স্বীকৃতি পর্ব ৬

#স্বীকৃতি
#পর্ব_৬
#Saji_Afroz
.
.
.
আরহামের কথায় তার বাসায় এসেছে ফাহিম।
বেশ ভালো সম্পর্ক দুজনের। কলেজ লাইফ থেকে পরিচিত দুজনে। আর তখন থেকেই আফসানার প্রতি আকর্ষণ ছিলো তার। বন্ধুর বোন বলে কিছু জানাতে পারেনি। কিন্তু যখন জানতে পেরেছে, আফসানার জন্য তারা সুপাত্র খুঁজছেন তখনি সে আরহামকে মনের কথা জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে সুপাত্র কিনা জানেনা। তবে তার মনে আফসানার জন্য যে ভালোবাসা রয়েছে তা না জানালে যেনো শান্তি পাবেনা। ভয় হলেও আরহামকে সবটা জানায় ফাহিম। আরহামের মতো সেও সরকারী চাকরী করে। ভালো পরিবারের সন্তান। দেখতেও ভালো। তাকে অপছন্দ করার প্রশ্নই আসেনা। আরহাম তার মা বাবাকে জানালে তারাও খুশি হন। তবে আরহামের বিয়ের পরে এই ব্যাপারে আগানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা।
.
খুশবুকে ডেকে এনে সোফায় বসালো আরহাম। পরিচয় করিয়ে দিলো ফাহিমের সাথে।
তারা কিছুক্ষণ আলাপ করার পর সেখানে উপস্থিত হলো আফসানা।
আফসানা ও ফাহিম কে আলাদাভাবে কথা বলতে দিয়ে দুজনে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
আফসানার দৃষ্টি নিচের দিকে থাকলেও ফাহিমের দৃষ্টি তার দিকে। হালকা বাদামী রঙের সালোয়ার কামিজটা দারুণ মানিয়েছে তাকে। বিয়ের পরে এই রঙের সব শাড়ি কিনে দিবে সে আফসানাকে। কথাটি ভেবেই আনমনে হেসে চলেছে ফাহিম।
আফসানা তার দিকে তাকিয়ে বললো-
ভাইয়া আপনাকে কিছু বলেছে?
-কি বিষয়ে?
-আমার বিষয়ে?
-তুমি এই বিয়েতে রাজী। এটা বলেছে।
.
আফসানা বুঝতে পারলো ফাহিমকে সাদেকের ব্যাপারে কিছু বলেনি আরহাম।
সে কি বলবে তাকে?
.
.
.
-দুঃখিত খুশবু।
.
আরহামের মুখে কথাটি শুনে অবাক হয়ে খুশবু জিজ্ঞাসা করলো-
কেনো?
-বাসর রাতে সেদিন এমন একটা কান্ড করা উচিত হয়নি আমার।
-কি কান্ড?
.
খুশবুর প্রশ্নে চোখ জোড়া বড়বড় করে আরহাম বললো-
মনে নেই আপনার?
.
খানিকক্ষণ মাথাটা চুলকিয়ে খুশবু জবাব দিলো-
নাতো।
.
আরহাম মনেমনে খুশিই হলো খুশবুর এসব মনে নেই বলে। তবে সত্যিই কি মনে নেই তার?
.
.
.
সকালের ঘটনাটির পর থেকে খুশির আর দেখা পেলোনা অনন্ত।
মেয়েটির সাথে ওভাবে কথা বলা তার উচিত হয়নি৷ খুশির স্বভাব তো আর তার অজানা নয়। দুষ্টু প্রকৃতির মেয়ে সে। তবে অনন্তের কথায় সে এতোটাও কষ্ট পাবে ভাবেনি। তার এসব কথাও খুশি দুষ্টুমির ছলে উড়িয়ে দিতে পারতো…
গুটিগুটি পায়ে অনন্ত এগিয়ে আসলো খুশির রুমের দিকে।
বিছানায় শুয়ে আছে খুশি। অনন্ত দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বললো-
খুশি নামের মেয়েদের দুখী থাকতে নেই।
.
অনন্তের গলার স্বর শুনে বসে পড়লো খুশি। পরক্ষণেই তার মনে পড়লো সকালের ঘটে যাওয়া ঘটনাটি।
খুশি মুখ গোমড়া করে বললো-
আমি আর তোমার সামনে যাবোনা।
-না গেলে যে আমার বড্ড কষ্ট হবে।
-কেনো?
.
অভিমানী সুরে অনন্ত বললো-
কেনো বুঝোনা?
-বলে দাও?
.
কয়েকটা লম্বা দম ফেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে অনন্ত বলে বসলো-
ভালোবাসি বলে।
.
.
.
আরহামের রুমে এসে আফসানা বললো-
ফাহিম ভাইকে সাদেকের ব্যাপারে কিছু জানাস নি ভাইয়া?
.
আরহাম মাথা নেড়ে বললো-
মা নিষেধ করেছেন।
-ওহ ভালোই হলো।
-ভালো হয়নি। আমি বলবো ওকে সবটা এখন। কেননা পরবর্তীতে কোনো ঝামেলা হলে তখন যেনো ওর কাছে সব ক্লিয়ার থাকে।
-কি ঝামেলা?
-কতো রকমের ঝামেলায় তো আছে তাইনা? নতুন জীবনের শুরুতে সবটা না লুকালেই কি নয়? অন্য কেউ হলে হয়তো লুকোতাম। কিন্তু ফাহিম আমার বন্ধু। ওকে আমার সবটা জানানো উচিত।
-তুমি যা ভালো বুঝো।
.
