সেই তুমি ৩ পর্ব ১৩+১৪

#সেই_তুমি🍁
#সিজন_০৩
#পর্ব_১৩
#Tabassum_Kotha

অর্ধ জ্বালানো সিগারেটটা পুরো শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় তুর্য। ক্লান্ত থাকায় সেও দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়ে। তুর্য ঘুমিয়ে পরলে হীর উঠে তার কাছে যায়। তুর্যর মুখোমুখি যেনো না হতে হয় তাই ঘুমানোর ভান ধরেছিল এতোক্ষণ।

আজ যা করেছি তাতে তুর্যর ইগো হার্ট হয়েছে কিন্তু আমি যে নিরুপায়। তুর্য আমার যতো কাছে আসবেন আমি ততো বেশি দুর্বল হয়ে পরবো তার প্রতি। দেখা যাবে যখন সময় আসবে তখন আমি তাকে ছেড়ে যেতে পারবো না। আচ্ছা সত্যি কি তুর্য আমাকে ভালোবাসেন! যদি ভালোবাসেই থাকেন তবে কেনো বলছেন না? এমন করে আমাকে দ্বিধায় ফেলে রেখে কি শান্তি পান উনি কে জানে? কি অমায়িক লাগছে তাকে! এই মুখটা দেখতে দেখতে যদি মৃত্যুও এসে পরে তবুও কোনো অভিযোগ নেই।
তুর্যর মাথার কাছে বসে তাকে দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল করিনি।

.
ব্যালকনির কাচ খোলা থাকায় সকালের সূর্যের প্রথম কিরণ এসে তুর্যর চোখে পরে। সচরাচর এতো সকালে ঘুম ভাঙ্গে না তার। তাই বেশ বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে সে। তবে চোখ খুলতেই তার সব বিরক্তি নিমেষে উধাও হয়ে যায়। হীর তার মাথার কাছে বসে ঘুমিয়ে আছে। হয়তো মাঝরাত থেকেই এভাবে আছে সে। ঘুমন্ত অবস্থায় এমনিতেই হীর কে অপরূপ সুন্দর লাগে দেখতে।
হীরের গালের হালকা লালচে তীল টা দেখতে পাচ্ছে তুর্য। লালচে হওয়াতে খুব কাছে থেকে না দেখলে দেখা যায় না তিলটা। তুর্যর ইচ্ছে করছে তিলটা ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু পরক্ষণেই তুর্য মত পাল্টে ফেলে। কালকের মতো যদি আজকেও হয় তবে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না সে। তুর্য বিছানা ছেড়ে উঠতে গেলে হীর এর ঘুম ভেঙে যায়।

আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই তুর্য কে নিজের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় পেলাম। এমন হুট করে তাকে দেখে বেশ ভয় পেয়েছি। এখন থেকে প্রতিদিন সকালে প্রথমেই তাকে দেখতে হবে ভাবতেই কেমন বুক কাঁপছে। তুর্য দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছেন একদম আমার সামনে।

— আমার বিছানায় কি করছো তুমি?

ভালোমতো খেয়াল করে বুঝতে পারলাম রাতে বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
— না মানে..

— পুরো রাত এখানেই ছিলে?

— আরেহ আপনি জানেন রাতে আপনাকে কতো মশা কামরাচ্ছিল।

— তো?

— তো আমি ওখানে বসে মশা তাড়াচ্ছিলাম।

তুর্য আবারও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমার উত্তরে যে তার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হয় নি বোঝাই যাচ্ছে।

— আরেহ আপনি ওসব বাদ দিন। আপনার সাথে আমার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

— ফাইন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ততোক্ষণে আমার কফি রেডি করো।

তুর্য ওয়াশরুমে ঢুকলে আমি কিচেনে যাওয়ার জন্য নিচে চলে এলাম। বড় আম্মু নাস্তা তৈরি করছিলেন। আমাকে কিচেনের বাইরে দেখে যে বড় আম্মু মোটেও খুশি হন নি সেটা তার চলে যাওয়াতেই বুঝতে পেরেছি। কষ্ট পেলেও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কফি বানানোতে মনোযোগ দিলাম। তুর্যর সাথে তাফসির ব্যাপার টা আলাপ না করলেই নয়। এমন তো নয় যে তাফসি আমাদের বিয়ের আসল কারণ টা জানে। তাহলে কেনো সে এতো শান্ত। কি হয়েছে তাফসির!

