সোনাবউ শেষ পর্ব

♥#সোনাবউঃ
মোর্শেদা হোসেন রুবী
শেষপর্বঃ
শেষ খন্ডঃ
***********

———————-
মেরাজ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল মেয়েটার চোখে সেই মোটা পাওয়ারফুল চশমাটা এখন নাই,বরং তার বদলে লাইনার আর মাশকারার নিঁখুত সহাবস্থান চোখটাকে দর্শনীয় করে তুলেছে।চোখের মনিগুলো ও নীল।
মেরাজ কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল-“তুমিই মিমি?”
-“জ্বী….মিমি চকলেট।”
-“তখন ওরকম সাজে এসেছিলে কেন আমার সামনে?”
-“তখনই রিয়েল ছিলাম বরং এখন নকল সাজে এসেছি,চোখে দেখেননা…চশমা খুলে লেন্স পড়েছি?আর ভালো পার্লার থেকে সেজে এসেছি বলে এত সুন্দর দেখাচ্ছে আমাকে…কালকে গোসল করার পর দেখবেন আমার আসল রূপ!”
-‘”তার মানে?”
-“মানে টানে কিছু না,যা সত্য তাই বললাম,আর আপনি নতুন বউকে একা ফেলে এখানে বসে মোবাইল গুঁতাচ্ছেন কেন?দশ হাজার টাকা দিয়ে সেজে এসেছি….কিছুই তো বললেন না?”
-“তুমি কি সব সময় এভাবে কথা বলো?
-“কিভাবে কথা বলি?”
-“এরকম বাঁকা বাঁকা?”
-“বাঁকা লাগলে বাঁকা…আমি এমনই,এখন চলেন…শোবেন!”
-“কি বেহায়া মেয়ে রে?(বিড়বিড় করলো মেরাজ)তোমার শোয়া তুমি শোও গে,আমাকে টানছো কেন?”রেগে বলল!
-“ওল্লেলে…ব্যাটাছেলেদের আমার খুউব চেনা আছে…কত্ত সাধু..!
নাকি অন্য সমস্যা?ডাক্তার দেখাতে হবে?”
-“এ্যা..এ্যাই…খবরদার একদম বাজে কথা বলবেনা..!”
-“বাজে কথা হলো এটা?দুই..দুইটা বউ ছেড়ে চলে গেলো….কি বিষয় কি?”
-“তুমি তো খুব বাজে মেয়ে দেখছি…কথা বলার আদব জানোনা?ভদ্রভাবে কথা বলো!আর..শোনো ওসব সাজুগুজু করে লাভ নেই,ব্যবহার ঠিক করো!আমার দুই বউ গেছে বলেই তোমার মত পেত্নীর রাণীকে বিয়ে করেছি নইলে….””
-“এ্যাই…আমার সাথে সাবধানে কথা বলবেন…আমার মাথায় কিন্তু ছিট আছে…গলা টিপে মেরেও ফেলতে পারি,আমার প্রথম জামাই তেড়ীবেড়ী করেছিলো..দিছি শেষ কইরা!!”
-“ক্..ক্ব…কি….কি বলো এসব?আমার আম্মু জানে?”
-“হ্যাঁ….ফুপি জানবেনা কেন?আপনার মতো তিন নম্বররে আমি ছাড়া কোনো শেওড়া গাছের পেত্নী বিয়া করবেনা!”
মেরাজ ঢোক গিলল!
-“আসেন শুইতে আসেন..!”
বলে মোহনীয় ভঙ্গিতে হেটে গেল মিমি।চুলগুলো বেলী ফুলের মালা দিয়ে খোপা করেছে!দেখতে বেশ ভালো লাগছে….অথচ ভয়ে মেরাজের গলা শুকিয়ে আসছে!মেয়েটা তার প্রথম স্বামীকে মার্ডার করেছে?সর্বনাশ।মা কি ভেবে এই মেয়েকে তার গলায় বিঁধালো?? কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে হচ্ছে মেরাজের।কিছুটা ভয় পেয়ে বিছানায় গিয়ে সুবোধ বালকের মত শুয়ে পড়লো।হঠাৎ পেছন থেকে মেয়েটা তাকে পেঁচিয়ে ধরল!মেরাজ কিছু বলতে গিয়ে বাধা পেলো..মিষ্টি ইন্টিমেটের কড়া গন্ধে এক অদ্ভুত মাদকতা ছড়িয়ে পড়লো মেরাজের মস্তিষ্কের কোষে শিরায় উপশিরায়।সে ভুলে গেলো মেয়েটা পেত্নীর রাণী!”
