এক ফ্রেমে তুমি আমি পর্ব ১


.
.
“কে আছো বাচাও!বাচাও!বাচাও!আল্লাহ প্লিজ বাচাও!এই বজ্জাতের থেকে বাচাও আমাকে।আজ মনে হয় আমাকে খেয়েই ফেলবে।নাহ!!এখনোতো পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে।আচ্ছা কুত্তা পিছনে পড়লে আপু জানি মনে মনে কি পড়তো?ও হ্যাঁ মনে পড়েছে কুত্তা তোর বাপের নাম কি?কুত্তা তোর মায়ের নাম কি?”

আয়রা চোখ বন্ধ করে এগুলো বলতে বলতে দৌড়াচ্ছে।হঠাৎ কিছু একটার সাথে বাড়ি খেয়ে পড়ে গেলো।মনে মনে বলল সামনে পিলার আসলো কই থেকে।এটা বলেই চোখ খুলে দেখলো একটা ছেলে ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।আয়রা মনে মনে বলল ও তাহলে এটা পিলার না।তারপর উঠে দাড়িয়ে বলল”এই যে রাস্তার মাঝে পিলারের মতো দাড়িয়ে আছেন কেনো?”

সায়ান্ত ভ্রু কুচকে বলল”আর ইউ মেড?আমি পিলারের মতো দাড়িয়ে আছি নাকি আপনি দৌড়ে এসে আমার গায়ের উপর পড়ে গেছেন।”

“ইয়া খোদা কি মিথ্যে কথা আমি আপনার গায়ের ওপর পড়ছি নাকি আপনি আমাকে ফেলে দিছেন।”

“আপনার সাথে কি আমার শত্রুতা আছে নাকি যে আমি আপনাকে ফেলে দেবো।আর দৌড়াচ্ছিলে কেনো?”

“একটা কুত্তা সরি কুকুর পিছনে পড়ছিলো তাই।”

সায়ান্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল”কই কোনো কুকুরই তো দেখে যায় না।”

আয়ারা পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল”গেলো কোথায়?এখনইতো আমার পিছন পিছন আসছিলো।”

সায়ান্ত দাত কেলিয়ে বলল”এই বয়সেও কুকুর ভয় পান!!”

এই কথা শুনে আয়রার পিত্তি জ্বলে গেলে সে সিনা টান করে বলল”আমি কিছুই ভয় পাই না।”

সায়ান্ত আবার দাত কেলিয়ে বলল”হ্যাঁ এইজন্যই তো ভো দৌড় দিচ্ছিলেন।”

“সে সেটা তো আমি জগিং করছিলাম।”

“তাই নাকি!!তো বিকেলে কেউ জগিং করে নাকি?”

“আমি করি।আপনার কোনো সমস্যা?”

“নাহ!!কোনো সমস্যা নাই।আচ্ছা বাই আমার কুকুরটা চলে এসেছে।”

কুকুরের কথা শুনে আয়রা ভয়ে সায়ান্তের শার্ট আকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে বলল”আ আপনার কু কুত্তা কি কা কামড়ায়?”

সায়ন্ত খুব কষ্টে হাসি আটকে রেখে বলল”হুম কামড়ায় তো।আর আমার কুকুর কামড়ালে তোমাকে বত্রিশটা ইন্জেকশন দিতে হবে।”

আয়রা আর ভয় পেয়ে বলল” কককক কি! এএএত্তো গুলো ইন্জেকশন।আপনার কুকুরটাকে বলেন না চলে যেতে।”

“কেনো তুমি না কুকুর ভয় পাও না।”

“পপপপাই। অঅঅনেক ভয় পপাই।চলে যেতে বলেন না প্লিজ।”

এবার সায়ান্ত হেসে দিলো।সায়ান্তর হাসির আওয়াজ শুনে আয়রা পিছনে তাকিয়ে দেখলো কোনো কুকুর নেই।তার মানে ওকে বোকা বানানো হইছে।আয়ারা রেগে বলল”ইতড় ছেলে।আপনি আমাকে বোকা বানালেন কেনো?”

“তুমি মিথ্যে বলছিলে তাই।মিথ্যে বলে আমার কাছে কেউ পার পায় না।”

আয়রা দাত কিড়মিড় করে চুপিচুপি পানির বোতলটা বের করে ঢাকনা টা খুলে সায়ান্ত ভিজিয়ে দিয়েই ভো দৌড়।সায়ন্ত হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।পুরো শার্টটা ভিজিয়ে দিয়েছে।আয়রা পিছনে ফিরে সায়ন্তকে ঙেংচি কেটে আবার দৌড় দিলো সায়ান্ত পিছন পিছন ছুটলো কিন্তু ধরতে পারলো না।তার আগেই আয়রা রিকশায় উঠে পড়লো তারপর পিছনে তাকিয়ে সায়ান্তর দিকে চেয়ে দাত কেলালো।

সায়ান্ত আয়রাকে ধরতে না পেরে দাত কিড়মিড় করতে করতে চলে গেলো।
৳.
.
.
.
.
আয়রা বাসায় এসে কলিং বেল বাজালো একটুপর মিম এসে দরজা খুলে দিলো।আয়রা ঘরে ঢুকে বলল”কি রে রিয়া কই?”

