“সেই তুমি💐 পর্ব -৩+৪

সেই তুমি💐
পর্ব -৩+৪
Samira Afrin Samia
#নিপা

আজিম সাহেব অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছে। চেনা পরিচিত কিছু আত্মীয়দের বাড়ি ও এলাকার আসেপাশের প্রায় সব জায়গায় ই ইশিতা কে খুঁজেছে। কিন্তু কোথাও পায়নি। আজিম সাহেবের ভয় হচ্ছে। কোথায় গেল ইশিতা?
আজিম সাহেব হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজের কাছে এসে গেল। হঠাৎ আজিম সাহেবের কানে কোনো মেয়ে মানুষের কান্নার আওয়াজ ভেসে গেল। সাথে সাথে আজিম সাহেব হাতে থাকা র্টচ লাইট টা ব্রিজের ওপাশে ধরলো যেখান থেকে কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছিল। হ্যা এটা ইশিতা। আজিম সাহেব ইশিতা কে এভাবে দেখে ব্যস্ত হয়ে দৌঁড়ে ইশিতার কাছে গেল। হঠাৎ করে চোখের উপর আলো এসে পড়ায় ইশিতার চোখ বুজে গেল। মিটমিট করে দুচোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সামনে ওর মামা বসে আছে। ইশিতা তার মামা কে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আজিম সাহেব ও ইশিতার এ অবস্থা দেখে চোখের জল আটকে রাখতে পারলেন।
— কি রে মা। এতো রাতে এখানে এভাবে বসে আছিস কেন? বাড়ি যাবি না রাত তো অনেক গভীর হয়ে এলো। তোর যদি কিছু একটা হয়ে যেত তখন আমার কি হতো এটা একবার ও ভাবলি না?
এই বুড়ো মামা টার প্রতি কি একটু ও মায়া হয়না?
ইশিতা তার মামার কথা শুনে তার মামা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আজিম সাহেব ইশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আলতো করে ইশিতা কে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।
— আমি আছি তো তোর পাশে। তোর মামা থাকতে কিসের ভয় তোর। আমি বেঁচে থাকতে তোর উপর একটা আঁচ ও আসতে দিবো না।
— আমাকে হ্মমা করে দাও মামা। আমি তোমাদের সন্মান রাখতে পারলাম না। নিজের একটা ভুলের জন্য সমাজে তোমাদের মাথা নিচু করে দিয়েছি। তোমরা এখন কারো সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কারো চোখাচোখি হয়ে কথা বলতে পারবে না। সব আমার জন্য। আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তুমি আমাকে মেরে ফেলো মামা।
— চুপ একদম এসব কথা বলবি না। আমি জানি তুই জেনেশুনে এমন কোনো কাজ করবি না যার জন্য তোর মামার সন্মান নষ্ট হবে। যে যাই বলুক না কেন আমি কারো কথা বিশ্বাস করি না। আমি তো জানি আমার ইশু মা কেমন? ছোট থেকে তোকে মানুষ করেছি তুই কেমন তা আমার থেকে ভালো কেউ বলতে পারবে না।
ইশিতা তার মামার কথা গুলো শুনে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
— মামা আমি তোমার বিশ্বাসের যোগ্য না। তুমি কেন আমাকে এতো বিশ্বাস করতে গেলে। আমি তো তোমার বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারিনি।
আমি তোমাকে ও মামী কে অনেক কষ্ট দিয়েছি। ছোট থেকে তুমি আমার কোন চাওয়া ই অপূর্ণ রাখো নি। এসব কিছুর বদলে আমি তোমাদের কি দিতে পেরেছি?
কিছুই না শুধু অসম্মান আর লাঞ্ছনার মুখোমুখি করেছি। সমাজে তোমাদের সবার চোখে নিচু করে দিয়েছি।
— এসব কথা বাদ দিয়ে এখন বাড়ি চল।সেই সকালে না খেয়ে খালি পেটে বাড়ি থেকে বের হয়েছিস। এভাবে না খেয়ে থাকলে তো তুই অসুস্থ হয়ে পড়বি। চল মা এবার বাড়ি চল।
— না মামা আমি বাড়ি ফিরবো না। তুমি আমাকে বাড়ি যেতে বলছো? আমাকে বাড়ি নিয়ে গেলে পারবে কাল সকালে সবার মুখোমুখি হতে? পারবে কি সবার তেতো কথা গুলো সহ্য করতে?
