স্বপ্নের প্রেয়সী ১৭+১৮

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_17

আজ তিন দিন পর ফারাবি একটু সুস্থ হয়েছে। জ্বর টা নেই , তবে ঠান্ডা টা রয়ে গেছে। নিয়মিত আদা চা খাচ্ছে আর গরম পানির ভাব নিচ্ছে।
এ সব কিছু হচ্ছে শুধু ফারহানের জন্য। ফারাবি কে হাজার বলে ও কেউ এইসব করাতে পারে নি। শেষ মেশ ফারহান এসে ধমক দিয়েছে আর ফারাবি ভয়ে চুপসে গেছে।
ফারহান এখন সময় করে এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
ফারাবিকে গরম পানির ভাব নেওয়ানো আর আদা চা গেলানো।
সকাল আট টা বাজতে না বাজতে ফারহান এসে হাজির।
ফারাবি নিজের রুমে আধ সোয়া হয়ে বসে আছে। শরীরে খানিকটা ব্যাথা রয়ে গেছে। যার কারনে গোসল থেকে শুরু করে উঠা বসা সব কিছুতেই একজনের সাহায্য লাগছে।
কলেজে না যাওয়ার কারনে বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে।
সামনের মাসেই আই সিটি প্রজেক্ট জমা দিতে হবে। ফারাবি বান্ধবীদের সাথে কথা বলে যাচ্ছে।
সবাই তো যে যার মতো আই সিটি প্রজেক্ট তৈরি করেছে। সব থেকে বিদঘুটে বিষয় হচ্ছে একেক জন কে একেক রখম প্রজেক্ট দেওয়া হয়েছে। যার কারনে কপি করার কোনো চান্স ই নেই। লম্বা শ্বাস ফেলে ফোন টা বেডের কোনে রাখলো ফারাবি ।
ওয়াসরুমে যাওয়া দরকার, কিন্তু উঠতে পারছে না।
খুব কষ্ট হচ্ছে, কোনো মতে ফারাবি উঠে দাঁড়ালো । শরীর টা যেন একশ কেজি হয়ে গেছে। হালকা পায়ে দু কদম এগোতেই ফারাবি পরে যেতে নিলো।
কিন্তু তার আগেই ফারহান এসে ধরে ফেলল।

ফারাবির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল
_ একা একা উঠছিলি কেন ?

_ কেউ তো আশে পাশে নেই।

_ ফোন করে নিতি।

_ ওয়াসরুমে যাওয়ার জন্য ফোন করতাম ?

_ অবশ্যই করতি। অসুস্থ শরীর নিয়ে পাকনামি করতে বলেছে কে ?

_ আমি তো

_ হুসসস কোনো কথা না। প্রথম দিন তো শরীরে ব্যাথা ছিলো না হঠাৎ করেই ব্যাথা টা শুরু হয়েছে তাই নাহহ?

ফারাবি মাথা ঝাঁকালো। ফারহান ফোঁস করে দম ফেলে ধীর কন্ঠে বলল
_ এতো ভাবিস না। একটু সময় লাগবে সুস্থ হতে। বাট ইউ নো হোয়াট বসে থেকে থেকে তুই একটু মটু হয়ে যাচ্ছিস।
জাস্ট একটু

ফারাবি সরু চোখে তাকালো। নিজে কে ভালো করে অবলোকন করে বলল
_ কোথায় মটু হয়েছি ?

_ মটু হস নি ?

_ উহুহুমম।

_ আচ্ছা তো পরীক্ষা করে দেখা যাক।

আর একটা কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফারহান ফারাবি কে পাঁজা কোলে করে নিলো।
ফারাবি পিট পিট করে চেয়ে বলল
_ এটা কি করছেন ? নামিয়ে দিন , আমার সুরসুরি লাগছে।

_ সত্যি সুরসুরি লাগছে?

_ হুমম নামান প্লিজ।

_ তাহলে তো আর ও একটু সুরসুরি দিতে হয়।

বলেই বাঁকা হাসলো ফারহান।

_ আপনি

ফারাবি আর বলতে পারলো না। তার আগেই ওর চোখ দুটো বুঁজে গেল।
কারন ফারহান ওর কামিজের ভেতর দিয়ে পেটে স্পর্শ করে দিয়েছে।
ফারাবির শ্বাস ঘন হতে লাগলো, যেন দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।

ফারহান এক গাল হেসে হাত সরিয়ে নিলো।
ফারাবি চোখ খুলে নিয়ে লজ্জা মিশ্রিত গাল টা নিয়েই উচ্চারন করলো
_ আপনি একটা

_ অসভ্য ?

