স্বপ্নের প্রেয়সী ১১+১২

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_11
#post_time_রাত_12_30

বেশ অনেক দিন পর কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে ফারাবি। summer vacation এর ছুটি শেষ হয়ে গেছে। কলেজ এ ফাস্ট ইয়ার টা বেশ ভালো গেলে ও সেকেন্ড ইয়ার টা বেশ যন্ত্রণা দিচ্ছে।
ফাস্ট ইয়ারে কোনো রকম পড়াশোনা করেই কাটিয়েছে, কিন্তু সেকেন্ড ইয়ারে এসে প্রচন্ড চাপ খাচ্ছে।
ভ্যাকেশনের ছুটিতে বইয়ের পাতা ও খুলে দেখে নি ওহ।কি করেই বা দেখবে ?
সেকেন্ড ডের ছুটি থেকেই তো ফারহান এসে হাজির।
দশ টা দিন টেনশনে টেনশনেই কাটিয়ে দিয়েছে। ইসস কি যন্ত্রণা , নিশ্চয় রসায়ন স্যার কান ধরিয়ে রাখবেন।
ব্যাটা বুড়ো বড্ড ডেঞ্জারাস। এই দামরা ছেলে পুলেদের কান ধরে দাঁড়া করিয়ে রাখে ।
ইসস পুরো ক্লাসের সামনে কি লজ্জা টাই না পেতে হয়। সাথে যদি ফোরন দিতে সিনিয়র আর জুনিয়র দের কেবলা হাসি থাকে তাহলে তো কথাই নেই।
ফারাবি ক্লান্তি ঝেরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেল্ট ঠিক করতে লাগলো।
ইসস কলেজের চল্লিশ চত্তরে ও আউট ড্রেস এলাউ নাহহ কি যন্ত্রণা।
অথচ আজকাল বড় বড় কলেজ ভারসিটি তে দেখা যাচ্ছে আইডি কার্ড গলায় ঝুলানো আছে তো, তাহলেই একদম পারফেক্ট ।
নো ঝঞ্ঝাট নো ঝামেলা, লাইফ ইজ ঝিঙ্গালালা।
ফারাবি কাঁধে কলেজ ব্যাগ নিয়ে করিডর দিয়ে নিচে চলে আসলো।
ফারাবির মা ব্রেডে জেলি লাগাতে লাগাতে বললেন
_ বস নাস্তা দিচ্ছি।

ফারাবি থমথমে মেজাজে চেয়ার টেনে বসলো।
কোথা থেকে ঝরের বেগে রিফাত এসে ফারাবির মাথায় গাট্টা মেরে দিলো।
ফারাবি ভ্রু কুঁচকে থেকে বলল
_ মাথা ঠিক আছে নাকি পাবনা তে কল করে সিট খালি করতে বলবো ?

রিফাত সবুজ আপেল টা তে বড় করে কামড় বসিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলল
_ তোকে এতো কষ্ট করতে হবে নাহহ।
আমার একটা মাত্র আদরের ছোট বোন তুই।
তোর জন্য পাবনার সিট টা আমি ই ভাঁড়া করে দিবো।টেনশন নিছ নাহহহ

ফারাবি মুখ উচিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি রিফাত থামিয়ে দিয়ে লজ্জা হাসলো।
গ্লাসে ফলের জুস ঢালতে ঢালতে বলল
_ থ্যাংক ইউ বলতে হবে নাহহহ আর।
বড় ভাই তোর এই টুকু রেসপন্স তো আছেই।

ফারাবি কাঁদো কাঁদো মুখ করে চেঁচিয়ে বলল
_ বড় মাহহহ ।

মুহুর্তের মাঝে খুন্তি হাতে রিফাতের মা এসে হাজির।
ফারাবি ভ্যাগা ভ্যাগা মুখ করে আদুরে কন্ঠে বলল
_ দেখো নাহহহ তোমার পাজি ছেলে আমাকে পাবনা পাঠাবে বলছে।

রিফাত এক গাল হাসতেই কানে টান পরে ওর।
ফারাবি হাসি হাসি মুখ করে ঝরা কন্ঠে বলল
_ বড় আব্বু তুমি। ওয়াও কখন এসেছো ?

