সে আমার মানসিক শান্তি পর্ব -৩৪+৩৫

#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_৩৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সেদিনে’র পর থেকে আব্রাহাম নিজ থেকে, আয়াতের সাথে দুরত্ব তৈরি করে ফেলছে। আয়াত নিজ থেকে কথা বলতে আসলে-ও আব্রাহাম আয়াতে’র সাথে কথা বলে না। আয়াত’কে ভালোবাসে বলেই আয়াতে’র সব অবহেলা সহ্য করে। কিন্তু আয়াত তাকে সস্তার বস্তু বানিয়ে ফেলছে।

“ভালোবাসি বলেই তোমার কাছে নত হই আয়াত। যতটা সস্তা ভাবো ততটা সস্তা আমি নই।”

আব্রাহাম হসপিটালে গিয়েছে। আবার আগের মতো রাত করে বাসায় ফিরে। কেউ তার থেকে কৈফিয়ত চায় না। এত রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলে। আয়াত যত্ন সহকারে আব্রাহামে’র শরবতের সাথে বিষ মেশাচ্ছে আর গুনগুন করে গান গাইছে। আয়াতে’র ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো। আয়াত শরবত’টা টেবিলে রেখে, দরজা খুলতে চলে গেল। আয়াত’কে দেখেই আব্রাহাম গম্ভীর মুখ করে বাসার মধ্যে প্রবেশ করল। সারাদিন পরিশ্রম করে শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে। তাই সোফায় হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে পড়লো। আব্রাহামে’র ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আয়াতে’র মায়া হলো। আব্রাহামে’র করা ব্যবহারের কথা মনে করতেই, সব মায়া নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। শরবত’টা আব্রাহামে’র দিকে এগিয়ে দিল। আব্রাহাম ক্লান্ত থাকায় বিনাবাক্য শরবতটা খেয়ে ফেলল। আয়াতে’র মুখে এসে ধরা দিল তৃপ্তি হাসি। একটু পরে আব্রাহাম অনুভব করল, তার গলায় ভেতর জ্বালা পোড়া করছে। সময়ের সাথে জ্বালা পোড়াটা দিগুণ হচ্ছে, আব্রাহাম রক্তিম চোখে আয়াতে’র দিকে তাকালো। আয়াত হাসতে হাসতে বলল।

–আব্রাহাম চৌধুরী তোমার খেলা এখানেই শেষ। তোমার মতো হতভাগা আর দু’টো নেই। যে কি-না নিজের প্রিয় মানুষের হাতে খু’ন হতে চলেছে। আব্রাহাম আর কিছু শুনতে পেল না। চারিদিকে ঝাপসা হতে শুরু করল। পুরো শরীর তরতর করে ঘামছে। আস্তে আস্তে চারপাশে আঁধার ঘনিয়ে এলো। তারপরে আব্রাহামে’র আর কিছু মনে নেই।

পরের দিন সকাল বেলা আব্রাহাম দু-চোখ মেলে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করল। আব্রাহামে’র পাশেই আয়াত মাথায় হাত নিয়ে বসে আছে। মাথায় তার হরেক রকমের চিন্তা। বিষন্ন মন নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। আব্রাহাম কে সজাগ পেতে দেখে আয়াত আব্রাহামে’র দিকে তাকালো। আয়াতে’র দু-চোখ অসম্ভব ভাবে রক্তিম বর্ন ধারণা করেছে। আব্রাহাম আগে কখনো আয়াতে’র চোখ লাল হতে দেখেনি। আব্রাহাম’কে তাকাতে দেখে আয়াত হালকা হেসে বলল।

–কেমন ছিল তোমার কালকের যাত্রা। আয়াতের কথা শুনে আব্রাহাম উঠে বসলো। হাত থেকে খুব সাবধানতার সাথে, স্যালাইনটা খুলে ফেলল। তারপরে আয়াতে’র গলা থেকে, চেইনটা এক টানে খুলে ফেলল। আয়াত ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠলো। আয়াত’কে অবাক করে দিয়ে আব্রাহাম আয়াতে’র গলা চেপে ধরলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আয়াত ছটফট করতে লাগলো।

— আব্রাহাম কি করছিস। মেয়েটা মরে যাবে। কথা গুলো বলতে বলতে হিয়া এসে আব্রাহামে’র হাত ছাড়িয়ে দিল। আব্রাহাম হিয়ার দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে উঠলো।

–তোকে বলেছি না। কথায় কথায় একদম স্পর্শ করবি না। আব্রাহাম’কে ছোঁয়ার অধিকার শুধু আয়াতে’র। এমন ভুল আর কখনো করলে, তুই থাকবি। কিন্তু তোর হাত থাকবে না।

–কিন্তু তুই তো নিজেই আয়াত’কে মারছিলি!