…..
…..
বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলে দেখলো মিমি ঝুঁকে ডাকছে ওকে।এতে করে ওর লম্বা ভেজা চুলগুলো মেরাজের নাকে কানে ঢুকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।মেরাজ চুলগুলো সরিয়ে উঠে বসল।ধমক দিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু কি ভেবে সামলে নিলো,গতরাতের কথাটা মনে পড়ে যাচ্ছে..মেয়েটি তার ১ম স্বামীকে মার্ডার করেছে!
কি ভয়ংকর।এমন দাগী আসামীকে জানলে বিয়েই করতোনা।মা এটা কি করলো ওর? কোন্ জন্মের বদলা নিলো?”
-“কই ওঠেন,নাস্তা খাবেন না?দশ মিনিটে গোসল সেরে টেবিলে আসেন।আমি নিচে যাচ্ছি!”
অগত্যা মেরাজকে উঠতে হলো..!
চুপচাপ নাস্তা খেয়ে ঘরে চলে আসলো মেরাজ।মা’কে কিছু কথা বলা দরকার কিন্তু মা নাকি বাইরে গেছে।ড্রয়ার থেকে গেন্জী বের করছিলো মেরাজ হঠাৎ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে খিলখিল করে হেসে উঠল মিমি-“জানেন….আপনাকে না একদম কেবলাদের মত লাগে!আমার বুড়ো জামাই..!”
-“মানে?”থমথমে গলায় বলল মেরাজ।
-“ঘুমিয়ে থাকলে..জানেন্…আপনাকে কি যে আ..জব লাগে!আমি..না…আপনার কিছু বিশেষ ছবি তুলেছি ঐ অবস্থায়..!”
-“কি?..কোন্ অবস্থায়…দেখি ছবিগুলো?”
-“মমমহুঁ…ওগুলো এখন দেখানো যাবেনা,সময় মত বের করবো!আপনাকে বিশ্বাস কি?যার কাছে মেয়েরা খেলনা?”
-“,তো আমি যখন এতো খারাপ তো বিয়েতে রাজী হলে কেন?আমি তো সেধে তোমাকে বিয়ে করিনি!”
-“ফুপি অনেক করে সেধেছে বলেই আমি রাজী হয়েছি..আমিও নিজে সেধে বিয়ে করিনি..হুঁহ্..কি ফুটুনি!!”
-“এ্যাই..সরোতো ছাড়ো আমাকে..!”
মিমি সরে দাঁড়িয়ে দুইহাত উপরে তুলে গা মুচড়ে আড়মোড়া ভাঙ্গলো আর তাতে ওর শরীরের বাঁকগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠল।মিমি মেরাজের মুখে ঠোনা মেরে বলল-“হা…করে তাকিয়ে কি দেখেন?মুখ বন্ধ করেন মাছি ঢুকে যাবে…..!'”বলে খোপা বাঁধতে বাঁধতে বেরিয়ে গেলো মিমি !
মেরাজ ধপ করে বিছানে বসে পড়লো!এ কি নতুন যন্ত্রনা!মেয়েটা এমন ভয়ংকর কেন?দেখতে তো ভালোই লাগে কিন্তু কথা শুনলে ভয় লাগে!
আবার নিজেই বলে মাথায় ছিট আছে!এ কি সমস্যায় পড়লো ?”
……
…..
ডাক্তার আপার কথা মেনে চলতে হচ্ছে স্বর্ণাকে।প্রতিদিনই আলিফ জিজ্ঞেস করবে ঔষধ খেয়েছে কিনা..খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করেছে কিনা!
