#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_13_14
13
নিঝুম দুপুরে এক ফালি রোদ্দুর আকাশ ভেদ করে পৃথিবীর বুকে পরছে।
শুন শান নীরবতা চলছে চারিদিকে । সবাই লাঞ্চ করতে ক্যান্টিনে গেছে। ফারাবির একটু লেট হয়ে গেছে। তাই বই রেখে দ্রুত গতিতে ছুটলো ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে।
ক্যাম্পাসে পৌছাতেই কোথা থেকে সাবিত এসে হাজির।
সাবিত কে দেখে ভরকে গেল ফারাবি। পরিস্থিতি সামলাতে ফারাবি মৃদু হাসলো।
সাবিত প্রসন্ন হেসে বলল
_ কেমন আছো ফারাবি?
_ জি স্যার ভালো।
_ ফারহান চৌধুরী কে হয় তোমার ?
কাল ঐ ভাবেই কেন ই বা টেনে নিয়ে গেল ?
সাবিতের কথায় ফারাবির মুখ টা ছোট হয়ে গেল। কি বলবে এখন ?
সত্যি টা তো আর বলা যাবে নাহহ ।
ফারাবি ফাঁকা ঢোক গিলে বলল
_ কাজিন । আর একটা ফাংশন ছিলো তাই নিয়ে যেতে আসছিলো।
সাবিত কথা টা বিশ্বাস করলো নাকি তা ফারাবির বোধগম্য হলো নাহ। তবে সাবিত সে প্রসঙ্গে আর কোনো কথা বলল নাহ।
লাজুক হেসে সাবিত বলল
_ একটা কথা বলার ছিলো তোমায়।
ফারাবির ভ্রু কুঁচকে গেল। সাবিত বুক ভরে শ্বাস নিয়ে গরগরে গলায় বলল
_ আই লাভ ইউ ফারাবি। উইল ইউ ম্যারি মি ?
সাবিতের কথায় ফারাবির চোখ রসগোল্লা হয়ে গেল।
ফারাবির ইচ্ছে করছে সাবিতের গালে ঠাস ঠাস করে কষিয়ে কয়েকটা চর বসিয়ে দিতে।
কিন্তু হায় সে উপায় কি আর আছে ? ইচ্ছে হলেই কি সব করা যায় ?
_ কিছু বলো ফারাবি । তুমি বললে আজ ই আমি আমার ফ্যামিলি নিয়ে তোমার বাসাতে যাবো।
ফারাবির চোখ কপালে উঠে গেল। ব্যাটা খাটাস বলে কি ?
ফারাবি মিনমিনে কন্ঠে বলল
_ আমি এই বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি নাহহ স্যার।
বাই
ফারাবি স্থান ত্যাগ করলে ও সাবিত পিছু ছাড়লো নাহহ।
বার বার রিকোয়েস্ট করছে যাতে ওর ভালোবাসা একসেপ্ট করে। ক্যাম্পাসে কেউ নেই দেখে ফারাবি দম ফেলল। এভাবে যদি কেউ দেখতো তাহলে স্যারের সাথে ছাত্রীর প্রেম রটিয়ে দিতো।
ইসসস কি হতো তখন।
ফারাবি ধৈর্য্য ধারণ করতে পারছে নাহহ আর।
চোখ দুটো রাগে ফেপে উঠেছে। সাবিতের দিকে তাকিয়ে ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলল
_ দেখুন মিস্টার সাবিত। আপনি আমার টিচার বই আর কিছু নাহহ।
আর আমি অলরেডি ফারাবি দমে গেল । লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ সরি স্যার । মাফ করবেন আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
সাবিত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে মৃদু হেসে বলল
_ সমস্যা নেই। আই থিংক তুমি পরিবার , কিংবা সমাজ কে ভয় পাচ্ছো।
ডোন্ট ওরি আই উইজ বি ম্যানেজ।
ফারাবি রগরগে কন্ঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাবিত চলে গেল।
ফারাবি ভারী নিশ্বাস ফেলল। ইসসস ফারহানের কথা টা শুনলেই ঠিক হতো। এখন কে জানে ফারহানের হাতে কত গুলো ভিটামিন খায় এই ব্যাটা ।
ফারাবি কপালে হাত দিয়ে দাঁড়ালো । চোখের সামনে ভেসে উঠলো ঝকঝকে নিউস পেপারের হেডলাইন আর টিভি চ্যানেল এর লাইভ নিউজ। ছাত্রী কে প্রপোজ করায় ছাত্রীর প্রেমিকের হাতে স্যার নিহত থুরি আহত।
ফারাবি নিজের মাথায় নিজেই বারি দিলো। কি সব ভেবে যাচ্ছে ওহহ । ফারহান কবে থেকে ওর প্রেমিক হলো ?