–সেই কৈফিয়ত আমি তোকে দিব।

–স্যরি ভুলে হয়ে গিয়েছে। তুই রাগ করিস না। একটু শান্ত হ।

–তোর পকেটে ওটা ছুরি না। আব্রাহামের কথা শুনে হিয়া নিজের দিকে তাকালো। তারপরে আব্রাহাম’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–হ্যাঁ আমাকে অপারেশন থিয়েটারে যেতে হবে। তুই কেমন আছিস। এটা দেখতে এসেছিলাম। আব্রাহাম হিয়ার কথা শুনে মলিন হাসলো। তারপরে গম্ভীর কণ্ঠে বলল।

–ওটা আমাকে দিয়ে বেড়িয়ে যা। হিয়া কোনো কথা না বলে, আব্রাহাম কথা মতো চলে গেল। হিয়া চলে যেতেই আব্রাহাম আয়াতে’র দিকে তাকালো। সে কি ভয়ংকর চাহনি। যা শরীরের শিরা-উপশিরা কাঁপিয়ে তুলে। আব্রাহাম আয়াতে’র দিকে তাকিয়ে বলল।

–সোজাসাপটা বলবে নাকি আমি কাছে আসবো?

–কি বলবো?

— কালকে আমাকে বিষ দিয়েছিলে কেনো? মিথ্যা বললে কিন্তু ছুরিটা গলায় বসিয়ে দিব। আব্রাহাম আয়াত’কে আঘাত করতেই পারে না। আয়াত চোখ মুখ বন্ধ করে মিথ্যা কথা বলে দিল।

–এসব তুমি কি বলছো? তোমার মাথা ঠিক আছে। আমি কেনো তোমায় বিষ দিতে যাব। আয়াতে’র কথায় আব্রাহাম হাসলো। আব্রাহামে’র শান্ত হাসি আয়াতে’র অন্তর আত্মা কাঁপিয়ে তুলল। এ যেনো ঝড় আসার পূর্বাভাস। আব্রাহাম আয়াতের নিকটে এসে বলল৷

–আমাকে বললে না। কালকে যাত্রা কেমন ছিল। চলো তোমাকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। বলেই ছুরিটা দিয়ে আয়াতে’র গলায় আঘাত করল। সাথে সাথে গলগল করে রক্ত বের হতে শুরু করল। আয়াত একটা চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে গেল। আবরার রুমে প্রবেশ করে আঁতকে উঠলো। দৌড়ে আয়াতের কাছে আসলো। আব্রাহামে’র দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকালো। আয়াত’কে দ্রুত জরুরি বিভাগে নিয়ে গেল। আবরার ঝাঁজালো কণ্ঠে বলে উঠলো।

–তোর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। যাকে পাবার জন্য এতকিছু করলি। তাকে আঘাত করতে, এক সেকেন্ড সময় নিলি না৷ তুই এস পাষাণ হলি কি করে আব্রাহাম। তোর সাথে আগের আব্রাহামকে খুঁজে পাচ্ছি না।

–সে আমাকে পাষাণ হতে বাধ্য করেছে। আমি’ও আগের আয়াত’কে খুঁজে পাচ্ছি না। যা-ও তাকে গিয়ে সুস্থ করে তুলো। এখনো অনেক হিসাব নিকাশ বাকি আছে। অনেক কিছু জানতে হবে। আবরার বিরক্ত হয়ে চলে গেল।

