সবিনয়ে_নিবেদন পর্ব ১

তাকে প্রথম দেখে ছিলাম ক্লাস শেষে।তার ক্লাসরুম এর পাশ থেকে যাচ্ছিলাম আমি আর আমার বন্ধুবীরা।সে তখন গভীর মনোযোগে হোয়াইট বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে ছিল।সেই প্রথম তারপর আরও কত বার যে তাকে লুকিয়ে দেখেছি, অথচ সে একবারও বুঝতে পারেনি। তার সামনে যখন গিয়ে ছিলাম তখন পুরো ১ বছর হয়ে গেছিল আমার তাকে ভালোবাসার।সে গুনে গুনে আমার থেকে ৬ বছরের সিনিয়র ছিল।সেদিন খুব সাহস করে তার সামনে গিয়ে বললাম,
____ এই যে শুনছেন?
সে তার গোলগোল চোখ দুটি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। ইসস্…. এখনও সেদিনের কথা মনে পরলে বুক কাপে।কি সুন্দর সেই চাহনী।সে যখন বললো,
____জি আমাকে বলছেন?
আমি এক মুহূর্তের জন্য ভাষা হারিয়ে ফেলে ছিলাম।তার কথায় বাস্তবে ফিরে ছিলাম।তাকে শুধু বলে ছিলাম,
____ আমি কেমিস্ট্রি কিছু বুঝতে পারছি না।আবার মনে হয় আর পাশ করতে পারবো না।শুনেছি আপনি নাকি সবাই কে পড়তে সাহায্য করেন।আমকে একটু করবেন?এই একটু খানি(আঙ্গুল দেখিয়ে) তাতেই হবে বেশি লাগবে না। প্লীজ প্লীজ না করবেন না।একটু খানি আবার যদি পাশ না করি তাহলে এই মুখ আমি কথায় লুকাবো বলুন।
আমার তিনি শুধু একটু হেসে ছিল আর কিছু বলেনি।কিন্তু তিনি কি জানে তার ওই হাসিতে কেউ একজন খুন হয়ে ছিল।ইসস্ কি সুন্দর সেই হাসি,নাকি আমার কাছে সুন্দর লাগে?কি জানি জানা নেই তা। হয়তো ভালোবাসার মানুষের সব কিছুই সুন্দর লাগে।এমন না তিনি খুব বেশি সুন্দর বা ক্রাশ বয়,এমন কিছুই ছিল না।আমার তিনি বেশি ফর্সা ও না কিন্তু তাও আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি।
তার হাসিতে তার সম্মতি ছিল।তিনি বলে ছিল রোজ ক্লাস শেষে তার কাছে পড়তে যেতে যে দিন পারবে পড়বে।ওহ বলতে ভুলে গেছি আমার তিনি খুব ভালো ছাত্র, টপরার বয়।পরের দিন ক্লাস শেষে চলে গেলাম তার কাছে সেই জাগা যেখানে তিনি থাকে,একা একা যেখানে পড়ে।তিনি আমক খুব সুন্দর করে পড়া বুঝিয়ে দিলেন কিন্তু আমি কতটা বুঝেছি জানি না।বেশির ভাগ সময়ই ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।এই ছেলেটা বোঝে না কেন আমি তার কাছে পড়তে না তার সাথে সময় কাটাতে এসেছি।কিন্তু এই ছেলে মনে হয় পণ করেছে না বোঝার।এতো পড়ে কিভাবে আল্লাহ।সারা জীবন কি করে যে কাটাবো এই পড়ুয়া ছেলের সাথে!
সেই থেকে শুরু তার কাছে পড়া।আগে ২/৩ দিন পড়ালেও এখন রোজ পড়ায়।ক্লাস শেষে বেশির ভাগ সময় আমি তার সাথেই কাটাই।ভালো লাগে খুব বেশি ভালো লাগে। তিনিও কিছু বলে না।তার কাছে পড়ার পর বেশ ভালই মার্কস আসে।তিনি শুধু কেমিস্ট্রি পড়ায় না যখন যেটা সমস্যা হয় বুঝিয়ে দেয় শুধু পড়ার ক্ষেত্রে না সব বিষয়ে।তিনি খুবই ভালো মানুষ,তার মনটা অনক বড়।
যে ছেলেটা একা থাকতো বর্তমানে তার সাথে বেশির ভাগ সময় এখন আমি দেখা যায়।এই নিয়ে ক্যাম্পাসে ইদানিং অনক কথাও শুনছি।কিন্তু আমার তাতে কিছু যায় আসে না কারণ সত্যি এটাই যে আমি তাকে খুব খুব বেশি ভালোবাসি।তাকে জানার আগে যতটা না ভালোবেসেছি তার থেকে অনক বেশি এখন ভালোবাসি আর দিন দিন তার প্রতি আমার ভালোবাসা বেড়ে চলছে।
বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করছি তিনি আমার সাথে বেশি কথা বলে না এড়িয়ে চলে।আগের মতো সময় দেয় না পড়াতেও চায় না সারা কখন ব্যস্ত থাকার অজুহাত দেয়।কি হলো তার?জানি না কিছু জানি না।তার সাথে যে কথা বলবো তাও পারছি না দেখা হলে এড়িয়ে যায়। নাহ্,এভাবে র না আমার তার সাথে কথা বলতে হবে।জানতে হবে কেন তিনি এমন করছে?
পরের দিন প্রথমে গিয়ে ওনাকে খুঁজতে শুরু করলাম পেয়েও গেলাম।তার কিছু বন্ধুদের সাথে দাড়িয়ে কথা বলে।আমি তাদের দিকে এগোতে লাগলাম।আজ জেনে ছাড়বো কি হয়েছে?তার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললাম,
____আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।
তিনি কিছু কখন আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।তারপর বললো,
____হ্যাঁ, বল কি বলবে।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।এভাবে সকলের সামনে কিভাবে বলবো ওনি কি বুঝতে পারছে না আমার সমস্যা?কই এমন তো আগে ছিল না ওনি।নিজেকে কোন মতে সামলিয়ে নিয়ে বললাম,
____আসলে একটু একা কথা বলতে চাইছিলাম।
কথাটা বলে মাথা নিচু করে ফেললাম।কেমন যেন লাগছিল।ওনার বন্ধুদের মধ্যে একজন বললো,
