স্বপ্নের প্রেয়সী ১৫+১৬

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_15
#post_time_রাত_12_24

হসপিটালের ওয়েটিং চেয়ারে বসে আছে ফারাবি ও ফারহানের পুরো ফ্যামিলি।
তিন ঘন্টা হয়ে গেল , এখনো ফারাবির জ্ঞান ফিরে নি।
বৃষ্টির পানিতে কয়েক ঘন্টা ভেজার কারনে খানিকটা পানি ফুসফুসে চলে গেছে।
আর ছোট বেলার সেই ভাইরাস জ্বর টা ও জেকে বসেছে।
ছলছল দৃষ্টি তে হসপিটালের শেষ করিডোরে বসে আছে ফারহান।
বুকের জ্বালা টা কিছুতেই কমছে না। সকলের অগোচরে পাগলামি করেছে হাজার বার। নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করেছে ইচ্ছে মতো।
কিন্তু বুক টা শান্তি পাচ্ছে না।
চোখ থেকে গড়িয়ে পরছে অশ্রু কনা।
ভেতর থেকে বের হচ্ছে হৃদয়দহন । সব কিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।

রাফাজ কেবিন থেকে বের হতেই সবাই ওয়েটিং চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো।
মাস্ক খুলে রাফাজ বলল
_ এখনো পূর্ন জ্ঞান ফিরেনি। ফুসফুসে পানি জমে গিয়েছিল।
রেস্ট প্রয়োজন তাই ইনজেকশন পুস করে দিয়েছি।
তবে ফুল রেস্ট এ থাকতে হবে ওকে।

ফারহান করিডোর থেকে এগিয়ে এলো।
ফারাবির গায়ে ইনজেকশন পুস করা হয়েছে শুনে খুব রাগ হলো।
মেয়েটার গাঁয়ে একটা সুচ ও ফুটতে দিবে না বলেছিলো।
পারলো না নিজের কথা রাখতে।

এলোমেলো পায়ে কেবিনের দিকে চলে গেল ফারহান ।
এখন কেবিনে ঢোকা নিষেধ ছিলো ।নার্স সামনে এসে ফারহান কে দেখে কিছু বলতে পারলো না।
ফারহান কে দেখেই কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।
ধীর পায়ে বেডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো ফারহান।
হসপিটালের ড্রেস পরা ফারাবি কে দেখেই বুক টা হু হু করে কেঁদে উঠলো।
ফারাবির হাতে ক্যানেলা লাগানো। আলতো হাতে ফারাবির হাত টা মুঠো করে নিয়ে সহস্র বার চুমু খেল।
বাচ্চা দের মতো করে আধো বুলিতে বলল
_ আই মিস ইউ জান। খুব মিস করছি তোকে , একদম ই ভালো লাগছে না আমার।
আমি তোর কতো কাছে চলে এসেছি তুই কেন ভয় পেয়ে বলছিস না ছাড়ুন প্লিজ। কেন কেঁপে কেঁপে তাকাচ্ছিস না। যন্ত্রণা দিচ্ছিস আমায় ?
কেন একটি বার কথা বলছিস না ?
আমাকে মেরে ফেলতে চাস তুই ? আমি তো কবেই মরে গেছি।
তোকে নিয়ে আমার সমস্ত স্বপ্ন , তোকে ছাড়া কি করে থাকবো আমি ?

ফারহানের দু চোখের নোনা জল ফারাবির হাতে টপটপ করে পরতে লাগলো।
রগচটা, কঠিন মনের মানুষ টা ও আজ একদম ভেঙে গেছে।
চুল গুলো সব এলো মেলো হয়ে আছে । শার্টের বোতাম গুলো অর্ধ খুলে আছে।
কোর্ট টায় ভাঁজ পরে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে ভদ্র পাগল , যার পোশাক আশাক তো ঠিক আছে তবে সব কিছু ই এলো মেলো।
ফারাবির কপালে গভীর ভাবে চুমু খেয়ে ফারহান চলে আসলো।
মেয়েটা কে বুকে জড়িয়ে নিতে পারলে বুকের যন্ত্রণা টা লাঘব হতো।

