো?কেনো তুই আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিস??আমি তো তোর সাথে মিশেই গিয়েছি তবুও তুই আমাকে ছেড়ে যেতে চাইছিলি??তুই খুব খারাপ।।খুব খুব খুব খারাপ।।(অভিমানী কান্না সুরে)

শুভ: এভাবে কেঁদো না মিরা।।এত রাগ করেছো আমার উপরে??(মৃদু স্বরে)

মিরা:…..(কান্নায়)

শুভ: কথা বলবে না?(হালকা স্বরে)

মিরা: ……(কান্নায়)

শুভ: আচ্ছা এই যাত্রায় তো যেতে পারলাম না পরের যাত্রায় চেষ্টা করবো চলে যাওয়ার(মুখ ঘুরিয়ে)

মিরা: তোর এত বড় সাহস?তুই আবার এইকথা বলিস?তোকে আমি খুন করে ফেলবো।(চিৎকার করে)

মিরার চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেলো অনু আর নিশানের।।এতো জোড়ে চিৎকারে শুভ থ হয়ে গেছে।।ডাক্তার,নাস আর শিলা ছুটে কেবিনে প্রবেশ করলো।।মিরা হাঁটু গেড়ে কাঁদতে লাগলো।।

ডাক্তার: এত চিৎকার করলে তো পেসেন্টের সমস্যা হবে।।প্লিজ কান্নাকাটি আর চিৎকার বন্ধ করুন মিরা।।

শিলা আর অনু এসে মিরাকে সামলে নেয়।।ডক্টর শুভকে চেকআপ করে মিরাকে চেক আপ করে চলে যায়।।মিরা চুপ করে বসে আছে।।শুভ চুপ করে শুয়ে আছে।।নিশান,অনু আর শিলা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।।
……
প্রায় ১৫ দিন পর শুভ আজ তার বাসায় ফিরে এসেছে।।কিছুদিন আগেই তার মা বাবা সবকিছু জেনেছে।।নিশানকে এর জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে।।কিন্তু নিশান ঠিকই সব সামলে নিয়েছে।।বিছানায় শুয়ে টিভি দেখতে লাগলো শুভ।।মিরা শুভর জন্য গরম দুধ নিয়ে হাজির হলো।।

মিরা:বাবু দুধটা খেয়ে নাও তো।।

শুভ: আমার একদম দুধ ভালো লাগে না।।একটা কোক দাও তো আমায়।।(টিভিতে মগ্ন হয়ে)

মিরা: কিহ!!এখনি এই দুধ খেয়ে নিবে তুমি।।

মিরা শুভর সামনে এসে গ্লাসটা শুভর মুখের সামনে ধরলো।।শুভ কোনো উপায় না পেয়ে ঢকঢক করে সব দুধ খেয়ে ফেললো।।শিলা আর অনু রান্না করছে।।নিশান অফিসের কাজ করছে ল্যাপটপে।।মিরা এসে শিলা আর অনুর সাহায্য করতে লাগলো।।হঠাৎ করে দরজার বেল বেজে উঠলো।।মিরা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।।মিরা দেখতে পেলো একদম পরীর মতো একটা মেয়ে কয়েকটা লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।তার পাশে সে দেখতে পেলো শুভর ছোট বোন পায়েল কে।।মিরাকে পায়েল খুব ভালোভাবেই চেনে।।

পায়েল: আরে আপু কেমন আছো?

মিরা:এইতো।তুমি?

পায়েল: ভাইয়ার সাথে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো আর আমাদের জানালেও না?

মিরা পায়েল আর মেয়েটাকে ভেতরে এনে বলতে লাগলো,সরি বোন।।মাফ করে দিও।।

পায়েল মিরার হাত ধরে বললো,যাক তুমি ছিলে বলেই আজ ভাইয়া প্রায় সুস্থ আছে।।তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আপু।।আসলে আমিও তো দেশের বাহিরে ছিলাম আর মা বাবাও তো দেশের বাহিরে।।তুমি যদি না থাকতে…(কাঁদতে লাগলো পায়েল)

মিরা পায়েলকে আকড়ে ধরে বললো,সব ঠিক আছে বোন।।একদম কাঁদবে না।।

পায়েল চোখ মুছে বললো,মালিহা কোথায় গেলো?

মিরা: কে মালিহা?

পায়েল: যে মেয়েটা আমার সাথে এসেছে।।

মিরা: কে ও??

পায়েল: আমার মামাতো বোন।।চলো তো ভাইয়া কে দেখে আসি।।

মিরা: চলো।।

নিশান: কেমন আছিস পায়েল?(পায়েলকে দেখে)

পায়েল: যেভাবে রেখেছিস আমাদের!!(আশ্চয হয়ে)

নিশান: কিছু করার ছিলো না রে!!

পায়েল: ভাই এতো চিন্তা করিস আমাদের জন্য?

