পর্বঃ৪৭
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)
…
কি হচ্ছে সবই রাইদার অজানা তবে এই টুকু বুঝতে পারছে সে এখন সায়নের বাসায় আছে তাই কোনো রকম সিনক্রিয়েট সে করতে চাচ্ছে না। চুপচাপ সব দেখছে কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না।
সুপের বাটি থেকে চামচ দিয়ে সুপ তুলে রাইদার মুখের সামনে ধরে সায়ন।
‘আমার ফোনটা দেন।’,রাইদা সায়নের দিকে না তাকিয়ে বলে।
‘আগে খাওয়া শেষ করো দিচ্ছি।’,সায়ন জবাব দেয়।
দুর্বল শরীরে সায়নের সাথে মোটেও তর্ক করতে ইচ্ছে হয় না রাইদার। চুপচাপ খেতে থাকে আর আকাশকুসুম ভাবতে থাকে। যা ঘটছে তা সত্যি না মিথ্যা সেটা যাচাই করতে হলে ফোনটা প্রয়োজন।
‘গতরাতে কিছু খেয়েছিলে?’,সায়ন প্রশ্ন করে।
‘না।’,রাইদা উত্তর দেয়।
‘আজকে সারাদিনেও নিশ্চয়ই খাওনি?’,সায়ন আবারো প্রশ্ন করে।
রাইদা কথার কোনো উত্তর দেয় না সায়ন যা বুঝার বুঝে নেয়। রাইদাকে সুপ খাওয়ানো শেষ করে ঔষধ এনে খেতে দেয়। ঔষধ খেয়ে রাইদা সায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘জামা পাল্টে অন্য কিছু পরে নাও জিন্স পরে ঘুমাতে কষ্ট হবে।’,সায়ন রাইদার এলেমেলো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে বলে।
রাইদা বিরক্ত হয়ে সায়নের দিকে হাত পাতে।
‘কি? চুমু লাগবে এটা আগে বলবা না?’,কথাটা বলে রাইদার বাড়ানো হাতের তালুতে সায়ন চুমু দেয়।
সাথে সাথে রাইদা হাত সরিয়ে সায়নের দিকে বিরক্তিকর চাহনি দেয়।
‘আমার ফোন দেন বাবাকে কল দিবো।’,রাইদা বলে।
‘শ্বশুড়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। এখন তুমি ঘুমাও কালকে সকালে কথা বলবা আপাততঃ তোমার বিশ্রাম দরকার।’
হতাশ হয়ে রাইদা বাথরুমে গিয়ে পরিহিত জামা পাল্টে বের হয়।
‘আজকে রাতে ভালো করে ঘুমাও কালকে দেখবা একদম সুস্থ হয়ে গেছো।’
কথাটা বলে রাইদাকে টেনে জোর করে শুইয়ে দেয় সায়ন।
রাইদা বুঝতে পারে এখন সে তার ফোন ফেরত পাবে না আর অসুস্থ শরীরে সায়নের সাথে তর্ক করে পেরে উঠবে না। হার মানা সৈনিকের মতো মুখ কালো করো রাইদা চোখ বন্ধ করে থাকে।
‘আমি খেয়ে আসছি বেশিক্ষণ লাগবে না।’,কথাটা বলে আলো নিভিয়ে সায়ন রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে থাকতে রাইদার চোখ জোড়া লেগে যায়। একসময় সে তন্দ্রায় তলিয়ে যায়।
খাবারের টেবিলে এসে সায়ন বসে। মিসেস রিনা, আরমান শেখ আর নিপা খেতে বসেছে।
‘সায়ন্তিকা কোথায়? আজকে একবারো দেখলাম না ওকে।’,সায়ন তার মাকে জিজ্ঞেস করে।
‘বান্ধবীর বাসায় গেছে আজকে রাতটা থাকবে সেখানে।’,মিসেস রিনা জবাব দেয়।
‘বউমা ঘুমিয়েছে?’,আরমান শেখ সায়নকে জিজ্ঞেস করে।
‘ঔষধ খাইয়ে এসেছি এতক্ষণে ঘুমানোর কথা।’,সায়ন জবাব দেয়।
‘তোর শ্বাশুড়ি জানে তার মেয়ে যে এখন শ্বশুড় বাড়ি?,সায়নের মা তাকে জিজ্ঞেস করে।
‘না সে জানে না তবে শ্বশুড়কে জানিয়েছি।’,সায়ন উত্তর দেয়।
