স্পর্শ পর্ব -১৩+১৪

#স্পর্শ
#পর্ব_১৩+১৪
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

ইরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে নিহান বিছানা গুছিয়ে টেবিলের পর নাস্তা রেখে দিয়েচে।আলমারি থেকে ইরার কোন জামাটা বের করবে একহাত কোমরে রেখে তাই খুঁজে যাচ্ছে।
ইরা চুলে পেঁচানো টাওয়ালটা খুলে বারান্দায় মেলে দেয়।ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বললো কোথায় কি বেরোবো আমরা?
নিহান ছোট্ট করে উত্তর দিলো হুম।
তারপর একটা আকাশি থ্রীপিছ বের করে আলমারি আটকে ইরার দিকে ফিরতে ফিরতে বলল ইরা..
ইরার দিকে তাকিয়ে হা হয়ে রইলো নিহান।ঢোলা মেক্সি পড়া!চুল বেয়ে বেয়ে পানির ফোঁটা পরছে।এলোমেলো চুল!অসম্ভব স্নিগ্ধ লাগছে ইরাকে।নিহান জামাটা বিছানায় রেখে ইরার দিকে এগিয়ে গেলো।ইরার ডান গরম বা হাতটা রাখতেই ইরা চোখ বন্ধ করে নিলো।এক দৃষ্টিতে ইরাকে দেখছে নিহাম।হঠাৎ ইরা কেশে উঠল। আস্তে আস্তে সে কাশির পরিমান বেড়েই চলেছে।নিহান ভয় পেয়ে যায়।বারবার জিগ্যেস করছে ইরা কি হয়েছে তোর?তোর কি শরীর খারাপ করছে?ইরা এই ইরা..
এদিকে ইরা বারবার মুখে হাত দিয়ে কাশি থামাতে চেষ্টা করছে! আর বলছে তুমি চলে যাও নিহান ভাই!একটু বের হও!
আস্তে আস্তে ইরার শরীর বেশি খারাপ করছে।এদিকে নিহান ও ঘর থেকে বেরুচ্ছে না।ইরা উপায়ন্তর না পেয়ে নিহানের সামনেই ব্যাগ থেকে বের করে দু-তিনটে ঔষধ খেয়ে নিলো।কাশিটাও কমে এলো।আর শরীরও নেতিয়ে এলো ইরার।না পেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।নিহান সিউর হলো কেন ওরকম লাগছিলো ইরার।
নিহান আস্তে আস্তে গিয়ে ইরার পাশে বসে ওর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।
ইরার চোখ মেলে তাকিয়ে হকচকিয়ে গেলো।কি উত্তর দিবে এখন!
নিহান শান্ত গলায় বললো সবটা খুলে বল আমায়।ইরা এক লাফে উঠে নেমে দাঁড়ালো। একহাতে আরেক হাত কচলে বলল ক-ক-কি ব-ব-বলবো শুনি?
আমি সবটা জানি ইরা…বল আমায়!আমি সব ঠিক করে দিবো!
ইরা এবারও চুপ করে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।নিহান পেছন থেকে বলল বল না ইরা প্লিজ…
নিহানের ধরা গলায় বলা কথাটা কলিজায় গিয়ে আঘাত করলো ইরার!ইরা ঘুরে নিহানকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর চিৎকার করে কাঁদতে লাগল! নিহানও কিছু বলছে না শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে..কাঁদুক কাঁদলে হালকা লাগবে মনটা…

নিহানের ঘরের বেতের চেয়ারে পাশাপাশি বসে আছে ইরা নিহান!ইরা নিহানের কাঁধে মাথা রেখে প্রথম থেকে সবটা খুলে বলল নিহানকে।আসিফের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে মাদকাসক্ত হওয়া পর্যন্ত সবটা..!
নিহান কিচ্ছু বললো না শুধু নিরবে দুফোঁটা চোখের পানি ফেললো। এদিকে ইরা সবটা নিহানকে খুলে বলতে বলতেই কেঁদে ভাসিয়ে ফেলেছে।হিচকি উঠে গেছে পুরো দমে।নিহান ইরাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়।চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে কপালে চুমু খায়।সব ঠিক করে দিবো আমি!আর কাঁদিস না!চল..
কোথায়?
খেয়ে নিবি চল..
ইরাকে আলতো করে কোলে তুলে নেয় নিহান।ইরাও দুহাতে শক্ত করে নিহানের গলা জড়িয়ে ধরে আছে।ইরাকে গভীরভাবে দেখছে নিহান।

ইরার ঘরে এসে ইরাকে বিছানায় বসিয়ে দেয় নিহান।তারপর নিজে হাতে খাবার নিয়ে খায়িয়ে দিতে শুরু করে।ইরার বাচ্চা মেয়ের মতে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে।তারপশে নিহান।অপলক দৃষ্টিতে দেখছে তার ইরাটাকে!তার বউ!