____আচ্ছা,তোরা কথা বল আমরা আছি পাশে।
বলে চলে গেলেন।
আমি তখনও ঠায় দাড়িয়ে ভাবছিলাম কিভাবে শুরু করবো। আর সে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল কিছু শোনার আশায়।তাই ভনিতা ছাড়াই বলে ফেললাম,
____আপনি এমন কোন করেছেন?
তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছিল কি বলতে চাচ্ছি।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে না বুঝতে পেরে জিজ্ঞাসা কলেন,
____কি করেছি আমি?
____জানেন না কী করেছেন?
____না।
আবার আমার খুব রাগ হলো।এতো দিন অবহেলা করে এখন না বোঝার ভান করে যাচ্ছে।কিছুটা রাগ নিয়ে বললাম,
____আপনি আমি দিনের পর দিন অবহেলা করছেন,ঠিক মতো কথা বলেন না,এড়িয়ে চলেন।এমন কি আমাকে দেখেও না দেখার মতো করেন।কেন করেছেন এমন?কি করেছি আমি?আমি কি কোনো ভুল করেছি?কষ্ট দিয়েছি আপনাকে?প্লীজ বলুন না কেন করেছেন এমন?আমার ভালো লাগছে না কষ্ট হচ্ছে খুব।
একনাগারে কথা গুলো বলে নিশ্বাস নিলাম।সত্যি বলতে খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু কাদতে পারছি না।ওনি হয়তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার মুখপানে কিন্তু আমি দেখতে পারছি না কারণ আমি এখন নিচের দিকে মুখ করে আছি ওনার দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না।কিছু কখন চুপ থেকে ওনি বললেন,
____কি হয়েছে তোমার?এসব কি বলছো কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
সত্যিই কি ওনি বুঝতে পারছে না আমি কি বলতে চাচ্ছি?একটা মেয়ে হয়ে আর কত ভাবে বুঝতে হবে ওনাকে যে ঠিক কতটা চাই আমি ওনাকে।ঠিক আছে,ওনি যখন চাচ্ছে সেভাবে e হবে আমি ওনাকে বলবো আমার মনের কথা।
____কি হয়েছে বুঝতে পারছেন না?পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি আপনার জন্য।সেই শুরু থেকে আপনাকে ভালোবাসি আমি।আপনার একটু কাছে থাকার জন্য আপনার সাথে সময় কাটানোর জন্য আপনার কাছে পড়তে আসা।আপনি কি সত্যিই বোঝেন না?
____কি বলছো এসব তুমি?আমি তোমাকে ওভাবে কখনো দেখেনি।আর তাছাড়া তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছো।আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করব না।এখন তো দেখছি সবাই ঠিকই বলেছে তোমার সম্পর্কে।দেখো মাহনূর এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়ালেখায় মন দাও। আর তা ভালো না লাগলে তোমার যা ইচ্ছা করো কিন্তু দয়া করে আমার সময় নষ্ট করো না।
কিসব বলেছেন উনি?এই কি আমার সে?নাহ্!কখনো না উনি এমন হতে পারে না নিশ্চয়ই আমার সাথে মজা করছে।
____এভাবে বলছেন কেন?আপনি মজা করেছেন তাই না?দেখুন আমি কিন্তু কষ্ট পাচ্ছি এমন মজা করবেন না প্লীজ।
____আঃ!তুমি কি বুঝতে পারছো না?আমাকে তুমি বিরক্ত করছো।বুঝতে পেরেছো?বিরক্ত করছো খুব।তোমাকে সহ্য হচ্ছে না আমার।তুমি জানতে আমি মিথ্যা কতটা ঘৃনা করি,আগে না হয় জানতে না কিন্তু পরে তো যেনেছিলে তখন সব বলতে পারতে কিন্তু তুমি তা করনি।উল্টো দিনের পর দিন নাটক করে গেছো।
আবার আমার কান্না পেয়ে গেলো।কান্নারত চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
____ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দিন।আমি মানছি মিথ্যা বলেছি কিন্তু কোনো বলেছি?আপনার একটু কাছে থাকার জন্য,আপনাকে ভালোবাসি বলে।
____সত্যিটা বলে দিলেই সব ঠিক হয়ে যেতো। আমাদের মধ্যে দূরত্ব আসতো না।তুমি জানো আমি তোমাকে কতো বিশ্বাস করে ছিলাম।কিন্তু এখন তোমাকে সহ্য হয় না।আমাকে ভুলে যাও আমি তোমার মত মেয়েকে কখনো ভালোবাসবো না।পরলে তোমার মুখ আমাকে র দেখাবে না।তোমারক্ক জন্য পুরো ক্যাম্পাসে আমার নাম খারাপ হয়েছে।তোমাকে আমকে নিয়ে নানা কথা বলছে।আমার এতো দিনের মান সন্মান নষ্ট করে দিয়েছো তুমি।প্রত্যেকে আমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে তাকে যানো?যানো না।কিভাবে জানবে তুমি?তুমিতো তোমার দুনিয়াতে বিভোর থাকো।তোমার কি মনে হয় তোমার আমি বলা মিথ্যা কথা,ধোঁকা দেয়া এগুলো আজ জানতে পেরেছি?নাহ্!এগুলো আমি সেদিন ক্লাস শেষে জেনেছি যেদিন তুমি আর তোমার বান্ধবীরা মিলে কথা বলেছিলে।আমি তোমাকে ঘৃনা করি।এই যাও তো তোমাকে সহ্য হচ্ছে না,যাও।

