সন্ধ্যে নামার পরে পর্ব -০৬+৭

#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-০৬

আজ দুদিন হলো পিয়াসের মৃত্যুর। পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে যে, পিয়াস মৃত্যুর আগে বেশি পরিমাণে অ্যা-ল-কো-হ-ল গ্রহণ করে। এটা নিজ ইচ্ছাতেই গ্রহণ করেছিল নাকি জোরপূর্বক গ্রহণ করানো হয়েছে তা বলা মুশকিল। পুরোপুরি অবচেতন হওয়ার আগেই শরীরে এই আঘাতগুলো করা হয়। অঙ্গচ্ছেদ হওয়ার কারণে প্রচুর র-ক্ত-ক্ষ-র-ণ হয়। যেই কারণে পিয়াস মারা যায়। যেভাবে তাকে আঘাত করা হয়েছে, এটা দেখলে মনে হয় কেউ অনেক ক্ষোভ থেকে এমনটা করেছে। ক্ষোভ এমন একটা জিনিস যে, মনে ক্ষোভের জন্ম হলে মানুষ যেকোনো ধরনের কাজ করতে পারে। এমনই কেউ একজন হয়তো পিয়াসের এই অবস্থা করেছে। ক্রাইম স্পটে কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি খু-নি-র। কে এই অজ্ঞাত খু-নি ? পিয়াসের পরিবার দু’হাতে টাকা ঢালছে খু-নি-কে পাওয়ার জন্য। পুলিশ যাতে খু-নি-কে খুঁজে পিয়াসের পরিবারের হাতে তুলে দেয় সেইজন্য তারা ইচ্ছামত টাকা ঢালছে।

রাদিন, মাহিম আর ফাহাদ একসাথে সেই পাপের আতুরঘরে বসে পিয়াসের মৃত্যুর ব্যাপারে কথাবার্তা বলছিল। তিনজনের কপালেই চিন্তার ভাজ। মৃত্যুভয় সবাইকেই গ্রাস করে। পাপ যে সমস্ত দেহে, প্রতিটা র-ক্ত বিন্দুতে মিশে আছে। পাপ হচ্ছে জোঁকের মতো আর মৃত্যু হচ্ছে লবণের মতো। জোঁকের গায়ে লবণ পড়লে যেমন হয়, ঠিক তেমনি হবে এই পাপীদের অবস্থা। আজ সন্ধ্যায় তিনজন আর বেশিক্ষণ আড্ডা দিলো না। যে যার বাড়ির ফিরে গেলো।

_______

মিদুল শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে মিনাকে চেঁচিয়ে বলল,

“আম্মা… তারাতাড়ি খাইতে দাও। কাজে যাইতে আজকে নির্ঘাত দেরি হইয়া যাইবো। ক্যান যে আরেকটু আগে ঘুম থাইকা ডাইকা দিলা না।”

মিদুল এসএসসি শেষে আর কলেজে ভর্তি হয়নি। পরিবারের অবস্থা দেখে কাজে নেমে গেলো মিদুল। ছোটখাটো একটা চাকরি জুগিয়ে নিয়েছে। ক্যাশিয়ার পদে যুক্ত হয়েছে মিদুল। সকালে নাস্তা করে বের হয় আর সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরে।

আসমা বসে বসে পান চাবাচ্ছিলেন। মিদুলের কথা শুনে আসমা মিনাকে তাড়া দিলো। বলল,

“কিগো পাখির মা, পোলাডারে এহনো খাইতে দিলা না ?”

