সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসি পর্ব -০২

#সত্যি_তোকে_অনেক_ভালোবাসি💖💖
#Part: 2
#ইসরাত_জাহান_প্রভা

মিরা: আজ কাল এমনি তো হচ্ছে।।প্রয়োজন শেষ তো সব শেষ।।(কান্না জড়িত কন্ঠে)

অনু: শুভ মোটেও ঐ রকম না।।আমার বিশ্বাস।।

শিলা: বাদ দে তো।।আচ্ছা শুভ আর ফোন দেয় নি?

মিরা: ফোন অফ করে রাখছি।।

শিলা: নিশ্চই টেনশনে আছে।।ফোন দে ওকে।।আমি কথা বলবো।

মিরা:পারবো না।আমি ওর সাথে আর থাকবো না।

শিলা: কী বলছিস এই সব?

মিরা: যা বলছি ঠিক বলছি।।

অনু: কিন্তু…

হঠাৎ করে অনুর ফোন বেজে উঠলো।।ফোনটি করেছে অনুর বয়ফ্রেন্ড নিশান আর শুভর খুব কাছের বন্ধু।।অনু ফোনটা ধরলো।।

নিশান: হ্যাঁলো অনু।।শুভ ACCIDENT করেছে(কান্না করতে করতে)

অনু: কীহ! শুভ ACCIDENT করেছে?(চমকে উঠে)…..

নিশান: হ্যাঁ অনু।।মিরার ফোন বন্ধ পেয়ে শুভ আমাকে ফোন দেয় যে আমি যাতে তোমাকে ফোন করে মিরার খোঁজ নিয়ে ওকে দিতে পারি।।কিন্তু ফোনটা রেখে ২ মিনিটের মাঝে এক লোক ফোন দিয়ে বললো যে শুভ ACCIDENT করেছে।।(প্রচন্ড কেঁদে কেঁদে)

অনু: বাবু একটু শান্ত হও তুমি।।কোন হাসপাতালে তুমি আছো?

নিশান: আইডিয়াল HOSPITAL এ।।

অনু ফোনটা রেখে দিতেই প্রচন্ড চিৎকার করে অঙ্গান হয়ে গেলো মিরা।।একটু পর অনু মিরার মুখে পানির ফোঁটা দিতেই জেগে কান্না শুরু করে দেয় মিরা।।

মিরা: আমার জন্যই আজ ওর এমন অবস্থা।।আজ ওর কিছু হলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো?(প্রচন্ড কেঁদে কেঁদে)

শিলা: কিচ্ছু হবে না।। নিশ্চই আল্লাহ সব ঠিক করে দেবেন।।এভাবে কাঁদিস না প্লিজ।।(মিরাকে আগলে রেখে)

অনু: চল আগে Hospital এ যাই।।

শিলা: ফ্রেশ হয়ে নে মিরা।।

মিরা: এভাবেই যাবো আমি।।(চোখ মুছতে মুছতে)

অনু: চল তাহলে।।
….
কিছুক্ষন পরেই Hospital a পৌঁছে গেলো তারা।।প্রায় পাগলের মতো শুভ শুভ করে ছুটে যেতে লাগলো মিরা।।নিশান মিরার সামনে গিয়ে মিরাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো।।কিন্তু মিরা কিছুতেই বুঝতে চাইছে না।।সে তার শুভকে দেখবেই।।শিলা আর অনু এসে মিরাকে কিছুটা শান্ত করলো।।

অনু: নিশান এখন কী অবস্থা শুভর?কোথায় শুভ?

