সম্পর্কের প্রণয় পর্ব -০৪+৫

#সম্পর্কের_প্রণয়
০৪+০৫
#পর্ব_০৪
#নুর_নবী_হাসান_অধির

❝বর্তমানে আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়৷ সবকিছু মানুয়ে নিতে আমার কিছুদিন সময় লাগবে৷ তার আগে আমি কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব না৷❞
তনুর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,

❝ততদিনে আমার মেরুদণ্ড সোজা হয়ে যাবে৷ বর্তমানে আমি মেরুদণ্ডহীন হয়ে গেছি। আর মা, বাবা তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে৷ আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই৷❞
আসিফ চৌধুরী বা গুলবাহার ছেলের কথা বুঝতে পারলেন না৷ একে অপরের দিকে চকিত দৃষ্টিতে তাকালেন। ঋষি তনুকে একবার প্রদক্ষিণ করে নিজের রুমে চলে যায়। তনুর বুঝতে বাকী রইল না ঋষি কি বুঝাতে চাচ্ছে?
তনু নিজের শ্বশুর শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে জবাব দিল,

❝ভালোবাসা মানুষের অল্প খাঁচ সহ্য করতে পারে না। আর সেখানে আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি৷ আমাকে মেনে নিতে একটু কষ্ট হবে। আপনারা সাহায্য করলে আমি ভালোবাসার এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারি৷❞
গুলবাহার তনুর কথাগুলো মেনে নিতে পারছেন না ঠকভাবে? সবকিছুতেই যেন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন৷ রহস্য ঘিরে রেখেছে চারটি জীবনের মধ্যে। আসিফ চৌধুরী তনুর মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেঁসে বললেন,

❝যেকোন কাজে আমাকে পাশে পাবে৷ মানুষ মাত্রই ভুল৷ তোমার জীবনে একটা কালো অধ্যায় আছে। সে কালো অধ্যায়ের কথা ভুলে যাও৷ অন্ধকার কখনও দিনের আলোকে আড়াল করতে পারে না৷ ঠিক তেমনই তোমার জীবনের কালো অধ্যায় তোমার সুন্দর জীবনের বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না৷❞
আসিফ চৌধুরীর স্নেহময় বৃক্ষছায়ার মতো কথাগুলো হৃদয় ছুঁয়ে গেল৷ আবেগের চোখের কোণে জল চলে আসে৷ তনুর মুখের উজ্জ্বলতা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে৷ তনু মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে রুমে চলে আসল৷ ঋষি বিছানায় শুয়ে আছে৷ তনু ঋষিকে এক পলক দেখে বারান্দায় চলে গেল৷ তনুর প্রশ্নগুলো বার বার মাথায় নাড়া দিচ্ছে৷ তনুর কাছ থেকে কথাগুলো জেনে নিবে নাকি অন্য কারোর কাছ থেকে৷ তনু বারান্দার রেলিং ধরে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ঋষি পিছন থেকে এসে তনুকে হালকা করে জড়িয়ে ধরল৷ ঋষির গরম নিঃশ্বাস তনুর ঘাড়ে পড়ছে৷ তনু খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিল৷ মলিন মিহি কন্ঠে আমতা আমতা করে বলল,

❝এসব কি করছেন? একটু আগেই তো…. ❞
কোন কিছু বলার শক্তি পেল না৷ তনুর ঘাড়ে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিল৷ তনুর কথা বন্ধ হয়ে যায়৷ তনুর কানে ফিসফিস করে বলল,

❝তোমাকে নিয়ে আজ ঘুরতে যাব! অনেকদিন হলো আমরা একা কোথাও ঘুরতে যাইনা৷ একসাথে সময় কাটালে আমাদের মাঝে অনেক দূরত্ব কমে যাবে৷❞
তনু পিছন ফিরে ঋষির চোখে চেখ রাখে৷ হয়ে কিছু কথা নয়নে নয়নে৷ ( নয়নে নয়নে রাখিব তোমায়) চকিত কন্ঠে জবাব দিল,

