সুপ্ত ভালোবাসা পর্ব ২৭+২৮

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_২৭

#Tahmina_Akther

-এভাবে দেয়াল পা ঠেস দিয়ে না দাঁড়িয়ে রুমে চলো। রাতের খাবার খেতে হবে এরপর ঔষধ। আর যদি নিয়ম মতো না চলো তাহলে এই ভাঙা হাত সারাজীবন গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে।

হিয়া কথাগুলো কথা শেষ করার আগেই হেচকা টানে ওকে কাছে টেনে নিলো অভিক।আরেহ বলে অভিকের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়লো হিয়া।
হিয়া অভিকের বুক থেকে মাথা উঁচিয়ে তাকাতেই ওর বেবি চুল গুলো সারা কপালে ছড়িয়ে পড়লো।অভিকের মনে তখন উদম্য ইচ্ছে জাগলো হিয়ার কপালের চুলগুলো সরিয়ে ওর ঠোঁটের উষ্ণ পরশ ছুঁয়ে দেবার।
অভিক ফুঁ দিয়ে হিয়ার কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিলো এরপর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো ওর ফুলের অধরে।
হিয়া অভিকের এমন আচমকা বিহেভিয়ারে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো বেশ লজ্জাও পেলো এখন অভিকের সামনে দাড়িয়ে থাকতেও বেশ লজ্জা লাগছে।

অভিকের থেকে ছাড়া পেতে চাইলেও হিয়া ছাড়া পেলো না। হিয়ার কানের সামনে মুখ এনে অভিক বললো,

-আমার ফুল কি তবে লজ্জা পেলো?আমি তো তোমাকে লজ্জা দিতে চাই নি কিন্তু তোমার এই কপাল দেখে কেন যেন লোভ জেগে গেলো একটুখানি পরশ দেয়ার জন্য তাই লোভ নিবারণ করলাম।

বলেই হিয়ার কানে বেশ শব্দ করে চুমু খেলো অভিক।আর হিয়া এবার যেন পুরো ফ্রিজড হয়ে গেলো।শরীরটাকে কোনোভাবে অভিকের থেকে ছাড়িয়ে একদৌড়ে রুমে চলে এলো।এরপর, বুকে হাত রেখে দেখলো হৃদস্পন্দন যেন দিগুণ বেড় গেছে।ছোট ছোট এই পরশগুলোতে এত হৃদয় কাপানো অনুভূতি হয় কেন?

আর এদিকে হতে হিয়াকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে অভিক হেসে ফেললো। বেজায় নাস্তানাবুদ হলো তার বউটা।
“বউ” শব্দটা দু’বার উচ্চারণ করলো অভিক।বউ শব্দটিতে যেন কি এক জাদু আছে? নিজের ভালোবাসার মানুষকে বউ হিসেবে পাওয়া ভাগ্য করে পাওয়া যায়। তার ফুল এখন তার বউ।যাকে পাবার জন্য কতশত রাত কেঁদেছে আলোর অন্তরালে।সকালে চোখেমুখে পানি দিয়ে চোখ ফোলা কমানোর সেকি অদম্য চেষ্টা!
আজ সে পেয়েছে তাকে সবই হয়তো বিধাতার ইচ্ছায়।নয়তো হিয়া কখনোই তার হবার কথা ছিলো না।

তবে,আয়ুশের জন্য বেশ খারাপ লাগছে।ভালোবাসা সত্যিই মানুষকে পোড়ায়। প্রথমত, তার মা আয়ুশকে আমাদের সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলো,কিন্তু, লাভ কিছুই হলো না উল্টো নিজের স্বামী, ছেলে মেরে ফেললো নিজেরই ছোট ছেলে এরপর তাকেও। শেষমেষ, আয়ুশ নিজেও মরলো।তার ভালোবাসা হয়তো ঠিক ছিলো হিয়ার জন্য কিন্তু ওকে আপন করে পাবার জন্য ও যে পথ বেছে নিয়েছিলো সে পথ সঠিক ছিলো না।

গভীর নিশ্বাস ত্যাগ করে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো অভিক।গিয়ে দেখলো হিয়া রুমের সাজানো ফুল গুলো সব সরিয়ে পলিথিনে ভরে বারান্দায় রেখে আসছে।অভিককে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে বললো,

-সব পরিষ্কার করে ফেলেছি।তোমাকে ফ্রেশ করিয়ে দিবো এখন?

