সে আমার মানসিক শান্তি পর্ব -১০+১১

#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_১০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আবরার ফাঁকা রাস্তায় হাটাহাটি করছে।আর আব্রাহাম আপন মনে ফোনে স্ক্রল করে যাচ্ছে।আবরার বিরক্ত হয়ে বলল।”তুই চাইলে-ই ভেতরে যেতে পারিস।এভাবে ভাইয়ে’র সাথে শত্রুতা না,করলে হয় না।বেলকনি দিয়ে উঠে,আয়াত’কে বল।যেনো রজনী বেলকনির দরজা খুলে বাহিরে আসে।আবরারে’র কথা শুনে আব্রাহাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকালো।

–এই ভাইয়া আমাকে তোমার চোর মনে হয়।নাকি সিনেমা’র নায়ক মনে হয়।দেখতে পারছো না।বেলকনির দরজা লাগানো।আমি কিভাবে আয়াতে’র কাছে যাব।এখন আবার বলো না।পাইপ দিয়ে বেলকনিতে উঠে যেতে,কেউ দেখলে বলবে শিকদার বাড়িতে চোর আসছে।দেখা গেলো,আমি পাইপে’র মাথার ওপরে বসে আছি।তুমি আমাকে রেখে পালিয়ে যাবে।আর জনগণ আমাকে মা*রা*র* জন্য নিচে দাঁড়িয়ে থাকবে।কি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

আব্রাহামে’র কথা শুনে আবরার রাগী দৃষ্টিতে আব্রাহামে’র দিকে তাকালো।গম্ভীর মুখ করে বলল।

–চল বাসায় যাব।আমার অনেক ঘুম পেয়েছে।একটা মেয়েকে দেখার জন্য এত কষ্ট করতে পারবো না।

–তাই আবার বিয়ে করতে যাচ্ছো।রজনী আপু জানলে,
তোমাকে এখন-ই তালাক দিয়ে দিবে।এমন খ্যাত ছেলেকে কে-ই বা বিয়ে করতে চায়।

–তুই আমাকে অপমান করছিস।

–তোমার অপমান আছে।

–ফা*ল*তু* বকিস না।তাড়াতাড়ি বাসায় চল।সকালে অনেক কাজ আছে।

–তুমি বাসায় চলে যাও।আমি হসপিটালে যাব।দুপুরে বাসায় যাব।আব্বু-আম্মুকে বলে দিও।

–কেনো,এখন বাসায় গেলে কি হবে?

–বাসায় গিয়ে কি করবো ভাইয়া।বাসায় গিয়ে না পাই বাবার ভালো ব্যবহার।আর না পাই মায়ের ভালোবাসা।চৌধুরী বাড়িতে দরকার পড়লে আমার ডাক আসে।তোমাদের প্রতি যেমন আমার দায়িত্ব আছে।আমার রোগীদের প্রতি-ও আমার দায়িত্ব আছে।কতদূর থেকে আসে সবাই।সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগী দেখবো।তারপরে বাসায় যাব।তুমি চলে যাও।

–তুই তো গাড়ি গিয়ে আসিস নাই।আমি তোকে পৌঁছে দিয়ে আসি।

–আব্রাহামে’র কারো সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে না।বলে-ই সামনের দিকে হাঁটা শুরু করল।আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে এসেছে।লোকচক্ষুর আড়ালে রেখেছিল।সেজন্য আবরার দেখতে পায় নাই।আবরার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসার উদ্দেশ্য চলে গেল।

