স্পর্শ পর্ব -১৫+১৬+১৭

#স্পর্শ
#পর্ব_১৫+১৬+১৭
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

তুবাকে কাঁদতে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে ইরার!একটু ও খারাপ লাগছে না..কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল তোর জন্য অনেক কিছু হারিয়েছি…একটা মেয়ে হয়ে কি করে পারলি আরেকটা মেয়ের ক্ষতি করতে..মর এবার..
আসিফের সামনে এসে হাতের চুড়ি গুলো একটা পেছনে নিলো।তারপর ইচ্ছে মত কত গুলো ঘুষি দিলো নাকে।নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে তবুও থামছে না ইরা..
আরে আরে ইরা থাম তো কি করছিস মরে যাবে বলেই চেঁচিয়ে উঠলো নিহান।সবাই হাসছে কিন্তু ইরা থামছে না..নিহান উঠে গিয়ে ইরার কোমড় জড়িয়ে ধরে দূরে সরিয়ে নিয়ে এলো।
হাত লাগা রক্তটা ধুয়ে দিচ্ছে নিহান।আর ইরা আসিফের দিকে তাকিয়ে বলছে জানেন জোবায়ের ভাইয়া_ ও চশমা পড়ে কানা সেজে আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছে সিমপ্যাথি নিয়ে..!ওই হারামিটার সব দোষ!একদম ভাইটার মত জানোয়ার হয়েছে.. আসিফ ঘাড় কাত করে পড়ে ছিলো..কোনো রকম মুখের ট্যাপটা একটু আলগা করে বলল আমার ভাই নিয়ে কথা বলিস..তোকে তো আমি…
হাতের শার্ট ফোল্ড করতে করতে নিহান এগিয়ে সামনে যেয়ে বলল উহুম উহুম ওকে কিছু করার জন্য তুই আগে জীবিত থাকলে তো..
বয়ান রেকর্ড করে যা করার কর শান্ত আমি আসি রাত হয়ে গেছে অনেক..
শান্ত বলল ওকে তুই যা ইরার খেয়াল রাখিস আমরা এদিকটা সামলে নিচ্ছি..
আচ্ছা দোস্ত
ইরা…একটু জোড়ে ডাকল শান্ত
ইরা ঘাড় ঘুরিয়ে বলল জ্বি ভাইয়া..
ভেজাম মিটিয়ে তোমাদের বাসায় যাবো..ভালো করে রান্না করে রেখো..কব্জি ডুবিয়ে যেন খেতে পারি..
ইরা দাঁত বের করে হেসে বলল আপনার বন্ধু আমার চাইতে ভালো রাঁধে..
সবাই উচ্চ স্বরে হেসে উঠে হাত তালি দিতে দিতে বলক বাহ!বাহ!তাহলে নিহান তুই করে রাখিস বন্ডু
আবার…
হো হো হো ওকে যা!
আসছি..
ইরাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো নিহান!
রিকশা উঠেই মুখ উঁচিয়ে শ্বাস নিচ্ছে.. নিহান আস্তে করে চুলগুলে খুলে দিলো..ইরা নিহানের দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালো..নিহান আলতো করে ইরার কপালে চুমু খায়।আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় ইরা..!
.
.
.
.
.
.
.
বাসায় পৌঁছানোর আগে খাবার নিয়ে ফিরে নিহান।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইরার ফ্রেস হয়ে খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে
চুলগুলো খোলা! ফ্যান ফুল স্প্রীডে ঘুরছে আর তার বাতাসে মৃদু উড়ছে.. হালকা কোঁকড়ানো চুল গুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে..
নিহান মুগ্ধ হয়ে দেখছে ইরাকে।এই দেখার মধ্যে এতটাই মগ্ন ছিলো যে ইরা কখন তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সে টের-ই পায় নি!তুড়ি বাজিয়ে ইরা বলল কি ভাবছেন এত স্যার!সাড়া না পেয়ে একটু জোড়ে বলল_এই নিহান ভাই..
ইরার কথায় ঘোর কাটল নিহানের!ভ্রুযুগল কুঁচকে ইরার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে চেয়ার টেনে বসল..
ইরার হাসিমুখে বসল নিহানের পাশের চেয়ারে..
প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বলল মুখটা হঠাৎ বাংলার পাঁচের মত করলে কেন!
ভাই ভাই আর ভাই!ভাই হই আমি তোর?
ইরা মিটিমিটি হাসছে..
হাসছিস যে বড়..
না আসলে..
আজ বুঝাবো মজা..খাওয়া শেষ কর
ইরাও মুখ ভার করে বলল আমি কি বাড়ির কাজের মেয়ে তুই তুকারি করো যে
এ্যাহ টুই টুকালি কলো যে হাহ তো তোকে তুই বলবো না তো কি আপনি আজ্ঞা করবো?
ইরা একটা কথাও আর বলল না..চুপচাপ বাকি খাওয়াটা শেষ করে নিলো।।
.
.
