পর্বঃ৪৯
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)
…
চারদিন হলো জ্ঞান ফেরার পর সায়নের বাসায় থাকতে শুরু করেছে রাইদা। প্রথমদিন বাসায় ফিরতে চাইলেও এই চারদিনে তার ইচ্ছে হয়নি বাসায় ফিরতে। সায়নের মায়ের মমতা, সায়নের বাবার খোশগল্প, সায়ন্তিকার দুষ্টুমি, নিপার সারাক্ষণ ভাবী ভাবী করে পিছন পিছন ঘোরা বিষয়গুলো আনন্দ দিচ্ছে রাইদাকে।
গতকালকে ভার্সিটিতে এসেছিলো ক্লাস করতে। ক্লাস সেরেই আবার নিজেই ফিরে গেছে। আজকে সকালেও সায়ন তাকে আর সায়ন্তিকাকে ভার্সিটিতে ড্রপ করে গেছে।
রাইদা আর সায়ন্তিকা ভার্সিটিতে একে অপরকে দেখলে এমন ভান করে যেনো কেউ কাউকে চিনে না। এটা অবশ্য সায়ন্তিকার দাবী ছিলো। বাসায় সে রাইদাকে ভাবী বলে ডাকবে কিন্তু ভার্সিটিতে তারা সিনিয়র জুনিয়র হিসেবেই থাকবে।
সকালে অনুশীলন শেষ করে গাছ তলায় বসে ছিলো রাইদা বাকিরা ক্লাসে গেছে। শরীর দুর্বল লাগায় সে আর যায়নি ক্লাস করতে। যদিও সায়নের মাকে বলেছে সে সুস্থ কিন্তু এখনো সে সম্পূর্ণ সুস্থ না।
‘শরীর খারাপ লাগছে নিশ্চয়ই? এটা নাও।’,সায়ন্তিকা রাইদাকে বলে।
রাইদা ভাবনায় ডুবে ছিলো সায়ন্তিকার গলা পেয়ে তাকায়। সায়ন্তিকা তার দিকে আইসক্রিম বাড়িয়ে দিয়েছে। হেঁসে সায়ন্তিকার হাত থেকে আইসক্রিমটা নেয়।
‘ক্লাসে যাইনি বলে ভাবছো আমার খারাপ লাগছে? তোমার ক্লাস নেই এখন?’,রাইদা সায়ন্তিকাকে বলে।
‘তোমার চোখ মুখ দেখেই মনে হচ্ছে তোমার খারাপ লাগছে। এখন যেই ক্লাস চলতেছে সেই ক্লাসের প্রফেসর অনেক বোরিং ওনার ক্লাস করতে গেলে আমার ঘুম আসে তাই ক্লাসে না গিয়ে ঘুরতেছি একা একা।’
‘তোমার ভাইয়াকে আবার বলবা না যে আমি ক্লাসে যাইনি আর আমার খারাপ লাগছিলো সেই বিষয়েটাও।’
‘ঠিক আছে বলবো না তার বদলে আমাকে খাওয়াতে নিবা।’
‘সেটা না হয় নিবো কিন্তু তুমি হঠাৎ এতো মিল দিচ্ছো কাহিনী কি?’,রাইদা ভ্রু উঁচিয়ে সায়ন্তিকাকে প্রশ্ন করে।
‘তোমার সাথে আমি কখনোই সম্পূর্ণ মিল দিবো না। ভাবীর সাথে যদি বদমাইশি না করি তাহলে তো ননদ হওয়ার মজাই নাই। আমাদের দা কুমড়ো সম্পর্ক থাকবে তবে ভাইয়াকে দুজনে মিলে অত্যাচার করবো।’
সায়ন্তিকার কথা শুনে রাইদা গাল টেনে দেয়।
‘উফ ভাবী কি করছো কেউ দেখলে তো বুঝে যাবে। শুনো পরের ক্লাসটা করেই কিন্তু আমরা বের হবো ফুচকা খেতে। ভাইয়াকে না করে দিবা গাড়ি নিয়ে আসতে। তুমি আর আমি ঘুরাঘুরি করে বাসায় ফিরবো।’
‘আচ্ছা যাও ক্লাস করে আসো।’
রাইদার পাশ থেকে উঠে সায়ন্তিকা চলে যায়।
রাইদা আইসক্রিম খেতে থাকে মনোযোগ দিয়ে।
‘কিরে জুনিয়রদের সাথে খাতির শুরু করলি কবে থেকে?’,বাপ্পি রাইদাকে বলে।
‘কিসের খাতির? মেয়েটা এসে জিজ্ঞেস করছিলো কেমন আছি এই আর কি। অর্ক কই তুই কেন আসছিস?’,রাইদা বাপ্পিকে ঝারি দিয়ে বলে।