— তুই এখন বাড়ি না ফিরলে কি সবাই তেতো কথা বলা বন্ধ রাখবে? আর তুই এখন বাড়ি না গেলে কোথায় যাবি?
— এভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ইচ্ছে করেই হঠাৎ কোনো গাড়ির নিচে এসে যাবো। মুক্তি পারো এই কলঙ্ক মাখা জীবন থেকে। আর তোমাদেরকে ও মুক্ত করে দিয়ে যাবো আমার বুঝা থেকে।
আজিম সাহেব ইশিতার এমন কথা শুনে রাগে না চাইতে ও ইশিতার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
— খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না?
অনেক বুঝিস। মামা মামীর জন্য অনেক চিন্তা করিস। মামা কে তোর বোঝা থেকে মুক্ত করতে চাস? তাহলে যা তোর যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যা। কিন্তু যাওয়ার আগে, ছোট বেলা থেকে আজ পর্যন্ত তোকে যতটা ভালোবাসা দিয়েছি তা ফিরিয়ে দিয়ে যা।

সালেহা বেগম ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় বারো টার কাছাকাছি। এখনও আজিম সাহেব বাড়ি ফিরলেন না। সালেহা বেগমের কথার আওয়াজে রুমি, রুনা দুজনের ই ঘুম ভেঙে গেলে। রুমি এবার সেভেন এ আর রুনা ফাইভ এ পড়ে। কিছু দিন ধরে ওদের বাড়িতে কি হচ্ছে তার কিছুই ওরা বুঝতে পারছে না। ওদের মা যেন ইশিতা কে কি বলে তার পর ই ইশিতা কান্না করে। ওরা কিছুই বুঝে না ইশিতা কেন ওসব কথা শুনে দৌঁড়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে নেয়। অবশ্য অনেক বার ওরা সালেহা বেগমের কাছে জিঙ্গেস করেছে ইশিতার কি হয়েছে। সালেহা বেগম জবাবে শুধু ধমক দিয়ে ওদের চুপ করিয়ে দিছে।

আজিম সাহেব অনেক বুঝিয়ে ইশিতা কে বাড়ি নিয়ে আসলো। আজিম সাহেব ইশিতা কে ধরে গেইট দিয়ে বাড়ির ভিতরে আসলে সালেহা বেগম ইশিতা কে দেখে
— আসছেন মহারানী? বাড়িতে ফিরে এসে আমাদের উপর খুব বড় করুনা করলেন। সমাজে আমাদের মান-সম্মান যেটুকু ছিল তা তো পুরোটাই হারিয়েছি। এখন এতো নাটক করার কি আছে। সবার সামনে ভালো সেজে থাকার কোনো দরকার নেই।
— সালেহা তুমি চুপ করবে?
— চুপ ই তো করে আছি। এতো কিছু ঘটে যাওয়ার পর ও তো আমি তোমার আদরের ভাগনী কে কিছুই বলছি না। সমাজে ওর নাম কলঙ্কিনীর খাতায় উঠে গেছে। এটার মানে কি ও বুঝতে পারছে?
