সন্ধ্যে নামার পরে পর্ব -০৪+৫

#সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-০৪

মিদুল ফাইজাকে খুব সাবধানের সহিত কোলে করে রাস্তা পর্যন্ত নিয়ে গেলো। খুব ধীরে শুইয়ে দিলো ভ্যানের উপর। মিদুলের হঠাৎ মনে হলো যে, ভ্যানে বিছানোর জন্য নরম গদি বানানোর জন্য কিছু নিয়ে আসতে বলা উচিৎ ছিল। সাথে লেপ বা কম্বল। এই কাঠের উপর শুইয়ে রাখলে বোন আরো কষ্ট পাবে। এছাড়া ঠান্ডা তো আছেই। ফাইজার যা অবস্থা এই মুহুর্তে তাকে প্রাণপণে আগলে রাখার সম্পূর্ণ চেষ্টায় থাকতে হবে। এই মুহুর্তে বাড়িতে না নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে, এরকমই ভাবছে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়া তিনজন পুরুষ। ফিরোজ ভ্যানে উঠে বসে ফাইজাকে বসালেন। তারপর পাখি যেভাবে তার ছানাকে দুডানার নিচে আগলে রাখে ঝড়ঝাপটা থেকে, তেমনি ফিরোজ চেষ্টা করলেন তার ফাইজা ছানাটাকে আগলাতে। ছানাটার দেহ এখন নীলচে হয়ে আছে। শীতে পুরো দেহ এমন ঠান্ডা হয়েছে যে মনে হচ্ছে এ যেন এক বরফ খন্ড। হাত পায়ের বিভিন্ন জায়গায় র-ক্ত জমাট বাঁধা চোখে পড়লো ফিরোজের। খুব টেনে নিশ্বাস নিচ্ছে।

মিদুল তার দাদাকে ভ্যানে বসতে বলে নিজেই ভ্যান চালানোর সিটে বসলো। খুব দ্রুত মিদুল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। মিদুল চায় না এমন খারাপ অবস্থায় তার বোনকে কেউ দেখুক বা কারো নজরে পড়ুক। ভোরের আলো তখন ফুটতে শুরু করেছে সবে। এক ঘন্টার রাস্তা আধ ঘন্টায় শেষ করলো মিদুল। বিপদের রাস্তা যেন শেষই হতে চায় না। অবশেষে পৌঁছে গেলো সদর হাসপাতালে। কাছের হাসপাতাল বলতে এই সদর হাসপাতালটাই কাছে ছিল। ভালো যে ভ্যানে মটর লাগানো ছিল। সেই সুবাদে স্পীড বাড়িয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিতে পেরেছে। হাসপাতালে তখন পর্যাপ্ত ডাক্তার ছিল না। ছিলো না প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা। এদিকে ফাইজার অবস্থা শোচনীয়।

হাসপাতালের ডাক্তাররা ফাইজাকে রাখতে চাইলেন না এমন অবস্থা দেখে। বলে দিলেন বড় কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে। ফাইজাকে শুধু অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে রিলিজ করে দেয়া হলো। চিন্তায় তিনজন মানুষের মাথা নষ্ট হবার যোগার। ওদিকে বাড়িতে আসমা আর মিনা নামাজে বসে কান্নাকাটি করছেন। কারণ রফিক ভ্যান নিয়ে গেলেও ফাইজা পেলো কি পেলো না বা কি অবস্থায় আছে এসব কিছুই জানায়নি। তাই এই চিন্তায় দুজন নারী পেরেশান। হাসপাতালের এম্বুলেন্স দিয়ে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো এক নামকরা হাসপাতালে। এদিকে ফাইজার হার্ট রেট কমেই আসছিল। হাসপাতালের ডাক্তাররা এমন পরিস্থিতির পেশেন্ট দেখে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ছুটাছুটি শুরু করলেন। কিন্তু টাকা ঢালতে হবে প্রচুর।