‘শোন আমি বলি কি তুই বউমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কয়েকটা দিন এখানে রাখার ব্যবস্থা কর। মেয়েটাকে অসুস্থ দেখে আমার নিজেরই খারাপ লাগছে।’,সায়নের মা মন খারাপ করে বলে।
‘ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়।’
খাওয়া শেষে সোজা রুমে চলে যায় সায়ন। দরজা লাগিয়ে এসে রাইদার পাশে বসে। মাথা নুইয়ে রাইদার ঘুমন্ত মুখটা পরখ করে রাইদার কপালে গভীর চুম্বন দেয়।
বালিশ টেনে শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে থাকে কিন্তু ঘুম আসে না। শ্বাস ফেলে আবারো রাইদার কাছে যায়। রাইদা ডান হাত টেনে চুমু দিয়ে শোয়।
‘আমি তো তোমার প্রেমে পাগলে হয়ে গেছি রাইদা রাফায়েত। পাশে শুয়ে আছো তাও এই টুকু দূরত্ব আমার সহ্য হচ্ছে না। জলদি সুস্থ হও না হলে তোমায় জড়িয়ে না ঘুমাতে পারাটা আমায় কষ্ট দিচ্ছে।’,রাইদার গালে হাত রেখে জড়ানো স্বরে কথাগুলো বলতে থাকে সায়ন।
বিকালের মতো রাইদার হাত টেনে বুকে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করে।
….
সকালে ঘুম ভাঙার পর চোখ ডলতে ডলতে শোয়া থেকে উঠে বসে রাইদা। হাই তুলে পুরো কক্ষে চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে পায় না। চুলগুলো টেনে খোঁপা করে নেয়।
চোখ বন্ধ করে গতরাতের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করে কিন্তু তেমন কিছু মনে করতে পারে না শুধু মনে আছে সায়ন আর তার মাকে দেখেছে সে। বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে চলে যায় গোসল করতে।
গোসল সেরে মাথা মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বের হয় রাইদা। রুমের মধ্যে থাকা সিঙ্গেল সোফায় বসে সায়ন ফোনে কথা বলছিলো। রাইদাকে দেখে কল কেটে বসা থেকে উঠে রাইদার কাছে আসে।
‘শরীর এখন কেমন লাগছে? তোয়ালেটা দাও আমি মাথা মুছে দিচ্ছি।’,সায়ন রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
রাইদা কথা না বাড়িয়ে নিজেই মাথাটা মুছতে থাকতে। সায়ন হাত বাড়িয়ে তোয়ালে নিয়ে মাথা মুছে দিতে থাকে।
‘কি হলো জবাব দিচ্ছো না কেনো? শরীর এখন ভালো লাগছে? ডাক্তারের কাছে গিয়ে আরেকবার চেকআপ করাতে হবে।’
‘আগের থেকে সুস্থ আমি। বাসায় ফিরবো এখন আর ফোনটা দেন আমার।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। তোয়ালে টা রেখে পকেট থেকে রাইদার ফোনটা বের করে দেয়। ফোন হাতে নিয়ে রাইদা নিজের ব্যাগ খুঁজতে এদিক ওদিক তাকায়। ওয়ারড্রবের উপরেই নিজের ব্যাগটা পেয়ে যায়। ব্যাগটা নামিয়ে চিরুনী বের করে চুল আঁচড়াতে থাকে। চুল আঁচড়ে চশমা পড়ে রুম থেকে বের হয়। সায়ন কিছু না বলে শুধু রাইদা কি করে সেটা দেখছে। রাইদা রুম থেকে বেরিয়ে বাসার সদর দরজা খুঁজতে থাকে। নিপা রাইদাকে দেখে দৌড়ে আসে।
‘ভাবী কিছু খুঁজতেছেন?’,নিপা রাইদাকে বলে।
‘হ্যা আসলে বের হবো।’,রাইদা আমতাআমতা করে জবাব দেয়।
‘আপনি কি চলে যাবেন নাকি এখন? খালাম্মা যদি এইটা শুনে তাহলে সেই রাগ করবে।’
‘কিরে নিপা কি হয়েছে? কে আবার কি নিয়ে রাগ করবে?’