আজকে রজনী’র গায়ে হলুদ।পুরো বাড়ি জুড়ে মেহমান গিজগিজ করছে।সবাই সবার মতো সেজে উঠছে।কেউ বা গীত গাইছে।বাচ্চারা ছোটাছুটি করায় ব্যস্ত।আবরারে’র বাসা থেকে হলুদ নিয়ে রওনা দিয়েছে।কিছুক্ষণে’র মধ্যে-ই,ওরা সবাই চলে আসবে।আয়াত সুন্দর করে সাজেছে।আব্রাহাম আসবে,শোনার পরে থেকে নিজেকে সুন্দর করে তোলার প্রচেষ্টায় লেগেছে।মার্জিত ভাবে শাড়ি পড়েছে।চুলগুলো খোলা রেখেছে।হালকা মেকআপ করে নিয়ে,রজনী’র পাশে গিয়ে বসলো।সবাই রজনী’কে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছে।রজনী’কে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে।বিয়ের সাজে,প্রতিটি মেয়েকে একটু বেশি-ই সুন্দর লাগে।রজনী তার বহিঃপ্রকাশ।আয়াত দু-চোখ ভরে বোন’কে দেখছে।আজকে তার বোন’কে কত সুন্দর লাগছে।কিন্তু রজনী’র মন খারাপ।কেমন মন মরা হয়ে আছে।মলিন মুখ করে সবার সামনে হেসে যাচ্ছে।অধরের কোণে তেমন হাসির রেশ নেই।বোনের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে আয়াতে’র ভেতরে খারাপ লাগা কাজ করতে শুরু করল।হেয়ালি না করে বললল।

–আপু এই বিয়েতে তোমার কি মত নেই?আব্বু জোর করে তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।

–আব্বুর খুশি-ই আমার খুশি রে।বাবা-মায়ের হাসি-খুশি মুখ’টা দেখলে-ও,মনের মধ্যে অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করি।আমার বিয়েতে সত্যি মত নেই।আবরার’কে আমার একদম পছন্দ না।ওকে কোনোদিন জীবনসঙ্গী হিসাবে মেনে নিতে পারব কি-না,তা আমি জানিনা।তবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।মেয়েদের জীবন রে বোন।মেনে নিতে আর মানিয়ে নিতে-ই,তাদের জীবন ফুরিয়ে যায়।একদিন আমি’ও এভাবে ফুরিয়ে যাব।আবরার’কে বিয়ে করা ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।আমি তোকে কি করে বলবো আয়াত।যে,আমি মনে মনে তোর পছন্দের মানুষটা’কে পছন্দ করে ফেলছি।এসব ভাবা-ও পাপ।শেষর কথা গুলো মনে মনে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আয়াত বোনের গলা জড়িয়ে ধরে বলল।

–আপু তুমি মন খারাপ করো না।আবরার ভাইয়া অনেক ভালো ছেলে।তোমাকে নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখবে।ভাইয়া অনেক বোকা জানো।জীবনে একটা প্রেম-ও করতে পারে নাই।তোমাকে পছন্দ করে,
তা-ও আবার ঝগড়া করে তোমার সাথে সময় পার করে দেয়।নিজের মনের কথা গুলো বলতে-ই পারে না।ভাইয়া একটু গম্ভীর।কিন্তু মানুষ হিসেবে এতটা-ও খারাপ না।নিজের মনের কথা গুলো গুছিয়ে বলতে পারে না।তুমি না হয়,ভাইয়া’কে নিজের মনের মতো করে গুছিয়ে নিও।

–আমার থেকে আমার বর’কে তুই ভালো জানিস।তাহলে আমার হয়ে,আমার বর’কে তুই বিয়ে করে ফেল।

রজনী’র কথা শুনে,আয়াতে’র ভেতর’টা ধক করে উঠলো।যেখানে আব্রাহাম’কে ছাড়া কল্পনা করতে-ও কষ্ট হয়।সেখানে তার বোন তাকে,অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা বলছে।মুহুর্তের মধ্যে আয়াতে’র মন’টা খারাপ হয়ে গেল।আয়াত’কে মন খারাপ করতে দেখে রজনী হাসলো।আবরারে’র বাসা থেকে আবরারে’র কাজিনরা এসেছে।আব্রাহাম-ও এসেছে।দু’জন বয়ষ্ক মহিলা এসেছে।সবাই রজনী’র কাছে আসলো।আবরারের কাজিনরা রজনী’র সাথে ভালো মন্দ কথা বলছে।সবাই রজনী’কে হলুদ মাখিয়ে দিতে লাগলো।হলুদ দেওয়া শেষ হলে,মেহেদী পড়িয়ে দিতে লাগলো।

আব্রাহাম এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।আয়াত বেশ কয়েকবার আব্রাহামে’র দিকে তাকিয়েছে।আব্রাহাম এক মুহুর্তে’র জন্য আয়াতে’র দিকে চোখ মেলে তাকায়নি!বড্ড অভিমান হলো আয়াতে’র।সে-ও ঠিক করে নিল।আব্রাহামে’র দিকে আর তাকাবে না।মন খারাপ করে বসে থাকলো।আব্রাহাম’কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আয়াতে’র আম্মু বলে উঠলো।

–তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো বাবা।ভেতরে গিয়ে বসো।

–বেশি মানুষে আমার অস্বস্তি হয়।এখানে কাউকে চিনি না।কার সাথে কথা বলবো আন্টি।

–শুনে ছিলাম।তুমি নাকি খুব বেয়াদব।সবার সাথে বেয়াদবি করো।আমার কিন্তু তোমাকে বেয়াদব মনে হচ্ছে না।এত মিষ্টি একটা ছেলে বেয়াদব হতে পারে।সবার সাথে খাবার ব্যবহার করো।কই আমার সাথে তো খারাপ ব্যবহার করলে না।

–আপনি তো’ মা হন।মায়েদের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করা যায়।মায়েদের শুধু সন্মান করা যায়।এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসা যায়।তবে সব মায়ের ক্ষেত্রে নয়।আপনি-ও তো’ সবার সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বলেন,তাহলে আমার সাথে এত মিষ্টি করে কথা বলছেন কেনো?

আয়াতে’র মা কিছু বলল না।সে,মনে মনে আব্রাহাম’কে খুব পছন্দ করে।ছেলেটা মুখের ওপরে সত্যি কথা বলতে ভালোবাসে।তাই হয়তো ছেলেটা সবার কাছে খারাপ।এমন একটা ছেলে-ই তো তিনি চেয়েছিলেন।কিন্তু তার ভাগ্য কোনো ছেলে সন্তান হয় নাই।আব্রাহামে’র মাধ্যমে নিজের ছেলেকে খুঁজতে ব্যস্ত সে।আয়াতে’র আম্মু খুব করে চায়।আব্রাহাম-ই যেনো আয়াতে’র স্বামী হয়।কিছুক্ষণ ভাবার পরে হেসে বলল।

–আয়াত’কে চিনো।আমার মেয়ে।আয়াত’কে পাঠিয়ে দিব।ওর সাথে কথা বললে,ভালো লাগবে।আয়াতে’র মায়ের কথায় আব্রাহাম লজ্জা পেয়ে গেল।আব্রাহাম ভালো করে-ই বুঝতে পারছে।আয়াতে’র আম্মু তাকে লজ্জা দেওয়া’র জন্য-ই কথা’টা বলেছে।আব্রাহাম’কে লজ্জা পেতে দেখে আয়াতে’র আম্মু হেসে চলে গেল।আয়াত মন খারাপ করে বসেছিল।আয়াতের আম্মু এসে কঠিন কণ্ঠে বলল।

–বাড়ির মেয়ে হয়েছো কি করতে?মেহমান এসে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।একটা চেয়ার নিয়ে তার কাছে যাও।তার কি লাগবে গিয়ে প্রশ্ন করো।আয়াত মায়ের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ফেলল।আয়াতে’র আম্মু আয়াতে’র দৃষ্টি উপেক্ষা করে চলে গেল।আয়াত বাধ্য মেয়ের মতো একটা চেয়ার নিয়ে গিয়ে,আব্রাহামে’র সামনে দাঁড়ালো।আব্রাহাম কোনো কথা না বলে,ফোনের দিকে তাকিয়ে,
কিছু একটা দেখতে দেখতে চেয়ারে বসে পড়লো।আয়াত চুপচাপ আব্রাহামে’র পাশে দাঁড়িয়ে আছে।আব্রাহামে’র নজর ফোনের দিকে।এমন সময় রজনী’র ফ্রেন্ড অভি রজনী’র কাছে যাচ্ছিলো।আয়াত’কে দেখে বলল।

–আয়াত তোর চুলগুলো অনেক সুন্দর।এই জন্য-ই মানুষ বলে চুল-ই নারীর সৌন্দর্য।বলে-ই চলে গেল।অভি চলে যাওয়ার সাথে সাথে আব্রাহাম মুখ তুলে তাকালো।আয়াত রজনী’র দিকে তাকিয়ে আছে।আব্রাহাম দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

–তোমার রুম’টা কোন দিকে।

–কেনো?