এমনিতেই তো স্বর্ণাকে যথেষ্ট যত্নে রাখে আলিফ কিন্তু প্রেগন্যান্সির সংবাদটা পাবার পর থেকে যত্নের চুড়ান্ত করছে।
স্বর্ণাকে রীতিমত জোর করেই ঘরের কাজগুলো করতে হয়!আলিফ বাধা দিলে বলে-“আরে…কাজ করলে তো ভালো,বসে থাকা তো ভালো না..আপনি এতো অস্থির হবেন না তো,আমাকে কাজ করতে দিন।
গত কয়েক মাসের মধ্যে স্বর্ণার শরীর অনেকটা ভারী হয়েছে।নড়াচড়াতেও এসেছে স্থবিরতা।
তবে স্বর্ণা আগের চেয়ে অনেকটাই স্বচ্ছন্দ বোধ করে এখন।আলিফকে বলে ভেতর বারান্দার লাগোয়া ঘরটা নিয়ে মা’কে মেরাজদের বাসার দিকের রূমটা দিয়েছে।কারন হিসেবে দেখিয়েছে এদিকটায় আলো বাতাস বেশী,বাবুরও রোদের দরকার পড়বে..ইত্যাদী।আলিফও সম্মত হয়েছে!স্বর্ণা যেভাবে সহজ বোধ করে!
তবে সেদিনের পর থেকে মেরাজের পক্ষ থেকে আর কোন ফোন বা চিঠি কিছুই আসেনি বলে স্বর্ণা আল্লাহর শোকর আদায় করেছে বারবার।তাহাজ্জুদে আল্লাহর কাছে সমাধান চেয়ে কেঁদেছিলো!রাব্বুল আ’লামীন সুন্দর সমাধান দিয়েছেন।
মেরাজ বিয়ে করেছে।সেদিন বুয়ার মুখে শুনলো মেরাজ নাকি এই বউটাকে খুব ভয় পায় তাই সমীহ করে চলে!স্বর্ণা মনে মনে খুশীই হয়েছে।মেরাজের বউ এখন মেরাজের চোখের আর মনের পর্দা হিসেবে কাজ করবে।স্বামী স্ত্রী একে অন্যের লিবাস (পোষাক)কথাটা কতইনা যুক্তিযুক্ত।
……
……
কয়েক মাস পরের কথা।
আলিফ মসজিদ থেকে বেরোচ্ছিল।জুতা খুঁজতে গিয়ে হঠাৎ কাঁধে কারো হাত পড়াতে চমকে তাকালো।মেরাজকে দেখে চুপ হয়ে গেল।মেরাজ নিজেই ওর হাতটা টান দিয়ে বলল-“বন্ধু..খুব লজ্জিত হয়ে তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি সেদিনের সেই পাগলামীর জন্য।আসলে শয়তানে ধরেছিলো রে..।মাফ করে দিস দোস্ত..!”
আলিফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বাম হাতে মেরাজের কাঁধে চাপড় মেরে বলল-“না..ঠিকআছে..তুই ভুল বুঝতে পেরেছিস,আলহামদুলিল্লাহ!”
-“বিয়ে করেছি শুনেছিস তো!আসলে….লজ্জায় তোকে দাওয়াত দেইনি….জানি তুই আসবিনা!”
আলিফ হাসল-“সমস্যা নেই!ভালো থাক্..এই দুআ করি!যাই কেমন?”
-“দোয়া করিস…..আর…আর…স্বর্ণাভাবীকেও বলিস দোয়া করতে!” বলে মেরাজ হাত মিলিয়ে চলে গেলো!

নামাজ সেরে এসে দেখলো মিমি ওর জন্য ভাত বেড়ে বসে আছে।খুব সুন্দর করে সেজেছে।মেরাজ বলল-“এতো সাজগোছ হঠাৎ? কোথাও যাবে নাকি?”
-“কেন? কোথাও গেলেই সাজতে হবে? ঘরে সাজা যায়না?”
