হঠাৎ বর্ষনের রাতে পর্ব -১৫

#হঠাৎ_বর্ষনের_রাতে💖
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💖
— পর্বঃ১৫

“চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে অর্নবের বাবা ইরা আর অর্নবের দিকে!’আর ওনার সামনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইরা আর অর্নব!’ইরার তো ইচ্ছে করছে নিজের গালে নিজেই কয়েকটা ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মারতে কি দরকার ছিল অর্নব স্যারের সাথে অত নাটক করার!’একদম ঠিক হইছে এখন চাকরি তো গেছেই সাথে কথা যা শুনবি তা ফাও…

“অর্নবের বাবা ইরা অর্নব দুজনের দিকেই স্থির ভাবে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর কড়া কন্ঠে বললোঃ

—“এখানে কি হচ্ছিল?’

“অর্নবের বাবার ধমকের স্বরে কথা বলা শুনে কেঁপে উঠলো ইরা!’ইরার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল অর্নব!’ ইরার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের বাবার দিকে এগিয়ে এসে বললো সেঃ

—“বাবা তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল…

—“আমি তোমার কাছ থেকে এমনটা আশা করি নি অর্নব…

—“তুমি আমায় ভুল ভাবছো বাবা…

—“আমার যা ভাবার আমি ভেবে নিয়েছি,,

“বলেই ইরার দিকে এগিয়ে গেল অর্নবের বাবা!’তারপর বললোঃ

—“আমি তোমার থেকে এটা আশা করি নি ইরা,আমি তোমাকে অনেক ভালো জানতাম কিন্তু তুমি ছিঃ,কালকেই আমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলবো…

—“স্যার..

—“ব্যস তোমার মুখে আমি কিছু শুনতে চাই নি ইরা…

—“কিন্তু বাবা(অর্নব)

—“আমি কারো কোনো কথা শুনতে চাই না…

“এতটুকু বলে রাগ নিয়েই হনহন করে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল অর্নবের বাবা!’

“অন্যদিকে অর্নবের বাবার কথা শুনে ইরার চোখ বেয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো!’অর্নব ইরার দিকে একপলক তাকিয়ে বেশি কিছু না বলেই বাবা বাবা বলতে বলতে নিজেও চললো তার বাবার পিছন পিছন…

“আর ইরা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো!’এখন কি হবে?’ভাবতেই খারাপ লাগছে তার সাথে নিজের ওপর নিজেরই রাগ হচ্ছে খুব!’….

____

“রাগের মাথা নিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকেই সিঁড়ি বেয়ে হনহন করে উপরে উঠতে লাগলো অর্নবের বাবা!’এমন সময় দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকলো অর্নব,,তারপর উত্তেজিত কন্ঠে বললোঃ

—“বাবা দাঁড়াও…

“ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ছেলের ডাক শুনে থেমে যায় আফজাল সাহেব!’আফজাল অর্নবের বাবার নাম!’তারপর সিঁড়ি থেকে দু’কদম নিচে নামেন উনি!’বাবাকে দাঁড়াতে দেখে অর্নবও দৌড়ে চলে যায় আফজাল সাহেবের সামনে!’তারপর বলেঃ

—“বাবা…

—“আমি তো বলেছি আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না অর্নব…

—“তুমি কেন বুঝতে পারছো না তুমি যেটা দেখেছো সেটা..

“অর্নব আর কিছু বলবে তার আগেই আফজাল সাহেব চেঁচিয়ে বলে উঠলেনঃ

—“চুপ করো তুমি,তুমি আমার মানসম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছো,তোমাকে অফিস পাঠানোই আমার ভুল হয়েছে ছিঃ

—“তুমি আমায় ভুল বুঝছো বাবা…

“বাবা ছেলের চেঁচামেচি শুনে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন অর্নবের মা!’স্বামীকে এত চেঁচামেচি করতে দেখে অবাক হয়ে বললেন উনিঃ

—“কি হয়েছে তুমি অর্নবকে বকছো কেন কি করেছে ও?’

—“কি করেছে সেটা তোমার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করো শর্মিলা,আমার মানসম্মান শেষ করতে চলেছে তোমার ছেলে…

—“কি এমন করেছে?’

—“কি করেছে সেটা মুখে আনতেও বাজছে আমার…

“এতটুকু বলেই রাগে হনহন করে উপরে উঠে গেল আফজাল সাহেব!’

“অন্যদিকে অর্নবের মা কিছুই বুঝতে না পেরে বললো অর্নবকেঃ

—“কি হয়েছে অর্নব তোর বাবা এত রেগে কেন আছে…

“উওরে অর্নব কি বলবে বুঝতে পারছে না!’এই মুহূর্তে তারও মাথায় আসছে না কি করে কি বোঝাবে!’অর্নব কিছু না বলেই চলে যায় নিজের রুমের দিকে!’আর অর্নবের মা নিরাশ হয়ে তাকিয়ে রয় অর্নবের যাওয়ার পানে!’….