কিছু কথা মনে পরতেই ফারাবি তপ্ত শ্বাস ফেলল। ফারহান ছাড়বে নাহহ , কাউকে ছাড়বে নাহ।
*
ফাইল হাতে কাউচে বসে আছে ফারহান। প্রচন্ড কাজের চাঁপ তার মাথায়। সিঙ্গাপুর থেকে ইমিডিয়েটলি বিজনেস ট্রান্সফার করার কারনে এখন পুরো বছরের কাজ এক সাথে এসে পরেছে।
ফারহানের মাথা টা ধরে গেছে। এক কাপ কফির প্রয়োজন। সন্ধ্যা সাত টা বাজে। মেড রা এই সময়ে কে কোথায় আছে কে জানে।
ফারহান ব্যগ্র কন্ঠে ডাক দিলো
_ রিমি এই রিমি , এক কাপ কফি দিয়ে যাহহ নাহহ বোন।
_ পারবো না আমি। মুখে ফেস মাস্ক লাগিয়েছি। অন্য কাউকে বলো।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে রইলো।
রিমির রুম টাই কাছে ছিলো। আর কাকে বলবে এখন ?
ক্লান্তির শ্বাস ফেলল ফারহান। কাউচ থেকে উঠে গিয়ে করিডরে দিয়ে কিচেনে আসলো।
কিচেনে এসে ফারাবি কে দেখে সামান্য চমকালো।
ফারাবি কড়া করে বেশ যত্ন নিয়ে কফি বানাচ্ছে।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কিরে আজ চাঁদ কোন দিকে উঠেছে। গুনি ব্যাক্তির পদধুলি আমার বাড়িতে।
ফারহানের কথায় চমকে তাকায় ফারাবি।
ফারহান কে দেখে শুকনো ঢোক গিলে বলল
_ না মানে।
ফারহান সে দিকে পাত্তা না দিয়ে ফারাবির হাত থেকে কফির মগ টা নিয়ে নেয়।
ফারাবি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
_ কফি টা আমার জন্য বানিয়েছিলাম।
ফারহান কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে বলল
_ তো আমি খেতে পারি নাহ ?
_ আচ্ছা নিন।
বলেই ফারাবি কিচেন থেকে চলে যেতে নেয়।
ফারহান পেছন থেকে হেঁচকা টান মেরে ফারাবি কে বাহু ডোরে আবদ্ধ করে নেয়।
আচমকা এমন হওয়াতে ফারাবি ভয় পেয়ে যায়।
ফারহান মৃদু হেসে কথায় ছন্দে তুলে বলল
_ তুই চাইলে শেয়ার করতে পারিস।
_ ছাড়ুন। কেউ আসলে ঝামেলা হবে।
_ তো ?