মিসেস রিনার কন্ঠ পেয়ে নিপা দাঁত দিয়ে জিভে কামড় দেয়। মিসেস রিনা এগিয়ে এসে রাইদার সামনে দাঁড়ায়। সায়নের আনা সাদা রঙের একটা থ্রি-পিস পরে আছে রাইদা। ভেজা চুল গুলো ছাড়া।
‘কখন উঠছো ঘুম থেকে? আর ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?’,রাইদাকে জিজ্ঞেস করে মিসেস রিনা।
‘এই তো কিছুক্ষণ আগে। আসলে ক্লাস আছে তো তাই ভার্সিটি যাচ্ছিলাম।’,রাইদা নিচু স্বরে বলে।
‘কিন্তু আজকে তো শুক্রবার। আর তুমি তো রেগুলার ব্যাচের স্টুডেন্ট। রেগুলার ব্যাচের তো শুক্রবার ক্লাস হয় না।’,রুম থেকে বেরিয়ে সায়ন বলে।
সায়নের কথা শুনে রাইদা বোকা বনে যায়। সে তো এখান থেকে বের হতে মিথ্যা বলেছে।
‘তুমি এখনো অসুস্থ আর শরীরও যথেষ্ট দুর্বল। যতদিন না সুস্থ হও এখানেই থাকবা। নিপা বউমার ব্যাগটা নিয়ে যা। আসো তোমাকে কিছু খেতে দেই।’,মিসেস রিনা রাইদার হাত টেনে খাবারের টেবিলের কাছে নিয়ে যায়।
‘আরে না আমি তো এখন সুস্থ একদম।’,রাইদা বলে উঠে।
‘তোমার গলা দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না আবার বলছো সুস্থ! কোনো বাহানা চলবে না আমি যা বলেছি তাই। তুমি আমার কথার অবাধ্য হবে না সেটা আমি জানি।’
মিসেস রিনার এমন কথা শুনে রাইদা করুন চোখে তাকায়। সে যে কথার জালে ফেঁসে গেছে এটা আর তার বুঝতে বাকি নেই। রাইদাকে চেয়ারে বসিয়ে নাশতা দিতে শুরু করে মিসেস রিনা। সায়ন এসে চেয়ার টেনে রাইদার পাশে বসে।
‘নাও খাও আর দুপুরের জন্য তোমার পছন্দের সব কিছু রান্না হচ্ছে।’,রাইদার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সায়নের মা বলে।
রাইদা সৌজন্য মূলক হেঁসে খেতে শুরু করে। সায়ন গালে হাত দিয়ে বউ-শ্বশাশুড়িকে দেখছে।
‘তুমি খাও আমি রান্নাঘরে গিয়ে দেখি কি অবস্থা। কিছু লাগলে আমাকে বলবা।’
মিসেস রিনার কথায় রাইদা মাথা নাড়ায়।
‘আমার শ্বাশুড়ি এমন জামাই আদর করলে জীবনেও শ্বশুড় বাড়ি ছেড়ে এক পা ও নড়তাম না। রি তোমার ভাগ্যকে হিংসে হচ্ছে আমার।’
সায়নের কথা শুনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় রাইদা।
‘আপনি আমাকে এখানে না এনে আমার বাসায়ও নিতে পারতেন। এভাবে আমাকে এনে কি প্রমাণ করতে চাইছেন? আর গতকালকে কি হলো কিছুই মনে করতে পারছি না। আপনি আমায় অজ্ঞান করে নিয়ে এসেছেন নাকি?’
