সেই তো এলে তুমি পর্ব -০৬+৭

#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_৬
#Saji_Afroz

কাল ধকল যাওয়ার কারণে আজ সারাদিনই ঘুমে তায়শা। বুশরার জোরাজোরিতে উঠে কোনোমতে গোসলটা সেরে নেয় সে বিকেলের দিকে। আবারও ঘুমোতে যাচ্ছে তখন বুশরা একটা প্লেট হাতে নিয়ে এসে বলল, পার্লারে যেতে হবে ভুলে গেছিস?
-উহু। বিয়ে তো আরও দেরী আছে।
-তোকে বিকেলে যেতে বলেছে না? কম সময় নিয়ে সাজালে পেত্নী লাগবে। ঘুম তো সবসময় যেতে পারবি। বিয়ের দিন কি আর আসবে?
.
তায়শা চোখ কচলাতে কচলাতে বলল, ঠিক বলেছিস। যাচ্ছি আমি।
-তার আগে বিরিয়ানি টা খেয়ে নে। সারাদিন কিছু খাসনি। ঘুমে কি পেট ভরবে?
-খাইয়ে দে।
.
বুশরা হাত ধুয়ে এসে খাইয়ে দিতে থাকে তায়শা কে৷ আলিয়া খাতুন বুশরাকে খুঁজতে আসেন। কিন্তু এমন একটা দৃশ্য দেখে তার নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে।
আর যাই হোক, বুশরা তার মেয়ে দুটোকে সবসময় এভাবে আগলে রেখেছে।
তিনি চোখ মুছে এসে বসলেন তায়শার পাশে।
তায়শা মা কে বলল, একবার বুশরা আপিকে বললাম খাইয়ে দিতে রাজি হয়ে গেল। তোমাকে বললে কত কাজ বেরুই।
-কত কাজই তো করছি। বিয়ে বাড়ি বলে কথা।
.
খাওয়া শেষে তায়শা ফ্রেশ হয়ে তৈরী হয়ে নেয় পার্লারে যাওয়ার জন্যে। বুশরাও প্লেট রেখে হাত ধুয়ে আসে। সে সব গুছিয়ে দিতে সাহায্য করে তায়শা কে। নাফিশাও তৈরী। তায়শা বলল, আশিক যে ড্রেসটা কিনে দিয়েছে ওটা পরবে তুমি।
.
বুশরা হেসে বলল, আচ্ছা।
-কি আচ্ছা? ওটা নাও আর আমাদের সাথে চলো।
.
বুশরা আলিয়া খাতুনের দিকে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলল, আসলে বাসায় কাজ আছে। তোরা যা না। আমি এখানে নিজে তৈরী হয়ে নেব।
-দেখেছি কাল কি হয়েছিস। আমার মাত্র দু’টো বোন। তারাই যদি ভালো করে তৈরী না হয়? আরে বর পক্ষের সামনে ছোট হয়ে যাব তো।
.
আলিয়া খাতুন বললেন, ওকে পরে পাঠান। তোরা চলে যা।
-সেটা তুমি কালও পাঠিয়েছ। দেখো ও না গেলে আমিও আজ যাব না। এইভাবে বিয়েতে বসব।
.
বুশরা তাকে বোঝাতে যাবে তখন আলিয়া খাতুন বললেন, কাপড় নিয়ে আয় বুশরা। আসার সময় সবাই একটা সি.এন.জি করে চলে আসিস। আর আমি কিছু খাবার দিচ্ছি। খিদে লাগলে খেয়ে নিস তোরা।
.
মা এর এমন নরমস্বর আশা করেনি তায়শা। সে মা কে জড়িয়ে ধরে বলল, ধন্যবাদ মা।
-হু। মা তো বেশি খারাপ৷ আয় বুশরা। খাবার দিই তোকে।
.
বুশরাও খুশি হয়। এমন কিছু সে আশা করেনি। ইচ্ছে করছে তায়শার মতো সেও জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ দিক আলিয়া খাতুন কে। কিন্তু সেই অধিকার হয়তো তার নেই! যা রয়েছে কেবলই তায়শা ও নাফিশার।
আলিয়ার সাথে রান্নাঘরে এসে খাবার নেয় বুশরা। এরপর নিজের রুমের দিকে চলে যায়। যাওয়ার আগে তাকে বলল, কোনো কাজ করে দিতে হবে? তাড়াতাড়ি করে নাহয় ওদের সাথে যাই।
-একটা জায়গায় যাচ্ছিস ওখানে যা। করতে হবে না কিছু এখন।
.
