#সিঙ্গেল_মাদার
#ফারিন
পর্ব:০৭
ইরিনের মনের মধ্যে এক ঝড় বয়ে যাচ্ছে যা শুধু সেই টের পাচ্ছে , সব কিছুর চিন্তা একসাথে কাজ করছে ।
আলো ওর অবস্থা দেখে বলে উঠলো
– এতো টেনশন করিস না ইরিন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে
– আমার মাথা কাজ করছে না রে , আম্মু আব্বু কি বলবেন , আমাদের মেনে নেবে তো ।
– সব ঠিক হয়ে যাবে তুই চিন্তা করিস না ।
– তাই যেন হয় ।
– ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে ??
– হুম কথা হয়েছে কিন্তু বললো ওর আসতে দেরি হবে , রাহাত ভাইয়া কে দিয়ে টিকিট দিয়ে পাঠাবে
– আচ্ছা তবে অপেক্ষা কর ।
কিছুক্ষণ পর রাহাত এসে টিকিট দিয়ে গেল, ইরিন কে বুঝিয়ে সে ও চলে গেল ।
ইরিন সৌমিককে ফোন করলো একটা
– আসসালামুয়ালাইকুম কোথায় তুমি ?
– ওয়ালাইকুমুস সালাম আমি ব্যাস্ত আছি এখন, কিছু বলবে ?
– আজ তো আমাদের ঢাকা যাওয়ার কথা তুমি কি ভুলে গেলে ?
– না ভুলি নাই , এক কাজ কর তুমি বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে অপেক্ষা করো আমি চলে আসবো কাজ সেরে ।
– ইরিন রাগ করে বললো “তোমার আজকের দিনে ও ব্যাস্ততা কমছে না ” !
– রাগ করো না একটু সমস্যার মধ্যে আছি সমাধান করেই চলে আসবো
– আচ্ছা ঠিক আছে ।
ইরিন ৫ টার দিকে বেরিয়ে পড়লো অপেক্ষা করছে টিকিট হাতে নিয়ে, সৌমিক কে একভাবে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু কোনো রিসপন্স নেই ।
সব রকম বাজে চিন্তা মাথায় এসে ভর করছে , রাহাত, আলো , মিথি সবাই কে ফোন দিয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না ।
ইরিন কিছুতেই বুঝতে পারছে না ওর কি করা উচিত ভাবছে একবার ফিরে যাবে আর একবার ভাবছে সে একাই যাবে ।
মন স্থির করতে পারছিল না ।
ইরিন কেমন অসুস্থ বোধ করতে শুরু করলো তখন তার মাথায় একটা কথাই এলো ওকে অসুস্থ হওয়া যাবে না এখন সে একা না তার মধ্যে বেড়ে উঠছে আরো একটা প্রাণ ।
ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে নিয়ে হাত মুখে পানির ঝাপটা দিল ।
সিদ্ধান্ত নিল সৌমিক না আসুক সে একাই বাড়ি ফিরবে আজ , ভয় পেলে চলবে না ।
পথ চেয়ে বসে আছে এই বুঝি সৌমিক এলো কিন্তু সময় শেষ হয়ে গেল সৌমিক আর এলো না ।
ইরিন কান্না করতে করতে চোখ মুছে বাসে উঠলো আজ বড্ড বেশি একা লাগছে ইরিনের মনে হচ্ছে কোথাও অনেক বড় একটা ভুল হয়ে গেছে ।
বাসের মধ্যে চোখের পাতা এক করতে পারলো না , সৌমিক আর ফোন উঠালো না ।
বাসায় ফিরলো ইরিন কলিং বেল বাজাতেই ইপ্সিতা গেট খুলে দিল
– আপু তুই !!
কোনো কথা ইরিনের মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে না বড্ড ক্লান্তি চিন্তা আর কান্নার শুকিয়ে যাওয়া জলের ছাপ বসে আছে মুখ জুড়ে , চুল গুলো এলোমেলো এক বিবর্ণ রূপ ফুটে উঠেছে ইরিনের মুখে ।
– “তোকে দেখতে এমন দেখাচ্ছে কেন” ?
ইরিন বিরক্তি মুখে বললো
– “ভেতরে যাইতে দিবি কথা না বলে ” বলেই নিজের রুমে চলে গেল ।
ইপ্সিতা আব্বু আম্মু কে ডেকে আনলো
– “ইরিন মা তুই হঠাৎ চলে এসেছিস যে কোনো খবর না দিয়ে ” !!
