স্বীকৃতি পর্ব ১০

#স্বীকৃতি
#পর্ব_১০
#Saji_Afroz
.
.
.
খুশবুকে নিজেদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো অনন্ত ও খুশি। বড় বোনের সামনে এভাবে ধরা না খেলেও পারতো তারা! প্রেমে মাতাল হতে গিয়ে যে ধরা পড়বে এটা ভাবতে পারেনি। ইশ! খুশবু যে সকাল সকাল ছাদে হাটে এটা কি করে ভুলতে পারলো খুশি?
এদিকে অনন্তের অবস্থাও ভয়াবহ। প্রেমিকার বড় বোনের কাছে ধরা খেয়ে তার লজ্জায় মাটির ভেতরে ঢুকে যাওয়ার অবস্থা! তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে ভুলেই গিয়েছে খুশবু তার বান্ধবী।
তাদের অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দিলো খুশবু।
খুশবুর দিকে চোখ তুলে তাকালো খুশি। অনেকদিন পর বোনকে সে হাসতে দেখছে এভাবে৷ কি সুন্দরই না লাগছে তাকে!
খুশবু হাসতে হাসতেই বললো-
প্রেমটাও ঠিক মতো করতে জানিস না? এইরকম চললে তো দুই দিনেই ধরা খাবি সবার কাছে। আড়ালের প্রেমই মজা।
.
খুশবুর কথা শুনে খুশি বললো-
তুই রাগ করিস নি আপু?
-হু করেছি অনেক! তোদের মাঝে ইটিস পিটিস চলছে আর আমি এখন জানলাম!
.
ইটিস পিটিস!
কথাটি শুনেই উচ্চ শব্দে হাসতে লাগলো খুশি।
খুশবু ভ্রু জোড়া কুচকে বললো-
দেখি তুই যা এখন। ধরা খেয়ে এভাবে কাউকে হাসতে দেখিনি!
-কেনো যাবো?
-যাবিনা?
.
খুশি চুপচাপ বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
অনন্ত চলে যেতে চায়লে থামলো খুশবুর ডাকে।
-হু বলো খুশবু?
-খুশিকে সত্যিই ভালোবাসো তো তুমি?
-হুম।
-আমি তোমাদের জন্য অনেক বেশি খুশি হয়েছি। আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি, তোমাদের টা যেনো পায়।
-তার জন্য তোমার সাহায্যও কিন্তু প্রয়োজন।
-নিশ্চয় পাবে। কিন্তু আমার বোন যেনো কোনো কষ্ট না পায়। মনে রেখো!
.
.
সকালের নাস্তা সারার পরে ডাইনিং টেবিলে বসে, আরহামের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছেন খুশবুর বাবা।
আরহামের মতো ছেলেকে নিজের মেয়ের স্বামী করতে পেরে যেনো তিনি ধন্য।
.
দূর থেকে তাদের দেখছে খুশবু। আরহামের জায়গায় ফারাজ থাকলেও তো মন্দ হতোনা। ভাগ্যটা এমন কেনো!
একটাই তো পৃথিবী।সেখানে নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে চাওয়াটা কি খুব বেশি অপরাধ। কেনো যাকে চাই তাকে পাইনা?
এসব ভেবে ভেবে চোখের পানি ফেলে চলেছে খুশবু।
.
.
দুপুর তিনটের দিকে উঠোনে হেটে বেড়াচ্ছে খুশবু। হঠাৎ চোখ যায় তার দেয়ালের দিকে। মনেহচ্ছে কেউ দেয়াল টপকে এপারে আসতে চায়ছে। এমন তো ফারাজ ছাড়া কেউ করতো না! এসব কি দেখছে সে!
হ্যাঁ ফারাজই এমন করে উঠোনে প্রবেশ করতো।
দেয়াল টপকানো ছিলো তার পছন্দের কাজের মধ্যে একটি। আর তার এসবই খুশবুকে বেশি আকর্ষণ করতো তার প্রতি। বাচ্চা স্বভাবের ছেলেই যেনো তার পছন্দ!
খুশবু এগিয়ে যেতে লাগলো দেয়ালের দিকে। কিন্তু কাছে এসেই দেখলোনা সে কাউকে। ছুটে গেলো গেইটের বাইরে। দেয়ালের ওপারে এসে চিৎকার করতে থাকলো-
কে ছিলো এখানে? কে ছিলো?
.
কাধে কারো হাতের স্পর্শ টের পেলো খুশবু।
পেছনে ফিরে আরহামকে দেখে হতাশ হলো সে। আরহামের বদলে ফারাজ হতেই পারতো।
কেনো এটা সম্ভব নয় আর! কেনো সে ফারাজের হতে পারেনা?