.
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে হীর কে কোথাও পায় না তুর্য। কফি মগ টা সেন্টার টেবিলে রাখা আছে। হাতের টাওয়াল দিয়ে ভেজা চুলগুলো হালকা মুছে আলমিরা খুলে তুর্য। একটা টি-শার্ট বের করে বিছানায় রেখে কফি মগ টা তুলে নেয়। কফিতে চুমুক দিতে দিতে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পিছন থেকে ধুম করে কিছু পরে যাওয়ার শব্দ পায়। পিছন ফিরে তাকিয়ে তুর্য ফিক করে হেসে দেয়।
এক গাদা কাপড়ের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে হীর। এদিকে তুর্য হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে একপ্রকার।

তুর্যর হাসি আমার রাগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। একেতো আমি ব্যথা পেয়েছি তারওপর এভাবে মজা নিচ্ছেন উনি।

— আমি ব্যথা পেয়েছি আর আপনি হাসছেন।

— সরি বাট আই কান্ট কন্ট্রোল।

কাপড়ের পাহাড় পারি দিয়ে উঠতে গেলে পা পিছলে আবার পরে গেলাম। এদিকে তুর্যর হাসির মাত্রাও বেড়ে গেছে। কি মুশকিল রে বাবা।

— একটু এগিয়ে এসে হেল্পও তো করতে পারেন তাই না!

তুর্য এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।

— কোলে তুলতে বলেছি নাকি? হেল্প করতে বলেছিলাম। নিচে নামান!

— আর ইউ শিউর?

— অফ কোর্স। একটু আধটু ইংলিশ আমিও পারি।

— ওকে ফাইন!

তুর্য আমাকে কোল থেকে ধারাম করে বিছানায় ফেলে দিলেন। এতো উপর থেকে পরায় বেশ ভালোই ব্যথা পেয়েছি।

— এটা কি করলেন আপনি?

— নিচে নামালাম।

— এভাবে কেউ নামায়?

— তুর্য আহমেদ চৌধুরী এভাবেই নামায়।

— হুহ। হয়েছে হয়েছে।

— এই কাপড় নিয়ে বিক্রি করতে বের হওয়ার প্ল্যান করেছো নাকি?

— আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো। আপনার কি?

— আমার ই সব। কারণ বউ টা আমার।

‘কুল হীর! কুল! সকাল সকাল একটা মেন্টালের কথা কানে নিস না।’

— কি বিরবির করছো?

— কিছু না।

কাপড় গুলো উঠিয়ে রুমের ভিতর ঢুকতে গেলে তুর্য বাঁধা দেন।

— আজকে পরার জন্য একটা রেখে বাকিগুলো আগের জায়গায় রেখে আসো।

— কি বললেন আপনি?

— রেখে আসতে বললাম।

— সেটা না। আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন।

— তাতে কি হয়েছে?

— এতো বছরে এই প্রথম তুমি করে বলছেন।

— ইয়েস। কজ নাউ ইউ আর মাই ওয়াইফ। তোমাকে রিসপেক্ট করা আমার দায়িত্ব।

তুর্যর মুখ থেকে ওয়াইফ শব্দ টা শুনতেই কেমন একটা সুরসুরি লাগছে। অন্য রকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে।

— একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

— হ্যাঁ করো।

— আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?

হীরের আচমকা এইধরণের প্রশ্নে তুর্য থতমত খেয়ে যায়। সে বুঝে উঠতে পারে না তার এই মুহূর্তে ঠিক কি উত্তর দেওয়া উচিত। এটাতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই যে তুর্য হীর কে অনেক ভালোবাসে কিন্তু এভাবে নিজের মুখে সেটা স্বীকার করে নেওয়ার মতো তার সাহস নেই। সহসাই প্রশ্ন টা এড়িয়ে গেলো সে।
— দ্রুত তৈরি হয়ে নাও। আমাদের বেরুতে হবে।

এক বুক আশা বেঁধেছিলাম এই ভেবে যে হয়তো আমার প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর পাবো। কিন্তু তুর্য এভাবে প্রশ্ন এড়িয়ে যাবেন জানতাম না।

বিকেলের দিকে তুর্য আমাকে শপিং এ নিয়ে যান। তুর্য নিজে পছন্দ করে বেশ কতকগুলো শাড়ি কিনে দেন আমাকে। এমনিতে আমি শাড়ি পরলে তার চোখে বিঁধে কিন্তু এখন সে নিজেই শাড়ি কিনলেন। এই লোকটার মতিগতি হয়তো এই জনমে আর বোঝা হবে না আমার। সারাদিন সুযোগ খুঁজেও একটু সময় পাই নি তুর্য কে তাফসির কথাটা বলার। ভয় হচ্ছে আমার, যতো সময় যাচ্ছে পরিস্থিতি ততো টা খারাপ হচ্ছে না তো!