ফারাবি বোকার মতো চেয়ে রইলো। ফারহান ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল
_ আগে অসভ্যতামু করতাম ? তবে এখন করবো, পুরো তিন বছরের শোধ নিবো। প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে বোঝাবে তোর প্রতি শুধু আমার অধিকার।
তোকে শুধু

ফারাবি চোখ খিচে বন্ধ করে নিয়েছে । ফারহানের লাগামহীন কথা বার্তা বড্ড পীড়াদায়ক। এ সমস্ত কথায় ফারহান ওকে পাগল করে দেয়।
ফারহান যখন বলে আমি অধিকারে বাইরে কিছু করছি নাকি ? তখন ফারাবির শ্বাস আটকে যায়।
সব এলোমেলো হয়ে যায়, ঝাঁপিয়ে পরতে ইচ্ছে করে।

ফারহান একগাল হেসে ফারাবি কে কোলে রেখেই নাকে নাক ঘষতে লাগলো।
ফারাবির হাত ফারহানের গলা জড়িয়ে আছে ।
দরজার কথা মনে পরতেই ফারাবি লাফিয়ে উঠলো।
ফারহান নাক কুঁচকে বলল
_ কিহহ ?

_ দরজা

_ লক করাই আছে। আমি এতো টা ও অসভ্য নই যে সবাই কে দেখিয়ে রোম্যান্স করবো।

ফারাবির গাল দুটো লাল হয়ে গেল। ফারহান লম্বা হেসে ফারাবি কে ওয়াসরুমে নামিয়ে দিলো।
চা তো এনেছে তবে ভাপ নেওয়ার জন্য গরম পানি আনতে হবে।
তাই দ্রুত গতিতে কিচেনে চলে আসলো।

*

বিকেলে সবাই ছাঁদে আড্ডা দিচ্ছিলো। ফারাবি কে ছাঁদে নিয়ে আসাই মূল লক্ষ্য ছিল। ফারহান ছাঁদের এক কোনে গিয়ে ফোনে কাজ করছে। সারা দিন ফোন না হয় ল্যাপটপে ডুবেই থাকাই ওর কাজ। আর রিফাত তো ছন্ন ছাড়া , ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বসে আছে।
মূলত ওনি হলেন ফারহানের পার্টনার। ফারহান ওর বিজন্যাস এর 10% রিফাতের নামে করে দিয়েছে। আপাতত রিফাতের তেমন কোনো কাজ নেই। কারন প্রজেক্ট টা রিফাত কে ছাড়াই করছে ফারহান। সবাই কে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য লুকিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
রিমি আর ফারাবি দোলনা তে বসে আছে।
আর ওদের সামনে বসে আছে রিফাত আর মনিকা। মনিকা একটু পর পর ই রিফাত কে কিল ঘুসি মারছে।
ফারহান ফোনে গভীর মনোযোগ দিয়ে আছে ,একবার ফারাবির দিকে তাকাচ্ছে ও না।
যার কারনে ফারাবির রাগ অষ্টম আকাশে। এ রাগের হেতু ও জানে না , তবে ফারহান কে ছাড়া ও কিছু বুঝে না।
তিন বছর ধরেই ফারহান ওর ভাবার বিষয়। দিন রাত সারাক্ষণ ফারহান কেই ভেবে গেছে ওহহ। সাথে ভারী হয়েছে অভিমানের পাল্লা , তবে ফারহান কে দেখেই অভিমান গুলো কেমন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

ক্লান্তি ভরা শ্বাস ফেলে এগিয়ে আসলো ফারহান। পকেটে ফোন রেখে বলল
_ আমাকে একটু অফিসে যেতে হচ্ছে তোরা আড্ডা দে আমি যাচ্ছি।

রিমি সরস গলায় বলল
_ তুমি থাকলেই কি না থাকলেই কি ? তুমি তো তোমার এক মাত্র বউ অর্থাৎ ঐ ফোনের কাছেই মুখ গুঁজে ছিলে।

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। ফারহান ভ্রু কুঁচকে থেকে বলল
_ তোকে দেখতে হচ্ছে এবার। তিন বছরে তোর কোনো খোঁজ ই নেওয়া হয় নি। আপাতত মার্ক করে গেলাম , হাড় ভাঙবো তোর তৈরি থাক।