কারণ ? কারণ এটা রেপ কেইস। ফিরোজরা মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ। খুব আয়েশে তাদের দিনাতিপাত না হলেও মোটামুটি ভাবে দিন চলে যায়। মধ্যবিত্তের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো টাকার বিপদ। এই বিপদে যে বা যারা পড়েছে তারা জানে, এই বিপদ কতটা তিক্ততার। এই মুহুর্তে যা হবে তা হলো টাকার খেলা। টাকা ঢাললে ফাইজা চিকিৎসা ভালো পাবে। আর টাকা না ঢালতে পারলে এভাবেই ফাইজার প্রাণপাখি বিদায় জানাবে। রফিক, ফিরোজ আর মিদুল মিলে ডাক্তারকে অনুনয় বিনয় করলো যাতে তারা ফাইজার চিকিৎসা ঠিকমতো করে। ডাক্তারের পা জড়িয়ে ধরতেও দ্বিধা করেনি ফিরোজ। চিকিৎসা বাবদ টাকা ফিরোজেরা দিয়ে দেবে বলে কথা দিচ্ছিলো।

রফিক আর মিদুলকে হাসপাতালে রেখে ফিরোজ বাড়িতে চলে গেলো টাকা জোগাড় করতে। হুট করে এত টাকা কোথায় পাবে এই চিন্তায় ফিরোজের নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছে করছে। বাড়িতে পৌঁছে ফিরোজ যখন আদরিনী কন্যা ফাইজার অবস্থা বর্ননা করলো তখন মিনা এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। ফাইজার এমতাবস্থার কথা শোনা মাত্রই “ও আল্লাহ গো…” বলে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। সাথে সাথেই জ্ঞান হারালো মিনা। ফিরোজ তারাতাড়ি করে মিনাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। আসমা পাখা দিয়ে মিনাকে বাতাস করতে শুরু করলো। ফিরোজ জগ থেকে পানি নিয়ে মিনার চোখেমুখে বেশ কয়েকবার পানি ছিটালেন। মিনার জ্ঞান ফিরেও পরপর দু’দুবার জ্ঞান হারালেন। জ্ঞান ফিরলেই ফাইজার নাম বলে চিৎকার করে আবারো অজ্ঞান হয়ে যান।

মিনার পুনরায় জ্ঞান ফিরলে ফিরোজ ধমক দিয়ে বসেন। ফিরোজ মিনাকে বলল,

“এই থামোতো, কি শুরু করছো এগুলা ? এখন কি কান্দাকাটি কইরা জ্ঞান হারানির সময় ? এইখানে তোমারে সামলামু নাকি আমাগো কলিজার ধনে মরনের লগে যুদ্ধ করতাছে ওইখানে যামু, কোনটা ? এমনিতেই ঘাড়ে বিপদ ঝুলতাছে আর এখন তুমি আরেক বিপদ বাধাইতে চাইতাছো নাকি ? এমন চিল্লাচিল্লি কইরা কি পুরা গ্রাম জানাইবা নাকি যে তোমার মাইয়ারে শেয়াল শকুনে খোবলাইয়া খাইছে ? সম্মান তো আমাগো যা নেওয়ার আল্লাহ নিয়া গেছে। এখন মুখ বন্ধ কইরা থাকো। নয়তো এই সমাজে আর থাকা যাইবোনা। সমাজের মানুষগুলাতো বিপদে আগাই আসে না। মইধ্যে থাইকা খালি মজা লুটে। আমারে আর কথা বলাইও না পাখির মা। (ফাইজাকে ছোট থেকে পাখি বলে ডাকায় ফাইজার মাকে পাখির মা ডাকে বাড়ির সবাই।) আম্মা আর তোমার কাছে গয়নাগাটি অলঙ্কার যা আছে নিয়া আসো। দেখি ওইগুলা বেইচ্চা কত টাকা পাওয়া যায়।”

গয়নাগাটি খুব বেশি নেই। মধ্যবিত্তের ঘরে যা থাকে তা শুধু বিপদে পড়লে সেটা থেকে উত্তরনের জন্য জমিয়ে রাখা হয়। মিনার কাছে যা জমা ছিল সব একত্রিত করে একটা ব্যাগে ভরে ফিরোজের হাতে দিলো। আসমাও কিছু নিয়ে এলো। আসমার হাতের গয়নাটা দেখে মিনা বলল,

“আম্মা, এইটাতো বংশগত গয়না। বংশপরম্পরায় এইটা এই পর্যন্ত আইছে।”