_ দাঁড়া আগে এই হাঁদা টাকে শায়েস্তা করে নিইই।

রিফাত ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো। এখন নিশ্চয়ই বেচারা কে ধোলাই দিবেন ওনি।

ফারাবি রিফাত কে ভেঙ্চি কেটে চেয়ার থেকে উঠে রিফাতের বাবা কে জড়িয়ে ধরলো। রিফাতের বাবা এক গাল হাসতেই ফারাবি বলল
_ ওর কথা ছাড়ো তো। পাবনা থেকে কুড়িয়ে এনে একদম ই ঠিক করো নি তোমরা।

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। রিফাত দাঁতে দাত চেপে বলল
_ ফাজিল মেয়ে তোকে তো আমি

এই টুকু বলেই ঘাড় ঘুরিয়ে আশে পাশে চোখ বুলালো। ডিবাইন থেকে কুশন নিয়ে ছুঁড়ে মারলো।
ফারাবি ক্যাঁচ ধরে নিয়ে বলল
_ ফারাবি আফনান আমি হুহহ। আমার সাথে লাগতে এসো নাহহহ।

বলেই ডোন্ট কেয়ার স্মাইল দিলো। রিফাত ভ্যবলার মতো তাকিয়ে রইলো।

*

কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ফারহান।
জনবহুল পূর্ন এক বস্তির কাছে যাওয়াই এই রাস্তার মূল উদ্দেশ্য।
ভোর বেলা রওনা হয়েছে আর এখন নয়টা বাজে।
এতো চিপাচাপা রাস্তার আর অলি গলির জন্য এক ঘন্টার পথ তিন ঘন্টা লেগে গেছে।
এখন আধ ঘন্টা ধরে হেঁটে যাচ্ছে।
চারিদিকে ব্রিশ্রি নোংরা , থেকে থেকেই কলকারখানার ময়লার স্তূপ। ফারহানের দম বন্ধ হয়ে আসছে। তপ্ত রোদ্দুরে মাথা থেকে কপাল বেয়ে টপ টপ করে ঘাম ঝরে যাচ্ছে।
পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছে নিলো ওহহ।
সামনেই একটা ময়লা পুকুরের ডোবা। সেখান থেকে পঁচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। কিছু টা দূর থেকেই সেই গন্ধ টা ফারহানের ঘ্রান ইন্দ্রিয় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
অসহ্য হয়ে ফারহান মাস্ক পরে নিলো। তবু ও কিছু টা গন্ধ নাকে এসে লাগছে।
অথচ বস্তির মানুষ গুলো স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে যাচ্ছে।
আসলেই মানুষ অভ্যাসের দাস।
অভ্যাস মানুষ কে কি না করতে শেখায়।
ফারহান ফোঁস করে শ্বাস ফেলল।
মাস্ক এর উপর হাত চাঁপা দিয়ে আগাতে লাগলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বস্তিতে পৌছে গেল।
বস্তিতে এসে রায়হান আর রাফি কে কল করলো।
রায়হান আর রাফি বললো তাঁরা এক ঘন্টার মধ্যে সবাই কে নিয়ে চলে আসবে।
ফারহান ঘন্টা খানেক মনোযোগ দিয়ে পুরো বস্তি ঘুরলো।
ছিন্নমূল মানুষ গুলো বস্তির আনাচে কানাচে পরে আছে।
গাদা গাদি করে সবাই এক সাথে বাস করছে।
এতো শত নোংরা ওদের মন কে ছুঁতে পারছে নাহহ।
প্রাণোচ্ছল ভাবেই চলছে ওরা। ফারহান তপ্ত শ্বাস ফেলল। বস্তির বাচ্চা গুলো যেন ভুত দেখার মতো চমকে আছে।
শুট বুট সান গ্লাস পরা চকচকে রঙের সাহেবের দেখা এই বস্তি তে মিলার কথা নাহহহ।
আশে পাশের অনেক মানুষ ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে।
কিন্তু কেউ কোনো প্রশ্ন করার সাহস পাচ্ছে না।
ঘন্টা খানেক হলে ও রায়হান রা আসলো না।
বোধহয় জ্যামে আটকে আছে , ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাঠের পাশে ছোট্ট কাঠের বেঞ্চ টা তে বসলো।
পাশেই চায়ের ছোট্ট একটা দোকান।
ফারহান চা অর্ডার করতেই দোকানী চা দিয়ে গেলেন।
গাঢ় লাল রঙের রঙ চা , সাথে কুঁচি করে কাঁটা লেবুর টুকরো।
চায়ের কাঁপে চুমুক দিতেই মন ভরে উঠলো ওর।
টঙ্গের দোকানের চা গুলোর অদ্ভুত স্বাদ হয়। একটু হাইজিন মেইনটেন্ট করতে পারলেই হতো।
ফারহান ঘন শ্বাস ফেলল। ফারাবির কথা ভাবতে লাগলো ওহহ।
সকালে ফারাবিদের বাসাতে গিয়েছিলো , কিন্তু ফারাবি তখন ঘুম থেকে উঠে নিহ।
না উঠার ই কথা, কারন ভোর ছয় টা বাজে তখন।
তাই দেখা হয় নি , ভেতর থেকে এক ফালি শ্বাস এসে ভর করলো ওকে।
দোকানী ধীর গতিতে এগিয়ে এসে ভীত কন্ঠে বলল
_ সাহেব আপনে ঠিক আছেন ?