____

“রাত_৮ঃ০০টা….

“নির্বিকার হয়ে হাঁটছে ইরা!’মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তাঁর!”না জানি কি হবে কালকে আজ সারাদিনে আর অফিস আসে নি অর্নব এতে ইরার আরো বেশি টেনশন হচ্ছে,না জানি স্যার কি কি বলেছে অর্নবকে!’আনমনেই হাঁটছে ইরা,অফিস থেকে ইরাদের বাসায় পৌঁছাতে রিকশায় ৩০ মিনিট লাগে,আর হেঁটে যেতে তো আরো অনেক সময়!’কিন্তু সেইদিকে আপাতত ইরার হুশ নেই সে তার মতো হেঁটে চলছে আনমনে!’আর মাথার মধ্যে ঘুরছে হাজারটা প্রশ্ন!’ইরা হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে বসলো রাস্তার এক কিনারায় থাকা বিশাল বড় একটা পুকুরের পাশেই রাখা ছোট্ট একটা বেঞ্চে!’প্রচন্ড খারাপ লাগছে তাঁর!’গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো ইরা!’তার অপজিট পাশ দিয়ে চলছে রং বেরঙের গাড়ি!’কিন্তু আপাতত সেদিকে কোনোই লক্ষ দিচ্ছে না ইরা!’সে তো চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবছে!’হুট করে যে কি হলো,,এরই মাঝে আকাশে কালো মেঘেরা এসে ভর করলো,সাথে চারপাশে ঠান্ডা বাতাস বইতে লাগলো!’ইরা বেশ বুঝতে পেরেছে এখন বৃষ্টি হবে!’কিন্তু এই মুহূর্তে তার উঠে যেতে ইচ্ছে করছে না তাই চুপচাপ বসে রইলো সে!’এরই মাঝে বলতে না বলতেই এক ফোটা দু’ফোটা করে আকাশ থেকে পানি পড়তে পড়তে এক সময় মুসুলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল!’বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে ইরা,আশেপাশের লোকজন প্রায় দৌড়ে চলে যাচ্ছে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়!’আর ইরা চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো!’মনটা যেন একটু বেশি খারাপ লাগছে তার….

“হঠাৎই বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে না পড়তে কিছুটা চমকে উঠলো ইরা!’মাথা তুলে সামনে তাকাতেই স্পষ্ট দেখতে পেল সে,তার সামনেই জমজম করে বৃষ্টি পড়ছে!’এবার ইরা কিছুটা অবাক হয়ে উপরে তাকালো তার মাথার উপরই কেউ ছাতা দিয়েছে,এবার ইরা তার ছাতা ধরা মানুষটির দিকে তাকালো!’সামনেই অর্নবকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বলে সেঃ

—“স্যার আপনি…?’

“ইরার কথা শুনে অর্নবও ছাতা হাতে নিয়েই ইরার পাশে বসলো তারপর বললোঃ

—“হুম আমি,এখানে বসে আছো কেন বাড়ি যাবে না?’

—“সরি স্যার আমার জন্য আফজাল স্যারের কাছে আপনাকে অপমানিত হওয়া লাগলো,বিশ্বাস করুন স্যার আমি বুঝতে পারিনি ওইসব ওইরকম কিছু ঘটবে আর স্যারও এসে পড়বে…

—“হুম জানি তো..

“অর্নবের কথা শুনে ইরা অবাক দৃষ্টিতে তাকায় অর্নবের দিকে কিন্তু কিছু বলে না!’হঠাৎই অর্নব সামনের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“এই বৃষ্টি দেখে কিছু মনে পড়ছে ইরা,এই বৃষ্টির রাতেই তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা,,

—“হুম মনে থাকবে না কেন স্যার সেদিন আপনার জন্যই তো আজ আমি এখানে বসে না হলে এখন হয়তো…

“ইরা আর কিছু বলার আগেই অর্নব ইরার মুখে হাত দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়!’তারপর বলেঃ

—“আর কিছু বলতে হবে না ইরা!’

“অর্নবের কথা শুনে কিছুটা বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে তাকায় ইরা!’অর্নব ইরার চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের হাতটা আস্তে সরিয়ে ফেললো তারপর চোখ সরিয়ে দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“এই বর্ষনের কারনেই তোমার একটা জিনিস আমার কাছে চলে এসেছে ইরা সেটাকি তুমি জানো?’

“অর্নবের এবারের কথা শুনে ইরা অবাক হয়ে বললোঃ

—“সেটা কি স্যার?’

