সাহেব বিবি গোলাম পর্ব ১৮ এবং শেষ

#সাহেব_বিবি_গোলাম
#নুশরাত_জেরিন
#Extra_part_2

,
,
শুভর রুমের সামনে আমি হাবার মতো দাড়িয়ে আছি।ভেতরে যেতে আমার ভয় লাগছে।
শুভ রেগে আছে কিনা কে জানে?রুবি কি ঠিক বুঝেছে?শুভ কি সত্যিই আমায় রুমে যেতে বলেছে?কিন্তু আমি যে শুনলাম ও কাউকে রুমে ঢুকতে নিষেধ করলো?
আমি ইতস্তত করতে করতে দরজায় টোকা দিলাম।
ওপাশ থেকে কোন শব্দ শোনা গেলো না।
আমি ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।
হয়তো শুভ রুমেই নেই।তারচেয়ে বরং আপাকে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসি।
পা বাড়ানোর সাথে সাথে হাতে টান পরলো।
আমি হুমড়ি খেয়ে পেছনে পরলাম।
দেখি শুভ দাড়িয়ে আছে।রাগে তার চোখ টকটকে হয়ে আছে।
আমার হাত তার হাতের বাধনে আটকা।
আমি শুভর দিকে চেয়ে শুকনো ঢোক গিললাম।
ওভাবে রক্ত চক্ষু করে তাকালে ভয় লাগে না বুঝি?
শুভ গম্ভীর গলায় বললো,

—কোথায় যাচ্ছিলে?

আমি মিনমিন করলাম।ওমন গম্ভীর গলায় কথা বলছে কেনো কে জানে?আমার তো এমন শুভকে মোটেও ভালোলগেনা বরং দুষ্টু শুভকেই ভালো লাগে।
যে সারাক্ষণ আমার পেছনে লাগতো।দুষ্টু দুষ্টু কথা বলে জ্বালিয়ে মারতো।
বললাম,

—আপনার রুমেই এসেছিলাম।

—কোথায় এসেছিলে?শুধু রুমের সামনে ঘুরঘুর করছিলে?ভেতরে ঢোকা গেলো না?

—নক করেছিলাম তো!

—নক কেনো করবে?এটা কি অন্যকারো রুম?নিজের রুম না এটা?নিজের রুমে ঢুকতে নক কেনো করবে?

আমি আহম্মক হয়ে গেলাম।শুভর মনের কথা আমি বুঝবো কেমন করে?আমি কি মনের কথা পড়তে পারি নাকি?
আমাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ হাত ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ালো।
হাত দিয়ে চুলটা ব্রাশ করলো।
মুখটা গম্ভীরতায় পরিপূর্ণ করে বললো,

—তো কিছু বলবে?

—কি বলবো?

শুভ এগিয়ে এসে চাপা চিৎকার করে উঠলো।

—মানে?কিচ্ছু বলবে না?তাহলে আমার রুমে কেনো এসেছো হ্যাঁ?কেনো এসেছো?

আমি দু কদম পিছিয়ে গেলাম।
লোকটা কি বোঝাতে চাচ্ছে?মনের কথা মুখে না বললে আমি কি বুঝতে পারি নাকি?
আমার মনে হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধির উদয় হলো।
এতোদিন আমার সাথে দুষ্টুমি করে করে আমায় জ্বালিয়েছে।আজ নাহয় আমিই জ্বালাই।
আমি মৃদু হেসে বলে উঠলাম,

—ওহ হ্যাঁ বলবো তো।

—কি?

—ভাবছি রুবি নামক মেয়েটার সাথে আপনার বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়?আপনি খুব খুশি হবেন না?

—মানে?

পরক্ষনেই তার চোখেমুখে হাসি ফুটে উঠলো।
বললো,

—আমাকে বোকা বানাতে চাইছো মায়াবতী?তাছাড়া রুবি তো অলরেডি বিবাহিত!