দোকানীর কথা তে মাথা উঁচু করে তাকালো ওহহ।
দোকানীর বয়স সত্তর কাছাকাছি। এই বয়সে এসে ও কতো সুন্দর চা বানান ওনি।
দোকানী আবার ডাক দিলো। ফারহান অপ্রস্তুত হেসে বলল
_ আপনি খুব সুন্দর চা বানান দাদা, স্বাদ টা অপূর্ব।

ফারহানের মুখে এতো টা প্রশংসা আর দাদা বলে ডাক শুনতেই চোখ ছলছল করে উঠলো ওনার।
কাঁধে থাকা গামছা টা দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে বলল
_ ধন্যবাদ সাহেব।

ফারহান তপ্ত হেসে বলল
_ সাহেব বলবেন না দাদা। কেমন কেমন যেন লাগে।

বৃদ্ধ বিচলিত চোখে তাকালো। স্বচ্ছ হেসে ফারহান বলল
_ আপনাকে দাদা বলে ডাকলাম আমি, আপনি না হয় দাদাজান বলে ডাকবেন।

কৃতঙ্গতায় ভরে উঠলো বৃদ্ধর চোখ।
ফারহান শান্ত স্বরে বলল
_ পাশে বসুন দাদা।

বৃদ্ধ বসলো , ফারহান বলল
_ কে কে আছে আপনার পরিবারে ?

_ এখন তো, আমার বউ আর আমি ই আছি। পোলা ছিল দুইটা, একজন চাকরি করে আর অন্যজন বিদেশ থাকে।
আমাদের দেখার সময় কোথায়।

নিঃসংকোচে জবাব তার। ফারহান খানিক টা অবাক হলো। বৃদ্ধর মুখে স্পষ্ট শুদ্ধ ভাষা।
ফারহানের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বৃদ্ধ উঠে গেল।
কাস্টমার এসেছে তার ,চায়ের কাপ টা বেঞ্চে রেখে ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার ডায়াল করলো ফারহান।
একবার বাজার পর ফোন রিসিপ হলো নাহহ।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরেক বার কল দেওয়ার পর ও রিসিপ হলো নাহ।
ক্লান্তির নিশ্বাস ফেলে ম্যাসেজ দিলো ফারহান। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই ফোন বেজে উঠলো ওর।
ফারহান সরস হাসলো , এই মেয়েটা সোজা কথা শোনার মানুষ নাহহ।
ফোন রিসিপ করেই ফারহান বলল
_ কয়েকটা কথা বলবো জাস্ট। একটা ও যেন মিস না হয়।

ওপাশ থেকে কোনো উত্তর এলো নাহহ।
ফারহান উত্তরের আশা না করেই বলল
_ আমি বরাবর ই রগচটা জানিস তো। তবে এতো টা ও বাজে নই যে তোর স্বাধীনতা কে বেঁধে রাখবো।
তবে ছেড়ে ও দিবো সেটা ও কিন্তু নাহহ। ছেলে বন্ধু হাজার টা থাকলে ও অসুবিধা নেই আমার। শুধু মাথায় রাখবি চরিত্রের দোষ আছে এমন ছেলের ধারে কাছে ও যাবি নাহহ।
আর তোদের আই সিটির নতুন টিচার টা যে এসেছে তার সামনে যেন ভুলে ও না দেখি।

ফারাবি ভ্রু কুঁচকে নিয়ে রগরগা মেজাজে বলল
_ কেন ? কি হয়েছে ? ওনি তো খুব ভালো , ইনফেক্ট প্রজেক্ট সলভ করতে হেল্প ও করবে বলেছেন।

ফারহান শান্ত কন্ঠে বলল
_ যাহ বলেছি তাই করবি। প্রজেক্ট সলভ করতে আমি হেল্প করবো।
ওকে

বলেই ফারহান ফোন রেখে দিলো। টেবিলের উপর ঝটকা মেরে ফোন টা ফেলল ফারাবি। এই মানুষ টা সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি করে। ফারাবি সে দিকে পাত্তা না দিয়ে পড়া তে মন দিলো।

*

তিন ঘন্টা আলোচনার পর ঠিক হলো বস্তিতে মডেল প্রজেক্ট করা সম্ভব সেটা ও এক বছরের মধ্যে ই সম্ভব।
ফারহান বুক ভরে শ্বাস নিলো। পাঁচ জন বিজন্যাস ম্যান এর সাথে ডিল সাইন করেছে ফারহান।
পুরো বস্তি টার রোল মডেল ই পাল্টে দিবে ওহহ।
বস্তির যে পাশে ময়লার স্তূপ, ডোবা সব ভরাট করে ফেলবে।
সরকার থেকে পারমিশন নিয়ে বস্তি ভেঙে বড় বড় দালান করা হবে।
বস্তি তে থাকা প্রতি টি পরিবার কে এক টা করে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। কল কারখানার ময়লা ফেলার জন্য বড় হাউস করা হবে আর সেই সব আর্বজনা দিয়ে বিভিন্ন রকম সার তৈরি হবে।
এতে করে বস্তির মানুষ দের কর্মসংস্থান ও হয়ে যাবে।
স্কুল করে দেওয়া হবে , একটা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও করা হবে সাথে পার্ক।
সব মিলিয়ে পরিবেশ টা কে ই বদলে হাই লেভেল করে ফেলবে।
একজন ডিলার ফারহানের সাথে হাত মিলিয়ে বলল
_ ইউ আর গ্রেট মিস্টার ফারহান। হোয়াট এন আইডিয়া। বস্তির মানুষ গুলোর জীবন পাল্টে যাবে সাথে আমাদের ও প্রফিট হবে।