রাইদার কথা শুনে সায়ন হেঁসে দেয়।
‘গতকালকে তুমি রাস্তার মধ্যে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছিলে। তোমার বাসায় নিলে তোমাকে আমি কাছে পেতাম না তাছাড়া তোমার শ্বশুড় বললো এ বাসায় তোমাকে নিয়ে আসতে। এখানে এসেছো বলেই শ্বশুড়ির আদর যত্ন পাচ্ছো। গতকালকে আমার থেকে তোমার জন্য বেশি অস্থির ছিলো তেমার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি। আমার সাথে না হয় তোমার ঝামেলা কিন্তু তাদের সাথে সেই ঝামেলার সূত্র তো টানা উচিত না।’
সায়নের কথা শুনে রাইদার রাগ নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।
‘আমি আশা করি তুমি মাকে নিরাশ করবে না। কয়েকটা দিন এখানে কাটিয়ে যাও।’,সায়ন আবারে বলে।
সায়নের কথা শুনে রাইদা তাকায়। সায়ন চেয়ার থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়।
রাইদা কি করবে সেটা ভাবতে ভাবতে খাওয়া শেষ করে।
..
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে রাইদা মিসেস রিনার রান্না দেখছিলো। নিপা আর আরেকটা মেয়ে তাকে রান্নায় সাহায্য করছে। রাইদা সাহায্য করতে চাইলে মিসেস রিনা ধমক দেয় তাই সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
বাসায় কলিংবেল বেজে উঠে।
‘নিপা যা দরজা খুলে দিয়ে আয়।’,মিসেস রিনা নিপাকে বলে।
‘আমি তো মশলা বাটি এখন উঠলে হাত ধোঁয়া লাগবে আবার।’,নিপা জবাব দেয়।
‘আমি খুলে দিচ্ছি সমস্যা নেই।’,কথাটা বলে রাইদা রান্নাঘর থেকে বের হয়।
ঐদিকে দরজায় দাঁড়ানো ব্যক্তিটি অধৈর্য্য হয়ে আবারো কলিংবেল দিতে থাকে একনাগাড়ে। দ্রুত হেঁটে এসে রাইদা দরজা খুলে।
‘নিপা আপু তোমাকে না বলছি..’,সায়ন্তিকা আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু রাইদাকে দরজার সামনে দেখে তার কথা বন্ধ হয়ে যায়।
সায়ন্তিকার সাথে তার বান্ধবী ছিলো, দু’জনেই রাইদাকে দেখে অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়।
‘সায়ু তোর বাসায় এই আপু কি বিচার নিয়ে আসছে নাকি? সত্যি করে বল তুই আবার কিছু করছিস নাকি?’,সায়ন্তিকার কানে কানে মেয়েটা বলে।
‘আমি আবার কি করলাম? আমি তো কয়েকদিন ধরে পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত।’,সায়ন্তিকা তার বান্ধবীকে ফিসফিস করে বলে।
‘তোমরা কি বাহিরে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করবা নাকি ঘরেও আসবা?’,গলা ঝেরে রাইদা বলে।
‘না মানে আপু আপনি এখানে?’,সায়ন্তিকা আমতাআমতা করে বলে।
‘এটা যেমন তোর বাসা এটা তো তোর ভাবীরও বাসা তাই স্বাভাবিক ভাবে তোর ভাবী তো এখানেই থাকার কথা।’,রাইদার পিছন থেকে সায়ন বলে।
রাইদা দরজা থেকে সরে ভিতরে চলে যায়। সায়ন্তিকার বাসায় ঢুকে সায়নের সায়নের গিয়ে দাঁড়ায়।
‘মানে? কি বলছো সবই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।’
‘এটা তোর একমাত্র ভাবী যাকে এতদিন দেখতে চেয়েছিলি।’
সায়নের কথা শুনে অবিশ্বাস চোখে রাইদার দিকে তাকায় সায়ন্তিকা।
‘এই আপু আমার সেই ভাবী? কি বলছো এসব যা তা?’