-“,না মানে?”মেরাজ আর কথা বাড়ালোনা!
মিমি অভিমানাহত কন্ঠে বলল-“এজন্যই তো এতো বিপত্তি,ঘরের বউ জামাইয়ের সামনে থাকে ফকিন্নি বুয়ার বেশে আর বাইরে গেলে মারে ইয়া মাঞ্জা!তখন রাস্তার ব্যাটারা ঘরের বউ রেখে পরের বউ দেখে কারন ঘরের বৌ তো কাজের বুয়ার বেশে,থাকে!”
-“হুঁ..বুঝেছি,পাকনামী রেখে..এবার চা করে দাও!”
-“জ্বী..দিচ্ছি..আচ্ছা..আপনার আলমারীতে একটা দামী বাইনোকুলার দেখলাম,ওটা নিশ্চয়ই আপনার?”
মেরাজ মনে মনে একটু চমকে গেল-“হ্..হ্যাঁ..আমার!কেন?”
-“কি করেন দুরবীন দিয়ে? মহিলাদের সাথে টাংকী মারেন নাকি?”
-“কি যে সব বলোনা!আমি কি বাচ্চা ছেলে?”
-“আরে বাচ্চা ছেলের চেয়ে আধাবুড়া গুলাই বেশী খাটাশ টাইপের হয়।খবরদার এসব যেন না দেখি..নইলে কিন্তু খবর আছে!খাবারে ইঁদুর মারা বিষ মিশিয়ে দেবো,টেরও পাবেন না!চেটেপুটে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন তারপর…সব শেষ!”বলে নিজের গলায় ছুরি চালানোর স্টাইলে নিজের হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো!
-“সবসময় এই টাইপের কথা না বললে হয়না?আমাকে কখনো দেখেছো এসব করতে?”
-“না..তা তো দেখিনি…আমাল বাবুতা..”বলে মেরাজের গালটা জোরে টেনে চুমু খেলো মিমি।মেরাজের কাছে মিমির ভয়ংকর ধরনের কথাগুলো ছাড়া বাকি সব ভালোই লাগে,ওর আদর যত্ন ও খুব উপোভোগ্য! কেবল কথা বললেই মজাটা শেষ হয়ে যায়।আহা!ও বোবা হলে কতইনা ভালো হতো!ভাবলো মেরাজ।
এছাড়া ওর সবই ভালো..জীবনের আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে মেরাজ।মিমি রাগী কিংবা পাজী যা’ই হোক না কেন..মেরাজের প্রতিটা প্রয়োজনের দিকে কড়া দৃষ্টি তার।সময় মতো নাস্তা খাবার গোসল ঔষধ আরো যা যা আছে সব দিকে কড়া নজর তার!কে না চায় এমন কেয়ারিং জীবনসঙ্গী!

মেরাজ ঘরে যেতেই মায়ের ফোন এলো,বিশেষ দরকারে মেরাজের বিয়ের দুদিন পরেই তিনি গ্রামে চলে গিয়েছিলেন,জমিজমা নিয়ে কিসব ঝামেলা।এখনো আসতে পারবেন না সেটাই জানালেন।
তিনি নিশ্চিন্ত স্বরে বললেন-“মিমি তোকে দেখে শুনে রাখবে জানি,তাই তো নিশ্চিন্তে গ্রামে থাকতে পারছি!”
মেরাজ চারপাশে তাকিয়ে মিমি আছে কিনা দেখে নিয়ে আস্তে করে বলল-“তোমার সাথে কথা বলার সুযোগই পাচ্ছিনা।হুট করে গ্রামে দৌড় দিলে!জরুরী কথাটাই তো বলা হলো না..!”
-“এতো জরুরী আবার কি কথা? সব ঠিক আছে তো?”
-“কথা আর কি? তোমার ডাকাত ভাস্তিরে যে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছো… সে যে একজন দাগী আসামী তা কি তুমি জানতে না?জেনে শুনে তুমি….?”