ফারহান স্মিত হাসলো। বড় দালান করা হলে , কয়েক টা বিল্ডিং এই সবার বাসস্থান হয়ে যাবে।
আর প্রচুর ভবন থেকে যাবে যাহহ বিভিন্ন প্রজেক্ট ফ্ল্যাট আবাসিক স্থান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
সব মিলিয়ে ভালো কিছু ই হবে।
ডিলার দের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বস্তি থেকে চলে আসলো ওহ।
বস্তির মানুষ গুলোর চোখ চক চক করে উঠলো।
তারা বিশ্বাস করতে পারছে নাহ বহুতল ভবনে তাদের ও নিজস্ব স্থান হবে।

*

সব কাজ কমপ্লিট করে বাড়িতে ফিরতে রাত হয়ে গেল ফারহানের।
ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে গা এলাতেই বুকের ভেতর যন্ত্রণা হতে লাগলো।
ফারাবি কে দেখার জন্য মন আকু পাকু করতে লাগলো।
কিন্তু এভাবে এতো রিক্স নিয়ে বার বার যাওয়া যাবে নাহহ।
এতে করে বিষয় টা ঘেঁটে যেতে পারে।
ঘুম আসছে নাহহ ওর। ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে ও শান্তি লাগছে নাহহহ
চাঁদ টা নিভু নিভু , বোধহয় আকাশে মেঘ করেছে।
লম্বা দম ফেলে ব্যলকনি থেকে বের হয়ে আসলো ফারহান।
ছাঁদে যাওয়া প্রয়োজন , কারন এখন সে সুখ টান দিতে যাচ্ছে।
ফারহান তাচ্ছিল্য হেসে ছাঁদের দিকে রওনা হলো।
প্রেয়সীর যন্ত্রণা লাঘম করেতেই সিগারেট নামক মহামারি তে প্রথম সুখ টান দিয়েছিলো ওহহ।
প্রায় সময় এলকোহলে ও ডুবে থাকতো।
কারন তখন ওর ইচ্ছে হতো ছুটে চলে আসতে।
এক রাশ অভিমান রাগ আর ক্ষোভ আর পরিস্থিতির কারনে আসতে পারে নি ওহহহ।
সিগারেটে সুখ টান দিয়ে অধর কোনে তাচ্ছিল্য ফুটিয়ে পেছন ঘুরতেই মুখ টা একটু খানি হয়ে গেল ওর।
তপ্ত শ্বাস ফেলে , ভীত কন্ঠে বলল
_ ফারাবি তুই এখানে।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_12

কাঠখড় মেজাজে দাড়িয়ে আছে ফারহান । চারদিকে মৃদু হাওয়া বইছে । সন্ধ্যার লাল আভা চারিদিকে মোহ ছড়াচ্ছে । সামনের বিশাল বড় লেক টা লালচে বর্ন ধারন করেছে । মূলত পড়ন্ত বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যার লাল আলোই এর উৎস। পকেটে দু হাত গুঁজে দিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিলো ফারহান। জীবন টা এলোমেলো হতে চলেছে। এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে ফারাবি কে হারিয়ে ফেলবে ওহহ।

লেকের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। মৃদু বাতাসে দোল খেতে লাগলো স্লিকি চুল গুলো।

