#সুখপাখির_খোঁজে 💔
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_৭
.
নাদিরার বেডের পাশে একটা টুল নিয়ে বসে আছে ইয়াসিন। আজ সে তার ভুল বুঝতে পারছে। নাদিরার বাম হাতটা নিজের দু হাতের মুঠোয় নিয়ে নিজের কপালে ঠেকালো। তার চোখ থেকে না চাইতেও পানি গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। তার কন্ঠসর মৃদু কাঁপছে।
-” জানো নাদিরা! আমি হয়তো কোন পূণ্য করেছি! যার উপহার স্বরুপ আল্লাহ তোমাকে আমায় দিয়েছে। কিন্তু কথায় আছে না দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম না বোঝা! আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমি আমার জীবনে তোমার গুরুত্ব বুঝতে পারি নি। হ্যাঁ উপমাকে নিয়ে আমি আসলেই সিরিয়াস ছিলাম। কিন্তু সেটা যে আমার ভালোবাসা ছিলো না তা আমি আজ বুঝতে পারলাম। জানো নাদিরা! আমি আজও তোমাকে একলা ফেলে উপমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমি জানি আমি ভুল করেছি। আজ উপমা আমার সাথে প্রেম করতে ডাকে নি। সে আমার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে মিলে আমাকে ধোকা দিয়েছে। তন্ময়ের সাথে রিলেশনশিপে গিয়েছে। ”
ইয়াসিন হালকা হাসলো। আবার বলতে শুরু করলো,
-“কিন্তু উপমা যে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে তাতে আমার কষ্ট হওয়া উচিত ছিলো! কিন্তু বিশ্বাস করো একটুও কষ্ট হয় নি আমার! কেন বলোতো?”
কথাটা বলে ইয়াসিন একটু থামলো। চোখ বুজা অবস্থায় আবার বলল,
-” আমার কষ্ট হয়েছে! কিন্তু উপমা আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ায় না! তোমার অতিতের গল্প শুনে। আর সবচেয়ে বেশি নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছে কারণ তোমার এই অবস্থার জন্য কোন না কোন ভাবে আমিও দায়ী! কিন্তু আমি আর তোমাকে কষ্ট পেতে দেবো না। আজ থেকে তোমার প্রাপ্য সকল অধিকার, সকল সম্মান আমি দিবো। এই পাঁচ মাসে যত অবহেলা করেছি তার চেয়ে বেশি ভালোবাসবো! তুমি শুধু আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ!”
কথাটা বলেই ইয়াসিনের শরীর মৃদু কেঁপে উঠলো। হয়তো কান্না করতে চাইছে।
.
নাদিরার সব রিপোর্ট চেক করছে ড. ইরাম। নাদিরার সবই ঠিক আছে, শুধু হার্টবিট একটু বেশি, সেটা ঔষধ নিলে মোটামুটি ঠিক হয়ে যাবে। নাদিরার প্রধান সমস্যাটাই হলো ওর মানসিক ট্রমা! এখান থেকে ওকে বের করতে হবে।
লাবনি ডক্টরের কেবিনে এসে নক করে। ড. ইরাম লাবনিকে দেখে ভিতরে আসতে বলে। লাবনি বেশ অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
-“সব ঠিক আছে তো ডক্টর? নাদিরা ঠিক হয়ে যাবে তো!”
ড. ইরাম সোজা হয়ে বসলেন।
-“টেনশন করবেন না মিসেস লাবনি! আমি আগেও বলেছি নাদিরার কোন মরণব্যাধি হয় নি। কিন্তু তাকে এই ট্রমা থেকে বের করতে হবে। এটাই আসল মেডিসিন। ”
ড. ইরাম একটু থেমে আবার সন্দেহী গলায় বলল,
-“আচ্ছা নাদিরার অতিত সম্পর্কে তো জানি কিন্তু তার বর্তমান কেমন? নাদিরা কেন আমাকে বলতে চায় না? যতবার আপনি বলতে চেয়েছেন ততবার কেন ও বাহানা দিয়ে থামিয়ে দেয় আপনাকে? ”
লাবনি ড. ইরামকে নাদিরার সব কথাই বলে! যা শুনে ড. ইরামের চোয়াল শক্ত করে নেয়। অনেক হয়েছে আর না।
.