.
.
.
.
.
খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিহানের থেকে ফোন নিয়ে মায়ের কাছে ফোন দিলো..
হ্যালো মা
হ্যালো
কেমন আছো?
ভালো
কবে আসবে মা?
আমায় দিয়ে তোর কি দরকার?আমি আর ফিরবো না
মা এখনো অভিমান করে আছো?সরি মা..আসলে..
সালমা বেগম ফিল করছেন তার মেয়ের কন্ঠটা কেমনে বদলে গেছে ক্ষনিকেই..
একটু থেমে বলল আর দুদিন পরে আসবো!তোর মামার অবস্থা ভালো না!খালাই তো আমাদের মানুষ করেছে তাই শোক সামলাতে পারছে না..বলেই আবার ও চুপ করে রইলেন তিনি!
আচ্ছা মা সাবধানে থেকো।নিজের খেয়াল রেখো
বাবা?
তোর বাবা ভালো আছে।এখান থেকেই অফিস করে।তা আমার নিহান বাবাটা কেমন আছে রে মা?
ভালোই আছে!ওর কথা জিগ্যেস করবে না তো।
কেন?কি হয়েছে?
তুই তুই করে দেখো না..আমি কি কাজের মেয়ে নাকি বলো তো..আমি তো এখন ওর বউ..কই মিষ্টি করে ডাকবে ইরা ইরাআআ এদিকে শোনো তো
তা না ইরা ইরা এদিকে আয় খেয়ে নে। এটা কর সেটা কর..
সালমা বেগম মিটিমিটি হাসছেন।ফোনের এপারে তা বেশ বুঝতে পারলো ইরা..
মা বলে একটু চেঁচালো!
তোর মামী ডাকছে রাখি বলেই কুট করে ফোন কেটে দিলো সালমা বেগম।আঁচলে মুখ চেপে হাসতে লাগলেন মেয়ের কথায়!
এদিকে ইরা মায়ের কাছেও পাত্তা না পেয়ে রেগে ফায়ার..গাল ফুলিয়ে হন হন করে সোফার ঘর থেকে নিজের ঘরে চলে গেলো!ঠাস করে দরজা আটকে দিলো।
.
.
.
.
.
.
.
খট খট করে দরজার কড়া নাড়ছে নিহান।ইরা শুয়ে পড়েছিলো কাঁথা মুড়ি দিয়ে.. শব্দ পেয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসল.. আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দিলো।
নিহান রাগি রাগি মুখ করে বলল আধ ঘন্টা যাবৎ ডাকছি এরকম মহিষের মত ঘুমাচ্ছিস ক্যান?
ঔষধ না খেয়ে।
ইরা চোখ ডলতে ডলতে বিছানায় বসল।নিহান ঔষধ হাতে এনে গ্লাসে পানি নিয়ে এসে বসল ইরার পাশে।মুখে ঔষধ দিয়ে পানি দিতেই ইরা গিলে শুয়ে পড়লো।
নিহান ও লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো ইরার পাশে।
নীল ড্রীম লাইটের আলোতে খুব মায়াবী লাগছে ইরাকে।নিহান বেশ কিছুক্ষন অপলক তাঁকিয়ে রইলো মুখপানে! ইরার আরেকটু গা ঘেঁষে শুয়ে ওর মাথাটা নিজের বুকে নিলো।
ইরাও বিড়াল ছানার মত গুটিসুটি মেরে নিহানের বুকে শুয়ে রইলো!ঠোঁটের কোণে প্রশান্তি আর জয়ের হাসি ফুটে উঠল নিহানের!
.
.
.
.
.
.
.
সকালে নিহান ঘুম ভেঙে উঠে দেখে জানালার পর্দা সরানো!এখনো ভোর কাটে নি!ইরা পাশে নেই!নিহান আস্তে আস্তে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো! ইরার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বের হলো ঘর থেকে।
রান্না ঘর পেরিয়ে সামনে এগুতে যেয়েও থেমে গেলো!রান্না ঘরে উঁকি দিতেই বেশ অবাক হলো নিহান।এক নীল রমনী!
গুটিগুটি পায়ে ইরার পেছনে যেয়ে দাঁড়ালো।নীল রংয়ের জামদানী শাড়ি পড়া ইরা!হাতের নীল কাঁচের চুড়ি!এক চুলায় ভাজি আরেক চুলায় রুটি ভাঁজছে!আর কাঁচের চুড়ি গুলো বারবার শব্দ করে জানান দিচ্ছে নতুন বউ রান্না করছে!
চুল গুলো পিঠ ছাড়িয়ে কোমড়ে ঠেকেছে!নিহান আলতো করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল ইরাকে।কাঁধে থুতনি রাখল।ইরা নিহানের উপস্থিতি টের পেয়েছে অনেক আগেই!তবুও শব্দ করে নি! পিছুও ফিরে নি।
গ্যাসের চুলার একটা চাবি অফ করে দিলো ইরা।
নিহানের মাথায় হাত রেখে বলল কি ব্যাপার এত ভোরে ঘুম ভাঙল আমার বরটার!
নিহান আস্তে আস্তে ইরার ঘাড়ে মুখ গুঁজল!
ইরা ছিটকিয়ে সরিয়ে দিয়ে ঠোঁটে দাঁত চেপে বলল সুরসুরি লাগে না বুঝি!
নিহান এবার হাসবে না কি কিছু বলবে ভেবে পাচ্ছে না!রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে দিলো..এত আহাম্মক কেউ হয়?
উফফফ..বিড়বিড় করে এসব বলেই দ্রুত ঘরে চলে গেলো নিহান!

