#সিঙ্গেল_মাদার
#ফারিন
পর্ব: ০২
সৌমিক আলাওল হলে থাকে , সৌমিকের সাথে একই হলে রাহাত থাকে
সৌমিক রাতে বারান্দায় এসে বসে সিগারেট খাচ্ছে আর রাহাত ওকে ডাক দিলো
– মাম্মা কাহিনী কি ?
সৌমিক ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করল “কিসের কাহিনী” ?
“ঐ যে আজ হন্ত দন্ত হয়ে ইরিন রে নিয়া ছুটলা” বলেই রাহাত হাসতে লাগলো
– তোর মতো আমার ছুকছুকানি অভ্যাস নাই যা করার সরাসরি বলি ও করি, মেয়েটা অসুস্থ হয়ে গেছে আমাদের দায়িত্ব ছিল সেইফলি দেখভাল করাটা সেটাই করেছি ।
– কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আগমনী বাতাসে অন্য রকম সুর , যে ছেলের মেয়েদের প্রতি এতো অনীহা সে কি না আজ !!
অন্য কেউ হলে বিষয় টা খুব সাধারণ ছিল-
– রাহাত থামবি এটাও খুব সাধারণ ছিল , তুই জিলাপির মতো প্যাচাচ্ছিস
– সময় কথা বলবে কে কতোটা কাকে পেচাচ্ছে মাম্মা
– আচ্ছা বাদ দে অনুষ্ঠান বাকিটা ম্যানেজ করলি কিভাবে ?
– আমি আর মিথি মিলে সামলে নিয়েছি
– এই মিথিকেই কি বিরক্ত করেছিলি ?
– রাহাত মুখটা নামিয়ে বললো “হুম”
– আবার মেয়েটাকে বিরক্ত করিস নি তো ??
– না না আমি ওর কাছে সরি বলে নিয়েছি –
– সিগারেটে টান দিতে দিতে বললো রাহাত সাহেব এতো ভালো হলো কবে থেকে ?
– আমার বোন টা ভালো করে দিছে আমাকে ।
– বোন কে ??
– আরে আমি ইরিন এর কথা বলছি
– ইরিন কে বোন ও বানিয়ে ফেললি ?
– আসলে ও সেদিন আমাকে ওভাবে না বললে আমার ভুল আমি বুঝতাম না রে , তাই ওকে আমি বোন ই বলবো ।
– যাক কেউ তো তোকে বদলালো এটাই আলহামদুলিল্লাহ ।
দুজন বহুদিন পর আড্ডায় মেতে উঠলো।
সেদিন রাতে ইরিনের আর ঘুম হয় নি , সৌমিকের কথা বলা , সৌমিকের কেয়ার , সৌমিকের কন্ঠস্বর , মোটা ফ্রেমে ঢেকে থাকা চোখ এগুলো ভেবে আর দুচোখের পাতা এক করতে পারে নি , একেই বুঝি প্রেমে পড়া বলে, শেষ রাতে ইরিন নিজেকে কনর্ফাম করে দিয়ে বললো “ইরিন জামান তুই প্রেমে পড়েছিস” আবার নিজেই দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিল লজ্জায় , কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো , সকাল বেলা উঠে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো মিথি চুল আচড়াচ্ছে আলো ফোনে কানে ব্যাস্ত –
ইরিন বেড থেকে নেমে মিথি কে জাপটে ধরে ঘোরাতে লাগলো
– এই ছাড় ছাড় কি হলো ?
– হয়ে গেছে মিথি
– মিথি অষ্টম আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল কি হয়ে গেছে ??
– আমি প্রেমে পড়েছি মিথি আই এম ইন লাভ
– তুই ঠিক আছিস ইরিন ??
– “বেবি আমি ফুল ক্রাশড, শেষ রাতে কনর্ফাম হয়েছি আমি প্রেমে পড়েছি” কথা গুলো বলছে আর ইরিনের মুখে যেন অন্য রকম খুশি চমক দিচ্ছে
– তা কার প্রেমে পড়লি শুনি ??
– ইরিন এবার মিথিকে ছেড়ে দিয়ে মুখটা নিচের দিকে করে বললো “সৌমিক ভাইয়ার প্রেমে পড়ছি”
– কিইইইইই শেষমেষ সৌমিক ভাইয়ার প্রেমে ?
