সবিনয়ে_নিবেদন পর্ব ২+৩

#সবিনয়ে নিবেদন
#পার্ট:০২ + ০৩
#মাহনূর

চলে গেলো জীবন থেকে দু দুটো বসন্ত।জীবন করো জন্য অপেক্ষা করে না,তেমনি আমার জীবনও অপেক্ষা করেনি।সময়ের স্রোতের সাথে ঠিকই চলেছে।সব ভুলে আগে বাড়লেও কিছু না পাওয়ার কষ্ট,গ্লানি,হারানো স্মৃতি রয়ে যায় যা দিন শেষে রাতের আঁধারে কুরে কুরে খায়।আজও তাকে আমি ভুলিনি।আমার সে হারিশ আহনাফ।কেমন আছে সে? নিশ্চই ভালো

ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে রাত শেষ হয়ে একটি নতুন দিনের সূচনা হয় যা আমাদের জীবনে নতুন কিছু নিয়ে আসে।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়েতে যাচ্ছি আজ।তাকে ছেড়ে যখন চলে আসলাম তখন তোয়না আমাকে সামলিয়ে ছিল।বোনের থেকে কম কিছু না ও আমার কাছে। বড্ডো ভালোবাসি মেয়েটাকে।
বিয়ের ৭ দিন আগে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যেতে পারিনি।তার জন্য মেয়েটা ভীষন রেগে আছে।পুরনো কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম বুঝতে পারিনি।বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
তোয়ানার বাবা ওদের শহরের এমপি।একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে বুঝতে পারছি বিয়ের আয়োজন খুব ধুমধাম ভাবে করা হচ্ছে। এবাড়ির সকলে খুব ভালো আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমার আর একটা পরিবার।বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই সকলে মিলে বোকা দেয়া শুরু করে দিলো। দেয়ারই কথা যেখানে ৭ দিন আগে আসার কথা সেখানে বিয়ের ২ দিন আগে আসলে তো এমনটা হবে।সকলকে বুঝতে পারলেও বিয়ের কনেকে বুঝতে পারলাম না।রুমে গিয়ে জড়িয়ে ধরে অনেক গুলো সরি বললাম তোয়ানাকে।শেষে ম্যাডামের রাগ ভেঙেছে।আজ মেহেদী অনুষ্ঠান কাল হলুদ পরের দিন বিয়ে।বাড়ির সকল মেয়েরা মেহেদী দিতে বসে পড়েছে আমি তোয়ানার মেহেদী পরানো দেখছি। বরাবরই এসব মেহেদীর ওপর আমার আগ্রহ কম আর যাও ছিল তা ২ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। তোয়ানা বেডে কম বেশি সকলে বলেছে দিতে কিন্তু দিনই।মেহেদীর অনুষ্ঠান ভালোভাবে সম্পূর্ন হয়েছে।রাতে কোনো রকম খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।তখনও জানি না সামনের দিন আমার জন্য কত বড় অপেক্ষা করছে।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সকলে মিলে হলুদের আয়োজনে লেগে পড়লাম।হলুদের অনুষ্ঠান খুবই বড় করে করা হয়েছে। প্রায় সকলে হলুদ শাড়ি পড়েছে,আমিও পড়েছি। তোয়ানাকে সবুজ হলুদ মিশ্রণের শাড়ি পরানো হয়েছে।কিছু ভীষন সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।বিয়ের আগে বুঝি এমন করে মেয়েরা সুন্দর হয়?
এখানে অনককে আমি চিনি। তোয়ানার পরিবারের সকলের সাথে কম বেশি পরিচিত।বর্তমানে আমরা কিছু মেয়ে তোয়ানার পাশে বসে গল্প করেছি।ঠিক তখনই আমার চোখ পড়ে গেটের দিকে।আমার দুনিয়া যেন কিছু সময়ের জন্য থেমে গেল।কত দিন পর সেই কাঙ্ক্ষিত মুখ দেখতে পেলাম।আমার তিনি। কিন্তু উনি এখানে কি করেছে?কতক্ষণ ওনার মুখপানে তাকিয়ে ছিলাম জানা নেই,যখন হুস ফিরলো তখন দেখি তিনি ঠিক আমার সামনে আমারই মতো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।হয়তো উনিও আমাকে এখানে আশা করেনি যেমন আমি করিনি ওনাকে এখানে।তার ঠিক পাশে দাড়িয়ে আছে খুব সুন্দর একটা মেয়ে। রায়া, তোয়ানার মামার মেয়ে।রায়া যেমন সুন্দর দেখতে ঠিক তেমন ওর মনটা সুন্দর।কিন্তু ওরা দুজন একসাথে কেন?আমার ভাবনার মাঝে রায়া এসে তোয়ানাকে জড়িয়ে ধরে হলুদ লাগিয়ে দিলো।তখনও আমি তার পানে তাকিয়ে।এতদিনের তৃষ্ণার্থ চোখ দুটো ওনাকে দেখে বেহায়া হয়ে গেছে।রায়া এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।এই মেয়েটাকে খুব ভাল লাগে আমার।সাধারনত সুন্দরী মেয়েরা অহঙ্কারী হয় কিন্তু এই মেয়েটার মধ্যে অহঙ্কারের ছিটে ফোটাও নেই।রায়ার সাথে কুশলবিনিময়ের পর যখন রায়া বললো,