অন্ধকার রুমের মধ্যে সবকিছু শেষ করছে ফেলছে আগন্তুক। আয়াতে’র হাতে নাতে ধরা পড়াটা একদম মেনে নিতে পারছে না সে। পাশেই তার বাবা বসে আছে। ছেলের পাগলামিতে বাঁধা দিচ্ছে না। তীরে এসে নৌকা ডুবে গেলে, এমন হবারই কথা। আগন্তুকের বাবার আফসোস হচ্ছে, কাজটা আয়াতকে না দিয়ে অন্য কাউকে দিলে, সে হয়তো সুন্দর করে কাজ শেষ করতে পারতো। কিন্তু আয়াত তো তাদের ফাঁসিয়ে দিল। অধিক শক্তি অকারণে অপচয় করার জন্য, আগন্তুক ক্লান্ত হয়ে বাবার পাশে বসে পড়লো। আহত কণ্ঠে বলল।

–এটা কি হলো আব্বু শেষে এসে নৌকা ডুবে গেল। আব্রাহাম কি কোনোদিন মরবে না। এতকিছু করে ও কেনো আব্রাহামকে মারতে পারছি না। কেনো বারবার ব্যর্থ হচ্ছি।

–তুমি ভুল মানুষ’কে ভুল দায়িত্ব দিয়েছো বাবা। তাই তো তোমার কাজে, তুমি বারবার ব্যর্থ হচ্ছো। কাজটা আয়াতকে না দিয়ে, একটা ছেলেকে দিতে পারতে। তাহলে তোমার কাজ এতদিনে পরিপূর্ণ হয়ে যেত। তুমি ভুল করেছো।

–এত গুলো বছর ধরে কাজ করছি। আর তুমি আমার কাজের ভুল দেখাচ্ছো! তুমি যদি এতই পারো তাহলে, এত কাছে থেকে-ও মারতে পারলে না কেনো?

–যাকে ছোট বেলা থেকে, কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। তাকে কিভাবে খু’ন করবো। আমার বিবেকে বাঁধা দেয়।

–মিথ্যা কথা বলছো কেনো? তুমি আবার কবে আব্রাহাম’কে কোলে পিঠে করে মানুষ করলে? আগন্তুকে’র কথায় আগন্তুকে’র বাবা মাথা নত করে নেয়। শব্দরা যেনো জোট বেঁধে পালিয়েছে। আগন্তুকে’র বাবা একটা কথা-ও বলল। চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

আজকে তিন দিন পরে আয়াত’কে বাসায় নিয়ে আসা হলো। আবরার সাতদিন পরে নিয়ে যেতে বলেছিল। কিন্তু আব্রাহাম শোনেনি টেনে হিঁচড়ে বাসায় নিয়ে এসেছে। আব্রাহামে’র এমন অমানবিক আচরণে অবাক হয়েছে সবাই। আব্রাহাম পাষাণ। সেটা সবার ক্ষেত্রে হলে-ও আয়াতে’র ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আব্রাহাম আয়াতে’র সাথে এমন বাজে ব্যবহার করছে, তা সত্যিই সবাইকে খুব করে ভাবিয়ে চলেছে। আব্রাহামে’র সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে আয়াত। আব্রাহাম গম্ভীর হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে বলল।

–শুরু করবে নাকি এবার সত্যি সত্যি মাথাটা আলাদা করে দিব। আয়াত আব্রাহামে’র দিকে তাকালো। মানুষ’টা কেমন শান্ত হয়ে আছে। ভাবতেই আয়াতে’র পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।

চলবে…..#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_৩৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আয়াতে’র মতো রুপ ধারন করলেই যে, আয়াত হওয়া যায় না। এটা তোমার জানা নেই আরোহী আপু। মুখের বদল চেঞ্জ করলেই কি আয়াত হওয়া যায়। শরীর, কণ্ঠ স্বর এগুলো-ও যে চেঞ্জ করতে হয়। এসব কি আহনাফ ভাই করতে ভুলে গিয়েছিল। তুমি আমার কাছে আসার আগে ভুলে গিয়েছিলে? তুমি কার কাছে আসতে চলেছো? তোমার কি জীবনের ভয় নেই! কথা গুলো বলে থামলো আব্রাহাম। আব্রাহামে’র কথা শুনে থমকে গেল আরোহী। আব্রাহাম যে, এত সহজে সবকিছু ধরে ফেলবে, তা তার কল্পনার বাহিরে ছিল। এখন সে কি করবে? অতিরিক্ত চিন্তা আর ভয়ের কারনে মস্তিষ্ক অনেক আগেই ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। আরোহী না জানার ভাব ধরে বলল।

–এসব তুমি কি বলছো?