খুশবুর সাথে যা হয়েছে আফসানার সাথে এমন কিছু হোক আরহাম চায়না। সাদেক যদি ফারাজের মতো করে? তখন কি সাদেক তার মতো শান্ত থাকতে পারবে? হয়তো না।
তাই সবটা জানানোই হবে সবার জন্যই মঙ্গলজনক। কি দরকার? খুশবুর মতো চুপ থাকা? সে হয়তো বাধ্য ছিলো। কিন্তু আফসানা নয়।
.
.
আফসানার সাথে ঘটা প্র‍ত্যেকটা ঘটনা ঘটেছিলো খুশবুর সাথেও।
সব যেনো চোখে ভাসছে তার!
কুমিল্লার ময়নামতি তে বান্ধবীদের সাথে ঘোরার সময় প্রথম দেখা হয়েছিলো খুশবুর ফারাজের সাথে।
তার এক বান্ধবীর খালাতো ভাই ফারাজ। ফারাজও বন্ধুদের সাথে এসেছিলো। ফারাজকে দেখে তার বন্ধবী চিনতে ভুল করলোনা। ছুটে গেলো ভাই এর কাছে। একপর্যায়ে খুশবুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ফারাজ কে। ফারাজের চোখ তখনি আটকে যায় খুশবুতে। এতোগুলো মেয়ের মাঝে এই মেয়েটিই ফারাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। শান্ত স্বভাবের মেয়েই যে তার পছন্দ! খুশবুর বলা এক একটি কথা তার হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে। কথা বলার সময় বারবার হাত দিয়ে সামনে আসা চুলগুলো ঠিক করছিলো খুশবু। ফারাজের ইচ্ছে করছিলো নিজ থেকে সেই চুল গুলো ঠিক করে দিতে। প্রথম দেখাতে কারো উপরে এতো ঘায়েল হওয়া যায়? খুশবুকে না দেখলে বুঝতোই না সে।
সেদিনের মতো যে যার বাড়ি চলে গেলেও ফারাজের মন জুড়ে খুশবু জায়গা দখল করে নেয়। খুশবুর সেই বান্ধবীর সাহায্যে ফারাজ তার ফোন নাম্বার নেয়। অপরিচিত ছেলে সেজে কথা বলে খুশবুর সাথে। প্রথমে খুশবু পাত্তা না দিলেও ফারাজের কথার ছলে যেনো আটকে যায় সেও। অন্য ধরনের ভালো লাগা জন্ম নেয় তার মনে! ফারাজকে না দেখেও কথা বলতে বলতে ধীরেধীরে প্রেমে পড়ে যায় সে। নিজেই দেখা করার প্রস্তাব জানায়। ফারাজও রাজি হয়। কিন্তু দেখা করার পর ফারাজকে দেখে খুশবু যেনো ধোকা টা মেনে নিতে পারেনি। ফারাজ তাকে চিনেও অপরিচিত ছেলে সাজলো কেনো!
অভিমান করে ফোনটা বন্ধ রেখেছিলো খুশবু বেশ কয়েকদিন। বান্ধবীটির সাথেও রেগে ছিলো ভীষণ।
একদিন বিকেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো খুশবু।
বৃষ্টি হচ্ছিলো সেদিন প্রচুর। হঠাৎ খেয়াল করলো সে, গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ফারাজ। প্রথমে বিষয়টি পাত্তা দিতে না চায়লেও, এমন বৃষ্টিতে ফারাজ ভিজছে এটা যেনো মানতে পারছেনা সে।
ইশারায় ফারাজ কে বললো চলে যেতে। ফারাজও ইশারায় বললো, খুশবু না আসলে সে যাবেনা।
বাধ্য হয়েই ঘর থেকে লুকিয়ে বের হলো খুশবু, একটি ছাতা নিয়ে।
ফারাজের হাত ধরে একটু দূরে এসে বললো-
পাগল হয়ে গিয়েছো তুমি ফারাজ?
-তোমার প্রেমে।
-কিন্তু আমার কোনো পাগল কে ভালোবাসার ইচ্ছে নেই।
-আমি যা করেছিলাম তোমাকে ভালোবেসেই। ধোকা দিইনি তোমাকে। ভুল বুঝছো তুমি।
.
কথাটি বলেই কাশতে লাগলো ফারাজ।
খুশবু বললো-
এখন তুমি যাও।
-চলে গেলে আর কথা হবেনা তোমার সাথে।
-বৃষ্টির মাঝে….
-ফোনটা চালু করবে প্লিজ?
.
একটু ভেবে খুশবো জবাব দিলো-
করবো।
.
সেই থেকেই ফারাজের সাথে আবার কথা বলা শুরু হলো খুশবুর। এই কয়েকদিন খুশবুর যে কষ্ট হয়নি তা নয়। সেও যে ভালোবেসে ফেলেছে ফারাজ নামক ছেলেটি কে!
.
-ভাবী?
.
আফসানার ডাকে ঘোর কাটলো খুশবুর। আফসানার উদ্দেশ্যে বললো-
হু বলো?
-ফাহিম ভাই কি সবটা জেনে রাজি হবে এই বিয়েতে? উনি রিজেক্ট করলে মা বাবা কষ্ট পাবেন অনেক। ভাইয়াকেও ভুল বুঝবে। কেননা মা এসব বলতে নিষেধ করেছিলেন।
-যদি সত্যি তোমাকে সে ভালোবেসে থাকে, তাহলে মানবে। চিন্তা করোনা।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here