আমাদের ভালোবাসায় কিসের কমতি ছিল? যার জন্য এভাবে আমাদের নাম বদনাম করার আগে একবার ও ভাবলো না।
— আর একটা কথা ও বলবে না তুমি। তুমি তো আমাদের ইশিতা কে চেনো।তুমি বাকি সবার মত ওকে এসব কথা শুনাচ্ছো।
— তুমি মামী কে চুপ করতে বলছো কেন মামা। মামী তো ভুল কিছু বলেনি। মামী যা বলছে সব তো ঠিকই বলছে। আমি জানি তোমরা আমাকে কতটা ভালোবাসো। আমি তোমাদের বিশ্বাস রাখতে পারিনি। মামী অনেক কষ্টের পর ই আমাকে একথা গুলো শুনাচ্ছে। মামীর কথায় আমি কিছু মনে করবো না।
ইশিতা কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলছে। ইশিতা কে এমন অবস্থায় দেখে সালেহা বেগম ও নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারলেন না। সব রাগ অভিমান ভেঙে দৌঁড়ে ইশিতার কাছে গিয়ে ইশিতা কে বুকে জড়িয়ে নিলো। ছোট থেকে নিজের হাতে আদর যত্ন দিয়ে এতো টা বড় করে তুলছে। হাজার ভুল করলেও দূরে সরিয়ে দিতে পারবেন না।
— কেন এভাবে কষ্ট দিস আমাদেরকে? তোকে এমন ভাবে দেখে আমাদের উপর দিয়ে কি যায় এটা ওই বুঝতে পারিস না। তোকে কষ্ট পেতে দেখলে তো আমাদের ও কষ্ট হয় রে মা।
ইশিতা শক্ত করে তার মামী কে আকড়ে ধরলো
— মামী আমাকে হ্মমা করে দিও। আমি তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি।
— কাঁদিস না মা সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা তো এখনও বেঁচে আছি নাকি? আমরা তোকে কোন কষ্ট পেতে দিব না। চল ঘরে চল।সকাল থেকে তো কিছুই খাসনি। তোর জন্য তোর মামা ও না খেয়ে আছে।
ইশিতার মামী ইশিতা কে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজের ঘরে গেল।
ওদিকে ইফান বন্ধুদের সাথে পার্টি করে ড্রিঙ্ক করে বাসায় ফিরলো। আজ ইফান খুব খুশি। এতো দিনে নিজের অপমানের বদলা নিতে পারলো ইশিতার থেকে। ঐ দিন ইশিতার বলা কথা গুলো আজও মনে রেখেছে ইফান। ইফান মাতাল অবস্থায় রুমে এসে নিজেকে বেডে এলিয়ে দিলো।

চলবে…..

সেই তুমি💐
পর্ব -৪
Samira Afrin Samia
#নিপা

সকালে মামীর ডাকে ইশিতার ঘুম ভাঙ্গে। সকাল প্রায় দশটা বাজতে চলেছে ইশিতা এখনও ঘুম থেকে না উঠায় সালেহা বেগম গিয়ে ইশিতা কে ডেকে তুললো।
ইয়াস সকালে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। নাজমা চৌধুরী খাবার দিচ্ছে। ইয়াস খাওয়া শুরু করলো। খেতে খেতে নাজমা চৌধুরীর কাছে ইফানের কথা জিঙ্গেস করলো।
— মা ইফান কোথায়?
নাজমা চৌধুরী চেয়ার টেবে বসে
— তোর ভাইয়ের খবর আমি রাখি না। কখন কি করে কোথায় যায় তা কি আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করে?
তাহলে শুধু শুধু আমি কেন ওকে নিয়ে টেনশনে থাকবো। যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাক। যা ইচ্ছা তা করুক আমার কিছু যায় আসে না। তুই তোর ভাইয়ের কথা আমার কাছে জিঙ্গেস করবি না।
— রাগ করছো কেন মা। তুমি তো জানোই ইফান একটু ছেলেমানুষি করে। কোনো কিছু নিয়েই সিরিয়াস হয় না। সব কিছুতে ই শুধু ফান করে।
— ইফানের এসবের জন্য তো তুই ই দায়ী। ছোট থেকে আদর দিতে দিতে ওকে একেবারে বাদর করে তুলেছিস। তোর আঙ্কারা পেয়েই তো ও এতো টা বিগড়ে গেছে।
— কি করবো বলো। ও তো আমার একমাত্র ছোট ভাই। বাবা তো আমাদের দু’ভাই কে সমান ভাবে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিল। বাবা চলে যাওয়ার পর তো ওর সব আবদার আমার কাছেই ছিল। যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি ওর সব আবদার পূরণ করতে। কোনো দিন ও যাতে ও বাবার অভাব বুঝতে না পারে তাই তো ওকে প্রয়োজনের থেকে একটু বেশি ভালোবাসা দিয়েছি।
নাজমা চৌধুরী একটু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে
— আমি জানি রে বাবা। তুই তোর ভাইকে কতটা ভালোবাসিস। তাই তো ওর সব ভুল মাফ করে দিস। হাজার ভুল করলে ওকে কোনো শাস্তি দেস না। আর এজন্যই ইফান টার আজ এই অবস্থা। সারা দিনে একবার ও বাসায় আসে না ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে না। রাতে কখন বাসায় আসে তা কেউ জানে না। বন্ধুদের সাথে কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায় পার্টি করে বাজে জিনিস গুলো খায়। আরো কি কি করে তা আল্লাহ ই জানে। সকাল এগারো/বারোটার মত ঘুমায়।এগুলো তো ভালো লক্ষন না। আমার ছেলেটার জীবন টা কি এভাবে ই আমাদের চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাবে? আমরা কি কিছু করতে পারবো না শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবো ই ?