‘অর্ক পাঠালো তোর খোঁজ নিতে। যদি তোর শরীর খারাপ লাগে তাহলে বলছে আসবে দেখতে না হলে তোকে ক্লাসে যেতে বলছে।’
‘এক্ষুনি গিয়ে অর্ককে আসতে বল। ও না আসলে খবর আছে ওর।’
রাইদার কথা শুনে বাপ্পি চলে যায়। একটু পর অর্ক সহ বাকিরা আসে।
‘কিরে ডাকলাম একজনকে সবাই দেখি দল বেঁধে চলে আসছিস।’
রাইদার কথার জবাব না দিয়ে অর্ক গাছ তলায় বসে।
‘তুই ক্লাস করবি না বিষয়টা বুঝতে পেরে অর্ক আমাদের সবাইকে টেনে নিয়ে আসছে।’,বাপ্পি বলে।
‘উফ কি গরম। ক্যান্টিনে যাই চল।’,পায়েল বলে।
‘গাছ তলায় এসি লাগামু তোর জন্য? শোন জরিনা গরমের দিন গরম পরে ঠান্ডা তো পরবে না তাই না? তাহলে হুদাই ঢং করবি না।’
বাপ্পির কথা শুনে পায়েল বাপ্পিকে ব্যাগ দিয়ে বাড়ি দেয়।
‘রাই তো শ্বশুড়বাড়িতে ভালোই মজায় আছিস। এসব দেইখা বিয়া করতে মন চায়।’,বাপ্পি রাইদাকে বলে।
‘বাপি দা তোরে বিয়ে করবে কে? যেই মেয়ে তোরে বিয়ে করবে সে সুস্থ মানুষ না।’,পায়েল বাপ্পিকে ফোঁড়ন কেটে বলে।
‘তা একেবারে শ্বশুড়বাড়িতে উঠে গেলি আর আমরা তোর বিয়ের দাওয়াত এখনো খাওয়া তো দূর পেলামই না। তুই কি পণ করেছিস আমাদেরকে না খাইয়ে পুরো বিয়ের ঝামেলা সারবি?’,অর্ক রাইদাকে বলে।
‘আরে কখন বললাম একেবারে উঠেছি? আর দুইদিন থাকবো এরপর তো বাসায় ফিরবো। আর একেবারে ওদের বাসায় গেলে তো বিয়ে থেকে শুরু করে সব হবে।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘এখনো তুই কিন্তু সঠিক কথা বলছিস না। তুই কি সায়ন ভাইয়ের সাথে সংসার করবি না? উনি তো সব দিক থেকেই একদম পারফেক্ট আবার বললি ওনার পরিবারের সকলেই খুব ভালো। তাহলে সমস্যা কোথায়?’,পায়েল অধৈর্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘সমস্যা সায়নকে নিয়ে। ওনার প্রতি যে আমার একটা রাগ ক্ষোভ জমে আছে তা দূর করতে পারছি না। তবে লোকটার ধৈর্য্য আছে। এতো কিছুর পরও লোকটা একটুও বিরক্ত হচ্ছে না।’,রাইদা বলে।
‘একদিক দিয়ে বরের প্রশংসা করিস আরেকদিক দিয়ে আবার লোকটারে প্যারা দিস।’,পায়েল রাইদাকে বলে।
‘প্যারা দিলেও ভাইয়া কিন্তু তাও স্বীকার করে সে রাইকে ভালোবাসে। পৃথিবীতে এমনও মানুষ আছে যারা নিজের ভালোবাসাটা প্রকাশ করে না আবার গ্রহণ ও করে না।’,কথাটা বলে রুহি উঠে চলে যায়।
রুহির কথা শুনে সকলে চমকে তাকায়। অর্ক মাথা নিচু করে বসে থাকে।
‘রুহির আবার কি হলো?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।
‘বোধহয় অভিমান করেছে অবশ্য এটা করা স্বাভাবিক।’
পায়েলের কথা শুনে রাইদা অর্কের দিকে তাকায়। একটু পর অর্কও উঠে চলে যায়।
ফাহিম,বাপ্পি,রাইদা,পায়েল বসে থাকে।
‘এদের কি ভাই কিছু হবে না? এমনে কেমনে চলবে?’,রাইদা হতাশ গলায় বলে।
‘আগে নিজের সম্পর্ক ঠিক কর তারপর ওদেরটা ঠিক করার কথা ভাব।’
পায়েলের কথা শুনে রাইদা চুপ হয়ে যায়।
..
ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে রাস্তার ফুচকা খেতে এসেছে রাইদা আর সায়ন্তিকা। সায়নকে কল দিয়ে রাইদা জানিয়েছে তারা রিকশায় করে বাসায় ফিরবে।
‘মামা ঝাল দাও বেশি করে।’,সায়ন্তিকা ফুচকাওয়ালাকে বলে।
‘আমার বেশি ঝাল খেতে ইচ্ছে করছে না কম ঝাল দিবেন আমারটায়।’,রাইদা বলে।
‘না ভাবী আজকে প্রতিযোগিতা হয়ে যাক কে কতগুলা ফুচকা খেতে পারে।’
‘আজকে না অন্য দিন। খেয়ে বাসায় ফিরবে আমার খারাপ লাগছে অনেক।’
রাইদার কথায় আর জোরাজুরি করে না সায়ন্তিকা।
ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে দু’জনে খেতে শুরু করে এর মধ্যে রাইদার ফোন বেজে উঠে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে সায়ন কল দিয়েছে।
‘হ বলেন।’,খেতে খেতে রাইদা বলে।
‘কই তোমরা? বাসা ফিরনি কেনো এখনো?’,সায়ন জিজ্ঞেস করে।
‘আমরা ফুচকা খাচ্ছি। খাওয়া শেষ হলেই ফিরবো।’
‘রি এসব খেয়ে আবার অসুস্থ হতে চাইছো?’
‘আরে না আমি ঠিক আছি। কল রাখুন চলে আসবো।’
রাইদা কল কেটে খাওয়া শেষ করে।
দু’জনের খাওয়া শেষ হলে রিকশা ডেকে বাসায় রওনা দেয়। বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে কলিংবেল দিলে নিপা দরজা খুলে দেয়। রাইদা একটা প্যাকেট নিপার হাতে দেয়।প্যাকেটা খুলে নিপা দেখে ফুচকা।
‘ভাবী এটা আমার জন্য আনছেন?’,নিপা খুশি হয়ে রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
‘না তোর জামাইয়ের জন্য। ‘,সায়ন্তিকা জবাব দেয়।
‘এ্যা আমার আগে তোমার বিয়া হবে। আপনারা কেমনে আসলেন? সায়ন ভাই তো মাত্র বাসা থেকে বের হইলো আমি আরো ভাবলাম আপনাদের আনতে গেছে।’
নিপার কথা শুনে রাইদা আর সায়ন্তিকা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।
‘তুমি রান্নাঘরে যাও আমরা হাত-মুখ ধুয়ে আসতেছি।’,রাইদা নিপাকে বলে।
রাইদার কথায় নিপা চলে যায়।
‘ভাইয়া আমাদের কেনো আনতে যাবে তাকে তো বলাই হয়েছে আমরা চলে আসবো।’
‘তোমার ভাই ঘাড়ত্যাড়া তোমার মতো। দেখো ত্যাড়ামি করে বেরিয়েছে।’
‘কি বললা আমি ত্যাড়া?’
