সমাপ্তির প্রহরে সন্ধি পর্ব -২৬+২৭

#সমাপ্তির_প্রহরে_সন্ধি
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ২৬

কৃষ্ণ গৌড় কালো রঙে নিমজ্জিত গগনচুম্বী। গগনের কোথাও স্নিগ্ধ চাঁদের আলোর দেখা নেই আজ। থেকে থেকে ভূতুম পেঁচার অদ্ভুত সুরের কন্ঠে শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠছে। হুট করেই এমন সুর কর্ণকুহরে সাময়িক ভাবে ধাক্কা খাবে। বক্ষঃস্পন্দন ভয়ে কেঁপে উঠবে,হার্টবিট আওয়াজে গেয়ে উঠবে ধক ধক ধক। শীতল ঠান্ডা হাওয়া ক্ষণেক্ষণে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে কপালের কৃষ্ণ কালো কেশগুলো এলোমেলো করে দিয়ে। শীতল হাওয়ায় গা ভিজিয়ে তিমির রাতের আকাশে চাঁদের আলো খুঁজে চলেছে নদী। তাঁকে দেখলে কেউ তাঁর পরিস্থিতি বলতে পারবে না। বুঝতে পারবে না তাঁর মনে কি চলছে। তাঁর অবস্থানের বিষয়ে ধারণাও দিতে পারবে না। কে বলবে সন্ধ্যারাতে তাঁকে ঘিরে কত কিছু হলো। তাঁর বিয়ের বিষয়ে আলোচনা হলো,সে অসুস্থ হলো,তাঁর ভালোবাসার মানুষটা অভিমান করে চলেও গেলো। আর সে নীরব মনের সাথে বিক্ষোভ মিছিলে নেমে যুদ্ধ করলো। অবশেষে মনের নয় নদীর জয় হয়েছে। অকস্মাৎ কারো পায়ের গতি কর্ণকুহরে এলো। সেই পায়ের গতি তাঁর নিকটতমে এগিয়ে আসছে। পায়ের আওয়াজ যতো গাঢ় হলো নদীর ঠোঁটের কোণায় হাসি প্রসারিত হতে রইলো ঠিক ততোই। হঠাৎ পায়ের আওয়াজ থেমে গেলো। নদী পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার উদ্দেশ্যে বললো–

_ সামনে আসো ভাবি,আমি তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম।

নদীর এমন প্রশ্নে হয়তো মিম প্রস্তুত ছিলো না,তাই অপ্রস্তুত হয়ে চলে যেতে নিলো। কিন্তু মিমের হাতটা নদী ধরে ফেললো।

_ কিছু না বলেই চলে যাচ্ছো ভাবি,এটা কিন্তু ঠিক না।

_ না মানে আসলে।

_ ক্ষমা চাইতে এসেছো ভাবি? ক্ষমা চেয়ে আমায় লজ্জা দিও না। তুমি যে অনুতপ্ত তখন তোমার কান্না দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি। ভেবো না আমি তোমায় ইচ্ছে করে বাঁচিয়ে মহৎকর্ম করে ফেলেছি। আসলে ভাবি আমি তোমার সাথে শত্রুতার সূত্রপাত করতে চাইছি না। তোমার মায়ের সাথে আমি কখনোই খারাপ আচরণ করিনি। তোমার মা কেন আমি কারো সাথেই খারাপ আচরণ করি না? ভাবি তুমি ইচ্ছে করে আমায় কষ্ট দিয়ে কি বা করতে পারবে। আমি যদি তোমার নামটা সবার সামনে বলে দিতাম,তুমি অপমানিত হতে,ছোট হতে পরিবারের সামনে সাথে বাহিরের কারো কাছে। ভাবি আজহোক বা কাল ভাইয়া হয়তো তোমায় ক্ষমা করে দিতো,কিন্তু আমার বাবা-মা কখনোই দিতো না। আমার বাবা সারাজীবন এটা ভেবে আফসোস করতো– যাকে সে নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে,সে কিনা তাঁর মেয়ের ক্ষতি করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। আমার ভাই আমায় খুব ভালোবাসে। কিন্তু যখন সে তোমায় সাথে আমায় নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যেতো, তখন নিজেকে সবার সামনে ছোট ভাবতো। মনে মনে ভাবতো তাঁকে আমি ইচ্ছে করে সবার সামনে ছোট করেছি,তাঁর ভাবার কারণ! তাঁর পছন্দ তুমি, বাবা-মায়ের নয়। তাই তোমার সাথে ভাইয়ার সম্মানও জড়িয়ে আছে। কোথাও না কোথাও ভাইয়া আমায় একটু খারাপও ভাবতো। সে ভাবতো আমি চাইলেই তোমার নামটা লুকিয়ে পরে তাঁকে বলে সাবধান করতে পারতাম এই বিষয়টা। তিনি তোমায় শাসন করতো। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ভুলবোঝাবুঝির যেমন শেষ নেই,তেমনিভাবে সব ঠিক হতেও খুব সময়ের দরকার নেই। তোমার নামটা বলে দিলে,তুমি সবার মুখের উপর থাকতে। তোমাকে কথা শুনতে হতো অনেক! ভাইয়া হয়তো রাগ হয়ে তোমার গায়ে হাত তুলতো। কিন্তু সবার অগোচরে ঠিক তোমার শরীরে মলম লাগিয়ে দিতো। কারণ ওই যে জীবন সঙ্গী, ভালোবাসার মানুষ। কিন্তু আমার উপর তুমি ক্ষেপে যেতে আরো। কাল আরো বড় অন্যায় করতে,এভাবে দিনের পর দিন তোমার সাথে আমার একটা যুদ্ধ চলতো। কি দরকার বলো এমন সুন্দর মিষ্টি একটা সম্পর্ক চিপড়ে তেতো করার। তাই আজ তোমার নামটা আমি সবার সামনে নিলাম না। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন ভুল করলে যে কিছু বলবো না,তাঁর গ্যারান্টি কিন্তু দিতে পারছি না এখন। তাই সাবধান। ছোট চাচির কথা মতো না চলে, একজন আদর্শ স্ত্রী, ভাবি, পুত্রবধূ হও।দেখবে পুরো পরিবার তোমায় মাথায় তুলে নাচবে। এবার যা-ও ভাইয়া চলে আসতে পারে যখন তখন।

