সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব -০৩

#সত্যি_তোকে_অনেক_ভালোবাসি💖💖
#Part: 3
#ইসরাত_জাহান_প্রভা

নাস অনু আর নিশানকে একটু বাহিরে যেতে বললো।।অনু আর নিশান বাহিরে দাড়িয়ে ডাক্তারের অপেক্ষা করতে লাগলো।।

একটু পর ডাক্তার বেরিয়ে এলো।।

ডাক্তার: Patient এর ঙ্গান এখনো ফেরে নি।।সম্ভাবনা খুব কম।।তবুও প্রাথনা করতে থাকুন।।তবে এমন অবস্থায় ওনার ব্রেন ওনাকে বাঁচার আগ্রহ দিচ্ছে।।

অনু: মানে?

ডাক্তার: এমন অনেক Patient আছে যারা Serious আত্নহত্যার পরেও বেঁচে যায়।।কারন তার ব্রেইন তাকে বাঁচার শক্তি যোগায়।।মিঃ শুভর ও ঠিক তাই।।ওনার মনে কিছু একটা আছে যেটা উনি প্রকাশ করতে চান। হয়তো সেটা তার খুব কাছের প্রিয় মানুষকে।।তাই তার ব্রেইন তাকে একটা বাঁচার আগ্রহ দিচ্ছে।।এটা সম্পূন সৃষ্টিকতার কৃপা।।মাঝে মাঝে আমরাও অবাক হয়ে যাই এমন ঘটনা দেখে।।তাই বলছি মহান আল্লাহকে ডাকুন INSHALLAH সব ঠিক হয়ে যাবে।।

নিশান: জ্বি।।ধন্যবাদ Doctor..

ডাক্তার: হুম।।আচ্ছা আমি চলি।।

ডাক্তার চলে যাওয়ার পর হাঁটু গেড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো নিশান।।অনু নিশানের সামনে গিয়ে নিশান কে বুকে জড়িয়ে নেয়।।নিশান অনুর বুকের মাঝে শান্তি খুঁজার চেষ্টা করতে থাকে।।

নিশান: আমি এখন কী করবো অনু?(কাঁদতে কাঁদতে)

অনু: বাবু প্লিজ কেঁদো না।।শুভর ব্রেইন তো ওকে বেঁচে থাকার শক্তি দিচ্ছে।।নিশ্চই সব ঠিক হয়ে যাবে।।তুমি এভাবে ভেঙ্গে পড়ো না।।(নিশানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

মিরার কেবিন থেকে দৌড়ে শিলা বেরিয়ে নিশান আর অনুর কাছে এলো।।

শিলা: অ..অনু..মিরার অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে।।(ভয়াত কন্ঠে)

অনু নিশান কে ছেড়ে দিয়ে বললো,কী বলছিস এই সব?(খুব ভয়ে)

নিশান: চলো তো।।(চোখ মুছতে মুছতে)

নিশান,শিলা আর অনু মিরার কেবিনে গিয়ে দেখে কয়েকজন নাস মিরাকে সামলানোর চেষ্টা করছে কিন্তু মিরা ছটফটাতে শুরু করেছে।।নিশান দ্রুত ডাক্তার কে ডেকে আনে।।ডাক্তার একটা ঘুমের ঔষধ মিরার হাতে পুশ করে দিলো।।

অনু: কী হয়েছে ওর Doctor?

ডাক্তার: ওনার শরীর প্রচন্ড দূবল হয়ে গিয়েছে।।হয়তো বা কাউকে হারানোর ভয়ে উনি ভীত হয়ে আছেন।।তাই তার কাছে যাওয়ার জন্য তিনি ছটফট করছেন।।কিন্তু চিন্তা করবেন না ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে।।কাল বা তার পরের দিন তিনি পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবেন INSHALLAH..