.
“আমার আর তুর্যর বিয়েতে কি তুমিও নারাজ?”
– তাফসির রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে কথা টা বললো হীর।

তাফসি কাউচে হেলান দিয়ে একটা বই পড়ছিল। হীরের গলার আওয়াজ পেয়ে বইটা বন্ধ করে হালকা হেসে হীর এর দিকে এগিয়ে এলো।
— তোমরা বিয়ে করেছো তাতে আমার তো কোনো ক্ষতি হয় নি। আর নারাজ ই বা কেনো হবো? জিজ্ঞেসও তো করো নি।

— আসলে সব এতো দ্রুত হয়ে গেলো যে!

— হ্যাঁ দ্রুত তো বটেই। তবে তোমরা দুজন কিন্তু অনেক ভালো অভিনয় করতে পারো।

— মানে?

— মানে দেখো না,, আব্বু আম্মু দুজনেই বিশ্বাস করে নিয়েছে যে তুই আর তুর্য ভাইয়া একে অপরকে ভালোবাসো।

— এসব কি বলছো তাফসি?

— আমার সামনেও তোকে অভিনয় করতে হবে! আমি কি আর জানি না যে, তুর্য ভাইয়া তোকে ভালোবাসেন না!

তাফসি সবকিছু আগেই জানতো! আর এদিকে আমি ভেবেছিলাম এই বিয়ের মাধ্যমে তাফসিকে রায়ানের আসল রূপটা দেখাবো। (মনে মনে)

— তুর্য ভাইয়া বিয়ে টা করেছেন আমার জন্য। কারণ তিনি জানতেন আমি তোর আর রায়ানের বিয়ে মানতে পারবো না। কিন্তু তুই হীর! তুই আমার ভাইয়ের জীবন টা নষ্ট করার আগে একবারও চিন্তা করলি না! আমার জীবন শেষ করে শান্তি পাস নি তাই না রে! তুর্য কি অপরাধ করেছিল? ওকে কেনো এতোবড় ধোকা দিলি?

— তাফসি! তুমি এখনও বিশ্বাস করছো আমার রায়ানের সাথে সম্পর্ক ছিল?

— বিশ্বাস না করার কি আছে? সবতো আমার সামনেই। প্রথমে রায়ানকে ফাসিয়েছিলি। সেখানে হয়তো তোর স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটেছে তাই তুর্য কে নিজের ভালোবাসার মায়াজালে ফাসিয়েছিস।

আর কিছু বলার ক্ষমতা নেই আমার। যতো যা ই করি সবসময় তার বিপরীত ই হয়। কেনো আমার সাথেই এমন হয়? পরিস্থিতি কেনো সবসময় আমার প্রতিকূল থাকে? তাফসি এখনও আমাকেই ভুল বুঝছে। আমি তো তুর্য কে ফাসাই নি। তুর্য কে তো আমি ভালোবাসি। কিন্তু তবুও কখনও কুমতলবে তাকে হাসিল করতে চাই নি। তাহলে কিভাবে তারা এটা বিশ্বাস করছে এসব কিছু আমি করছি! এতোটা নিচ ভাবে সবাই আমাকে?

.
অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে তুর্য। নতুন নতুন কোম্পানির হাল ধরলে যা হয় আর কি। কাজ বুঝে সেটাকে সম্পন্ন করতেই রাত নেমে আসে।
হীর ঘুমিয়ে পরেছে। কাউচের এক পাশে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে। তুর্য হীর কে এক নজর দেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। প্রায় একঘন্টার মতো সময় নিয়ে শাওয়ার শেষ করে। সারাদিনের সব ক্লান্তি দূর করার মোক্ষম উপায় এটা। বেরিয়ে এসে আবারও হীর এর দিকে দৃষ্টি দেয়। হীর আগের ভঙ্গিতেই শুয়ে আছে। এবার তুর্য খানিকটা নিচে ঝুঁকে। হীর ঘুমের ঘোরে বারবার ফুঁপিয়ে উঠছে। তুর্যর আর বুঝতে বাকি থাকে না যে হীর ঘুমানোর আগে কাঁদছিল। সম্পূর্ণ কাহিনী না জানলেও কিছু টা আন্দাজ সে করতে পারছে।
হীর এর নাক আর গাল দুটো লাল হয়ে আছে। তুর্য হীর এর দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে হীরের গালে তার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। ঘুমের ঘোরে হীর খানিকটা কেঁপে উঠলে তুর্য একটু দূরে সরে যায়। হয়তো সে ভয় পাচ্ছে হীর জেগে উঠলে তাকে দেখে ফেলবে।

তুর্য হীর কে পাঁজাকোলে তুলে বেডে এনে শুইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে হীর কে দেখে, বেড সাইড টেবিলে রাখা সিগারেটের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে যায়। ব্যালকনির রেলিং এর কার্নিশ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে সামনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। একটা সিগারেট প্যাকেট থেকে বের করেও কিছু একটা ভেবে আবার রুমে ফিরে আসে। সিগারেটের প্যাকেট টা আগের স্থানে রেখে হীরের পাশেই ঘুমিয়ে পড়ে।