একদমে কথাগুলো শেষ করে আবারও দূর আকাশের নিকট তাকালাম। গোপন করলাম ভেতরের গ্লানিবোধটুকু। হঠাৎ করেই আমার পিঠে কারো নোনাধরা বয়ে যেতে রইলো। ভাবি আমায় জড়িয়ে নীরবে কেঁদে যাচ্ছে। ইসস মানুষ এতো কাঁদে কেন? কষ্ট পেলে কাঁদে,অতি সুখের সময় কাঁদে। কেন ভাই এতো কাঁদিস কেন? কেউ যদি নিজের ভুলের জন্য অনুশোচনায় ভোগেন, তাহলে তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। ক্ষমা করা মহৎ কাজ।

_ এভাবে কেঁদে না ভাবি,তোমার ফ্যা ফ্যা কাঁদার আওয়াজে দূরের পাখিগুলো ভয় পাবে।

আমার কথায় ভাবি হেঁসে দিলো। আমাকে তাঁর দিকে ফিরিয়ে হুট করেই আমার কপালে চুমু খেলো।

_ আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে নদী। আমার মায়ের কথা একদম শোনা উচিত হয়নি। আমি অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি। আমায় ক্ষমা করে দিস বোন।

_ বোনও বলছো ক্ষমাও চাইছো, এটা একদম যাচ্ছে না। তাঁর থেকে কাল আমার জন্য কিছু রান্না করে দিও। সব ভুল মাফ।

_ হা হা হা হা

_ এবার যা-ও ভাইয়া চলে আসবে।

_ ভাইয়া অনেক আগে থেকেই এখানে দাঁড়িয়ে আছে! যেটা তোর অগোচরে।

আকস্মিক ভাইয়ার আবির্ভাবের জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। তাই দু’জনেই চমকে পিছন ঘুরে তাকালাম। ভাইয়া আমার নিকট এগিয়ে এলো। আমার দুগাল তাঁর হাতের মাঝে নিয়ে বললো–

_ সবাই তোকে কষ্ট দেয়,আর তুই আব্বুর মতো সবটা নীরবে পরিদর্শন করে হেঁসে উড়িয়ে দিস। এতো ধৈর্য কোথা থেকে ক্রয় করেছিস আমাকেও সেই দোকানটা দেখিয়ে দিস। আমার ছোট্ট বোনটা বড় হয়ে গেছে। আমি রোজ তোর জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামেজে দোয়া করি! আজ তাহাজ্জুদ নামাজের পাটিতে দোয়া করবো। আমার বোনের সকল কষ্ট ধুলো হয়ে উড়ে যাক। আমাদের থেকে আড়ালে রাখা সকল কষ্ট বৃষ্টির পানিতে ধুয়েমুছে ছাফ হয়ে যাক।

সাগর বোনের কপালে চুমু বসিয়ে দিলো। মিমের উদ্দেশ্যে বললো।

_ আঘাত করলে পাল্টা আঘাত করতে এটা জানতাম আগে। কিন্তু আজ বোন শিখালো,আঘাতে পাল্টা আঘাত নয় ভালোবাসা দিতে হয়। ওই যে একমাত্র ভালোবাসা পারে সকল মুশকিলের সমাধান হতে। যে অন্যায় তুমি করেছো মিম! আমি হলে কখনোই তোমায় মাফ করতাম না। আজ থেকে মনে রেখো লোহা দিয়ে তুমি লোহা কাটবে,আর ভালোবাসা দিয়ে শত্রুতা দূর করবে। জীবন তখন সহজ হয়ে যাবে।