–সত্যি কথা বলবে নাকি তোমার গ*লা* কা*ট*বো? আব্রাহামের সোজাসাপটা উত্তরে দমে গেল আরোহী মিনমিনে কণ্ঠে বলল।

–আমি যদি তোমাকে সবকিছু বলে দেই। তাহলে আয়াতের ক্ষতি হবে। আহনাফ আয়াতকে মেরে ফেলবে। আয়াতকে বাঁচানোর জন্য আমি এতকিছু করেছি।

–আয়াতকে বাঁচানোর জন্য নয়। তুমি নিজেই রজনী সেজে আয়াতকে তোমাদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলে? কেনো নিয়ে গিয়েছিলে? সেটা তুমিও ভালো করে জানো আর আমি’ও ভালো করে জানি। আহনাফ ভাই এত চালাক ক্ষনে ক্ষনে স্থান পরিবর্তন করে ফেলছে, এভাবে ধরতে পারবো না। সে যখন আমার বউকে ধরে রেখেছে। আমি এবার তার বউকে ধরে রাখি, সে-ও একটু বুঝুক বউ ছাড়া থাকাটা কতটা কষ্টকর।

–আস্তে কথা বলো। আহনাফ সবকিছু শুনে ফেলবে। পরে আয়াতে’রই সমস্যা হবে।

–কি করে শুনবে, আমি তোমার গলার চেইন হসপিটালে ছিঁড়ে দিয়েছি। আমাকে তোমার এত বোকা মনে হয়। কি ভাবছো আমি তোমাদের জালে পা দিয়েছি। হাস্যকর! আব্রাহাম চৌধুরীকে বোকা বানানো এত সহজ নয়। আমি নয় বরং তোমরা আমার জালে পা দিয়ে ফেলছো। আমি তোমাদের যেদিকে নিয়ে যাচ্ছি। তোমরা সেদিকেই যাচ্ছো। আমি তোমাকে সেদিনই চিনে ফেলছিলাম। যেদিন সকালে তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম। দু’জনকে একসাথে মাপলাম না তখন। আয়াত তোমার মতো এতটা খাটো না। তুমি আয়াতে’র চেয়ে একটু মোটা। তোমার হাতে একটা তিল রয়েছে। যেটা আয়াতের হাতে নেই। পাঁচটা বছর মেয়েটার সাথে থেকেছি। সেই মেয়েটাকে চিনতে আমি ভুল করবো। এটা কি করে ভাবলে, বোন হয়ে বোনের ক্ষতি করতে বিবেকে বাঁধা দিল না। আমার কিন্তু মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। আয়াতকে আমার কাছে দিয়ে যেতে বলো। না হলে তোমাদের দু’জনকে আমি শেষ করে দিব। তোমাদের এক একটা দিন বিষাক্ত করে তুলবো। বেঁচে থেকে-ও মরে যেতে চাইবে। কিন্তু আমার থেকে মুক্তি পাবে না। আমি কিছু বলছি না। যেদিন ধরবো, সেদিন বাঁচতে পারবে না।

–তোমার মতো জীবন সঙ্গই সবাই চায়। কি করে বুঝতে পারলে, আমি আয়াত নই। সবটা জানার পরে-ও চুপচাপ ছিলে কেনো?

–কারন তোমার গলার চেইনের সাথে ক্যামেরা লাগানো ছিল। অভিনয় তোমরা একাই জানো? অন্য কেউ জানে না। অভিনয় করতে করতে এতদূরে নিয়ে এসেছি। আয়াতের কথা চিন্তা করে কিছু বলি নাই। কিন্তু আয়াত কেই খুঁজে পাচ্ছি না। তাহলে অভিনয় করে আমার কোনো কাজ হচ্ছে না। তোমাদের এমন কেউ সাহায্য করছে৷ যে আমাদের খুব কাছের কিন্তু কে সে? আয়াতের সাথে তোমার কথা হতো। তুমি আয়াতের থেকে কিছু কথা জেনে নিয়েছো, কিন্তু বাকি কথা গুলো কিভাবে জানলে?