.
ঘুম থেকে উঠে তুর্যর বাহুডোরে আবিষ্কার করলাম নিজেকে। শুধু সেটা হলেও মানা যেতো কিন্তু তুর্য আমার বুকের উপর শুয়ে আছেন, দু হাতে আমাকে জরিয়ে। আমার হৃত্স্পন্দন ঠিক আগের বারের মতোই তীব্র হয়ে উঠছে। তুর্য আমার এতোটা কাছে এলেই এমন হয়। ঠিক এই মুহূর্তে আমি আমার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এইবার এমনটা হওয়ার আগেই আমাকে এখান থেকে সরতে হবে। কিন্তু আমি এখানে এলাম কি করে? আমি তো কাউচে শুয়েছিলাম রাতে।
খুব সাবধানে নিজেকে তুর্যর বাহুডোর থেকে আলগা করার চেষ্টা করছি। কাল তুর্য আমার কারণে ঘুমাতে পারেন নি। আজকেও সেটা হোক চাই না।
কোনোমতে তুর্যকে সরিয়ে সেখান থেকে উঠে পরলাম।

ফ্রেশ হয়ে সবার জন্য রান্না করে টেবিলে রেখেছি, জানি না বড় আম্মু আমার বানানো খাবার খাবেন কি না! তাফসির ব্যাপার টা আজকে তুর্যকে বলতেই হবে। তুর্যর কফি নিয়ে রুমে ঢুকতে যাবো তখন একটা আননোন নাম্বার থেকে আমার মোবাইল এ কল আসে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রায়ানের কন্ঠ ভেসে আসে।
— তুমি কি মনে করো নিজেকে? খুব চালাক তুমি? আমার ইগো হার্ট করবে আর আমি ছেড়ে দেবো তোমাকে? ইউ আর রং। আই উইল শো ইউ হু আই অ্যাম।

আমার কিছু বলার আগেই রায়ান কল কেটে দেয়।
ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে আরও বড় কোনো সমস্যা আমার অপেক্ষা করছে! হঠাত্ করেই কেনো যেনো মনে হচ্ছে তাফসি কে একবার দেখা দরকার। হাতের ট্রে টা সামনের টেবিলে রেখে তাফসির রুমের দিকে ছুটলাম। কিন্তু তাফসি ঘরে নেই। সারা বাড়ি খুঁজেও তাফসিকে কোথাও পেলাম না। তাফসি রায়ানের সাথে দেখা করতে যায় নি তো!

তাফসির কথা ভাবতে ভাবতে রুমে ঢুকছিলাম। হঠাত্ কিছু একটার সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে যেতে নিলে কেউ একজন আমার কোমর চেপে ধরে।

“দেখে চলতে পারো না? এখন আমি না ধরলে নির্ঘাত পরে ব্যথা পেতে।”
– হীর কে জরিয়ে ধরা অবস্থায় কথাটা বললো তুর্য।

— আরেহ আপনি! আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন! থ্যাংক ইউ।

— ইটস্ ওকে। কিন্তু একটু সাবধানে চলো।

— হ্যাঁ। তা বুঝলাম। কিন্তু এখন ছাড়ুন আমাকে।

তুর্য খানিকটা লজ্জা পেয়ে হীর কে ছেড়ে দিলো।
— কফি?

— এই যাহ! ভুলে গেছি এখুনি নিয়ে আসছি।
হীর কফি আনতে গেলে তুর্য হীরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের মনেই হালকা হেসে উঠে।
#সেই_তুমি🍁
#সিজন_০৩
#পর্ব_১৪
#Tabassum_Kotha

“আজকে থেকে তোমার ক্লাস শুরু হচ্ছে। গেট রেডি ফাস্ট।”
– কফিতে চুমুক দিতে দিতে হীর কে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো তুর্য।

— কিসের ক্লাস?

— ইন্টার পাসও করতে চাওনা বুঝি? আজ থেকে রেগুলার ক্লাসে যাবা। সামনে এক্সাম।

— ধ্যাত্ এই পড়ালেখা ভালো লাগে না। বিয়ের পর কেউ পরে নাকি! (ফিসফিসিয়ে)

— কি বললে?