খেতে খেতে ইরা বলল বাবা মাকে যে দেখলাম না..কই গেছে নিহান ভাই?
এতদিন পর নিহান ভাই ডাকটা শুনে পুলকিত হলো নিহান।খুব মিস করছে এতদিন এই ডাকটা।অথচ একসময় নিহান ভাই বললেই ওর রাগ উঠে যেতো!
নিহানের ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল!পরক্ষণেই মন খারাপ করে বললো তোর নানু মারা গেছেন!খালামনির খালা!
শুনেই ইন্না-লিল্লাহ পড়লো ইরা!
সেখানেই গেছে!ফিরতে কয়েকদিন লাগবে!
ওওহ কখন গেছে
কাল রাতে
ও আচ্ছা
ইরাকে পানি খায়িয়ে নিজেও খাবার খেয়ে নিলো!
তারপর বলল ডক্টরের কাছে যাবো।এই জামাটা পড়ে নে!আমিও রেডি হয়ে আসছি!ইরা শুধু মাথা নাড়ল!

২০ মিনিট পর নিহান ইরার ঘরে এসে দেখে ইরা রেডি হয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে!আয়নায় ইরাকে দেখে দুহাত ভাঁজ করে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালো নিহান।ইরা মুচকি হেসে চুলগুলো আটকে নিলো।ততক্ষণে ঘরে ডুকে গেছে নিহান!
ইরার নিহানের কাছে যেয়ে বলল জানো নিহান ভাই কাল পর্যন্তও তোমায় দেখলে আমার রাগ হতো!কাউকে দেখলেই আমার গা জ্বলে যেতো!কিন্তু কি অদ্ভুত দেখো কাল রাত থেকেই আমার আবার তোমার প্রতি মায়া হচ্ছে এভেন বিয়ের পর থেকে।
নিহান দুহাতে ইরার গাল ধরে বলল এ আল্লাহ তায়ালার রহমত!স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র বন্ধন অটুট করেছে।তাই মায়া মমতা ভালোবাসা বাড়িয়ে দিয়েছে।ইরা মাথা নিচু করে ফেললো।হয়ত লজ্জায়!
নিহান কানে কানে ফিসফিস করে বলল আমার বউটাকে দারুণ লাগছে!আয় কানের নিচে কালি লাগিয়ে দিই।ইরা মুখ তুলে বলল আহ নিহান ভাই এখন তো আমি তোমার বউ এখন ও কি তুই তুই করবে!
তা আমিও তো তোর স্বামী তুইও তো ভাই বলিস!স্বামীকে বুঝি ভাই ভাই বলে।
আবারও লজ্জা পেলো ইরা।এবার নিহানের বুকে মুখ লুকালো।।

হসপিটালের ওয়েটিং সীটে বসে আছে নিহান ইরা।আর দুজনের পরই ওর সিরিয়াল!অনেকসময় হলো বসে আছে।ডক্টর নাকি দেরী করে এসেছে তাই!
আস্তে আস্তে ইরার শরীর খারাপ করতে লাগলো।অনেক বেশি থরথর করে কাঁপতে লাগলো শরীর! ইরা খুলে বলল ওইসব হাবিজাবির কারনেই ওর এরকম হয়!ছাড়তেও পারছে না!কেমন কেমন যেন লাগে!
নিহান ইরার কথা বুঝে উঠে দুজনের আগেই জোড় করে কেবিনে নিয়ে গেলো ইরাকে।ডক্টরকে বললো ইমার্জেন্সি রোগী!এদিকে ইরার কাঁপুনির চোটে ভয় বেড়ে যাচ্ছে নিহানের!
ডক্টর চেকআপ করা শুরু করলো! সব সমস্যা নিহানই বললো।খুব ঘুছিয়ে বলেছে।ডক্টর পেসক্রিপশন লিখে ফী নিতেই বেরিয়ে এলো ইরাকে নিয়ে!
আর এক মিনিট ও দেরী করলো না! বাসার উদ্দেশ্য সিএনজিতে উঠে।ইরার শরীর নেতিয়ে গেছে!সব ভর ছেড়ে দিয়েছে একদম!