ইয়াসিন মাথা তুলতেই দেখে নাদিরার চোখ খোলা! তার মানে কি নাদিরা সবটা শুনেছে! নাদিরা ইয়াসিনের দিকে কঠিন চোখে তাকায়! ঝট করে হাতটা সরিয়ে নেয়। এই হাতেই স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল তাই হাতটা এভাবে টান দেওয়ার ফলে সে বেশ ব্যাথা পায়। আহ করে উঠতেই ইয়াসিন তাড়াতাড়ি নাদিরার হাতটা ধরে দেখতে নিলেই নাদিরা আবার সরিয়ে নেয়। ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“আমি নিজেকে সামলাতে পারি! আপনি এখানে আপনার সময় কেন অপচয় করছেন?”
ইয়াসিন করুন মুখে বলল,
-” আমি সময় অপচয় করছিনা! সময়ের সৎ ব্যবহার করছি। এভাবে হাত নাড়িও না ব্যাথা পাবে!”
নাদিরা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
-“কত ব্যাথা পেয়েছি তার কোন হিসেব নেই! আজ আর নতুন করে কি ব্যাথা পাবো?”
ইয়াসিনের বুকটা ধক করে উঠলো। মাথা নিচু করে নাদিরাকে সাহায্য করছে।
-” নাদিরা আমি সত্যি অনুতপ্ত নিজের কাজের জন্য। ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখও আমি রাখিনি! কিন্তু একটা কথাই বলবো একটা সুযোগ দাও! নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলবো। শুধু একটা সুযোগ!”
নাদিরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। বাইরে ওই মেঘলা আকাশের দিকে তার চোখ স্থির। চোখের কোনে জমে থাকা পানিরা জানান দিচ্ছে যেকোন সময় তারা টুপ করে বেয়ে পড়বে! আজ বাইরের ওই আকাশের মতো নাদিরার চোখ দুটোও বড্ড অভিমানী হয়ে আছে। ঠোঁট দুটো থরথর করে কাঁপছে। বাইরেই দৃষ্টি রেখে বলল,
-“আজ উপমা আপনার জীবন থেকে না গেলে কি এই সুযোগটা চাইতেন?”
ইয়াসিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
-“হয়তো চাইতাম! কিন্তু সময়টা আরো পরে হতো! সত্যি বলতে আমার ভিতর অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছিলো, তা শুধু তোমার জন্য! উপমার জন্য যা ছিল তার সবটাই আবেগ! তুমি হয়তো জানো না উপমার সাথে আমার রিলেশনের এক বছরও হয় নি! আগে কোন মেয়ের প্রতি আসক্তি আসে নি। উপমাকে দেখে ভালো লাগে কিন্তু সেটা যে ভালোবাসা ছিলো না তা আমি জানতাম না। আজ যখন সে আমাকে ছেড়ে যায় আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় নি। কেন হয়নি তাও আমার অজানা। উপমার সাথে দেখা করতে গেলেও মনটা এখানে পড়েছিল! কারণ তোমাকে অসুস্থ ফেলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ যদি না যেতাম উপমার সত্যিটা জানা হতো না।”
নাদিরা কিছু বলতে নিবে তার আগেই কেবিনে আগমন ঘটে ড. ইরামের। বেশ কঠিন গলায় সে ইয়াসিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নাদিরাকে ডিভোর্স দিবেন! আমি নাদিরাকে বিয়ে করে আমার স্ত্রী এর মর্যাদা দিতে চাই!”
ইয়াসিন, নাদিরাসহ কেবিনে উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে ড. ইরামের দিকে তাকিয়ে থাকে!
,
,
,
চলবে………………❣
(সবার পাঠপ্রতিক্রিয়া চাই! রেসপন্স এতো কম যে গল্প লিখার মানসিকতাই চলে যায়!)