— ককিছু না। রেডি হচ্ছি।

তুর্য অফিসে যাওয়ার পথে আমাকে ক্লাসের জন্য ড্রপ করে গেলেন। প্রথমে পুনরায় পড়ার কথা শুনে মন খারাপ হয়েছিল বটে কিন্তু এখন অনেক ভালো লাগছে। বাড়ির টেনশন যুক্ত পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আলাদা একটু সময় কাটাতে পেরে মন খুব হালকা হয়ে গিয়েছে।

ক্লাস শেষ হতে বিকেল হয়েযায়। এখান থেকে চৌধুরী মেনশনের দুরত্ব অনেক। একা এতোটা পথ আগে কখনও যাওয়া হয় নি। সবসময় তাফসির সাথেই আসা যাওয়া করেছি। কিন্তু আজ… একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আরও সময় নষ্ট হবে। কেনো যেনো পুরো রাস্তা আজ খালি। একটা রিকশাও নেই। কেমন ভয় ভয় লাগছে একা এভাবে হেঁটে যেতে। হঠাত্ মনে হচ্ছে আমার পিছনে আরও কয়েকজন হাঁটছে। প্রথমে মনের ভুল ভাবলেও, লোকগুলোর আমার পিছু পিছু আসা থামছে না। এবার আমার সত্যি অনেক ভয় হচ্ছে। তারা যদি কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে পিছু নিয়ে থাকে!

পিছু নেওয়া লোকগুলো থেকে বাঁচার জন্য যতো দ্রুত সম্ভব হেঁটে চলেছি। কিন্তু তারা আমার সাথে তাল মিলিয়ে আরও দ্রুত চলছে। হঠাত্ সামনে কারো সাথে ধাক্কা লাগলে আমি থমকে দাঁড়ালাম।

“তুর্য!”
আকুতি ভরা কন্ঠ নিয়ে সামনে থাকা মানুষটাকে দু হাতে জরিয়ে নিলাম।

নিজের বুক থেকে হীর মুখ তুলে তার দু হাতের আজলে নিয়ে নেয়ে তুর্য। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে হীর। দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সে। তুর্য পুনরায় হীর কে বুকে জড়িয়ে নেয়।
হীরের পিছু নেওয়া বখাটের দল তুর্য কে দেখে সেখান থেকে কেটে পরে। ভয়ার্ত হীর তুর্য কে আরও শক্ত করে চেপে ধরে। তুর্য কোনোমতে হীর কে শান্ত করে সেখান থেকে চলে আসে।

বাড়ি ফেরার পথে আমার মুখ দিয়ে আর একটি কথাও বের হয় নি। আজ যদি তুর্য ঠিক সময়ে এসে না পৌঁছাতেন? না, না! আর কিছু ভাবতে পারছি না। বাসায় রুমের ভিতর কেমন দমবন্ধ হয়ে আসছে। একটু ছাঁদে যাওয়া দরকার, বেশ কয়েকদিন খোলা বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া হয় নি।

.

শীতকালের শেষ দিক। সহসাই মেঘের কোনো আনাগোনা নেই। রাতের অন্ধকার কে হালকা করে দিয়ে চারিদিকে চাঁদের আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভরা চাঁদ।পূর্ণিমা তিথি চলছে। ঘনঘন হিমশীতল বাতাস ক্ষণে ক্ষণে গায়ে কাঁটা দিয়ে যাচ্ছে।বাতাসের ঝিরিঝিরি মিহি শব্দ কানে এক শ্রুতিমধুর গান শোনাচ্ছে। উদ্ভট সব চিন্তা ভাবনা দূর করতে চোখ বন্ধ করে পরিবেশটা অনুভব করছে হীর।
ভরা চাঁদের নীলাভ আলো তির্যক ভাবে হীর এর উপর কিরণ দিচ্ছে। ছলনাময়ী বাতাসের দল গুলো বারবার তার খোলা চুল গুলো উড়িয়ে দিচ্ছে। তুর্য মুগ্ধ হয়ে হীর এর দিকে তাকিয়ে আছে। এই সৌন্দর্য কে এড়িয়ে যাওয়া কোনো পুরুষের পক্ষে এতোটা সহজ নয়। এ যেনো প্রকৃতি আর সৌন্দর্যের রচয়িত কোনো মায়াজাল। অপরাধীর মতো তুর্যও সেই মায়াজালে আটকা পরে গিয়েছে। নিজের অজান্তেই তার প্রতিটি পদক্ষেপ তাকে হীর এর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

.
আচমকা পিছন থেকে কেউ কোমর জড়িয়ে ধরে। কিঞ্চিত ভয় পেলেও পরক্ষণেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। কারণ এই স্পর্শ, এই ঘ্রাণ আমার পরিচিত। তুর্য জরিয়ে ধরে আছেন আমাকে। এই মানুষটার স্পর্শ আমার কাছে কখনও অপরিচিত হতে পারবে না।একটা সময় ছিল যখন এই মানুষটার একটা দৃষ্টির জন্য আকুল হয়ে অপেক্ষা করতাম। আজ সেই মানুষটা আমার নিশ্বাসের কাছে।