_ ছাড়ুন প্লিজ।
ফারাবি কে ছাড়ার বদলে আর ও কাছে টেনে নেয় ফারহান।
ঠোঁটে রহস্যময় হাসি টানিয়ে বলল
_ কাছে আসলে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিছ। ইসস কতো টা ঝামেলা নিতে হবে আমায় কে জানে।
ফারাবির চিত্ত কেঁপে উঠে। ফারহান স্পষ্ট অনুভব করে ফারাবির গতিশীল হার্ট বিট।
ফারাবি হাঁসফাঁস করতে লাগলো। ফারহান তার উষ্ণ ঠোঁট ফারাবির নাকে ছুঁইয়ে দেয়।
ফারাবির শরীর থরথর করে কেঁপে উঠে।
ফারহান ফারাবি কে ছেড়ে দিয়ে রহস্য হাসে।
ফারাবি ছিটকে দু ফিট দূরে সরে যায়। ফারহান মোহনীয় হেসে আরেক টা মগ নিয়ে কফি টা ভাগ করে নেয়।
একটা মগ বাড়িয়ে দেয় ফারাবির হাতে।
ফারাবি কাঁপা কাঁপা হাতে কফি নেয়।
ফারহান মৃদু হেসে বলে
_ টেস্ট ইট।
ফারাবি বাধ্য মেয়ের মতো কফি কাপে চুমুক দেয়।ফারহান মোহনীয় হেসে ঝটকা মেরে কফির মগ নিয়ে নেয়।
আকস্মিক ঘটনায় ফারাবি বোকা বনে যায়।
ফারহান রসিকতা করে বলে
_ মনে হয়েছিল কফি তে চিনির পরিমান কম হবে তাই চিনি টা বাড়িয়ে নিলাম।
ফারাবি ভ্যবলার মতো ফারহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান চলে যেতেই ফারহানের শেষ কথা টা নিয়ে ভাবতে লাগলো।
কয়েক সেকেন্ড পর যখন বুঝতে পারলো লজ্জায় জুবুথুবু হয়ে পরলো।
ইসস ফারহান লাগামহীন কথা বলে সবসময় । এই লোকটা কখনোই কি ঠিক হবে নাহহ।
ফারহান উপর থেকে ফারাবি কে দেখছিলো।
ফারাবির লজ্জা মাখা মুখ টা সেখান থেকে ও ওর চোখ এড়ালো না।
স্মিত হেসে ফারহান বলল
_ কফি টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
ফারাবি শিউরে উঠলো। উপরে তাকিয়ে দেখলো ফারহান মিটমিট করে হাসছে। দ্রুত কফি কাপ হাতে নিয়ে ফারাবি স্থান ত্যাগ করলো।
ফারহান চলে যেতেই তপ্ত শ্বাস ফেলে রিমির রুমে চলে আসলো।
রিমির মাথায় গাট্টা মেরে বলল
_ রাবিস গাল কখনো আমাকে তোর সো কলড ফেস মাস্ক লাগিয়ে দেওয়ার জন্য ডাকবি নাহহ আর।
রিমি চোখ থেকে শষার স্লাইস হাতে নিয়ে বলল
_ ওমা তোর আবার কি হলো। কফি বানাতে গিয়ে ঝাঁঝ হয়ে ফিরে এলি যে।
ফারাবি বিরক্তি নিয়ে বলল
_ কে জানে তোর ঐ হনুমান মার্কা ভাই কিচেনে গিয়ে আমার কফির দিকে হাত বাড়াবে।
_ ওমা ভাইয়া আবার তোর কফির দিকে হাত বাড়ালো কেন। অবশ্য আমাকে বলেছিলো কফি দিয়ে যেতে। আমি সাফ সাফ মানা করে দিয়েছি।
ইসসস তোর কফি টা নিয়ে গেল নাহহ ?
ফারাবি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
_ নাহহ হাফ নিয়ে গেছে। আর হাফ দিয়ে গেছে , কে জানে ওনার সাথে আমার কি শত্রু তা।
রিমি তপ্ত শ্বাস ফেলল। ওর কেন জানি মনে হয় ওর ভাই ফারাবি কে লাইক করে। যদি ও কখনো সেরকম কিছু চোখে পরে নি। ফারাবি ওর ভাবি হলে তো জমেই যাবে।
রিমি খুশি তে গদগদ করতে লাগলো।
ফারাবি ভ্রু কুঁচকে শান্ত স্বরে বলল
_ তোর আবার কি হলো ?
রিমি রহস্য হাসলো। ফারাবি ভরকে গেল , রিমি ও তার ভাইয়ের মতো দিন কে দিন বিদঘুটে হয়ে যাচ্ছে।
ভাই বোন মিলে ওকে পাগল করে ই ছাড়বে।
*
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই এলাহি কান্ড হয়ে গেছে।
সাবিত তার ফ্যামিলি কে নিয়ে এসেছে বিয়ের প্রস্তাব দিতে।
ফারহান আর রিফাত তখন একটা ফাইল নিয়ে ডয়িং রুমেই বসে ছিলো।
ফারহান কে দেখেই সাবিত সামান্য চুপসে গিয়েছিলো।
তবে সাবিতের বাবা মা বাসার সবাই কে ফারাবির আর সাবিতের বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
ফারাবির বাবা হো হো করে হেসে বলেছেন তার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
বছর তিনেক আগেই নাকি বিয়ে ঠিক করেছেন রিকের সাথে ।
যা শুনেই ফারহানের রাগ হয় কিন্তু কিছু বলে নাহহ। ফারহান সিঙ্গাপুর যাওয়ার পর ই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা জানে ফারহান।
তবে তার জান কে যে কারো হতে দিবে না ওহহ।
সাবিতের বাবা মা লজ্জা নিয়ে বাসায় ফিরে। অবশ্য সাবিতের মুখ দেখার মতো হয়েছিলো।
ফারহান বলে আসার পর ও সাবিত ছেঁছরার মতো কাজ করেছে।
ফারাবি ছাঁদের কোনে টুল নিয়ে বসে আছে।
মন টা প্রচন্ড খারাপ , সকালে সাবিতের কান্ডে বিরক্ত হয়েছে ওহ।
কি রকম পরিস্থিতি টাই না তৈরি হয়েছিলো ।
তার উপর ওর বাবা জোর গলায় বলেছে রিকের সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
গালে হাত দিয়ে ফারহানের কথা ভাবছে ওহহ।
কি হবে এখন ?