বুশরা চলে গেলে আলিয়া খাতুনের এক আত্মীয়া এসে বললেন, কাল থেকে মেয়েটাকে দেখছি। বেশ ভালো মেয়ে। যদি কিছু মনে না করো আলিয়া, একটা প্রস্তাব দিই?
.
আলিয়া খাতুন হকচকিয়ে বললেন, জি বলেন?
-আমার ছেলেটা সরকারি চাকরি করে৷ এমন একটা ঘরোয়া মেয়ে আমার ভীষণ দরকার। জানোই তো প্রায়ই অসুস্থ থাকি আমি। এমন একটা মেয়ে পেলে সংসারটা গোছানো থাকবে আমার। বুশরাকে দেবে আমার ছেলের বউ করে?
.
আলিয়া খাতুন চিন্তিত হয়ে বললেন, বিয়ে সাদির বিষয় তো আর হুট করে বলা যায় না। আমি ওর ফুফা আর বাবার সাথে কথা বলে জানাব।
-আচ্ছা।
.
আলিয়া খাতুন তাদের ভালো করেই চেনেন। বুশরার জন্য এমন একটা প্রস্তাব সাত কপাল বলা যায়। বিয়ে দিয়ে দিলে তার মাথা থেকেও বোঝা কমবে।
এই ভেবে তার স্বামীকে সবটা খুলে বলেন তিনি।
আকবর আলী এসব শুনে বললেন, এর আগে তো কখনো বিয়ে দেওয়ার কথা বলোনাই ওর?
-আগে বলিনাই তাতে কি সারাজীবনেও বলব না? মেয়ে মানুষ যখন বিয়ে তো দিতেই হবে। তাছাড়া ওর জন্যে সব ভালো ঘর আসে। পরে বয়স হলে যদি না আসে?
-না আসলে এখানেই থাকবে। সে তো আর বিয়ে করতে চায়ছে না।
-মানে কি?
-ওরে বোকা, ওর বিয়ে হয়ে গেলে মাসে মাসে যে টাকা ওর বাপের কাছ থেকে পাই সেটা কি পাব? তাছাড়া ঘরের সব কাজও সে করে।
.
আলিয়া খাতুনের মেজাজ খারাপ হয়। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন আকবর আলীকে। বিয়ের আগে নানা স্বপ্ন দেখালেও বিয়ের পর জেনেছে কতটা ছোটলোক সে। নিজের তো কিছুই নাই, কাজ অবধি করতে চাইতো না কোনো। বস্তিতে গিয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতো। আলিয়া খাতুন বাবার তরফ থেকে যে সম্পত্তি পেয়েছিলেন সেটাও ব্যবসা করবে বলে নষ্ট করেন আকবর আলী।
পরে তার ভাই বোনের কথা ভেবে একটা মুদি দোকানে বসিয়ে দেন আকবর আলীকে। তখন তার সংসারে অশান্তি দূর হয়। ভাই বিদেশ যাওয়ার আগে নিজের বাড়িটাও দিয়ে যায়। নাহয় সেই বস্তিতেই তাদের থাকতে হত। ভাই এর এত উপকার সে ভুলতে পারে না। মা যেমনই হোক, মেয়েটার দায়িত্ব তাকে দিয়েছে। তায়শার বিয়েটা যেহেতু হয়ে যাচ্ছে এরপর বুশরারও ব্যবস্থা করবেন তিনি। এ নিয়ে আর আকবর আলীর সাথে কথা বাড়ালেন না আলিয়া খাতুন। সিদ্ধান্ত নিলেন পরবর্তীতে ভাই এর সাথেই কথা বলবেন।
.
.
সন্ধ্যে হয়ে গেছে। মাত্রই তায়শাকে সাজাতে শুরু করা হয়েছে। নাফিশা ও বুশরাকে আগে সাজানো হয়। বুশরাকে লাল রঙের সালোয়ার কামিজে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। শ্যাম বর্ণের মেয়েদের সাজলে না কি বেশ ভালো লাগে। বুশরা তা আজ আরেকবার প্রমাণ করলো। ভারী গহনাও পরেছে সে তায়শার জোরাজোরি তে। তায়শা তাকে দেখে বলল, ভারী মিষ্টি দেখাচ্ছে তোকে আপি। বউ তো তোকেই মনে হচ্ছে।
-কি যে বলিস না!