রিমি বোকার মতে চেয়ে রইলো। তাই ভাই মার্ক করেছে মানে ও এবার শেষ।
রিমি শুকনো ঢোক গিলছে দেখে ফারাবি মুখ চেপে হাসছে।
আর তা মনিকার চোখ এড়ালো না। মনিকা কন্ঠে গম্ভীরতা এনে বলল
_তোদের দুটো কেই আমার সন্দেহ হচ্ছে। বল তোদের হিরো দের নাম

ফারাবি মুখ বাঁকিয়ে বলল
_ আমার হিরো তো দূরে থাক , হিরোর হ ও নেই। সো আমার পেছনে লাগতে যেও না , তোমাদের ফাঁসিয়ে দিবো।

_ কি ফাঁসাবি তুই ? শোন আমাদের বিষয়ে সবাই রাজি, সো নো ঝামেলা , নো বিরহ।

রিমি ফোন স্ক্রল করতে করতে বলল
_ বুঝলি ফারাবি রিফাত ভাইয়ার এক্স গুলো কে খবর পাঠাতে হবে।
তারপর দেখা যাবে রিফাত ভাইয়া বিরহে পরে কি না।

রিফাত শার্টের কলার উচিয়ে বলল
_ রিফাত ভয় পায় না।

ফারাবি আর রিমি মুখ টিপে হাসতে লাগলো। কারন একটা খালি ফুলের টপ হাতে রাগে ফুঁসছে মনিকা। কখন না রিফাতের মাথায় ফেলে দেয় ।

রিফাত ওদের দৃষ্টি অনুসরণ করে পেছনে তাকাতেই লাফিয়ে উঠলো।
পকেটে ফোন পুরে এগিয়ে আসলেই মনিকা টপ টা ফেলে দিলো।
একটুর জন্য রিফাতের পা টা বেঁচে গেল। রিফাত বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলল
_ আমার এক্স নাই , রিয়েলি।

রিমি আর ফারাবি এক সুরে বলল
_ নদী

রিফাত মেকি হাসি দিতে লাগলো।
ফারাবি আর রিমি হো হো করে হেসে উঠলো।
রিফাত বেচারা অসহায় মুখ করে রইলো। মনিকা আজ ওকে কাঁচা , নুন হলুদ ছাড়াই তেলে ভাজবে।
মনিকা রাগে ফুসতে ফুসতে নিচে চলে আসলো।

*

সন্ধ্যা সাত টা দশ , মাত্র ই সবাই নামাজ শেষ করে এসেছে।
ফারাবি কে ধরে ধরে নিচে নামাচ্ছে রিমি। ফারাবির যথেষ্ট খেয়াল রাখছে মেয়েটা। বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা , তার উপর ওর ভাই বলেছে ফারাবি কে দেখে রাখতে।
ভাইয়ের প্রতি সন্দেহ টা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে । তবে ফারাবির সাথে রিকের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তার ভাই যদি পজিটিভ হতো তাহলে কি চুপ করে থাকতো?
তার ওমন রগচটা, বদমেজাজি ভাইটা চুপ করে থাকার মানুষ নয় যে।
হয় তো তার ধারনা টা ভুল , ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো রিমির।
রিমি কে ভর করে চলছে ফারাবি , ফারাবি অপরাধী কন্ঠে বলল
_ তোকে কতোটা কষ্ট করতে হচ্ছে ?

_ এই কথা টা হাজার বার আমার কানে গিয়েছে । এবার মাফ কর আমার মা , কষ্টের কি আছে এতে ?
আচ্ছা তুই ই বল আমি যদি অসুস্থ হই , তুই আমার যত্ন নিবি না ?