মিনা তারাতাড়ি করে খাবার বিছানার উপর দিয়ে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে শুরু করলো। “পাখির মা” ডাক শুনে বরাবরই মিনার কলিজাটা যেন কেঁপে উঠে ফাইজার জন্য। মিদুল মিনার কাছে ছুঁটে এসে বলল,

“আম্মা, শার্টে দেখি দাগটা এহনো আছে। দুইদিন আগে শার্টটা কইছিলাম একটু ভালা কইরা ধুইয়া দিতে। লাল রং মারাত্মক একটা জিনিস।”

মিনা নরম স্বরে বলল,

“বাজান, রাইতের বেলা আইনা দিয়া বললা তখনোই ধুইয়া দিতে। রাইতের আন্ধারে ঠিকমতো দেখি নাই। তাই হয়তো দাগ রইয়া গেছে। তাইলে বাজান এইটা বাদ দিয়া না হয় অন্যটা পইড়া নাও। এইটা খুইলা রাখো, আবার ধুইয়া দিমুনি।”

মিদুল ভাতের লোকমা মুখে তুলে নিয়ে বলল,

“থাউক আম্মা, আর ধুয়া লাগবো না। আজকে কাজ থিকা আইসা নিজেই ধুইয়া নিমুনি। তোমারে তখন ধুইতে কওয়া আমার উচিত হয় নাই।”

মিনা বলল,

“রাগ কইরো না বাজান। আজকে ভালা কইরা ধুইয়া দিমুনি।”

দিমুল দ্রুত মুখের ভাত শেষ করে বলল,

“আম্মা, আমি রাগ করমু ক্যান ? তুমি এসব নিয়া চিন্তা কইরো নাতো।”

মিদুল খাওয়া শেষে মায়ের আঁচলে হাত-মুখ মুছে দ্রুত পায়ে বের হয়ে গেলো। মিনা তার ছেলের চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ অপলক চেয়ে রইলেন। এই বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের হাল ধরতে নেমেছে ছেলেটা। এসব দেখে আর ভেবে প্রতিদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিনা।

_________

আলাল সাহেব অফিসের কাগজপত্র ব্যাগে ভরতে ভরতে স্ত্রী রেসমিকে টেবিলে খাবার দিতে বললেন। আগামী দশ মিনিটের মধ্যে বাসা থেকে বের হতে না পারলে অফিস যেতে লেট হয় যাবে। রেসমির শরীরটা ঠিক ভালো লাগছিল না। তাই মেয়ে আফরাকে ডেকে বললেন, তার বাবাকে খাবার দেয়ার জন্য। আফরা হাত থেকে বইটা রেখে আলাল সাহেবকে খাবার দিতে এগিয়ে গেলো। রেসমিকে শুয়ে থাকতে দেখে তিনি আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। কারণ আলাল সাহেব নিজের স্ক্রীকে বুঝতে পারেন। রেসমির এমন হুটহাট শুয়ে থাকায় আলাল বুঝতে পারলেন যে রেসমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছে কোওনো কারনে। তাই আলাল রেসমিকে আর কিছু জিজ্ঞেস করেন নি।

আফরা খাবার সাজিয়ে দিলে আলাল হাসি মুখে খেতে বসে পড়ে। সাথে আফরাকেও খেতে বসায়। আলাল জানে মেয়েটা সবসময় আলালের সাথে বসে খেতে পছন্দ করে। খেতে খেতে আলাল আফরাকে পড়াশোনা সহ ক্যারাটে কোর্স কেমন করছে সেসব জিজ্ঞেস করলেন। আলাল দ্রুত খাবার খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন। আলাল চলে যাওয়ার পর আফরা রেসমির কাছে গিয়ে জানতে চায় তার কি শরীর খারাপ করছে কি না ? রেসমি জানায় যে তার অনেক মাথা ব্যাথা হচ্ছে। আফরা হেয়ার অয়েলটা নিয়ে এসে রেসমির চুলে তেল দিতে দিতে মাথায় ভালো করে হাত বুলাচ্ছে। রেসমি বেশ আরাম পায় আফরার হাত বুলানোতে। এক পর্যায়ে সে ঘুমিয়েও পড়ে। রেসমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আফরা ড্রয়িং রুমে গিয়ে টিভি অন করে বসে খবর দেখার জন্য। পরপর বেশ কয়েকটা খবরের চ্যানেল আগে পিছে করে পাল্টয়ে দেখলো আফরা। সব চ্যানেলে একই খবর প্রচার করছিল। শীর্ষ সংবাদগুলোর মধ্যে “ধর্ষণ” এই খবরটা সবচেয়ে বেশি প্রচার করে। আফরার বেশ রাগ হয় এধরনের খবর শুনলে। ইচ্ছে হয় ধর্ষকদের পাথরের আঘাত করতে করতে একদম শেষ করে দিতে। টিভি অফ করে চলে যায় নিজ ঘরে।