আজ বিকেলের ঘটনা

রিকের ফ্যামিলি থেকে বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছে খুব। রিক যেন হুমড়ি খেয়ে পরেছে ফারাবির দিকে । রিক কে সরাসরি না বুঝালে হয়তো বুঝবে না। তাই ফারহান রিক কে ডেকে পাঠায়। ফারহানের সাথে রিকের সাপে নেউলে সম্পর্ক। দুজনের পরিচয় ঘটার সপ্তাহ খানেক বাদেই রিকের হাত ভেঙে দেয় ফারহান। অবশ্য এর পেছনে গুরুত্বর কারন ও আছে।
রিক আসার পর ফারহান বলে ফারাবির থেকে সরে যেতে। কিন্তু রিক অট্টহাসি তে ফেটে পরে। প্রমিস করে ফারাবি কে জীবনে ও ছাড়বে নাহহ ওহ। ফারাবি কে যেভাবেই হোক ওর চাই ই চাই। ফারহানের রাগ উঠে যায় কিন্তু তবু ও কিছু বলে নাহহ। রিকোয়েস্ট করে চলে যেতে রিক তাচ্ছিল্য হেসে বলে পায়ে ধরলে ও যাবে নাহহ। ফারহানের রাগ মাথায় চরে বসে। তেতিয়ে যায় ওর দিকে, রিক মোহনীয় হেসে বলে তিন মাস বাদে বিয়ের কথা ছিলো। এখন এই মাসের মধ্যেই ফারাবি কে বিয়ে করবে ওহ। তার জন্য যা কারার প্রয়োজন তা করবে ওহ। তবুও ফারাবি কে কোনো ভাবেই ছাড়বে না।
ফারহান রেগে গিয়ে রিকের নাক বরাবর ঘুসি মারে। রক্ত বের হয়ে যায় রিকের নাক থেকে তবুও হাসতে হাসতে বিনাবাক্যে চলে যায় ওহহ। হয়তো জয়ের কাছাকাছি এসে গেছে ভেবেই হাসছিলো ওহ। সেই থেকে লেকের দিকেই দৃষ্টি দিয়ে দাড়িয়ে আছে ফারহান।

ফারহানের ফোন বেজে উঠলো। লম্বা করে শ্বাস নিয়ে ফোন রিসিপ করলো। তারপর কিছু কথা বলেই চলে যায় অফিসে । ডিলিং প্রজেক্ট টা এক বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে। এটা নিয়ে কেউ একজন স্বপ্ন দেখেছিলো যে। তার স্বপ্ন তো সত্যি করতেই হবে ।

*

বই হাতে একের পর এক অংক কষছে ফারাবি। সাথে ফারহান কে এক গাঁদা গালি ও মেরে যাচ্ছে ওহ। সবার সামনে ভদ্র লোক সাজে অথচ সিগারেট ঠিক ই খায়।ছিইইই আর ঐ জ্বলন্ত ঠোঁটে কি না চুমু খেয়েছে ওহহ। ভাবতেই গা গুলিয়ে আসছে ওর। কোন আক্কেল চুমু খেয়েছে কে জানে।
সেদিন ফারাবি নোট কমপ্লিট করতে রিমির কাছে গিয়েছিলো। দুজন ই অষ্টরম্বা একটা অক্ষর ও লিখে নি। সন্ধ্যার পর থেকে রাত এগারোটা অব্দি টানা লিখেছে।
দুজন ই ক্লান্ত ছিলো তাই রিমি কিচেনে কফি বানাতে গিয়েছিলো। আর ফারাবি ফুরফুরে মেজাজ গড়তে ছাঁদে। তখনি ফারহানের হাতে জ্বলন্ত সিগারেট দেখতে পায়। ফারাবি সিগারেটের গন্ধ একদম ই সহ্য করতে পারে নাহ। ফারহানের হাতে সিগারেট দেখেই ছাঁদ থেকে নেমে যায়। ফারহান ডাকলে ও শুনে নাহহ ওহ।

বিরক্ত লাগছে ওর। আই সিটি প্রজেক্ট টার কিছুই বুঝতে পারছে নাহহ। ফারহানের জন্য স্যারের থেকে হেল্প ও নিতে পারছে নাহহহ।
মাথা চেপে ধরলো ফারাবি। নাহহহ এই প্রজেক্ট একা একা করা সম্ভব না। ফারহানের কথা শুনবে না ওহহ। কাল ই যাবে আইসিটি স্যারের হেল্প নিতে।

*

কলেজে এসে থেকে আধ ঘন্টা ধরে ভাবছে স্যারের হেল্প নিবে নাকি নাহহহ।
করিডোরে পায়চারি করছে ফারাবি। চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়। হঠাৎ ই পেছন থেকে ডাক
_ হাই ফারাবি।

ফারাবি পেছন ঘুরতেই দেখলো আইসিটি স্যার। সামান্য হেসে বলল
_ হ্যালো স্যার।

_ উফফফ তোমাকে না বলেছি স্যার বলবে নাহহ।
নাম ধরে ডাকবে , সাবিত বলবে ওকে।

ফারাবি মেকি হাসি দিলো। স্যারের নাম ধরে ডাকা টা দৃষ্টি কুটু। যদি ও সাবিত ইয়ং, ভারসিটি থেকে কয়েক মাস আগেই বের হয়েছে। তবে স্যার তো স্যার ই হয়।

_ আচ্ছা তো এভাবে পায়চারি করছিলে কেন ? এনিথিং রং ?