সবাই কিভাবে নিবে সমস্ত বিষয় টা। ফারাবির চোখের কোন বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরলো ।
পরিস্থিতি ভয়াভয় এভাবে আর নেওয়া যাচ্ছে নাহহ।
এতো এতো টেনশনে ফারাবির হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
গানের গুন গুন আওয়াজে ফিরে তাকায় ফারাবি।
ফারহান কে দেখে সামান্য চমকে যায়। চোখের পানি মুছে নিয়ে টুল থেকে উঠে দাঁড়ায়।
ফারহান পকেটে হাত গুঁজে বেশ স্টাইল করে দাঁড়িয়ে আছে। এমন ভাব ধরছে যেন মনে খুব সুখ লেগেছে।
ফারহানের এমন ভাবে ফারাবির গা পিত্তি জ্বলে উঠলো।
ফারহান বুক ভরা শ্বাস নিলো। সূর্য প্রখর ভাবে কিরন ছড়াচ্ছে। আলো তে মোহনীয় পরিবেশ।
সাথে মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে চিলের দল।
গোল গোল চক্কর খেলছে ওরা যা দেখে ফারাবির আর বেশি রাগ হচ্ছে।
মনের এমন অবস্থা তে কারো সুখ সুখ অনুভূতি ই ওর সহ্য হচ্ছে নাহহ।
বাঁচার জন্য শান্তি প্রয়োজন যা ওহ অনুভব করতে পারছে না ।
ফারহান আকাশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ফারাবির দিকে তাকালো।
ফারাবির দৃষ্টি ছাঁদের সাইটে রাখা পিস ফুলের দিকে।
সাদা শুভ্র পিস ফুলের গাছটা ফুলে পরিপূর্ণ । কিন্তু ফারাবির দৃষ্টি মৃত , মনে হচ্ছে সাদা পিসের দিকে তাকিয়ে এক ফোঁটা সুখ খুঁজে যাচ্ছে।
ফারাবি কে ভালো করে অবলেকন করে ফারহান রগারগা কন্ঠে তাচ্ছিল্যর সুর করে বলল
_ কিরে মন খারাপ নাকি ?
ফারাবি মাথা ঝাঁকালো, অর্থাৎ নাহ। ফারহান সুপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ কতোক্ষন কেঁদেছিস ?
ফারাবি চমকে উঠলো। ফারহান কি করে জানলো ওহ কেঁদেছে ?
তাচ্ছিল্য কন্ঠে ফারহান বলল
_ আমার থেকে লুকাতে পারবি না তুই ?
কেঁদে বুক ভাসিয়েছিস কেন ?
ফারাবি কিছু বলল নাহহ। চুপচাপ নিচের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
ফারহান গরগরে গলায় ক্ষীপ্ত হয়ে নিচু গলাতেই বলল
_ হাউ কুড ইউ ? কিছু বলছিস না কেন ? চোখের কোন থেকে এক ফোঁটা পানি যেন না পরে।
ফারাবি মৃদু কেঁপে উঠলো। চোখ থেকে অবাধ্য হয়ে পানি পরছে। ফারহান হাত মুষ্টি বদ্ধ করলো। এই মেয়েটা কেন যে বুঝতে চায় না ,ওর চোখের পানি সুচের মতো গিয়ে কলিজায় বিঁধে।
ফারাবি কে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো ফারহান।
ফারাবি ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। কেন কাঁদছে জানে নাহহ ওহহ ।
ফারাবির মাথায় হাত বুলিয়ে ফারহান বলল
_ I am sry. Please don’t cry.