আমি চোখ বড় করে তাকালাম।রুবি বিবাহিত?কি ফাজিল লোক? বিবাহিত মেয়েকে দিয়ে আমায় জেলাস ফিল করালো?

আমি মুখ ফুলিয়ে দাড়ালাম।শুভ হেসে পেছন থেকে জাপটে ধরলো।
আমি ছুটানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম।
বললাম,

–আপনি না রেগে আছেন?এই আপনার রাগের নমুনা?

শুভ কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করলো,

—কেনো?রেগে থাকলে খুশি হতে বুঝি?তাছাড়া আমার মায়াবতীর উপর আমার রাগ আসেই না,আমিতো রাগের ভান ধরে ছিলাম!

আমি হেসে উঠলাম।মনের ভেতরে জমে থাকা কষ্টগুলো উধাও হলো নিমিষেই।
নিজের ভালবাসার মানুষটার রাগ দুর করতে পারলে কার না ভালো লাগে।
আমাকে সামনে ঘুরিয়ে মুখোমুখি দাড় করালো শুভ।
চোখে চোখ রেখে মৃদু গলায় বললো,

—আমাকে ছেড়ে আর কখনো কোথাও যাবেনা তো?

আমি মাথা নাড়লাম।

—কক্ষনো না!

শুভ দুষ্টু হাসলো।বললো,

—কেঁদে কেটে মুখ চোখের কি অবস্থা করেছো বলোতো?

একটু থেমে আবার বললো,

—এমনিতেই যেমন পেত্নীর মতো দেখতে,এখন তো আরও ভয়ংকর লাগছে।

আমি রেগে কোমড়ে দু-হাত রেখে দাড়ালাম।

–আমি পেত্নী?

—তা নয়তো কি?

আমি একপ্রকার তেড়ে গেলাম।

—আমি না আপনি পেত্নী!

শুভ মিষ্টি হেসে বললো,

—আমি পেত্নী হবো কি করে?আমি তো পেত্নীর জামাই।

আমি কপাল কুঁচকে তাকাতেই সে হেসে ফেললো।বললো,

—এভাবে রাগী মুডে তোমাকে দেখতে যা লাগে না?মনে হয় টুপ করে গিলে খেয়ে ফেলি।
তোমাকে একেক রুপে একেক রকম লাগে মায়াবতী!
প্রতিটা রুপের তীরেই আমি বিদ্ধ হই মারাত্মকভাবে! কেনো এমন হই বলোতো?

আমার রাগ নিমিষেই লজ্জায় রুপ নিলো।মাথা নিচু করে ফ্লোরে পা ঘসি আমি।সামনে তাকানোর সাহস নেই।
শুভ এগিয়ে এসে মুখ আজলা করে দুহাত দিয়ে তুলে ধরে।
ফিসফিস করে বলে,

—তোমার রুপের সাগরে ডুব দিতে দেবে মায়াবতী?তোমাকে পরিপূর্ণ করতে দেবে?আমাকে পরিপূর্ণ হওয়ার সুযোগ করে দেবে?আমাদের ভালবাসার পূর্ণতা দেবে?

শুভর ফিসফিসানির শব্দে শরীরে শিহরন বয়ে চলে।নিজের অজান্তেই অজানা অনুভূতিতে কেঁপে উঠি বারবার।নিজেকে সামলাতে শুভর বলিষ্ঠ বুকে মাথা গুজে ফেলি।
শুভ আলতো হাতে জড়িয়ে নেয়।
বলে,

—ভালবাসি মায়াবতী! খুব ভালবাসি!.