ফারাবি আলতো হাসলো , রিমি কে জড়িয়ে বলল
_ তোকে অসুস্থ হতেই দিবো না। সব সময় আমি অসুস্থ হয়ে থাকবো আর তোকে এভাবেই খাটাবো।
ফারাবির কথাতে হেসে উঠলো রিমি। সেই পিচ্ছি কাল থেকে যে হাত ধরেছে এখন অব্দি ওদের ঝগড়াই হয় নি।
তবে মতের মিল হয় প্রায় ই তবে মন মালিন্য হয় না কারো ই।
এক সাথে চলতে গেলে অবশ্যই একটু আধতো অমিল থাকতেই হয়।
না হলে মিলের সুখ টা অনুভব করা যায় না।
ফারাবি কে সোফাতে বসিয়ে , পাশে রিমি ও বসলো। ফোনে মুভি দেখতে লাগলো , নতুন রিলিজ হওয়া ইংলিশ মুভি

” Fast and Furious 9 ”

এটার একটা সিজন ও বাদ যায় নি ওদের। খুব সুন্দর মুভি টা , মূলত কার নিয়েই এই মুভি টা। কারন বেশির ভাগ সময় ই ওরা কার নিয়ে মারামারি করতে থাকে।

গভীর মনোযোগ দিয়ে কানে ইয়ার ফোন গুঁজে মুভি দেখছে ওরা । ওদের সামনে অবহেলার পাত্র হয়ে চা টা পরে আছে। অতি অবহেলায় ঠান্ডা হয়ে নুইয়ে গেছে। রিফাতের মা এসে চা টা বদলে দিয়ে দুটোর কান থেকে টেনে ইয়ার ফোন নামালেন। চায়ের সাথে নাগা উইং দিয়ে গেলেন।
নাগা উইং ওদের দুজনের ই খুব প্রিয়। অথচ মুরগির পাখনা এমনিতে মুখে তুলবে না।
ফারাবি আর রিমি বাজি ধরে নাগা উইং খেতে লাগলো।
রিফাতের মা এটা খুব ভালো বানাতে পারেন। ক্রিসপি আর ঝালের সাথে অসাধারন টেস্ট হয়েছে।
খাওয়া প্রায় শেষের দিকে তখনি দরজা দিয়ে রিক ভেতরে আসে।
রিক কে দেখে গা গুলিয়ে আসে ফারাবির।
কাজিন হলে ও রিক কে সহ্য করতে পারে না ওহহ। রিক নাকি ওকে ভালোবাসে কিন্তু এর বিন্দুমাত্র ও দেখতে পায় নি।
সব সময় বাজে দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে। রিক যখনি আসে তখনি ফারাবি লুকিয়ে থাকে। কারন রিকের লোলুপ দৃষ্টি সব সময় ফারাবির শরীর কে অবলোকন করতে থাকে।
যাহহ ফারাবি সহ্য করতে পারে না আবার কিছু বলতে ও পারে না।
ফারাবির জন্ম দিনে ফারহানের হাতে একবার খুব মার খেয়েছিলো রিক। তবে সেটা কেউ ই জানে না।

ফারাবির শরীর কেঁপে উঠলো। রিক এসেই ফারাবির দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে আছে। ফারাবির ভীষন খারাপ লাগছে, চোখ দুটো একজন কেই খুঁজে চলেছে।
রিফাত পাশেই বসে ছিলো । ফারাবি কে হাঁসফাঁস করতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো।
রিক কে রিফাতের ও পছন্দ নয়। তবে কিছু করার নেই ফারাবির মামা তিন বছর আগে অনুরোধ করেছেন ওদের বিয়ের জন্য । কারন টা নাকি তার ছেলে ফারাবি কে খুব ভালোবাসে।
ইমোশনালি হার্ট করে ওনাদের , আর ওনারা ও ডুবে জান তাতে।
অবশ্য রিকের কোনো খারাপ রেকট ধরা পরে নি।
রিফাত ও কখনো সেরকম কিছু দেখে নি।তবু ও ওকে কেন জানি সহ্য করতে পারে না।
হয়তো ছোট বোন টা আর ও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে তাই।
রিমির ফোন আসা তে রিমি উঠে সাইটে চলে গেল।ফারাবির অস্বস্তি আরো বেড়ে গেল।
রিফাত ফারাবির পাশে গিয়ে বসতেই ফারাবি দম ফেলল যা রিফাত স্পষ্ট অনুভব করলো।
রিফাত ফারাবির মাথায় হাত রেখে বলল
_ রুমে দিয়ে আসি ?