.
তায়শা কে সাজানো শুরু হয়। বুশরা নিজেকে আয়নায় দেখতে ব্যস্ত। আজ প্রথম সে এইভাবে সেজেছে। নিজেকে যেন নিজেই চিনতে পারছে না। নওয়াজ কে মনে পড়ছে ভীষণ। তায়শার থেকে ফোন নিয়ে তাকে ভিডিও কল দেয় বুশরা। নওয়াজ কাজে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু আচমকা বুশরা কে এভাবে দেখে চমকে যায় সে। একপাশে এসে বলল, লাল পরী মনে হচ্ছে।
-সত্যি?
-হু৷ পাশে থাকলে এখন…
.
এই বলে থেমে যায় নওয়াজ। বুশরা হাসলো। কিন্তু বেশিক্ষণ আর কথা বলতে পারলো না। পার্লারের এক মহিলা এসে বলল, তায়শা কে আপনাদের মধ্যে? একজন পুরুষ দেখা করতে এসেছে।
.
তায়শা মাত্রই মেকআপ করতে বসেছে। তাছাড়া তার জামা-কাপড়ও ঠিক নেই। পেটিকোট ও ব্লাউজ পড়ে আছে সে। তাই সে বুশরাকে বলল, বুশরা আপি? একটু গিয়ে দেখ না কে এসেছে।
.
সে নওয়াজকে বিদায় জানিয়ে তায়শার কাছে তার ফোন দিয়ে দেয়। ওদিকে নাফিশাকে সাথে ডাকলে সে বলল, আমি টিকটক করছি! বাসায় গিয়ে মানুষের ভিড়ে পারব না। তুমি যাওনা আপি।
.
বুশরা চিন্তিত হয়ে বলল, কে এসেছে!
.
তায়শা বলল, আমি আমার কালিরা চুড়ি গুলো আনতে ভুলে গিয়েছিলাম। মা কে ফোনে বলেছি কাউকে দিয়ে পাঠাতে। মা পাঠিয়েছে হয়তো।
.
একটুর জন্য বুশরার মনে হয়েছে হয়তো নিখিল এসেছে! কিন্তু তায়শা এ কথা বলাতে নিশ্চিত হয়ে নিচে নেমে আসে। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না বুশরা। এদিক ওদিক ফিরতে থাকে। হঠাৎ এক বয়স্ক লোক তার দিকে এগিয়ে এসে বলল, একটু কথা ছিল তোমার সাথে।
-চুড়ি দিতে এসেছেন? ফুফু আম্মা পাঠিয়েছে আপনাকে? কিন্তু আপনাকে আমি চিনলাম না।
.
লোকটি আর কেউ নয়। তিনি হলেন খালেকুজ্জামান। পার্লারের আশেপাশে দোকান থাকায় এখান থেকে কিডন্যাপ করাটা কষ্ট হত তার জন্য। এখন ভালোই কারণ তিনি পেয়ে গেছেন। মেয়েটা নেহাতই সহজ সরল। দেখতেও মনে হচ্ছে না কাউকে এইভাবে ঠকাতে পারে!
তিনি বললেন, জি মা। আমি বিয়ের ডেকোরেশন এর লোক। আপা বলল তোমাকে এটা দিয়ে দিতে৷ তাই দিলাম।
-হু, দিন না?
-এই রে! আমি তা গাড়িতেই রেখে এসেছি। আমার সাথে এসো৷ তোমাকে দিয়ে দিই। আমি গাড়িতে উঠে চলে যাব।
-গাড়ি কই?
-ওদিকটায় রেখেছি। আসলে সঠিক ঠিকানা বুঝছিলাম না। আমরা ছেলে মানুষরা কি আর পার্লারের খোঁজ খবর রাখি? তাই নেমে খুঁজছিলাম।
-সমস্যা নেই। চলুন।
.
এই বলে পার্লারের এক পাশে নির্জনে বুশরাকে নিয়ে আসে খালেকুজ্জামান। বুশরা কার দেখে অবাক হয়। ডেকোরেশন এর লোক কার করে এসেছে?
