সোনার_সংসার পর্ব ৬

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৬

শাহজাহান সাহেব পাগলের মত তার মেয়েকে খুঁজে চলেছে,পুরো ভার্সিটি খুঁজেছে তারপরও তার মেয়ের কোন সন্ধান পাচ্ছে না।দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে যাচ্ছে তার জন্য উনার চিন্তাটা বেড়েই চলেছে।
আজ উনার অফিসের কাজ করতে একটু লেট হয়ে যায়,তাই একটু দেরি হয়ে যায় মেয়েকে নিতে আসতে।
ভার্সিটিতে পৌঁছে সাদিয়ার নাম্বারে কল দেয় কিন্তু রিং হয়ে যাচ্ছে কেউ ফোন তুলছে না।উনি ভয় পেয়ে যায়,
আশেপাশের সবাইকে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কেউ বলতে পারছে না উনার মেয়ে কোথায়?উনি ব্যার্থ হয়ে গাড়িতে একটা লাথি মেরে উপরের দিকে তাকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে উঠে,,,

“হে খোদা আমার মেয়েকে তুমি সুস্থ রেখো,অর যাতে কোন বিপদ না হয়।অনেক কষ্টের পর মেয়েটাকে ফিরে পেয়েছি,আমার মেয়েটা যাতে ভালো থাকে।তুমি আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।”

___________________★★★___________________

পাক্কা আড়াই ঘন্টা ধরে একই ভাবে বসে আছি,আর হিটলারটা আরামের ঘুম ঘুমাচ্ছে।এবার আমার পা আর কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে,তাই আস্তে করে শরীফের মাথাটা বালিশে রাখতে গেলে শরীফ একটু নড়েচড়ে ঘুমের ঘোরেই বলে উঠে,,,

“সাদিয়া প্লিজ ঘুমাতে দাও,পাক্কা একটা মাস ঠিক করে ঘুমাতে পারি না তোমার জন্য,প্লিজ ঘুমাতে দাও।”

আমি শরীফের কথা শুনে তাজ্জব বনে গেলাম,আমার জন্য এক মাস ঘুমাতে পারছে না মানে!নিজের মনে প্রশ্নটা চেপে না রেখে উনাকে ধাক্কা দিয়ে প্রশ্ন করে উঠলাম,,,

“আমার জন্য একমাস ঘুমাতে পারছেন না মানে কী?”

আমার কথাশুনে উনি বেশ বিরক্ত হল,সেটা উনার চোহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।উনি আমার প্রশ্নের কোন উওর না দিয়ে উনি চোখ বন্ধ রেখেই রেগে বলে উঠল,,,

“আরেকটা কথা বলবে ত মাইর খাবে,চুপ করো একদম নড়বে না ঘুমাব আমি।”

রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে,তাই উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাড়ালাম।উনি চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালেন,আমি উনার তাকানোতে পাত্তা না দিয়ে রেগে বলে উঠলাম,,,

“কী পেয়েছেন আপনি আমাকে হে!ভুল করে বলটা আপনার মাথায় লেগেছে বলে কী যা ইচ্ছে তাই করবেন আপনি।আপনি কী বুঝতে পারছেন আপনার এসব কাজে আমার ভিতরে কতটা রক্তক্ষরণ হচ্ছে।ঘরে বউ ফেলে রেখে আরেকটা বিয়ে করলেন,বিয়ে করেছেন ভালো কথা সুখে সংসার করুন না।আমি ত আপনার জীবনে পথের কাটা হয়ে দাঁড়াই নি।আপনার জীবনে ত আমি নাক গলাচ্ছি না।তবে কেন বারবার আপনি আমার সামনে এসে আমার সাথে এমন অসভ্যতা করছেন।কেন এসব করে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন,মেনেই ত নিয়েছিলাম আপনি আমার নন।তবে কেন আবার এসব করছেন?এসব করে কী বুঝাতে চাইছেন আপনি?”