ফারাবি যেন হাতে চাঁদ পেলো। সজ্ঞে সজ্ঞে মাথা ঝাঁকালো। রিফাত প্রশস্ত হেসে একপলক রিক কে দেখে ফারাবিকে দু হাতে জড়িয়ে উপরে নিয়ে গেল।
ফারাবির চোখ ছলছল করে উঠলো। ভাই নামক এই মানুষ টা সব সময় ওকে আগলে রাখতে ব্যস্ত। কোনো না কোনো ভাবে বুঝে যায় ওর কি চাই।
রিক ও তো ওর ভাই , কিন্তু রিকের ব্যবহার এতো নিকৃষ্ট কেন ?
ভালোবাসলে বুঝি দৃষ্টি বাজে দিকে থাকবে। ভালোবাসার ছিটে ফোঁটা ও তো খুঁজে পেল না ওহ।
অথচ একটা মানুষ এক আকাশ সমান ভালোবাসে ওকে।
ওকে স্পর্শ করে ভালোবাসা নিয়ে আর রিকের ধারালো চোখ ইঙ্গিত করে যায় নিকৃষ্ট দিকে।

রিফাত ফারাবি কে নিয়ে উপরে চলে যাওয়া রাগ হলো রিকের।
পরক্ষণেই মুখে হাসি ফুটিয়ে নিলো। কয়েক দিন পর তো ফারাবি কে ওর হতেই হবে।
রিকের চোখে মুখে ভেসে উঠলো ফারাবির উন্মুক্ত উদর।
মুহূর্তেই গা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো ওর। ফারাবির সৌন্দর্য ওকে অনেক আগেই আকর্ষিত করে নিয়েছে।
তবে এ সৌন্দর্যে কখনো হাত বাড়াতে পারে নি।
ফারাবি নিজে যেমন সামলে চলে ঠিক তেমনি ওর ঢাল হয়ে ছিলো রিফাত।
একদম পিচ্ছি থেকেই ফারাবি কে আগলে রাখছে ওহ।গত পাঁচ বছর ধরে যোগ হয়েছে ফারহান।
এখন সব কিছু অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। তবে বিয়ে তো হতেই হবে আর সমস্ত জ্বালা পরেই মেটাবে।
সেই ছোট থেকে ফারাবির উপর গভীর দৃষ্টি ছিলো ওর।

এই সব ভাবতে ভাবতে পৈশাচিক হাসি তে হাসলো ওহহ।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_18

রিক এসেছে শুনে ফারহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। সাথে সাথে ফারাবিদের বাসায় এসে হাজির।
ফারাবি আর রিমি ফারাবির রুমে বসে আছে। রিক আলতো পায়ে ফারাবির ঘরে প্রবেশ করলো। রিমি আর ফারাবি হাসছিলো , রিক কে দেখেই ফারাবির বুক কেঁপে উঠলো।
রিক আলতো হেসে বলল
_ কেমন আছো ফারাবি ?

ফারাবি শুকনো গলাতে বলল
_ ভালো।

রিক হাসলো , ফারাবির দিকে বাজে ভাবে তাকাতে লাগলো।
ফারাবি নিজেকে বার বার ঠিক করে যাচ্ছে ।
রিক চোখ নামিয়ে বলল
_ কেমন আছো রিমি ?
_ ভালো ভাইয়া আপনি ?
_ এই তো ভালো। রিমি কিছু মনে না করলে আমি ফারাবির সাথে একটু কথা বলতে চাই।
ফারাবি বড় বড় চোখ করে তাকালো।
রিমির হাত খামচে ধরলো। রিমি ভদ্রতার খাতিরে আলতো হেসে বলল
_ ঠিক আছে।
ফারাবি অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলো। রিমি দম ফেলে বের হয়ে গেল। ও এখানে কিই বা করতে পারে ?

রিমি চলে যেতেই রিক উজ্জ্বল হাসলো। যেই হাসিতে ঝরিয়ে আছে বিদঘুটে মোহ। ফারাবির ভীষন কান্না পাচ্ছে ।

রিক ধীর পায়ে এগিয়ে ফারাবির পাশে বসলো। ফারাবি ছিটকে দূরে সরে গেল।
শরীরে ব্যথা না থাকলে দৌড়ে পালাতো ওহ। কিন্তু এখন উঠতে গেলেই পরে যাবে।

রিক বাঁকা হাসলো। ফারাবির মাথা থেকে পা অব্দি অবলোকন করতে লাগলো। কি বিদঘুটে সে চাহনি, ফারাবির গা গুলিয়ে আসলো।