_ এক্সচেলি স্যার । আইসিটি প্রজেক্ট নিয়ে হেল্প চাইবো নাকি তাই ভাবছিলাম।

সাবিত হু হু করে হেসে উঠলো। ফারাবি সামান্য ভ্রু কুঞ্চিত করতেই সাবিত বলল
_ ডোন্ট ওরি। আমি তো বলেছি হেল্প করবো। এতো হেজিটেশন কেন করছো ? নির্দ্বিধায় ই চাইতো পারো। আম অলয়েজ রেডি ফর ইউ।

ফারাবি ভদ্রতার খাতিরে হালকা হাসলো । তবে ফারহান জানতে পারলে তাকে চিবিয়ে খাবে।
ফারাবি কে আইসিটি প্রজেক্ট দেখাচ্ছিলো সাবিত তখনি একটা শব্দ ভেসে আসে ওর কানে।
_ ফারাবি

মুহুর্তেই কলিজা শুকিয়ে যায় ওর। কারন লোকটা ফারহান । শুকনো ঢোক গিলে নেয় ফারাবি। কোনো মতে পেছন ঘুরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পরলো।
সাবিত ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কে আপনি ?

ফারহান সাবিতের কথার কোনো প্রতিউত্তর করলো নাহহ। শান্ত কিন্তু ঝাঁঝালো সুরের মিশ্রনে বলল
_ ফারাবি চল আমার সাথে।

ফারাবি থরথর করে কাঁপছে। সাবিত একবার ফারাবির দিকে আবার ফারহানের দিকে তাকাচ্ছে।
ফারহান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ফারাবির দিকে এগিয়ে গেল ।
সাবিত আবার বলল
_ কে আপনি ?

ফারহান কোনো ভ্রু ক্ষেপ না করে ফারাবির কাছে গেল। ফারহানের হেঁয়ালিতে সাবিত বিরক্ত হলো।
বেঞ্চে রাখা ফারাবির ব্যাগ টা হাতে নিয়ে নিজ হাতে ফারাবি কাঁধে পরিয়ে দিলো।
ফারাবি ভয়ে একদম চুপসে গেছে। ফারহান আলতো হাতে ফারাবির কপালে আঁচড়ে পরা চুল গুলো গুছিয়ে দিলো।
ফারাবি কেঁপে উঠলো , ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবির হাত ধরলো।

আবিত এগিয়ে এসে বলল
_ ওর হাত ধরেছেন কেন ? পরিচয় ও দিচ্ছেন নাহহ , কি ধরনের ম্যানার্স এটা ?

ফারহান সে দিকে পাত্তা দিলো নাহহ । পকেট থেকে একটা কার্ড বেঞ্চে রেখে ফারাবির হাত ধরে বেরিয়ে গেল। সাবিত ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো।
সব কিছুই তার মাথার উপর দিয়ে গেছে। বেঞ্চে রাখা কার্ড টা তুলে ফারহানের পরিচয় দেখে নিলো।
তবে ফারাবির সাথে ওর সম্পর্ক টা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো নাহহ।

*

ফুল গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে ফারহান। তার ই পাশে গুটিয়ে জড়সড়ো হয়ে বসে আছে ফারাবি। মনে হচ্ছে একটু টোকা লাগলেই ভ্যাঁ করে কেঁদে দিবে।
হাত স্টিয়ারিং এ থাকলে ও ফারহানের নজর ফারাবির দিকে।
এতোক্ষন রাগ হলে ও এখন রাগ লাগছে নাহহ ওর।
এভাবে কাঁদো কাঁদো মুখ করে থাকলে কি রাগ করা যায়।
ফারহান ঝরা হাসলো, মেয়েটা কিচ্ছু বুঝতে চায় নাহহ ।
কারন ছাড়া কি ফারহান ওকে বারন করতো ? হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষায় চমকে যায় ফারাবি। ভয়ে আর ঘাপটি মেরে বসে। শুকনো ঢোক গিলে আড়চোখে ফারহানের দিকে তাকায়।
ফারহানের মুখ টা দেখতেই ফারাবির চিত্ত কেঁপে উঠে।
ফারহান গম্ভীর ভাবে গাড়ি থেকে নেমে ফারাবি কে বলল
_ তোকে কি ইনভাইট করে নামানো লাগবে ?

ফারাবি বিনাবাক্যে নেমে যায় যেন কোনো রোবট।
ফারহান মুখ চেপে হাসলো, ভয় পেলে ফারাবি কে কি মিষ্টি টাই না দেখায়।
সব থেকে সুন্দর লাগে যখন ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদে।
কিন্তু সেটা তখনি হয় যখন অভিমান নিয়ে কাঁদে ওহহ।
ফারহান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ চল আমার সাথে , আজ তোকে ভুত দর্শন অব্দি করিয়ে আনবো।

ফারাবি কেঁপে উঠলো , ভুতের কথা ভাবতেই গলা শুকিয়ে গেল।
ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবির হাত ধরে নিয়ে গেল।
ফারাবি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল
_ আমি আর করবো না এমন।

_ ভুল করলে তার শাস্তি তো পেতেই হবে।

_ প্রমিস আর করবো না এমন।

_উহুহ শুধু কথাতে তো চিড়ে ভিজবে না খুকি।

খুকি কথা টা শুনে ফারাবি মুখ টা ছোট করে নিলো।
খুকির কি দেখলো এখানে ?