–আমি আহনাফকে অনেক বুঝিয়েছি। সে আমার কথা শুনে নাই। আমাকে রজনী আর আয়াতকে মারার ভয় দেখিয়েছে। আমি ভয় থেকেই কাজটা করে ফেলছি। আমি রজনীকে বাঁচাতে পারলেও আয়াতকে বাঁচাতে পারি নাই। আরোহীর কথা শুনে আব্রাহামের কলিজা কেঁপে উঠলো। রাগের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে বলল।

–তোমার কাছে বসে বসে ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। একটু পরে এই ধৈর্য আর থাকবে না। আরোহী চুপ রইলো। সে এখন কি করবে। স্বামীকে বাঁচাবে নাকি, নিজের বোনকে বাঁচাবে।

–আমি তোমাকে কিছু বলতে পারবো না আব্রাহাম। আমার কাছে আমার স্বামী আর আমার বোন দু’জনেই ভিষন গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি তোমাকে আহনাফের খোঁজ দেই। তাহলে তুমি আহনাফকে আক্রমণ করবে। আবার আমি যদি আহনাফকে বলি আয়াতকে ছেড়ে দিতে, তাহলে আহনাফ আয়াতকে মেরে ফেলবে। আমি চাই না আমার একটু ভুলের জন্য কারো জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ুক। আব্রাহাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরোহীর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই। তা-না হলে নিজের স্বামীর কথায় ছোট বোনের স্বামীর সাথে থাকতে রাজি হয়ে যায়। আব্রাহাম যদি সত্যিটা না জানতো তাহলে কি হতো? ভাবতেই ঘৃণায় পুরো শরীর রি রি করে উঠলো আব্রাহামে’র। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো।

–যদি আমি খুঁজে বের করতে পারি। তাহলে তোমার স্বামীর কি হবে? ভেবে দেখো? তোমার স্বামী কিন্তু আমার আপন ভাই হয় না। তোমার স্বামীর আমি অনেক উপকার করেছি। তার প্রতিদানে সে আমাকে পেছনে থেকে আঘাত করেছে। এবার সময় এসেছে, সবকিছু ফিরিয়ে দেওয়ার। তোমরা কি ভাবো পৃথিবীতে তোমরা একাই চালাক। তোমাদের বুদ্ধির কাছে সবার বুদ্ধি অতি নগন্য। এই যে প্রথম থেকে এতদূর তোমাদের টেনে নিয়ে আসলাম। এটা তোমরা এসেছো? নাকি আমি নিয়ে এসেছি। সব সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। মাঝখানে আয়াতকে টেনে নিয়ে আসলে। ভালো করতেই জানতে, আমি একটা জায়গায় দুর্বল। সুযোগ বুঝে আঘাত করলে। আয়াতের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলতে, আমি কিছু জানতাম না মনে করেছো? আমি সবকিছু জামতাম। তোমাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য চুপ করে ছিলাম। তোমরা একটু বেশিই চালাক। আমি ভাবতাম রজনী ভাবি একটু বেশিই খারাপ। এখন দেখছি রজনী ভাবি একটু ত্যাড়া স্বভাবের, মুখে মুখে তর্ক করে। মানুষকে আঘাত দিয়ে, সেই আঘাত নিজেও অনুভব করে। বুঝিয়ে বললে, মানুষকে ভালোবাসতে জানে। কিন্তু তোমাকে দেখে, অনেক ভালো মনে হতো। কেমন শান্ত, ভদ্র স্বভাবের মেয়ে মনে হতো। এর থেকে কি বুঝলে, সব খারাপ মানুষ খারাপ হয় না। কিছু কিছু খারাপ মানুষ ও ভালো হয়। আবার সব ভালো মানুষ ভালো হয় না। কিছু কিছু মানুষ তোমার মতো দুমুখো সাপ হয়। বোন হিসেবে তুমি ব্যর্থ। তোমার মতো কুলাঙ্গার বোন যেনো কারো না হয়। পৃথিবীর সব বোনেরা খারাপ হয় না। শুধু মাত্র তোমাদের মতো কিছু বোনদের জন্য, সকল বোনকে কথা শুনতে হয়। তোমার সাথে কথা বলে, সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তুমি যখন বলবে না। আমি নিজেই আয়াতকে খুঁজে নিব। আমার কলিজায় হাত দিয়েছে না। ঐ হাত আমি ভে*ঙে* গুঁ*ড়ি*য়ে দিব।