Try to understand Jan.
তোর চোখ থেকে পানি ঝরলে আমি এলোমেলো হয়ে যাই।
একদম কাঁদবি না বুঝেছিস। একটা ফুলের টোকা ও পেতে দিবো না তোকে।
আগলে রাখবো আই প্রমিস।
ফারাবির চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে।
বুক টা হু হু করে উঠছে , মন টা পুরছে। ফারহান কেন ওকে এতো টা আগলে রাখে ?
কেন এতো কেয়ার করে? ও তো চায় নি এতো শত কেয়ার। তাহলে কেন আসলো ওর জীবনে।এসেছিলো ই যখন তাহলে কেন ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলো।
কেন ? কেন ? কেন ?
এতো শত কেন এর উত্তর কে দিবে ওকে।
ফারহান ফারাবি কে আলগা করে দিতেই ফারাবি নিজে কে ছাড়িয়ে নিলো।
ফারহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে মুখ চেপে কান্না আটকিয়ে ছাঁদ থেকে দৌড়ে নিচে চলে গেল।
ফারাবির যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো ফারহান।
#Part_14
*
মধ্য রাত্রী আকাশে বড় করে চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলো তে ঝিক ঝিক করছে চারিপাশ। ফারাবির চোখে ঘুম নেই। চোখের পাতা ভিজে গেছে নোনা জলে।
ফারহান কে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। ফারহান কেন ছুটে চলে আসছে নাহহ ?
কেন এসে বলছে না আমি ঘুমোতে পারি না একটু ঘুম পারিয়ে দে।
চোখের কোন বেয়ে অনড়গল অশ্রু গড়াচ্ছে। জানালার গ্রিল থেকে মাথা সরিয়ে নিলো ওহহ। কপালে দাগ বসে গেছে , চোখের নিচ টা কালচে দেখাচ্ছে , চুল গুলো ও উসকো খুসকো। ফারাবি স্মিত হাসলো , বেড থেকে উঠে গিয়ে কাবাডের দিকে গেল।
কাবাড টা খুলে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
কিছুক্ষন পর ডয়ার খুলে একটা বক্স বের করলো।
বক্স টা হাতে নিয়ে কাবাড লক না করেই এলো মেলো পায়ে ব্যালকনিতে চলে আসলো।
চাঁদের পূর্ন আলো পরেছে খোলা ব্যলকনি টা তে।
জোনাকি পোকা রা মৃদু ছন্দে তাল মিলিয়ে নিভু নিভু আলোতে জ্বলে যাচ্ছে ।
সারি সারি রেনট্রি গাছ গুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু নিশাচর থেমে থেমে হাক ছুড়ছে।
নিশাচর দের ডাক অশরীরীর মতো শোনাচ্ছে। ফারাবির লোম কূপ জেগে উঠলো কিন্তু ফারাবি সে দিকে কোনো পাত্তা দিলো নাহহ।
ছোট্ট সেন্টি টেবিল টা থেকে চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো।
বক্স টা বুকে জড়িয়ে ধরে টেবিলে মাথা গুঁজে দিলো।
চোখ দুটো ঘুমোতে চায় কিন্তু ঘুম নেই।
জ্বালা করছে খুব , ফারাবি উঠে গিয়ে মুখে চোখে পানি দিয়ে আসলো।
ভাবলেশহীনভাবে হেটে আবার ব্যলকনিতে আসলো। হঠাৎ করেই সা সা করে বাতাস বইতে লাগলো।
নিশাচরের হাঁক গাঢ় হতে লাগলো ।
বাগানে থাকা গাছের পাতা গুলো যেন নিশাচরের কর্কশ কন্ঠের সাথে তাল মিলিয়ে হেসে যাচ্ছে।
ফারাবি মৃত চোখে বাইরের দিকে তাকালো। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে।
ফারাবি অগোচরেই কেঁদে উঠলো। বৃষ্টি কেন হচ্ছে নাহ , কেন এখনো বাজ পরছে না ?