টেবিলে সব নাস্তা দিয়ে নিহানকে ডাকতে গেলো ইরা!ওমনি দেখে নিহান রেডি হয়ে ওর ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে..
কোথাও যাচ্ছো?
হুম
কোথায়?
অফিসে
অফিসে…কিছুটা অবাক হয়ে বলল ইরা!
হুম বুটিকসের.. ভাবছি আজ থেকে অফিসে বসবো!
আজ-ই কিছুটা বিষন্ন স্বরে বলল ইরা!
নাস্তার টেবিলে বসতে বসতে নিহান বলল হুম আজই!
চুপচাপ নাস্তা করে উঠে গেলো নিহান!
যাওয়ার সময় বলল আসছি!
ইরা পিছু ডেকে এগিয়ে গেলো নিহান দিকে।নিহানের পায়ের উপর পা রেখে উঁচু হয়ে কপালে চুমু খেলো সাবধানে যেও!
চোখমুখ শক্ত করে নিহান বলল হুম!

নিহান বেরিয়ে যেতেই ইরা দরজা আটকে আঙুলে শাড়ির আঁচল পেঁচাতে পেঁচাতে ভাবছে তখনকার ব্যবহারে কি রাগ করলো?কিছু না বলেইই চলে গেলো..কিন্তু আমার তো সত্যিই সুরসুরি লাগছিলো ঠোঁট উলটিয়ে একা একাই এসব বলছে ইরা!

অপরদিকে নিহান বারবার ডানহাতে কপাল ছুঁয়ে মিটিমিটি হাসছে!

চলবে_

#স্পর্শ
#পর্ব_১৬_ও_১৭
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

দুপুরে রান্না শেষ করে নিহানের জন্য অপেক্ষা করে কিন্তু নিহান আসে না! সারা বিকেল ছাদে বসে থাকে ইরা নিহানের অপেক্ষায় তবুও আসে না নিহান!
সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত হয়ে গেছে!এখনো আসছে না..
এবার খুব কান্না পাচ্ছে ইরার..কি সুন্দর করে সেজেছে!কাঁঠালি রঙের শাড়ি সাথে কাঁচের চুড়ি হালকা সাজ….নিহানের জন্য..!কই সে তো এলোই না!সবসময় তো দুপুরে আসতো। আজ নয় নতুন অফিসে জয়েন তাই একটু লেইট হতে পারে তাই বলে!ভয় ও করছে।কিছু হলো না তো!
.
.
.
.