কোনোরকম বাসায় ফিরতেই ইরাকে কোলে করে ঘরে নিয়ে যায় নিহান।বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে পাশে বসে।
এমন সময় কল আসে নিহানের। ফোন বের করতেই ফোনের স্ক্রীনে জোবায়েরের নাম্বারটা ভেসে ওঠে।রিসিভ করতেই জোবায়ের বলল নিহান ইরার আইডিটা নষ্ট করে দে!ও যে জবের সাথে জড়িত তা নিয়ে পুলিশি ঝামেলা হচ্ছে! যেকোনো সময় লোকেশন ট্যাগ করে ইরাকেও নিয়ে যেতে পারে!
নিহান বলল আচ্ছ রাখছি!
ফোন রেখেই হন্তদন্ত হয়ে ইরার ফোন খুঁজতে থাকে নিহান।পেয়েও যায় এক সময়।ফোনটা খুলে সিম বের করে সিমটা বাড়িরে পেছনের পুকুরে ফেলে দেয়।ফোনটাকে গুঁড়ো করে ফেলে ভেঙে!সেগুলোও মাটিতে পুঁতে ফেলে।হাতমুষ্ঠি বদ্ধ করে বলে তোদের আমি ছাড়বো না! আমার ইরাকে কষ্ট দেয়ার পরিনাম কখনো ভালো হবেনা!

ঘরে এসে দেখে ইরা ঘুমাচ্ছে! হয়ত ক্লান্ত বলে।ইরার চোখ জোড়ায় চুমু খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে নিহা।বাহির থেকে তালা মেরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়! উদ্দেশ্য ফার্মেসি আর পুলিশ স্টেশন!