সে কিছু বলতে যাবে তখনি খালেকুজ্জামান তার মুখে রুমাল চেপে ধরে। মুহুর্তেই চারপাশ ঝাপসা দেখতে শুরু করলো বুশরা। শরীরের সমস্ত শক্তি যেন হারিয়ে গেছে। কিছু বলতেও পারছে না সে। কেবল অনুভব করছে স্যুট পরা একজন লোক এসে কোলে তুলে নেয় তাকে৷ এরপর গাড়ির পেছনের সিটে তাকে শুইয়ে গাড়ি চলাতে শুরু করে। আস্তে আস্তে সবকিছু অন্ধকার দেখছে বুশরা। চোখ দু’টো বন্ধ হয়ে যায় তার। এরপর আর কিছু উপলব্ধি করতে পারে না সে। অতঃপর সে জ্ঞান হারায়।
এদিকে নিহিরের পাশে বসা খালেকুজ্জামান বললেন, রুমালটায় বেহুশ হওয়ার মেডিসিন ছিল? কোনো ক্ষতি হবে না তো?
-নাহ হবে না। নিখিলকে ফোন করে শেরওয়ানি পরে অফিসে আসতে বলো। ওদের বিয়েটা ওখানেই হবে।
.#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_৭
#Saji_Afroz

জ্ঞান ফিরে আসতেই নিজেকে একটি অফিস রুমে আবিষ্কার করলো বুশরা। সোফার উপরে শুয়ে আছে সে৷ আস্তেধীরে উঠে বসে চারপাশটা দেখে বুকটা ধক করে উঠলো তার। অফিস রুমটা এমনভাবে সাজিয়ে রেখেছে যেন কোনো বিয়ের আসর!
সে দাঁড়িয়ে পড়ে। অস্থির হয়ে এদিক ওদিক হাঁটতে থাকে। দরজা বন্ধ থাকায় সে বেরুতে পারছে না। এ কোথায় চলে এল সে! কেনোই বা ওই মধ্যবয়স্ক লোকটি তার সাথে এমন করলো? সবকিছুই তার কাছে ঝাপসা এবং অস্পষ্ট। সে চিৎকার করতে যাবে তখনি একটি টেলিফোন দেখতে পায়। ছুটে যায় সেদিকে। কিন্তু আফসোস! টেলিফোনটিরও লাইন কাটা। তাই সে বাধ্য হয়ে চিৎকার দিয়ে বলল, কেউ কি আছেন? আমায় কেনো নিয়ে এসেছেন?
.
নিখিল সবেমাত্র এসেছে। তায়শাকে বউ সাজে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে সে। যেতেও চেয়েছিল তায়শার কাছে। কিন্তু নিহির বলল, কাজি বিয়ে পড়ানোর পর ওর সামনে যাবি তুই। কেননা ও তোকে দেখলে চেঁচামেচি করবে, ঝগড়া করবে। এতে সময় নষ্ট হবে। এখন আমি ভয় দেখিয়ে কবুল বলিয়ে নেব। দু’জন দুই রুম থেকে কবুল বলা শেষ করে এরপরেই মুখোমুখি হবি।
.
নিহিরের কথাতে রাজি হয় নিখিল।
নিহির কাজি সাহেব ও খালেকুজ্জামান কে নিয়ে আসে বুশরার কাছে। দরজা খুলতেই নিহির কে দেখে চমকে যায় বুশরা। সে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, আপনি?
-হুম। কী ভেবেছিলে? আমার ভাইকে ঠকিয়ে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবে?
.
এতক্ষণে সবটা পরিষ্কার হয়ে যায় বুশরার কাছে। তার মানে তায়শা কে শাস্তি দেওয়ার জন্য তায়শা ভেবে তাকে তুলে আনা হয়েছে?
সে রেগেমেগে বলল, কেমন মানুষ আপনারা? একটা মেয়েকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তার বিয়ের দিন তাকে তুলে আনেন?
-শাস্তির কি দেখেছ এখনো? চুপচাপ বসে নিখিলকে বিয়েটা করে নাও। নাহয় তোমার পুরো ফ্যামিলির সুখ শান্তি কীভাবে উধাও করতে হয় আমার জানা আছে।
.
এইবার আরও বেশি চমকে যায় বুশরা। এসব কী হচ্ছে তার সাথে! এমন কিছুর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সে জোর গলায় বলল, বিয়ে মানে? কিসের বিয়ে?
-নিখিল কে বিয়ে।
-নিখিল কে আমি কেনো বিয়ে করব?
-তোমাকেই করতে হবে তায়শা।
-কিন্তু আমি তায়শা নই! আমি বুশরা।
.