————

ভাইয়ারা চলে গেছে। আমি তখনো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। হিম শীতল পরশ ছুঁয়ে আমার অধর জোড়া বরফ তৈরি হয়েছে। সেখানে কেউ ছুঁয়ে দিলেই ঠান্ডায় হাত সরিয়ে নেবে। ঘড়ির কাঁটা তখন মধ্যে রাতে। এখনো আমার এই বেঈমান চোখে ঘুম নেই। তখন আমার ফোনটা বেজে উঠলো। আমি তো এটারি অপেক্ষায় ছিলাম। ফোনটা রিসিভ করে কানে তুললাম।

_ এখনো বেলকনিতে কী করিস?

_ কারো মোহগ্রস্ত থেকে নিজেকে আড়াল করি।

_ মোহগ্রস্ত থেকে না-হয় নিজেকে আড়াল করলি,কিন্তু তুই যে কারো অনলের মাঝে আবদ্ধ হয়ে আছিস।

_ সময়চক্র একদিন সব কিছুর থেকে মুক্তি দিবে আমায়।

_ যদি না দেয় তাহলে কি নিজে থেকেই মুক্তি নিবি?

_ চাইলেই সব কিছুর থেকে মুক্তি নেওয়া যায় না। আমি যুদ্ধের সৈনিক মাঠ থেকে পালিয়ে যাওয়া আমার কাজ না।

_ তুই যেদিকে ফিরিস সেদিকে কেন এতো দ্যুতি ছড়াচ্ছে?

_ কারো পল্লব জোড়া আমায় নিয়ে মিথ্যা স্বপ্ন দেখছে! তাই তাঁর ওই পল্লব মিথ্যা জৌলুশে নিজেকে নিমজ্জিত করছে।

_ তুই কি দিয়ে তৈরি বলবি?

_ আপনার মতো মাটি দিয়েই তো।

_ তাহলে আমি কেন তোর মতো নিজের কথায় অনড় থাকতে পারি না।

_ হা হা হা হা

_ হাসছিস কেন?

_ আপনার কথা শুনে

_ আমি হাসির কি বললাম

_ ওই যে আমি অনড়, আমার কথায়।

_ সত্যি কি-না সেটা বল

_ মিথ্যা বলেননি

_ এতো জোর কোথা থেকে আসে

_ ভেতর থেকে

_ আমাকেও সাহায্য কর

_ আমার খোঁজ নেওয়া বন্ধ করে দিন।

_ তাহলেই সব ঠিক হবে।

_ হবে

_ নিজেকে বড্ড চালাক মনে করিস তাই না।

_ নিজেকে আমি চালাক মনে কি না,আমি চালাক

_ আমি কোথায় আছি?

_ পরখ করছেন

_ মনে কর সেটাই

_ যদি বলতে পারি কি দিবেন।

_ তোকে ভুলে যেতে হবে,তোকে পাবার স্বপ্ন দেখা বন্ধ করতে হবে এটা ছাড়া সব বলতে পারিস।

_ ভয় পাচ্ছেন।

_ সত্যি বলতে তোর মনকে বড্ড ভয় পাই। শক্ত লোহার মতো মন কিনা,কখন না বলে বসে আমাকে ভুলে যান।

_ না সেটা বলবো না।

_ তাহলে?

_ ওতো রাতে বাহিরে থেকে নিজেকে প্রেমিক পুরুষ দাবি করার দরকার নেই। শিউলি গাছ মেনে নিয়েছে আপনি খাঁটি প্রেমিক পুরুষ। দরজা খুলছি ভেতরে চলে আসুন।

_ শিউলি গাছ মেনে নিলে কী হবে? যাঁর প্রেমিক পুরুষ হতে এতো কষ্ট সে তো চোখ তুলে চাইলোই না।

_ যদি চোখ তুলে না চাইতো, তাহলে বুঝলো কি করে শিউলি গাছের আড়ালে কার ছায়া?

_ বুঝলি কিভাবে আমি যে ফিরে যাইনি?