“ঘুমায়।”

“ওহ,আমি একটু নাটক দেখি।একটু হটস্পট দিবি?”

মিম উদাস গলায় বলল”দোস্ত এক্কেবারে ফইন্নি হইয়া গেছি।একটা এমবিও নাই।”

“তাইলে এখন দেখমু কেমনে?”

“শোন একটা বুদ্ধি আছে।”

“কি বুদ্ধি?”

“পাশের ফ্য্লাটে ওয়াইফাই আছে।দেখি চাইলে পাসওয়ার্ড টা দেয় কি না।”

“পাশের ফ্য্লাটে কারা থাকে?”

“আজকে চারটা ব্যাচেলর ছেলে উঠছে।”

“ও তাইলে তো নেওয়া ই যায়।চল গিয়া একটু পাসওয়ার্ড টা চাই।”

মিম আর আয়রা দরজা খুলে পাশের ফ্য্লাটে টোকা দিলো।একটুপর একটা ছেলে দরজা খুলতেই আয়রা বলল”হাই,আমি মুমতাহিনা আয়রা।আর ও আমার ফ্রেন্ড মিম তালুকদার।আপনি?”

“নিরব হাসান।” ছেলেটা হালকা হেসে বলল।

৳”ওহ!!আপনি কোন ভার্সিটিতে?

“জগন্নাথ।আপনারা?”

“ওয়াও আমরাও।কোন ইয়ার?”

“ফোর্থ ইয়ার।আপনার?”

“ফার্স্ট ইয়ার।আপনি কি একাই থাকেন এখানে?”

“না আমার তিনটা ফ্রেন্ড আর আমি।”

“ওহ!!যদি কিছু মনে না করেন তাহলে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড টা দিবেন?”

“আসলে আমিতো জানিনা।সায়ান্ত জানে।ও আসুক তখন আপনারা ওর থেকে চেয়ে নিয়েন।”

“ওহ!উনি কখন আসবেন?”

“এইতো একটু পরই।”

“আচ্ছা।বাই।”

মিম আর আয়রা ওদের ফ্য্লাটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।তারপর মিম বলল”দেখছিস কি শয়তান বলে কি না পাসওয়ার্ড কি সে জানে না।”

“পাসওয়ার্ড তো আমি নিয়েই ছাড়বো।খালি সায়ান্ত নাকি বায়ান্ত ওইটাকে আসতে দে।”

মিম হেসে বলল”যদি না দেয়?”

“চাপাতি দিয়া পিছ পিছ করবো।”

মিম আবার হাসলো সাথে আয়রাও হাসলো।
.
.
.
.
.
রাত আট টা সায়ান্ত বাসায় এসে কলিং বাজাতেই নিরব দরজা খোলার আগেই ওই পাশের ফ্য্লাট থেকে আয়রা দরজা খুলে বলল”এক্সকিউজ মি।”

একটা মেয়ে গলা পেয়ে সায়ান্ত পিছনে ঘুরে আয়রাকে দেখেই বলল”ইউ!”

আয়রাও অবাক হয়ে বলল”আপনি?”

“আপনি এখানে কি করেন?”

আয়রা বলল”তার আগে বলেন আপনি এখানে কি করেন?”

“এখানে আমি থাকি।”

“আমিও থাকি এখানে।”

ওদের কথার মধ্যে নিরব আর মিম দুজনেই চলে আসলো।তারপর নিরব বলল”দোস্ত ওরা বলছে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড দিতে।”

সায়ান্ত মুখ বেকিয়ে বলল”গার্লস নট এলাও।বয়েজরা হলে দিতাম।”

এবার আয়রা রেগে বলল”আমিও দেখি আমাদের না দিয়ে কিভাবে ওয়াইফাই চালায়।”

এটা বলে মিমকে নিয়ে দরজা অফ করে দিলো।সায়ান্তও রুমে ঢুকে দরজা অফ করে দিলো।রুমে এসে আয়রা বলল”লাউড দিয়ে গান ছাড় যাতে পড়তে না পরে।”

মিমও গান ছেড়ে দিলো লুঙ্গি ডান্স।গানের শব্দে রিয়া ঘুম থেকে উঠে বলল”কি রে পাগল হইছিস এতো জোরে গান ছাড়ছিস কেনো?”