_________

রাদিন একটা চেয়ারের সাথে বাঁধা। পুরো ঘর ব্ল্যাক আউট। রিদন জানে না এখন সে কোথায় আছে। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে এই অন্ধকারে বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করে। নাকের সুক্ষ্ম ঘ্রাণেন্দ্রিয় রাদিনকে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, এখানে প্রচুর অ্যা-ল-কো-ল আছে আশেপাশে। মুখে স্কচটেপ লাগানোর জন্য কাউকে ডাকও দিতে পারছে না। এই অন্ধকারেই কতক্ষণ ছটফট করলো কোনো ভাবে দঁড়ির বাঁধন খোলার জন্য। কিন্তু এটা যে সম্ভব নয়। কিছুক্ষণ নিঃস্তব্ধ, নিস্তেজ হয়ে রইলো রাদিন। ধীরে ধীরে তাকে ভয় গ্রাস করছে। মনের ভেতর এখনি সাহারা মরুভূমি হয়ে এসেছে তার। গলা যেন এক শুকনো কাঠ হয়ে গিয়েছে। রাদিনের ইচ্ছে হচ্ছে এখন কোনো পানির সমুদ্রে ডুব দিয়ে সব পানি খেয়ে ফেলতে। এতটাই পানি পিপাসা পেয়েছে তার। পিয়াসের পর এখন তার সিরিয়াল চলে এসেছে এটা ভেবেই সে আরো আধমরা হয়ে গেলো।

বেশ কিছুক্ষণ পর একটু আলো এসে পড়লো রাদিনের চোখে। দরজাটা পুরো খুলে দেওয়াতে এখন ঝলমলে আলো পুরোটাই রাদিনের উপর এসে পড়েছে। কেউ একজন ভেতরে প্রবেশ করলো। রাদিনের মুখ থেকে স্কচটেপ খুলে দিলে রাদিন বড় বড় নিশ্বাস নিলো কিছুক্ষণ। তারপর একদম ক্লান্ত কণ্ঠে মায়া লাগিয়ে সামনে থাকা আগন্তুককে বলল,

“পানি খাবো, পানি। আমাকে কি একটু পানি দিতে পারেন। ? একটু পানি হলেই হবে।”

ঘরে প্রবেশ করলো আরো একজন আগন্তুক। সে হাতে করে একদম ছোট একটা গ্লাসে করে পানি নিয়ে আসে। পানিটুকু রাদিনকে খাইয়ে দেয়ার মিথ্যা অভিনয় করলো যেই আগন্তুক। পানি রাদিন খেতে পারেনি। পানি পড়েছে মাটিতে। পানি দেখে যেন রাদিনের পিপাস আরো বেড়ে গিয়েছে। রাদিন যখন নিচে পরে যাওয়া পানির দিকে তাকাচ্ছিল। তখন হুট করেই প্রথম আগন্তুক লাত্থি মেরে চেয়ার সহ ফেলে দেয় রাদিনকে।

কে এই আগন্তুক ?
কে এই আফরা আর তার পরিবার ?
#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-০৭