এলোমেলো পায়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেল।
গাড়ি থাকলে ও গাড়ি নিলো না। পায়ি হেঁটে ই ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে লাগলো।
চোখ দুটো মৃত , যেন কোনো অনুভূতি নেই।
চোখের পানি গুলো শুকিয়ে গেছে বেশ অনেকক্ষণ।
রাস্তার অনেকেই ঘুরে ঘুরে এলোমেলো ফারহান কে দেখে যাচ্ছে।
হাঁটতে হাঁটতে একটা পার্কের কাছে চলে আসলো।
টাই টা আলগা করে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
একটা বেঞ্চে বসে থেকে মাথা নিচু করে রইলো।
ফুটে উঠলো ফারাবির মোহনীয় স্মৃতি।

ফারহানের মন কে স্পর্শ করতে দ্বিতীয় বার ফারাবি একি ভুল করেছিল।
তবে সেটা ইচ্ছাকৃত ভুল। বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছিলো ফারহান কে রঙ মাখাবে।
যদি মাখাতে পারে তাহলে ত্রিশ দিন ভরপুর ট্রিট দিবে।
এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় নি ওহহ। তাছাড়া সবাই কে বলে বেড়াতো ফারহান কে ভয় পায় না ওহহ।
স্কুল থেকে এক গাঁদা আবির নিয়ে বন্ধুদের সাথে লুকিয়ে অপেক্ষা করছিলো ফারাবি।
পার্কের রাস্তা টা দিয়ে এই সময় পায়ে হেটে রোজ ফারহান বাড়ি ফিরে।
সেদিন ও ফিরছিলো , ফোনে মুখ গুঁজে হাটছিলো।
হঠাৎ করেই ফারাবি এসে আবির দিয়ে রাঙিয়ে দেয় ওকে।
তখন ও রঙের প্রতি ভালোবাসা ছিলো না।
রেগে যায় খুব , আবির কে দিয়েছে তা দেখার আগে খপ করে ফারাবির হাত ধরে নেয়।
ফারাবির হাত ধরে নেওয়াতে ওর সব বন্ধুরা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
ফারাবি তো কেঁদেই দেয়। চোখ ডলতে ডলতে রাগী লুক নিয়ে তাকায় ফারহান ।
কিন্তু সামনে ফারাবি কে দেখে ভরকে যায়।
ভ্রু যুগল কুঁচকে ফারাবির হাতের দিকে তাকায়।
ফারাবির হাতে জামা কাপড়ে আবিরে মাখামাখি।
সাথে ফারাবির চুপসে যাওয়া মুখ খানা। সব মিলিয়ে ফারাবি কে রঙিন রসগোল্লার মতো দেখাচ্ছিলো।
ফুলকো গাল দুটো তে চোখের পানিতে একাকার।
হো হো করে হেসে উঠে ফারহান ।
ফারাবির হাত পেছন দিকে মুরিয়ে স্নিগ্ধ কন্ঠে বলে
_ ভুল করে ফেললি , তোকে খুব বড় দাম দিতে হবে।
আমাকে দোষ দিতে পারবি না হলে কিন্তু।

ফারাবি কে তখনি ছেড়ে দেয় ওহহহ , আর ফারাবি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

ফারহানের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। ফারাবির ঠোঁট উল্টানো চেহারা টা মনে হতেই চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
নিজের অজান্তেই বলে উঠল
_ পাগলি মেয়েটা , একদম কলিজায় আঘাত করে দিয়েছিস।

ফারহানের ফোন বেজে উঠলো। সামান্য চমকালো ওহহ , ফারাবির বর্তমান অবস্থার কথা মনে পরতেই শিউরে উঠলো।
শরীর কাঁপতে লাগলো , কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিপ করলো।
রিফাত জানালো ফারাবির জ্ঞান ফিরেছে। এক সেকেন্ড ও সময় নষ্ট করে নি ওহহ।
পাগলের মতো দৌড়ানো শুরু করলো। চোখ দুটো ছলছল করতে লাগলো। বুকের ভেতর চাঁপা পরা পাথর গুলো হালকা হয়ে গেল।