❝আজ তো আপনার অফিস আছে৷ অফিস মিস করে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন৷ একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে না৷❞

❝তোমার সাথে ঘুরতে যেতে ছুটির দিন লাগবে? ছুটির দিন ছাড়া আমরা ঘুরতে যেতে পারিনা৷ হাত বাড়িয়ে দেওয়া ভুল হয়েছে।❞

❝ছুটির দিন ছাড়া আগে কখনও ঘুরতে নিয়ে যাননি৷ তাছাড়া এত মান মালিন্যের পর আজ হুট করেই ঘুরতে যাওয়া আমার কাছে রহস্য লাগছে৷❞

❝তোমার কথার জবাব দিতে পারব না৷ আমার সাথে ঘুরতে যাবে মানে ঘুরতে যাবে৷❞

তনু আর কথা বাড়াল না৷ সম্পর্কটাকে পূর্ণতা দিলে গেলে নিজেকে এক পা এগিয়ে যেতে হবে৷ জায়গা করে নিতে হবে মনের গহীনে৷ অস্তিত্ব খুঁজতে হবে বা পাশের হাড়ে। তনু মুচকি হেসে রুমের দিকে পা বাড়াতেই ঋষি বলল,

❝কালো রঙের শাড়ীটা পড়বে৷ কালো শাড়ীতে তোমাকে অপরূপা লাগে৷ ইচ্ছা করে তোমার পাশে সারাজীবন বসে থাকি৷ মুগ্ধ নয়নে আজীবন দেখলেও এই নয়নের তৃষ্ণা মিটবে না৷❞
__________________________
রিক্সায় দূরত্ব বজায় রেখে বসে আছে তনু৷ যা ঋষি মেনে নিতে পারছে না৷ ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে সামান্য দূরত্ব মনের গহীনে বিষন্নতার দাগ কাটে৷ ঋষি তনুকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,

❝মিসেস তনু আমার কাছ থেকে তোমার মুক্তি নেই৷ তোমার হাত একবার ধরেছি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাকে ছাড়তে পারব না৷❞

❝একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না৷ যে ছেলে কিছুদিন আগেও ডিভোর্সের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল আজ সেই ছেলে ভালোবাসার কথা বলছে৷ আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে দিনের বেলায় আকাশে চাঁদ উঠেছে৷❞
ঋষির তনুর প্রতি উত্তরে কিছু বলল না৷ মনে মনে বলল,

❝তনু তুমি যদি ডালে ডালে ঘুরতে পার, আমি ঘুরি পাতায় পাতায়৷ হঠাৎ পরিবর্তন আমার মনে নাড়া দিয়েছে৷ এমনও হতে পারে টা তোমাদের বাবা, মেয়ের নতুন কোন চক্রান্ত। এবার আমাকে আর বোকা বানাতে পারবে না৷ সেজন্য আমি আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নেমে পড়েছি৷ তবে তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর তোমার বাবার কাছ থেকে নিব৷❞
তনুর ঋষির হাতের উপর হাত রেখে বলল,

❝কি ভাবছেন? আমাকে মেরে ফেলার নতুন কোন পরিকল্পনা।❞
ঋষি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

❝মেরে ফেলার হলে অনেক আগেই মেরে ফেললাতাম। যাকে ভালোবাসি তার গায়ে হাত তোলার প্রশ্নই উঠে না৷ এতকিছুর পরও তোমার সাথে ততটা খারাপ ব্যবহার করিনি৷ যতটা খারাপ মনে কর ততটা খারাপ নয়৷ আমার মনে কারোর জন্য ভালোবাসা আছে৷ আর সেটা তুমি৷❞