একথা শুনে নিহির ও খালেকুজ্জামান একে অপরের দিকে তাকায়। এরপর নিহির উচ্চশব্দে হেসে উঠে বলল, বিয়ে থেকে বাঁচতে এইবার নিজের পরিচয়ও গোপন করছ? এত নাটক করতে পারো তুমি।
.
এইবার কেঁদে ফেলে বুশরা। সে কাঁদতে কাঁদতেই বলল, সত্যি আমি তায়শা নই। ওর বড়ো বোন বুশরা।
-আচ্ছা! বড়ো বোনের আগে ছোটো বোনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে?
-হচ্ছে। কারণ ও সবকিছুতে আমার চেয়ে এগিয়ে।
.
নিহির ধমকের সুরে বলল, চুপ করে বিয়েটা করে নাও। নাহলে কী হবে দেখবে?
-কী?
.
নিহির তার দিকে একটা ভিডিও এগিয়ে দেয়। ওখানে দেখা যায় আলিয়া খাতুনকে। যিনি অনেক খুশি তার মেয়ের বিয়ে নিয়ে। সবাই কত খুশি! তায়শা এখনো আসেনি হয়তো। সে তো আরও বেশি খুশি আশিককে পেতে চলেছে বলে। আজ বুশরার জায়গায় তায়শা এলে তার সবখুশি মাটিতে মিশে যেত।
নিহির বলল, আমার লোক আছে ওখানে। তুমি যদি রাজি না হও তবে ওটা আর বিয়ের আসর নয়, বোমার আসর হয়ে যাবে।
.
বুশরা কাঁপা কণ্ঠে বলল, বোমা?
-হু। তুমি কী নিজের সুন্দর বাড়িটাকে লাশঘর হিসেবে দেখতে চাও?
.
থমকে যায় বুশরা। সে নিশ্চুপ হয়ে মেঝেতে ধপাস করে বসে পড়ে। একদিকে তার পরিবার ও তায়শার খুশি, অন্যদিকে তার খুশি! নওয়াজকে সে ভীষণ ভালোবাসে। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেবে কখনো ভাবেনি সে। এই লোকটি মানতেও রাজি না সে তায়শা নয়। এখন কি করতে পারে সে!
-কী হলো?
.
নওয়াজের কথা ভেবে বুশরা ক্ষীণস্বরে বলল, একবার কী নিখিল কে ডাকা যায় না? ও নাহয় বিয়েটা করতে চায় কী না দেখুন?
.
একথা টি নিহিরের মনে কোনো প্রভাব না ফেললেও খালেকুজ্জামানের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। কেনো যেন তার মেয়েটিকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে। তিনি ধীরপায়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিখিলের কাছে আসে। তাকে সবটা জানায়। নিখিল ছুটে যায় সেখানে। এসে দেখলো কাজি বিয়ে পড়াতে শুরু করেছে। আর একটি মেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বারবার বলে যাচ্ছে, আমি তায়শা নই। আমি বুশরা!
.
সাথে সাথেই নিখিল চেঁচিয়ে বলল, থামো!
.
নিহির তাকে দেখে বলল, তোকে না বলেছি নিখিল এইখানে আসবি না।
.
নিখিলের নাম শুনে বুশরা দাঁড়িয়ে পড়ে। ছুটে গিয়ে তাকে আচমকা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, প্লিজ উনাকে বলুন আমি তায়শা নই!
.
এবার নিহিরও অবাক হয়ে যায়। সে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নিখিলের দিকে। নিখিল বুশরাকে শান্তনা দিলে সে নিখিলকে ছেড়ে সামলে নেয় নিজেকে। নিখিল বলল, উনি তায়শা নয়। তাছাড়া আমি উনাকে চিনি না। কিন্তু বুশরা নামে তায়শার কোনো বোন আছে সেটা শুনেছিলাম। তুমি ভাইয়া তাকেই নিয়ে এলে? তায়শা কে আনতে না পারলে আমায় জানাতে। তাই বলে তার বোন কে বিয়ে করব আমি?
.
নিহির তার ভাই এর কাছে এসে বলল, আমি ভেবেছি এই মেয়েটিই তায়শা।
-না ও তায়শা নয়।
-সেদিন যে শপিংমল এ ওকে দেখিয়েছিলি।
-আমি তোমাকে জামার রঙ বলেছিলাম।
.
নিহির বুশরার দিকে তাকাতেই সে বলল, একই রঙের ড্রেস পরেছিলাম আমরা সেদিন।
.