-হু ফ্রেশ হওয়ার তো দরকার। কিন্তু এই শার্ট খুলবো কিভাবে? ভাগ্যিস, হসপিটালে শেরওয়ানি চেঞ্জ করিয়েছিলো নয়তো যে কি হতো এখন?ওই ড্রয়ারে একটা কাঁচি আছে ওটা নিয়ে আসো তো।

-কাঁচি দিয়ে কি করবে?

-শার্টের ডান হাতাটা কেটে ফেলবে জলদি নিয়ে এসো।

অগত্যা, হিয়া ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে এনে শার্টের হাতাটি কেটে ফেললো।এরপর,শার্টের বোতামগুলো একে একে খুলে ফেললো। হিয়া তো আর তাকালো না অভিকের দিকে কিন্তু আমাদের অভিক হিয়ার থেকে আর চোখ সরিয়ে রাখলো না।বোতাম খোলা শেষ হতেই হিয়া আস্তে করে শার্টটি খুলে রাখলো।এরপর,অভিককে ওয়াশরুমে নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে মুছিয়ে দিলো। রুমে এনে বসিয়ে দিলো সিঙ্গেল সোফায়। এরপর,খাবার সমেত ট্রে এনে রাখলো সোফার সামনের ছোট টেবিলের উপর।একটি প্লেটে ভাত নিয়ে, গরু মাংসের তরকারি নিয়ে মাখিয়ে অভিকের মুখের সামনে তুলে ধরলো।অভিক বিনাবাক্যে খেয়ে নিলো।আর হিয়া মনে মনে বলছে, এতক্ষণ তো বেশ ফল খেয়ে ঘুমানো হচ্ছিল আর এখন যেই না ভাত মাখিয়ে দিচ্ছি এখন খাচ্ছে চুপচাপ বসে। অভিকের খাওয়া শেষ হতেই মুখ মুছিয়ে দিলো হাত দিয়ে। অভিক হিয়ার শাড়ির আঁচল টেনে মুখ মুছে বসে রইলো।হিয়া কোনোকিছু না বলে ভাত খেয়ে নিলো।অভিক পুরোটা সময়জুড়ে তাকিয়ে আছে তার হিয়ার মাঝে।

-এইভাবে তাকিয়ে থাকলে কি কিছু খাওয়া যায় অভিক?

-কেন আমি কি মানা করছি?তুমি খাও আমি দেখি। আমার হাত যদি ভালো থাকতো না তোমাকে আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিতাম যেমনটা আগে খাইয়ে দিতাম মনে আছে তোমার?

-হুম মনে আছে।এখন, এই ঔষুধ গুলো খাও।
প্যাকেট থেকে ঔষধ বের করে অভিকের হাতে দিয়ে।
অভিক ঔষধ খাওয়া হলে হিয়া বলে উঠে

-খাটে যাও আমি এগুলো গুছিয়ে রেখে আসি।

-আরে আরে এখন তুমি রুম থেকে বের হলে সবাই কি ভাব্বে বলো তো?
একপাশে রেখে দাও সকালে জরি খালা এসে নিয়ে যাবে।

হিয়া ভেবে দেখলো সত্যি তো এখন বের হলে সবাই কি ভাব্বে?

-অভিক ঘুমোতে যাও, আমি একটু পরে শুবো।

-সমস্যা নেই, তবে আমার মাথাটা একটু টিপে দিবে প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
বেশ অনুনয়ের স্বরে বললো অভিক। হিয়া আর মানা করেনি। অভিককে আস্তে করে শুইয়ে দিয়ে ড্রয়ার থেকে বাম করে অভিকের শিয়রের কাছে বসলো।এরপর হাতে একটু বাম নিয়ে কপালে লাগিয়ে আস্তে করে টিপে দিচ্ছিলো হিয়া।

প্রায় দশমিনিট হবার পর হিয়া দেখলো অভিক ঘুমিয়ে পড়েছে। আস্তে করে উঠে ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে অভিকের গায়ে চাদর দিয়ে দিলো। লাইট নিভিয়ে খাটের একপাশে শুয়ে পড়লো হিয়া। ভাগ্যিস অভিক ঘুমিয়ে পড়েছে নয়তো বেশ অস্বস্তি হতো ওর পাশে ঘুমাতে।