*

দু ঘন্টা হয়ে গেছে ফারাবির জ্ঞান ফিরেছে।
কিন্তু ফারহান দেখা করতে যায় নি। প্রচুর রাগ হচ্ছে ওর , মেয়েটা কেন বৃষ্টি তে সারা রাত ভিজলো ?
সকলের আড়ালে এক পলক দেখে নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছে ওহহ।
লম্বা করে সাওয়ার নিয়ে নিজের রুমে ফাইল হাতে বসে পরলো।
আপাতত কাজে মগ্ন হতে চায়।

ফারাবি সবার সাথে হালকা কথা বলছে।
কেউ ওকে জিজ্ঞাসা করে নি কেন বৃষ্টিতে ভিজেছে ওহহ।
ফারাবি বেডে হেলান দিয়ে আধসোয়া হয়ে আছে।
চোখ দুটো অনেক ক্ষন ধরে কাউকে খুঁজে চলেছে।
কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটির ছায়া ও দেখা যাচ্ছে নাহ।
ফারাবির চোখ দুটো পানি তে ভরে উঠলো।
মুখেই এতো শত কথা , একটি বার দেখতে ও এলো না সে ?
ফারাবি তাচ্ছিল্য হাসলো ,তিন বছর আগেই তো সব পরিষ্কার হয়ে গেছে।
একা ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলো।

একজন নার্স রুমে ঢুকলেন। ফারাবি আগের মতোই বসে রইলো।
নার্স কিঞ্চিত হেসে বলল
_ ম্যাম এভাবে বসে আছেন কেন ?
শুইয়ে দিবো ?

ফারাবি হালকা হাসার চেষ্টা করে বলল
_ না।

নার্স সমস্ত কিছু চেক করে নিলেন। ফারাবির চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। নার্স কিঞ্চিত হেসে বলল
_ ম্যাম চুল টা বেঁধে দিবো ?

ফারাবি মাথা ঝাঁকালো। নার্স চিরুনি এনে ফারাবির চুল বেঁধে দিতে লাগলো।
মাথার চুল গুলো কেমন জট হয়ে গেছে। হালকা ব্যথা লাগছে তবু ও কোনো শব্দ করলো না ওহহ।
অথচ কয়েক বছর আগে ওর মা যখন স্কুলে যাওয়ার সময় মাথা বেঁধে দিতো। তখন কি কান্না টাই না কাদঁতো।
ফারাবি স্মিত হেসে ধন্যবাদ জানালো। নার্স প্রশস্ত হাসলেন , অন্য একজন নার্স সুপের বাটি দিয়ে গেলেন।
নার্স ফারাবি কে সুপ খাইয়ে দিতে লাগলো ।
অর্ধেক টা খেয়ে নাক মুখ কুঁচকালো ফারাবি।
নার্স মলিন হেসে বলল
_ ম্যাম কষ্ট করে হলে ও খেয়ে নিন। না হলে বকা খাবো আমি।

ফারাবি নাক মুখ কুঁচকে নিলো। আরেকটু খেয়ে আর খেতে পারলো না।
নার্স ফারাবি কে শুইয়ে দিয়ে চলে গেল।

ফারহান পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
নার্স কেবিন থেকে আসতেই বলল
_ অল ফিনিস ?

নার্স ভয়ার্ত কন্ঠে বলল
_ পুরোপুরি খেতে পারে নি।

ফারহান ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা ভেবে বলল
_ ওকে যান আপনি।

নার্স হন্তদন্ত হয়ে চলে গেল। যেন চোর কে পালানোর জন্য সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
ফারহান লম্বা করে শ্বাস ফেলল। আড়াল থেকে
ফারাবি কে দেখতে লাগলো।
চেহারা টা কেমন শুকিয়ে গেছে। শরীর টা এক দিনেই ভেঙে পরেছে।
তপ্ত শ্বাস ফেলল ফারহান, সুস্থ হলে মেয়ে টাকে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিবে।
সাহস কি করে হয় নিজেকে কষ্ট দেওয়ার ?
ও কেন বুঝতে চায় না নিজের প্রতি ওর কোনো অধিকার নেই ?
কেন বুঝতে চায় না , ও কষ্ট পেলে তার থেকে হাজার গুন গায়ে এসে ওর লাগে ?

ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ফারহান চলে আসলো।
মেয়ে টা কে বুকে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব।
কিন্তু যাবে না ওহহ , কেন যাবে ?
মেয়েটা কি বুঝে ওর ভালোবাসা ?

*

সন্ধ্যা সাড়ে সাত টা। ফারাবি কে চেক করা হচ্ছে, একটু পর ই রিলিজ দেওয়া হবে ওকে।
কড়া ঠান্ডা লেগেছে , তবে জ্বর টা কমেছে।
কিন্তু ভেতরে ভেতরে জ্বর টা রয়েই গেছে। সবাই ফারাবি কে নিতে এসেছে।
যেন বিয়ের কনে কে ফিরতি অনুষ্ঠানে নিতে এসেছে।
শুধু মাত্র ফারহান ই আসে নি। ফারাবির ভীষন মন খারাপ হলো । একটু কি আসা যেত না ?
হুইল চেয়ার করে হসপিটাল থেকে নামানো হচ্ছে ফারাবি কে।
ফারাবি গালে হাত দিয়ে বসে আছে।
আপন মনে ভাবছে, ফারহান কখনোই ওকে ভালোবাসি বলে নি।
সব সময় আই মিস ইউ জান আর না হলে এক গাঁদা বকা দিয়েছে।
আশ্চর্য তাহলে এতো সবের মানে কি ?
এগুলো কি ছিলো তাহলে ?

ফারাবির ছোট্ট মস্তিষ্কে ফারহানের চালচলন ঠাওর করতে পারলো না।
ক্লান্ত হয়ে চোখ দুটো জুবে গেল। কেমন যেন ঘুম ঘুম পাচ্ছে। ঔষধের রিয়্যাকশন গুলো এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নি ওহহ। চোখ দুটো কেমন জ্বলছে। ঘুমানোর প্রয়োজন, ফারাবি কে ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।
রিফাতের কাঁধে মাথা রেখে ছোট করে বলল
_ ভাইয়া একটু ঘুমাবো।

রিফাত প্রশস্ত হেসে সম্মতি জানালো।
বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
ছোট থেকেই প্রচন্ড ভালোবাসে ফারাবি কে।
আট বছর অব্দি বাসায় কোনো সঙ্গী ছিলো না ওর । বাইরের খেলার সাথী ছিলো ফারহান , কিন্তু দিন শেষে প্রচন্ড বোর হতো ওহহ।
তারপর যখন ফারাবি এলো, ফারাবি কে চোখের মনি করে রাখতো ওহ।
যত্ন করতো , সমস্ত কিছু নিজ হাতে করতে চাইতো।
বড় হয়ে ফারাবি টা কি দুষ্টু টাই না হয়ে গেছে।
এখন দুজন ঝগড়ার মধ্যে দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করে।
রিফাতের চোখ ছলছল করে উঠলো।
ফারাবির মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
ফারাবি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আধ ঘন্টা বাদে ওরা বাসায় পৌছে গেল।
ফারহান আড়ালে দাড়িয়ে ছিলো । রিফাত কোলে করে ফারাবি কে ঘরে নিয়ে গেল।
ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ ঘুমিয়ে আছে ?

রিফাত মাথা ঝাঁকালো। ফারহান মৃদু হেসে ভাবলো ভালোই হলো কাছ থেকে দেখতে পারবে ওহহ।
ফারাবির রুমে গিয়ে দেখলো রুম ভর্তি মানুষ।
ফারাবির মামা বাড়ি থেকে লোক জন এসেছে ।
ফারহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, নিশ্চয়ই রিক ও এসেছে ?