‘হ্যা অনেক ত্যাড়া সরো এখন আমি গোসল করবো।’
‘ঠিক আছে ভাবী এর শোধ আমি নিবো।’
সায়ন্তিকার কথার জবাব না দিয়ে রাইদা রুমে চলে যায়।
রুমে এসে গোসলে করতে ঢুকে যায় বাথরুমে। গোসল শেষ করে চুল গুলো আঁচড়ে নেয়। মাথায় ওড়না দিয়ে রুম থেকে বের হয় মিসেস রিনার রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। রুমের সামনে এসে রাইদার পা থেমে যায় মিসেস রিনার কথা শুনে।
‘তুই আমাকে তোর শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলিয়ে দে। বউমা তো এখানেই আছে তাহলে আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক ঠিক করতে সমস্যা কোথায়? আত্মীয় স্বজনরা খবর পেয়ে বউমাকে দেখতে আসতে চায় আমি কি করবো বল।’,মিসেস রিনা বলে।
‘মা আরেকটু সময় দাও আমি রি এর সাথে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো। তুমি এ বিষয়ে রি কে কিছু বলবা না।’,সায়ন তার মাকে বলে।
‘আমারো তো ইচ্ছে করে তোকে সুখে দেখতে। মা হয়ে আমি চাই তুই সবসময় সুখী হ। ছোট বেলা থেকে তোর সকল আবদার মেনেছি এখন তুই যেভাবে হোক মেয়েটাকে এখানে রেখে দে।’
এতোক্ষণ হাসিমুখে থাকলেও হুট করে রাইদার মন খারাপ হয়ে যায়। সেখানে আর না দাঁড়িয়ে সে রুমে চলে যায়।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে কি করবে। এভাবে তো সে থাকতে পারবে না তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে এটা রাইদা বুঝতে পেরেছে।
সায়ন রুমে এসে রাইদাকে ডাকতে থাকে।
‘রি কই তুমি? কখন আসলা? আমি তো তোমার ভার্সিটির অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসছি সায়ুর কল পেয়ে।’
সায়নের ডাক শুনে রাইদা বারান্দা থেকে রুমে আসে।
‘আমি কালকে বাসায় যাবো আমাকে আটঁকাবেন না প্লিজ।’,রাইদা ধীর গলায় বলে।
‘ঠিক আছে যাবা সমস্যা নেই।’,সায়ন জবাব দেয়।
‘আমি একেবারে চলে যাওয়ার কথা বলছি সায়ন। আপনার পরিবারের মানুষজন সকলে অনেক ভালো কিন্তু আমার মনে হয় আমি আপনাদের পরিবারের সাথে বেমানান। যতবার আমি চেষ্টা করছি আপনাকে মন থেকে মেনে নেওয়ার পারছি না। আমার ইচ্ছে করছে না আপনাকে কষ্ট দিতে।’
রাইদার কথা শুনে সায়ন এগিয়ে আসে।
‘তুমি একটু বেশি বেশি ভাবছো সব নিয়ে। হুট করে এমন পরিবারে এসে তোমার এমন লাগছে। কিছুদিন থাকো তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নাও আমি তো জোর করছি না একেবারে এখানে থাকার জন্য।’
রাইদার গালে হাত রেখে সায়ন কথাগুলো বলে।
‘পরিবার কি ট্রায়াল দেওয়ার জিনিস? ট্রায়াল দিবো পছন্দ হলে থাকবো না হয় থাকবো না এটা কি করা সম্ভব? আপনি এসব বলছেন নিজের কথা চিন্তা করে কিন্তু পরিবারের কথা ভাবছেন না। নিসন্দেহে আপনার পরিবারের সকলে অনেক ভালো আমার খেয়াল রাখে তবে দিনশেষে আমি আপনাকে না মানতে পারলে থাকতে পারবো না।’
‘ঠিক আছে তোমাকে আর আটঁকাবো না আমি। এবার সব কিছু তোমার উপরেই না হয় ছেড়ে দিলাম।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা সায়নের বুকে মাথা রাখে। সে যে দোটানায় পড়ে গেছে। কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না।
‘খেয়েছো?’,সায়ন রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
‘উহু ইচ্ছে করছে না।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘আমিও খাইনি। চলো একসাথে খেয়ে আসি।’
সায়নের কথায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাইদা যায় খেতে।
খাবারের টেবিলে গিয়ে দেখে সায়ন্তিকা,মিসেস রিনা,নিপা খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে। আরমান শেখে অফিসে থাকায় সে আজকে বাসায় নেই।
রাইদা আর সায়ন এলে নিপা খাবার বেড়ে দেয় দুজনকে। খাবারের সময় মিসেস রিনার সাথে টুকটাক কথা বলে রাইদা।
রাইদাকে চিন্তিত দেখে সায়ন নিজেও চিন্তায় পড়ে যায়।
..