রিক খানিক টা কাছে আসতেই ফারাবি দেয়ালের সাথে সেঁটে গেল। রিক বিদঘুটে হাসলো, ফারাবির চোখ দুটো ছলছল করছে।
বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে ফারহানকে ডাকতে ইচ্ছে হচ্ছে।
রিক তার কালো হাত দিয়ে ফারাবি কে টাচ করতে যেতেই একটা শক্ত হাত ওকে টেনে উঠিয়ে নিলো।
ফারহানের চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। রিক কে মাটিতে পুঁতে ফেলতে পারলে ওর শান্তি হতো।
কিন্তু এই মুহূর্তে এই কাজ ও করবে না ওহ।
ফারাবির চোখ দুটো যেন প্রান ফিরে পেল। ছুটে গিয়ে ফারহান কে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর।
যার বুকে মাথা রাখলে ওহ সব থেকে নিরাপদ।
ফারহান কে দেখে ভরকে গেল রিক।ফারহান সম্পর্ক ও যতো টুকু জানে তাতে ওর কলিজায় কুলোলো না ফারহান কে আঘাত করার।
তাছাড়া এখন ঝামেলা করতে চায় না ওহ।
গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। ঠিক যেন চুর চুরি করতে এসে ধরা পরে গেছে।
ফারহানের চোখ দুটো দাবনলে ফেটে যাচ্ছে। ফারাবি নীরবে চোখের পানি ফেলছে।
পেছন ঘুরে ফারাবির দিকে তাকাতেই ফারহানের বুকে যন্ত্রণা করতে লাগলো।
দরজা লক করে দিয়ে ফারাবির কাছে বসলো।
কাঁপা স্বরে উচ্চারণ করলো
_ ফারাবি

ফারাবি নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো না আর।
ঝাঁপিয়ে পরলো ফারহানের বুকে। ফারাবির চোখের অতল নোনা জ্বলে ভেসে যাচ্ছে ফারহানের শার্ট।
ফারহান এক হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফারাবির মাথায় চুমু খেল।
মেয়েটা এতো টা ভয় পেয়ে গেছে যে কথা বলতে পারছে না।
ফারহান দু হাতে জড়িয়ে ধরলো, একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
ফারাবি হিচকি তুলতে তুলতে বলল
_ আমি এতো দূর্বল কেন ? আমি যদি আপনার অধিকার রক্ষা করতে না পারি?

ফারহানের চোখ ছলছল করে উঠলো। ফারাবি কে বুক থেকে উঠিয়ে এক দৃষ্টি তে দেখতে লাগলো।
ফারাবির দিকে এগিয়ে গেল ফারহান। ফারাবির গালে পরা চোখের পানি টুকু ঠোঁট দিয়ে শুষে নিলো।
ফারাবি চমকালো , ফারাবির কপালে লম্বা সময় নিয়ে চুমু খেলো ফারহান।
ফারাবির হিচকি থেমে গেছে, ফারহানের কান্ডে এখন খুব লজ্জা লাগছে ওর।
ফারহান ঝরা হাসলো এক হাতে ফারাবির কোমর জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবির শরীরে অদ্ভুত শিরশিরানি হলো।
ফারহান তার উষ্ণ ঠোঁট জোড়া ফারাবির চোখের পাতা তে ছোঁয়ালে।
ফারাবি দু হাতে খামচে ধরলো ফারহানের শার্ট।
এই মানুষ টার ভালোবাসায় কি এমন আছে ?
যার কারনে ওহ হারিয়ে যায় বারংবার ?

ফারাবির ভীষন লজ্জা লাগছে। ফারাবি মাথা টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
ফারহান রহস্য হেসে ফারাবির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
_ আমি যে ছুইয়েছি খারাপ লাগছে না ?

ফারাবি লজ্জায় পরে গেল। ফারহান তপ্ত হেসে বলল
_ তিন টে বছর এমনি এমনিই কাটিয়ে দিলাম। ইসস কি ভুল টাই না করেছি।

ফারাবি লজ্জা হাসলো। ফারহান ঝটকা মেরে ফারাবি কে কাছে টেনে নিলো।
ফারাবির হাত দুটো ফারহানের বুকে নিবদ্ধ। ফারহান আলতো হেসে ফারাবির কানের নিচে চুমু খেলো।
ফারাবি শিউরে উঠলো , ফারহান রহস্য হেসে বলল
_ পাগল হচ্ছিস ? মনে হচ্ছে কিছু ? অনুভূতি গুলো কি কিছু বলতে চাচ্ছে ?