এদিকে, হিয়া লাইট নিভানোর পরই অভিক চোখ মেলে তাকায়।মনে মনে বলছে,

-আমি জানি আজ সারাদিনের ধকলে হিয়ার শরীর বেশ খারাপ লাগছে।ওর হয়তো আজ আমার পাশে শুতে অস্বস্তি হতে পারে তাই একটু ঘুমের ভান ধরলাম। ও এখন এমনিতেই ঘুমিয়ে পড়বে।
#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_২৮

#Tahmina_Akther

সকালের মিষ্টি রোদের পরশে ঘুম ভাঙল হিয়ার।ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাতেই চেনা ঘরটি বেশ অচেনা মনে হলো।পরক্ষণেই খেয়ালে এলো,নতুন জীবনে পর্দাপণে সব পরিবর্তনের মাঝে তার ঘরখানাও পরিবর্তন হয়েছে।

অভিক কি করছে দেখার জন্য পাশ ফিরে তাকালো,

-একি অভিক তো নেই! এত সকালে গেলো কোথায়? বারান্দায় গিয়ে দেখি তো আছে কি না?
খাট থেকে নেমে বারান্দায় যেতে দেখি মহাশয় একধ্যানে দাঁড়িয়ে আছেন হয়তো কোনো ভাবনায় মশগুল।

-অভিক?

কারো ডাকে ভাবনার জগত থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলাম। পিছনে ঘুরে দেখলাম আমার ফুল দাঁড়িয়ে আছে। এলোমেলো শাড়ি, কাজল লেপ্টানো ঘুম জোড়ানো চোখ, এলোমেলো চুলের খোপায় বেশ মোহনীয় দেখাচ্ছে ওকে।
ধীর পায়ে এগিয়ে দাড়ালাম ওর সামনে।

-ডেকেছো আমায়? কিছু প্রয়োজন তোমার?

– না তেমন কিছু প্রয়োজন নেই, এমনিতেই ঘুম থেকে জেগে তোমার দেখা পেলাম না তাই তোমায় খুজছিলাম। এখানে এসে তোমায় পেলাম ঠিকই তবে ভাবনার জগতে মগ্নরত অবস্থায়।তোমাকে ভাবনার জগত থেকে বের করতে ডাক দিয়েছি।
চলো তোমায় ফ্রেশ করিয়ে দেই,দুপুরে তো আবার রিসিপশন আছে তাড়াতাড়ি এসো।পরে আর সময় পাবো না। ছোট আম্মুর উপর তখন বেশ চাপ পড়ে যাবে।

-হুম,আমার গোসল করা প্রয়োজন তুমি একটু কষ্ট করে আবির বা সাঈদকে কল করে বলো আমাদের রুমে আসতে।

-কিন্তু, ওদের কল দিব কেন?

-কারণ, আমাকে গোসল করাতে ওরা সাহায্য করবে তাই।

-কিন্তু,

-কোনো কিন্তু নয় যা করতে বলেছি সেটা করো।

আচ্ছা, বলে রুমে এসে আবিরকে কল করে আসতে বললো হিয়া। পাঁচ মিনিটের মাঝে দরজায় নক পড়লো।হিয়া উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আবির রুমে প্রবেশ করে হিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,

-কি হয়েছে? কল করে আসতে বললে যে?

-ফুলকে আমি বলেছি তোকে কল করে আসতে বলতে।দোস্ত, একটু হ্যাল্প কর, আমায় গোসল করিয়ে দিবি?
বারান্দা থেকে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো অভিক,

-অবশ্যই করিয়ে দিবো চল।হিয়া ওর তোয়ালে দিয়ে যাও তো।
বলেই অভিককে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আবির।

এদিকে, হিয়া মনে মনে বলছে,

-কি হতো যদি আমি গোসল করিয়ে দিতাম? এখন আবির ভাইয়া কি মনে করবে? কিন্তু, এভাবে আমিও তো পারতাম না ওকে গোসল করিয়ে দিতে অস্বস্তি হতো। হয়তো অভিক বুঝতে পেরেছে যাই তোয়ালেটা দিয়ে আসি।

—————–

-কি রে তোদের মাঝে সব স্বাভাবিক আছে তো? মানে বিয়ের পরদিন সকালে আমাকে ডেকে নিয়ে আসলি তোকে গোসল করিয়ে দিতে।

-আবির, বোকাদের মতো কথা বলিস না। বিয়েটা হয়তো আগেই হয়েছে তবুও কাল যে পরিস্থিতিতে আমরা ছিলাম এইসময়ে ওসব ব্যাপার জাস্ট উইয়ার্ড। আর হিয়াকে কিছু সময় দিতে চাই আমি যেন কোনোপ্রকার দ্বিধা না থাকে ওর মনে আমাকে নিয়ে।আমি চাই ও আমাকে ভালোবেসে আমার কাছে আসুক।

-ওকে দোস্ত বুঝলাম, আপনি আপনার ফুলের ভালোবাসায় পুরো দেউলিয়া হয়ে গেছেন।
এখন হাতটা একটু আলগা কর তো পলিথিন পেচিয়ে দেই নয়তো পানিতে ভিজে যাবে ব্যান্ডেজ। এখনো কি ব্যাথা আছে?

