“সেই তুমি💐 পর্ব -৫+৬

সেই তুমি💐
পর্ব -৫+৬
Samira Afrin Samia
#নিপা

দিন কয়েক পার হয়ে গেল ইশিতা ঘরে বসেই কাটিয়ে দিব। সালেহা বেগম ইশিতা কে বাড়ি থেকে এক পা ও বের হতে দেয় না। এই কয়েক দিনে ইফানের সাথে একবার ও কথা হয়নি ইশিতার। ইশিতা ইফানের সাথে কথা বলতে চায়, ইফান কি চায় এটা জানতে চায়। ইফান কি সত্যি ই এই বাচ্চার দায়িত্ব নিবে না? ইফান তো ইশিতা কে ভালোবাসে তাহলে ইফান কেন এমন করছে। এরকম অনেক প্রশ্ন ইশিতার মনে উঁকি দিচ্ছে।

ইশিতা জানালার পাশে বসে ইফানের সাথে কাটানো আগের দিন গুলোর কথা মনে করছে। কত ভালো ছিল দুজন এক সাথে। ইফান ইশিতার কত খেয়াল রাখতো। ইশিতার ছোট বড় প্রতিটা জিনিসের প্রতি কত যত্ন নিত।

— ইশিতা তুমি আমাকে ভালোবাসো না তাই না?
— এমন কথা কেন বলছো? তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
— হুম জানি। তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো। আর তাই তো আমার কথায় রাজি হচ্ছো না।
— তুমি যা বলছো তা সম্ভব না ইফান।
— কেন সম্ভব না? আমরা তো একে অপর কে ভালোবাসি তাহলে কেন সম্ভব না।
— বিয়ের আগে এসব কিছু ঠিক না ইফান। বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কে যাওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। আমাদের ইসলাম ধর্ম এসব সমর্থন করে না। আর আমাদের সমাজ তো কখনও ই এসব মানবে না। আমি চাই না বিয়ের আগে তোমার সাথে এভাবে অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে। আমাদের ভালোবাসা পবিত্র। আমি আমাদের ভালোবাসা কে অপবিত্র করতে চাই না
— আমি বুঝতে পারছি তুমি আমাকে একটু ও বিশ্বাস করো না। তুমি আমাকে এখনও আগের মতই মনে করো। বিশ্বাস করো ইশিতা আমি পাল্টে গেছি। তোমার ভালোবাসা আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে পাল্টে দিয়েছে।
— এমন ভাবে বলো না। আমি তোমাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। আমি জানি তুমি আগের ইফান নেই। তুমি একদম পাল্টে গেছো। আর তাই তো আমি তোমাকে ভালোবেসেছি।
— আচ্ছা আজ আমার বন্ধুর বাসায় পার্টি রাখছে। সবাই সবার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসবে। আমি চাই তুমি ও আমার সাথে যাবে। তুমি কিন্তু একদম না করতে পারবে না। আমি সবাই কে বলে দিয়েছি তুমি যাবে।
— কি ভাবে যাবো?
মামী আমাকে রাতে বাড়ি থেকে এক পা ও বের হতে দিবে না। আর আমি নিজে ও ওসব পার্টি পছন্দ করি না। তুমি তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে গিয়ে মজা করো।
— তাহলে আমার ফ্রেন্ডস রা ঠিকই বলেছে।
— ঠিকই বলেছে মানে?
কি বলেছে ওরা?
— ওরা মনে হয় আগে থেকেই জানতো তুমি আমার সাথে যাবে না। আর তাই তো ওরা এতটা সিউর হয়ে বলতে পরেছে।
— কি বলেছে ওরা তা তো বলবে।
— ওরা বলেছে তুমি আমাকে ভালোবাসো না আর বিশ্বাস ও করো না। তুমি আমার সাথে পার্টিতে ও যাবে না।
— আমার দিক থেকে একটু বুঝার চেষ্টা করো ইফান।
— থাক তোমার পার্টিতে যেতে হবে না। আমি একাই যাবো। সবার সামনে একটু ছোট হবো এর থেকে বেশি কিছু তো আর হবে না।
— আচ্ছা আমি যাবো তোমার সাথে। দেখি মামীকে কিভাবে রাজি করানো যায়।
— সত্যি তুমি যাবে আমার সাথে?
— হুম।
— তাহলে তোমার মামী কে বলবে তুমি তোমার ফ্রেন্ড ইভার বাসায় যাবে। তখন তো আর না করবে না।
— হুম।