এসব ভাবতে ভাবতেই অজ্ঞান হয়ে গেলো খুশবু।
.
.
জ্ঞান ফিরে বিছানার চারপাশে সবাইকে দেখে বসে পড়লো খুশবু।
একটু আগেই অনলাইনে সে আইডি থেকে মেসেজ এসেছে আরহামের কাছে-
Asob dekhe niscoy bujcen? Khusbu amar sathe palateo 2bar vabbe na. Amke na pele nijer khoti o korte pare se. Valoi valoi divorce diben naki amon kicur opekkha korben?
.
ফারাজের মেসেজটি পেয়ে আরহামের চরম মাত্রায় রাগ হতে লাগলো। তবুও নিজের রাগ সংযত করে সে সকলের উদ্দেশ্যে বললো-
আমরা আজই বাসায় চলে যেতে চাই। আসলে আফসানার বিয়ের কথা হচ্ছিলো।
.
খালেদা শারমিন বললেন-
মাত্রই তো এলে! আর কটা দিন…
-আবার পরে আসবো মা। বোনের বিয়ে বুঝছেনই তো।
.
আরহামের দিকে আড়চোখে তাকালো খুশি। সত্যিই কি আফসানার বিয়ের জন্য চলে যেতে চায়ছে আরহাম? নাকি কিছু আঁচ করতে পারছে সে?
.
.
.
আরহাম ও খুশবুকে দেখে আফসানা বলে উঠলো-
এ কি! এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি তোরা?
.
আরহাম গম্ভীরমুখে বললো-
তোর কোনো সমস্যা?
.
কথাটি বলেই নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো আরহাম।
খুশবুর দিকে তাকিয়ে আফসানা বললো-
কি হয়েছে ভাইয়ার?
-কিছু তো হয়নি।
-ভাইয়ার মন বোঝা মুশকিল। কষ্ট চেপে রাখা স্বভাব। মনে হচ্ছে কোনো কারণে কষ্ট পেয়েছে।
.
খুশবু রুমে এসে আরহামের উদ্দেশ্যে বললো-
আপনি কি কোনো কারণে কষ্ট পেয়েছেন?
.
ফারাজের এই মেসেজটি যেনো হজম করতে পারছেনা আরহাম। সত্যিই কি খুশবু পালিয়ে যাবে? বা নিজের কোনো ক্ষতি করবে ফারাজের জন্য?
-কি হলো বলুন?
.
খুশবুর প্রশ্ন শুনে আরহাম কিছু না ভেবেই বলে বসলো-
আমাকে কি কখনো ভালোবাসতে পারবে না তুমি?
.
আরহামের হঠাৎ এমন প্রশ্নের কোনো মানে খুঁজে পেলোনা খুশবু। হঠাৎ সে এমন প্রশ্ন করছে কেনো?
খুশবুকে নিশ্চুপ দেখে মৃদু হাসলো আরহাম। তার কাছে এসে ঠোঁট জোড়া প্রসস্থ করে আরহাম বললো-
চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই? স্বামী কে ভালোবাসা স্ত্রীর কর্তব্যের মাঝেও পড়ে। সেই কথা ভেবে হলেও চেষ্টা করা উচিত। নিশ্চয় জানো? বৈবাহিক সম্পর্কই পবিত্র বন্ধন? তোমার উচিত আমাদের সম্পর্ক টাকে একটা সুযোগ দেয়া।
.
কথাটি বলেই ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো আরহাম।
আরহাম কেনো কথাগুলি বলেছে খুশবু বুঝলোনা। তবে ফারাজের জন্য তার ভালোবাসা অটল থাকবে, এটাই সে জানে। পারেনা সে ফারাজের জায়গা অন্য কাউকে দিতে।
অস্থির লাগছে তার ভীষণ এসব কথা শুনে। ব্যাগ খুলে মোবাইল টা হাতে নিলো সে।
মেসেজ টাইপ করে পাঠিয়ে দিলো ফারাজের ফোন নাম্বারে-
Amar jonno Arham namok manush tao j kosto pacce Faraj! Asober jonno tumi e dayi.
.
.
.
খালেদা শারমিন খুশির উদ্দেশ্যে বললেন-
ফারাজের কথা কিছু জানেনা মনেহয় আরহাম?
-মনেতো হয় জানেনা।
-আমি ওর চোখে খুশবুর প্রতি ভালোবাসা দেখেছি।
-হুম। আসলেই আপু অনেক লাকি।
.
মাকে এসব বললেও খুশির মনে একটা সন্দেহ আছেই। আরহাম আসলেই কিছু জানেনা? নাকি জেনেও না জানার ভান করে আছে? যদি তাই হয়ে থাকে তবে কেনো! একটা মানুষ কি এতোটাও ভালো হতে পারে!
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here