ফারহান আনমনে হাসতে লাগলো। ফারাবির সে দিকে ধ্যান নেই। ফারাবি মত্ত কি হবে তার শাস্তি তা নিয়ে । মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর ফারহান বলল
_ যদি তোকে মেরে ফেলি আজকে ?

ফারাবি কিছু বলল নাহহ। পৃথিবী উল্টে গেলে ও এই কাজ কখনো ফারহানের দ্বারা সম্ভব নাহহ।
ফারহান সরস হেসে বলল
_ সবি বুঝিস, আবার কিছুই বুঝিস নাহহ।

ফারাবি কোনো প্রতিক্রিয়া করলো নাহহ। ফারহান ক্লান্তির নিশ্বাস ফেলে ফারাবি কে নিয়ে হাঁটা ধরলো।
কিছুদূর যেতেই ফারাবি চোখ ঝাঁঝিয়ে উঠলো।
কারন আশে পাশে শুধু গোলাপ আর গোলাপ। চোখ যত দূর যায় শুধু গোলাপের বাগান। ফারহান মোহনীয় হেসে বলল
_ শাস্তি দিলাম নাহহ যাহহ। এবারের মতো মাফ করে দিলাম।

ফারাবির চোখ চকচক করে উঠলো। ফারহান আশ্বস্ত করে বলল
_ যত গোলাপ নেওয়ার নিয়ে নে।

ফারাবি কে আর পায় কে। ফারহান হাত আলগা করতেই ফারাবি দৌড়ে চলে যায়। কলেজ ড্রেস পরুয়া মেয়েটা প্রাণোচ্ছল ভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে।
যেন মুক্ত বিহঙ্গ , ঠিক যেন প্রাণখোলা আকাশের রুপোলি রঙা চাঁদ।

ফারাবির চঞ্চলতা, প্রকৃতির সাথে নিজেকে রাঙানো সব কেমন টানছে ওকে।
দু হাতে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করছে । টুপ করে ফারাবির ফুলকো গাল দুটো তে চুমু দিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। আর ফারাবি যখন লজ্জায় লাল নীল হবে তখন ওকে আর ও বেশি লজ্জা দিবে ফারহান।
তারপর আষ্ঠেপৃষ্ঠে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিবে।
নিজের কল্পনাকে ভাবতেই ফারহান প্রাণখোলা হাসে।
কি সব পাগলি ই না বয়ে চলছে ওর মনে । প্রেমে পাগল না হলে কি চলে ?
কতো শত মানুষ প্রেমে বৈরাগী হয়েছে। পাগল তো ওকে হতেই হবে ।

ফারাবি একের পর এক ফুল তুলে নিচ্ছে। বেছে বেছে স্বচ্ছ সুন্দর ফুল গুলো নিচ্ছে। বিশেষ করে আধফোঁটা ফুল গুলো। কারন এগুলো পানিতে ডুবিয়ে রাখলে কয়েক দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
ফারাবির মোহনীয়তা প্রান ভরে দেখছে ফারহান। কি সুখ ই না তাতে।
এতো এতো ভালো লাগা কাজ করছে ওর। কিশোরী মেয়েটা ফুলের মাঝেই ডুবে আছে।
আশে পাশে ফিরে ও তাকাচ্ছে নাহহ। আচ্ছা ফারাবি কি দেখতে পাচ্ছে না ফারহান ওকে নিয়ে ডুবে আছে।
ওর লাজুকতা , ফুলে ডুবে থাকা সব কিছু মিলিয়ে জগৎ গড়ছে।
কখনো কি বুঝবে মেয়েটা এতো শত ভালোবাসা ?
জড়িয়ে কি নিবে ওকে ভালোবাসায় ? নাকি এভাবেই ওকে পাগল করে ছাড়বে ।
ঝকঝকে তকতকে পরিবেশে রোদ্দুর হেসে খেলে যাচ্ছে। আর তার মাঝে একটি মেয়ে ডুবে আছে। ফারহান মোহনীয় হাসে,

গোলাপ গ্রামের মালিক এসে বলল
_ স্যার ম্যাডাম তো অনেক অনেক ফুল নিচ্ছে তা ও ভালো ভালো বেছে বেছে।

ফারহান ঝরা হেসে বলল
_ খাঁটি সোনা তো খাঁটি ফুল ই নিবে । টাকা নিয়ে চিন্তা করবেন নাহহ। দরকার পরলে সমস্ত ফুলের দাম দিয়ে যাবো। তবু ও ঐ মেয়েটার হাঁসি থামতে দিব নাহ।