আসমা ব্যথাতুর কণ্ঠে বললে,

“আর বংশ, ওইদিকে আমার বংশের বাত্তি নিইভা যাইতাছেগো বউ। বংশ বাঁচলে এমন গয়না আরো কত ঘরে আইবো। ফিরোজ বাপ, নে এগুলাও নিয়া যা।”

ফিরোজ মায়ের প্রতি ছলছল নয়নে মাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গয়নার ব্যাগ সাবধানে নিয়ে বের হয়ে গেলো স্বর্নকারের দোকানে। ঘরের মহিলাদের সাধের জিনিসগুলো অন্যের হাতে দিতে যাচ্ছে। স্বর্নকারের দোকানে গয়নাগুলোর দাম যা বলল তা আসল মূল্যের তিন ভাগের দুভাগ। মানে বর্তমানে গয়নার যা দাম তা থেকে তিন ভাগের দুভাগ। ফিরোজ দোকানে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে। সে সিদ্ধান্ত নিলো যে, এই গয়নাগুলো এখন না বিক্রি করে বন্ধক রাখবে। যেই ভাবা সেই কাজ। যা পেলো তাই নিয়ে ছুটলো হাসপাতালে। টাকা জমা দেয়ার পর চেয়ারে গিয়ে বসলেন ফিরোজ। ডাক্তাররা রেপ কেইস করতে বলছেন। কারণ ফাইজার অবস্থা শোচনীয়। যেকোনো সময় যা কিছু হতে পারে। ফিরোজের সাথে কথা বলে ফাইজার কিছু মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে থানায় গেলো কেইস করতে। থানার ফাইজার ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে জানালে তারা একটা কেইস ফাইল করে এবং ঘটনাস্থলে যায় কোনো আলামত পাওয়া যায় কিনা সেই উদ্দেশ্যে। আসামিদের তালিকায় মিদুল চারজনের নাম দিয়ে দিলো। কারণ যেখান থেকে ফাইজার হিজাব ব্রোঞ্জ পাওয়া গিয়েছে সেখানে পিয়াস, রাদিন, মাহিম আর ফাহাদ সবসময়ই আড্ডাবাজি করে। মিদুল নিশ্চিত যে ফাইজার এই অবস্থা ওরাই করেছে। পুলিশ ক্রাইম স্পটে গিয়ে খোজাখুজি করলেন। একজন অফিসার নদীর পাড়ের দিকে গেলে কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখে বলল,

“শালারা প্রটেকশন নিয়া নিছে। রেপ করলেও রেপিস্টদের স্পার্ম পাবেনা। তার মানে রেপিস্টকেও ধরা যাবে না, নো প্রুভ।”

এই কথা বলে ওই জিনিসটা লাত্থি মেরে পানিতে ফেলে দিলো। পানির স্রোতে চলে গেলো অজানা ঠিকানায়। তিনি কিন্তু পারতেন এটা সংগ্রহ করতে। কিন্তু উলটে উনি এই ক্লুটাকে বিনাশ করে দিলেন। ইনি যেন রেপিস্টদের কেনা গোলাম। হয়তো একই ভাবে পড়ে থাকা বিভিন্ন আলামত নষ্ট করে বাঁচিয়ে দিয়েছেন রেপিস্টদের আরো কয়েকবার। একজন পুলিশ কর্মকর্তা যখন নিজের কাজকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দেখে তখন আমাদের সমাজে এরকম ঘটনা ঘটে যাওয়া যেন পানি ভাত। মিদুল হতাশ হয়ে হাসপাতালে ফিরে যায়। কেইস যেহেতু হয়েছে সেহেতু আসামীদের এরেস্ট করতেই হবে। চারজনকে হাজতে বন্ধী করা হলেও ঘন্টাকয়েক পরেই ছেড়ে যায় হয় টাকার গরমে। বিচার পেলো না ফাইজা বা তার ফ্যামিলি।

দিন কেটে গেলো অনেকগুলো। এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলো ফাইজার ব্যাপারটা। কেউ বা আসে শান্তনা দিতে আর কেউ বা আসে খোঁচা দিতে। ওদিকে ফাইজাকে লাইফ সাপোর্ট এ রাখা হয়েছে। এভাবে আর কত দিন ? কেন রেপিস্টদের মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়না। কেন সমাজ থেকে এই হায়েনাদের শেষ করে দেয়া হয় না ? তাদের তুলে দেয়া হোক জনসাধারণের হাতে। পাথর মেরে শে-ষ করে দেওয়া হোক রেপিস্টদের। এটাই তাদের জন্য উত্তম বিচার।

কেটে গেলো প্রায় অর্ধ বছর। শান্ত হয়ে গেলো চারপাশ। শান্ত হয়ে গেলো সব। ফাইজার পরিবার কি পেরেছে ফাইজার জন্য তাদের হৃদয় শান্ত করতে ? একটা পরিবার জানে, প্রিয় সন্তানের ব্যাথা। ফাইজাদের নাম এভাবেই বিলীন হয়ে যায়। আসলেই কি তাই হলো ?