সন্ধ্যা বেলা মিসেস রিনার সাথেই গল্প করে কাটিয়েছে রাইদা। রাতে খাবারের টেবিলে সকলে এক সাথে বসে খাওয়ার বিষয়টা রাইদার মনে গেঁথে যায়। এ কয়দিনে সকলের সাথে মিলে গেছে সে।
রাতের বেলা বিছানায় শুয়ে রাইদা চোখ বন্ধ করে আছে কিন্তু তার ঘুম আসছে না। চোখ খুলে পাশে শোয়া সায়নের দিকে তাকালে দেখে তার হাত জড়িয়ে সায়ন ঘুমাচ্ছে। শ্বাস ফেলে সায়নের থেকে হাত ছাড়িয়ে উঠে বারান্দায় চলে যায়।
বারান্দায় বসে গালে হাত দিয়ে সব কিছু ভাবতে থাতে। ভাবতে ভাবতে সেখানেই ঘুমিয়ে যায়।
মাঝ রাতে সায়নের ঘুম ভাঙলে পাশে রাইদাকে দেখতে না পেয়ে উঠে সে। পুরো রুমে রাইদাকে না দেখে বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় চলে যায়।
বারান্দায় এসে রাইদাকে ঘুমাতে দেখে কোলে তুলে বিছানায় এনে শুইয়ে দেয়। রাইদার পাশে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
….
সায়ন ড্রাইভ করছে পাশে বসা রাইদা চুপ করে বাহিরে তাকিয়ে আছে। মিসেস রিনাকে যখন সকাল বেলা বলে সে বাসায় ফিরতে চায় প্রথমে মিসেস রিনা মুখ ভাড় করে কিন্তু পরে অবশ্য বলে দিয়েছে জলদি যাতে একেবারে বাড়িতে ফিরে সে। রাইদা মিসেস রিনাকে কোনো জবাব না দিয়ে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানিয়েছিলো।
রাইদা গালে হাত দিয়ে সায়নের পরিবারের কথা ভাবছে। সায়নও রাইদাকে বিরক্ত করছে না আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়ি এসে থামে রাইদার বাসার নিচে।
‘এসে গেছি নামো।’
রাইদার ভাবনার ইতি ঘটে সায়নের কথায়।
‘আপনি এখন অফিস যাবেন?’
‘হ্যা কাজ জমে আছে সেগুলো শেষ করতে হবে।’
‘উপরে যাবেন না?’
‘যাবো যেদিন তুমি একেবারে আমার বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাজি হবা সেদিন।’
‘আপনি কি রাগ করেছেন?’
‘না রাগ করেনো করবো? এটা রাগ করার বিষয় নাকি? এত কিছুর পরও যখন তুমি আমার সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারছো না তখন আমার অবশ্যই রাগ করা উচিত না তাই না? আমি ভীষণ ক্লান্ত তোমার এই না সিদ্ধান্তহীনতার বেড়াজালে। তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছো না মাঝে আমি শুধু শুধু আশা করছি।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা চোখ তুলে তাকায়।
‘আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমি কনফিউজড? ‘
‘এটা আদোও কোনো প্রশ্ন? এতগুলো দিন এক সাথে থেকে এখনো তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছো না তাহলে কনফিউজড কে তুমি না আমি? আসলে সমস্যা কোথায় জানো তোমার জেদ। তুমি যে জেদ ধরেছিলে আমার কাছে ফিরবে না সেই জেদের রেশ এখনো রয়ে গেছে। আমার প্রতি তোমার অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও সেগুলোকে পাত্তা না দিয়ে তুমি ইগনোর করছো। রি আমারো কিন্তু জেদ আছে আর একবার যদি আমি জেদ করি তাহলে আর কখনোই তুমি আমার দেখা পাবে না।’
সায়নের কথাগুলো শুনে রাইদা বিস্ময়ে তাকায়। হুট করে তার বুকের ভেতর মোচড় দেয়। সে ঘামতে শুরু করে।
গাড়ির দরজা খুলে রাইদা বের হয়। সায়ন রাইদাকে আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।
রাইদা সেখানেই দাঁড়িয়ে সায়নের গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে যতক্ষণ দেখা যায়। একসময় গাড়ি চলে গেলে রাইদা বিল্ডিং এ প্রবেশ করে।