শিলা: ধন্যবাদ স্যার।।

ডাক্তার: আচ্ছা আমি তাহলে আসি।।আর ওনার খেয়াল রাখবেন।।

অনু: অবশ্যই স্যার।।
….
এশার আযান দিচ্ছে।।গম্ভীর হয়ে শুভর পাশে বসে আছে নিশান।।কিছুই চিন্তা করতে পারছে না সে।।

নিশান: ভাই একবার চোখ টা খোল।।আমি জানি তুই কেনো মিরার সাথে এই কাজ করেছিস।।কিন্তু তাই বলে তুই তোর মিরাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার ফন্দি আঁচছিস?ভাই তোর মনে আছে আমার মা বাবা যখন ACCIDENT এ মারা যায় তখন আমার পাশে শুধু তুই ছিলি।।তোর বাসায় নিয়ে গিয়ে আন্টি আর আঙ্কেলকে বাবা,মা বলার অধিকার দিয়েছিলি।।আন্টি আর আঙ্কেল আমাকে হাসি মুখে মেনে নিয়েছিলো(শুভর হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে)ভাই তুই একবার কথা বল।।তুই না আমার ভাই।।তুই না আমায় বলেছিলি তুই থাকতে কেউ আমায় একা করে চলে যেতে পারবে না।।আজ তুই কেনো সেই না ফেরার পথে পাড়ি দিচ্ছিস??আমাকে কী তোর একটুও মনে পড়ছে না??কথা বল শুভ!!প্লিজ কথা বল।।(হাঁটু গেড়ে শুভর হাত ধরে কান্না করতে করতে)

অনু এসে নিশানের এমন অবস্থা থেকে চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলো না।।নিশানের পাশে গিয়ে বসে পড়লো অনু।।

নিশানের মাথায় হাত রাখতেই নিশান অনুকে জড়িয়ে ধরলো।।অনু পরম আবেগে নিশানকে শক্ত করে নিজের বুকে মিশিয়ে নিলো।।

অনু: নিশান তোমার কান্না দেখলে আমারও কান্না এসে যায়।।এত ভালোবাসো তুমি শুভকে?(কাঁদতে কাঁদতে)

নিশান: ও কেনো বুঝে না যে ও এভাবে থাকলে শুধু আমার না ওর সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার কষ্ট হয়।।মিরার অবস্থা ও ভালো না।।এখন কী করবো আমি অনু??(কান্না জড়ানো কন্ঠে)

অনু: একদম টেনশন করিও না তুমি নিশান।।দেখবে সব একদিন ঠিক হয়ে যাবে।।আমি তো তোমার পাশেই আছি নিশান।।(নিশানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)
….
রাতের খাবার শেষে শিলা চুপ করে মিরার দিকে তাকিয়ে নিরবে দু ফোটা অশ্রু ফেলছে।।

নিশান অনুর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।।অনু শান্ত হয়ে নিশানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকা শুভর দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু ভাবছে।।একসময় ভাবতে ভাবতেই নিশানের বুকে ঘুমিয়ে পড়ে অনু।।

….
খুব সকালে মিরার ঘুম ভেঙ্গে যায়।।এখনো স্যালাইন চলছে।।মিরার মনে স্বস্তি জাগছে এই ভেবে যে আর কিছুক্ষন পরেই স্যালাইন টা শেষ হবে।।তখন সে তার শুভকে দেখতে পারবে।।

মিরা:(শুভ তোমার কিচ্ছু হবে না।।আমি তোমার কিচ্ছু হতে দিবো না।।তুমি দেখো ঠিক আমি তোমাকে আমার করে নিবো।।আবার আমরা একসাথে গল্প করতে পারবো,দূরের আকাশে তারা দেখতে পারবো,হালকা নিয়ন আলোয় একসাথে হাঁটতে পারবো আর সবচেয়ে বড় কথা তোমার বুকের বাম পাশে মাথা রেখে কান পেতে তোমার হৃদস্পন্দন শুনে ঘুমিয়ে যেতে পারবো।।আমি আসছি শুভ।।আমায় প্লিজ ছেড়ে যেও না।।প্লিজ)

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মিরার চোখে জল এসে গেলো।।

শিলা: শুভর কথা ভাবছিস?(মিরার পাশে এসে)
মিরা মাথা নাড়লো।।

শিলা মিরার চোখের কোণে জমে থাকা জল গুলো মুছে দিয়ে বললো,এখন তো তুই সুস্থ হয়েছিস।।এখন তোর দায়িত্ব শুভকে সুস্থ করে তোলা।।পারবি না?