আয়নার সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে ইরা!আধ ঘন্টা হবে..এবার চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে
এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেই দিলো ইরা।ফ্লোরে বসে পড়লো!
.
.
.
.
৯.৩০ বাজে..বাহিরে ঝিঁঝিঁর ডাক খুব ভয় করছে ইরার!চারপাশে তাকাচ্ছে বারবার..এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।আঁতকে উঠলো ইরা।সঙ্গে সঙ্গে উঠে দিলো ভো দৌড়!এক দৌড়ে সদর দরজার সামনে।
কে বলে কান পাতল।
কে কে করছিস কেন?দরজা খোল..
কে বলবেন তো মুখ ফুলিয়ে আবার জিগ্যেস করলো
দরজা খোল দেখাচ্ছি আমি কে!
না খুলবো না।এত রাতে অন্যের বাড়িতে এসেছেন কোন সাহসে।যান যেখানে সারাদিন কাটিয়েছেন সেখানে যান।
টেনে দিবো এক চড়!দরজা খুলবি তুই নাকি আমি চলে যাবো…রাতে থাক একা বুঝবি তখন ধরবে এ..
নিহান কথা শেষ না করতেই ছিটকিনি খুলে দিলো ইরা।
খুলেই জোড়ে জড়িয়ে ধরল নিহানকে।নিহান তো অবাক ইরাকে দেখে।চুল গুলোর কি হাল।পাগলনি পাগলনি লাগছে।ইরার মাথায় হালকা করে হাত রাখতেই ইরা নিহানের দিকে তাকায়…
অমনি চারপাশ থেকে খুক খুক করে হাসির শব্দ বের হয়। কেউ একজন কাশি দিয়ে বলল আমরাও তো আছি নাকি..
আস্তে আস্তে সবাই হেসে উঠলো।নিহানের আশেপাশে থেকে সবাই বেরিয়ে এলো।নিহান ইরাকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ালো। ইরা পুরো সারপ্রাইজড্।
দুই মামা মামী ফুপি ফুফা।ছোট মামীর ভাই!সব কাজিন অবন্তি,অহনা,অঞ্জু, রিহাব, এলিনা,জিসান,রাহুল,জাকির আরো বাচ্চারা।ইরার মা বাবা বড় দাদী।
এলিনা ইরার ফুপাতো বোন। অবন্তি,অহনা রিহাব বড় মামার তিন ছেলে-মেয়ে।জিসান,জাকির রিক্ত ছোট মামার ছেলে।রিক্ত ঘুমে আছে।মামার কোলে।
সবাই কে দেখে ইরা এখনো হা হয়ে আছে।
নিহান মুচকি হেসে ইরাকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ডুকে গেলো।
ইরা সবার সাথে কথা বলল। ভালোমন্দ জিজ্ঞাসাবাদ করে সবাইকে নিয়ে ঘরে এলো।
জুলেখা বানু(ইরার বড় দাদী)বলল আমরা ফ্রেশ হইয়া লই রেস্ট লই তুই যা দেখ জামাইয়ের কি লাগে।খাওন দে তারে।আমরা খাইয়া আইছি।আর কেউ খামু না।সে সারাদিন খাটাখাটুনি কইরা আমাগো আনতে গেছে।যা বাও-বাতাস দে!
ইরা মাথা নাড়িয়ে নিহানের ঘরের দিকে হাঁটা ধরল!
সবাই ভাগাভাগি হয়ে গেলো কে কই থাকবে।মেয়েরা সবাই ইরার ঘরে। ছেলেরা সবাই ড্রয়িংরুমে।
ইরার ফুপা ফুপি বাবুকে নিয়ে ইরার মা বাবার ঘরে চলে গেলেন।
ইরার দাদী নাতনি দের নিয়ে শুয়ে পড়লো।দুই মামা মামী গেস্টরুম দখল করলো।
বিপত্তি ঘটল ইরার বাবা মা কই শোবে..
.
.
.
.
ইরা নিহানের ঘরে এসে দেখে নিহান বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। খুব ক্লান্ত লাগছে নিহানকে।
ইরা কাছে যেয়ে বসে গ্রামের বউদের মত করে আঁচল টানল।ইসস কেমন শুকনো লাগছে মুখটা!বলেই আঁচল দিয়ে মুছে দিলো মুখটা।
নিহান চোখ বন্ধ করেই বলল খেতে দে।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি!
ইরা নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
টাউজার টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকল নিহান।
.
.
.
.
ইরা সব খাবার ঘুছিয়ে দিলো টেবিলে।জানতে পারলো মা বাবার ঘুমানোর জায়গা নাই।ব্যাপারটা হাসির না হলেও খুব হাসি পাচ্ছে ইরার।ইকবাল সাহেব মুখ ঘোমড়া করে বলল হাসিস ক্যান ইরা!