চলবে… #সন্ধ্যে_নামার_পরে 🔞
ফাতেমা তুজ জোহরা
পর্ব-০৫

শীত কেটে গেলো। সন্ধ্যা বেলার সেই কুয়াশা এখন আর চোখে পড়ে না। কিন্তু বাকি সব কিছুই একই রয়ে গেলো। ফাইজার পর আরো দুজন মেয়ের সাথে একই খেলা খেলে পিয়াস, রাদিন, মাহিম আর ফাহাদ। কিন্তু ফাইজার মতো এতটাও খারাপ হয়নি এদের। কিন্তু হাসপাতালের বেডে এদের যেতেই হয়েছে। আগের মতোই পাওয়া গেলো না রেপিস্টদের স্পার্ম। এই দুজন মেয়ের মধ্যে একজন ছিল সদ্য বিবাহিতা এক রমনী। এই ঘটনার পর স্বামী তাকে ডিভোর্স দেয়। কিন্তু এখানে মেয়েটারই বা কি দোষ ছিল ? সেতো ইচ্ছে করে আগুনে ঝাপ দেয়নি। আরেকজন ছিল একজনের বাগদত্তা।

মজার ব্যাপারটা এখানেই ঘটে। পিয়াসের জন্য বিয়ে ঠিক করা হয়। ঠিক করা হয় বলতে বিয়ে প্রায় ঠিকঠাক। কিন্তু পিয়াস মেয়েটাকে দেখে নি। মেয়েটার নাম চারুলতা। সবাই ছোট্ট করে চারু বলে ডাকে। বিয়ের সপ্তাহ খানেক আগে চারুলতাকে পিয়াসদের বাড়িতে আমন্ত্রণ করা হয়। কারণ পিয়াস চাইছিলো বিয়ের আগে মেয়েকে দেখে নিতে। কেননা তাকে না জানিয়েই বিয়েটা ঠিক করা হয় এবং পিয়াস সেটা বাধ্য ছেলের মতো মাথা পেতে মেনেও নেয়। কোনো এক কারণে চারুলতার সাথে পিয়াসের আর দেখা হয়নি। হঠাৎ করে বিয়েটাও চারুলতার ফ্যামিলি থেকে নাকোচ করে দেয়া হয়। মেয়ের পরিবার থেকে ঠিক করা বিয়ে যখন ভেঙে দেয় তখন পিয়াসের ভিষণ মেজাজ খারাপ হয়। সে প্ল্যানিং করে যে ছলেবলে যেভাবেই হোক মেয়েটাকে তুলে এনে বিয়ে করে নেবে। তাহলে এভাবে চারুলতার পরিবারের উপর শোধ নেয়া হবে।

যেই প্ল্যানিং সেই কাজ। চারুলতাকে বাকি তিন বন্ধুর সহযোগিতায় তুলে নিয়ে আসে। চারুলতার গায়ে ছিল বোরকায় আবৃত, নিকাবে মুখ ঢাকা ছিল। যে কারণে তুলে আনার সময়ও মুখ দেখেনি পিয়াস বা সহযোগীরা। কিন্তু কনফার্ম ছিল যে এটাই চারুলতা। সেই নদীর পাড়ের কুলোষিত ঘরটাতে নিয়ে আটকানো হয় চারুলতাকে। পিয়াস ঘর থেকে বের করে দিলো রাদিন, মাহিম আর ফাহাদকে। ঘর থেকে বের করে দিলেও ওরা ঘরের কাছাকাছিই অবস্থান করছিলো। ফাহাদ এক গাল তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

“শালায় এবার বিয়ার আগেই মাইয়াডারে খাইয়া দিবো।”