আমি নির্বাক,নিরব।কি বলবো ,কি করবো জানি না আর জানতেও চাই না।এই মানুষটা আমার ভালোবাসা না।এই মানুষটাকে আমি ভালোবাসিনি। এ অন্য কেউ, আমার তিনি না। আমার তিনি কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতেই পারে না।নাহ্,কখনো পারে না।এতো ঘৃনা?যে সহ্য করতে পারছে না?
নিরবে অস্রু বিসর্জন দিচ্ছি।আর কিছু বলতে পারলাম না চলে আসলাম ওখান থেকে।
এরপরের দিন গুলো কিভাবে কেটেছে তা আমি আর আমার আল্লাহ জানে।কিন্তু ওনার সামনে আর যায়নি।জনিও না কিছু।প্রিয় মানুষটার ঘৃনা নিয়ে বেঁচে থাকা যে কতো কষ্টের তা প্রতি নিয়ত বুঝতে পেরেছি। ট্রান্সফার হয়ে অন্য শহরে চলে এলাম।শেষবার দেখাও হলো না।জানি না কেমন আছে?থাক না যেমন থাকতে চেয়েছে তেমন।ভালোবেসে যে পেতে হবে তার কোনো মানে নেই। দূর থেকেও ভালোবাসা যায়।আমি না হয় তাকে দূর থেকে ভালোবেসে যাবো।

২ বছর পর,

#সবিনয়ে নিবেদন
#পার্ট:০১
#বিনতে মাহনূর

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here