ও কাঁদবে চিৎকার করে কাঁদবে। মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে কেঁদে যাবে ওহহ।
ফারাবি চোখ মুছে নিলো , কিন্তু মুহূর্তেই তা আবার নোনা জ্বলে ভরে উঠলো।
লাগামহীন অশ্রু কনা গুলো গাল বেয়ে টপটপ করে পরতে লাগলো।
বক্স টা হাতে নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে বক্স টা খুলল।
ফারহানের দেওয়া কাপল পুতুল টা হাতে নিয়ে লোলুপ দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো।
বুকে জড়িয়ে নিলো , বার বার চুমু খেল। উদ্ভান্টের মতো করতে লাগলো , ফারাবির অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখে দুটো নিশাচর হাঁক ছাড়া থামিয়ে দিলো।
ফারাবি কাপল পুতুল টাকে বক্স এ ঢুকিয়ে আবার বের করে নিলো।
শক্ত করে ছোট্ট পতুল দুটো কে বুকে জড়িয়ে নিলো।
মাথা টা টেবিলে এলিয়ে দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ঝুম ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো , আকাশের মেঘ গুলো গর্জন তুলে দিলো।
ফারাবি একি ভঙ্গিতে বসে রইলো ।
মেঘের গর্জনে কোন হেলদোল হলো না তার।
মৃত দৃষ্টিতে ফ্যাল করে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
*
কাল রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। যার কারনে পরিবেশ শুনশান নীরব হয়ে আছে । ভোর বেলাতে উঠে এক্সারসাইজ করা ফারহানের অভ্যাস। তবে আজ এক্সারসাইজ করলো নাহহ। মন টা কেমন যেন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ফারহান তপ্ত শ্বাস ফেললো , রিফাত কে নিয়ে বিজনেস এর কাজে কুমিল্লা যাবে আজ।
কুমিল্লায় একটা এনজিও করার ইচ্ছা আছে। যেখান থেকে এতিম টিনেজার রা পড়াশোনা করতে পারবে।
যার সম্পূর্ণ খরচ ফারহানের কোম্পানি চালাবে।
একটা সাদা শার্ট সাথে ব্লু কোর্ট আর ডেনিম এর ব্লু প্যান্ট পরে রেডি হয়ে নিলো ফারহান।
হাত ঘড়ি পরতে পরতে নিচে নেমে আসলো। ফারহানের মা কিঞ্চিত চমকানো গলাতে বললেন
_ কিরে এতো সকালে কোথায় যাবি ?
_ রিফাত কে নিয়ে কুমিল্লা যাবো একটু। কাজ আছে
_ ওহহ আচ্ছা বস আমি নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি।
_ না আম্মু রাস্তা থেকে খেয়ে নিবো।
_ সেকি কথা খেয়ে যাহহহ , না খেয়ে কোথাও যেতে নেই বাবা।
_ কিছু হবে না আম্মু , যাচ্ছি আমি। রাতে এসে লাঞ্চ করবো গরম গরম খিচুড়ি রান্না করো তো।
ছেলের কথাতে মৃদু হাসলেন রোমা চৌধুরী।
ছেলে টা বৃষ্টির দিন হলেই বলতো খিচুড়ি রান্না করতে।
কিন্তু পনের বছর হতে না হতে কেমন যেন পাল্টে গেল। রাগ টা বরাবর ই ছিলো, তবে তা গলগল করে বেড়ে গেল।
একরোখা, বদমেজাজি, প্রখর দৃষ্টি সম্পূর্ণ হলো।
তবে আজ আবার আগের মতো আবদার করলো ভাবতেই রোমা চৌধুরীর চোখ ছলছল করে উঠলো।
ফারহান হেলেদুলে ফারাবি দের বাসাতে ঢুকলো।
বাগানের দিক টা যেতে চেয়ে ও গেল নাহহ।
লম্বা করে দম নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকলো।
ফারাবির মা ডাইনিং গোছাচ্ছিলেন। ফারহান কে দেখে প্রসন্ন হাসলেন। এগিয়ে এসে মৃদু স্বরে বললেন
_ মাশআল্লাহ। আমাদের ফারহান কে দেখতে তো বেশ লাগছে। তা কোথায় যাওয়া হচ্ছে এই লুক নিয়ে ?