হঠাৎ করে ইশিতার মামাতো বোন পিছন থেকে ইশিতা কে ডেকে উঠলো।
ইশিতা পেছন ফিরে
— আরে রুনা তুই। আয় ভেতর আয়।
রুনা ইশিতার কাছে এগিয়ে গিয়ে। ইশিতার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
— কিছু বলবি?
— হুম।
— কি বলবি বল।
— আপু কি হয়েছে তোর? কিছু দিন ধরে তুই ঘর থেকে তেমন বের হস না। সারা দিন একা একা ঘরে বসে থাকিস। তোর কি শরীর খারাপ আপু।
ইশিতা কি বলবে রুনা কে তা বুঝে উঠতে পারছে না। ক্লাস ফাইভে পড়া মেয়ে কি ই বা বুঝবে এসব ব্যাপারে। আর ইশিতা কিভাবে বলবে ওর কি হয়েছে।
— বল না আপু কি হয়েছে তোর?
— কিছু হয়নি রে। কিছু দিন ধরে একটু অসুস্থ তাই মামী ঘর থেকে বের হতে বারণ করেছে। দেখিস না মামীর কথা না শুনলে মামী রেগে যায়। তাই সারা দিন ঘরে ই বসে থাকি।
— ওহ। তুই ভার্সিটি যাবি কবে থেকে। তোর তো অনেক ক্লাস মিস হচ্ছে।
— যাবো তো। তুই আজ স্কুলে গেলি না কেন?
— গেছিলাম তো। আজ স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিছে।

পরের দিন

ইশিতা আজ ভার্সিটি যাবে। যেভাবেই হোক ইফানের সাথে দেখা করবে কথা বলবে ওর সাথে। ইশিতা তার মামীকে নানা ভাবে বুঝিয়ে ভার্সিটি গেল। ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকার সাথে সাথে ই আশে পাশের সবাই কেমন ভাবে ইশিতার দিকে তাকাচ্ছে। কেউ কেউ হাসাহাসি করছে। আবার কেউ কেউ ইশিতা কে শুনিয়ে এটা সেটা বলছে। ইশিতা কারো কোনো কথা কানে না নিয়ে সোজা নিজের ক্লাস রুমে চলে গেল। ইশিতা ক্লাসে গেলে ইভা ইশিতা কে দেখে দৌঁড়ে ইশিতার কাছে এলো।
— ইশিতা তুই?
— হুম। ইভা ইফান কোথায় রে। ও কি ভার্সিটি আসে না।
— তুই ইফান কে খুঁজছিস? এখনও তুই ইফানের সাথে কথা বলতে চাস?
— কেন? ওর সাথে কথা না বললে এসব কিছুর সমাধান হবে কিভাবে?
— তুই কি ভাবছিস ইফার এসব কিছুর সমাধান দিতে পারবে।
তুই কবে বুঝবি ইশু ইফান ইচ্ছে করে তোর সাথে এসব করেছে। ইচ্ছে করে তোকে বদনাম করে তোর থেকে অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছে। ও তোকে ভালোবাসে না। ও এতো দিন তোর সাথে এক্টিং করেছে।
— কি বলছিস তুই এসব? ইফান আমাকে ভালোবাসে। ও কেন ইচ্ছে করে আমার সাথে এমন করবে? আমাকে বদনাম করে ওর কি লাভ হবে আর কিসের অপমান, কিসের প্রতিশোধ এর কথা বলছিস তুই?
— পুরো ভার্সিটির সবাই জানে ইশু। তুই ই এখন পর্যন্ত জানতে পারলি না।
কিসের অপমান? তোর মনে নেই আগের কথা গুলো। ইফান তার ই প্রতিশোধ নিয়েছে তোর থেকে।
— দূর তুই ও না। আরে ইফান আগের মত নেই ও বদলে গেছে। আর ইফান আমাকে অনেক ভালোবাসে তুই দেখে নিস।এখন বল কোথায় পাবো ওকে?
— ক্যান্টিনে গিয়ে দেখ ফ্রেন্ডদের নিয়ে কিভাবে ইনজয় করছে। অপমানের বদলা নিয়ে নিছে এখন ওটা ই সেলিব্রেট করছে।
ইশিতা ইভার কথায় পাত্তা না দিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে ক্যান্টিনের দিকে যেতে লাগলো।
— ইশিতা তুই খুব বোকা রে। খুব তাড়াতাড়ি সবাই কে বিশ্বাস করে নেস। এজন্য তোকে অনেক কষ্ট পেতে হবে। না জানি ইফানের সত্যি জানার পর তোর কি অবস্থা হবে। নিজেকে সামলাতে পারবি কি না আল্লাহ ই জানে।