‘কি আর বলবো সত্যি বলছি। বিশ্বাস না হলে মা কে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। রি আমি নামাজে যাচ্ছি। তোমার কিছু লাগলে আমাকে মেসেজ দিও।’,কথাটা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় সায়ন।
রাইদার দিকে একবার তাকিয়ে সায়ন্তিকা তার বান্ধবীকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রাইদা ফোন হাতে চলে যায় সায়নের রুমে। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে তার বাবার নাম্বারে ডায়াল করে।
দু’বার ফোনে রিং বাজতেই মান্নান রাফায়েত কল রিসিভ করে।
‘হ্যালো মা কেমন আছো? শুনলাম তুমি নাকি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেছো?’,মান্নান রাফায়েত জিজ্ঞেস করে।
‘আগের থেকে সুস্থ আমি। হ্যা গতকালকে একটু অসুস্থ হয়ে গেছিলাম।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘জামাই গত কালকে কল দিয়ে বললো ওর বাসায় আছো। আমি অবশ্য এ কথা তোমার মা কে জানাইনি বলেছি বন্ধুর বাসায় আছো। তা ফিরবা কবে?’
‘জানি না বাবা কবে ফিরবো। সায়নের মা তো আমাকে বলেছে সুস্থ না হলে যেতেই দিবে না।’
‘ঠিক আছে কয়েকটা দিন থাকো আর হ্যা শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির সাথে ভালো ব্যবহার করবা, সম্মান দিয়ে কথা বলবা কারণ তারা গুরুজন।’
‘আচ্ছা বাবা।’
‘আমি মসজিদে যাচ্ছি জুম্মার নামাজে। তোমাকে বিকালে কল দিবো এখন রাখছি।’
‘ঠিক আছে বাবা।’
‘নিজের খেয়াল রাখবা আর সমস্যা হলে আমাকে কল দিবা।’
কল কেটে রাইদা বারান্দায় যায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আশেপাশেই রাস্তায় নজর বুলায়। এলাকাটা যে আবাসিক এলাকা সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
দরজায় নক করার শব্দ হলে রাইদা এসে দরজা খুলে। সায়ন্তিকা রুমে প্রবেশ করে।
‘তুমি আমায় বলোনি কেনো যে তুমিই আমার ভাবী?’,সায়ন্তিকা রাইদাকে প্রশ্ন করে।
‘বললে কি হতো?’,রাইদা পাল্টা প্রশ্ন করে।
‘উফ তুমি উল্টা প্রশ্ন কেনো করো? এটা ভার্সিটি এটা আমার বাসা যদিও এটা এখন তোমারো বাসা তাও আমি তোমাকে এখন ভয় পাচ্ছি না।’
সায়ন্তিকা কথা শুনে রাইদা আলতো হাসে।
‘ভয় পাচ্ছো না সেইজন্যই তোমার কথা উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে ভয় পেলে তো এতক্ষণ সামনেই দাঁড়াতে পারতে না।’
রাইদার কথায় সায়ন্তিকা লজ্জা পায়।
‘তোমার সাথে আমার মিল হওয়া অসম্ভব।’,কতাটা বলে সায়ন্তিকা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
সায়ন্তিকার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রাইদা আবারো হেঁসে দেয়। মেয়েটা যে লজ্জা পাচ্ছে আবার তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে এটা রাইদার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না।
রাইদা রুম থেকে বেরিয়ে আবার রান্নাঘরে যায়।
..