ফারাবি এখন অসুস্থ তাই নিরাপদ ও নয় ।
রিক ওর কাজিন হলে ও চরিত্রের দিক থেকে নাম্বার ওয়ান ছেছড়া।
ফারাবির দিকে সব সময় ওর বাজে নজর ছিলো।
ফারহান লম্বাটে শ্বাস নিলো , কিছু করতে হবে।

*

রাত প্রায় বারোটা , কালো জ্যাকেট পরে আপাদমস্তক ঢেকে নিয়ে পা টিপে টিপে বের হলো ফারহান।
করাডোর দিয়ে আসতেই দেখলো রিমি আসছে।
ফারহান দ্রুত আড়ালে চলে গেল।
কিছুক্ষণ ঐ খানেই দাড়িয়ে রইলো।
কারন রিমির মুখোমুখি হলে অনেক প্রশ্ন করবে ওহহ।
রিমি কিচেন থেকে পানির বোতল নিয়ে গুন গুন করে নিজের রুমে চলে আসলো।
ফারহান দম ফেলে আগাতে লাগলো।
বাসা থেকে বের হলে ও গেট দিয়ে যেতে পারলো না।
কারন দারোয়ান এখনো জেগে আছে।
ফারহান এক গাঁদা গালি দিতে দিতে পেছনের দিকে চলে আসলো।
বাগানের পাঁচিল টপকে বের হয়ে আসলো।
পাচিলে লাগানো কাঁচের টুকরো হাতে লেগে খানিক টা ছিলে ও গেল।
কিন্তু সে দিকে খেয়াল নেই ওর।
ফারাবিদের বাসার পেছনে এসে পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢুকলো।
মাটি ঝেরে সামনে তাকাতেই দেখলো রিফাত ফোনে কথা বলছে।
ফারহানের চোখ দুটো কপালে উঠে গেল।
রিফাত পেছনে ঘুরার কয়েক সেকেন্ড আগেই ফারহান ইউক্যালিপ্টাস গাছের পেছনে লুকিয়ে পরলো।
রিফাত কথা বলতে বলতে বাসার ভেতরে চলে আসলো।
ফারহানের কাছে বাসার ডুপ্লিকেট চাবি আছে।
সেদিনের পরের দিন ই ফারাবি দের বাসার ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়ে নেয়।
কিন্তু এখন ঝামেলা হচ্ছে রিফাত জেগে আছে।
সিড়ি বরাবর ই রিফাতের রুম। ধরা খেলে মানসম্মান যাবে । সে রিক্স নেওয়া যাবে নাহহ। অগত্যা বাড়ির পেছন দিক দিয়েই দেয়াল চেপে উঠতে হবে।
লম্বা করে শ্বাস নিলো ফারহান ।
বাগানের পেছন দিক দিয়ে সেদিনের মতো ব্যালকনিতে উঠে একে একে টপকে ফারাবির ব্যলকনিতে পৌছালো ওহহ।
আজ বেশি বেগ পেতে হলো না ওকে ।
খুব সহজেই উঠতে পেরেছে। লম্বা করে শ্বাস নিয়ে প্রশস্ত হাসলো ওহহ।
ফারাবি কে কাছ থেকে দেখতে পাবে ভাবতেই মন টা উরু উরু করতে লাগলো।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_16

ব্যলকনির দরজা খুলে পা টিপে টিপে ঘরের ভেতরে ঢুকলো ফারহান। চোর আর ওর মাঝে আপাতত তেমন কোনো ফারাক নেই। চোর জিনিস পত্র চুরি করতে আসে আর ও ওর প্রেয়সী কে। তবু ও অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে। কিছু কিছু সময় চোরের মতো করে আসা ও ভালো লাগার কারন হয়ে যায়।
ব্যলকনির দরজা টা খুব যত্ন করে লাগিয়ে দিলো। যাতে ফারাবি টের না পায়।
ফারাবি নরম বালিশে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছে । ড্রিম লাইটের আলো তে ফারাবির মুখ টা জ্বল জ্বল করছে। কেমন শুকিয়ে গেছে মেয়েটা। ফারহানের চোখ টা ছলছল করে উঠলো।
ফারাবির দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো। পা যেন কাঁপছে, মেয়েটার রুগ্ন চেহারা ওকে কাবু করে ফেলেছে।
বেডের সাইটে হাঁটু গেড়ে বসে ফারাবির দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
ফারাবির শ্বাস গাঢ়, ফারহান এক ধ্যানে তাকিয়ে প্রতি টা শ্বাস গুনতে লাগলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর কাঁপা কাঁপা হাতে ফারাবির দু হাতে হাত ছোঁয়ালো।
জ্বরে পুরে যাচ্ছে গা, ফারহানের শরীর কেঁপে উঠলো।
মেয়েটার কতোটা কষ্ট হচ্ছে এখন ?
খুব রাগ হচ্ছে কেন এমন করলো ওহহ ?