চেয়ার উলটে পড়ে যাওয়ায় রাদিনের মাথায় আঘাত লাগে। রাদিনের চাপা আর্তনাদ ঘরটির আনাচে-কানাচেতে ছড়িয়ে পড়লো। দ্বিতীয় আগন্তুক রাদিনকে টেনে তুলে বসালে প্রথম আগন্তুক দুপা এগিয়ে গিয়ে একটা হকি স্টিক হাতে নিয়ে এগিয়ে আসে রাদিনের দিকে। ঘরে আলো আসছে দরজা দিয়ে বাহির থেকে। তাই রাদিনে চোখেমুখে এসে আলোর ঝাপটা পড়ছে। আলো চোখের সোজাসুজি থাকায় সামনে থাকা আগন্তুকদের চেহারা দেখতে পাচ্ছে না রাদিন। এমনিতেও রাদিন তাদের দেখতে পাবে না। কারণ ওরা যথেষ্ট আড়ালে রেখেছে নিজেদের। প্রথম আগন্তুক রাদিনের সামনে এসে রাদিনের দুপায়ের মাঝখান বরাবর চেয়ারে পা রাখলো। তারপর রাদিনের মুখমন্ডলের আরো কাছাকাছি এসে দাঁত কটমটিয়ে বলল,

“তোর দেহের কোন অংশ দিয়ে শুরু করবো বলতো ? হাত থেকে নাকি চোখ থেকে ? চোখ থেকেই শুরু করি বল, যেই চোখ দিয়ে তোর কুদৃষ্টি মেয়েদের উপর ফেলতিস ? নাকি তোর মাথার ম-গ-জ টা বের করে নেবো, যেই মগজে যৌ…তায় ভরপুর ?”

রাদিন ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,

“কারা তোমরা ? কেন আমার সাথে এমন ব্যবহার করছো ? করেছিটা কি আমি ? তোমরা জানোনা যে তোমরা কিন্তু সাপের লেজে পা দিচ্ছো। সাপ কিন্তু এক ছোবলেই তোমাদের শেষ করে দেবে।”

প্রথম আগন্তুক গগন ফাটানো শব্দ করে হাসি দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হাসি থামিয়ে দিলো। হাসি থামানোর সাথে সাথেই এক হাত দিয়ে রাদিনের গাল চেপে ধরে। ব্যঙ্গাত্মক আর রাগের একত্রে মিশ্রণ করে রাদিনকে বলল,

“আমরা তোর পরম শুভাকাঙ্ক্ষী, ওকে। কি করেছিস সেইটা তুই ভালো করেই জানিস। আমি তোর জবাব দিতে বাধ্য নই। তুই যা করেছিস সেই তুলনায় তোর সাথে যেই ব্যবহার করছি তা নিতান্তই কম হচ্ছে। তুই এর থেকেও বেশি দেখবি। বুঝবি মৃত্যু যন্ত্রণা কতটা মধুর হয়। এই মধুর স্বাদ আজকে দেবো তোকে, বুঝতে পেরেছিস জানো…র ধর্ষক ? তোর লেজ কোথায় বলতো, সামনে না পিছে ? আর কি বললি যেন ? ওহ হ্যা, সাপের লেজে পারা দিয়েছি তাইনা ? শুধু লেজে পারা দিয়েতো পোষাবে না। পুরো সাপটাকেই আজকে যাচ্ছেতাই করে দেবো। তুই সাপ হলে আমিও ওঝা। তোর বিষ দাঁত আজকে এই মুহুর্তে চিরদিনের জন্য হারাবি। এইতো আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা। এর পরে তোর নামও মুছে যাবে এই দুনিয়ার বুক থেকে।”

দ্বিতীয় আগন্তুক সম্পূর্ণ ভরা ম-দে-র বোতল নিয়ে আসে রাদিনের সামনে। রাদিন খেয়াল করলো, এগুলো খুব কড়া মাপের অ্যালকোহল। সেন্স দুর্বল হওয়ার জন্য এটা সম্পূর্ণ খাওয়ার দরকার নেই। অল্প একটুই যথেষ্ট। রাদিনের মৃত্যু ভয় এমনিতেই কাবু করে নিচ্ছে। পাপ সাপের মতো পুরো দেহে মনে হয় পেঁচিয়ে নিয়েছে তার। বুকের ভেতরে কম্পনের সৃষ্টি হয়। যেন কেউ খুব জোরে হাতুড়ি পেটা করছে। এই কম্পনেই যেন কেড়ে নেবে সাধের নিশ্বাসটুকু। দ্বিতীয় আগন্তুক বোতলের ছিপি খুলে রাদিনের মুখে চেপে ধরে। রাদিন খেতে না চাইলেও ফেলে দেয়ার সুযোগ নেই। এমনিতেও গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে গ্রীষ্মের ফেটে যাওয়া মাঠের মতো। মৃত্যুর আগে না হয় তৃষ্ণা মিটিয়ে নিক।