ততক্ষণে ফারাবি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। ফারহান আবার একি প্রশ্ন করলো। ফারাবি মাথা ঝাঁকালো, ফারহান ঝরা হাসলো।
মেয়েটাকে আরো লজ্জা দিতে ধীর কন্ঠে বলল
_ ভালোবাসিস আমায় ?

ফারাবি চমকে উঠলো , চোখ গুলো যেন কপালে চরে গেছে ।
ফারহান মোহনীয় হেসে বলল
_ ইন্টারেস্ট সহ সব ফেরত নিবো তৈরি হ জান।

ফারাবির ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে। একটু আগে এমন এক বাজে পরিস্থিতি ঘটে গেল। আর ফারহান এখন কি সব বলে যাচ্ছে।

*

রিমি মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার ই সামনে দাড়িয়ে আছে ফারহান। ফারাবির মুখ টা একটুখানি হয়ে আছে। ফারাবির চোখে মুখে চিন্তার গভীর ছাঁপ।
ফারহান নিদারুণ শান্ত কিন্তু কথায় স্পষ্ট রাগ ফুটিয়ে বলল
_ কি বলেছিলাম তোকে ?

রিমি মাথা নিচু করেই রইল। ফারহান চোয়াল শক্ত করে বলল
_ মুখ দিয়ে কথা ফুটছে না কেন ?

_ রিমির

_ চুপপ তোকে কিছু জিঙেস করেছি ? না হতো , না হলে একদম চুপ থাক।

ফারাবি চুপসে গেল। এখানে রিমির কি দোষ হতে পারে?
ফারহানের চোখ থেকে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে। রিমির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
_ বলেছিলাম ওর পাশে থাকতে , খেয়াল রাখতে ? তুই কি করেছিস ?

_ ফারহান ভাইয়া আমার

_ স্টপ , আর একটা কথা ও না।
ফারাবি আবার চুপসে গেল। ফারহান রিমি কে ধমক লাগাতেই রিমি ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো।
কান্না চেপে রেখেছিলো এতোক্ষন । এখন কান্না গুলো সব বের হয়ে আসছে। কান্না মিশ্রতি কন্ঠে বলল
_ আমি কি করতাম ? আমাকে চলে যেতে বলেছিলো তাই তো আমি

_ চুপ আর একটা কথা ও না।

রিমি চুপ হয়ে গেল। তবে কান্না থামছেই না। ফারহানের রাগ হচ্ছে, নিজের প্রতিই রাগ হচ্ছে।
মাথার চুল চেপে ধরে বলল
_ দুটো এক সাথে থাকবি। কাউকে যেন আলাদা না হতে দেখি।
নেক্সট টাইম এই ভুল করলে কি হবে ভাবতে ও পারবি না।

ফারহান আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো। দুজন কে এক পলক দেখে রুম থেকে গটগট পায়ে ঝড়ের গতি তে বের হয়ে গেল।

রিমি কাঁদতে কাঁদতে ফারাবির কাছে এসে বসলো। ফারাবির ভীষন খারাপ লাগছে, মেয়েটা ওর জন্য বকা খেলো।
ফারাবির দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রিমি বলল
_ ভাইয়া শুধু শুধু আমাকে বকে গেল। কি এমন দোষ করেছি আমি ?
কথা বলবো না আর ওর সাথে। আমি কি করবো যদি রিক ভাইয়া আমাকে চলে যেতে বলে।
আর এতে সমস্যা টাই বা কি?

ফারাবি ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো।মেয়েটা কে শুধু শুধু বকে গেল ফারহান।

*

ফারাবির বাবা ফাইল হাতে কাজ করছিলেন। তার ই পাশে বসে বসে কাঁথা সেলাই করছেন ফারাবির মা। কাঁথা সেলাই করা টা ওনার খুব পছন্দ।

_ আসবো ?

রিকের মায়ের ডাকে ধ্যান ভাঙ্গলো মিসেস রহমানের ।
মিসেস রহমান লম্বা হেসে বললেন
_ আরে ভাবি আসো।

রিকের মা ভেতরে আসলেন।ফারাবির বাবা লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বললেন
_ কিছু বলবেন ভাবি?