নিশান: অপারেশন থিয়েটারে।।(ভয়াত কন্ঠে)

অনু: কীহ!!(চমকে গিয়ে)

মিরা নিশানের কথা শুনে প্রচন্ড কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।।শিলা মিরাকে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো।।

নিশান: অনেক রক্তপাত হয়েছে আর সারা শরীরে অনেক কাঁচ গেথে গেছে(থেমে থেমে বলতে লাগলো)

শিলা,মিরা ও অনুর গায়ে যেনো কাটা বিঁধতে লাগলো নিশানের কথা শুনে।।মিরা কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না।।

অনু: ডাক্তার কী বলেছে?(প্রায় কান্না জড়ানো কন্ঠে)

নিশান: এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।।(ভারী কন্ঠে)
…..
প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে গেলো।।নিশান,অনু,মিরা আর শিলা ওটি থেকে ডাক্তারের বেরুনোর অপেক্ষা করছে।।মিরার কন্ঠ বসে গেছে।।একটু পর পর সে কান্না করছে।।শিলা মিরাকে শক্ত করে ধরে আছে।।অনুর চোখ গিয়ে পড়েছে ওটির দিকে।।নিশান মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে আছে।।
হঠাৎ ওটির দরজা খুলে গেলো।।ক্লান্ত হয়ে বেরিয়ে এলো DOCTOR..হুড়মুর করে অনু গিয়ে ডাক্তারের সামনে দাঁড়ালো।।

অনু: স্যার কেমন আছে শুভ?(জোড়হীন গলায়)
নিশান,মিরা ও শিলা উঠে গিয়ে ডাক্তারের সামনে গেলো।।

ডাক্তার: Patient এর অবস্থা ভালো নয়।।আমরা রক্তক্ষরন থামাইতে পেরেছি এবং শরীরের গেঁথে যাওয়া সব কাঁচ বের করেছি।।কিন্তু Patient এর মধ্যে কোনো নরমাল বিষয় দেখছি না।।সে কোমাতে চলে গিয়েছে।
এখন শুধু আল্লাহকে ডাকুন।।তিনি যা করবেন ভালোই করবেন।।

ডাক্তার যাওয়ার পর মিরা আবার অঙ্গান হয়ে যায়।।কিছু নাস এসে মিরাকে কেবিনে নিয়ে যায়।।শিলা মিরার পাশে বসে আছে।।নিশান আর অনু বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।।

অনু: নিশান!!(কাতর কন্ঠে)

নিশান: বলো।।(ভারী কন্ঠে)

অনু: শুভর মা বাবা জানে??

নিশান: না।।আঙ্কেল,আন্টি দেশের বাইরে গেছেন ব্যাবসার কাজে।।আসতে ১ মাসের মতো লাগবে।।

অনু: তুমি জানাবে না তাদেরকে?(আশ্চয কন্ঠে)

নিশান: আঙ্কেল,আন্টি শুভকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে।।এখন যদি জানাই তাহলে সব ফেলে তারা ছুটে আসবে অনু।।

অনু: তাই বলে তুমি তাদের জানাবে না??তাদের কাজটাই তোমার কাছে বেশি মনে হচ্ছে?(আশ্চয কন্ঠে)

নিশান: আমি ওভাবে বলি নি অনু।।শুভ আমার নিজের ভাইয়ের চেয়েও বেশি কিছু।ওর মা বাবা আর ও সুখে দুঃখে সব সময় আমার পাশে থেকেছে।আমি এইমূহুতে তাদের কষ্ট বা টেনশন দিতে চাচ্ছি না।(করুন কন্ঠে)

অনু:হুম।।
…..
খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলো মিরার।।একটা শান্ত কেবিনে শুয়ে আছে সে।।পাশের বেডে অনু আর শিলা জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে।।মাথা তার হালকা ব্যাথা করছে।।দেখতে পেলো তার শরীরে স্যালাইন প্রবেশ করছে।।কিন্তু তার মন মানছে না।।সে তার শুভকে দেখতে চায়।।মিরা আস্তে আস্তে উঠে পড়লো।।স্যালাইনটা খুলতে যাবে ঠিক তখনি নিশান রুমে প্রবেশ করে চিৎকার দিয়ে উঠলো।।মিরার হাত আটকে গেলো।।শিলা আর অনু ধুপ করে উঠে পড়লো।।

অনু: কী হয়েছে নিশান?