ইফান ক্যান্টিনে চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়িয়ে
— এখানে যাঁরা যাঁরা আছিস সবার যা ইচ্ছা তা অর্ডার কর। আজকের বিল আমি দিব। ইফান হাতে থাকা বেয়ারের বোতল খুলে কয়েক ডুক খেয়ে বাকিটা রাফির কাছে দিয়ে দিল।
অনেক দিন পর আমি এভাবে মন খুলে এনজয় করছি। ঝামেলা টা মাথা থেকে নামছে। আর আমার প্রতিশোধ ও পূর্ণ হয়েছে।
রিহা ইফানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে
— নিচে নেমে আসো। আর আমার পাওনা টা আমাকে দেও। এতো দিন যে তোমাকে এতো হেল্প করছি। ভুলে গেছো নাকি সব?
ইফান রিহার হাত ধরে নিচে নেমে এসে। রিহার কোমরে জড়িয়ে ধরে
— তোমাকে কি করে ভুলে যাবো জান। তুমি আইডিয়া টা না দিলে তো এসব কিছুই হতো না। আর তোমার পাওনা, দাঁড়াও এখুনি দিচ্ছি।
এটা বলে ইফান রিহার গালে একটা চুমু দিয়ে দিলো।
রাফি পিছন থেকে ইফানের কাঁধে হাত রেখে
— সত্যি ই দোস্ত তোর মত এক্টিং কেউ করতে পারবে না। এতো দিন যা যা করলি ভাবা ই যাই না তোকে দেখে একদম ই মনে হত না তুই যে আমাদের ইফান ছিলি।
— আমি তো সব কিছু জানা স্বত্বেও মাঝে মাঝে ভয় পেয়ে যেতাম। ভাবতাম ইফান সত্যি ই হয়ত ওই ঈশিতা কে ভালোবেসে ফেলেছে।
— আমি ভালোবাসবো ওই মেয়েটাকে?
অসম্ভব প্রশ্ন ই আসে না। আমি তো শুধু ওকে একটু শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। যা আজ দিয়েও দিয়েছে। এই ইফান চৌধুরী কে অপমান করেছিল। এতো সহজে কি করে ছেড়ে দিতাম। সমাজে ও যাতে মাথা তুলে বাঁচতে না পারে এই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমার গালে চড় মেরেছিল। এর শাস্তি তো ওকে পেতেই হতো। যাক বাদ দে তো ওই মেয়েটার কথা। এতো দিন ওর সাথে থেকে মাথা টা পুরো পাগল হয়ে গেছে। এতো জ্ঞান দিতে পারে মনে হয় বিদ্যাসাগরের বংশধর।
ইশিতা এতক্ষণ ধরে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ইফানের সব কথা গুলো শুনছিল। ইফানের এসব কথা শুনে ইশিতার চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো। ইশিতা ভাবতেই পারেনি ইফান ওই দিনের অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এসব কিছু করেছে।

চলবে….