লোকটা স্বচ্ছ হাসলো। হয়তো এমন ভালোবাসা কখনো চোখে পরে নি তাই। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লোকটা চলে গেল।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফারাবি আসলো হাতে এক গাঁদা গোলাপ নিয়ে। মনে হচ্ছে ও কোনো গোলাপ রাজকুমারী।
ফারহান হো হো করে হেসে উঠলো।
কারন ফুল গুলো আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে
ফারাবি। যেন ছেড়ে দিলেই কেউ নিয়ে যাবে।
ফারাবি মিন মিনে গলায় বলল
_ সরি এতো গুলো ফুল নেওয়ার জন্য।

ফারহান ভ্রু কুঁচকে থেকে লম্বা করে শ্বাস নিলো।
তারপর শান্ত কন্ঠে বলল
_ আমি ই তোকে বলেছি যত ইচ্ছে নিতে। সরি বলতে বলেছে কে ?

ফারাবি চকচকে হাসলো ।ফারাবির নাক টেনে দিয়ে ফারহান বলল
_ ফুল গুলো কাউন্ট করবি চল। যত গুলো ফুল নিয়েছিস ঠিক তত গুলো চকলেট কিনে দিবো।

ফারাবি অবিশ্বাসী কন্ঠে বলল
_ সত্যি ?

ফারহান হো হো করে হেসে বলল
_ না মিথ্যে।

ফারাবি মুখ ছোট করে ফেলল । ফারহান মোহনীয় হেসে রগ রগা কন্ঠে বলল
_ আরে সত্যি বলছি , আমার কিশোরী প্রান ।

ফারাবি নাক কুচকে বলল
_ কিহহ

_ বুঝলি না রে। একেই বলে বাচ্চা মেয়ে। বয়স কতো তোর ?

_ 17+

_ আঠারো পূর্ন হতে কিছু দিন বাকি তাই তো। জানিস নাহ ,আঠরো বছরের নিচে সবাই শিশু।

ফারাবি হো হো করে হেসে উঠলো। ফারহান সন্দিহান চোখে তাকাতেই মুখ টিপে হাসতে লাগলো।
ফোঁস করে দম ফেলে ফারহান বলল
_ কিশোরী দের দোষ মাফ হলে ও এডাল্ট দের দোষ কিন্তু মাফ নাহহ। ভেবে কাজ করিস। না হলে একদম জেলে পুরে দিবো।

ফারাবি মুখ টা ছোট করে ফেলল। ফারহান আলতো হেসে সরস গলায় বলল
_ ফুল গুলো কাউন্ট কর ।

বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ফুল গুলো কাউন্ট করলো ফারাবি।
চকচকে চোখে তাকিয়ে বলল
_ পুরো 118 টা।

ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ সত্যি তো ?

_ হুমম একদম সত্যি । আপনি কিন্তু বলেছেন চকলেট কিনে দিবেন। এখন আমাকে কিটক্যাট কিনে দিবেন পুরো 118 টা।

ফারহান আলতো হেসে বলল
_ আচ্ছা চল কিনে দিবো।

ফুলের দাম মিটিয়ে একটা চকলেট শপে গেল ওরা।
কিটক্যাট কিনে নিয়ে তারপর গাড়ি তে বসলো।
ফারহান গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো। ফারাবি একটা কিটক্যাট এগিয়ে দিয়ে বলল
_ এটা আপনার ।

ফারহান বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল
_ আমার কেন ?

_ রিটার্ন গিফট।

ফারহান হো হো করে হেসে বলল
_ রিটার্ন গিফট শেয়ার করে নিতে চাই। অর্ধেক টা তোর আর অর্ধেক টা আমার।

ফারাবি ভ্রু কুঁচকে থেকে প্যাকেট খুলে অর্ধেক টা এগিয়ে দিলো।
ফারহান ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বলল
_ গাড়ি চালাচ্ছি আমি। এক্সিডেন করাতে চাস ?

ফারাবি ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে ফারহানের মুখে চকলেট পুরে দিলো।
ফারহান হালকা হেসে বলল
_ তোর ঐ সো কলড স্যার তোকে পছন্দ করে। ওর ধারে কাছে ও আর যাবি নাহহ।

ফারাবির গলায় চকলেট আটকে গেল।
কাশতে কাশতে চোখ বড় বড় করে তাকালো। এতো বড় শকড খাবে ভাবতে ও পারে নি।
ফারহান গাড়ি থামিয়ে দিয়ে পানির বোতল এগিয়ে দিলো। ফারাবি ঢক ঢক করে এক নিশ্বাসে পানি গিলে নিলো। ঢোক গিলে মাথা চেপে ধরে মিন মিন করে বলল
_ মহা বিপদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here