-“এই তুই কি বলিস না বলিস?”রাজিয়া ধমক দিলেন!
-“ঠিকই বলেছি..!ও ওর প্রথম স্বামীকে হত্যা করেছে!খোঁজ নিলে জানবে!””
মা ওপাশে চুপ!
মেরাজ ‘হ্যালো’ ‘হ্যালো’ করলে মা বলল-“আমি বুঝতে পারছিনা তোর কানে এসব কথা কে লাগালো!আরে ওর তো বিয়েই হয়নি তো স্বামীকে মারবে মানে?ও..হ্যাঁ…বুঝেছি..!হ্যাঁ,এটা ঠিক যে, ওর এক জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছিল,আংটিও বদল হয়েছিলো..তারপর একদিন ও ছেলেটাকে কোন মেয়ের সাথে দেখে ফেলে খুব স্যান্ডেল পেটা করেছিলো..ব্যাস্।তারপর বিয়ে ভেঙ্গে যায়।খুন করার খবর তুই কই পেলি?”

মেরাজের বিস্ময় সপ্তমে চড়ল-“ও অবিবাহিতা?মা তুমি ঠিক জানো?”
-“হ্যাঁ…আমার ভাতিজী আর আমি জানবোনা?”তুই কারো কথায় কান দিসনা বাপ্…মেয়েটা চঞ্চল কিন্তু খুব ভালো রে..!”
-“ওও…আচ্ছা,মা রাখি!”মেরাজ বলল।
মেরাজ ফোন রেখে হতভম্ব হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ।তখনি মিমি চায়ের কাপ হাতে ঘরে ঢুকল!গেটের সামনে দাঁড়িয়ে নক করল-“আসতে পারি স্যার?”
মেরাজ তাকিয়ে রইল।
মিমি চায়ের কাপ রেখে মেরাজের গালটা টানতে গেলে মেরাজ চট করে মাথাটা সরিয়ে ওর হাত খপ করে ধরে ফেলল।তারপর হালকা মোচড় মেরে বলল-“মিথ্যা বলেছো কেন?”
-“আ..আহ্..কই মিথ্যা বলেছি…উ..উ..লাগছে কিন্তু..চাগুলো কিন্তু সত্যি এবার মাথায় ঢালবো!”
-“নাও…ঢালো! ” বলে মিমির হাত ছেড়ে দিয়ে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল।মিমি বাম হাত দিয়ে নিজের ডান হাত বুলাচ্ছে,তারপর উঠে যেতে যেতে বলল-“,বুইড়া..খাটাস..!”
-“কি বলেছো..?”
বলে খপ করে ধরতে গেলে মিমি জোরে দৌড় দিয়ে দরজার ওপারে গিয়ে জিভ ভেংচালো-ঠিকই বলেছি,বুড়ো কোথাকার!”
-“দাঁড়াও চা টা খেয়ে আসছি!”বলে দুঢোকে গরম চা’ টা গিলে মেরাজ উঠল।মেরাজকে আসতে দেখেই মিমি দৌড় দিলো কিন্তু পায়ে পা বেঁধে সিড়ি দিয়ে গড়িয়ে সোজা নিচে।
মেরাজ হতভম্ব হয়ে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে রইল তারপর পাগলের মত সিঁড়ি বেয়ে নামল।চিৎকার করে ড্রাইভারকে ডাকল।মিমি কে পাঁজাকোলা করে কোলে নিয়ে দেখল ও সেন্সলেস হয়ে গেছে।
কিভাবে হাসপাতালে এলো মেরাজ বলতে পারবেনা।চিৎকার করে ডাক্তার নার্সদের ডেকে একত্র করল।মেরাজ নিজেও জানেনা ও উদভ্রান্তের মত করছে!মিমিকে স্ট্রেচারে শুইয়ে দ্রুত ইমারজেন্সীতে নেয়া হলো।
মেরাজ ওর হাতটা ধরে পাশপাশেই হাঁটছিল,ছেড়ে দেবার আগ মুহূর্তে কেবল বলতে পারল-“আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লি…জ!”