সেই তুমি💐
পর্ব -৬
Samira Afrin Samia
#নিপা

ইশিতা কাঁদতে কাঁদতে কয়েক পা এগিয়ে ইফানের কাছে এসে
— ইফান এসব কি বলছো তুমি?
ইফান ইশিতার কথা শুনে ইশিতার দিকে তাকিয়ে
— ওহ ইশিতা ডার্লিং তুমি ও এসে গেছো। তুমি আসতে এতো লেট করলে কেন? আমাদের পার্টি দেওয়া তো প্রায় শেষ। আচ্ছা এসেই যখন গেছো তাহলে আসো আমাদের সাথে জয়েন করো।
— তুমি এতক্ষণ এসব কি বলছিলে?
— কি বলছি তুমি শুনো নি। তাহলে আবার প্রথম থেকে বলতে হবে সব কিছু।
এটা বলে ইফান সহ বাকি সবাই হাসতে লাগলো।
রিহা ইফানের পাশে এসে ইফানের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে
— এভাবে বলছো কেন জান। দেখছো না মেয়েটার কান্না করছে। তুমি তো বলেছিলে ওর চোখ কখনও এক ফোঁটা পানি আসতে দিবে না। আরো কি কি যেন বলেছিলে তা ঠিক মনে পড়ছে না।
— ওহ মনে ই তো ছিল না। থেংক্স
রিহা বেবী মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
রাফি ইফান কে বলে উঠলো
— দোস্ত তুই তো মাল টা কে রিজেক্ট করে দিলি। এখন কি আমাদের কে একটা চান্স দিবি?
— সিউর ওয়াই নট। এমনিতেই তো আমি এক জিনিস একবারের বেশি ব্যবহার করি না।
— তুমি আমার সাথে এমন টা করতে পারলে ইফান?
শুধু মাত্র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করেছো। আমি তোমাকে ওই দিন সবার সামনে একটা চড় মেরেছিলাম তুমি তার বদলে আমাকে সবার সামনেই হাজার টা চড় মারতে। তুমি শুধু একটা চড়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার এতো বড় হ্মতি না করলেও পারতে। আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম। আর তুমি আমার বিশ্বাস নিয়ে এভাবে খেলা করেছো।
আমি তোমাকে কখনও হ্মমা করবো না ইফান।
ইফান ইশিতার কাছে এসে ইশিতার গাল চেঁপে ধরে
— তুই কি ভাবছিলি আমি এতো সহজে তোকে ছেড়ে দিব। এই ইফান চৌধুরীর সাথে ভার্সিটির কেউ উঁচু গলায় কথা বলেনি। আর তুই কি করছিলি। সবার সামনে আমার গালে থাপ্পড় মেরেছিলি। এতো সহজে কি করে ভুলে যেতাম আমি। আর তুই ভাবছিলি আমি সত্যি তোকে ভালোবেসে ফেলেছি, তুই কত বোকা রে। তোর মত একটা অনাথ কে আমি ভালোবাসবো। আমি কোথায় আর তুই কোথায় একবার ভেবে দেখেছিস। ছোট লোক কোথাকার।
— জান এসব মেয়েরা এমন ই মুখে যত বড় বড় কথা কাজে কিছু না। ও ভাবছে বড় লোকের ছেলেকে পটিয়ে নিয়েছে এখন সারা জীবন আরাম আয়েশে কাটাবে।
— রিহা তুমি তো একটা মেয়ে। নিজে একজন মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের সর্বনাশ করতে তোমার একটু ও বাঁধলো না। একবার নিজেকে আমার জায়গায় বসিয়ে দেখতে।
— ওহ জাস্ট সেটআপ তুই আমার সাথে তোর তুলনা দিবি না। কি আছে তোর তুই নিজেকে আমার সাথে তুলনা দিতে আসছিস। আমি তোর মত ছোট লোক না।
ইশিতা ইফানের কাছে গিয়ে ইফানের হাত ধরে
— দেখো ইফান এসব নাটক বন্ধ করো।আমি খুব ভালো করে জানি তুমি আমার সাথে এক্টিং করছো। সবাই কে নিয়ে আমাকে বোকা বানিয়ে মজা নিতে চাইছো। তুমি ই তো বলেছিলে তুমি আমাকে ভালোবাসো আমাকে বিয়ে করবে। তোমার ফ্যামিলির কাছে আমাদের ব্যাপারে জানাবে।
ইফান এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে
— তুই পাগল নাকি বোকা বুঝতে পারছি না। সব কিছু তোর চোখের সামনে পরেও তুই বুঝতে পারছিস না? আমি কোনো দিনও তোকে ভালোবাসিনি আর বাসবো ও না। ফ্যামিলি তো শুধু একটা বাহানা ছিল। আমি নিজেই তো তোকে বিয়ে করবো না। আমি শুধু তোকে বদনাম করতে চেয়েছিলাম। হ্যা প্রথমে তোকে আমার ভালো লাগতো কিন্তু তোর ওই ঘটনার পর থেকে শুধু তোকে ঘৃণা করি।
মনে কর সেদিনের কথা, যেদিন তুই সবার সামনে এভাবেই আমাকে অপমান করেছিলি।