সাদিয়ার মুখে অসভ্যতা কথাটা শুনে শরীফের রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল,শরীফ এক ঝটকায় সাদিয়ার হাত ধরে বেডে ফেলে সাদিয়ার উপর উঠে নিজের সমস্ত ভার সাদিয়ার উপর ছেড়ে দেয়।আর সাদিয়ার হাত দুটো বেডের সাথে চেপে ধরে রেগে বলে উঠল,,,

“অসভ্যতা করছি আমি তোর সাথে?বিয়ে করা বউ তুই আমার,তোর সাথে যা খুশি তাই করব।তোর উপর সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমার,পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আমরা।আর তুই সেটাকে অসভ্যতা বলছিস,অসভ্য যখন বলেছিস এবার দেখবি অসভ্যতা কাকে বলে?”

কথাটা বলেই উনি আমার গাড়ে মুখ গুজতে নিলে আমি উনার থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকি সেটা দেখে উনি আরো শক্ত করে চেপে ধরে,গাড়ে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।আমি এবার কেঁদেই ফেলি,আমার কান্নার আওয়াজ শুনে উনি আমার দিকে তাকায়।আমি সেটা দেখে ইনোসেন্ট ফেস করে কেঁদেই বলে উঠি,,,

“সরি,ভুল হয়েছে আমার।আমি আর এভাবে বলব না,প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।”

শরীফ আমার গাড়ে কামড়ের জায়গাটায় একটা চুমু দিয়ে বলে উঠে,,,

“কেঁদে দিলে তাই বেঁচে গেলে,নয়ত আজ দেখতে অসভ্যতা কত প্রকার ও কী কী!নেক্সট টাইম এসব বলার আগে কামড়টার কথা ভেবে নিও।”

তারপর উনি আমার উপর থেকে উঠে যায় আর আমি সেই সুযোগে উঠে একদম দরজার কাছে চলে আসি,তারপর কী মনে করে পিছন ফিরে বলে উঠে,,,

“আপনি অসভ্য,অত্যন্ত অসভ্য আপনি।নয়ত ঘরে বিয়ে করা নতুন বউ রেখে প্রাক্তন বউয়ের সাথে এমন অসভ্যতামি করতে পারতেন না।”

কথাটা বলেই আমি এক দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসি,দৌড়ে বেরিয়ে আসার সময় পিছন ফিরে একবার তাকাতেই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে আমার।শরীফও আমার পিছন পিছন দৌড়ে আসছে,আমি সেটা দেখে আমার দৌড়ের স্পীড বাড়িয়ে দেই।শরীফ সেটা দেখে বলে উঠে,,,

“সাদিয়া দাঁড়াও বলছি,নয়ত আমি ধরতে পারলে একটা মাইরও মাটিতে পরবে না,আমাকে অসভ্য বলা!আজ তোমাকে খালি হাতের কাছে পাই দেখে নিও কী অবস্থা করি আমি ”

আমি ভয়ে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে দৌড়ে যাচ্ছি,একবার পিছনে তাকাই আরেকবার সামনে তাকাই।এভাবে দৌড়ে আসার সময় ঠাস করে একটা ধাক্কা খাই কারো সাথে।ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাই নিচে,আর যার সাথে ধাক্কা খাই সেও নিচে পড়ে যায়।সেটা দেখে শরীফ দাঁড়িয়ে যায়,আর ভ্রু কুঁচকে আমাদের দিকে তাকায়।আমি রেগে সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গেলেই আমি অবাক হয়ে যাই পরক্ষণেই মুখে আমার হাসি ফুটে উঠে,আমি হাসিমুখেই বলে উঠি,,,

“আলামিন,,,গোস্ত।(কেউ ভাববেন না বানান ভুল,গোস্তই বলেছি🤭)

” সাদিয়া,,,দোস্ত।”

“অরে গোস্তরে তুই এখানে কেমতে কী?কিমুন (কেমন) আছত গোস্ত।”

“তরে দেখিয়া ভালা হইয়া গেছিগা।”

“শয়তান পোলা,এখনও গানের তেরোটা বাজানো ছাড়লি না।”

“😡”

“😜”

“তুই শয়তান,আমি না।”

“জি নট (না) আমি না।তুই শয়তান,তোর বউ শয়তান,তোর নাতিপুতিরাও শয়তান।”