ফারহান সামান্য হাসলো। ধীর কন্ঠে গরগর করে বলল
_ লুক তো কতো ই নিলাম কারো চোখে পরি না তো কাকি। একটু কুমিল্লা যাবো রিফাত কে নিয়ে।
রিফাতের মা রান্না ঘর থেকে এগিয়ে আসলেন।
ফারহান কে দেখে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে হাসলেন।
বরাবর ই ফারহান কে সবাই পছন্দ করে। তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পূর্ন ফারহান সবার চোখের মনি। ফারহানের সব কথাতেই সবাই হ্যাঁ মেলায়।
ফারহান হালকা হেসে বড় কাকি বলে এগিয়ে গেল।
রিফাতের মা হালকা হেসে বলল
_ যাচ্ছিস তো ভালো কথা নাস্তা করিস নি নিশ্চয়ই?
ফারহান দাঁত কেলালো। রিফাতের মা ফারহানের কান টেনে বলল
_ বস , সময়ের দোহাই দিবি নাহহ। কুম্ভকর্ন টা ঘুমুচ্ছে, আমি তদের যাওয়ার আগেই নাস্তা বানিয়ে ফেলবো।
ফারহান লম্বা হেসে সম্মতি জানালো।
তারপর সিঁড়ি বেয়ে রিফাতের রুমে চলে আসলো।
রিফাত কে টেনে হেঁচরে বাথরুমে ঢুকিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
রিমোট নিয়ে টিভি অন করতে যাবে ওমনি করে ফারাবির মায়ের চিৎকার শুনতে পায়।
ফারহান দৌড়ে সে দিকে যায়। আওয়াজ টা ফারাবির ঘরের দিক থেকেই আসছে। ফারহানের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠে।
ফারাবির রুমের কাছে গিয়ে দেখে ফারাবির মা দরজা ধাক্কাচ্ছেন।
ফারহান দরজায় আঘাত করে কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায় নাহহ।
মিসেস রহমান কেঁদে নিজের,,যাচ্ছে তাই অবস্থা করেছেন। রিফাতের মা ও চেঁচামেচি শুনে, এসে হাজির। ফারহান ব্যগ্র কন্ঠে বলল
_ কাকি লকের ডুবলিকেট চাবি টা নিয়ে আসো।
ফারাবির মা ছুটে গেলেন।
রিফাত এতো আওয়াজ শুনে হন্তদন্ত হয়ে আসে।
ফারহান চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে।
মাথা টা পুরো হ্যাং মেরে গেছে। রিফাতের মশ্রিন কপালে দুটো মোটা ভাঁজ পরে গেল।
ফারাবির মা চাবি নিয়ে আসতেই লক খুলে ভেতরে ঢুকলো সবাই।
রুমের চারাদিকে চোখ বুলিয়ে ও কোনো জনমানবের অস্তিত্ব খুঁজে পেল না।
ফারহান থরথর করে ঘামতে লাগলো।
ব্যলকনির দরজা খোলা দেখেই ছুটে সে দিকে গেল।
ব্যলকনিতে এসে দেখলো ফারাবি টেবিলের উপর মাথা গুঁজে শুইয়ে আছে।
ফারহান বুক ভরা শ্বাস নিলো। মুহূর্তেই মাথায় খেলে গেল এতো চেঁচামেচি কেন শুনলো না ফারাবি ?