ভার্সিটির প্রথম দিকে

ইফান আগে থেকেই এমন বেখেয়ালি ছিল। কোনো কিছু সিরিয়াসলি নিতো না। বড় ভাই ইয়াসের থেকে যত খুশী তত টাকা আনতো আর বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করে বেড়াতো। সব বাজে দিক গুলো ইফানের মধ্যে থাকলেও একটা ভালো দিক ছিল। ইফান কোনো দিন মেয়েদের অসম্মান করতো না। এমনকি কোনো মেয়ের দিকে বাজে ভাবে তাকাবে তো দূর ভালো করে চেয়েও দেখতো না। রিহা ইফানের গার্লফ্রেন্ড। শুধু নাম মাত্র ই। ইফান কখনও রিহার প্রোপজাল এক্সেপ্ট করেনি। তার পরেও রিহা সব সময় ইফানের পিছন পিছন ঘুরতো। ইফান অনেক দিন রিহা কে না করে দিছে কিন্তু রিহা ইফানের কথা শুনে নি। যেভাবেই হোক রিহা ইফানের গার্লফ্রেন্ড এর নাম পেয়ে গেছে। আসলে রিহা কোনো দিন ইফান কে ভালোবাসে নি সব সময় ইফানের টাকার উপর ই রিহার লোভ ছিল। আর তাই রিহা ইফানের আশে পাশে কোনো মেয়েকে ঘেঁষতে দিতো না।

আজ ভার্সিটিতে ইশিতার প্রথম দিন। মামা খুব কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে ইশিতা কে এই ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছে। ইশিতার একটা ই লক্ষ্য জীবনে কিছু একটা করে মামা মামীর ঋণ শোধ করবে।ভার্সিটির দিন গুলো ইশিতার খুব ভালোই কাটছে। ইভার সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে ইশিতার। ইফান মাঝে মাঝে ভার্সিটিতে আসে আসলেও ক্লাসে আসে না ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিয়ে আবার চলে যায়। একদিন ইফান ক্যান্টিনে বসে আছে ইশিতা ইভার সাথে কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনের পাশ দিয়েই যাচ্ছিল।হঠাৎ করে ইশিতার উপর ইফানের চোখ চলে যায়। ইফান চেয়ারে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল।
— এই রাফি দেখ তো ওই মেয়েটা কে?
— কোন মেয়েটা? ওই যে ওটা।
— আরে না। ওই যে দুইটা মেয়ে যাচ্ছে যে ব্লু ড্রেস আর হালকা বাদামী ড্রেস পড়া যে।
— ওহ ওদের কথা বলছিস। ওরা নতুন জুটি। কারো সাথে এতটা মিশে না দুজন সারাক্ষণ এক সাথে থাকে। আর পড়াশুনার প্রতি ভিষণ মনোযোগি।
— আমি তোর কাছে এসব জানতে চাইছি?
— আচ্ছা ওই যে ব্লু ড্রেস ওটা ইশিতা আর
রাফি সম্পূর্ণ কথা বলার আগেই ইফান রাফি কে থামিয়ে দিল
— চলবে। আমি ব্লু ড্রেস ওয়ালা টা কে ই চাই।
— মানে?
— বাংলা বুঝিস না? ইশিতা কে ভালো লাগছে। কথা বলিয়ে দে ওর সাথে।
পাশ থেকে রিহা ঝাজালো কন্ঠে
— ইফান আমি তোমাকে ভালোবাসি।
— তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না। আমি অনেক বার তোমাকে না করে দিছি এর পরেও তুমি আমাকে ভালোবাসো এটা তোমার প্রব্লেম আমার না।
রাফি আমি কাল ইশিতার সাথে কথা বলবো তুই ব্যবস্থা করে রাখিস।এটা বলে ইফান উঠে চলে গেল। রিহা রাগে ফুঁসতে লাগলো।
— ইশিতা আমি তোকে দেখে নিব। আমি ইফান কে না পেলে তোকে ও পেতে দিবো না।