—“বলবো একদিন…

“এতটুকু বলে চুপ হয়ে যায় অর্নব!’অর্নবকে চুপ হতে দেখে ইরাও আর কিছু বলে না!’রাতের অন্ধকারে ঘেরা একটা দূরত্বে থাকা ল্যামপোস্টের আলোতে একটা বেঞ্চের উপর বসে আছে ইরা আর অর্নব!’তাদের সামনেই রয়েছে একটা বিশাল বড় পুকুর যার চারদিকটাই রেলিং দিয়ে ঘেরা!’তাদের অপজিট দিয়েই মাঝেসাঝে দু’একটা গাড়ি যাচ্ছে বৃষ্টির ভিতর দিয়ে!’চারপাশে বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে সবকিছু!’এসবের মাঝখানে ছাতার মাঝে বসে আছে ইরা আর অর্নব!’কারো মুখেই তেমন কোনো কথা নেই যে যার মতো চুপচাপ বসে আছে নীরবে,আর দেখছে এই রাতের বর্ষন!’রিমঝিম বৃষ্টি,সাথে মন মাতাল করা ঠান্ডা বাতাস!’যেন এক অন্যরকম ভালো লাগার মুহূর্ত….

“এভাবে কিছুক্ষন কাটানোর পর হঠাৎই অর্নব বলে উঠলঃ

—“আমায় ভালোবাসবে ইরা…?’

“উওরে ইরা কিছু বললো না চুপ করে রইলো!’ইরাকে চুপ থাকতে দেখে অর্নবও আর কিছু বললো না!’ছোট্ট শ্বাস ফেলে তাকিয়ে রইলো সামনে,সে নিজেও জানে হুট করে এমন প্রশ্ন কেন করলো ইরাকে,কারন আর যাই হোক এই প্রশ্নটা এই মুহূর্তে হয়তো শোভা পায় না….

“১০ মিনিট পর….

—“বাড়ি কি আজ যাবে না ইরা…

“এতক্ষণ পর যেন ইরার মনে পড়লো বাড়ি যাওয়ার কথা!’ইরা কিছুটা বিস্ময়ভরা কন্ঠে মাথা নাড়িয়ে বললোঃ

—“হুম যাবো….

—“তাহলে চলো আমি পৌঁছে দেই…

“উওরে ইরা তাকালো অর্নবের দিকে,,কেন যেন অর্নবের স্বাভাবিক আচরণ নিতে পারছে না ইরা,ইরার চাহনি দেখে অর্নব বলে উঠলঃ

—“কি এতো ভাবছো বলো তো চল তাড়াতাড়ি…

“উওরে ইরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অর্নব ইরার হাত ধরে নিয়ে গেল গাড়ির কাছে!’এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল অর্নব তখনই ইরাকে বৃষ্টির মধ্যে বসে থাকতে দেখে ছাতা নিয়ে চলে আসে সে!’সে বুঝতে পেরেছে ইরার মন খারাপ আর কারনটাও তার অজানা নয়…

“ইরাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে অর্নবও গিয়ে ছাতা বন্ধ করে বসলো গাড়িতে!’তারপর গাড়ি স্ট্যার্ট দিয়ে চললো সে,,এক জানা শোনা গন্তব্যে,,এই গন্তব্যের সাথে যেন অর্নবের খুব বেশিই জানা শোনা….

____

“মাঝখানে কেটে যায় দু’দিন!’এই দু’দিনে ইরার সাথে আর অর্নবের দেখা হয় নি!’কারন অর্নবের বাবা পারসোনালি ইরাকে ফোন করে বলেছিল সে যেন কিছুদিন অফিস যায় নি!’ইরাও আফজাল সাহেবের মুখের ওপর কিছু বলে নি!’তবে ইরা আফজাল সাহেবের কথা শুনে কিছুটা অবাকও হয় সে ভেবেছিল তাকে হয়তো অফিস থেকে একেবারেই বের করে দিবে!’কিন্তু তার ভাবনায় ছেদ কাটিয়ে তাকে কিছুদিনের ছুৃঁটি দিয়েছে বলে মনে হয় ইরার!’তবে এর পিছনে যে কারন আছে সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে ইরা!’শুধু কারনটাই অজানা…..

.
.

“সকাল_৮ঃ৩০….

ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে অর্নব,অর্নবের বাবা, মা আর ছোট বোন!’সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট খাচ্ছে,এমন সময় অর্নবের বাবা বলে উঠলঃ

—“আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি অর্নব…

“আচমকা খাওয়ার মাঝখানে বাবার এমন কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকায় অর্নব তার বাবার দিকে,,সে ভাবতেই পারে নি তার বাবা এমন কিছু বলবে তাকে….
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here