ফারাবির ঠোঁট দুটো থরথর করে কাঁপছে। যেন সমস্ত শীত ওর ঠোঁটে ভর করেছে। কেমন গুটিয়ে যাচ্ছে, ফারহান তার উষ্ণ ঠোঁটে ফারাবির কপালে ডিপ লি স্পর্শ করলো।
ফারাবির গায়ের গরম হাওয়া ওর ঠোঁটে লাগছে তাতে ও ওর প্রশান্তি হচ্ছে ।
বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে চুমু খেলে ও টপ করে চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি ফারাবির কপালে পরে গেল।
ফারাবি নড়ে চড়ে উঠলো , ফারহান ছিটকে দূরে সরে গেল।
এই গরমে ও জ্বরের কারনে ফারাবি জড়সড়ো হয়ে যাচ্ছে। ফারহান আলতো হাতে চাদর টেনে দিতেই ফারাবির উন্মুক্ত পায়ে ওর হাতের স্পর্শ লাগলো।
ফারাবি ধুরমুরিয়ে উঠে গেল। আচকা উঠে যাওয়াতে ফারহান ঐ ভাবেই বসে রইলো।
ফারাবির শ্বাস গাঢ় হয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে।
ফারহান দ্রুত পানি ঢেলে নিয়ে ফারাবি কে এগিয়ে দিলো।
ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো ওহহ।
ফারহানের চোখ দুটো কাঁপছে, ফারাবি লম্বা করে শ্বাস নিয়ে আনমনেই বলল
_ ওহহ আপনি ।

ফারহান কিছু বলল না। ফারাবি মাথা টা হালকা চেপে ধরতেই মস্তিষ্ক ধরা দিলো তার সামনে ফারহান দাঁড়িয়ে ।
ব্যগ্র হয়ে তাকালো ওহহ , ফারহানের অবয়ব দেখতে পেয়েই শিউরে উঠলো ওহহ।
চোখ দুঠো নোনা জলে ভরে উঠলো। হু হু করে উঠলো ওর মন। কাল থেকে এই মানুষটির দেখা পায় নি ওহহ।
একটি বার দেখতে ওহহ আসে নি।
ফারাবির চোখের পানি দেখে ফারহানের বুক কেঁপে উঠলো।
ব্যস্ত হয়ে ফারাবির কাছে হাঁটু গেড়ে বসে বলল
_ তুই কাঁদছিস কেন জান ?
আমি এসেছি তাই ? আমি চলে যাবো প্রমিস , প্লিজ কাদিস না তুই।

ফারাবির হিঁচকি উঠে গেল। ফারাবির কান্না থামাতে ব্যর্থ হয়ে ফারহান দূরে সরে যেতে চাইলো।
ফারাবি আলতো হাতে ফারহানের হাত ধরে ফেলল।
ফারহান ছলছল নয়নে পেছন ঘুরে তাকিয়ে ঝাঁপিয়ে বুকে টেনে নিলো ফারাবি কে।
ফারাবির চোখ দুটো থেকে এখনো পানি ঝরছে।
ফারাবি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফারহান বলল
_ কেন জান? নিজেকে কেন কষ্ট দিলি তুই ?
আমাকে মেরে ফেল তবু ও তুই নিজেকে কষ্ট দিবি না।
আমি সহ্য করতে পারি না।

ফারহানের কথাতে ফারাবির বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো।
ফারহানের কাঁধে মাথা রেখেই দু হাতে ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবির স্পর্শ পেতেই ফারহান কেপে উঠলো।
সাথে অধর কোনে দারুন হাসি ফুটলো।
ফারাবি কে ছাড়িয়ে ওর দু গালে হাত রেখে ফারহান বলল
_ আমাকে চাস তুই ? অথচ বলতে এতো কষ্ট কেন হয় ?
অভিমান করে আছিস ?

ফারাবি কিছু বলল না। ফারহান চলে যেতে নিলেই ফারাবি ফারহানের শার্টের হাতা টা আলতো করে টেনে ধরলো।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কিহহ ?