ইরিন রাগ করে বললো
– কেন মা আমার বাড়ি আসতে গেলে কি আমাকে পারমিশন নিয়ে আসতে হবে ??
জামাল হোসেন বুঝতে পারলো কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে নয়তো ইরিন এভাবে কথা বলার মতো মেয়ে না পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে উঠলো
শাহানা তুমি কি শুরু করলে বলোতো ? মেয়েটা কতদিন পর বাড়ি এলো আর তুমি কি না এসব প্রশ্ন করছো !
ওকে বিশ্রাম নিতে দাও ।
বলেই সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে এলো জামাল সাহেব ।
ইরিন খাওয়া দাওয়া করে রুমে গিয়ে ঢুকলো আর বের হলো না , কেউ আর কোনো প্রশ্ন করলো না ।
বিছানায় চিন্তিত মুখে শাহানা বেগম বসে আছে
– ওতো চিন্তা করছো কেন ?
– আমার কেন যানি মেয়ের আচার আচরণ ভালো লাগছে না ।
– কোনো একটা সমস্যা হয়েছে এটা বোঝা যাচ্ছে কিন্তু ওকে ঘাটিও না ও নিজে থেকেই এসে বলুক সময় দাও ওকে ।
– আমার ভয় করছে ইরিনের বাবা ।
– কিচ্ছু হবে না চিন্তা করো না ।
দুই দিন কেটে গেল বাড়ি পৌঁছানোর পর থেকে সৌমিকের ফোন অফ দেখাচ্ছে , কোথাও থেকে কোনো খোঁজ পেল না , সবসময় খোঁজ নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোনো সংবাদ পাচ্ছে না ।
ইপ্সিতা রুমে এসে ভয়ে ভয়ে ইরিনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো
– আপু তুই কি কোনো সমস্যায় আছিস ??
– ইরিন এবার আর রাগ করলো না
“হুম জরুরি কথা আছে আব্বু আম্মুর সাথে”
– তাহলে খুলে বলছিস না কেন , ওনারা তোকে জিগ্যেস করতে পারছে না কিন্তু টেনশন করছে ।
– আচ্ছা তুই যা আমি আসছি !
ইরিন নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না ইপ্সিতা যাওয়ার পর পরই কান্নায় ভেঙে পড়লো , আজ মনে হচ্ছে আকাশের সকল কালো মেঘ যেন ওকে জাপটে ধরে আছে ।
নিজেকে থামিয়ে হাত মুখ ধুয়ে বাবার রুমে গেল ।
– আব্বু আসবো ?
– আয় মা-
জামাল সাহেব, শাহানা বেগম উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে
– আব্বু আমি অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছি , আমাকে মাফ করে দাও ।
– তুই তো বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে আমার মনে হয় না আমার মেয়ে কোন ভুল করতে পারে ।
শাহানা বেগম রাগান্বিত হয়ে বললেন
– আমি জানতাম তোমার মেয়ে কিছু একটা ঘটিয়ে এসেছে , আগেই বলেছিলাম এতো স্বাধীনতা দিও না মেয়েকে
– আহ তুমি থামবে !
– তুই বল মা , কি বলবি
– বাবা আমি বিয়ে করেছি , আমি প্রেগন্যান্ট ।
কথাটা বলতে দেরি কিন্তু শাহানা বেগম থাপ্পরটা মারতে দেরি করলো না
– তুই কিভাবে পারলি ইরিন এসব করতে ?? আমাদের কথা , মান সম্মান এর কথা একবার ভাবলি না ??
জামাল সাহেব এবার যেন চুপ হয়ে গেল সে ভাবতে পারে নি তার মেয়ে এমন কিছু করবে
– আমাকে মাফ করে দাও মা
– ” তুই মাফ পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করিস নিজেকে ? তোর মুখ দেখার আগে মরে গেলাম না ” কেন বলেই কান্না শুরু করলো শাহানা বেগম
– ইরিন কিভাবে পারলি মা আমার সম্মান নিয়ে ছেলে খেলা করতে ? কিসে অপূর্ণ রেখেছিলাম তোকে ? মে আজ আমাদের মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেললি ,
তোর কাছ থেকে এটা আশা করিনি আমি ।
ইরিন পায়ের কাছে বসে কান্না করতে করতে বললো
– মাফ করে দাও বাবা ভুল হয়ে গেছে অনেক বড় ।
চলবে…