মিরা: আমাকে পারতেই হবে শিলা।।আমি খুব ভালোবাসি শুভকে।।আমি জানি আমি যদি ডাকি ও ঠিক সাড়া দেবে।।(কান্না মেশানো গলায়)

শিলা: হুম।।(মৃদু কন্ঠে)
…..
দুপুরের দিকে মিরাকে ডাক্তার দেখে বললো,হুম আপনি এখন সুস্থ।।কিন্তু বেশি ভেঙ্গে পড়বেন না।।তাহলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বেন।।

মিরা: স্যার আমি কী শুভকে দেখতে যেতে পারি এখন?(কাতর কন্ঠে)

ডাক্তার: হুম পারেন।।কিন্তু ওনার অবস্থার কোনো উন্নতি হয় নি।।

মিরা: আমি ডাকলে ঠিকই সাড়া দেবে ও।।এটা আমার বিশ্বাস।।(ছলছল চোখে)

ডাক্তার: আশা করি তাই যেনো হয়।।আচ্ছা আমি তাহলে আসি।।

ডাক্তার চলে যাওয়ার পর শিলা আর অনু মিরাকে ধরে ধরে শুভর কাছে আনলো।।নিশান মিরাকে শুভর পাশে বসিয়ে দিলো।।মিরা শুভকে দেখতে লাগলো।।মাথার চারপাশে সাদা ব্যান্ডেজ।।মুখের ওপর Oxyzen musk..হাত,পা শীতল হয়ে আছে।।মিরা দেখলো শুভর পাশে কিছু বড় বড় যন্ত্র কী সব রেখার মতো টেনে যাচ্ছে।।মিরার ঐ সব অনেক ভয় লাগে।।মিরা শুভর হাতটা ধরে অঝোরে কান্না করতে লাগলো।।অনু আর শিলা মিরাকে সামলাইতে যেতে চাইছে নিশান বাঁধা দিয়ে বলে,কী হয় দেখে যাও তোমরা।।

মিরা: শুভ!এই শুভ!এই দেখো আমি তোমার মিরা।।এই দেখো শুভ আমি তোমার পাশে বসে আছি।।SORRY সোনা আজ আমার জন্য তোমার এই অবস্থা।।বিশ্বাস করো আমি কখনো এমনটা করতে চাইনি।।আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।।তোমার প্রতি রাগ হচ্ছিল খুব তাই ফোনটা বন্ধ করেছিলাম।।আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি শুভ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও শুভ।।(প্রবল ভাবে কান্নায় ভেঙ্গ পড়ে)শুভ! ও শুভ! আমায় বুকে জড়িয়ে নেবে না?আমার ঠোঁটে মিষ্টি পরশ এঁকে দেবে না??আমাকে তোমার বুকের বাঁ পাশে জায়গা দেবে না??আমার অসুস্থতায় আমার খেয়াল নেবে না??এই দেখো আজ ২ দিন ধরে আমি অসুস্থ।।অথচ তুমি আমার একবার ও খোঁজ নাও নি।।আমি কিন্তু ভীষন রাগ করেছি।।শুভ আমার রাগ ভাঙ্গাবে না??(কান্না যেনো থামছেই না)

{নিশান,অনু,শিলা নিজেদের শান্ত রাখতে পারছে না।।চোখ বেয়ে বেয়ে তাদেরও জল গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে সাদা টাইলসের স্বচ্ছ মেঝেতে।।}

মিরা: শুভ!বাবু আমাকে সোনাপাখি বলে ডাকবে না?আমার হাতে হাত রেখে বলবে না যে তুমি আমাকে ভালোবাসো?বলো আমাকে শুভ।।বলবে না তুমি আমাকে ভালোবাসো??ছয় তারের গিটারটা হাতে নিয়ে আমার জন্য গান রচনা করবে না??বলো শুভ আমার জন্য গান গাইবে না??(ফোঁপাতে ফোঁপাতে)

শু..শুভ..আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।।আ..আ..আমাকে ছেড়ে চলে যেও না।।আমি তাহলে মরেই যাবো।।শুভ তুমি কী শুনতে পারছো?(কান্না মিশ্রিত রাগে চিৎকার দিয়ে)কথা বলো শুভ।। please কথা বলো……।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here