তনু এ প্রসঙ্গ নিয়ে আর কোন কথা বাড়ায়নি৷ সারাদিন পাখির মতো ডানা মেলে ঘুরে বেড়িয়েছে এক জোড়া প্রাণ৷ হাজারও অভিমানের মধ্যে বেঁচে আছে এক চিলতে ভালোবাসা। এক চিলতে ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে৷
______________________________
সন্ধ্যার পর থেকে তনুর উদরে চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে৷ ব্যথাটা ধীরে ধীরে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে৷ অবস্থা নাজেহাল দেখে ঋষি প্রশ্ন করল,
❝কি হয়েছে? এমন করছো কেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?❞

কান্না জনিত ভেজা গলায় বলল,

❝উদরে অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে৷ এমনটা আগে কখনও হয়নি৷ আজ হুট করেই এমন হচ্ছে৷ গ্যাসের সমস্যা হলে ভালো হয়ে যেত৷ কারণ আমি গ্যাসের ট্যাবলেট অনেক আগেই খেয়েছি৷ ইতিমধ্যে ভালো হয়ে যাওয়ার কথা৷ ডান সাইডে ব্যথা হলে এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা৷ কিন্তু তেমমটা নয়৷❞

ঋষির অবস্থা পাগল প্রায়৷ ঋষি তার পরিচিত একজন ডাক্তারের কাছ থেকে জানতে পারল কনসিভ অবস্থায় সারাদিন জার্নি করার জন্য এমন হয়েছে৷ রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে৷ কাল ডাক্তার দেখাতে বলেছে৷
ঋষি সারাদিন তনুর পাশে বসে উদরের ব্যথা প্রশমনের জন্যে গরম কাপড়ের উষ্ণতা প্রয়োগ করেছে৷ গর্ভকালীন একজন মাকে কত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ যিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করেন তিনিই বুঝতে পারেন সন্তান হওয়ার কতটা কষ্টের৷ কিন্তু সে কষ্ট মায়ের কাছে তুচ্ছ৷ মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আলো বাতাস ছাড়া মায়ের রক্ত পান করে বেড়ে উঠে৷ আল্লাহর মেয়ে জাতিকে অসীম ধৈর্য ধারণ করেন৷ প্রতিটি সন্তানের জন্য দিয়েছেন মাতৃদুগ্ধ। যা সন্তানের জন্য কতটা উপযোগী। না শীতল, না গরম, না ঘন, না পাতলা। সন্তানের জন্য যেমনটা প্রয়োজন তেমনই দিয়েছেন৷

তনুর উদরের ব্যথা কমলে চোখে তন্দ্রা লেগে আসে৷ কখন ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷ সকালে ঘুম ভাঙতে নিজেকে ঋষির বুকে আবিষ্কার করে৷ ঋষি তনুকে দুই বাহুর সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে৷ বাহুদ্বয় থেকে ছাড়া পেলেই দূরে কোথাও হারিয়ে যাবে৷ প্রতিটি মানুষ৷ এভাবেই যেন ভালোবাসার মানুষকে আগলে রাগে৷ তনু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ফজরের আজান অনেক আগেই পড়েছে৷ নামাজ পড়ার সময় শেষ৷ এখন সূর্য উদয়ের সময়৷ মহানবী (স) তিন সময় নামাজ পড়তে মানা করেছেন৷।
১. সূর্য উদয়ের সময়।
২. দ্বিপ্রহরের সময়৷
৩. সূর্যাস্তের সময়৷

এমন সময় নামাজ পড়া যাবে না৷ সেজন্য তনু ঋষির বুকেই ছোট বাচ্চার মতো শুয়ে থাকে৷

চলবে……

ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন৷

#সম্পর্কের_প্রণয়
#পর্ব_০৫
#নুর_নবী_হাসান_অধির

❝আমি তোমাকে কতবার বলছি যাই হয়ে যাক তনুকে আমি এই বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতে পারব না৷ তনুর বাবা রিয়াদ হোসেন যদি জানতে পারে তনু মা হতে চলছে তখন একটা ঝড় আসবে আমাদের সংসারে৷❞

