#স্রোতধারা
দ্বিতীয়_অধ্যায়
দশম_পর্ব
~মিহি
“এখন এই ভিডিওটা শুধু আমার আর তোমার কাছে আছে কিন্তু আমার কথামতো না চললে এ ভিডিওটা সারা বিশ্ব দেখবে।”
ভিডিওটা বন্ধ করে দিল ধারা। শরীর রীতিমতো কাঁপছে তার। ভিডিওটা তাদের শয়নকক্ষের। স্রোত এবং ধারার ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত জ্বলজ্বল করছে ভিডিওটাতে। ধারা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এ ভিডিও কেউ কি করে রেকর্ড করলো? ধারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরেকটা টেক্সট আসলো,
“খুব টেনশন হচ্ছে, জান? আমার কথামতো চললে এ ভিডিও আমি কারো হাতে দিব না তবে যদি আমার কথা না মানা হয় তবে তোমাদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত সারা বিশ্ব দিনে-রাতে দেখবে। বুঝতেই পারছো তোমার আর তোমার বরের মান-সম্মান ঠিক কোথায় যাবে। তোমার কাজটা কী সেটা কাল হাসপাতালে গেলেই জানতে পারবে। এখন ঘুমাও জান। টা টা। আর ভুল করেও এসব কথা কাউকে বলার স্পর্ধা দেখিয়ো না। আমার নজর সবসময় তোমার উপর আছে। সো বি কেয়ারফুল।”
বালিশে হেলান দিল ধারা। ঘরের কোথাও নিশ্চিত ক্যামেরা লাগানো আছে কিন্তু ক্যামেরা খোঁজার উপায় কী? লোকটা যদি কোনভাবে জানতে পারে ধারা ক্যামেরা খুঁজছে তাহলেই তো সে সতর্ক হয়ে যাবে। অদ্ভুত এক গোলকধাঁধায় পড়েছে ধারা। চিন্তায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে ধারার। ঠিকমতো না খাওয়ায় শরীরটাও দুর্বল লাগছে। কিন্তু এ মুহূর্তে উঠে নিচে গিয়ে কিছু খাওয়ার মতো মন মানসিকতা তার নেই। বালিশে হেলান দিয়ে কোনরকম ঘুমানোর চেষ্টা করলো ধারা।
__________________________
সকালের নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে সবার জন্য চা বানাচ্ছিল হায়া। এরই মাঝে পেছন থেকে সৌহার্দ্য জড়িয়ে ধরলো তাকে। চায়ের কাপে চিনি দিতে উদ্যত হয়েছিল সে। আচমকা সৌহার্দ্যের স্পর্শে কেঁপে উঠলো সে। সৌহার্দ্য হায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
“গুড মর্নিং বউ।”
বউ ডাকটা বরাবরের মতো হায়ার মনে শিহরণ জাগালো। হালকা হাসলো সে।
“সরেন তো। কাজ করতে দেন।”
“কাজই করো খালি,স্বামীর সেবা আর করা লাগবে না।”
“আহা হা! এই একমাস কই ছিল এসব? দিব্যি তো ছিলেন।”
“তুমিও তো ছিলে।”
“যান তো আপনি। সকাল সকাল আপনার সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না আমার।”
“ঝগড়া না করলে, আদর করো।”
“অসভ্য লোক! মুখে কিছু আটকায় না। যান তো এখান থেকে।” সৌহার্দ্যকে একরকম ঠেলেই রান্নাঘর থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিল হায়া। দুপুরে সৌহার্দ্যের বাবা-মা ফিরে আসবে। পারিবারিক ঝামেলার কারণে বেশ অনেকটা দিনই বাড়িতে কাটিয়ে আজ ফিরবেন তারা। দুপুরে অবশ্যই ফিশেষ কিছু রাঁধতে হবে। চায়ের কাপ ট্রেতে করে ডাইনিং টেবিলে রাখলো হায়া। স্রোত কিংবা ধারা কেউই এখনো নিচে নামেনি। হায়া বুঝতে পারছে না ধারার এখনো না আসার কারণ। সকালের নাস্তাটা বরাবরই ধারাই তৈরী করে কিন্তু আজ তার আসারই নাম নেই। সৌহার্দ্যকে চা দিয়ে চায়ের ট্রে নিয়ে ধারার ঘরের দিকে এগোলো হায়া।
“আপু! উঠোনি এখনো? চা এনেছি, দরজা খোলো আপু।” হায়ার ডাকে ঘুম ভাঙল স্রোতের। পাশে তাকিয়ে দেখলো ধারা এখনো ঘুমিয়ে। স্রোতের নিজে থেকে ঘুম ভাঙেনা। ধারাই তাকে জাগিয়ে দেয়। স্রোত উঠে দরজা খুলে চায়ের ট্রে নিল।
“তোমার আপু এখনো উঠেনি হায়া। আমরা একটু পরেই নিচে আসছি।”
“আচ্ছা ভাইয়া।” হায়া মুচকি হেসে চলে গেল।
দরজা লাগিয়ে ট্রেটা সাইড টেবিলে রেখে ধারার কপালে হাত রাখলো স্রোত। শরীর হালকা গরম। স্রোত একবার ভাবলো ধারাকে ঘুমোতে দিবে কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো সে চলে গেলে ধারাকে আর খাওয়াতে পারবে না কেউ। ধারাকে খাইয়ে তবেই হাসপাতালে যেতে হবে তার।
“ধারা, উঠো।”স্রোতের আলতো স্বরে ডাক শুনে লাফ দিয়ে উঠলো ধারা। চোখ কচলাতে কচলাতে স্রোতের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখ কিছুটা ফুলে আছে।
“ফ্রেশ হয়ে আসো তো। কিছু খেয়ে ওষুধ খাবে। জ্বর জ্বর লাগছে তোমার।”
“ইশস! ন’টা বেজে গেছে তো।হাসপাতালে যেতে হবে। তাছাড়া গাইনোকলজিস্টের এপয়েন্টমেন্ট আছে তো।”