____এই যে এই হলো আমার হবু বর।এতদিন দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলে সবাই এখন দেখে নাও যতো পারো।
ও কথাটা যতো সহজে বলে দিল ততো সহজে আমি মেনে নিতে পারিনি তাই হয়তো অবাধ্য চোখের জল গুলো গড়িয়ে পরতে চাইছিল।কিন্তু না এমনটা করতে পারবো না আমি।এরকম যে হবে তা জানা ছিল তাই না?কতদিন আমার জন্য একা থাকবে?আর থাকবেই বা কেন?উনি তো আমাকে ভালোবাসে না আর না আমাকে সহ্য করতে পারে।তিনি আমাকে ঘৃনা করে।নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত করে ওনার দিকে তাকিয়ে শুধু একটু হাসি দিলাম।বেদনার হাসি।এরপর আর ওনার দিকে চোখ তুলে তাকাইনি আর না ওনার আশেপাশে থেকেছি।ভয় হয় ওনার সামনে গেলে যদি অনুভূতিরা আবার জেগে ওঠে।অনুষ্ঠানের বাকি সময় একভাবে পালিয়ে পালিয়ে ছিলাম।চাই না ওনার সামনে যেতে।তিনি আমার না,তিনি এখন অন্য কারো।এই সত্যিটা মেনে নিতে হবে আমাকে।আমি কারো স্বপ্ন ভাঙতে পারবো না,কখনো না।
অনুষ্ঠান শেষে রুম থেকে আর বের হইনি।রাতে তোয়ানার রুমে আমরা সকলে আড্ডা দিয়েছি।খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরে তোয়ানাদের বাগানে হাঁটতে গেলাম।এই সময় খুব কম মানুষ উঠেছে।বাড়ির বড়রা বেডে তেমন কেউ নেই,কারণ কাল অনেক রাত পর্যন্ত সকলে আড্ডা দিয়েছে।সুতরাং এতো ভাবার কিছু নেই।কিন্তু কে জানতো আমার সাথে বিপরীত কিছু হবে।বাগানে গিয়ে দেখি তিনি দাড়িয়ে আছে।আমি যাওয়ার সাথে সাথে তার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। ভয়ঙ্কর সেই অনুভূতি।কিছু না বলে চলে আসতে নিলে তিনি “মাহনূর”বলে ডাক দিল।কতদিন পর তার মুখে নিজের নাম শুনলাম।এই একজন ব্যক্তি যিনি আমায় মাহনূর বলে ডাকতো অন্যরা নূর বলেই ডাকে।এই ২ বছর কেউ মাহনূর বলে ডাকেনি।কান্না গুলো সব গলায় আসে বেধে যাচ্ছে।খুব কি ক্ষতি হতো সেদিন আমাকে মেনে নিলে?জানা নেই আর জানতেও চাই না।তিনি এখন রায়ার।নিজেকে শক্ত করে পিছনে ঘুরে দাড়ালাম,ততক্ষণে তিনিও অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছেন। সৌজন্যতা মূলক একটা হাসি দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বললাম,
____কেমন আছেন?
বিনিময়ে তিনিও একটু হাসি দিয়ে বললো,
____আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো মাহনূর?
____জ্বি আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।
কিছু সময় দুজনের মাঝে পিনপতন নিরবতা গেলো। এ যেন ঝড় আসার আগের নিরবতা।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি আর তিনি ঠিক আমার দিকে যেনো কিছু খুঁজেছে কিন্তু পাচ্ছে না।বুকের ভিতর ডিপ ডিপ করেছে।ভয় করেছে,হাত – পা অনবরত কাছে।এই ভয়াবহ নিরবতা ভেঙে তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন,
____সেদিনের পর কথায় চলে গিয়েছিলে মাহনূর?
আমাকে নতুন করে ভেঙে দেয়ার জন্য তার এই একটা কথা যথেষ্ট ছিল।চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। অশ্রুসিক্ত চোখে ওনার পানে তাকিয়ে বললাম,
____আমার যোগ্য স্থানে।
কথাটি বলে আর একমুহূর্ত দাড়ালাম না সেখানে।চলে আসলাম ভিতরে।ভিতর থেকে অনেক আগে ভেঙে গিয়ে ছিলাম আর আজ বাইরে থেকেও ভেঙে পড়লাম।অনক কষ্ট চোখের পানি ধরে রেখে ছিলাম, ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে কেঁদে দিলাম।কি দোষ ছিল আমার?শুধু একটু ভালোবাসা চেয়ে ছিলাম এটাই আমার দোষ?নাকি ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মিথ্যা বলেছি এটা?কেন আমাকেই শুধু কষ্ট পেতে হয়?ঘুচিয়ে নিয়ে ছিলাম তো নিজেকে।চলে এসে ছিলাম দূরে তাহলে কেন আবার সে আসলো?কেন? হু হু করে কেঁদে দিলাম।মনের মধ্যে জমানো কষ্ট গুলো চোখের পানির সাথে ভাসিয়ে দিচ্ছি।