গুলবাহার রাগ মিশ্রিত কন্ঠে নিজের স্বামী আসিফ চৌধুরীকে বলছেন৷ কিন্তু সেদিকে আসিফের কোন হেলদোল নেই৷ নিজের ইচ্ছামতো সিগারেট ধোঁয়া উড়াচ্ছে৷ যা গুলবাহারকে আরও রাগিয়ে দিচ্ছে৷ হাত থেকে সিগারেট কেঁড়ে নিয়ে বললেন,

❝আমার কথা তোমার কানে যাচ্ছে না৷ আমি তোমার সাথে কথা বলছি৷❞
মুখ থেকে নিকোটিনের ধোঁয়া বাতাসে ত্যাগ করে আসিফ জবাব দিলেন,

❝জানি তুমি আমার সাথে কথা বলছো৷ তবে আমার কি করার আছে? আমরা তো সবকিছু জেনেই তনুকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছি৷ আমরা তো জানতাম এটা তনুর দ্বিতীয় বিয়ে৷ তবুও সেদিন নিজেদের মুখ খুলতে পারিনি৷❞

❝এ লুকোচুরি আমার ভালো লাগছে না৷ আমাদের যাই হোক আমরা আর রিয়াদকে ভয় পাব না৷ তার কাছে ক্ষমতা শক্তি থাকলেও আমাদের কাছেও আছে৷ আমরাও তার বিরুদ্ধে লড়াই করব৷❞

❝রিয়াদকে কতটুকু চিনো? নিজের স্বার্থের জন্য তনুর মাকে হত্যা করতে দুইবার ভাবেনি৷ সেখানে আমাদের ছেড়ে দিবে৷❞
স্বামীর কথায় আরও এক ধাপ ধাক্কা খেলো গুলবাহার। মাথায় নাড়া দিচ্ছে তনুর মাকে হত্যা করলে এখন যিনি আছেন তিনি তনুর কি হোন? আমতা আমতা করে বলল,

❝তনুর মাকে কেন হত্যা করতে যাবে৷ একজন মানুষকে চাইলেই হত্যা করা যায়৷ বর্তমানে যিনি আছেন তিনি কে?❞

❝উনি তনুর সৎমা৷ কিন্তু তনুর উপর কখনও বাজে প্রভাব ফেলতে পারেননি৷ সবারই মৃত্যু ভয় আছে৷ মৃত্যুর ভয় না থাকলে আমি জেনে শুনে এমন বাবার মেয়েকে বাড়ির বউ কখনও করতাম না৷ তবে রিয়াদের বিরুদ্ধে একটা প্রমাণ জোগাড় করতে পারলে কেউ আমার হাত থেকে তাকে বাঁচাতে পারবে না৷❞

❝আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে৷ রাগের মাথায় তনুর সন্তানের কোন ক্ষতি না করে৷ প্রথম বিয়ে তো ভেঙেছে তনু কনসিভ হওয়ার জন্য৷ এখন যদি পুনরায় এ কথা তনুর বাবার কানে যায়৷❞

❝ভয়ের কিছু নেই৷ তনু মা হতে চলছে এই খবর কিছুতেই রিয়াদের কানে যাবে না৷ তিনি চান মেয়েকে জোর করে আবার অন্য কোন বাড়ির বউ বানাতে৷ তার বিনিময়ে সবকিছু নিজের করে নিবেন৷ রিয়াদ একটা মানুষ! নিজের মেয়েকে ছাড় দেয়নি৷❞
ঋষি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না৷ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার মানে ঋষির মা বাবা৷ তনুর প্রথম বিয়ের বিষয়ে সবকিছু জানত৷ তবুও কখনও এ নিয়ে কথা বলেনি৷
________________________
কোলে মাথা রেখে তনুর কোমর জড়িয়ে ধরে বসে আছে ঋষি৷ মুখে বিষণ্নতা বিরাজ করছে৷ ভয়ে চুপসে আছে৷ তনু ঋষির মাথায় হাত রেখে বলল,

