সাহেব বিবি গোলাম পর্ব ২

#সাহেব_বিবি_গোলাম
#নুশরাত_জেরিন
#পর্ব:২

,
,
বাসে উঠতেই আমার ভেতরটা গুলিয়ে উঠলো কেমন অস্থির লাগতে লাগলো।
সচারাচর লং জার্নি করা হয়নি আমার।মা আর আমি মফস্বলে থেকেছি সারাজীবন। কদাচিত শহরে আসা হয়েছে তাও মায়ের সাথে।
বাসে উঠলেই আমার মাথা ঘোরা শুরু হয় এবং সাথে তো বমি আছেই।
এখন আমি ভয়ে ভয়ে বসে আছি।না জানি কখন বমি শুরু হয় আমার।তখন কি একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হবে?
কাচুমাচু করে জানালার পাশের সিটে বসে রইলাম।
জানালা খুলে বাইরের দৃশ্য দেখায় মনোযোগ দিলাম।
বাইরের গাছ ঘরবাড়ি দেখলে যদি বমির কথা মাথা থেকে যায়!নিজের শহর ছেরে ঢাকার পথে ছুটে চলেছে বাস।ঢাকা আমার চেনাজানা কেউ নেই।যদিও মা ছাড়া আর কেই বা আছে আমার?
ও হ্যাঁ প্রিতম আছে।কিন্তু প্রিতমের ঠিকানা আমি জানিনা।এমনকি কোথাও দেখা হলে হয়তো চিনতেও পারবোনা।
আমাদের সম্পর্কটা অদেখা সম্পর্ক।
ওকে কখনোই আমি দেখিনি।কেনো যেনো দেখতে ইচ্ছে করেনি।
নিজের মনের খাতায় ইচ্ছে মতো ওর ছবি একেছি।ভেবেছিলাম সামনাসামনি দেখা করবো একদিন।দেখবো আমার কল্পনার প্রিতমের সাথে বাস্তবের প্রিতমের কতোটা মিল।
কিন্তু সে সুযোগ আর হয়নি আমাদের। তার আগেই তো মামা ঝামেলা শুরু করলো।
মেসেজে কথা ছাড়া আর কোনভাবে যোগাযোগ নেই আমার প্রিতমের সাথে।
কিভাবে যোগাযোগ করবো তাও জানিনা।
তবে যে করেই হোক প্রিতমের সাথে কথা বলতে হবে।কথা বলাটা খুব জরুরি। এই মুহুর্তে প্রিতমকে আমার পাশে দরকার।
অতিরিক্ত চিন্তায় আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে।
কিছুদিন যাবত বিয়ের ঝামেলার জন্য ঠিক মতো খাওয়া দাওয়াও হয়নি।শরীরটা দুর্বল খুব।
প্রিতম সবসময়ই বলতো আমার নিজের খেয়াল রাখতে।
প্রথম যেদিন ও মেসেজ করেছিলো তারপর দুদিন কেটে গেছিলো।
আমি রিপ্লাই দেইনি।
ভেবেছিলাম কে না কে মেসেজ দিয়েছে তাকে রিপ্লাই দেওয়ার কি দরকার।
তবে দুদিন বাদে আবার একটি মেসেজ এসেছিলো।
লেখা ছিলো,

মায়াবতী,
তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?নাকি অভিমান?নয়তো মেসেজের রিপ্লাই কেনো দিলেনা?আচ্ছা কাছের মানুষের উপর তো অভিমানই করে তাইনা?
তুমি আমায় কাছের মানুষ ভাবো তো?নাকি ভাবোনা?আমি কিন্তু ভাবি।
আমার রন্ধে রন্ধে মিশে গেছো যে তুমি।
বিশ্বাস করো,তোমার ওই কাজল চোখের ছবি না দেখলে আমার দিনই কাটেনা।প্রিন্ট করে বুকপকেটে রেখে দিয়েছি ছবিটা জানো তো?

আমি সেবারও হেসেছিলাম খুব।ভেবেছিলাম চেনা নেই জানা নেই এমন মেসেজ কাউকে পাঠানো যায়?সেদিন মনে হয়েছিলো ছেলেটা আস্ত একটা পাগল!
পাগল কথাটা মনে পরতেই আমার মেজাজ গরম হলো।বাসস্ট্যান্ডে ছেলেটা আমায় পাগল বলেছে।
একা একা হাসতে দেখলেই পাগল বলতে হবে?কেনো?মানুষ কেনো একা একা হাসতে পারবেনা?একা একা হাসার অধিকার কেনো নেই তাদের?
আমি মনে মনে বিরবির করলাম।

বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
এখন বর্ষাকাল।যখন তখন বৃষ্টি নেমে আসে।বাইরের জানালা কিছুটা খুলে মুখ বের করে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম।বৃষ্টির ছিটা মুখে এসে পরায় কি যে ভালো লাগছিলো।

হঠাৎ কেউ বলে উঠলো,

—জিবনে আর কতো পাগলামি দেখবো!