ওয়াশরুম থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে বের হয়ে আসলাম।কাউকে কিছু বললাম না আমি চাই না বিয়েতে কোনো সমস্যা হোক। তোয়ানা অবশ্য অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছে কি হয়েছে মন খারাপ কেন?আমি এটা ওটা বলে কাটিয়ে দিয়েছি।নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি।আমার এই চেষ্টা সফল হল আমার আর একজন প্রিয় মানুষের জন্য। রাদ ভাইয়া। তোয়ানার বড় ভাই।এই মানুষটা সবার মুখে হাসি আনতে পারে,আমার সান্তা।এই লোক নিজে হাসিখুশি থাকে আর আশেপাশের সকলকে খুশি রাখে।রাদ ভাইয়া ঢাকা জব করে আর জবের জন্য তার আসতে এতো দেরি হলো নাহলে বোনের বিয়েতে ভাই থাকে না এমন কথা কেউ শুনেছে কিনা জানা নেই।রাদ ভাইয়া আসার সাথে সাথে বাড়িটা যেন প্রাণ ফিরে পেল।এখন সত্যিকার অর্থে বিয়ে বাড়ি মনে হচ্ছে।সবার সাথে কথা বলে রাদ ভাইয়া আমার কাছে এসে পুরো এক বক্স চকোলেট ধরিয়ে দিল।চকোলেট দেখে আমি চোখ চিকচিক করে উঠলো।এই লোক পরেও বটে ঠিক মনে রেখেছে।খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললাম,
____তোমার মনে ছিল?
____আমার পাগলির কথা কি করে ভুলি?
খুশি হয়ে বললাম,
____এত্তোগুলো ভালোবাসি তোমায় ভাইয়া।তুমি খুব ভালো।
ভাইয়া হেসে বললো,
____পাগলী একটা।
আমাদের কথা শুনে সবাই হেসে দিল শুধু একজন বাদে।তখনও জানি না এই জন্য আমার জীবনে ঝড় উঠতে চলেছে।
দূরে কেউ আমাদের দেখে হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে নিজের রাগ সংযত করে বলছিলো,
____খুব হাসি পাচ্ছে না জান?হেসে নাও কারণ এরপর যা হবে তারপর আর তুমি হাসতে চাইবে না।
বলে বাঁকা হাসি দিয়ে চলে গেলো।

চলবে…….