– এভাবে বলছিস কেন কুত্তি ? মনে হচ্ছে আমি কোন জংলি শিকারির প্রেমে পরেছি ।
– জংলি শিকারি হলেও তো ভালো ছিল কিন্তু ছেলে তো রাজনীতি তে যুক্ত
– ওতে আমার কোনো সমস্যা নেই সখি শুনিস নাই “পিরিতি কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না”
– তুই সত্যি বলছিস ? ভেবে বলছিস তো ? সৌমিক ভাইয়ার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি তোদের পার্সোনাল লাইফে প্রভাব ফেলে কি করবি ??
– ইরিন বিজয়ী কন্ঠের ভঙ্গিমাতে বললো “আমি তার ঢাল হয়ে সামনে দাড়াবো মহাপুরুষ কাজী নজরুল ইসলাম “নারী’ কবিতায় বলেছেন-
“কোনো কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি
প্রেরণা দিয়াছে শক্তি দিয়াছে বিজয়- লক্ষী নারী”
– তোর সাহসিকতা হয়তো তোদের এক করে দেবে , কিন্তু ঝড় সামাল দিতে পারবি তো এমন অনেক কাপলদের ভেঙে যেতে দেখেছি তোর ক্ষেত্রে এমন কিছু চাইনা দোস্ত তাই এসব বলা ।
– তোর মতো বন্ধু পাশে থাকলে কোনো বিপদ আমাকে ছুঁতে পারবেনা মিথি ।
– মিয়া বিবি রাজী তো কিয়া কারেগা কাজী বলেই ইরিন কে জড়িয়ে ধরলো
– “কি ব্যাপার আমি ফোনে ব্যাস্ত ছিলাম এখানে দুই জনের কি এতো পিরিতি চলতেছে শুনি যে একদম জড়াজড়ি করে একাকার ”
– আলো শুনলে তো তুই ও লাফাবি
– তো পেশ করা হোক কি সেই খবর
– আমাদের ইরিন সৌমিক ভাইয়ার প্রেমে পরেছে
– আলো অবাক হয়ে বললো “আল্লাহ বলিস কি কিরে ইরিন কিভাবে কি হলো” ??
– “ঐ যে তার কেয়ারিং , আমাকে বকা দেওয়া ইসস আমি ওসবে প্রেমে পড়ে গেছি” বলেই ইরিন দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিল মজা করে।
– কি সাংঘাতিক রে প্রেমে পড়ে গেলি ? তা সে কি কিছু জানে ?
– আমার কি তার সাথে কথা হয়েছে নাকি যে বলবো ?
– আলো বলে উঠলো “তোর কি মাথা খারাপ নাকি যে তুই বলবি ” !
– হুম প্রেমে যখন আমি পরেছি তখন আমিই বলবো , অপেক্ষা করার মধ্যে আমি নেই বাপু “অপেক্ষা শব্দটা খুবই জঘন্য” দেখা যাবে আমি তার অপেক্ষায় দিন গুনছি সে আমাকে বিয়ের কার্ড ধরিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ওসব আমার দ্বারা হবে না ।
– কিরে মিথি এই মেয়ে পাগল হলো নাকি –
– এ লারকি গেয়া বলেই ওরা হাসতে লাগলো
– তোরা থামবি আমার ইনফরমেশন লাগবে আর এটা তোদের ই করতে হবে ।
– ওক্কে বেহেনজী তাই হবে আজ ৯:০০ টাই ক্লাস আছে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেন সবাই বলেই মিথি চলে গেল ।
ক্লাস ক্যাম্পাস ভালো মতোই চলছিলো তার মধ্যে সৌমিক কে লুকিয়ে চুরিয়ে ফলো করাও চলছিল ।
সন্ধ্যায় সবাই দ্বিতীয় তলার বড় বারান্দা তে আড্ডা দিচ্ছে ইরিন , আলো আর মিথি
আশা এলো ওদের কাছে ওদের অনেক প্রিয় একটা আপু , আশা ক্যামিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে ফোর্থ ইয়ারে পড়ে ।
– আশা কাছে আসতেই মিথি বলল “আশা আপু একটা হেল্প করো না ”
– বল কি সাহায্য ?
– সৌমিক ভাইয়ার ডিটেলস লাগবে
– কেন রে ??