জীবনে প্রথমবার মনে মনে রাব্বুল আ’লামীনের দরবারে কান্নায়।ভেঙ্গে পড়ল।বাইরে থেকে কিছুই বোঝা গেলোনা যে ওর ভেতর কতটা ভাঙচুর চলছে!
……

ওটির বাইরে দাঁড়িয়ে ঘামছে আলিফ।স্বর্ণাকে ওটিতে নেয়া হয়েছে।ওর ডেলিভারী ডেট এখনো একমাস বাকী কিন্তু আজ হঠাৎ বাথরুমে পা স্লিপ করে পড়ে যাওয়ায় দ্রুত ওকে হাসপাতালে আনতে হলো।আলিফ দুহাতে মুখ ঢেকে বসে আছে।গম্ভীর মুখে একজন নার্স বেরিয়ে এসে বলছে-“ব্লাড যোগাড় করেন,লাগতে পারে!”
আলিফ চোখ মুছে দ্রুত মোবাইল খুলল।
…..
ঘন্টাখানেক পর ডাক্তার এসে মেরাজের পিঠ চাপড়ে বলল-“ডোন্ট গেট নার্ভাস ব্রাদার..সি ইজ কোয়াইট ওকে..!ভেবেছিলাম ফ্রাকচার হয়ে গেছে।বাট না কিছুই হয়নি তবে হতে পারতো কারন সি ইজ প্রেগন্যান্ট অলসো…!”
মেরাজের দুচোখে বর্ষার ঘনঘটা।ছুটে গেল মিমির পাশে।ওকে দেখেই মিমি চোখ নাচালো-“কি..ধরতে পারলেন না তো?”
মেরাজ হেসে ফেলল!ওর কপালে চুমু খেয়ে বলল-“আসলেই আমি তোমার কাছে হেরে গেছি….মিমি চকলেট।”
…..

……
দুহাত পকেটে পুরে বারান্দার রেলিঙে দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখছিল আলিফ!ওর মনের ভেতর কালবোশেখীর ঝড় প্রবল দাপটে বুকের পাঁজরগুলো যেন ভেঙ্গে দিতে চাচ্ছে।বারবার ওটির লাল বাতিটার দিকে তাকাচ্ছিলো সে।
মা এসে ওর কাঁধে হাত রাখলেন-“ধৈর্য্য ধর বাবা..এতো ভেঙে পড়িসনে!”
তখনি’ওয়াঁ..ওঁয়া..শব্দে ঝট করে ফিরে তাকালো।নার্স টাওয়েলে মুড়িয়ে একটা ছোট্ট পুতুলকে যেন ওর কাছে তুলে দিল-“নিন্,আপনি একটা কন্যা সন্তানের সৌভাগ্যবান পিতা হয়েছেন!
আলিফের মা হাসছেন।আলিফ বলল-“আমার ওয়াইফ?”
-“জ্বী,উনি ভালো আছেন।ঘন্টা খানেক পর দেখা করতে পারবেন!”
আলিফ বাচ্চাকে কোলে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল।মা বললেন-“ওর ডান কানে আযান আর বাম কানে ইক্বামত দিতে হবে!”
-“আমিই দেবো মা!”
ঘন্টা দেড়েক পরে স্বর্ণার সাথে দেখা হলো আলিফের।স্বর্ণা ক্যানুলা পড়া হাত দিয়ে আলিফকে ছুঁয়ে বলল-“কি চেহারা করেছেন এরই মধ্যে?”
আলিফ হাসল!
-“আমার মেয়েকে দেখেছো? ঠিক তোমার মত হয়েছে!”
স্বর্ণাও হাসলো!-“আপনি আরেকটা সুন্নত পালনের সুযোগ পেলেন কারন আপনার প্রথম সন্তান কন্যা!”
আলিফ বাতাসের শব্দে বলল-“আলহামদুলিল্লাহ!’
…..
সমাপ্ত….


(যে ইসলামকে না চিনেছে, তার মতো হতভাগা এ দুনিয়াতে নাই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here