— তুমি চিন্তা করো না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি সব ঠিক করে দিবো। আর ইফান শুধু বন্ধুদের সাথে ই একটু আড্ডা দেয়। ও তেমন কোনো কাজই করবে না যার জন্য আমাদের অসম্মানিত হতে হবে। তুমি ইফানের জন্য খাবার দেও আমি ওকে ডেকে আনছি।
ইয়াস উঠে উপরে ইফানের রুমের দিকে যেতে লাগলো। ইফানের রুমের সামনে গিয়ে ইফান কে ডাক দিতে যাবে তখনই ইয়াস দেখে রুমের দরজা খুলা ই আছে। ইয়াস রুমের ভিতরে গেল।
— ইফান। ইফান,,,,,,
ইয়াসের ডাকে ইফান কোনো সাড়া দিচ্ছে না। হাত পা ছড়িয়ে মরার মত পড়ে ঘুমাচ্ছে। ইয়াস আবার ইফান কে ডাক দিলো।
— ইফান উঠ বলছি। ইফান,,,, এই ইফান।
অনেকক্ষণ ডাকার পর ইফান একটু নড়ে উঠলো। মিটমিট করে চোখ খুলে সামনে ইয়াস কে দেখে এক লাফে উঠে বসলো।
— ভাই তুই? কখন আসলি আমার রুমে?
— কয়টা বাজে খেয়াল আছে? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। খাবার নিয়ে মা আর আমি তোর জন্য ওয়েট করছি।
ইয়াস আর কিছু না বলে ইফানের কোনো কথা না শুনে নিচে চলে গেল।
— বাবা! সকাল সকাল জোর বাঁচা বেঁচে গেলাম। ভাই আজ আমাকে ডাকতে আসছে কেন? নিশ্চয় মা কিছু বলেছে।
ইফান ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে। একটা আপেল নিয়ে খেতে খেতে বললো।
— মা তাড়াতাড়ি খাবার দেও। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।
ইয়াস নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে
— এতো কিসের তাড়া তোর?
কোথায় থাকিস আজকাল? কাদের সাথে চলাফেরা করিস এখন? আর আজ রাতে বাসায় ফিরলি কখন?
— ভাই তুই তো জানিস ই আমি কাদের সাথে থাকি সারাদিন। রাতে তুই আসার একটু আগেই আমি নিজের রুমে ছিলাম। মা কে জিঙ্গেস করে দেখ।
এই কথা শুনে নাজমা চৌধুরী ইফানের দিকে তাকিয়ে
— মা কে জিঙ্গেস করতে বলছিস?
আর তুই ইয়াস কে এখনও তুই করে বলিস? তোকে কতদিন বলছি বড় ভাই কে তুমি করে বলতে।
— মা! ভাই আমার কতটা ই বড়? হবে কয়েক বছরের। ভাই করে বলি তো এখন আবার তুমি করেও বলতে হবে?
— ইয়াস তোর থেকে কয়েক বছরের বড় হোক বা কয়েক মিনিটের বড় হোক। তোর থেকে বড় তো। তুই ইয়াস কে তুমি করে ই বলবি। একটু তো ভদ্রতা বজায় রাখবি?