_ সিক্রেট, সেটা বলা নিষেধ।

_ কতোক্ষণব্যাপী এখানে আছি সেটা জিজ্ঞেস করবো না,কারণ যে না দেখেও আমার অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে পারে সে ওটাও পারবে। শুধু বলবো আমার সহ্য হচ্ছিলো না তোকে অন্য কেউ ছুঁয়ে দিক। তাই বেরিয়ে এসেছিলাম তখন।

_ তাঁকে ছুঁয়ে দেওয়ার সুযোগ আপনি করে দিয়েছেন, সেখানে আপনার রাগ করাটা বেমানান।

_ আমি,আমি কি করে—-

বর্ণ কিছুটা নিভে গেলো। ভাবনার চিত্তে প্রবেশ করে বুঝলো ঠিকই সেই সুযোগ করে দিয়েছিলো শাওনকে। সে চাইলেই নিজের অধিকার খাটাতে পারতো শাওনের সামনে। কিন্তু কই সে তো পালিয়ে এসেছে। দোষ তাহলে তাঁর ছিলো।

_ কি হলো ভাবনার অতলে ডুবে আছেন।এখন মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে লাভ নেই,সময়টা ফিরে আসবে না।

_ কিন্তু তোকে ফিরে পাবার সময়টা তো এখনো অবসিষ্ট আছে।

_ না নেই।

নদীর ছোট্ট না বর্ণের হৃদয়ে ঝড়ের তান্ডব শুরু হলো। নদীর না বলার পর নতুন করে বলার মতো কিছু খুঁজে পেলো না বর্ণ। এতোটা কঠিন কি করে হয় একটা মেয়ের মন। সব সময় তো জানতো মেয়েদের মন হয় তুলোর মতো নরম। আর নদীর ব্যপারটা যেন পুরাই উল্টো। এই মেয়েটা এমন কেন? সব কিছুতেই তাঁর এতো না আসে কেন?

_ আমার প্রতি তোর কোন অভিযোগ নেই?

_ সব তুলে রেখেছি,সময় এলে বলবো।

_ আজ বললে কি হবে?

_ আমি সময়ের অপেক্ষা করি। আপনার মতো মুখে যখন যা আসে তাই বলি না।

_ অভিযোগের ঝুপড়ি খুলবি কবে?

_ খুব তাড়াতাড়ি।

_ কবে? একটা নিদিষ্ট সময় বল।

_ সময়টা আপনি আমায় দিবেন।

_ আমি

_ হুম

_ কবে?

_ খুব জলদি

_ বিয়ে তাহলে ঠিক হয়েই গেছে

_ হ্যা

_ সামনের সপ্তাহে

_ নাহ

_ তাহলে?

_ এই সপ্তাহে

_ আজ রবিবার

_ শুক্রবার বিয়ে

_ এতোটা কঠিন না হলে কি খুব ক্ষতি হবে।

_ আপনি ঠান্ডায় কাঁপছেন ঘরে আসুন।

_ ঠোঁটের কাঁপন শুনতে পেলি বুকেরটা পেলি না।

_ মন শুনতে নারাজ

_ এভাবে আমায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে না দিলেও পারতিস।

_ আমি ঠেলে দেইনি,আপনি যেচেই পড়ছেন।

_ আমি তোকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই। কুঁড়েঘরে জীবন পার করতে চাই। একবার বল তুই আমার হবি,সব ভুলে আমি তোর হতে রাজি।

_ ভালো থাকাটা বড্ড দায়
চাইলেই কি ভালো থাকা যায়।

_ দিনের আলোয় ঠোঁটে মিথ্যা হাসি রেখে কি লাভ।যদি রাতের আঁধারে তোকে কেঁদে বুক ভাসাতে হয়। সেই মানুষটার সামনে নিজেকে পাথরের মতো শক্ত রেখে কি লাভ,যার অনুপস্থিতিতে তুই ভেঙে গুড়িয়ে পড়িস। আমি কিন্তু জানি তুই আমায় ভালোবাসিস।

_ আমি কখন অস্বীকার করেছি।

_ স্বীকারও তো করিসনি।

_ প্রয়োজন পরেনি।

_ আর কবে প্রয়োজন হবে,আমার যেদিন মৃত্যু হবে সেদিন।

_ কাপুরুষের মতো তো সারাজীবন মায়ের আঁচলে লুকিয়ে ছিলেন! নতুন করে কাপুরুষের তকমা লাগাবেন না গায়ে আত্মহত্যা করে।

_ অ বললে অজগর বুঝে যাস,শুধু মানতে চাস না। একবারও বলিনি আমি আত্মহত্যা করবো। কিন্তু ঠিক আমার মনের কথাটা বুঝে নিলি,তারপরও আমার কাছে ফিরে আসবি না। আমি তো তোর মতো শক্ত নই। নিজের চোখে নিজের ভালোবাসাকে অন্য কারো হতে দেখার স্বাধ শক্তি কোনটাই নেই আমার। তাই কথা দিতে পারছি না।

_ কারো জন্য জীবন থেমে থাকে না।

_ কিন্তু তাঁর জন্য রুদ্ধশ্বাস অনুসন্ধানে নেমেছি। যদি খুঁজে পাই,তাহলে একটা নতুন ভালোবাসার গল্প লিখবো! আর না পেলে একটা ভালোবাসার গল্প শুরু হওয়ার আগেই ইতি টানবো।