চলবে_

#স্পর্শ
#পর্ব_১৪
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

নিহান পুলিশ স্টেশনে ডুকতেই ওসি দাঁড়িয়ে বললো আরে নিহান যে..!কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি কেমন আছেন আংকেল?
এই তো ভালো!
রাহা কেমন আছে?
আছে বেশ ভালো.. তা কি মনে করে?
আসলে একটা জিডি করতে এসেছি!
ওসি মিজানুর রহমান অবাক হয়ে বললেন কোনো সিরিয়াস কিছু নিহান..আমায় খুলে বলতে পারো।
বসে বলি..
আরে হ্যা হ্যা বসো
নিহান মিজানুর সাহেবের মুখোমুখি চেয়ারে বসলো।
এবার বলো নিহান..
নিহান একটা লম্বা নিঃশ্বাস নেয়! তারপর বলা শুরু করে..
স্যার আমার স্ত্রী মেডিকেল কোচিং করছে!যদি এখন যে ঘটনার কথাটা বলবো তা ও আমার স্ত্রী হওয়ার পর ঘটে নি আগে ঘটেছে।আপনি তো ইরাকে চেনেন!ইকবাল সাহেবের মেয়ে!
জ্বি জ্বি ওকে তো আমি চিনিই।খুব ভাল সম্পর্ক আমার ইকবাল সাহেবের সাথে।এক সময় চেয়্যারম্যান ছিলো!
জ্বি..
তারপর..নিহান শুরু থেকে শেষটা সব খুলে বলে।
.
.
.
সবই তো শুনলাম নিহান কিন্তু বাবা প্রমাণ ছাড়া কিছু কি করতে পারবো?
তা আপনি ভাববেন না আংকেল প্রমাণ কালকের মধ্যে পেয়ে যাবেন।
জ্বি আচ্ছা তাহলে তোমার নাম্বার টা দিয়ে যাও।নিহান নাম্বার লিখে দিলো।আর ওসি সাথে সাথে একটা জিডি লিখে নিলো।
হ্যান্ডসেক করে থানা থেকে বেরিয়ে গেলো নিহান।
.
.
.
মিজানুর রহমানের মেয়ে রাহাকে এক বড় এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিলো নিহান।সে থেকেই তার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক!
.
.
.
নিহান ঔষধ আর খাবার কিনে বাড়ি ফিরে এলো।বাসায় ডুকে দরজা আটকেই কল দিলো শান্তকে।তারপর প্ল্যান সবটা বলে দিলো।শান্তর খুব নেতাদের সাথে চলাফেরা বেশি।তাই এ কাজ টা ও-ই ভালো পারবে।
.
.
.
ফোনটা রেখে এক বড়সড় দম নিয়ে ইরার ঘরে গেলো নিহান।মেয়েটা এখনো গুটিসুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে। টেবিলের উপর ফোন ওয়ালেট ঔষধ খাবারের পেকেট রেখে নিজের ঘরে চলে আসে।ফ্রেস হয়ে চেঞ্জ করে আবার ইরার ঘরে যায়।ইরার পাশে বসে আস্তে আস্তে ডাকে!বেশ কয়েকবার ডাকার পর চোখ খুলে বলল দুপুর হয়ে গেছে?
শেষ প্রায়। তিনটে বাজে..
ইরা উঠে নিহানের কোলে বসে যায়।নিহান তো হা..
কখনো এরকম করে নি ও…
ইরা নিহানের কোলে গুটিসুটি মেরে বসে বুকে মাথা রেখে বলে আমি কি স্বপ্ন দেখলাম জানো তো নিহান ভাই!
না বললে কি করে জানবো..মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল নিহান।
আচ্ছা একটা কথা বলতো তোমার #স্পর্শ গুলো আমার এতো ভালো কেনো লাগে??আর দেখলে তো আমি সুস্থ হয়ে গেছি।তুমি আমায় আরো আগে স্পর্শ করলে আমি আরো আগে সুস্থ হয়ে যেতাম।জানি না কেন খুব বিরক্তি লাগতো সব কিছু।আশেপাশে কারো কথা সহ্য হতো না।তীব্র মাথা যন্ত্রণা করতো..ভালো কথায়ও মেজাজ খারাপ হয়ে যেতো।
বুঝেছি কেনো এরকম হতো।দেখবি এখন তুই শারীরিক মানসিক ভাবে একদম সুস্থ হয়ে যাবি।সব ঠিক করে দিবো আমি তবে একটা কথা তোকে বলা হয় নি..
কি..
আসিফ তোর ক্লাসমেট না!ও তোদের দুবছর সিনিয়র!ও আশিকের ভাই!আশিকের কথা মনে আছে না তোর…
ইরা নিহানের বুক থেকে মাথা তুলে অবাক হয়ে তাকালো নিহানের দিকে।মুখে কিছু বললো না…
আর তুবা ওর গার্লফ্রেন্ড! ওদের কেউই তোর ক্লাসমেট না..
আমার কি আর মেডিকেলে পড়া হবে না নিহানভাই!
আজ তোর পরীক্ষা চলে গেছে..
কথাটা শুনে মনে হলো ইরার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।তার সব স্বপ্ন সাফল্য সব শেষ..চিৎকার করে কেঁদে ওঠে ইরা! নিহান কি বলে শান্তনা দিবে ভেবে পাচ্ছে না।
আমি আমি তো ভেবেছিলাম পরীক্ষাটা অন্তত দিতে পারবো নিহান ভাই..কি হয়ে গেলো এসব।আমার বোকামি আমার জীবনটাই শেষ করে দিলো বলেই চিৎকার করে কাঁদছে ইরা।অসৎ মানুষের সাথে মিশে জীবনে সব স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেছে.. অঝোরে কাঁদছে ইরা।
আর ঘুমে দেখা স্বপ্নটার কথা বলা হলো না!
.
.
.
.
বেশ অনেক সময় পর ইরাকে শান্ত করতে পারে নিহান।ওয়াশরুমে নিয়ে হাতমুখ ধুয়িয়ে দেয়।