“কাল চেক আপ করিও। আজ রেস্ট নাও।”
“তুমি আমাকে অলস বানিয়ে ফেলছো স্রোত। তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও। আমি আসছি।”
স্রোত মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল। ধারা চুল খোপা করতে করতে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। ফোনের মেসেজ টোনে বুকের ভিতর ধক করে উঠলো তার। ফোন হাতে নিতেই দেখলো নতুন একটা নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ এসেছে। টেক্সটটা ওপেন করলো ধারা,
“অবশেষে ঘুম ভাঙলো তোমার, জান। তবে স্রোতের ডাকে তোমার ঘুম ভাঙায় আমি খুব ব্যথিত। তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপর থেকে স্রোত যতবার তোমায় স্পর্শ করবে ততবার ওর ওপর কালো মেঘের ছায়া হয়ে বজ্রপাত ঘটাবো আমি। হাতটা ভাঙবো নাকি পা বলো তো সোনা। খবরদার যেন ও তোমায় স্পর্শ না করে।”
টেক্সট পড়ে ধারার ঘুম ঘুম ভাব নিমেষেই কেটে গেল। স্রোত প্রতিদিন হাসপাতালে যাওয়ার আগে ধারার কপালে চুমু খায়। এখন স্রোতকে কিভাবে নিষেধ করবে সে? নিষেধ না করলেও বিপদ। গেস্টরুমের ওয়াশরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নিল ধারা। স্রোতের গোসল সেরে বের হতে হতে এখনো আধঘণ্টা। ধারা দ্রুত তৈরি হয়ে হাসপাতালেয জন্য বেরিয়ে গেল। হায়াকে বলে গেল দরকারি একটা কাজ পড়ে গেছে। হায়াকে কিছু বলার সুযোগটাও দিল না সে।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ধারাকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পেল না স্রোত। চিন্তিত হয়ে রেডি হয়ে নিচে নামতেই হায়ার মুখোমুখি হলো।
“হায়া, তোমার আপুকে দেখেছো? ও কি রান্নাঘরে?”
“আপু তো বেরিয়েছে ভাইয়া। হাসপাতালে জরুরি কাজ আছে নাকি। খেতে বললাম, খেয়েও গেল না।”
“বেরিয়েছে? ওহ। বলে গেল না আমায়। আচ্ছা আমিও বের হচ্ছি। হাসপাতালে গিয়ে ওর সাথেই ব্রেকফাস্ট করে নিব।”
“আচ্ছা ভাইয়া।”
স্রোত বেরিয়ে গেল। মন খারাপ হয়েছে তার বেশ বুঝতে পারছে সে। দরকার থাকতেই পারে কিন্তু ধারা তাকে জানিয়ে যেতে পারতো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হয় স্রোত।
_______________________
হাসপাতালে এসেও শান্তি নেই ধারার। স্রোতকে কষ্ট দিয়ে কিভাবে শান্তি পাবে সে কিন্তু এটা না করলে স্রোতের বড় কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়াতেই টেক্সট আসলো ধারার ফোনে।
“চুপচাপ তোমার কেবিনে যাও। ডেস্কের উপর নীল খামে মোড়ানো একটা ছবি আছে। সে আজ তোমার কাছে আসবে। তোমার কাজ হচ্ছে তাকে ভুল মেডিসিন প্রেসক্রাইব করতে হবে। স্লো পয়জন সাজেস্ট করবে তাকে তুমি। ব্যস, এটুকুই যথেষ্ট। এটা না করলে প্রথমত তোমাদের ভিডিওটা ভাইরাল হবে। দ্বিতীয়ত তোমার পরিবারের একটা মানুষও জীবিত থাকবে না। সো আমার কথামতো কাজ করাই তোমার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে সোনা। আর খবরদার বেশি চালাকি করতে যেও না।”
টেক্সটটা পড়ে ধারার চোখ ছলছল করে আসছে। একটা পেশেন্টকে ভুল মেডিসিন প্রেসক্রাইব করার মতো জঘন্য অপরাধ কী করে করবে সে? নিজের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য এত বড় অপরাধ করলে নিজের মধ্যকার ডাক্তারকে তার গলা টিপে হত্যা করতে হবে যা সে পারবে না। লোকটা হয়তো ধারার ঘরে ক্যামেরা লাগাতে পেরেছে কিন্তু হাসপাতালে এত নিরাপত্তার মধ্যে ক্যামেরা সেট করা সম্ভব নয়। এখন যদি ছবির পেশেন্টকে ধারা সঠিক ওষুধও দেয়, লোকটা কিভাবে জানবে? ওষুধ সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা না থাকলে ওষুধের পার্থক্য তো সে বুঝবে না। প্ল্যানটা মাথায় ভালোভাবে গুছিয়ে নিয়ে কেবিনে গেল ধারা। খামটা কুরিয়ারে এসেছে। খাম খুলে ছবিটা হাতে নিল ধারা।
ছবির মানুষটাকে দেখামাত্র ধারার হাত থেকে খামটা পড়ে গেল। ধারা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না ছবির লোকটাকেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার আদেশ পেয়েছে সে।
চলবে…
[অর্ধেক লেখার পর ভুল করে ডিলিট হয়ে গিয়েছিল। আবার নতুন করে লিখতে গিয়ে অনেকটা সময় লাগলো। সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন আশা করছি💛]