রাদিন বলল,

“খাইবো ভালো কথা তাই বইলা আমাগো নিবো না ? একা খাওয়া ঠিক হচ্ছে না।”

মাহিম বলল,

“একটা জিনিস খেয়াল করেছিস ? মেয়েটা কিন্তু একদম ছটফট করেনি তুলে আনার সময়।”

রাদিন বলল,

“পোষা পাখি মাম্মা…। পিয়াসের পোষা পাখি। তাই হয়তো কিছু বলে নাই।”

মাহিম বলল,

“আমার তো মনে হচ্ছে যে, এই মাইয়া অনেক বিছানা কাপাইছে। সেই জন্য আমাদের দেখে ভয় পায় নাই। অন্যসব মাইয়া হইলে তো চিল্লাইয়া কান পচিয়ে ফেলতো।”

পিয়াসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে চারুলতা। পিয়াসের কিছুটা খটকা লাগলো যে, চারুলতা তাদের ভয় পাচ্ছে না। এমনকি তুলে নিয়ে আসার সময়ও বেশি ছুটাছুটি করে নি। কেন চারুলতা চুপচাপ ?

পিয়াস চারুলতার কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। কিন্তু চারুলতা নড়চড় করলো না। মনে হচ্ছে এ কোন এক নারী মূর্তি। পিয়াস চারুলতাকে বলল,

“কিরে এভাবে তুলে নিয়ে আসার পরেও কি তোর কলিজা কাঁপে না ? নাকি এরকম আরো ছেলেদের সাথে শুইছিলি যে ভয় পাস না। তোরে দেখার জন্য এতবার খবর দিলাম কিন্তু আসলিনা। এত দেমাগ ? তোদের পরিবারের সব কয়টা লোকই মনে হয় তোরে দেমাগ সাপ্লাই করে। নয়তো সাহস কি করে হয় যে, সব ঠিকঠাক করা বিয়েটা ভেঙে দিতে ?”

চারুলতা ধীরে বলল,

“আপনার বলা শেষ হয়েছে ? তাহলে এবার আমি আপনার প্রশ্নের উত্তরগুলি দিই।”

এই চারুলতা মুখের উপর থেকে নিকাবটা খুলে ফেললো। পিয়াস যে কয় পা চারুর দিকে এগিয়ে এসেছিল, তার ছেয়ে দিগুণ দূরে চলে গেলো। চারুলতা পিয়াসকে বলল,

“ওহ আমার ভয়ের জায়গায় দেখি আপনি ভয় পেলেন ! চিনতে তাহলে ভুল করেন নি। জানেন, আমার মন বলছিল যে এই ঘরে দ্বিতীয়বার আমাকে আসতে হতে পারে। অদ্ভুত ভাবে ভাবনাটা মিলে গেলো। আচ্ছা কি যেন বলছিলেন ? ওহ আচ্ছা, আমাকে কলিজা কাঁপে না কেন ? কিভাবে কাঁপবে বলেন, এই কাঁপা-কাঁপি তো বেশ কয়েকদিন আগেই শেষ করে দিয়েছেন। আরো ছেলেদের সাথে শুয়েছি কিনা ? আমাকে যখন চারজনে মজা করে কাবাবের মাংসের মতো আয়েক করে খাচ্ছিলেন, তখন কি বুঝেন নি যে আগে আমি কোথাও শুয়েছি কিনা। আমাকে দেখার জন্য খবর দিলেন, অথচ আপনার বাড়ি অব্ধি পৌঁছাতে পারিনি। চারজনে মিলে ঈগলের মতো ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে এসেছেন এই ঘরে। যে ছেলের কিছুদিন পর বিয়ে ছিল, সে কিভাবে একটা মেয়েকে এভাবে বন্ধুদের নিয়ে ভাগাভাগি করে আয়েশ মেটাতে পারে ? আমি কোনো খোলামেলা পোষাকেও ছিলাম না যে আমাকে দেখে সিডিউস হয়ে গিয়েছিলেন। আসলেই কি জানেন, রেপিস্টরা কখনো মেয়েদের অ-ন্ত-র-বা-স দেখে সিডিউস হয়না। তারা ঢিলেঢালা বোরকার ভেতরে থাকা মোলায়েম দেহটার মাপকাঠি বিনা বাধায় বিচক্ষণ কল্পনা শক্তি দ্বারা মেপে ফেলতে পারে। ওই বি-ষা-ক্ত চোখ দ্বারা অঙ্কন করে ফেলতে পারে লোভনীয় অঙ্গাকৃতি। রেপিস্টরা নিজেদের কল্পনা দিয়েই সিডিউস হয়ে যায়। আপনি কিভাবে আশা করেন যে এমন বড় একটা ঘটনা হবার পরেও আমার ফ্যামিলি আপনার হাতে তাদের আদরিনী কন্যাকে তুলে দিতে চাইবে ? ভুলে নিজের বাগদত্তাকে ধর্ষণের তালিকায় জুড়ে দিলেন। নিজের বোনের সাথেও যেন এমন না করে বসেন।”