–আমি বলছি আহনাফ আয়াতকে কোথায় রেখেছে, তুমি প্লিজ আহনাফকে কিছু করো না। দোহাই লাগে তোমার। আরোহী কান্না করতে করতে আহনাফের ঠিকানা দিল। আব্রাহাম ঠিকানা পেয়ে, অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগলো। আব্রাহামকে হাসতে দেখে ভরকে গেল আরোহী। বিস্ময় নয়নে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম আরোহীর দৃষ্টি উপেক্ষা করে, হাক ছেড়ে ডাক দিল।

–কই গো তোমরা? বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ভেতরে এসো। তোমাদের নতুন অতিথি কে নিয়ে যাও। ভালোভাবে আপ্যায়ন করবে। অতিথি আপ্যায়নে যদি কোনো রকম ত্রুটি পেয়েছি। তাহলে কি হবে সেটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। একে ততক্ষণ প্রহর করতে থাকবে, যতক্ষণ সত্যি কথা না বলে, দু-দিন কিছু খেতে দিবে না। যদি কেউ মায়া দেখাতে গিয়েছো। ফলাফল ভালো হবে না। বলেই আব্রাহাম বেড়িয়ে চলে গেল। চারজন মেয়ে এসে, আরোহীকে ঘিরে ধরলো। দু’জন মেয়ে আরোহীকে টানতে টানতে নিয়ে গেল।

আহনাফের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহাম। কোনো ভনিতা না করে, সোজা বাসার মধ্যে প্রবেশ করল। আব্রাহামকে দেখে আহনাফের কাজের লোকটা ভীত গলায় বলল।

–আপনি এসেছেন! স্যার আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিল। স্যার কিভাবে বুঝতে পারলো। আজকে আপনি আসবেন।

–তোমার স্যারের বাড়িটা দেখছি বিশাল বড়। আমি কয়েক বছর ডক্টারি করে এত বাড়ি তো দূর সাধারণ একটা বাড়ি করার টাকা যোগাতে পারলাম না। আর তোমাদের স্যার মাত্র কয়েকদিনে এড বড় বাড়ি করে ফেলল। মানতে হবে।

–আপনি যে গাড়ি করে আসলেন। গাড়িটা কোথায় পেলেন? কথাটা বলেই লোকটি মুখ হাত দিল। আব্রাহাম হেসে বলল।

–ওটা আমার বাবার গাড়ি।

–আপনি ভেতরে যান। স্যার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আব্রাহাম কোনো কথা বলল না। চুপচাপ আহনাফের রুমের দিকে এগোতে লাগলো। কাজের লোকটি আহনাফের রুমটা দেখিয়ে দিয়েছে। সেভাবেই হেঁটে চলেছে আব্রাহাম। অবশেষে আহনাফের রুমে এসে পৌঁছালো। আব্রাহামকে দেখে আহনাফ হাসিমাখা মুখ করে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে আসলো। আব্রাহামের কাঁধে হাত রেখে বলল।

–তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। এত তাড়াতাড়ি আবার আমার কাছে আসবি। কখনো ভাবতে পারি নাই। বল আমাকে কি সাহায্য করতে হবে?

–আয়াত কোথায়?

–তোর বউ কোথায় আমি কি করে জানবো?

–তোমার বউ কোথায় ডাকো তাকে, তার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আব্রাহামের কথায় আহনাফের মুখটা চুপসে গেল। এখন সে কি জবাব দিবে। সে হারে হারে উপলব্ধি করতে পারছে। আব্রাহাম আটঘাট বেঁধে ময়দানে নেমেছে। আহনাফ কৃত্রিম হেসে জবাব দিল।

–আরোহী বাসায় নেই। শপিং করতে গিয়েছে।

–বেশ তার নাম্বার দাও। না হলে আপু না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। আহনাফ এবার রেগে গেল। আব্রাহামের কলার টেনে ধরে বলল।