“দেখ সাদিয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু,আরেকবার শয়তান বললে তরে পঁচা পানিতে চুবা দিমু আমি।”

“তুই আমাকে চুবা দিতে আসলে কী তরে ছেড়ে দিব আমি।তরে উস্টা মাইরা মঙ্গল গ্রহ থেকে ঘুরিয়ে আনব।”

আমরা দুজন ফ্লোরে বসে থেকেই ঝগড়া করছি।আলামিন আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড।এক কথায় বেস্ট ফ্রেন্ড,আমরা দুইজন কথা বলি কম আর ঝগড়া করি বেশি।এখনও তাই করছি,আর এখন সবটা শরীফ দাড়িয়ে দেখছে আর রাগে ফুসছে।কিন্তু আমাদের সেদিকে কোন ধ্যানই নেই।হঠাৎ কিছু একটা ভাঙ্গার আওয়াজে আমাদের ধ্যান ভাঙ্গে আমরা তাকিয়ে দেখি শরীফ একটা নার্সের হাত থেকে কিছু ঔষধ ফেলে দিয়েছে।আমার ত ঝগড়া করতে করতে কিছু মনেই ছিল না,আমি আর কিছু না ভেবে আলামিনকে রেখেই উঠে ভো দৌড়।আলামিন একবার আমার দিকে দেখছে আরেকবার শরীফের দিকে দেখছে।শরীফ জানে আমার একজন ছেলে বেস্ট ফ্রেন্ড আছে কিন্তু তাকে কখনও চোখের দেখা দেখে নি।আর আলামিনও শরীফকে চিনে না।তাই কেউ কাউকে চিনতে পারছে না।
শরীফ কিছু না ভেবেই আলামিনের কাছে গিয়ে ধামধুম কয়টা মাইর দেয়,আলামিন জানতে চাইছে কেন মারছে কিন্তু শরীফ কিছু না বলে মেরেই চলেছে।কিছুক্ষণ মারার পর হসপিটালের কয়েকজন এসে শরীফকে থামায়।ততক্ষণে আলামিনের শরীরের কিছু জায়গা থেকে রক্ত পড়ছে।কিন্তু শরীফ কী থামার মানুষ নাকি তারপরও তেড়ে যাচ্ছে আলামিনকে মারতে।একটু পর হৃদয় ভাইয়া এসে শরীফকে টেনে একপাশে নিয়ে যায়।আর আলামিনকে কয়েকজন মিলে একটা কেবিনে নিয়ে যায়।

____________________★★★___________________

ভয়ে ভয়ে বাড়িতে ডুকছি,কারন আজ বাড়িতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আর আজ ফোনটাও নিয়ে যাই নি যে বাড়িতে কল দিয়ে জানাব কই আছি।বাড়িতে নিশ্চয়ই সবাই খুব চিন্তায় আছে,আর এখন আমাকে বাড়িতে ডুকতে দেখলে সবাই খুব রাগারাগি করবে।সেটা ভেবেই খুব ভয় করছে।বাড়িতে ডুকে দেখি বাবা সোফায় বসে টিভি দেখছে আর মা বাবার পাশে বসে সবজি কাটছে রাতের রান্নার জন্য।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল ওদের দেখে একদমই মনে হচ্ছে না চিন্তায় আছে।আমাকে দেখে বাবা যা বলল তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

#চলবে…

(খালামনির বাড়িতে যাচ্ছি তাই এখন দিয়ে দিলাম,ইনশাআল্লাহ কাল গল্প দিব আগের সময়েই।ছোট হলে দুঃখিত,তাড়াহুড়ো করে লিখেছি।তাই বড় করতে পারলাম না।

আর গতকালের পর্ব পড়ে অনেকেই বলেছে লেখিকার নাম এত বার দেয়ার কী আছে?

উওরঃআমার লেখা এই গল্পটা কপি করছে অনেকেই,ওয়ার্ন করার পরও মানছে না,তাই এই পদ্ধতি।কিন্তু তাতে করে অনেকে অসন্তুষ্ট তাই আজ আর গল্পের মাঝে নামটা দিলাম না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here