বাসায় কলিং বেল দিলে মারিয়া এসে দরজা খুলে। রাইদা কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায় সোজা। নিজের রুমে ঢুকে বিছানায় বসে মাথা নুইয়ে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে।
‘কিরে কই ছিলি তুই? মাইয়া মানুষ এমনে কেউ বাইরে থাকে?’,মাইমুনা রাইদার রুমে ঢুকে বলে।
‘শ্বশুড়বাড়ি গিয়েছিলাম সেখান থেকেই আসলাম আর কোনো প্রশ্ন?’,মাইমুনার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাইদা বলে।
‘তুই সেই বেয়াদব ছেলের বাসায়ও চলে গেছিস? আমাকে একবারো বলার প্রয়োজন মনে করলি না? কেমন মেয়ে জন্ম দিলাম যে বিয়ে করে আমাকে জানায় না, জামাইয়ের সাথে থাকে সেটাও জানায় না এমনি শ্বশুড়বাড়ি চলে যায় সেটা জানানোর প্রয়োজনবোধ করে না।’,রওশন আরা বিলাপ করতে করতে বলে।
‘সব চুপ আর কেউ একটা কথা বললে ঘরের জিনিসপত্র উলোটপালোট করে দিবো। তোমার জন্য আজকে আমার এই অবস্থা। না দিয়েছো একটা স্বাভাবিক জীবন, না দিয়েছো মায়ের মমতা। ছোট বেলা থেকে তোমার অবহেলা ছাড়া তো কিছুই পাইনি সেই তুমি আবার আমার থেকে কীভাবে আশা করো আমি তোমায় আমার জীবনের সব বলবো? আমার আসলে এ বাড়িতে আসাই উচিত হয়নি। সায়নের মায়ের থেকে কিছু শিখে নিও। সন্তানের সাথে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় এটা যদি এখনো না বুঝো আর কবে বুঝবা?’, রেগে রওশন আরাকে কথাগুলো বলে রাইদা।
‘নিজের মায়ের লগে কেউ এমনে কথা কয়? এই তোর শিক্ষা?’,মািমুনা রাইদাকে বলে।
‘বেশ করেছি বলেছি কারণ উনি যেমনটা আমার সাথে এক সময় করেছে তেমনটাই এখন ফেরত পাচ্ছে।’
রাইদার কথা শুনে ছলছল নয়নে রুম থেকে বেরিয়ে যায় রওশন আরা। নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটঁকে দেয়। মাইমুনা পিছন পিছন গিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে।
মারিয়া এসে রাইদার সামনে দাঁড়ায়।
‘একটা কথা কই আপা কিছু মনে করবেন না। ভাইয়া কিন্তু আপনারে অনেক ভালোবাসে। আমার বয়স কম বুঝিও কম কিন্তু ভাইয়াকে দেখে এইটুকু বুঝতে পারছি সে আপনারে ছাড়া থাকতে পারবে না।’
মারিয়ার কথা শুনে রাইদা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
ফোন বের করে সায়নের নাম্বারে কল দেয় কিন্তু সায়ন কল রিসিভ করে না। একে একে অনেকবার কল দেয় এরপরও সায়ন কল রিসিভ করে না। সায়ন ব্যস্ত আছে ভেবে তখন আর কল দেয় না।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সায়নকে কল এবং মেসেজ দেয় কিন্তু সায়নের কোনো খবর নেই। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে রাইদার কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে।
ফোন বেজেই চলেছে সায়ন কেবিনের চেয়ারে বসে বৃদ্ধা আর তর্জনি আঙুল দিয়ে কপাল ঘষছে। সারাদিন ইচ্ছে করে সে রাইদার কল রিসিভ করেনি।
‘সরি রি আমার পক্ষে আর ধৈর্য্য ধরা সম্ভব না। আমার শূন্যতা না বোঝালে তুমি কখনোই আমার মূল্য বুঝবে না। তোমাকে কাছে পেতে এইটুকু তো করতেই পারি।’
বাজতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন।
…
(চলবে..)
(মাথা ব্যথা করছিলো তাও কষ্ট করে লিখে দিলাম। যেমনটা লিখতে চেয়েছিলাম হয়নি তারপরও পোস্ট করলাম। আগামীকালকে একটা দাওয়াতে যাবো তাই কালকে গল্প দিতে পারবো না একেবারে পরশু গল্প দিবো।)