ফারাবি মাথা নিচু করেই বলল
_ আমার পায়ে হাত দিয়েছিলেন কেন ? আমি না বলেছি পা ছুবেন না।

ফারহান মৃদু হাসলো , মেয়েটা কি বোঝে না ঐ পায়ে বারং বারং চুমু খেতে পারে ওহ।
আর শুধু তো পায়ে স্পর্শ করেছে ।

ফারহানের উত্তর না পেয়ে ফারাবি শান্ত কন্ঠে বলল
_কেন এসেছিলেন ?

ফারহান লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ রিকের থেকে বাঁচাতে।

ফারাবি চমকে তাকালো।
ফারহান ধীর কন্ঠে বলল
_ তোর দিকে বাজে নজর ওর। আর আজ ও এসেছে সেটা জেনে ওহ আমি কি করে তোকে একা রাখি ?

ফারাবি তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ রিক ভাইয়া আসে নি। আর কিছু দিন পর তো ওনার সাথেই আমার বিয়ে হয়ে যাবে।

ফারাহানের রাগ উঠে গেলে। চোখ দুটো লালচে আভা তে ছেয়ে গেল। চোয়াল বার বার উঠা নামা করছে। ফারহানের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেল ফারাবি।
বেডের সাথে হেলান দিয়ে জড়োসড়ো করে বসলো।
ফারহান চোখ বুজে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো। আজ অসুস্থ না থাকলে ফারাবি কে ঠাস ঠাস চড় বসিয়ে দিতো।

ফারহান ধীর পায়ে ফারাবির দিকে এগিয়ে গেল । ফারাবি ফাঁকা ঢোক গিলে নিলো। ফারহান ফারাবি কে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
ফারাবি কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বলল
_ কিছু করতে বাধ্য করিস না। আমি কিন্তু খুব খারাপ , যখন তখন যা তা করে ফেলতে পারি ।

ফারাবির চিত্ত কেঁপে উঠলো। ফারহানের উষ্ণ নিশ্বাস ঘাড়ে এসে আঁচড়ে পরছে।
তার কারনে পুরো শরীরে আবেশ বয়ে চলছে। ফারাবির কপালে বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে চুমু খেলো।
ফারহানের স্পর্শে বার বার শিউরে উঠছে ফারাবি । ফারহান মোহনীয় হেসে ফারাবির এলো মেলো চুল গুলো গুছিয়ে দিতে দিতে বলল
_ অসুস্থ না থাকলে আই সয়ার আজ কিছু একটা করে ফেলতাম আমি।

ফারাবি ছোট ছোট করে তাকাতেই ফারহান ঝরা হাসলো।
ফারাবির দিকে হালকা ঝুঁকে বলল
_ তাতে কি কিছু তো করাই যায় ?

ফারাবি ভরকে গেল, ফারহান বাঁকা হেসে টান মেরে ফারাবি কে বেডে শুইয়ে দিলো।
ফারাবি ভয়ে চুপসে গেছে , অসুস্থতার কথা যেন ভুলেই গেছে।
ফারহান ধীর গতিতে ওর দিকে আগাতেই চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।
ফারহান ঝরা হাসলো, এই ভয়ার্ত চাহনীতেই ঘায়েল হয়েছে ওহহ। ফারাবির দু বাহু তে হাত রেখে নাকে নাক ঘষতে ঘষতে লাগলো।
ফারাবির হার্ট বিট গুলো যেন মার্বেলের মতো আওয়াজ তুলছে। ফারহান সরস গলায় বলল
_ এই মেয়ে তুই কি করে আমাকে জ্বালিয়ে দিলি বল তো। আমি যে প্রতি মুহুর্ত তোকে ভাবি। বার বার তোর স্মৃতি তে ডুবে যাই।
এতো বিচিত্ররতা নিয়ে আমি কি করে এতো দূরে আছি বল তো।

ফারাবি চমকে তাকালো। ফারহান আলতো হেসে ফারাবির গালে নাক ঘষতে লাগলো।
ফারাবি অস্বস্তি তে নুইয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফারহানের সে দিকে খেয়াল ই নেই। লজ্জাতে মুখ টা লাল হয়ে গেছে। ফারহান আলতো হেসে ফারাবির গলাতে চুমু দিয়ে বলল
_ আর জ্বালাবো না , আপাতত তোকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখবো।