❝আপনার কি হয়েছে? এভাবে ভয় পেয়ে আছেন কেন? ডাক্তারের কাছ থেকে তো আসলেন তখনও তো ভালো ছিলেন৷❞
ঋষি তনুর কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

❝আমি কিছুতেই তোমাদের ক্ষতি হতে দিব না৷ আমি থাকতে কেউ তোমাকে আর আমাদের ভালোবাসার প্রতীকের গায়ে ফুলের টুকাও দিতে পারবে না৷❞
ঋষির কথাগুলো তনুকে ভাবিয়ে তুলছে৷ ঋষির মা বাবার সাথে কি এমন কথা হয়েছে? যার জন্য ঋষি ভীষণ ভয় পেয়ে আছে৷ তনু ঋষিকে অভয় ভরসা দিয়ে বলল,

❝আল্লাহ যতদিন আমাদের সহায় আছেন ততদিন কেউ আমার ক্ষতি করতে পারবে না৷ আমি আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে দোয়া করি যেন আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভালো রাখেন৷❞
ঋষি তনুর হাত নিজের মুষ্টিতে আবদ্ধ করে বলল,

❝আমার একটা কথা রাখবে? আমি তোমার কাছে এর থেকে বেশি কিছু চাইনা৷❞

❝আমি আপনার প্রতিটি কথা মেনে চলার চেষ্টা করব৷ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনাকে আগলে রেখে এগিয়ে যাব৷❞

❝তুমি কনসিভ এই কথা কি তোমার বাবা জানেন? দয়া করে তোমার বাবাকে এসব কথা বলবে না৷ এসব কোন কথা বলবে না তোমার মাকেও৷❞

তনু চকিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঋষির উপর। তনু কিছুই বুঝতে পারছে না৷ সবকিছু তাল গোল মিলিয়ে ফেলছে৷ অবাক কন্ঠে বলল,

❝আপনি মা বাবার সাথে সম্পর্ক রাখতে মানা করছেন কেন? আমি বাবাকে ফোন দিছিলাম৷ কিন্তু বাবা ফোন তুলেনি৷ ফোন তুললে বলে দিব৷ কিন্তু আপনি মানা করছেন কেন?❞.

ঋষির চোখে যেন উজ্জ্বলতা ফিরে পেল৷ মনের গহীন কোণে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেল৷ কিন্তু নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেল৷ এভাবে কতদিন লুকিয়ে রাখবে৷ রিয়াদ হোসেনের হাত অনেক লম্বা৷ তিনি ঠিক জেনে যাবেন৷ তাছাড়া তিনি আমাদের উপর সব সময় নজর রাখেন৷ যা বাবা মায়ের কথার ধরণ দেখে বুঝতে পারলাম৷ ঋষি গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

❝আমি তোমাকে জানাতে বারণ করছি৷ তুমি এ খবর কিছুতেই জানাবে না৷ আর হ্যাঁ তুমি তোমাদের বাড়িতে যেতে পারবে না৷ দরকার পড়লে আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব৷❞
তনু ঋষিরর গুগলির মায়াজালে ফেঁসে যাচ্ছে৷ কিছুই বুঝতে পারছে না৷ ঋষি কেন এমন করছে? আমার কাছ থেকে কি লুকাতে চাচ্ছে৷ আমার আড়ালে নতুন মায়াজাল ভিছিয়ে রাখেনি তো৷ তনু কিছুটা উঁচু স্বরে বলল,

❝আমি পারব না এমন কাজ করছে৷ আমার কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে মা বাবা৷ যে মা দশ মাস দশদিন গর্ভে ধারণ করেছে তাকে ভুলে যাব। যে বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে আমাকে মানুষের মতো মানুষ করেছে তাকে ভুলে যাব। কিভাবে ভাবলেন আমি অকৃতজ্ঞ সন্তানের মতো সবকিছু ভুলে যাব?❞