–আমার বউ আসবে।তাই তাকে তোমার রুমে রাখবো।রুম’টা গোছাতে হবে নাকি।আমার বউ আবার খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।আব্রাহামে’র কথা শুনে,আয়াত রেগে আব্রাহামে’র দিকে তাকালো।আব্রাহাম আয়াতে’র রাগী দৃষ্টির ওপরে,নিজের রক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।আয়াত ভয়ে চোখ নামিয়ে নিল।কোনো কথা না বলে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল।আব্রাহাম আয়াতে’র পেছনে পেছনে গেল।আব্রাহাম রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিল।আয়াত ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।

–ওয়াশরুম থেকে মুখ ধুইয়ে আসো।

–এত কষ্ট করে সেজেছি।মুখ ধুইয়ে আসার জন্য।মরে গেলে-ও মুখ ধুইতে যাব না।

–ঠিক আছে।তাহলে মরে যাও।বলেই পকেট থেকে একটা ব্লেড বের করল।তা’ দেখে আয়াতে’র চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

–আপনি এসব কি করছেন।আপনার মাথায় সমস্যা আছে।আব্বু’কে কিন্তু বলে দিব।

–অনেক ভয় পেয়েছি।এখন যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।আয়াত আনমনে বলে ফেলল।

–তোমার জন্য এত সুন্দর করে সাজলাম।একটা বার বললে,না আমাকে কেমন লাগছে।আব্রাহাম আয়াতের কথার কোনো উওর দিল না।শান্ত দৃষ্টিতে আয়াতে’র দিকে চেয়ে আছে।আব্রাহামে’র এই শান্ত দৃষ্টি আয়াত প্রচুর ভয় পায়।তাই কোনো কথা না বলে,একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।আয়াত চলে যেতে-ই আব্রাহাম দরজা খুলে দিল।বিয়ে বাড়িতে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে দরজা বন্ধ করে রুমের মধ্যে থাকলে,বিষয়’টা একদম বাজে দেখায়।আয়াত ফ্রেশ হয়ে এসে,গম্ভীর মুখে আব্রাহামে’র দিকে তাকিয়ে আছে।আব্রাহাম শান্ত হয়ে বলল।

–নারিকেল তেল আছে।

–হ্যাঁ আছে।বলেই নারিকেল তেল নিয়ে এসে,
আব্রাহামে’র হাতে দিল।আব্রাহাম তেল নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল।বেলকনিতে গিয়ে আয়াত’কে ডাকলো।আয়াত আব্রাহামে’র কাছে যেতে-ই আব্রাহাম আয়াতে’র চুলে তেল দিয়ে দিতে লাগলো।মাথায় তেল পড়তে-ই আয়াত সরে আসলো।

–মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।কালকে আপুর বিয়ে,আর আজকে মাথা তেল দিয়ে দিচ্ছো।

আব্রাহাম রেগে আয়াত’কে দেওয়ালে’র সাথে চেপে ধরলো।

–তোমার চুল গুলো আমি এখনো আমি কেটে দেই নাই।এটাই তোমার ভাগ্য ভালো।যেখানে আমি থাকবো না।কাকে দেখানোর জন্য তুমি সাজবে।তোমার চুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার অধিকার শুধু আমার আছে।আর কারো নেই।তোমাকে এসব শাড়ি পড়তে কে বলেছে,এত সেজে কেনো এত মানুষের মধ্যে যেতে হবে।আমি যদি আর কখনো তোমাকে সাজতে দেখেছি।আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।আমার নীরবতা কি তোমাকে একটু-ও ভয় পাওয়াচ্ছে না।বলতে বলতে সামনে ঘুরিয়ে।মাথায় তেল দিয়ে চলে গেল।আয়াত রেগে আব্রাহামে’র যাওয়া’র দিকে তাকিয়ে আছে।আয়াত আয়না’র সামনে গিয়ে দেখলো।তেল দিয়ে মাথা ভরে দিয়েছে আব্রাহাম।তেল দিলে আয়াত’কে এমনিতে-ই রুগী রুগী লাগে।আব্রাহামে’র জন্য এত কষ্ট করে সাজলো।প্রশংসা তো করলো-ই না।উল্টা ডক্টর সাহেব আমাকে রুগী বানিয়ে দিয়ে চলে গেল।ভাবতে-ই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসলো।