,#সাহেব_বিবি_গোলাম
#নুশরাত_জেরিন
#পর্ব:১৮_এবং_শেষ

,
,
সকালের মিষ্টি রোদ জানালা ভেদ করে ঘরে ঢুকছে।চোখে রোদের আলো পরতেই আমি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম।
পাশে তাকিয়ে শুভর খোজ করে দেখি সে নেই।
হয়তো ওয়াশরুমে আছে।
কাবার্ড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের সামনে দাড়াতেই দেখি শুভ সেখানেও নেই।
তাহলে গেলোটা কোথায়?তাও আবার এতো সকাল সকাল?
শাওয়ার সেড়ে সুতির একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ধীরপায়ে সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে বুঝলাম ড্রয়িং রুমের সোফায় কেউ বসে আছে।
পাশে হাসি হাসি মুখ করে দাড়িয়ে আছে আপা আর শুভ।
আমাকে দেখেই শুভর হাসি মুখটা আরও বিস্তৃত হলো।
আপা তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এলেন।
আমাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,

—তাড়াতাড়ি এদিকে আয় পিহু,কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।

আমি আপার পিছুপিছু সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই থমকে গেলাম।সোফায় আমার মা বসে আছেন।মুখচোখ কি শুকনো তার!এ কটা দিনেই শরীর পুরো ভেঙে পরেছে।
অত্যাচারের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
মাকে দেখেই আমি তার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলাম।হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলাম।
আমার কান্না শুনে মা মাথায় হাত বুলালেন।তার চোখও ভরে এসেছে।
বললেন,

—পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেনো?আমি তো চলে এসেছি।

তার কথা শুনেও আমার কান্না থামলো না উল্টো বেড়ে গেলো।নাক টেনে টেনে বললাম,

—এতো শুঁকিয়ে গেছো কেনো মা?নিজের যত্ন নেওনা?

মা মৃদু হাসলেন।তিনি কিছু বলার আগেই শুভ মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—আপনি তো শুঁকিয়ে গেছেন আন্টি, কিন্তু আপনার মেয়েকে দেখেন?
কুমড়োর আকার ধারন করেছে না?

আমি চোখ পাকালাম।আপা শুভকে মৃদু ধমক দিলেন।

—আহ শুভ কি হচ্ছে টা কি?এমন ইমোশনাল সময়েও তুই ফাইজলামি করছিস?

শুভ হাসতে হাসতে মাথা চুলকালো।
বললো,

—আমি আবার কি করলাম,সত্যি কথাই তো বললাম!

আমি মাকে জড়িয়ে ধরেই বললাম,

—তুমি এ বাড়ি চিনে কিভাবে এলে মা?

—শুভ নিয়ে এলো।

—শুভ?

আপা বলে উঠলেন,

—হ্যাঁ শুভই নিয়ে এলো।তাছাড়া তোর মা তো আমাদের ও মা নাকি?তাকে ওমন নরকে আমরা কি করে ফেলে রাখি বলতো?তাই ভাবলাম এখন থেকে আমরা একসাথে থাকবো।

মা প্রতিবাদ করে উঠলো,

—না না তা কি করে হয়।মেয়ের শশুড়বাড়ি আমি এভাবে থাকি কিকরে?

আপা তবুও নাছোড়বান্দার মতো মাকে বোঝাতে লাগলেন।
অবশেষে মা রাজি হলো।
আমার কি যে আনন্দ হচ্ছিল! শুভর দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা সূচক হাসি দিতেই সে চোখ টিপে দিলো।
আমি হকচকিয়ে উঠলাম।
ছেলেটা এতো পরিমানে দুষ্টু কেনো কে জানে?তবে জিবনটা দুষ্টুমিতে পরিপূর্ণ হলে মন্দ হয় না।
বাস্তবতার শিকলে মোড়ানো বেদনাভর এ জিবনে শুভর মতো একটা মানুষ পেলে হেসে খেলে জিবনটা কাটানোই যায়।

,

সমাপ্ত।

(ভুল ক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

(কালকের পর্বটা লিখতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো তাই এতটুকু লেখা শেষ না করে ঝুলিয়েই রেখেছিলাম।)

,

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here