নিশান: কেনো স্যালাইনটা খুলতে চাইছিলে মিরা?(মিরার দিকে তাকিয়ে)

শিলা: কী বলছো নিশান?(মিরার কাছে এসে)

নিশান: আমি না এলে মিরা এখনি স্যালাইনটা খুলে ফেলতো।।

মিরা: আ..আ..আমিতো শু…

নিশান: চুপ করো একদম(প্রচন্ড ধমক দিয়ে)

মিরা চমকে উঠলো নিশানের ধমকে।।

অনু: মিরা তুই নিজেও অসুস্থ।।এখন যদি এসব পাগলামি করিস তাহলে তো আরও অসুস্থ হয়ে পড়বি।।

মিরা: আমার শুভকে আমি একটু দেখবো(কাঁদতে কাঁদতে)

নিশান: মিরা তুমি নিজে একটু সুস্থ হও তখন শুভকে দেখিও।।

মিরা কাঁদতেই লাগলো।।

অনু:নিশান এখন কেমন অবস্থা শুভর?

নিশান: এখনো ঙ্গান ফিরেনি শুভর।।(মৃদু কন্ঠে)

মিরা: স..সব আমার জন্যে।।আমার শুভর কিছু হলে আমিও নিজেকে শে..শেষ করে দিবো।।(প্রচন্ড কান্না করতে করতে)

অনু মিরার পাশে এসে মিরাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,মিরা প্লিজ কাঁদিস না।।তোর কান্না আমার সহ্য হয় না রে।।আর এভাবে এসব কথা বলিস না প্লিজ।।তুই এভাবে কাঁদলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বি।।শুভর পাশে তোকে প্রয়োজন।।তুই তো শুভর কাছে যেতে চাস।।তাড়াতাড়ি সুস্থ হলেই তুই তোর শুভকে দেখতে পারবি।।প্লিজ কাঁদিস না।।

মিরা ধীরে ধীরে কান্না থামায় দিলো।।একটু পর মিরা ঘুমিয়ে পড়লো।।
….
শুভর পাশে বসে আছে নিশান ও অনু।।নিষ্পাপ শিশুর মতো শুয়ে আছে শুভ।।মুখে Oxyzen MUSK..কোনো সাড়া শব্দ নেই তার।।
একটু পর ডাক্তার রুমে প্রবেশ করলো।।নাস অনু আর নিশানকে একটু বাহিরে যেতে বললো।।অনু আর নিশান বাহিরে দাড়িয়ে ডাক্তারের অপেক্ষা করতে লাগলো।।

একটু পর ডাক্তার বেরিয়ে এলো।।

ডাক্তার: Patient এর ঙ্গান এখনো ফেরে নি।।সম্ভাবনা খুব কম।।তবুও প্রাথনা করতে থাকুন।।তবে এমন অবস্থায় ওনার ব্রেন ওনাকে বাঁচার আগ্রহ দিচ্ছে।।

অনু: মানে?

ডাক্তার: এমন অনেক Patient আছে যারা Serious আত্নহত্যার পরেও বেঁচে যায়।।কারন তার ব্রেইন তাকে বাঁচার শক্তি যোগায়।।মিঃ শুভর ও ঠিক তাই।।ওনার মনে কিছু একটা আছে যেটা উনি প্রকাশ করতে চান। হয়তো সেটা তার খুব কাছের প্রিয় মানুষকে।।তাই তার ব্রেইন তাকে একটা বাঁচার আগ্রহ দিচ্ছে।।এটা সম্পূন সৃষ্টিকতার কৃপা।।মাঝে মাঝে আমরাও অবাক হয়ে যাই এমন ঘটনা দেখে।।তাই বলছি মহান আল্লাহকে ডাকুন INSHALLAH সব ঠিক হয়ে যাবে।।

নিশান: জ্বি।।ধন্যবাদ Doctor..

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here