চলবে…..#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_১১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আব্রাহামে’র বাড়িতে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে আয়াত।কান্না করতে করতে রজনী’র প্রায় অবস্থা খারাপ।রজনী জেদ ধরে আয়াত’কে নিজের সাথে নিয়ে এসেছে।এতে সবাই বিরক্ত হলে-ও,রজনী’র কিছু যায় আসে না।সবাই রজনী’কে ঘিরে ধরে বসে আছে।বেশি মানুষে’র মধ্যে আয়াতে’র অস্বস্তি হয়।তাই বোনে’র কাছে থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।খুব সুন্দর করে,চৌধুরী বাড়ি’টা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।আয়াত দু-চোখ ভরে বাড়ির সৌন্দর্য উপভোগ করছে।ফুলদানি থেকে একটা ফুল,বের করে হাতে নিল।তখন-ই কারো কড়া কণ্ঠ ভেসে এলো।

–এভাবে না বলে,কারো বাড়ি থেকে ফুল হাতে নিতে নেই।সেটা তোমার জানা নেই মেয়ে?

আয়াত সামনে’র দিকে তাকিয়ে,একজন সুদর্শন যুবক’কে,দেখতে পেল।ভ্রু কুঁচকে বলল।

–বাসা’টা কি আপনার?

–না।

–তাহলে আপনার এত লাগছে কেনো?আমি যার বাসা থেকে,ফুল হাতে নিয়েছি।এটা সে,বুঝবে।আর আমি বুঝবো।আপনি বাহিরের মানুষ হয়ে,আমাকে কথা শোনানোর কে?

–আমি তোমাকে কোথায় কথা শোনলাম।আমি তো’ তোমাকে ভালো কথা-ই বলছিলাম।আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে,এতক্ষণে তোমাকে অপমান করতে শুরু করে দিতো।

আয়াত আর কোনো কথা বলল না।মুখ’টা গম্ভীর করে রাখলো।নিরবতা ভেঙে ছেলে’টি আবার বলে উঠলো।

–আমি কিন্তু বাহিরের ছেলে না।আমি এই বাড়ির-ই ছেলে।সফিউল চৌধুরী আমার চাচা হয়।

–তো আমি কি করবো?

–আমাকে বিয়ে করবে?

–একটা মানুষের বিয়ে কয় বার হয়?

–তোমার বিয়ে হয়েছে!

–হ্যাঁ আমি বিবাহিত।আমার চার’টা বাচ্চা-ও আছে।দেখবেন?একটু অপেক্ষা করুন।আমার স্বামী আমার বাচ্চাদে’র নিয়ে আসছে।কিছুক্ষণে’র মধ্যে-ই চলে আসবে,ওরা আসলে,একবারে ওদের দেখে,তারপরে যাবেন কেমন।

আয়াতে’র কথায় ছেলে’টা মুখ গম্ভীর করে ফেললো।কোনো কথা না বলে,দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।

অন্ধকার রুমের মধ্যে বসে আছে আহনাফ আর আরোহী।আরোহী বিরক্ত হয়ে বলল।

–এভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকবো।

–তোমার বোনের জন্য-ই সবকিছু হলো,রজনী’কে কে বলেছিল।যে,আবরার’কে বিয়ে করতে।

–একদম আমার বোন’কে নিয়ে বাজে কথা বলবে না।

–তাহলে কি করবো।তোমার বোনের জন্য সবকিছু নষ্ট হয়ে গেল।এখন বাবা-মা আমাদের চিনবে-ই না।

–তুমি এখন কি করতে চাচ্ছো।

–আবরার আর রজনী’কে মেরে ফেলতে চাইছি।

–তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।নিজের ভাই’কে তুমি মা*র*বে।

–তুমি নিজের স্বার্থে,যদি তোমার বোন’কে আমার ভাইয়ের কাছে লেলিয়ে দিতে পারো।তাহলে,আমি কেনো নিজের ভাই’কে খু*ন* করতে পাবরো না।

–আহনাফ আমি আমার বোন’কে আমার স্বার্থে ব্যবহার করেছি।কিন্তু আয়াত’কে কখনো খু*ন* করতে চাই নাই।

–খুনের থেকে-ও বাজে কিছু করেছো।একটা মেয়ে’কে একটা ছেলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছো।আব্রাহাম যদি তোমার বোনের সাথে খারাপ কিছু করতো।তাহলে কি করতে।

–আমি কাকে পাবার জন্য এতকিছু করেছি?