ইফান আস্তে করে বলে উঠলো
— ভদ্রতা আর আমি? হাসালে মা।
নাজমা চৌধুরী ইফানের দিকে রেগে তাকিয়ে
— মিনমিন করে কি বলছিস। যা বলার জোরে বল।
— ইফান তুই ঠিক মত কলেজ যাস তো?
আমি কিন্তু প্রিন্সিপাল এর সাথে কথা বলবো যদি শুনি তুই ঠিক মত কলেজ যাস না ক্লাস করিস না তাহলে কিন্ত তোর হাত খরচ দেওয়া বন্ধ করে দিব। কথাটা মনে থাকে যেন।
— প্রিন্সিপাল তোকে আমার ব্যাপারে কিছু বললে তো।
মাথা চুলকিয়ে আস্তে করে কথাটা বললো ইফান।
— ভাই আমার কিছু টাকা লাগবে। আমার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিস তো।
— তোর আজ আবার টাকা লাগবে? কিছু দিন আগেই না ইয়াস তোকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলো। ওই টাকা গুলো দিয়ে কি করছিস?
ইয়াস তুই ওকে আর একটা টাকা ও দিবি না।
— মা এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে পঞ্চাশ হাজার না পঞ্চাশ লক্ষ টাকা নিছি। ভাইয়ের কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা কোনো ব্যাপার ই না। আমি ফ্রেন্ডদের সাথে চলি সবার সাথে সমানভাবে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। তাই টাকা লাগে। তুমি এসব বুঝবে না তাই তুমি এসব নিয়ে কোনো কথা ও বলো না।
— আহ! ইফান মায়ের সাথে কেমন ভাবে কথা বলছিস তুই? মা জিঙ্গেস করতেই পারে, মায়ের অধিকার আছে জানতে চাওয়ার। তোকে তো টাকা দিতে আমি একবার ও না করি না। কিন্তু এতো অল্প সময়ে এত গুলো টাকা কিভাবে খরচ করিস তা জানতে চাওয়া টা ভুল কিছু না তাই না?
— ভাই তুই ও মায়ের সাথে শুরু করলি?
আমি নার্সারিতে পড়া কোনো বাচ্চা না,যে তোদের কাছে আমার প্রতি টা কাজের কৈফিয়ত দিতে হবে। ইচ্ছে হলে টাকা দে নয়তো সোজা না করে দে ড্রামা করার দরকার নাই।
ইফার খাবার অর্ধেক ফেলে রেখেই উঠে গেল। নাজমা চৌধুরী হুহু করে কেঁদে উঠলো।
— মা কাঁদছো কেন?
— ইফান কখনও শুধরাবে না। তুই তো জানিস ই ও এতো টাকা দিয়ে কি করে। আমি মা হয়ে ওকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারিনি। যার কারনে ওর আজ এই অবস্থা।
— মা তুমি কেঁদো না। আমি ইফান কে ঠিক করে ওকে সঠিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। ও একদিন ঠিকই ওর ভুল বুঝতে পারবে।

ইশিতা ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে ভার্সিটি যাওয়ার উদেশ্যে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল। পিছনে থেকে ইশিতার মামী ডেকে বললেন
— কোথায় যাচ্ছিস তুই?
ইশিতা মামীর কথা শুনে পেছন ফিরে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
— ভার্সিটি তে যাচ্ছি মামী।
— কোথাও যেতে হবে না। ঘরে যা।
— কেন মামী?
— আমি কেন তোকে বাইরে যেতে না করছি তা তুই খুব ভাল করেই জানিস। আমি চাই না তুই এখন বাড়ি থেকে বের হস।
— এভাবে কতদিন ঘরে বসে থাকবো?
— যতদিন না সব কিছু ঠিক হয় ততদিন। আমি চাই না এখন বাইরে গিয়ে তুই দশ লোকের মুখে দশ রকমের কথা শুনিস।
ইশিতা কিছু না বলে ঘরে চলে গেল। ইশিতা এবার হর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ইফান ও ইশিতার সাথে একই ক্লাসে পড়ে। ভার্সিটির প্রথম থেকেই ওদের পরিচয়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here