নিশান: করবো না??তোরাই তো আমার সব।।ছোটবেলা থেকে তো তোরাই আমার ভাই,বোন,মা,বাবা সব।।

পায়েল: হুম।।চল ভাইয়াকে দেখে আসি।।

নিশান,পায়েল আর মিরা শুভর রুমে প্রবেশ করেই অবাক হয়ে গেলো।।তারা দেখলো মালিহা শুভকে কিছু খাবার খাওয়ায় দিচ্ছে।।মিরা তো কিছুই সহ্য করতে পারছে না।।

পায়েল: আপু তুই কখন এলি এখানে?(মালিহার দিকে তাকিয়ে)

মালিহা: এইতো তোরা যখন কথা বলছিলি তখন।।

শুভ: কেমন আছিস বোইনা?(পায়েলের দিকে তাকিয়ে)

পায়েল: তুই কেমন আছিস ভাই?(শুভর পাশে বসে)

শুভ: এইতো আছি রে।।মিরা,নিশান,অনু আর শিলা আছে তো।।আমি ঠিকই আছি এখন।।

পায়েল: তাই তো আমাদের ভুলে গেছিস তাই না?(একটু অভিমানে)

শুভ পায়েলের গালটা টেনে বললো,কখনই না বোইনা।।

পায়েল: থাক আর নাটক দেখাতে হবে না।।

মালিহা: আর একটু খেলেই শেষ শুভ।।হা করো।।(শুভর মুখের সামনে ভাতের দলা দেখিয়ে)

শুভ হা করে খেতে লাগলো।।মিরা বুক চিড়ে যেনো তীর বিঁধতে লাগলো।।

মিরা: (কে এই মেয়ে?কেনো আমার শুভর পেছনে লেগে আছে??শুভ কী আমাকে ভুলে যাবে??আমি কী করবো??)

মালিহা: নিশান ভাইয়া নিচে ওরা কারা রান্না করছে?

নিশান: অনু আর শিলা।।

মালিহা: ওরা কারা??

পায়েল: Wait আপু আমি বলছি।।অনু আর শিলা আপু হলো মিরা আপুর রুমমেট।।আর Specially অনু আপু হচ্ছে আমাদের নিশান ভাইয়ার Girlfriend..

মালিহা:তাই!!ভাইয়া ট্রিট কবে দিবা?

নিশান:তোরা পারিস ও বটে।

শুভ: আমাকেও এখনো ট্রিট দেয় নি ও।।

নিশান: শুভ তুইও শুরু করলি?মিরা তুমি কিছু বলো!!

মিরা: ঠিকই তো বলেছে।।অনু ও তো আমাকে ট্রিট দেয় নি।।

নিশান: আচ্ছা ঠিক আছে আজ রাতে আমি সকলকে ট্রিট দিবো।।হ্যাপি সকলে??

পায়েল,মিরা,মালিহা আর শুভ একসাথে মাথা নাড়ালো।।

নিশান হাসতে হাসতে চলে গেলো।।শুভ আর মালিহা খুনসুটি গল্প করতে লাগলো।।পায়েল বের হতে যাবে তখনি মিরা তাকে টেনে বেরিয়ে গেলো।।

মিরা: আচ্ছা ঐ মালিহা ওভাবে শুভর সাথে আষ্টে পিষ্ঠে আছে কেনো?

পায়েল: আপু ওরা সবসময় ওভাবেই ছিলো এখনো আছে।।

মিরা: মানে?

পায়েল: মানে ছোট থেকেই ওদের ভাব খুব।।আর মালিহা আপু তো ভাইয়াকে খুব ভালোবাসে।।

মিরার মাথায় যেনো বাজ ভেঙ্গে পড়লো।।

মিরা: কী বলছো এইসব?আমার তো দুনিয়া ঘুরে যাচ্ছে।।

পায়েল: আপু শান্ত হও একটু।।ভাইয়া মালিহা আপুকে শুধু একটা ভালো বন্ধুর চোখে দেখে এর বেশি না।।

মিরা: সত্যি??

পায়েল: একদম সত্যি আপু।।আর ভাইয়া তো তোমাকে অনেক ভালোবাসে।।আপু আমি বুঝতেছি যে তোমার ওকে সহ্য হচ্ছে না।।কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো আব্বু আম্মু আসলেই ও চলে যাবে।।

মিরা: হুম।।(মৃদু স্বরে)

…..
বিকালবেলা ছাদে একা একা বসে আছে মিরা।মালিহাকে সহ্যই করতে পারছে না মিরা।।মালিহার জন্য শুভ কাছে যেতে পারছে না মিরা।।খুব কষ্ট হচ্ছে তার।।শুভ সারা বাড়ি খুঁজে মিরাকে না পেয়ে ছাদে এসে মিরাকে দেখতে পায়।।

শুভ: মন খারাপ?(মিরার পাশে বসে)

মিরা: নাহ!(ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে)

শুভ: একা একা বসে আছো যে?আমাকে ডাকলেও তো পারতে।।

মিরা: আপনার কী আমার জন্য সময় আছে?(অভিমানী স্বরে)

শুভ মিরার হাত ধরে বললো,রাগ করেছো সোনা??

মিরা উঠে ধপ করে শুভর কোলে উঠে শুভর বুকে মাথা গুঁজে দেয়।।শুভ বুকে ব্যাথা পেলেও মিরাকে ভালোবাসায় জড়িয়ে নেয়।।অনেক দিন পর মিরা শুভর বুকে শান্তি খুঁজে পেলো।।

মিরা: আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি শুভ।।(মায়াবী স্বরে)

শুভ: আমিও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি মিরা।।(দু হাত দিয়ে মিরাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে)

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here