#সবিনয়ে নিবেদন
#পার্ট:০৩
#বিনতে মাহনূর

জীবনে সবকিছু আমরা নিজেদের মন মতো পাই না,ঠিক তেমনই আমিও তাকে পাইনি।রাদ ভাইয়া আসায় দুঃখ গুলো কিছু সময়ের জন্য ভুলে গেছিলাম,কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাম আমার জীবনে দুঃখ আমার একমাত্র সঙ্গী।ছোট থেকে বাবা – মায়ের সঙ্গো পাইনি।তারা নিজেরা ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত ছিল।তাদের যে একটা মেয়ে আছে হয়তো ভুলে যেতো।ছোটবেলা আমার একমাত্র সাথী ছিল আমার নানিজান।তিনিও একদিন আমাকে একা ছেড়ে চলে গেলো। তোয়ানার সাথে আমার পরিচয় ছোট থেকে। পরে বাবার ট্রান্সফার হয়ে চলে আসে আর আমাকে নানিজানের কাছে দিয়ে যায় কারণ হিসাবে দেখানো হয় তারা দুজন কাজে থাকবে আমাকে দেখার মানুষ থাকবে না।ছোট বাচ্চাটাকে ছেড়ে চলে গেলো তারা স্বার্থপরের মতো।প্রথম প্রথম কান্না করতাম কষ্ট হতো কিন্তু পরে বুঝতে শিখে গেলাম তারা আসবে না কান্না করে কোনো লাভ হবে না।বড় হতে হতে বাবা – মার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেলাম। নানিজানই আমার দুনিয়া ছিল।বাবা – মা প্রতিমাসে টাকা পাঠিয়ে দিতো আর মাঝে মাঝে দেখা করতে আসতো।তাও আমি খুশি ছিলাম আমার কথা মনে রেখেছে এই বা কম কি।কিন্তু নানিজান চলে যাওয়ার পর একা হয়ে গেছিলাম ঠিক তখনই তিনি আমার জীবনে আসলো।ঝড়ের মতো এসে ঝড়ের মতো চলেও গেলো।রেখে গেলো আমার ভাঙ্গা মন।তারপর আমার পাশে আসে দাড়ালো তোয়ানা আর রাদ ভাইয়া।ওরা দুজন আমার পাশে এমন ভাবে ছিল যেন ওদের দুজনের জান আমার মধ্যে।এই পরিবারটি ও আমার জন্য অনেক করেছে।যতটা না নিজের বাবা – মার কাছ থেকে পেয়েছি তার চেয়ে এদের কাছ থেকে বেশি পেয়েছি।আর তোয়ানা তো আমার বোন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমার সব কিছুর সমাধান,সেই মেয়েটার আজ বিয়ে।কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু নিয়তি এটাই।
বিয়ের জন্য কনেকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে চলে এসেছি আমরা।বর পক্ষ আগে থেকে এখানে উপস্থিত রয়েছে।এই এতক্ষণে আমি আহনাফের সামনে একবারও যায়নি।কিন্তু এখানে এসে ওনার সামনে পরতে হলো কেমন করে তাকিয়ে আছে।আমাকে দেখে কিছু বলতে যাবে তার আগে রাদ ভাইয়া চলে আসলো।আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
____কি হলো এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?চল।
বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।আমিও আর কিছু বললাম না,মনে মনে রাদ ভাইয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলাম।ঠিক সময়ে এসে আমাকে বাঁচিয়ে দিল। তোয়ানার কাছে গিয়ে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করলাম।বাকিটা সময় আমি রাদ ভাইয়ার সাথে ছিলাম।ভাইয়া আমাকে একমুহুর্তের জন্য মন খারাপ করতে দেয়নি।সারাক্ষণ হাসিয়েছে।লোকটা পরেও বটে।এর মধ্যে বেশ কবার আহনাফের সাথে চোখাচোখি হয়েছে আমার।কিন্তু ওনাকে দেখে জান যায়যায় অবস্থা।এতো রেগে আছে কেন লোকটা?আমি আর ওদিকে মন দিলাম না অন্যের নিজিসে নজর দেয়া পাপ।