_ হ্যাঁ ভাইজান। জানেন ই তো রিক ফারাবির জন্য কতোটা পাগল। তো বলছিলাম কি ফারাবির তো ফাস্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে বহু দিন।
যদি সামনের মাসেই বিয়ে টা সেরে ফেলা যায়। আসলে আবার ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসলে সমস্যা হবে ।

মিস্টার রহমান ফাইল সাইট করে রেখে একটু ভাবলেন। তারপর খানিকটা চিন্তিত মিশ্রিত কন্ঠে বললেন
_ ভাবি সে তো ঠিক আছে। তবে ফারাবির সাথে ও তো কথা বলতে হবে।
মেয়েটা তো অমত করছে না তবে মুখ ফুটে কিছু বলে ও নি।

_ হ্যাঁ তুমি ভালো কথা মনে করেছো।

রিকের মা প্রশস্ত হেসে বললেন
_ আরে ভাই জান এতো ভাবছেন কেন। আমাদের ফারাবি নিশ্চয় রাজি। আজকাল কার মেয়েরা রাজি না থাকলে সবার আগে বলে দেয়।
ফারাবির অমত থাকলে তো নিশ্চয়ই বলে দিতো।
তাছাড়া রাজি না হওয়ার তো কোনো কারন নাই আমার রিক তো কতো ভালোবাসে ওরে।
দেখতে শুনতেই বা কম কিসের ?

রিকের মায়ের শেষ কথা টা ভালো লাগলো না কারোর। রাজি না হওয়ার অনেক কারন থাকতেই পারে।
তবে ফারাবি রাজি না হলে তখনি মানা করে দিতো এটা ও ঠিক।
সব চিন্তা বাদ দিয়ে ফারাবির বাবা বললেন
_ সামনেই তো ফারাবির জন্মদিন। জন্মদিন টা শেষ হলেই না হয় বিয়ের কথা বলবো।

রিকের মা অদ্ভুত হাসলেন। ছেলেটা তার পাগল করে দিচ্ছে, অবশ্য ফারাবি পাগল করে দেওয়ার মতোই মেয়ে।
ওনার খুশির আরেক টা কারন পাড়ার অন্য মহিলাদের ছেলের বউ দের থেকে ওনার ছেলের হবু বউ বেশি রূপবতী।
সবাই কে তাক লাগিয়ে দিবে , ভাবতেই ওনার চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে গেল।

*

রিফাত কে নিয়ে বের হয়েছে ফারহান। এই রাত দশটা বাজে বের হওয়ার বিশেষ কারন টা বুঝলো না রিফাত।
একটা রেসটুরেন্ট এ গিয়ে পিজ্জা , কোল্ড ড্রিঙ্কস, কালা ভোনা আর বাটার নান কিনে নিলো।
তারপর একটা চকলেটের সপ থেকে দু বক্স চকলেট কিনে নিলো।
রিফাত সন্তর্পণে সব দেখছে। ফারহান লম্বা করে হেসে বলল
_ যাহ বলার বলে ফেল।

_ এতো সব কিসের জন্য ?

_ খাবো তাই।

_ আমরা চকলেট খাবো ?

_মোটে ও না , তবে দুটো বাচ্চা খাবে।

রিফাত ভ্রু কুঁচকে নিলো। ফারহান ঝরা হেসে বলল
_ রিমি কে অকারনেই খুব বকেছি , তার জন্য ই চকলেট দিয়ে মান ভাঙানোর চেষ্টা করবো।
আর এক সাথে খাবার খেতে খেতে আড্ডা দিবো।

রিফাত বাঁকা হেসে বলল
_ তোর কাজের একটা হলো অকারনেই বকা দেওয়া।

_ ভুল। আমি অহেতুক বকি না , তবে রাগ টা বেশি করি এই যা। তাছাড়া আমার মাঝে আর কোনো ডিফেক্ট নেই।

রিফাত আফসোসের সুরে বলল
_ ডিফেক্ট থাকলে তো বেশ ভালোই হতো। কলেজের সুন্দরী মেয়ে গুলো আমাদের দিকেও ফিরে তাকাতো। আর এই মনিকা প্যারার সাথে প্রেম ও হতো না।

বলতে না বলতেই রিফাতের ফোন বেজে উঠলো। রিফাত ফোনের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো।
ফারহান ভ্রু নাচিয়ে বলল
_ আহ গ্যায়া তেরা দুলহান।

রিফাত তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ আজ আমি শেষ।

ফারহান লম্বা করে হাসলো। আর রিফাত মুখ টা ছোট করে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here