পরের দিন ইফান ঠিক টাইমে ভার্সিটি এসে গেল। ইফান কে এ সময়ে ভার্সিটিতে দেখে রীতিমত সবাই অবাক। কি হলো আজ ইফানের সবাই অবাক দৃষ্টি নিয়ে ইফানের দিকে তাকিয়ে দেখছে। ইফান ক্লাসে এসে সবার উদেশ্য করে
— হ্যালো গাইস। আমাকে এরকম ভাবে দেখে লাভ নেই। আমি কোনো ভুত না যে তোমরা সবাই আমাকে এভাবে দেখবে। আমি তোমাদের খুব পরিচিত ইফান চৌধুরী। সো আমাকে সবাই নরমাল ভাবেই দেখো।
ইশিতা আজ এখনও ক্লাসে আসেনি। একটু লেট হয়ে গেল আজ। ক্লাসের সব মেয়েরা ইফানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থাকা টা অস্বাভাবিক কিছু না। প্রথমত এর আগে ইফান কে কেউ কোনো দিন ক্লাসে দেখেনি।আর দ্বিতীয়ত ইফান কোনো হিন্দি ফিল্মের হিরোর থেকে কম না। সব মেয়েরাই ইফান বলতে পাগল। ইফান ইভার দিকে তাকিয়ে
— ওই লম্বা চুল ওয়ালী।
ইভা ইফান এর দিকে তাকিয়ে
— আমাকে বলছেন।
— হ্যা আপনাকে ই বলছি। এই ক্লাসে আপনার চুলের থেকে লম্বা আর কারো চুল হবে কি?
ইভা তো ইফানের মুখে নিজের চুলের প্রসংশা শুনে সাত আসমানে উঠছে। কেউ ইভার একটু প্রসংশা করলেই ইভা ঘলে যায়। ইফান রাফির থেকে আগেই সব কিছু জেনে নিছিলো। ইভা কে হাত করতেন পারলেই ইশিতার সাথে কথা বলতে পারবে
— হুম বলেন।
— আমরা ক্লাসমেট তাহলে আপনি করে না বলে তুমি করে বলি?
— আচ্ছা।
— তোমার ওই ফ্রেন্ড টা কই?
— কে ইশিতা?
— হুম।
— আসছে, রাস্তায় আছে হয়ত।
এটা বলার সাথে সাথেই ইশিতা ক্লাসে ঢুকলো। ইশিতা ইভার সাথে ইফান কে দেখে একটু অপ্রস্তুত ভাবে ইভার কাছে আসলো।
— ওই তো ইশিতা এসে গেছে। ইশিতা এদিকে আয়।
ইশিতা ইশারায় ইভাকে ইফানের কথা জিঙ্গেস করলো
— আরে এনার কথা জিঙ্গেস করছিস। ইনি হলেন ইফান চৌধুরী ভার্সিটির লাভার বয়। সব মেয়েরা ইফান বলতে জান দেয়।
ইফান হ্যান্ডসেক করার জন্য ইশিতার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে
— হ্যালো মিস ইশিতা কেমন আছো?
ইশিতা ইফান কে পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে গিয়ে নিজের সিটে বসে গেল।
ইফান হাত ফিরিয়ে নিয়ে মাথা চুলকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে
— ম্যাডামের দেখছি ভাব আছে অনেক। কিন্তু ম্যাম এই ইফান চৌধুরীর তো ভাব ওয়ালা ম্যাম টা কে ই চাই।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here