বেশ কিছুক্ষণ ধরে আহনাফকে দেখছি না,কথায় গেলো উনি?অনেক খোঁজার পরেও ওনাকে দেখলাম না।হঠাৎ হাতের ফোনটা বেজে উঠলো।দেখলাম অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।প্রথমবার ধরলাম না দ্বিতীয়বার ধরলাম।ওপাশ থেকে কি বলছে তা বোঝা যাচ্ছে না কারন গান বাজনা চলছে।তাই একটু বাইরে গিয়ে কথা বলতে ওপাশ থেকে বললো,
____খুব বার বেড়েছে না?চেয়ে ছিলাম সময় দিতে কিন্তু তোমার তা ভালো লাগেনি।so ready baby?
আমি হতম্ব।কে আর আমাকেই বা এসব কেন বলেছে লোকটা?কি চাই?প্রশ্নগুলো মনে না রেখে করে ফেললাম,
____কে বলেছেন আপনি?আর এসব কেমন ব্যবহার?
____আমি কে তা জানার জন্য সারা জীবন পাবে সোনা।
তারপর কি হলো আমি জনি না।যখন চোখ খুলে তাকালাম তীক্ষ্ণ আলো এসে চোখে পরলো।ধীরে ধীরে মনে করার চেষ্টা করলাম কি হয়েছিল আমার সাথে।কিছুক্ষণের মধ্যে মনেও পরে গেলো।আমিতো বিয়েতে ছিলাম এখনে কি করে আসলাম?আর এটাই বা কোথায়?কে নিয়ে এসেছে এখানে। কারো কথায় বাস্তবে ফিরে আসলাম।
____নাও অনেক ঘুমিয়েছো এখন আর ঘুমাতে হবে না। সাইনটা করে দিয়ে যতো ইচ্ছা ঘুম দিও।এমনিতে অনেক লেট হয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি করো।

আমি মানুষটার দিকে মস্তো বড় হা করে তাকিয়ে আছি। এ আমি কাকে দেখছি।উনি এখানে কি করে আর সাইন?কিসের সাইনের কথা বলছেন উনি।আমাকে হা করে থাকতে দেখে আহনাফ জোরে ধমক দিয়ে উঠলেন।ওনার চোখগুলো লাল হয়ে আছে, চুল এলোমেলো তারওপর এমন ভাবে ধমক দেয়া। সত্যি বলতে এর আগে কখনো ওনাকে এভাবে দেখিনি।ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি।কি হয়েছে ওনার?এভাবে তো কখনো করে না তাহলে আজ কি হলো?আমার ভাবনার মাঝে উনি আবার সাইন করতে বললেন।এবার আর চুপ না থেকে বললাম,
____কিসের কাগজ এটা?
তিনি স্বাভাবিক ভাবে বললেন,
____বিয়ের।
আশ্চর্য,বিয়ে!কিসের বিয়ে?আর আমি কেন সাইন করবো?কি বলছে উনি?হচ্ছে কি এখানে?অবাক হয়ে বললাম,
____কি!বিয়ের? কার বিয়ে?কিসের বিয়ে?আমি কেন সাইন করবো?
____কারণ বিয়েটা তোমার আমার।তাই আমার একার সাইনে তো আর বিয়ে সম্ভব না, সেহেতু তোমারও সাইন করতে হবে।আর ড্রামা না করে সাইন করো।
ওনার কথা শুনে রাগে,দুঃখে কান্না পেয়ে গেলো।রাগে চিৎকার করে বললাম,
____আপনার কি সব মজা মনে হয়?বিয়ে!তাও আপনার আর আমার!নিজেকে কি মনে করেন আপনি?যখন ইচ্ছা হবে দূরে সরিয়ে দিবেন আবার যখন ইচ্ছা হবে কাছে আসবেন?সব কি এতো সহজ?আর রায়া?ওর কি দোষ?ওর সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।মেয়েটা কতো সপ্ন দেখেছে আপনাকে নিয়ে এভাবে ভেঙে দিতে পারেন না আপনি।কেন করেছেন এসব আপনি?প্লীজ আমাকে যেতে দিন।
বলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালে উনি আমার হাত টেনে আবার বসিয়ে দেয় এবং কোনো কথা না বলে ফোনে কিছু একটা করে আমার কাছে ফোনটা দিয়ে বললেন,
____কথা বলো।
ওনার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে ফোন হাতে নিয়ে হ্যালো বলতে ওপাশ থেকে যা শুনলাম তাতে আমি স্থির হয়ে বসে রইলাম।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে আমার ।এত্তবড় ধোঁকা?

পাথরের মতো বসে থেকে বিয়েটা করে নিলাম।পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলাম আমি আর আহনাফ।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here