রাদিন একদম নেতিয়ে পড়ে। যখন একদম দূর্বল হয়ে যায় তখন বাঁধন খুলে দেয়া হয় চেয়ার থেকে। তারপর অদ্ভুত এক শাস্তি দেয়া হলো রাদিনকে।

________

যেই ঘরে নিজেদের কুকর্মের আতুরঘর বানিয়ে নিয়েছিল সেই ঘরই যেন এখন তাদের নিজেদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পিয়াসের ডেড বডি সেই ঘরের পাশের পেয়েছিল। তাই সেখানে এখন পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়া আর কোনো সাধারণ জনগণ সেখানে উপস্থিত হওয়া নিষিদ্ধ। যে সেখানে বিনা অনুমতিতে যাবে তাকেই পিয়াসের খু-নি হিসেবে আটক করে ফেলবে। এই ভয়ে ওদিকে আর তেমন কেউ যায়না।

এমনিতেও ওদিকে আগে যে মানুষ অনেক আনাগোনা করতো ওইরকমটাও না। তবুও কয়েকজন যেতো খড়ি সংগ্রহ করার জন্য। এখন পুলিশের ভয়ে আর পা মাড়ায় না সেদিকে। এই ঘরটার কিছুটা দূরেই একটা ঘাট আছে নদীর। ঘাটটা অবশ্য খুব কাছাকাছি না। এক পুলিশ কর্মকর্তার চোখে ভাসলো কিছু ভেসে আসার। আগে যেরকম কোনো মৃত ব্যক্তিকে কাঠ বা কলা গাছের ভেলায় বাসিয়ে দেয়া হতো ঠিক তেমনই দেখতে পাচ্ছে এখন পুলিশ কর্মকর্তা। নিজের সাথে আরো একজন মিলে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলেন ভেলাটা স্রোতে তাদের দিকে নিয়ে আসার জন্য।

কয়েক মিনিটের মধ্যে যখন ভেলাটা কাছে আসলো এবং দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা দুজন ভেলার উপর থাকা দেহটার দিকে তাকালো তখন তারা কিছুটা ভিত হয়ে গেলো। তারাতাড়ি আরো কয়েকজনকে ডাক দিয়ে ভেলাটা পাড়ের উপরে টেনে তোলা হয়। বেশ হইচই পড়ে গেলো পুলিশদের মধ্যে। সাধারণ লোকদের মধ্যেও বেশ রটে গেলো এই ডেড বডির খবর। যেহেতু ঘাটের দিক হয়ে এসেছে সেহেতু সেই ঘাট থেকে কেউ না কেউ দেখেছে এবং খবর মুহুর্তেই আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। উৎসুক জনতা পুলিশের মানা থাকা সত্ত্বেও এক নজর এই ডেড বডি দেখতে ছুটে এলো। এটা ছিল রাদিনের ডেড বডি।

রাদিনের পরিবারের লোকজনকে তখন পুলিশ খবর দিতে চায়নি। তারা চেয়েছিলো খুব দ্রুত বডিটাকে পোস্ট মর্টেমের জন্য সরিয়ে ফেলতে। কিন্তু লোক জানাজানি হয়ে যাওয়ায় রাদিনের পরিবার খবর পেয়ে ছুটে আসে রাদিনকে শেষবারের মতো একবার দেখার জন্য। পুলিশ রাদিনের পরিবারের সদস্যদের রাদিনের দেহের কাছে যেতে দিচ্ছিলো না। রাদিনের দেহ ঢেকে ফেলা হয়েছিল খুব দ্রুত। তাই প্রথম দিকে দু চারজন ছাড়া আর কেউই দেখতে পায় নি। পিয়াসের পরিবারের মতো রাদিনের পরিবারও হায়হতাশ করে তাদের সন্তানের হত্যাকারীকে হাতে পেতে চায়। দিতে চায় কঠিনতম শাস্তি।