ছুটে ফারাবির কাছে গেল। ফারাবির মাথায় হাত রাখতেই আঁতকে উঠলো। পুরো শরীর ঠান্ডা বরফ হয়ে আছে। ফারহানের বুক কেঁপে উঠলো। হাতের পালস চেক করে দেখলো পালস রেট হাই।
ফারাবির বাহু ধরে সোজা করতে যেতেই ফারাবির জামা ভেজা অনুভব হলো।
পালস আবার চেক করে দেখলো অজ্ঞান হয়ে গেছে।
ফারহান চেচিয়ে সবাই কে ডাকলো।
সবাই ব্যলকনিতে এসে ফারাবি কে দেখে হুমরি খেয়ে পরলো।
ফারহান চেঁচিয়ে বলল
_ রিফাত,,, ভাইয়ার হসপিটালে কল দে ইমিডিয়েটলি এমবুলেন্স ডাক।
আর ভাইয়া এখনো হসপিটালে যায় নি তাড়াতাড়ি ডাক।
রিফাত মাথা ঝাকিয়ে দৌড়ে গেল।
ফারহান মাথায় হাত দিয়ে চুল খামচে ধরলো।
কাল সারারাত ভিজেছে ফারাবি। এক পর্যায়ে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে। বৃষ্টি ও থেমে যায় আর গায়ের কাপড় গায়েই অর্ধেক শুকিয়ে যায়।
ফারাবির মা আর বড় মা কান্না জুড়ে দিয়েছেন।
ফারহানের হাত থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
ফারাবি কে চেয়ার থেকে উঠিয়ে নিয়ে রুমে নিয়ে আসলো।
ফারাবির মা ছুটে গেলেন পানি আনতে। আর রিফাতের মা গেলেন ফারাবির আব্বু আর বড় আব্বু কে ফোন দিতে।
ফারাবির হাত ধরতে যেতেই ফারহান তার দেওয়া পুতুল টা দেখতে পেল।
আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ফারাবি। ছলছল করে উঠলো ফারহানের দু চোখ। ফারাবির থেকে পুতুল টা নিয়ে ফারাবির দু হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে নিলো।
বুক টা ধিম ধিম করছে। ফারাবির মা পানি আনতেই ফারাবির গায়ে ছিটিয়ে দিলো।
ফারাবির জ্ঞান ফিরলো নাহহ, ফারহানের বুক টা কেঁপে উঠলো।
ফারাবির ভাইরাস জ্বর আছে , যা ফারাবির জীবন সংকট ঘটাতে পারে।
রিফাত সহ ফারহানের বাসার সবাই হুরমুরিয়ে রুমে ঢুকলো।
ফারহান এক কোনে গিয়ে দাড়িয়ে পরলো।
বুক টা কেমন খা খা করছে , মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতেই ওর চোখ দুটো ঘোলা হয়ে উঠলো।
রাফাজ ফারাবি কে চেক করে বলল
_ ওকে ইমিডিয়েটলি হসপিটালে এডমিট করাতে হবে।
জ্বর এসে পরেছে , ওর সেই ভাইরাস জ্বর টা আঘাত হানতে পারে।
ফারহান ছুটে এসে বলল
_ ভাইয়া দেখ তো পানির ছিটে তে ও ওর জ্ঞান কেন ফিরছে নাহহ ?
রাফাজ কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকালো। আর ও একবার চেক করে বলল
_ মাই গড। ওর নিশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে।
আমি হসপিটালে গিয়ে কেবিন রেডি করছি দ্রুত ওকে নিয়ে আয়।
ফারহানের বুক কেঁপে উঠলো। রিফাত ও রাফাজের সাথে গেলো।
সবাই কেঁদে যাচ্ছে, ফারহানের শ্বাস যেন আটকে যাচ্ছে।পাগল পাগল মনে হচ্ছে নিজেকে। চোখের কোন বেয়ে পরা পানি টুকু মুছে নিয়ে কাঁপা স্বরে ফারহান বলল
_ ওকে কেউ চেন্সজ করাও । ভেজা কাপড় গাঁয়ে শুকিয়ে গেছে।
ফারহান বাইরে চলে আসলো । বুক টা ধুকপুক করছে শরীর টা কাঁপছে।
পাগল পাগল মনে হচ্ছে নিজেকে।
এমবুলেন্স আসতেই ফারাবি কে কোলে করে নিয়ে নেমে গেল ফারহান।
মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে ফারাবির হাত দুটো বুকে জাপটে ধরলো ।
বাকি সবাই পার্সোনাল কার করে আসছে। এমবুলেন্স এ থাকলে কেঁদে অবস্থা আরোও খারাপ করে ফেলতো ।
ফারহানের চোখ থেকে পানি পরতে লাগলো।
ফারাবির ফ্যাকাসে মুখের দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো ওহ।
ফারাবির চোখে মুখে অজস্র চুমু দিতে দিতে বলল
_ I can’t live without you Jan.
কেন করলি এমনটা ?
মেরে ফেল না আমায়। তোর কিছু হলে আই সয়ার আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।তোকে ছাড়া সব কিছু মূল্যহীন। তুই আমার কাছে ফিরে আয় জান।ফিরে আয়।
নিজে কে অসহায় লাগছে খুব। দেখ বুকটা জ্বলে যাচ্ছে। তোকে হারাতে পারবো না আমি । যে কোনো মূল্যে তোকে যে আমার লাগবেই জান। তুই ছাড়া এ দেহে প্রান নাই থাক। মৃত হয়ে যাক সব।