তুর্যর হাত দুটো আমার পেটে বিচরণ করছে। তার প্রতিটি স্পর্শ আমার মধ্যে এক নতুন শিহরণ জাগিয়ে তুলছে। খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে কি, আজ যদি আমি তুর্যর সাথে মিশে একাকার হয়ে যাই! হয়তো না!
কাঁধ থেকে চুল সরিয়ে তুর্য তার থুতুনি আমার কাঁধে রাখেন। তুর্যর গরম নিশ্বাস আমার কাঁধে আছড়ে পরছে। তুর্য বরাবরই তার ব্যবহারে আমাকে অবাক করেন। আজকেও তার ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছে না। তুর্য তার ঠোঁট আমার ঘাড়ে স্পর্শ করালেন। কোনো এক স্বর্গীয় সুখের অনুভূতিতে লজ্জায় আমার দুই চোখ নুইয়ে আসছে। আজ আর তুর্য কে বাঁধা দিতে ইচ্ছে করছে না। কেনোনা তার ভালোবাসায় সাড়া দিয়ে আমিও প্রেমে যোগিনী হয়ে যাই!
শক্ত করে ধরে রেখেছেন তুর্য আমাকে। সেদিন জেসিকা কেও ঠিক এভাবেই ধরে রেখেছিলেন! জেসিকার কথা মনে পরতেই সেদিনের সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্য একের পর এক চোখের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায়। সেদিন জেসিকা তুর্যর বুকের সাথে এভাবেই লেপ্টে ছিল।
তুর্যর ঠোঁট ক্রমাগত আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু এখন আর আমার মধ্যে ভালোবাসার কোনো অনুভূতি খুঁজে পাচ্ছি না। কেনো যেনো তার প্রতিটি স্পর্শ আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। যার হাতে নিজেকে সমর্পণ করতে যাচ্ছিলাম সে তো বহু আগেই অন্য কারো কাছে সমর্পিত! শরীর যেনো আর কিছু বোধ পাচ্ছে না।

তুর্য হীর এর মুখ তার দুই হাতের আজলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালে হীর তাকে সরিয়ে দেয়। হীর এর ব্যবহারে রাগ চিন চিনিয়ে মাথায় উঠে যায় তুর্যর। হীর এর সম্মতিতেই সে এগিয়েছিল, কিন্তু এখন হীর তাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। পুনরায় হীর এর থেকে রিজেকশন মানা তার পক্ষে সম্ভব নয়। রাগ সামলাতে না পেরে হাতের পাশে থাকা ফুলের টবে সজোরে ঘুষি মেরে ভেঙে ফেলে সে। ফুটন্ত লাভার মতো টগবগ করা রাগ কে কম করার বৃথা চেষ্টা করছে।
তুর্যর হাত কেঁটে অঝোরে রক্ত ঝরছে। কিন্তু সেদিকে হীর এর বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। তার ধ্যান জ্ঞানে শুধু মাত্র তুর্য আর জেসিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য গুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। নেশাগ্রস্তের মতো ঢুলু ঢুলু পায়ে সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে তুর্যর রুমে যায়। মনের আকাশে কালো বাদল তান্ডব করছে। এদের শান্ত না করলে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে আর বাকি নেই। ওয়াশরুমের দরজা সজোরে বন্ধ করে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পরে।

বুক ভেঙে কান্না পাচ্ছে। হয়তো ওভার রিয়েক্ট করছি, কিন্তু তুর্যর বুকে অন্য কেউ থাকবে, সেই স্মৃতি কিভাবে ভুলে যাবো! বারবার যে সেই রাতের দেখা দৃশ্য চোখের সামনে এসে থমকে যাচ্ছে। তুর্য কে নিজের সবটুকু উজাড় করে ভালোবাসলেও দিন শেষে সে আমার নয়। সে যে অনেক আগেই অন্য কারো হয়ে গিয়েছেন। তুর্য কে নিজের করে পাওয়ার পর হারানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়!

.
রক্তে মাখানো হাতে অনবরত ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কা দিয়ে চলছে তুর্য।
— হীর ওপেন দ্য ডোর। আই ওয়ান্ট টু নো। আই নিড টু নো, হুয়াট হেপেন্ড টু ইউ?

ওপাশ থেকে হীর এর কোনো সাড়া ই সে পায় না।

— ওপেন দ্য ব্লাডি ডোর ড্যাম ইট!