_ ভয় দেখাচ্ছেন।

_ ভয় আর তোকে। তাহলে তো মাছকে বলা হয়– তোকে আমি পানিতে চুবিয়ে মারবো। আধো মাছকে আমি মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছি না বেঁচে থাকার পথ দেখিয়ে দিচ্ছি তুই বল।

_ জানি না।

_ দরজা খোল আমি দাঁড়িয়ে আছি।

_ দরজা খোলা আছে ঢুকলেই হয়।

সদর দরজাটা আস্তে করে বর্ণ ধাক্কা দিলো,সাথে সাথেই দরজা খুলে গেলো। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে দু’জন। দু’জনার হাতেই ফোন। ফোনের মাঝে নিজেদের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। পিনপতন নীরবতায় ঘিরে আছে পুরো ড্রইংরুম। বর্ণ সামনে এগিয়ে এসে নিজেদের দূরুত্ব আরো কিছুটা কমিয়ে নিলো। হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। হাতের ফোনটা কান থেকে নেমে এলো আপনা-আপনি। মুঠোফোনটা পকেটে রেখে শব্দহীন ভাবে সামনে এগিয়ে এলো বর্ণ । নদীকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করলো বর্ণ। ফিসফিস আওয়াজে বললো–

_ ভালোবাসি

ইনশাআল্লাহ চলবে

কিছু মন্তব্য করুন।#সমাপ্তির_প্রহরে_সন্ধি
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ২৭

অন্ধকারের ছোঁয়া কাটিয়ে আলোর রশ্মি খেলা করছে পৃথিবীর বুকে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল উড়ে নিজেদের খাদ্য সংগ্রহের জন্য ছুটেছে। শুভ্র নির্মল আকাশে ঝকঝক করছে সূর্যের আলো। কাকের কা কা আওয়াজে কর্ণকুহুর যেন ব্যথা হয়ে আছে। শীতের সকালের মিষ্টি রোদ কিছুটা হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো লাগে। হাওয়াই মিঠাই যে-মন মুখে দিলেই ফুস,তেমনি শীতের মিষ্টি রোদ হুটহাট মেঘের আড়ালে গিয়ে লুকাতেই ফুস। হিম বাতাসের ঝাপটায় জানালার পর্দা সরতেই সূর্যের মিষ্টি রশ্মি নদীর চোখেমুখে আঁচড়ে পড়ছে। চোখেমুখে রোদের আবির্ভাব হতেই ভ্রু কুঁচকে নিচ্ছে নদী তন্দ্রাঘোরের মাঝেই। বাতাস বয়ে যাওয়া থেমে যেতেই আবারও গভীর তন্দ্রাঘোরে মিহিয়ে পড়ে নদী। মেয়ের এমন হাবভাবে অনেকক্ষণ ধরেই লক্ষ করছে মান্নান সাহেব। পাশের টুলটা এগিয়ে মেয়ের মাথার কাছে তিনি বসলেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে রইলেন তিনি। কিছু সময় ওভাবেই অতিবাহিত হয়ে গেলো। অন্য দিকে ঘুমের মাঝে কারো আদর মাখা স্পর্শ পেয়ে হুট করেই নদীর তন্দ্রাঘোর কেটে গেলো। নিদ্রাভিভূত কেটে যেতেই লাফিয়ে উঠে বসলো সে। দ্রুত চোখ খুলে তাকাতেই চোখে সূর্যের দ্যুতি এসে বারি খেলো যেন। দ্রুত আবারও পল্লব জোড়া বন্ধ করে ধীরে সুস্থে পল্লব জোড়া খুলে সামনে তাকালো। নয়ন জোড়া তুলে তাকাতেই নিজের বাবাকে দেখে ঈষৎ কেঁপে উঠলো সে। এতো সকালে তাঁর বাবা কেন তাঁর ঘরে? কোথাও কি খারাপ কিছু ঘটেছে? নিজের ভাবনায় নিজেই একবার অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো নদী। মান্নান সাহেব তখনো মোহগ্রস্ত নয়নে মেয়ের মুখপানে তাকিয়ে আছেন। ওভাবে তাকিয়ে থাকায় নদী আরো অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।

_ ওভাবে কি দেখছো বাবা?