কথাটা নিতান্তই টিটকারি দিয়ে বলা।বুঝতে পেরে আমি ফট করে পাশে তাকালাম।দেখি সেই ছেলেটা।সেই বদ শয়তান ছেলে।
যে কিনা বাসস্ট্যান্ডে আমাকে পাগল বলেছিলো।
সে আমার পাশের ছিটে?কখন বসলো?আমি খেয়ালই করলাম না?এতো অমনোযোগী আমি?নাকি ছেলেটা ভুত টুত কিছু?যে হঠাৎ করে আসে আর যায়?
আমি একটু জানালা গেছে গুটিসুটি মেরে বসলাম।
বললাম,

—কি বললেন?

ছেলেটা হয়তো আমার মনের ভাব বুঝতে পারলো।সে মুচকি হেসে একটু ঝুকে এসে বললো,

—ছুয়ে দেখতে পারো,আমি ভুত নই।

আমি ভেবাচেকা খেয়ে হা করে তাকালাম।লোকটা কি জাদু জানে নাকি?মনের কথা জানলো কিভাবে?
আমার অবস্থা দেখে ছেলেটা আরও একটু ঝুকে এলো।বললো,

—দেখবে ছুঁয়ে?

লোকটার চোখমুখে অদ্ভুত এক দুষ্টুমি খেলা করছে।মুখে ঝুলছে মুগ্ধতার হাসি।তবে লোকটা যে আমাকে নিয়ে ফাইজলামি করছে তা ঠিকই বুঝতে পারলাম।
আমি আরও একটু সরে এসে চিৎকার করে বললাম,

—সরে যান,সরে যান বলছি।

—আরে সরছি সরছি এতেবার জান জান বলার কি আছে?

আমি বেআক্কেল হয়ে গেলাম।কি পরিমান শয়তান ছেলেটা? আমি ওনাকে জান কখন বললাম?আমিতো সরতে বললাম?
মেজাজ খারাপ করে অন্যদিকে তাকালাম।ছেলেটার সাথে কথা বলা ই ঠিকনা।কথা বললেই এমন ফাইজলামি করবে।তারচেয়ে বরং চুপচাপ থাকি।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ছেলেটা বললো,

—এতোক্ষণ ধরে কথা বলছি আমরা, পরিচয়ই তো হলাম না।

আমি রাগী চোখে তার দিকে তাকাতেই সে হেসে ফেললো।বললো,

—শুধু নামটা জানলে দোষের কি?
আমার নাম শুভ,আর তোমার?

—নাম নেই।

শুভ অবাক হওয়া গলায় বললো,
—ও মাই গড!তোমার নাম “নাম নেই”
এমন নামও হয় পৃথিবীতে? কে রেখেছিলো বলোতো?

আমি রাগে কিটমিট করে বললাম,
—,দেখুন?

শুভ ঝুকে এলো।ফিসফিস করে বললো,

—কি দেখবো?

আমার এবার কান্না পেলো খুব।এতোটা রাগান্বিত আমি কখনো হইনি।আশেপাশের কথা না ভেবেই আমি ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম।
ঠোঁট ফুলিয়ে নাক টেনে কাঁদার সময় লক্ষ করলাম শুভ আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।যেনো কোন আকাঙ্খিত ব্যক্তিকে কাছ থেকে দেখার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।
আমি কাঁদতে কাদতেই বললাম,

—আপনি একটা বদ ছেলে,একটা শয়তান ছেলে।
আপনার মতো শয়তান পুরো পৃথিবীতে আর নেই।

শুভ হাসতে হাসতে নিজের টিশার্টের কলার ঝাকালো।ভাব নিয়ে বললো,

—তা ঠিক বলেছো, আমি দুনিয়াতে এক পিস ই।

আমি অবাক হলাম খুব।ছেলেটাকে আমি বকলাম আর সে কি মনে করলো?সে কি ভেবেছে আমি তার প্রসংশা করেছি?
আমার তাকানো দেখে শুভ বললো,

—ওভাবে দেখোনা মায়াবতী,প্রেমে পরে যাবে যে!

আমি চমকে উঠলাম।মায়াবতী?
এ নামে যে আমায় প্রিতম ডাকতো?
,

,

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here