ফারাবি বড় বড় চোখ করে তাকাতেই ফারহান বলল
_ উষ্ণতা দেওয়ার জন্য জান , আপনি এই ফারহানের উষ্ণতা ছাড়া জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছেন।

ফারাবি লজ্জা পেলো , ফারহান ঝরা হেসে ফারাবি কে জড়িয়ে বলল
_ এই মুহূর্ত টা দীর্ঘ হোক।

ফারাবির ভালো লাগছে খুব বেশিই ভালো লাগছে। চাঁপা অভিমান টা কাজ করছে না , কিছু টা লজ্জা লাগলে ও ফারাবি এক ভয়ঙ্কর কাজ করে বসলো।
ফারহান কে জড়িয়ে ধরে ফারহানের বুকে মাথা রাখলো।
ফারহানের মুখে উপচে পড়া খুশি ,ঝলকানি দিলো। প্রেয়সীর একটু ভালোবাসাতেই কেমন বুক ভরে যায়। ভালোবাসা বুঝি এমনি হয় , এ মেয়েটাকে কেন এতো ভালোবাসে ওহহ ?
এ উত্তর ওর কাছে নেই । ভালোবাসার সঙ্গা বিচিত্র রঙা, কারন গুলো ও বিচিত্র রঙা ।

*

ভোর সাড়ে চার টা, ফারাবি কিংবা ফারহান কেউ ই ঘুমায় নি। ফারহান বেডের সাথে হেলান দিয়ে ফারাবিকে দু হাতে জড়িয়ে আছে।
আর ফারাবি ফারহানের বুকে মাথা রেখে পিঠ জড়িয়ে আছে। ফারহানের প্রতি টা হৃদস্পন্দন গুনছে ফারাবি। এ মানুষ টার সাথে কি ভাবে জড়িয়ে পরেছিলো ভাবতেই কেমন লাগছে। তবে সেটা আজ ভালোলাগার অনুভূতি। ফারাবি আজ লাজ লজ্জা ভুলেই ফারহানের বুকে মুখ গুঁজে আছে। ফারহানের শরীরের মিষ্টি ঘ্রান টা যে কাউ কে পাগল করতে সক্ষম।
এই মানুষ টা কে এতো স্টাইল করতে দেওয়া যাবে না। কোনো অকেশনে গেলেই ফারহান কে গিলে খায় হাজারো মেয়েলি চোখ।
ইসস নজর লেগে গেলে কি হবে তখন ?

ফারহান বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ফারাবির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
_ ঘুমোলি না একটু ও , এসে বোধহয় ঠিক করি নি।

ফারাবি আনমনেই বলে উঠলো
_ উহুহ এভাবেই ভালো লাগছে।

ফারহান রসালো গলায় বলল
_ তাহলে আরো কাছে নিয়ে আছি ?

ফারাবি এবারো ঘোরের মধ্যে উত্তর দিলো
_ হুহহ

ফারহান চমকে বলল
_ সিউর তো ?

_ কিহহ ?

ফারহান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
_ এতোক্ষন কি বলেছিস তুই ?

ফারাবি ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কি বলেছি ?

ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ তোকে বলেছি আরো কাছে নিয়ে আসি আর তুই সম্মতি জানিয়েছিস।

ফারাবি চমকালো , ফারহান মিথ্যা বলার মানুষ নয়। ইসসস কি সব বলেছে ওহহ।

ফারহান সরস হেসে শান্ত কন্ঠে বলল
_ ভোর হয়ে যাচ্ছে, তুই ঘুমো আমি যাচ্ছি।

ফারাবি মাথা ঝাঁকালো, ফারহান ফারাবির গালে চুমু খেয়ে কপালে হাত দিয়ে বলল
_ বাহহ জ্বর টা ছেড়েছে দেখছি।

ফারাবি লজ্জা পেল , এতোক্ষন সময় ফারহান কে জড়িয়ে ধরে ছিলো ওহহ। ইসসস ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here