_ দেখছি নিজের কার্বনকপিকে। আমি যে-মন সবার খুশির জন্য একদিন নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি পরিবারের কাছে,তেমনি আমার মেয়ে টাও দিচ্ছে। কিন্তু সত্যি হচ্ছে, আমাকে কষ্ট দেওয়ার সাহস কারো ছিলো না। কে বলেছে তোকে আমার মতো হতে? দেখতে আমার মতো,কাজগুলোও আমার মতো,দায়িত্বশীল হয়েছিসও আমার মতো,কিন্তু এতো চাপা স্বভাবের কেন হলি? কই আমি তো এতো চাপা স্বভাবের নই।

হঠাৎ মান্নান সাহেবের এমন কথায় নদী উঠে বসলো। বোঝার চেষ্টা করলো বাবা-র কথার মানে। কিন্তু তেমন কিছুই বুঝতে পারলো না। তাই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। মেয়েকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে মান্নান সাহেব হাসলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন–

_ সাগর তোর মতো এতো চাপা স্বভাবের নয়,তাই কাল রাতের সকল কথা আমায় বলে দিয়েছে। সাথে মিমও ক্ষমা চেয়ে তারপর ঘরে গেছে।

মান্নান সাহেবের এবারের কথাটা কর্নকুহরে পৌঁছাতেই নদী বিচলিত কন্ঠে বললো–

_ আমি তো বারন করেছিলাম ওদের।

মেয়ের উত্তরে আবারও মান্নান সাহেব মুচকি হাসলেন। আর বললেন।

_ ওই যে বললাম, সাগর তোর মতো এতো চাপা স্বভাবের নয়। ওর মনে হয়েছে এই বিষয়টা পরে জানাজানি হলে, আমরা ওকে খারাপ ভাবতাম। যেখানে বোন আর বউ দু’জনই তাঁর আপন তাই ওকেই আগে সাবধানে থাকতে হবে। অন্তত কেউ কারো জন্য যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তোকে নিয়ে সাগরের ভয় না থাকলেও মিমকে নিয়ে আছে। যে একবার ভুল করেছে সে পরিবর্তে করবে না তাঁর কোন গ্যারান্টি আছে। তাই কাল রাতেই আমায় সবটা খোলসা করে জানিয়েছে। আজ কোথাও মনে হচ্ছে তুই হয়তো এমন আরো অনেক ঘটনা আমাদের থেকে লুকিয়ে রেখেছিস। কোথাও কি আমাদের আড়ালে তোকে কষ্ট দেয়া মানুষটা তোর মেজ চাচি নয় তো? একদিন কথার ছলে শাহজাহান আমায় বলেছিলো! পারভীন নিজেকে যতোটা সহজ সরল ভাবে ধরা দেয়,আসলে সে তেমন নয়। আর একটু আগের ঘটনার পর তো আমি অনেকটাই বুঝে নিয়েছি শাহজাহানের কথার মানে।

_ কেন আব্বু কি হয়েছে?

_ মেজবউ ফোন দিয়ে বর্ণকে যা নয় তাই বলে রাগারাগি করেছে! এমন কি হুমকি দিয়েছে এই মুহূর্তে বাড়ি না ফিরলে সে আত্মাহত্যা করবে। হঠাৎ তোর চাচির এমন রূপ আমাদের কারো কাছেই ভালো লাগেনি। ভিডিও কলে ছিলো সে,তাই তাঁর অগ্নিমূর্তি রূপে সবাই অবাক হলাম। হঠাৎ মেজবউ একটা কথা বললো,শুনে আশ্চর্য হলাম আরো।

_ কি কথা আব্বু?

_ বর্ণ কোন একটা মেয়েকে পছন্দ করে। আর সেই মেয়ের জন্যই নাকি আমাদের এখানে বারবার ছুটে আসে। এখানে এসে সেই মেয়ের সাথে নাকি দেখাও করে। ওই মেয়েকে ঘরে তুললে মেজবউ আত্মাহত্যা করবে তখনই। সরাসরি সে কিছু বলেনি,কিন্তু তাঁর কথার ভাঁজে এগুলোই ছিলো। তুই কি জানিস কে সেই মেয়ে?

মান্নান সাহেবের প্রশ্নে নদী কিয়ৎক্ষণের জন্য থমকে গেলো। কোথাও কি তাঁর বাবা ধরে ফেলেছেন সবটা? না না ধরতে পারেনি নিশ্চয়ই। ধরতে পারলে এভাবে সরাসরি প্রশ্ন করতেন না। তাই নদী নিজেকে বিদ্যমান রেখে উত্তর দিলো।

_ না আব্বু আমি জানি না।

_ আচ্ছা ঠিক আছে। ও আরো একটা কথা,বিয়ের কয়েক সেকেন্ড আগেও যদি তোমার মনে হয় তুমি এই বিয়েতে সুখি হবে না,আমায় বলতে পারো। আমার ঋণ আমার দায়। আমি সে-সব বাবাদের মতো হতে চাই না,যাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত সন্তানের উপর চাপিয়ে দেয়। তুমি জানোই বিয়েটা আমাকে কোন পরিস্থিতিতে পড়ে ঠিক করতে হয়েছে। কিন্তু আমি তোমার অনুমতি নিয়েই তাঁদের হ্যা বলেছি। তবুও আমি তোমার সিদ্ধান্ত সঠিক হলে মানতে রাজি আছি।