–এমন করে বলছো।যেনো আমি তোমাকে পাবার জন্য কিছু করি নাই।আরোহী বিরক্ত হয়ে রুম থেকে চলে গেল।যে,মানুষটা’কে পাবার জন্য,নিজের পরিবার,
বাবা-মা,বোনদে’র ছেড়ে চলে আসলো।আজ সেই মানুষ’টাকে খুব বিরক্ত লাগে অরোহী’র।বাবা মায়ের কথা বড্ড মনে পড়ে,জন্মের পরে দুঃখ কি জিনিস তা’ বুঝতে পারেনি আরোহী।কিন্তু যেদিন থেকে বাবা-মাকে ভুলে,আহনাফে’র হাত ধরে পালিয়েছে।সেদিন থেকে হারে হারে বুঝতে পারছে,দুনিয়া’টা কতটা কঠিন।আরোহীর ইচ্ছে করে দৌড়ে বাবা-মায়ের কাছে চলে যেতে।কিন্তু কোন মুখ নিয়ে বাবা মায়ের,সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। লজ্জা আর ভয় দু’টোয় আরোহী’কে দুর্বল করে তুলে।

–তায়ানে’র সাথে তুমি কি করেছো বেয়াদব।সফিউল চৌধুরী’র গম্ভীর কণ্ঠ শুনে,এতটুকু-ও অবাক হলো না আব্রাহাম।গা-ছাড়া ভাব নিয়ে বলল।

–কেনো তোমার চোখ নেই।দেখতে পাওনি কি করেছি?

–তোমাকে আমি বলে ছিলাম।বিয়ে বাড়িতে কোনো রকম ঝামেলা চাই না।তবু্-ও তুমি সেই যেচে,ঝামেলা তৈরি করেছো।

–আমি ঝামেলা করেছি।সেটা কি কেউ দেখেছে।তাহলে এত চিন্তা কিসের?

–তুমি তায়ানের মুখে স্ট্যাপলার মেরে দিয়েছো কেনো?

–যেনো আর কখনো আয়াতে’র সাথে কথা বলার মতো দুঃসাহস না দেখায়।

–এই জন্য তোমাকে এই বাড়িতে নিয়ে আসতে চাই না।যখন-ই আসবে।একটা না একটা সমস্যা তৈরি করে ফেলবে।

–আমি মানুষটা’ই সমস্যা।

সফিউল চৌধুরী বিরক্ত হয়ে চলে গেল।আব্রাহাম সফিউল চৌধুরী’র যাওয়া’র দিকে তাকিয়ে হাসলো।

ফুল সজ্জিত রুমে বসে আছে রজনী।চারিদিকে ফুলের মাতাল করার সুবাস এসে রজনীর নাসারন্ধ্রে ঠেকছে।না চাইতে-ও ফুলের সুবাসে মুগ্ধ হয়ে উঠছে রজনী।চুপচাপ বিছানায় বসে ছিল।তখন-ই আবরারের আগমন ঘটে।রজনী একটু জড়োসড়ো হয়ে বসে।

–আমি তোমাকে অনেক দিন ধরে ভালোবাসি।সেটা কোনোদিন সাহস করে বলা হয় নাই।আজকে আমার জন্য জীবনের সেরা দিন।আমি তোমার বাবার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।তোমার বাবা জন্য,আমি আমার ভালোবাসার মানুষটি’কে নিজের করে পেয়েছি।

–আমার আপনাকে কিছু বলার ছিল?