বিছানায় বসিয়ে খাবারের প্লেট এনে ইরাকে মুখে তুলে খায়িয়ে দিচ্ছে।এমন সময় কল এলো নিহানের ফোনে।রিসিভ করে কানে রেখে বলল আসবো!তারপর কেটে দিলো।
ইরা
হু
রাতে এক জায়গায় নিয়ে যাবো
কোথায়
গোডাউনে
কেন
মজা দেখাতে
কি বলছো নিহান ভাই।কিছুই বুঝতে পারছি না
তুই বুঝবিও না।সারপ্রাইজ..
হু
আচ্ছা খেয়ে নে..
তুমিও খাও
হু!
নিহান ইরাকে খায়িয়ে দিয়ে ঠিক সময় ঔষধ খায়িয়ে দেয়।
.
.
.
.
.
বিকেলে নিহান ছাদে বসে আছে।ইরা চা নিয়ে এসে পাশে বসল।মুচকি হেসে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিলো নিহান।
দুজন চা খেতে খেতে কতশত গল্প করলো তা লিখে শেষ করা যাবে না!
গল্প করতে করতে এক সময় নিহানের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে ইরা।নিহান অপলক তাকিয়ে আছে। বুঝতে পেরেছে ঔষধের ইফেক্টের কারনে এত ঘুম!হুমম বেশ কয়েকদিন ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করলে সময়মতো ঔষধ খেলেই একদম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
ইরাকে কোলে তুলে নিতেই একটু নড়চড়ে উঠল।নিহান আস্তে আস্তে নিচে নেমে ঘরে এনে শুয়িয়ে দিলো।
.
.
.
.
.
.
রাত প্রায় ৯.৩০…
কলাপাতা রঙের শাড়ি পরা ইরা!পাশে নিহান হালকা সবুজ পাঞ্জাবি..ইরার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে আর ফুটপাত ধরে হাঁটছে। কিছুদূর হেঁটেই রিকশা নিলো…শুনশান রাস্তায় শা শা করে চলছে রিকশা..ব্যাটারি চালিত রিকশা হওয়ায় বাতাসের ঝাপটা বেশি…!
ইরাকে হালকা করে আঁকড়ে ধরে আছে নিহান।ইরার চোখে মুখে বিস্ময়..চারদিকে দোকানের বাতির আলোয় হালকা চারপাশ দেখা যায়।ইরা তো জানে না কোথায় যাচ্ছে ওরা।তবুও মুগ্ধ হয়ে দেখছে আশেপাশে।হালকা শীত পরেছে তাই তেমন মানুষজন নেই রাস্তাঘটে।শুনশান প্রায়।তার উপর রাত ৯.৩০..তবুও ভয় লাগছে না ইরার!
.
.
.
.
বিশাল গোডাউনের সামনে রিকশা থামল।নিহান নেমে হাত বাড়িয়ে দিতেই ইরা মুচকি হেসে ধরে নিলো সে-ই হাত।
ভাড়া মিটিয়ে হাঁটা ধরল চিকন সরু রাস্তা ধরে।
ইরা জিগ্যেস করলো কোথায় নিয়ে এলে।একটু ভয় পাচ্ছে বোধ হয়।
নিহান আশস্থ করে বলল আমি আছি তো চল ভেতরে।
.
.
.
গোডাউনের ভেতরে ডুকে ইরার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড়।পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বাঁধা আসিফ আর তুবা…ইরা দেখেই একবারে হা হয়ে গেলো একবার নিহানের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার ওদের দুজনের দিকে।দুজনের মুখেই ট্যাপ মারা।গোঙ্গানির শব্দ বেরুচ্ছে স্পষ্ট কথা না।
.
.
.
জোবায়ের দুপকেটে হাত রেখে ইরা-নিহানের পাশাপাশি এসে দাঁড়ালো! ভাবী..
ইরা চোখ তুলে হা হয়ে জোবায়ের দিকে তাকালো..
মনে করেন কেউ আপনাকে অকারনে মারলো বকলো আপনি কি করবেন বা আপনার ক্ষতি করলো..
ইরা নিহানের দিকে তাকিয়ে বলল ছেলে হলে নাক ফাটিয়ে ফেলবো ঘুষি মেরে মেরে আর মেয়ে হলে তেলাপোকা ছেড়ে দিবো আর চুলগুলো কেটে দিবো।
জোবায়ের ছোট করে বলল ওকে!
চন্দু যা ভাবী যা যা বলল নিয়ে আয়..
নিহান মুচকি মুচকি হাসছে..একটা চেয়ার টেনে বসল।আসিফ আর তুবার বাঁধা চেয়ারের পেছনে শান্ত দাঁড়িয়ে সাথে ইমন,রিফাত!আরো গোডাউনের দুজন ছেলে!
.
.
.
চন্দু ফিরে এলো কেঁচি আর একটা বক্স হাতে,..
জোবায়ের আবার ইরাকে প্রশ্ন করলো ভাবি তেলাপোকা ভয় পান।
মোটেই না…আঙুলে পেঁচানো শাড়িটা খুলে বলল!
নিহান শুধু মুচকি মুচকি হাসছে।
বক্সটা খুলে দিলো চন্দু!
ভাবি এটা আপনার পেয়ারের ডাইনি বান্ধবীর শরীরে ছেড়ে দিন।
এবার শুরু হলো তুবার গোঙানির শব্দ।না না বলছে শুধু..ইরাকে অনুরোধ করছে..ইরা নিহানের দিকে একবার তাকিয়ে জোবায়েরকে বলল ঠিক করেছেন ভাইয়া..ওকে আজ আমি..বলেই কোমড়ে আঁচল গুজে নিলো।তেলাপোকার বা হাত দিয়ে চিমটি দিয়ে নিয়ে তুবার শরীরে ছেড়ে দিলো।তুবা চিৎকার করছে।তবে শব্দ বের হচ্ছে না ট্যাপ মারা বলে..ইরা উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলল..দেখ কেমন মজা!

চলবে_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here