– আমাদের ইরিন রানী-
– “মিথি ভালো হচ্ছে না” – ইরিন লজ্জা পেয়ে বললো
“না আপু আমার কিছু লাগবে না ”
– বুঝেছি আমার ইরিন রানী প্রেমে পরেছে তবে সৌমিকের উপর বলেই হেসে দিল ,
আচ্ছা অপেক্ষা কর আমি ফোনে কথা বলে দেখছি , আশা ওর একটা ফ্রেন্ডকে ফোন দিল কথা শেষ করে ফোন কেটে আবার ওদের কাছে এলো
“সৌমিক আহসান , বাবা-মা এর একমাত্র ছেলে বরিশালের থাকে সবাই , ম্যানেজমেন্ট ডির্পাটমেন্টের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ।
শ্যামলা বর্নের ছেলেটা হাইট ওয়েট দিয়ে একদম ফিট , রাজনীতি তে যুক্ত আছে , বেশির ভাগ সময় তাকে পাঞ্জাবী জিন্সে দেখা যায় , সবার সাথে মিশুকে , ক্যাম্পাসে মেয়েদের কাছে ভাইয়া নামেই পরিচিত এর বেশি কেউ ভাবলে সে কখনো পাত্তা পায় নি সৌমিকের কাছে” – বলেই থামলো আশা
– তবে আমার কি হবে আশা আপু ?
– ভয় পাচ্ছিস কেন জানিস না “কাউকে ভালোবাসলে তাকে জয় করে ছিনিয়ে নিতে হয় ” তুই ব্রেভ গার্ল ভয় আজ না হলে কাল ছেলে তো পটবেই আচ্ছা তোরা থাক আমি গেলাম – বলেই আশা চলে গেল
– তুই ঐ ছেলেকে বাদ দে দোস্ত !
-তোরা আমার বন্ধু না শত্রু ?
সে আমার চোখের ঘুম হারাম করে দিয়েছে আর তোরা কি না বলেছিস আমি ভুলে যাব কখোনোই সম্ভব নয় ।
– এই মেয়ের মাথা সম্পূর্ণ গেছে বুঝলি আলো
– সে আর বলতে , সেদিন যে কেন মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল , পড়ে গিয়ে সৌমিকের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে আর এদিকে তোর আর আমার মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছে
– ওকে ওকে লাগবেনা কারো সাহায্য বলেই উঠে যেতে গেল দুজন মিলে ওর রাগ ভাঙালো
হঠাৎ ইরিনের ফোন বেজে উঠল একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে
– আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন ?
– ওয়ালাইকুমুস সালাম আমি সৌমিক ।
ইরিন খুশিতে লাফিয়ে উঠলো ওদের ইশারায় বোঝালো সৌমিক ফোন দিয়েছে ওরা অবাক চোখে চেয়ে আছে ইরিনের দিকে
– ওহ ভালো আছেন ??
– হুম তুমি কেমন আছো ?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি কেমন আছেন ?
– হুম আমিও ভালো আছি , এখন শরীরের কি অবস্থা ?
– জ্বি আগের থেকে ভালো আছি ।
– ঠিকঠাক মতো খাওয়া দাওয়া করছো তো ? নয়তো আবার অসুস্থ হয়ে পরবে ।
– জ্বি ভাইয়া ।
– সেদিনের পর থেকে অনেক টা ব্যাস্ত ছিলাম তাই খোঁজ নিয়ে উঠতে পারিনি ।
– সমস্যা নেই ভাইয়া ।
– আচ্ছা ভালো থেকো আল্লাহ হাফেজ ।
ফোন কেটে ইরিন খুশিতে লাফাচ্ছে সৌমিকের ফোন দেওয়ায় ।
– মিথি বলে উঠলো “তোর রাজকুমার ফোন দিল তবে ”
– ইসস আমার প্রতি কতো কেয়ারিং দেখছিস
– আলো মিথি কে চোখ টিপ দিয়ে বললো ইরিন কে “ওটা কিন্তু দায়িত্ব বোধ থেকে দিয়েছে ”
– “দেখছিস তোদের আবার অশুভ কথা শুরু হয়ে গেল কোথায় আমার জন্য একটু দোয়া করবি তা না” বলেই ইরিনের মন খারাপ হয়ে গেল
– ইরিন রানী আমারা একটু মজা করছিলাম এতো রাগ করে না বলেই ইরিনের দুই গাল ধরে মিথি আর আলো টান দিল ওমনি মিথি রেগে গিয়ে ওদের তাড়া শুরু করলো ।
চলবে….