না মানে বাবা আমি বলি কি তোমরা বরং আজ নিহান ভাইয়ের ঘরে ঘুমাও!
না তা হয় নাকি।নিহান কই ঘুমাবে?সালমা বেগম বললেন!
কেন ছেলেদের সাথে!জাকির মামা, ভাইয়া আর ওদের সাথে।
তা হয় না।শত হোক এখন মেয়ের জামাই ও বটে!
ইরা ব্যঙ্গ করে বলল এ্যা মেয়েল জামাইল ও বতে
ডং…!হুহ।যাক গে আমার কি। ভালোর জন্য বলেছিলাম।বাতের ব্যাথা তাই।গায়ে মাখল না হুহ
নিহানের ঘরে চলে গেলো ইরা।
.
.
.
.
ইকবাল সাহেব সালমা বেগমের মুখের দিকে নিরাশ ভঙ্গিতে তাকালো।তাদের বিয়ের পর আজ পর্যন্ত কখনো তারা আলাদা ঘুমোয় নি।দুজন দুজনার অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেছে।বুড়ো বয়সে তো আরো নির্ভরতার সঙ্গি।রাত হলেই হাঁটুর ব্যাথা বাতের ব্যাথা বাড়ে সালমা বেগমের! রোজ তিনি পায়ে মালিশ করে দেন।আজ কে করবে।পা মালিশ না করলে যে কাল তিনি উঠে দাঁড়াতে পারবেন না।
.
.
.
.
ইরা নিহানের ঘরে এসে দেখে সদ্য গোসল সেরে বেরিয়েছে নিহান।চোখের সামনে ভেসে উঠলো দিনগুলি।দুপুরে বাহিরে গোসল করতো আর বউয়ের মত সব এগিয়ে দিতো ইরা।এখন তো ও বউ হ্যা নিহানের বউ ও তার নিহান ভাইয়ের বউ!
মুখের উপর হাত দিয়ে আনমনে হেসে উঠলো ইরা।
নিহান আয়নায় সবটা লক্ষ্য করলো।মুচকি হাসলো শুধু।
তাওয়ালটা সোফার হাতলে রেখে খেতে চলে গেলো।ইরাও তাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দিয়ে ডাইনীং এ গেলো।
.
.
.
.
.
সোফায় বসে আছে ইকবাল সাহেব আর সালমা বেগম।
ইরা খাচ্ছে নিহানের খাওয়া প্রায় শেষ।হাত ধুতেধুতে একটু জোড়ে বলল ইরা আজ আমি ওদের সাথে শোবো।অনেকদিন পর এসেছে একটু গল্পগুজব করি!তারপর ঘুমাবো।তুই বরং এলি অনাদের সাথে শুয়ে পড়িস।আমার ঘরে কারেন্ট চলে গেলে ভয় পাবি!
কেন ওদের সাথে শুবে!তোমার ঘরেই ঘুমাও!আর আমিও ওই গেদারিংয়ে শুবো না!তোমার ঘরেই ঘুমাবো।অন্তত দাদীর নাক ডাকার শব্দ থেকে বাঁচবো!ইরা হেসে হেসে নিহানকে বলতে লাগলো।
নিহানের চোখ পাকিয়ে তাকানো দেখে বাকী কথা চেওে গেলো ইরা।মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল আচ্ছা আচ্ছা।ও তো মা বাবাকে একটু খোঁচাতে চেয়ে ছিলো।
নিহান উঠে বলল মা বাবা তোমরা বরং আমার ঘরে ঘুমিয়ে পড়।আমি তো এখানেই থাকবো।
নিহানের মা ডাকে আঁতকে উঠল সালমা বেগম।
জড়িয়ে ধরল নিহানকে।খুশিতে এক প্রকার কেঁদেই ফেললো সালমা বেগম।কি বলে ডাকলি বাবা আরেক বার ডাক!ডাক বাবা আরেকবার ডাক
মা..
সালমা বেগম নিহানকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে দিলো।নিহানের চোখের কোণে পানি এসেছে।শেষ কবে মা ডাক ডেকেছিলো মনে নেই ওর।তবে ওর এ মা টা অনেক করেছে ওর জন্য অনেক।নিহান চোখের পানি আড়াল করে বলল এখন আর কেঁদো না তো মা!আমার ঘুম পাচ্ছে। যাও তোমরাও ঘুমিয়ে পরো।রাত হয়ে গেছে অনেক।
একটু দূরে ইকবাল সাহেব আর ইরা দাঁড়িয়ে দেখছে মা ছেলের টান!মাতৃত্ব হয়ত একেই বলে!জন্ম না দিলেও মা হওয়া যায়!
.
.
.
.
.
চিলেকোঠার ঘরে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে নিহান।ইরা ডুকতেই বলল দরজাটা আটকে দে।ইরা দরজা আটকে চিরুনী হাতে নিহানের সামনে বসল।নিহান উঠে চিরুনী হাতে নিয়ে ইরার চুল আঁচড়াতে শুরু করলো।উহ করে রেখেছে কাকের বাসা।খবিশ মাইয়া একটা!
এখানে কেনো থাকতে হবে নিহান ভাই!নিচের ঘরেই তো ভালো ছিলাম।এখানে মশা!
তাহলে যা যে চাপাচাপিতে পড়েছিলি সেখানে গিয়েই ঘুমা!
ইরার মুখ ফুলিয়ে একটু আগের ঘটনাটা ভাবল!