আজ সে হীর কে এভাবেই ছেড়ে দিতে পারবে না। আজ তার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর তার চাই। যে করেই হোক আজ হীর কে জবাবদিহি করতেই হবে, কেনো সে বারবার তুর্য কে ফিরিয়ে দেয়। কি অপরাধ করেছে সে যার শাস্তি তাকে বারবার পেতে হচ্ছে।

— হীর! দরজা খোলো বলছি! নয়তো আমি দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে যাবো।

এবারও ওপাশ টা নিশ্বব্দ।

— ইউ নো মি হীর। আমি এতো সহজে হার মানার পাত্র নই। আজ যা কিছু হয়ে যাক। তবুও আমি জেনেই ছাড়বো তোমার কি হয়েছে! কেনো তুমি আমাকে মেনে নিতে পারছো না!

তুর্যর কোনো কথাই যেনো হীর এর কান অব্দি পৌঁছাতে পারছে না।

দরজায় ধাক্কা ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠছে। হয়তো তুর্যর রাগের সামনে এই দরজাটাকেও হার মানতে হবে। দু কান চেপে ধরে তুর্যর ডাক অগ্রাহ্য করার হাজার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত তুর্যর জেদের কাছে হীর কে মাথা নত করতেই হলো। দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে আসে হীর।
পুরো শরীর ভিজে একাকার। কিছুক্ষণ আগে যেই চেহারার মায়ায় জড়িয়ে পরেছিল তুর্য সেই চেহারায় এখন বিষাদের ঘনঘটা।

এক মুহূর্তের জন্য তুর্যও কেঁপে উঠে হীর এর এই অবস্থায়। হীর কে এতোটা ভঙ্গুর সে একবারই দেখেছিল। তবে কি হীর এখনও তাকে বিশ্বাস করতে পারে নি! এখনও হীর এর দৃষ্টিতে তুর্য চরিত্রহীন পুরুষ!
এতোক্ষণ তুর্য হীর এর দুই বাহু চেপে ধরে ছিল। হীর এর শান্ত অথচ বিধ্বস্ত দৃষ্টি যেনো চিত্কার করে জানান দিচ্ছে সে তুর্য কে চায় না। হীর কে ছেড়ে দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় তুর্য। হীর কে প্রশ্ন করার তার ইচ্ছা ইচ্ছাই থেকে যায়।

ভেজা কাপড় নিয়েই কাউচে শরীর এলিয়ে দেয় হীর। দু গাল বেয়ে অঝোরে অশ্রুদল গড়িয়ে পড়ছে। সারাদিনের ক্লান্তির পরেও আজ দুচোখের পাতা এক করতে পারছে না সে!

বেশকিছু ক্ষণ এলোপাথাড়ি ড্রাইভ করার পর একটা বারের সামনে এসে ব্রেক কষে তুর্য। অস্থির চিত্ত শান্ত করার জন্য এখন তার ড্রিংক করা প্রয়োজন। বারে গিয়ে একটা লার্জ প্যাগ অর্ডার করে সে। রাত প্রায় বারোটার উপরে বাজে। বারে লেইট নাইট শো হচ্ছে, যেখানে বেশ কয়েকজন সুন্দরী তরুণী তাদের নৃত্য কলা প্রদর্শন করছে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই। কে কতো তাড়াতাড়ি খদ্দের কে লোভাতে পারে!

.
সারারাত তুর্য বাড়ি ফিরেন নি। কাল রাতে মনের অবস্থা ভালো না থাকায় আমিও আর তার খোঁজ করি নি। তবে এখন যখন হুশ ফিরে পেয়েছি তখন তার কথা খুব মনে পড়ছে। যতো যাই করে নেই,, তাকে ভালোবাসা বন্ধ করা সম্ভব নয়। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ভালোবেসে যাবো। এখনও কেনো বাড়ি ফিরেন নি উনি! অনেক খুঁজে মোবাইল ফোন টা বের করে তুর্যর নাম্বারে কল করলাম। নাম্বার টা নেটওয়ার্ক কভারেজ এরিয়ার বাইরে বলছে।

বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। তুর্যর বাড়ি ফেরার কোনো লক্ষণ না পেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম ক্লাসে যাওয়ার জন্য। যেহেতু সারাজীবন একাই বাঁচতে হবে তাহলে শুধু শুধু অন্য কারো উপর নির্ভর হয়ে কি লাভ!

ড্রয়িং রুমে তাফসি আর রায়ান দাঁড়িয়ে আছে। রায়ানকে আবারও চৌধুরী মেনশনে দেখে অজানা একটা ভয় আবারও গ্রাস করে নিচ্ছে আমাকে। যতোবার রায়ান এ বাড়িতে আসে ততোবারই নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়।
বড় আম্মু আর তাফসি কে খুব খুশি মনে হচ্ছে।

হীর কে দেখে তাফসি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে একটু এগিয়ে আসে।
— হীর! এসেছিস তুই! দেখ কে এসেছে!