–তুমি কি বলতে চাও।সেটা আমি জানি।দেখো আমি সিনামার হিরোদের মতো ফ্লোরে ঘুমোতে পারবো না।এমনিতে-ই বউ ছাড়া অনেক গুলো বছর কাটিয়ে দিয়েছি।যত গুলো দিন বেঁচে আছি।বউকে ভালোবাসতে চাই।বউয়ের ভালোবাসা পেতে চাই।প্রথমে মানিয়ে নিতে,সমস্যা হবে।আস্তে আস্তে ঠিক আমাকে ভালোবেসে ফেলবে।তোমার জন্য একটা উপহার এনেছি।বলেই পকেট থেকে একটা আংটি বের করে রজনী’র হাতে পড়িয়ে দিল।আংটি’টা হাতে পড়িয়ে দেওয়া’র পরে,আলতো করে রজনী’ট হাতে অধর ছুঁইয়ে দিল।প্রথম কোনো ছেলের স্পর্শে রজনী’র পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।শরীরে’র মধ্যে শীতল হাওয়া বইয়ে শুরু করলো।ভয়ে আবরার’কে কিছু বলতে-ও পারছে না।রজনী’কে ভয় চুপসে যেতে দেখে আবরার হাসলো।তারপরে নরম কণ্ঠে বলল।

–ঐ যে দেখতে পাচ্ছো।ওটা আমার ওয়াশরুম।যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।ড্রেস’টা চেঞ্জ করে ফেলো।ভারি লেহেঙ্গা পড়ে থাকতে তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।রজনী অবাক হয়ে আবরারে’র দিকে তাকালো।আসলে-ই রজনী’র খুব কষ্ট হচ্ছিল।সেটা আবরার কিভাবে বুঝতে পারলো।হয়তো এটাই ভালোবাসার টান।রজনী কোনো কথা বলল না।চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে গেল।একটু পরে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসলো।

–আমার উপহার কোথায়?

–জ্বী।

–কানে কম শুনো।

— না।

–বললাম আমার উপহার কোথায়।

–আপনার জন্য কোনো উপহার নিয়ে আসি নাই।

–কেনো?

–মেয়েদের বিয়ে নিয়ে,অনেক স্বপ্ন থাক জানেন,
ব্যক্তিগত ভাবে,আমি আপনাকে একদম-ই পছন্দ করি না।শুধুমাত্র বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে,আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।তাই এই বিয়ে নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। আপনাকে যদি আমি ভালবাসতাম তাহলে,হয়তো বা অনেক কিছু করতাম।আপনাকে নিয়ে মনের মধ্যে হাজারো নতুন নতুন স্বপ্ন বুনতাম।কিন্তু যাকে আমি ভালোবাসি না। তাকে নিয়ে কি করে স্বপ্ন দেখবো বলেন।আমরা মেয়ে মানুষ। আমাদের মেনে নিতে আর মানিয়ে নিতে-ই জীবন চলে যায়।এখন আমি আপনাকে ব্যক্তিগত ভাবে যতই অপছন্দ করি না কেনো?আমাকে সারা জীবন আপনার সাথে সংসার করে খেতে হবে।তাই আর কথা না বলি।কয়টা দিন শরীরটা’র উপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে।আমার অনেক ঘুম পেয়েছে আমি ঘুমাবো।

–হ্যাঁ ঘুৃমিয়ে পড়ো।আমি তোমাকে ঘুমোতে নিষেধ করেছি নাকি?রজনী আবরারের কথা শুনে অবাক হলো,সে হয়তো আবরারের থেকে অন্য কিছু আশা করেছিল।কোনো কথা না বলে,বিছানার এক কোণে শুইয়ে পড়লো।আবরার লাইট অফ করে দিয়ে এসে,রজনী’কে জড়িয়ে ধরে শুইয়ে পড়লো।রজনী বিরক্ত হয়ে বলল।

–এসব আমার একদম পছন্দ না।আমার থেকে দূরে সরে ঘুমান।

–বিয়ে করেছি।বউকে রেখে দূরে সরে ঘুমানোর জন্য।তোমাকে মানিয়ে নেওয়া’র জন্য সময় দিতে চেয়েছি।বেশি কথা বললে,সেটা-ও দিব না।স্বামী হই আমি তোমার।তোমার ওপরে সম্পূর্ণ ভাবে আমার অধিকার রয়েছে।তাই বেশি কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়ো।রজনী আর কোনো কথা বলল না।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দু-চোখ বন্ধ করে দিল।মনের গভীর থেকে দুঃখ গুলো বেড়িয়ে আসতে চাইলো।কিন্তু রজনী আবরারের সামনে নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে চায় না।চুপচাপ দু-চোখ বন্ধ করে রেখেছে।না চাইতে-ও চোখ দিয়ে,দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here