চলবে_

#স্পর্শ
#পর্ব_১৭

ইরার মা বাবা নিহানের ঘরে ঘুমাতে যায়।নিহান ইরার মামা ভাইদের সাথে শুয়ে পড়ে।ইরা নিজের ঘরে গিয়ে দেখে ঘরের কোণাকাণি সব ফিলাপ হয়ে গেছে।এলোমেলোভাবে সবাই ঘুমাচ্ছে।যে যেখানে পেরেছে শুয়ে পড়েছে।
ইরার সবাইকে ডিঙিয়ে একটু ফাঁকা জায়গায় শুয়ে পড়লো।এর মধ্যে শুরু হলো এলিনার মোড়ামুড়ি! ইরা কাত হয়ে শুয়ে রইলো যাতে এলিনার মোড়ামুড়িতে সে না পরে।শুরু হলো দাদীর থেমে থেমে উচ্চ শব্দে নাক ডাকা!
তবুও ইরা ঘুমোতে চেষ্টা করলো।কিন্তু খুব উচ্চ আওয়াজে বায়ু দূষন করলো অবন্তী! আর টিকতে পারলো না ইরা।হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো।রেগে অবন্তীর পেছনে একটা লাথি মেরে বলল এত বড় ধামড়ি মেয়ে তার দূষনে কিনা এত দুর্গন্ধ…ছ্যাহ বলেই থু থু করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
তখন নিহান ইরাকে দেখে কিছুক্ষণ ভেবে এ ঘরে নিয়ে আসে।চিলেকোঠায়!