দুপুর ২টা বাজে তখনই বাসার কলিং বেল আবারো বেজে উঠে। নিপা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সায়ন আর তার বাবা কথা বলতে বলতে প্রবেশ করে। আরামান শেখ সকালে বেরিয়েছিলো এখন কাজ সেরে একেবারে ফিরেছে বাসায়।
রাইদা রান্নাঘরে মিসেস রিনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
‘তোমার শ্বশুড়ের সাথে তো এখনো তোমার দেখা হয়নি। এক কাজ করো এই পানি নিয়ে তাকে দাও আর শুনো সালাম দিবা অবশ্যই।’রাইদাকে কথাগুলো বলে মিসেস রিনা।
রাইদা মাথা নাড়িয়ে যেতে নিলে মিসেস রিনা আবারো তাকে আঁটকায়।
‘আরে দাঁড়াও। নতুন বউ মাথায় ঘোমটা না দিলে সুন্দর লাগে না। এই তো এখন পুরো পরী লাগছে মা শা আল্লাহ। ‘,রাইদার মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে বলে মিসেস রিনা।
রাইদা লজ্জা পেয়ে বসার ঘরে পা বাড়ায়।
সোফায় বসে সায়ন ফোন টিপছিলো আর আরমান শেখ বসে ছিলো। রাইদা এসে আরমান শেখের সামনে দাঁড়ায়।
‘আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। পানিটা খান ভালো লাগবে।’,আরমান শেখের দিকে পানির গ্লাসটা দিয়ে বলে রাইদা।
‘ওয়ালাইকুম সালাম মা। আরে তুমি আনতে গেলা কেনো নিপা বলতা। আসো আমার পাশে বসো।’,আরমান শেখ পানির গ্লাসটা নিয়ে বলে।
রাইদার কথা শুনে সায়ন মুখ তুলে তাকায়।
‘খালি দেখি শ্বশুড়কে পানি দিলা এখানে যে বর আছে সেটা ভুলে গেছো?’,সায়ন বলে উঠে।
‘তুই তো জীবনেও আমার সেবা করলি না বউমাই না হয় সেবা করলো।’আরমান শেখ সায়নকে ফোঁড়ন কেটে বলে।
‘টেবিলে খাবার দিছি সবাই আসেন।’,নিপা এসে বলে।
‘চলো আগে খেয়ে নেই তারপর আরামসে গল্প করবো।’
আরমান শেখের কথায় রাইদা তার সাথে যায়। সায়নও পিছন পিছন এসে রাইদার ওড়না টেনে ধরে। পিছনে ফিরে সায়নকে চোখ রাঙায় রাইদা। সায়ন হেঁসে ওড়না ছেড়ে দেয়।
খাবারের টেবিলে এসে আরমান শেখ বসে। তার পাশেই সে রাইদাকে বসিয়েছে। রাইদার পাশে এসে সায়ন বসে। সায়ন্তিকা আর তার বান্ধবী এসে বিপরীতে বসে। মিসেস রিনা আর নিপা সকলকে খাবার দিয়ে নিজেরাও খেতে বসে।
কিছুক্ষণের মধ্যে আরমান শেখের গল্পে পুরো খাবারের টেবিলে অন্যরকম একটা পরিবেশ তৈরি হয়। রাইদা কথা না বললেও আরমান শেখের গল্পগুলো বেশ এনজয় করতে শুরু করে।
…
(চলবে..)
(কোথাও বানান ভুল হলে অবশ্যই জানাবেন। বাসায় মেহমান এসেছিলো তাই ছোট করে পর্ব দিলাম। ইন শা আল্লাহ আগামীকালকে বড় করে পর্ব দিবো।)