❝কাউকে ভুলতে বলিনি৷ কিছুদিন তাদের থেকে দূরে থাকতে বলছি৷ ধীরে ধীরে সবকিছু জানতে পারবে৷ তুমি এখনও অন্ধকারে ঢুবে আছো৷ আমার মতো তোমারও একদিন চোখ খুলে যাবে৷ তখন নিজেকে সামলিয়ে নিও৷ দুইদিন অফিস করিনি৷ অনেক কাজ জমা পড়েছে৷ তুমি আরাম কর৷ আমি ল্যাবটপে একটু অফিসের কাজ করি৷❞
ঋষি নিজে থেকে সরে আসল৷ এ মুহুর্তে তনুকে এসব কথা বললে বিশ্বাস করবে না৷ তাছাড়া এসব শুনে উত্তেজিত হলে বিপরীত কিছু হতে পারে৷ তনু ধীর পায়ে বারান্দায় চলে গেল৷ ঋষি ল্যাবটপে কাজ করছে৷ দূরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তনু৷ ব্যাপ্সা গরমে পরিবেশটা উষ্ণ হয়ে আছে৷ চাতক পাখি বৃষ্টির পানি পান করার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ একটু বৃষ্টি মেটাবে তৃষ্ণা। মন বার বার বলছে ঋষি কি এমন বলতে চাচ্ছে? কেনই বা সবার সাথে সম্পর্কে ভাঙতে বলছে৷ ঋষি কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না৷ বারবার তার মাথায় কথা নাড়া দিচ্ছে৷ তনুর বাবাকে কেন সবাই ভয় পাচ্ছে৷
______________________
ঋষির অফিস ছুটি হতেই ছুটে আসে শ্বশুর বাড়িতে৷ কেন সবাই তনুর বাবা রিয়াদ হোসেনকে ভয় পায়। ডাইনিং রুমে পা রাখতেই শ্বশুর মশাইয়ের মুখোমুখি হলো৷ অসময়ে ঋষি আসতে পারে কল্পনাও করতে পারেন নি৷ ঋষি ভদ্রতার সাথে সালাম দিল৷ রিয়াদ হোসেন সালামের জবাব দিয়ে বললেন,

❝অসময়ে আসার কারণ কি? সবকিছু ঠিক আছে? তনুর কিছু হয়নি তো৷❞
ঋষি মুচকি হেসে বলল,

❝তনুর কিছু হয়নি৷ সে একদম ঠিক আছে৷ তবে আমাদের মাঝে দিন দিন দূরত্ব কমে যাচ্ছে৷ আমি তনুর থেকে মুক্তি চাই৷ কিন্তু কোর্টের আদেশ অনুযায়ী আমাদের একসাথে থাকতে হবে ছয় মাস৷ আমরা তেমন কোন অভিযোগ করতে পারিনি৷❞
রিয়াদ হোসেনের মুখে উজ্জ্বলতার হাসি ফুটে উঠল৷ হাসিমুখে জবাব দিলেন

❝এ নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না৷ আমি হাজারটা কারণ উল্লেখ করে দিব৷ দেখবে এক সপ্তাহের মধ্যেই তোমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে৷❞
তাদের কথার মধ্যে কাজের মেয়ে ইভা চা নিয়ে হাজির হয়৷ ঋষি বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,

❝বাবা আমি আজ কিছুই খেতে পারব না৷ তনু কিছু জানতে পারলে আমাদের বিয়ে আটকাতে আরও কিছু করতে পারে৷ তাই তাকে কিছু বলবেন না৷❞
রিয়াদ হোসেন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল৷ কাজের মেয়ে কিছু বলতে নিলেই রিয়াদ হোসেন চোখ রাঙিয়ে মানা করেন৷ ঋষি মনে মনে বলল,

❝পৃথিবীতে আপনিই একজন বাবা যে মেয়ের ভালোবাসা বুঝতে পারল না৷ আপনার পাপের পাহাড় এখন ভেঙে যাবে৷ সে পাহাড় ভাঙবে আপনার মেয়ে৷❞

চলবে……..

ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here