–আমার সাথে গেম খেলতে আসছিস। আমার থেকে খুব বড় খেলোয়াড় হয়ে গিয়েছিস। ভালোই ভালোই আরোহীকে ছেড়ে দে। না হলে আয়াতকে সারাজীবনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিব। আগুন ঘি ঢালার জন্য, আহনাফের একটা কথাই যথেষ্ট ছিল। আব্রাহাম আর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আহনাফের গলা চেপে ধরলো।

–নিজের ভাই হও না। তবু-ও নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসে গিয়েছি। আমার থেকে সাহায্য নিয়ে, আমাকেই আঘাত করলে, আয়াত কোথায় বলো। আজকে কিন্তু তোমাকে খু*ন* করে ফেলবো। আব্রাহামের এমন ভয়ংকর রাগের সাথে আহনাফ পরিচিত নয়। প্রয়োজনের তুলনায় আব্রাহামের শক্তি দিগুণ মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে। আহনাফ এক চুল পরিমাণ আব্রাহামকে সরাতে পড়ালো না। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। হাত দিয়ে আব্রাহামকে প্রহার করার চেষ্টা করছে, তার সামান্য প্রহারে দমে যাচ্ছে না আব্রাহাম। আহনাফের অর্ধেক জিভ বের হয়ে আসছে। আহনাফ সমস্ত হাল ছেড়ে দিল। এই বুঝি দেহ থেকে প্রান পাখিটা উঠে চলে যাবে। এমন সময় আবরার এসে আহনাফের থেকে আব্রাহামকে ছাড়িয়ে দেয়। আহনাফের পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। কাশতে কাশতে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। ধস্তাধস্তি করার ফলে দিগুন শক্তির অপচয় হয়েছে। শরীরটা বড্ড দুর্বল লাগছে। আব্রাহাম রাগান্বিত হয়ে আবরারের দিকে তাকালো। আবরার কিছু বলতে যাবে। তার আগেই আব্রাহাম আহনাফের কাছে গিয়ে ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো। আব্রাহামকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তার প্রেয়সীকে দেওয়া কষ্টের শোধ তুলছে। এত অল্পতে দমে গেলে চলবে না। আহনাফের নাক মুখ দিকে রক্ত বের হতে লাগলো। আবরার আবার আব্রাহামকে আটকালো। আব্রাহাম ক্রোধের বসে আবরারকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। তারপরে রাগান্বিত হয়ে বলল।

–একদম আমার কাছে আসবে না। তুমি’ও বেইমান। তুমি সবকিছু জানতে তাই না। নিজের ভাইকে বাঁচানোর জন্য, আমার থেকে সত্যিটা আড়াল করে গেলে। আল্লাহর কসম করে বলছি। আয়াতে’ কোনো রকম ক্ষতি হলে, আমি সবকিছু ধংস করে দিব। কাউকে শান্তিতে বাঁচতে দিব না। আহনাফ সোফার নিচ থেকে, তার বন্দুকটা বের করল। আব্রাহামের দিকে তাক করে গুলি করতে যাবে, তার আগেই আব্রাহাম আহনাফ বুকে গুলি চালিয়ে দিল। উপস্তিত ঘটনায় আবরার অবাক হয়ে গেল। নিজের দু-চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, ভীত কণ্ঠে বলল।

–এটা তুই কি করলি? আহনাফ ভাইয়ের কিছু হলে, তুই আয়াত’কে পাবি কোথায়?

–আমার কথা তোমার ভাবতে হবে না। তুমি বরং নিজের ভাইয়ের কথা ভাবো। অনেক পাখনা গজিয়েছিল। ছোট করে ছেঁটে দিলাম। এখন চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করো। তোমাকে আমি কোনোদিন মন থেকে ভাই বলে মানতে পারবো না। তুমিও প্রমাণ করে দিলে, স্বার্থে আঘাত লাগলে, সবাই তার আসল রূপ দেখিয়ে দেয়। কথা গুলো বলেই আব্রাহাম বেড়িয়ে গেল। আবরার অসহায় দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। সে তো ভালোই করতে চেয়েছিল। তবে সবকিছু কেনো উল্টা পাল্টা হয়ে গেল।

চলবে…..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here