__________

মিদুল বাড়ি ফেরার সময় এলাকার এক দোকানে গিয়ে থামলো এক হালি ডিম কেনার জন্য। মিদুল খেয়াল করলো বেঞ্চে বসে চা খেতে থাকা দু’তিনজন ব্যাক্তি চায়ে চুমুক দেয়ার পাশাপাশি বলছিল,

“যা একটা কাম হইছে না আজকে। একেবারে উচিৎ বিচার হইছে।”

“হ ঠিক, যে এই কাজ করছে তারে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।”

“এই পোলার কুকীর্তি তো কম বেশি এলাকার সবাই জানে। কিন্তু ওর বাপের জোরের লাইগা কেউ কিছু কইতো না। আল্লাহয় উচিত বিচার কইরা দিছে।”

মিদুল উৎসুক কণ্ঠে তাদের জিজ্ঞেস করলো,

“কি হইছে ? কার কথা কইতাছেন ?”

মাঝবয়েসী একজন বলল,

“তুমি কি এহনো জানো না ? আচ্ছা ব্যাপার না। ব্যাপার হইলো গিয়া, ওই এক হালি পোলার মইধ্যে আজকে দু নম্বর জন মরছে। একেবারে শ্যাইষ।”

মিদুল বলল,

“কেডা আছিলো এইডা ?”

মিদুলের বয়সী তামিম বলল,

“মেম্বরের পোলায় আউট হইয়া গেছে মিদুল ভাই। প্রত্যেক বলেই কি ছক্কা হাকান যায় নাকি ? কেডায় জানি ক্যাচ আউট করে দিছে। দারুণ একটা ক্যাচ আউট।”

মিদুল এক গাল হেসে আবারো জিজ্ঞেস করলো,

“চেয়ারম্যানের পোলার মতো হইছিল নাকি ?”

তামিম বলল,

“না ভাই ওইরকম না। এইটা ভিন্না আছিলো। আমিতো দেখিনাই কিন্তু যা শুনছি সেইটা অইলো গিয়া, পোলাডার মাথার ম-গ-জ বাইর কইরা ওইটা নাকি পেডের উপরে রাইখা দিছিলো। মগজে নাকি লেখা আছিলো ❝আমি ধর্ষণ করার প্ররোচনা দিতাম❞। আর হের নিচের কুকামের জিনিষটাতে লেখা আছিল খোদাই কইরা, ❝আমি সতিত্ব হরণকারী❞। বুঝো কি একটা অবস্থা। শইলে তো বলে আরো পিডানির দাগ আছেই।”

মিদুল দোকানদারকে ডিমের টাকা দিতে দিতে বলল,

“আল্লাহয় যা করে তা বান্দার ভালার লাইগাই করে। দেখা যাক এখন বাকিগো আল্লাহ কোন ধরনের মউত দেয়।”

_______

পরপর দুটো মৃত্যু। মাহিম আর ফাহাদ একদম চুপসে গিয়েছে। দুজনের কেউই এখন ঘর থেকে বের হয় না। তাদের ধারণা, ঘর থেকে এক পা বের হলেই তারা পিয়াস আর রাদিনের মতো অবস্থায় বিনাশ হয়ে যাবে। আসলেই কি তাই ? মৃত্যু কি কারো ঘরবাড়ি চেনে না ? নাকি বাড়ি পৌঁছানোর রাস্তা চেনে না ? কে বলতে পারে, কখন কার পাপের শাস্তি গ্রাস করে নেবে যেকোনো মুহুর্তে।

প্রশাসন এবার একটু নড়েচড়ে বসেছে। একটু আরকি, তবুও বেশি না। পরপর দুইটা মার্ডার কিন্তু পুলিশের কাছে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ কিছুই নেই। চাপ এখন পুলিশের ঘাড়ে। আসলেই কি তারা বের করতে পারবে এই কিলারকে ?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here