-হুম, ব্যাথা তো আছেই। জানিস না ভেবে ছিলাম মরে যাবো। তবুও মনের মাঝে একটা আলাদা আনন্দ ছিলো যে আমার হিয়া তো আমার স্ত্রী, আমার অর্ধাঙ্গিনী, পরকালেও তাকে আমি আমার করে পাবো।
কিন্তু, দেখ আল্লাহ আমায় সহি সালামতে রাখলেন।

-তোর যখন গুলি লাগলো আর মাটিতে পড়ে গেলি, হিয়ার সে কি চিৎকার? হিয়া তোকে একদিন অনেক ভালোবাসবে বন্ধু। তোর এতদিনের সুপ্ত ভালোবাসা হিয়ার মনের দরজায় ঠকঠকিয়ে জানান দিচ্ছে তোর আগমন হয়তো একদিন হিয়ার মনের দরজা খুলবে আর সেদিন তুই হবি হিয়ার হৃদয়ের একছত্র মালিক।

অভিক হেসে ফেললো তার বন্ধুর কথা শুনে জবাবে বললো,

-আমার ভালোবাসা নিয়ে গবেষণা না করে তোর ভালোবাসার খবর কি সেটা বল?

-তিয়ানা বেশ রেগে আছে।আজ তোদের রিসেপশন শেষ হলে বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে ওদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।কারণ, তিয়ানা ওর মুখে বলে দিয়েছে ও যেটা বলে ও সেটা করে ছাড়বে, যদি সত্যি সত্যি আরেকজনকে বিয়ে করে তাহলে আমার কি হবে দোস্ত আমি তো পাগল হয়ে যাবো ওই শাঁকচুন্নিকে ছাড়া।

-হা হা হা, তিয়ানা যদি শুনে তুই ওকে শাঁকচুন্নি বলেছিস তাহলে তোর মাথার একটা চুলও বোধহয় অক্ষত থাকবে না।

-তা ঠিক, ব্যস তোর গোসল সম্পূর্ণ।হিয়া তোয়ালে লাগবে না এখানে আছে একটা।

আবির বেশ জোরেই বললো যেন হিয়া শুনতে পায়।হিয়া তোয়ালে নিয়ে আসছিলো কিন্তু, আবিরের কথা শুনে রেখে দিলো।

অভিক আর আবির ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই হিয়া ওয়াশরুমে চলে গেলো।শব্দহীন ভাবে চলে যাওয়াতে আবির আর অভিক একে অপরের মুখের দিকে তাকালো ইশারায় এটাও বললো

– কি হয়েছে?

আবার নিজেরা বললো

-জানিনা,

অভিককে কাপড় চেন্জ করিয়ে আবির চলে গেলো কারণ ওর শরীর খানিকটা ভিজে গেছে ওর এখন শাওয়ারের প্রয়োজন।

অভিক বসে বসে ফেসবুক স্ক্রোল করছিলো,অনেকেই বিয়ের জন্য অভিবাদন জানাচ্ছে।কিছু কমেন্টে রিপ্লাই করে মোবাইল রেখে দিলো।

এরইমাঝে দরজা ঠেলে ওর নানু, মিরা আর তিয়ানা প্রবেশ করলো।মিরা আর তিয়ানার মুখে ছিলো দুষ্টহাসি।অভিকের নানু রুমে এসে হিয়াকে দেখতে না পেয়ে অভিককে বললো,

-কি রে তোর ফুল কই?আবার দেখি এই ব্যান্ডেজ নিয়ে গোসল করছিস?কে গোসল করিয়ে দিলো?