এইবার নিহির নিজের মাথায় হাত দেয়। সেদিন বুশরাকে তায়শা ভেবে সে কতকিছুই না বলল। কই! বুশরা তো সেদিন কোনো প্রতিবাদ করেনি? সে রাগে বুশরাকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি নিখিল তাকে থামিয়ে বলল, প্লিজ ভাইয়া। আর কোনো তামাশা আমি চাইনা তোমার। এইবার যা করব আমিই করব।
-মানে?
.
সে কিছু না বলে বুশরার হাত ধরে চলে যেতে থাকে। নিহির তাকিয়ে থাকে তাদের পথের দিকে। খালেকুজ্জামান বললেন, কী করতে যাচ্ছে নিখিল?
-নিশ্চয় তায়শার বিয়েটা ভাঙতে!
.
.
তায়শা পার্লার থেকে বাড়ি এসেছে অনেকক্ষণই হলো। একে একে অনেকেই তায়শার সাথে ছবি তুলতে এলেও বুশরা আসেনি। নাফিশাকে পাঠালে সেও বুশরা কে খুঁজে পায় না। আলিয়া খাতুন এসে তায়শা কে বললেন, কী ব্যাপার রে? তখন বললি বুশরার সাজ শেষ। সে তো এলো না এখনো। তোরা এসেছিস অনেকক্ষণই তো হলো।
-বুশরা আসেনি মানে?
-আসেনি তো!
.
তায়শা দাঁড়িয়ে পড়ে৷ সে নাফিশাকে চেঁচিয়ে বলল, হা করে কী দেখছিস? সারা বাড়ি খুঁজ। সবাইকে জিজ্ঞাসা কর আপিকে দেখেছে কী না।
.
বুশরা বাড়ি ফেরেনি মুহুর্তের মাঝেই খবরটা বিয়ে বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ বলতে থাকে, নিশ্চয় পালিয়ে গেছে৷ মা বাবার ছায়া মাথার উপরে না থাকলে এমনি হয়।
.
কেউ আবার তার পক্ষ নিয়ে বলছে, যে পরিমাণে আলিয়া তাকে জ্বালাতন করে না পালিয়ে করবে টা কী!
.
বুশরার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার মানে সে পার্লার থেকে বাসায়ই ফেরেনি৷
আলিয়া খাতুন বললেন, আমাদের ছোটো করে সে কার সাথে চলে গেছে কী জানি! হায় হায় হায়! আমি আরও ভালো ঘরে তার বিয়ে দেব ভাবছিলাম।
.
মা কে থামিয়ে ওখানে তায়শাকে কারও খুঁজতে আসা ও কেনো বুশরা নিচে নেমেছিল সবটা খুলে বলে তায়শা। তিনি সবটা শুনেও বললেন, ওসব ওর চালাকিও হতে পারে।
.
তায়শা ও নাফিশা বোনের জন্য কাঁদতে শুরু করলো। এদিকে বরপক্ষও চলে আসে। তারা আসার পথেই খবর পেয়ে যায়, তায়শার বোন পালিয়েছে কারও সাথে!
বরের মা এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে আলিয়া খাতুন বললেন, ও কী আমার নিজের মেয়ে? ভাই এর মেয়ে। সে পালালেও আপনাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। আমার মেয়েরা কেমন ওটাই দেখেন। এমন ভালো মেয়ে এলাকায় নেই।
-তাহলে কী বিয়েটা সেরে নেব?
-অবশ্যই। পরের মেয়ের জন্য বিয়ে আটকে থাকবে কেনো?
.
তায়শা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, আপি যায়নি। আপির নিশ্চয় কোনো ক্ষতি হয়েছে। তাকে নিয়ে এসো। নাহয় আমি বিয়ে করব না।
.
আশিক তাকে শান্তনা দিয়ে বলল, বিয়েটা করে নিই। এরপর সবাই মিলে খুঁজব তাকে।
.
আশিকের পরিবারের জোরাজোরি তে বিয়ে সেরে নিতে রাজি হয় তায়শা।
এদিকে গাড়ি চালিয়ে তাদের বাড়ির দিকেই আসছে নিখিল। তার পাশের সিটে রয়েছে বুশরা। বুশরা নিখিলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, আপনি সঠিক সময়ে না এলে আজ কী যে হত! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
.
নিখিল কোনো জবাব দেয় না। সে দ্রুত গাড়ি চালায়। তায়শার সাথে বিয়ে না হোক তার। আর কারও সাথে তায়শার বিয়েও সে হতে দেবে না…
.
চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here