হ্যা চারুলতাও ছিল ওই দুজন মেয়ের মধ্যে একজন। যে ছিল পিয়াসের বাগদত্তাও। পিয়াস এখন বুঝতে পারছে যে সে কি কাজ করেছে। চারুলতা অনেক কিছুই বলে গেলো তবে আজ পিয়াস চুপ করে কথা শুনছে। একটা প্রবাদ শুনতে পাওয়া যায় যে, ইট মারলে পাটকেল খেতেই হবে। এতদিন অন্যদের সাথে অন্যায় করতে করতে আজ নিজের বাগদত্তার সাথেই অন্যায় করে ফেলেছে। তবুও কি এদের বিবেক নাড়া দেবে ? সেটাই দেখার বিষয়।

__________

এই ঘটনার বেশ কিছুদিন পরেই একটা ঘটনা ঘটে যায়। ঘটনা এই ছিল যে, পিয়াসের মৃ-ত দেহ পাওয়া যায় নদীর পাড়ে। সম্পূর্ণ কাপড় বিহীন অবস্থায় পড়ে ছিল। জনগণের আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দু এই কাপড় বিহীন দেহে ছিল না, দেখার আগ্রহ ছিল নিচের অংশে। যেই বিশেষ অঙ্গের ক্ষমতায় এতদিন সে এত এত মেয়ের সম্মানহানী করেছে। কেউ একজন তারই সে অ-ঙ্গ-হা-নী করে ফেলেছে। শুধু যে অঙ্গহানী হয়েছে তা নয়, দুহাতের সব কয়টা আঙ্গুল কে-টে ফেলা হয়েছে। দুই উরুর মাংসাল অংশে বেশ অনেকগুলো ছু-রি দিয়ে কা-টা-র চিহ্ন দৃশ্যমান। এমন শাস্তি কে কবে দেখেছে ? উৎসুক জনতার ভিড়ে কেউ একজন প্রশান্তির হাসি হাসলো। পিয়াসের দেহের পাশে স্বজনদের আহাজারি। সঠিক বিচার চাইছে ছেলের এমন কঠিনতম খু-নে-র অভিযুক্ত ব্যক্তির। তারা কি জানে যে তাদের ছেলে এমন নোংরা মানসিকতার ছেলে ছিল ? এই ছেলের জন্য এইটুকু শাস্তি নিতান্তই কম ছিল। ভিড়ের পিছন থেকে গুটিগুটি পায়ে জায়গা প্রস্থান করলো পিয়াসের নাম মুছে দেয়া ব্যক্তিটি। নেক্সট টার্গেট এবার অন্য আরেকজন। কে ছিল এই ব্যক্তি ? চারুলতা ? চারুলতার ধারা কি এই কাজ করা সম্ভব ?

পুলিশ দ্রুত এসে পিয়াসের দেহ পোষ্ট মর্টেম করার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে দিলেন। যেই পুলিশ কর্মকর্তা সবসময়ই এদের বাঁচিয়ে দিতো সেই পুলিশ কর্মকর্তা আজ কিছুটা ভিত। পাপ নাকি বাপকেও ছাড়ে না। এখানেও ছাড় পাবে না কেউ। দুদিন আগে বা পরে, পাপের শাস্তি ঠিকই পেতে হয়। এই পাপ এখন পুলিশ কর্মকর্তাটার মনে ভয়ের জন্ম দিয়েছে। যে ভয় হঠাৎ একদিন সামনে চলে আসবে এবং তাকে গ্রা-স করে ফেলবে। এগিয়ে আসছে সেই দিন।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here