ভাবনার সমাপ্তি ঘটল নিহানের হালকা ধাক্কায়।নে চুল আঁচড়ানো শেষ।বেনী বেঁধে নে।
ইরা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো।
চিলকোঠায় দুজনের থাকার মতো একটা চৌকি!তাতে শক্ত তোশক আর একটা মশারি আছে আর দুটো কাঁথা!সাথে একটা ছোট টেবিল আছে।তার সামনে একটা পুরাতন খয়ে যাওয়া ওয়্যারডপ!
ইরা বেনী করতে করতে নিহান বিছানা ঝেড়ে মশারি টাঙিয়ে নিলো।ওমনি ইরা মাথার সব চুল এলোমেলো করে এসে কাঁদারা ভঙ্গিতে বলল গিট্টু লেগে গেছে।
এবার কেঁদেই দিলো ইরা।
নিহান কিছুটা ধমকের সুরে ডাকলো ইরাকে।আয় এদিকে ছাড়িয়ে দিই!অকর্মা মেয়ে মানুষ একটা!
গ্রামের মেয়েদের মত করে করে শাড়ি পরা ইরা।আঁচলটা বেশ বড়।ফ্লোরে পরে আছে।একটানে আঁচল হাতে নিয়ে নিহানের সামনে এসে বসল।সত্যিই অনেকটা জট বেঁধে গেছে।নিহান ইরার চুল আঁচড়াতে শুরু করলো! অনেকক্ষণ ধরে ইরার চুল আঁচড়াচ্ছে নিহান।তবে মনোযোগ তার ঘাড়ে একটু নিচের তিলটায়।আনমনে চুমু খেলো নিহান!
ইরা ঝিমাচ্ছিলো।হঠাৎ শরীরে উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠে।কি হলো বুঝার জন্য ঠিকঠাকভাবে বসতে নিতেই আবারও সেই স্পর্শ…খুব গভীর থেকে গভীর হচ্ছে স্পর্শটা!
ইরা অস্ফুট স্বরে বলল_ক ক কি করছো নি-নি-নিহান ভাই!
এক ঝটকায় ইরাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো নিহান।একহাতে ইরার দুহাত কিছুটা শক্ত করে চেপে ধরল।ইরা ঘাবড়ে গেলো।
কবে ছাড়বি এই ভাই ভাই করা?বল নিহান বল।
ইরা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল নিহান ভাই তুমি কি এখন এর জন্য আমায় মারবে নাকি এরকম করে তাকিয়ে আছো কেন!কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল ইরা।
নিহান হেসে দিলো।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল এখন আদর করবো!দিবি আদর করতে?
আরো একটু কেঁপে উঠল ইরা।জড়োসড়ো হয়ে বসলো।আস্তে আস্তে ইরার কপাল চোখে নাকে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে ইরার ঠোঁট জোড়া দখল করলো নিহান।হাতটা আলগা হয়ে গেলো ইরার।দুহাতে ইরার গাল ধরে আছে নিহান।ইরা জমে গেছে পুরো।ঠোঁট থেকে সরে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল ভালোবাসি বউ খুব ভালোবাসি!
ইরা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না এই মুহুর্তে। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নিহানকে।
এভাবে স্পর্শ করো না শেষ হয়ে যাবো!
নিহান মুচকি হেসে ইরাকে আরো কাছে টেনে দেয়ালে লাগানো সুইচ অফ করলো এক হাতে।
ইরাকে তার সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিলো নিহান!ইরা ও ভালোবাসার অতলে ডুব দিলো।আরো একবার পূর্ণতা পেলো ভালোবাসা!
.
ফুল স্প্রীডে ফ্যান ঘুরছে মাথার উপর!ইরা এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে।কাঁথা জড়ানো শরীরে! তাই হয়ত ঠান্ডা লাগে নি তেমন।নিহানের বুকের মধ্যে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে ইরা।অবাধ্য চুল গুলো এদিকে ওদিকে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে।
টিনের চালের ফাঁক দিয়ে মৃদু সূর্যের আলো এসে পড়েছে এই ছোট্ট ঘরটায়!নিহান আলতো করে ইরার মুখ থেকে চুল সরিয়ে চোখের পাতায় চুমু খেলো!ইরার চোখ জোড়া কেঁপে উঠল!
নিহান ভাবছে ইরার আগে তার ঘুমটা না ভাঙলে হয়ত তার আজ এই মিষ্টি সকাল আর মিষ্টি বউয়ের ঘুমন্ত মুখটা দেখাই হতো না!ইসস কি যে মিস করতো না..!
ইরার কপালের মাঝ বরাবর একটা চুমু খেয়ে উঠে পড়লো নিহান।
শরীরে কাপড় জড়িয়ে ছাদের কোণার ওয়াশরুমটার দিকে হাঁটা ধরল।
.