— রায়ান আবার এখানে? তোমরা কিভাবে এলাও করলে?

— যেভাবে তুই এখনও এই বাড়িতে আছিস!

— তুমি এখনও আমাকেই ভুল বুঝছো।

— ঠিক বলছিস। কারণ আসল কালপ্রিট তুইই।

— অনেক বার নিজের সাফাই দিয়েছি। এখন সত্যি আমি খুব ক্লান্ত। তোমাদের যা ইচ্ছা ভাবতে পারো।

— এতে এতো ভাবাভাবির কি আছে! এমনিতেই তোকে এই বাড়িতে খুব বেশি ইমপরট্যান্স কেউ দেয় না, তুর্য ছাড়া। তুর্য কেও যে তুই ফাঁসিয়েছিস এটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি।

তাফসির কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে নিলে রায়ান আমার পথ আটকে দাঁড়ায়।
— খুশির খবর টা শুনে যাও!

প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি রায়ানের দিকে।

— তাফসি কে আমি সব বলে দিয়েছি কিভাবে তুমি আমাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে তাফসির থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলে!

— আমি আপনাকে ফাঁসিয়েছিলাম!

— আমি তখন তোমার আসল চেহারা টা দেখতে পারি নি। কিন্তু আজ যখন টাকার লোভে তুমি আমাকে ছেড়ে দিয়ে তুর্য কে বিয়ে করে নিলে,,, এখন আমার চোখে লাগানো তোমার ভালোবাসার পর্দা সরে গিয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি আমার জন্য একমাত্র তাফসির ভালোবাসাই নিখুঁত। তুমি যা করেছো সবটাই ছিল ছলনা।

— চুপ করুন রায়ান। আপনার কি একটুও বিবেকে লাগছে না এসব মিথ্যে কথা রটাতে!

— এনাফ হীর। তোমাকে আমি ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে ঠকিয়েছো। টাকার কাছে বিক্রি করে দিয়েছো নিজের ভালোবাসা, নিজের শরীর কে।

— চুপ করুন। প্লিজ চুপ করুন। আমি আর নিতে পারছি না।

— আমার বিছানায় আসার বিনিময়ে আমি তোমার সব প্রয়োজন মিটিয়েছি। এখন এটা তুর্য করছে। কে জানে আরও কতোজনে শয্যাসঙ্গী হয়েছো টাকার জন্য।

আর সহ্য করতে না পেরে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলাম রায়ানের গালে। আজ আমার সহ্যের সীমা সত্যি ছাড়িয়ে গিয়েছে।

রায়ানকে চড় মারা তে তাফসি ভরকে উঠে।
— হাউ ডেয়ার ইউ? তুই আমার হবু হাসবেন্ড এর গায়ে হাত তোলার সাহস পেলি কোথায়?

তাফসি রায়ানের থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে হীর কে চড় মারার জন্য হাত উঁচু করলে পাশে থেকে তুর্য তাকে ফেরায়।
— হুয়াট আর ইউ ডুয়িং তাফসি? তুই কি ভুলে যাচ্ছিস হীর সম্পর্কে তোর বড় ভাইয়ের ওয়াইফ?

— আমি এই ক্যারেকটারলেস মেয়ে টাকে আমার ভাবি কখনই মানতে পারবো না।

— মুখ সামলে তাফসি। তোর মানা আর না মানায় সত্যি টা পাল্টে যাবে না। শি ইজ মাই ওয়াইফ নাও। লার্ন টু রেস্পেক্ট হার।

— তুই এসব আমাকে বলছিস ভাইয়া? এই মেয়েটা এই বাড়ির হবু জামাই কে সবার সামনে অপমান করছে সেটা মুখ বুজে সহ্য করবো আমি? তুই যেমন তোর সো কল্ড বউ এর অপমান সহ্য করতে পারছিস না। ঠিক তেমনি আমিও আমার হাসবেন্ড এর অপমান সহ্য করতে পারবো না।

তুর্য আর দুজনেই তাফসির কথায় অবাক হয়।
— এতো কিছুর পরেও তুই রায়ানকে বিয়ে করেছিস? (তুর্য)

— আমি তোর মতো নই যে একা একাই বিয়ে করে নেবো। বাড়ির সবাই কে জানিয়ে সবার সম্মতিতে পরশু রায়ান আর আমি বিয়ে করছি।

তুর্য তাফসির কথার প্রেক্ষিতে আর কোনো কথা না বলে তার রুমে চলে যায়।
ভেবেছিলাম তুর্য তাফসিকে বোঝাবেন কিন্তু উনি কিছু না বলেই চলে গেলেন কেনো!

চলবে…

[রিচেক করার একদম সময় পাই নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।]
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here