_ আব্বু আমি তোমার সকল সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। আমি জানি তুমি কখনোই আমার খারাপ চাইবে না। তাই আমার না বলার প্রশ্নই আসছে না।

_ আমি জানি মা,কিন্তু আমার তোমার মুখশ্রী পাংশুটে, ম্রিয়মাণ দেখাচ্ছে। কোথাও আমার মনে হচ্ছে তুমি ভালো নেই। তুমি অনেক বড় কষ্ট চাপিয়ে আমাদের সামনে দিব্যি হেঁসে খেলে বেড়াচ্ছো।

আব্বুর কথায় বক্ষঃস্থলে চলতে থাকা অসহ্যনীয় ব্যথাটা চিনচিন করে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো। হঠাৎ করেই ঠোঁট গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে ধরা দিলো আমার নিকটতমে। আমি নিজেকে শান্ত করে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম–

_ তোমাদের ছেড়ে যাবার গল্পটা তো শুক্রবার থেকেই শুরু আব্বু। তাই হয়তো এমন দেখাচ্ছে। অতি আদরে মানুষ হয়েছি কিনা তোমার কাছে! তাই কষ্ট হচ্ছে তোমায় ছেড়ে থাকতে হবে ভাবলে, আর কিছু না।

মান্নান সাহেব বিমর্ষচিত্তে তাকিয়ে থাকে মেয়ের মুখের দিকে। তাঁর-ও কি কম কষ্ট লাগছে। চার সন্তানের মাঝে নদীকে নিয়েই তো তাঁর সব থেকে বেশি চিন্তা। আর সেই মেয়েকেই কিনা তাঁকে এতো দ্রুত পর করে দিতে হচ্ছে। কষ্ট তাঁরও কোথাও বেশি-বৈ কম না। বিয়ের পর যতোই মেয়ে তাঁর কাছে থাকুক,তখন সে অন্য কারো দায়িত্ব হয়ে যাবে। তাঁকে অনুমতি নিতে হবে অন্য কারো থেকে নিজের মেয়েকে কোথাও নিয়ে যেতে হলে। এমন নিয়তিকে কেন বরণ করে নিতে হয় আমাদের। যে মেয়েকে ছোট থেকে মানুষ করে বাবা-মা! এক সময় সেই মেয়ে পর হয়ে যায় বাবা-মায়ের কাছে। ধীরে ধীরে বেমালুম ভুলে যেতে হয় সন্তানের উপস্থিত। অবশ্য ভুলে কি আর থাকা যায়, শুধু ভুলে থাকার অভিনয়। নতুন করে বলার মতো কিছু খুঁজে পেলেন না মান্নান সাহেব। তাই গুটিগুটি পায়ে নদীর রুম ত্যাগ করলেন তিনি।
মান্নান সাহেব বেরিয়ে যেতেই আবারও সোজা হয়ে বালিশে মাথা রাখলো নদী। যতোটা সে বুঝতে পেরেছে বর্ণ চলে গেছে। কাল রাতে যখন বর্ণ ভালোবাসি কথাটা বলেছিলো,তখন কষ্টের সাথে ভালোলাগা দুটোই অনুভব করেছে নদী। কিন্তু সেই কষ্ট বা ভালোলাগা কোনটাই সে প্রকাশ করেনি বর্ণের নিকট। কি প্রয়োজন নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করে তারো নিকট উপহাস্য হওয়ার। সে ভালোই আছে তাঁর মতো করে।

—————-
চেয়ারে হেলান দিয়ে হয়ে বসে আছে নদী। দৃষ্টি তাঁর স্থির হয়ে আছে ভাইব্রেট করা ফোনের দিকে। কালো আস্তরণ কাটিয়ে বারবার সেভ করা নাম্বারটা জ্বলে উঠছে। নিদ্রাভর নয়নে ভাসছে বর্ণসুখ নামটা। কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে ফোনটা হাতে তুললো সে। হাতে নিতেই কেটে গেলো কল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আবারও ভাইব্রেট করে উঠলো ফোনটা। রিসিভ করে কানে তুললো ফোন। হ্যালো বলতেই কেউ ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠলো

_ আল্লাহ অবশেষে তুই ফোনটা রিসিভ করলি। টানা পনেরো বার তোকে কল করেছি।

_ ওয়াশরুমে ছিলাম শুনতে পাইনি।

_ আমি চলে এসেছি।

_ জানি।

_ কে বললো?

_ আব্বু

_ মা শান্ত হলে আবার আসবো।

_ এসে কি করবেন?

নদীর দায়সারা গোছের কথা বর্ণের বুকের ভেতরে গিয়ে ধাক্কা খেলো। তা-ই তো সে এসে কি করবে ? তাঁর তো কোন কাজ নেই। তাহলে সে কেন যাবে?