ইরার ঘুম ভাঙল সাড়ে আটটায়!উঠে আড়মোড়া দিয়ে ঘুমচোখে নিজের দিকে তাকিয়ে আবার কাথা জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখছে নিহান কোথায়!না ঘরে নেই।উঠে শাড়িটা ভালো করে পরে নিয়ে সিঁড়ি ধরে হাঁটা ধরল। দুতিন সিঁড়ি নামতেই দেখল নিহান তড়িঘড়ি করে উপরে উঠছে নিহান।ইরার পাশে এসে দাঁড়াতেই ইরা মাথা নুয়িয়ে ফেললো ইরা।যদিও নিহান তার বর তবুও খুব লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে ইরার।
নিহান তাড়া দিয়ে বলল যা ফ্রেশ হয়ে নে!নিচে সবাই খুঁজছে তোকে আমাকে।আমি তোর জামা কাপড় আনতেই নেমেছিলাম।
যা শাওয়ার নিয়ে চেঞ্জ করে নে।একসাথে নাস্তা করবো।বেরুতে হবে আবার।
কেন মাথা নুয়িয়েই জিজ্ঞেস করল ইরা।
এক সপ্তাহ পর আমাদের অনুষ্ঠান করবে।বিয়ের গায়ে হলুদ থেকে বউভাত সব!তাই শপিং এ যেতে হবে।
ইরা নিহানের কথা শুনে আবারও সারপ্রাইজড্ হয়ে গেলো।
খুশির ঝলক পুরো মুখে প্রকাশ পেলো তার।দ্রুত জামা কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

সবাই মিলে টেবিলে খেতে বসলে জায়গা হবে না তাই যে যার মত খাবার নিয়ে বসেছে।কেউ সোফায় কেউ টেবিলে কেউ ফ্লোরে।
বাড়িটা এখন বিয়ে বাড়ি বিয়ে বাড়ি লাগছে।ইরা বোনদের সাথে গল্প জুড়ে বসল।কিসের আর খাওয়া দাওয়া।অবন্তি শুধু বিবাহিত ওদের মধ্যে।হাসবেন্ড কাতার থাকে!আর এখন ইরাও বিবাহিত!
সবাই মিলে এমন আড্ডায় বসেছে যে নাস্তা করতে করতেই ১০ বাজিয়ে ফেলেছে।
সবাই যাবে না শপিং এ
ইরা নিহান এলিনা অহনা অবন্তি জিসান রাহুল।আর মামীর ভাই জাকির সাহেব!দাদী সবাইকে তাড়া দিলো বেলা থাকতে বেরুতে!সবাই রেডি হতে চলে গেলো!
.
বাহিরে দুটো গাড়ি ভাড়া করে আনা!সবাই একটাতে বসে গেলো।নিহান ড্রাইভ করছে পাশে জিসান।
আর পেছনে মেয়েরা।
আরেকটা শুধু জাকির মামা চালাচ্ছেন।ওটায় নিহানের বন্ধুরা যাবে তাই।
.
রাস্তার মোড় থেকে জোবায়ের রিপন আরো দুজন বন্ধু উঠে পড়লো গাড়িতে!
শান্ত ওর বাইক নিয়ে বেরিয়েছে।
সবার উদ্দেশ্য সিটি টাওয়ার শপিংমল!
শপিংমলে ডুকেই যে যার মত ড্রেস চয়েজ করতে শুরু করলো।ছেলেরা চলে গেলো বয়েস জোনে!
.

এলিনা প্রায় ১০ টা জামা দেখলো একটাও পছন্দ হচ্ছে না তার।সব সময় সবাই জামার রং নিয়ে ওকে টিচ করে ও কালো বলে।গায়ের রং কালো বলে নাকি ডিপ কালারের ড্রেস পড়লে বাজে দেখায়।যদিও কথাটা বাড়ির কিছু লোক আর ক্লাসের কিছু শয়তান মেয়েগুলো বলো তবুও খুব আঘাত লাগে এলিনার!কেন সে আরেকটু ফর্সা হলো না।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন তবে আরেকটু ফর্সা বানালে এমন কি হতো!
মনে মনে অনেক কথা ভেবে নিরাশ হয়ে পিছু ঘুরতেই কেউ একজন খুব সুন্দর রংয়ের একটা জামা ধরল এলিনার সামনে।জামার জন্য তার মুখ-বডি দেখা যাচ্ছে না।তবে খুব পছন্দ হয়েছে জামাটা তার।এলিনার হাতে জামাটা দিয়েই লোকটা হাওয়ার মত সরে গেলো।এলিনা জামাটা দেখে এতো খুশি হয়েছে যে জামার দিকে সব মনোযোগ ছিলো।সেকেন্ডের মধ্যে চলে গেলো লোকটা…
এলিনা এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো লোকটাকে।
পেলো না তবে জামাটা পেয়ে মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়ে মুখে হাসল!

চলবে_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here