-একসাথে কত প্রশ্ন করো তুমি! ফুল ওয়াশরুমে, গরম লাগছিলো তাই আবিরের সাহায্যে নিয়ে করলাম। পেয়েছো জবাব এবার এই চোরামার্কা হাসি দেয়া বন্ধ করো তোমরা।

-ও আমরা তো ভাবলাম, আমাদের অভিক সাহেব আজ পুরোনো রাজাদের মতো তার রানীর হাতে স্নান করবেন। কিন্তু আমাদের ভাবনার জলাঞ্জলি দিয়ে উনি গোসল করেছেন উনার সখার হাতে বলেই হাসতে লাগলো মিরা সাথে নানু আর তিয়ানাও।

অভিক বেশ লজ্জা পাচ্ছে ওদের ঠোঁটকাটা কথা শুনে।

হিয়া ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখতে পেলো ওরা তিনজন কি নিয়ে হাসাহাসি করছে অভিকের সাথে?মিরা হিয়াকে বেরুতে দেখেই হিয়ার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে এনে অভিকের পাশে বসিয়ে দিলো।এরপর, ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে ফেললো।
অভিক আর হিয়া কি রিয়াকশন দিবে বুঝতে পারছে না। মানে এত কম সময়ে কি করলো?নানু এবার বলে উঠলো,

-তোদের দু’জনকে নিচে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু, থাক তোদের আর যাওয়ার দরকার নেই। এখানেই নাশতা পাঠিয়ে দিবো তোরা খেয়ে নিস।আর চিন্তা করিস না আত্মীয় স্বজন তেমন কেউ নেই কিছু বলবে না তোদের নিয়ে।
দশটায় পার্লার থেকে দুজন মেয়ে আসবে হিয়াকে সাজিয়ে দেয়ার জন্য।আর হিয়া অভিককে একটু তৈরি করে দিস। পার্লারের মেয়েরা এলে ও ওর বন্ধুদের সাথে গিয়ে বসে থাকবে কেমন?
আমি তোদের সবকিছু পাঠিয়ে দিবো। মিরা তিয়ানা চলো ওদের খাবারগুলো একটু কষ্ট করে এনে দাও তো।

-কিন্তু, নানু আম্মু-আব্বু কই? একবারও এলো না আমায় দেখতে?
বেশ মন খারাপের সুরে বললো হিয়া।

-বাড়ির গার্ডেনে রিসেপশনের ব্যাবস্থা করেছে তাই একটু ব্যস্ত সবাই। একবাড়িতে তো আছিস কথা হবে চিন্তা কিসের? তোর তো ভাগ্য ভালো বাড়ির মেয়ে বাড়িতেই আছিস।
ওই যে ওরা খাবার নিয়ে এসেছে খেয়ে নে আমরা চলি পরে দেখা হচ্ছে।

ওরা তিনজন চলে যেতেই হিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভিককে খাবার খাইয়ে নিজে খেয়ে নিলো।

ঘড়িতে সময় তখন সাড়ে নয়টা। অভিককে আস্তে করে সাবধানে শেরওয়ানি পরিয়ে দিলো হিয়া।
সমস্যা হলো অন্যক্ষেত্রে অভিকের চুলগুলো ছুঁতে পারছে না। কারণ, অভিকের বুক সমান লম্বা হিয়া হয়তো অভিককে মাথা নিচু করতে হবে নয়তো হিয়াকে উঁচু কিছুতে দাঁড়াতে হবে।

অভিক কিভাবে যেন বুঝে গেলো তাই হিয়ার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।হিয়া হেসে অভিকের চুল গুলো সুন্দর করে গুছিয়ে কপালে ছড়িয়ে দিলো।

-তোমায় বেশ সুন্দর লাগছে অভিক।কারো নজর যাতে না লাগে।

-কারো নজর আমার চাই না শুধু তোমার নজর আমার উপর থাকলেই চলবে।

হিয়া অভিকের কথার জবাব না দিয়ে লাজুক হাসি দিলো।

-হ্যালো আভিক, হাউ আর ইউ? ও মাই গড ইয়া! ইউ আর সো মাচ প্রিটি।

বলেই কেউ একজন হিয়াকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিলো তবে সে বিফল হলো কারণ আমাদের অভিক তার হিয়াকে কাছে টেনে নিলো।

হিয়া অবাক হয়ে কথা বলার মালিকটির দিকে তাকিয়ে আছে কারণ, বিদেশি এক ছেলে যাকে কি না হিয়া চিনে না কিন্তু ওকে চিনে কিভাবে?
হয়তো অভিকের সাথে এই ভিনদেশির পরিচয় আছে!

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here