“পাশের ফ্য্লাটের বান্দর গুলোকে টাইট দেওয়ার জন্য।”

ছেলেদের টাইট দিতে রিয়ার ভালোই লাগে তাই আর কোনো কথা না বলে তিনজনই ওরা ধুরা লুঙ্গি ডান্স দিতে লাগলো।এক মিনিট পার হতে না হতেই দরজায় কে যেনো নক করলো।আয়রা গিয়ে দরজা খুলতেই সায়ন্ত বলল”কি সমস্যা?এতো জোরে কেউ গান চালায়?”

“আপনার সমস্যা আমাদের না।আমরা নিজেদের ফ্য্লাটে চালাইছি।ওকে সো স্টপ ইউর থোতা।নাহলে থোতাটা ভোতা করে দেবো।”

“বেয়াদব কোথাকার।ঠিকাছে কাল ভার্সিটি আসো এমন রেগিং দিবো যে বলবে ছাইড়া দে বাবা কাইন্দা বাচি।”

“ওকে দেখি কি করেন।কিন্তু গান বন্ধ হচ্ছে না।”

পিছন থেকে নিরব এসে বলল”বোইন গানটা বন্ধ করো না প্লিজ পড়তে বসতে পারছি না।”

আয়ারার পিছন থেকে মিম এসে বলল”ওখে তবে আমাদের ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড টা দিতে হবে।”

নিরব পাসওয়ার্ডটা ওদের দিয়ে দিলো।সায়ান্ত রেগে ঘরে চলে গেলো।নিরবও পিছন পিছন গেলো।সায়ান্ত নিরবের কলার ধরে বলল”শালার পুত ওই শাকচুন্নি ডাইনিদের ওয়াইফাই দিতে গেলি কেনো?”

“না দিলেতো শান্তিতে ঘুমাতে দিতো না।”

“দাড়া কাল যদি ওদের শায়েস্তা না করছি আমার নামও সায়ান্ত রহমান না।”
.
.
.
.
.
পরেরদিন মিম, আয়রা আর রিয়া ভার্সিটিতে গেলো।ওদের দেখে সায়ান্ত ডাক দিলো।ওর সাথে নিরব আর সাজিদ,নিলয়ও ছিলো।আয়রা ওদের দিকে এগুতে এগুতে মিম আর রিয়াকে বলল”এখন আমাদের রেগিং করবে শয়তান গুলা।শোন একদম ভয় পাবি না।”

ওরা আসতেই সায়ান্ত বলল”কি খবর তোমাদের?”

“ভালো।” আয়রা দায়সারা জবাব দিলো।

সায়ান্ত বাকা হেসে বলল”ওকে তাহলে এখন থেকে ভালো থাকবে না।আমি তোমাদের সিনয়র সো নো বেয়াদবি।যাও ভার্সিটির ক্যাম্পাসে গিয়ে কান ধরে দশবার উঠবে আর বসবে।

আয়রা রেগে বলল”কেনো?”

“আমি বলেছি তাই।যাও এখনি।”

আয়রা দাত মুখ খিচে ক্যাম্পাসে গিয়ে কান ধরে উঠবস করলো।সবাই ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে আবার কেউ ভিডিও করছে।আয়রা মনে মনে বলছে”এর শোধ যদি আমি না তুলেছি তাহলে আমার নামও আয়রা না।”

উঠবস করে কারো সাথে কথা না বলে চলে গেলো আয়রা।সাথে মিম আর রিয়াও গেলো।ক্লাস শেষে আয়রা সায়ান্তর সামনে আসলো।সায়ান্ত ওর দিকে চেয়ে বলল”কিছু বলবে?”

“হ্যাঁ বলবো।তবে কানে কানে।”

“কিহ!”

“হ্যাঁ এই কথা শুধু আমি আপনাকেই বলবো।”

সায়ান্তর আয়রার কথা ঠিক লাগছে না।ও বলল”না কানেকানে বলা লাগবে না।এভাবেই বলো।”

“না না প্লিজ।”

আয়রার জোরাজোরিতে সায়ান্ত রাজি হলো।আয়রা ওর কান বরাবর মুখ নিয়ে জোরে একটা চিল্লানি দিয়ে ভো দৌড়।ঘটনার আকষ্মিকতায় সায়ান্ত কিছুই বুঝলো না।যখন বুঝতে পারলো সাথে সাথে আয়রার পিছনে দৌড়াতে লাগলো।আয়রা দৌড়াতে দৌড়াতে সামনে দেখলো একটা কুকুর আসছে আর পিছনে সায়ান্ত কি করবে এখন।

চলবে…

#এক_ফ্রেমে_তুমি_আমি
#পর্বঃ০১
#Arshi_Ayat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here