_ জানিস না কেন যাবো?

_ না

_ জানিস না, নাকি জেনেও মানতে চাইছিস না।

_ ধরে নিন তাই

নদীর কথায় বিচলিত, উৎকন্ঠিত স্তব্ধ হয়ে থাকলো বর্ণ কিয়ৎপরিমাণ।

_ এভাবে আমায় কষ্ট না দিলেও পারিস নদী।

_ সময়ের চক্র ঘোরে খুব দ্রুত বর্ণ ভাই। আপনি আপনার মনের চক্র যতো দ্রুত আমার থেকে সরিয়ে নিতে পারবেন ততোই ভালো। সেদিনের কথা হয়তো আপনি ভুলে গেছেন,কিন্তু আমি ভুলিনি! যেদিন আমরা চার ভাইবোন অসহায় হয়ে হাসপাতালের এ চত্বরে ও চত্বরে ঘুরে বেরিয়েছি। আমার, মায়ের, আপুর সকল সোনার জিনিস বিক্রি করে বাবা-র অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে হিমসিম খেয়েছি। আপনার মায়ের পা অবধি আমার ভাইয়া ধরেছিলো। বলেছিলো– চাচি একবার চাচার কাছে ফোনটা দিন। কিন্তু তোমার মা দেয়নি। বলেছে তাঁদের কাছে টাকা নেই। যা ছিলো সব আয়শার অপারেশনে খরচ হ’য়ে গেছে। অথচ আয়শার অপারেশন আধো তখনও হয়নি,কথা চলছে। ধার চেয়েছিলাম টাকা, কিন্তু আপনার মা সেটা দিতেও নারাজ ছিলো। আমরা সবাই যখন সকল আশা ছেড়ে দিয়ে অসহায় হয়ে আল্লাহর নিকটে দোয়া করলাম! ঠিক তখন রহমান চাচ্চু সামনে এলেন। আব্বুর অপারেশনের বাকি এক লক্ষ টাকা তিনি দিয়ে আমাদের সাহায্য করলেন। আব্বু সুস্থ হয়ে তাঁর চোখের দিকে তাকাতে পারছিলেন না। আমি সেদিন আমার আব্বুর চোখে লজ্জা সংকোচ দেখেছিলাম। যে কিনা কখনো কারো থেকে দশ টাকা হাত পেতে নেয়নি,তাঁকে কিনা রহমান চাচ্চুর টাকায় নিজের অপারেশন করাতে হয়েছে। আব্বু যখন জোর করলো তাঁর ঋণ শোধ করার। তখন রহমান চাচ্চু না করে দিলো। বললো বন্ধুত্বের কোন মূল্য চোকাতে নেই। কিন্তু আব্বু তখনো লজ্জায় নুইয়ে পড়তেন রহমান চাচ্চুর সামনে। আব্বুর লজ্জা কাটিয়ে দিতেই রহমান চাচ্চু বললো। তোর যখন এতো ঋণ শোধ করার ইচ্ছে,তাহলে তোর আদরের ছোট মেয়েকে আমায় দিবি মান্নান,কথা দিলাম খুব যত্নে রাখবো। আব্বু বিচক্ষণ মানুষ, হুট করেই উত্তর দিলেন না। আমার কাছে অনুমতি নিতে এলেন। আমি অনুমতি দিলাম! কারণ একটা সুযোগ জীবনে পেলাম বাবা-র পাশে দাঁড়ানোর, তাই সেই সুযোগকে হাত ছাড়া করতে ইচ্ছে হলো না। এরপরও যদি নিজের ওই ঠুনকো ভালোবাসা নিয়ে আমার মুখোমুখি দাঁড়ি কথা বলেন! তাহলে বলবো নিজের মায়ের মুখোমুখি আগে দাঁড়ান।

_ সব দায় কী একা আমার নদী?

_ না তো,আমার। তাই আমিই মাশুল দিচ্ছি।

_ সব কিছু ঠিক করে যদি তোর সামনে আসি,তাহলেও আমায় ফিরিয়ে দিবি?

_ ফিরিয়ে দেওয়ার আমি কে? ভাগ্যে থাকলে আমরা কোথাওবা হিসেবে কষতে গিয়ে গরমিল করে বসি।

_ তোকে ফিরে পাবার আশা আছে তবে?

_ আমার দিক থেকে ০% আপনার দিক থেকে ১% তাহলে ভেবে দেখুন প্রশ্নও আছে সাথে উত্তর, বুঝে নেওয়াটা আপনার ব্যপার। অংকটা খুব সহজ,এখন বুঝতে না পারলে নিশ্চয়ই আমার দোষ নেই। রাখছি।

ইনশাআল্লাহ চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here